#প্রিয়জন (৯)
প্রথম দিন ভালো ভাবে গেলেও, দ্বিতীয় দিন হুরের ভেতরটায় অস্থিরতা নেমে এল। ওর হৃদয়ের ছটফট বাড়তে লাগল। নিজের বোকামি খেয়াল করে, মন খারাপ করে বসে রইল সে। সেই মন খারাপ বোধহয় জাহিনের কাছে ঠিক, ঠিক পৌঁছে গেল। তাই তো, ছেলেটার কল এল সন্ধ্যার কিছু সময় পূর্বে। তখন আকাশ ইষৎ লাল হয়ে এসেছে। সূর্য ডুবে গিয়ে ধীরে ধীরে চাঁদের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। সেই সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ভীষণ ব্যাকুল হয়ে পড়ল হুর। তবে কথা বলতে পারল না। ওপাশ থেকে সুর ভেসে এল।
“হুর?”
মেয়েটির হৃদয় যেন এক পশলা বৃষ্টির স্পর্শে নেচে ওঠল। তবে গলা দিয়ে কথা যে আসে না।
“হুর, শুনতে পারছো?”
উহু। মেয়েটার জবাব নেই। এবার জাহিনের কপালে এক ভাঁজের উদয় ঘটে। ও ঠোঁট কামড়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে।পুনরায় ডাকে।
“হুর। ঠিক আছ তুমি?”
এবার কিছুটা হাঁপিয়ে গিয়েছে, এমন ভাবে মেয়েটি বলে।
“জি। আমি ঠিক আছি।”
তারপর কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। কেউ কথা বলে না। জাহিন বোধহয় ইচ্ছে করেই সময় দেয়। সেই সময়টুকু পেয়ে মৃদু সুরে হুর বলে,”আপনি ঠিক আছেন?”
“হ্যাঁ।”
ছোট্ট একটা জবাব। তবে প্রশান্তির। হুরের ভালো লাগে। একই সাথে কান্না পায়। কান্না পায় মানুষটার নাম্বার না থাকার কারণে।
“আমি আসলে, দুঃখিত।”
লজ্জা, অস্বস্তি আর কষ্ট থেকে ছোট্ট এই বাক্য বলে হুর। জাহিন একটু চুপ থেকে বোঝার প্রয়াস করল। অন্তরের জবাবটির সাথে মিলিয়ে নিতে শুধাল,”কেন?”
“আমার কাছে আসলে আপনার নাম্বার ছিল না। তাই, কল করতে পারি নি।”
বিষয়টি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক দুই অনুভূতির মিশ্রণ। তবে জাহিন সেসব তোয়াক্কা করল না। ওর মন খারাপ ও হয় নি। ও বুঝদার মানুষ। মেয়েটির অনুভূতি বুঝে, জানে, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
“কোনো ব্যাপার না। তুমি বলো, সব ঠিক ঠাক যাচ্ছে কী না।”
“আমি ঠিক আছি। কিন্তু আপনি….’
ওকে আটকে দেয় জাহিন। বলে,”আমি রাগ করি নি।”
“কিন্তু আমার যে কষ্ট লাগছে।”
জাহিনের অধর প্রসারিত হয়। এই মেয়েটির হৃদয়ে সে যে স্থান তৈরি করতে পেরেছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দ্বিধাটা এখনো বিদ্যমান। সেটাই কাটিয়ে নিতে হবে।
“আপনি সত্যিই রাগ করেন নি?”
“রাগ করলে কল করতাম?”
“জানি না। আমার শুধু মনে হচ্ছে, আপনাকে রাগিয়ে দিয়েছি।”
“উহু। একদম ই রাগ করি নি। তুমি এটা মনে রেখো না।”
ওমন সময় সন্ধ্যার আজান পড়ল। ওরা দুজনেই চুপ হয়ে গেল। মনোযোগ দিয়ে আজান শুনল। আজান শেষ হলে, জাহিন বলল,”কোনো ব্যাপার না। তুমি এটা নিয়ে ভাববে না। আমি পরে আবার কল করব।”
“আচ্ছা।”
বলেই কল কাটল হুর। ভেতর ঘর থেকে মায়ের ডাক পড়েছে। ছোট ছোট কদমে এগিয়ে গেল সে দিকে। মেয়ের মুখটায় কিছু ভালো লাগার পরশ অনুভব করতে পারলেন লতিফা। এগিয়ে এসে বললেন,”নামাজ পড়ব। অজু করে আসি চল।”
কথা মতন মাথা নাড়াল হুর। কল পাড়ে এসে অজু করতে বসল। অজুর পানি মুখ স্পর্শ করে যেতেই ভেতরটা শীতল হয়ে এল। মনে পড়ল জাহিনের বলা কথা গুলো। জাহিন যখন বলেছিল,’তুমি আমার প্রয়োজন নও, প্রিয়জন।’ সেই মনোমুগ্ধকর বাক্য, হুরের হৃদয়কে আরো একবার আন্দোলিত করে। চোখ ভিজে যায় অশ্রুতে। ও মনে মনে প্রার্থনা করে, এই মানুষটা ওর দ্বারা কখনো যেন না ঠকে। মনের ভেতরে জাগা সমস্ত দ্বিধা যেন, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়। আর জাগ্রত হয়, শুদ্ধ ভালোবাসা। যেই ভালোবাসা অন্তরে লালন করে, একে অপরকে সঙ্গী করে পথ চলবে, যতদিন প্রাণ থাকবে এই ধরে।
নামাজ শেষ করে মায়ের সাথে এক কাপ চা নিয়ে বসল হুর। লতিফা ও মেয়ের সঙ্গ পেয়ে আনন্দ বোধ করলেন। কথার মাঝে সহসাই বলে ওঠলেন।
“তোর বাবা আজ বেঁচে থাকলে, কত খুশি হতেন বল তো।”
বাবার কথা মনে হলেই হুরের মন খারাপ হয়। ওর অভিযোগ করতে ইচ্ছে করে। বাবা কেন এত আগে চলে গেলেন?
“হুর। তুই সুখী তো মা?”
এ কথায় চমকায় মেয়েটি। মা কি কোনো ভাবে কিছু বুঝেছেন। তিনি এগিয়ে এসে কন্যার গাল স্পর্শ করেন।
“সব ঠিক আছে মনে হচ্ছে। তবু কোথাও একটা ভয় হয় রে।”
“ভয় কেন পাও মা?”
“জানি না। মনটা শুধু কু গায়। তোর বাবার চলে যাওয়ার পর থেকে কিছুই তো ভালো হয় নি। শুধু তোর এই বিয়েটা ছাড়া। সেটাও যদি খারাপ কিছু বনে যায়, তবে নিজেকে মাফ করতে পারব না।”
লতিফার মুখ থেকে এহেন সব কথায় হুরের হৃদয়টা ছটফট করে ওঠে। ও মায়ের হাতটা নিজের বুকের কাছে এনে ধরে। চোখ দুটোয় অশ্রু এসে গিয়েছে।
“এই বিয়েটা খারাপ কিছু হবে না মা। তোমায় কথা দিলাম আমি।”
কন্যার মুখের পানে চেয়ে থাকেন লতিফা। বুক ভরে দম নেন। স্বামীকে আরো একবার স্মরণ করেন। তাকান, সামনের দিকে। সুখের সংসার ছিল তার। অথচ মানুষটা নেই, কত গুলো মাস হয়ে গেল।
কাজের জন্য জাহিন কল করতে পারল না। অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষায় ছিল হুর। এবার সে ব্যস্ত হলো। আরো কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে কল করে ফেলল। কল রিসিভ হলো কিছু সময় পর ই। তবে ব্যস্ত ভঙ্গিতে জাহিন বলল,”একটু কাজে আছি। আমি কল ব্যাক করব।”
এরপর কল কাট হলো। মেয়েটি কিছুই বলতে পারল না। তার অপেক্ষা বাড়তে লাগল। এক পর্যায়ে সে বুঝল, অপেক্ষা শব্দটি ভীষণ যন্ত্রণার। ও হতাশ হয়ে জানালার কাছে এসে বসল। আকাশের বিশাল চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,”চাঁদের তো কলঙ্ক আছে। তবু সবাই তাকে ভালোবাসে। আমার কলঙ্ক টুকু কখনো জানলে, জাহিন কি ভালোবাসবে?”
এক পাক্ষিক কথায় কোনো উত্তর আসে না। হুর ও উত্তর পেল না। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে নিরলস ভাবে চাঁদের দিকে চেয়ে রইল। চাঁদ খুব সুন্দর হয়। দেখলেই ভেতরটা শান্তি শান্তি লাগে। রাতের আঁধারে এক টুকরো সাদা আলোর মতন লাগে। মনে হয়, আকাশের বুকে সাদা পদ্ম ফুটেছে। ও চেয়ে থাকে। এক দৃষ্টিতে। তারপর চোখ দুটো লেগে যায় অজান্তেই। সেই ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনে। জাহিন কল করেছে। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে খপ করে ফোনটি নিজের কাছে নিয়ে আসে। কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাহিন বলে,”সরি, তোমাকে অপেক্ষা করতে হলো।”
এই সামান্য সরি তে কি আছে হুর জানে না। তবে এই সামান্য শব্দটি ওর নিকট অসামান্য লাগে। চোখ দুটোয় ভালো লাগা এসে স্পর্শ করে যায়। ঠোঁট দুটো কাঁপে। তৃষ্ণা জাগে অন্তরে। মানুষটিকে একটুখানি জড়িয়ে ধরার জন্য হৃদয় হয় ব্যাকুল। কিন্তু হায় আফসোস, সেই ইচ্ছে টুকু জাহির করতে পারে না সে। শুধু চাতক পাখির মতন তৃষ্ণার্ত হয়ে চেয়ে থাকে। তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে, মানুষটার দর্শনের।
চলবে….
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি
#প্রিয়জন (১০)
চোখের পলকে দিন যেতে থাকে। হুরের তৃষ্ণা ও বাড়ে। কটা দিনে, মানুষটার প্রতি অনুভূতি আরো বেশি গাঢ় হয়। কথায় আছে চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল। তবে কখনো সখনো তা ভুল প্রমাণিত হয়। চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয় না। অনুভূতি যদি হয় খাঁটি, তবে ভালোবাসা, তৃষ্ণা বাড়তেই থাকে। হুরের হৃদয় পবিত্র। যদি না তাহির নামক য ন্ত্র ণা, দ্বিধা তার জীবনের সাথে না জড়িয়ে যেত, তবে আরো আগেই ভেতরের অনূভুতিটা প্রস্ফুটিত হতে পারত। সেটি হয় নি। তবে, এই দূরত্ব তার হৃদয় কে ব্যাকুল করেছে। একদিন তো মেয়েটি ভীষণ কেঁদেছে ও। কেঁদেছে মানুষটাকে এক নজর দেখার জন্যে। সেই কান্না দেখেছে, রাতের আঁধার, চাঁদ, ও কিছু জোনাকি পোঁকা। তাদের সাথে গল্প করেছে হুর। বিলিয়েছে মনের দুঃখ। সেই দুঃখের খবর বোধহয়, জাহিনের কাছেও পৌঁছে গেল। একদিন হুট করেই আগমন হলো তার। মেয়েটি তখন গোসল করে এসে ওঠানে চুল শুকিয়ে নিচ্ছিল। মানুষটা প্রবেশ মাত্রই থরথর করে কেঁপে ওঠল সে। ওর কাঁপুনি স্পষ্ট লক্ষ্য করেছে জাহিন। তাই কী না, অধরে মিষ্টি হাসি এসে ধরা দিয়েছে। হাত ভরাট করে জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে ছেলেটা। হুর তখনো দাঁড়িয়ে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে। ভেতর ঘর থেকে লতিফা বললেন,”কে এল রে হুর?”
মেয়েটি বলতে পারল না। থম ধরে রইল। লতিফা নিজেই বেরিয়ে এলেন। জাহিনকে দেখে ভারী অবাক হলেন।
“বাবা, তুমি আসবে, আমাকে তো মেয়েটা কিছু বলল না।”
জাহিন শুরুতেই সালাম জানাল। তারপর বলল,”আমি কিছু জানাই নি আন্টি। হুর ও জানত না।”
মেয়েটির দিকে দৃষ্টি ফেলল জাহিন। চোখ দুটোয় অবিশ্বাস। ও মুচকি হাসল। লতিফা বললেন,”এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এই মেয়েটা যে কি।”
বলতে বলতে মেয়ের গা স্পর্শ করলেন তিনি। ধ্যান ভেঙে চাইল হুর। লতিফা বললেন,”জামাইকে ঘরে নিয়ে যাহ।”
ও মাথা ঝাঁকাল। তারপর জাহিনের হাত থেকে কিছু জিনিসপত্র নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে এগোল। স্বীয় কক্ষে ফিরে জিনিসপত্র গুলো রাখা মাত্রই জাহিন শুধাল,”কদিনেই মনে হচ্ছে শুকিয়ে গিয়েছ।”
সত্যিই শুকিয়েছে মেয়েটা। আরশির সামনে দাঁড়িয়ে, গলার কাছটা অনাবৃত করলেই খাঁচ দেখা যায়। ও কিছু বলে না। মাথা নামিয়ে রাখে।
“ঐ ব্যাগটা আন্টিকে দিও।”
হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা তুলে হুর। এপাশ ওপাশ করে দেখে বলে,”কী?”
“খুলে দেখো।”
কথা মতন ব্যাগ খুলতে থাকে হুর। ততক্ষণে গায়ের শার্টটি খুলে ফেলে জাহিন। সে গোসল করেই এসেছে। শুধু শার্ট খুলে, টি শার্ট পরে নিলেই হবে। ব্যাগটা খুলতে খুলতে জাহিনের অনাবৃত দেহের দিকে মেয়েটির চোখ আটকে যায়। সুদর্শন বলতে যা বোঝায়, তার সবটুকুই মানুষটার মাঝে রয়েছে। ও চোখ নামিয়ে ব্যাগটা খুলে ফেলে। সুন্দর দুটো শাড়ি রয়েছে তাতে। রংটা মায়ের সাথে বেশ মানাবে।
“আন্টিকে দিয়ে এসো। রংটা ঠিক আছে?”
“মায়ের জন্য এনেছেন?”
“হু।”
উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে হুর। এইটুকু বুঝে, শাড়ি গুলো বেশ দামি। ও একটু অস্বস্তি অনুভব করে।
“এগুলোর দরকার ছিল না।”
“কেন?”
“কত দামি এগুলো। শুধু শুধু খরচ করলেন।”
“দামের কথা কেন বলছো? উপহার কখনো দাম দিয়ে বিচার করতে হয় না।”
কি সুন্দর করে কথাটা বলল জাহিন। মন জুড়িয়ে যাওয়ার মতন। হুরের ভেতরটা স্বস্তিতে ভরে ওঠে। অনেক দিন হয় মা নতুন কাপড় পরে না। মা’কে নতুন কামড়ে দেখার লোভটা একেবারেই সামলাতে পারল না ও। চট করেই চলে গেল মায়ের কাছে। মা তখন তড়িঘড়ি করে রান্না বসিয়েছেন।
“ছেলেটা আসবে জানলে, কত আগে রান্না বসিয়ে দিতাম। কী অবস্থা। ঘরে তো ভালো কিছু ও নেই।”
সে কথায় পাত্তা দেয় না হুর। ও বরং একটা শাড়ি নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। সেটা আলগোছে মায়ের গায়ে রাখতেই লতিফা বলেন,”কী করছিস?”
“একটু চুপ করো তো।”
পর পর দুটো শাড়ি মায়ের গায়ে দিয়ে দেখে হুর। সত্যিই খুব সুন্দর। ওর দুটো চোখ খুশিতে ভরে ওঠে।
“আজকে একটা পরবে।”
“এসব কী? এই শাড়ি। এগুলোতে অনেক দাম মনে হচ্ছে।”
“তোমার জন্য নিয়ে এসেছেন।”
“হায় আল্লাহ। এত টাকা।”
এই বলে শাড়ি দুটো হাতে তুলে নিলেন লতিফা। লজ্জায় তার মুখ রাঙা হয়ে গিয়েছে।
“কী কাণ্ড বল তো। ছেলেটা এসে থেকে গেল, আমি কিছু দিতেও পারলাম না। এর মধ্যে…’
লতিফা হীনমন্যতা অনুভব করলেন। হাজার হোক। মেয়ের জামাই তো। যত্ন করা, দায়িত্ব। তিনি বিচলিত হলেন। হুর মায়ের বাহু চেপে ধরে শান্ত করতে বলল,”তুমি এমন কেন করছো?”
“এমন করব না। ছেলেটাকে কিছু দিতে পারলাম না।”
“ওনি ভালো মানুষ মা। বুঝদার, এসব নিয়ে কষ্ট পেও না।”
লতিফা সরল চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। এই প্রথম মেয়ের মুখ থেকে প্রশংসা শুনলেন তিনি। ওনার ভেতরটা খুশিতে ভরল। তিনি একটু দ্বিধায় ছিলেন। মেয়েটা সুখে আছে কী না, এটা ভেবেই বুকটা হু হু করছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মেয়ের জন্য সর্বোচ্চ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সেই জন্য মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় ও করলেন।
শুধু লতিফার জন্য নয়। হুরের জন্য ও নতুন পোশাক এনেছে জাহিন। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেই বলেছে, বিকালে তারা বের হবে। এই তারার মধ্যে আছেন লতিফাও! এই শুনে তিনি বড়ো লজ্জায় রাঙা হয়েছেন। মানা করেছেন। তবে জাহিন জানিয়েছে, যেতেই হবে। ও চায় চলে যাওয়ার আগে একটা সুন্দর বিকেল কাটাতে। পাশের গ্রামেই মেলা বসেছে। সেখানেই যাবে তারা। লতিফাকে এক প্রকার জোর করেই নতুন কাপড় পরাল হুর। তারপর হাসি হাসি মুখে মা কে জড়িয়ে ধরল।
“কতদিন পর তোমাকে এভাবে দেখলাম মা।”
লতিফা লজ্জা পাচ্ছিলেন। তার লজ্জা দেখে হুরের আবার চোখে জল আসে। মা মেয়ে এক চোট লজ্জা, খুশি ও চোখের জল ফেলে। তারপর হুর চলে আসে নিজের কক্ষে। জাহিন পুরো তৈরি। কালো রঙের টি শার্ট পরেছে সে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। আড়চোখে মানুষটাকে দেখতে দেখতে চুল ঠিক করছিল হুর। আর জাহিন ছিল ফোনে মগ্ন। হুট করে যখন তাদের চোখাচোখি হলো। হুর তখন চমকাল। কেঁপে ওঠল। ওর হঠাৎ এহেন আচরণে থমকাল জাহিন ও। মেয়েটি পোশাক বদলে এসেছে। সুন্দর লাগছে ভীষণ। মায়া মায়া অনুভব হতেই, জাহিন এগিয়ে এল। তারপর গায়ের ওড়নাটি টেনে ধরে মাথায় ঘোমটার মতন টেনে দিল। ঠোঁটে হাসি রেখে বলল,”এবার নতুন বউ লাগছে।”
নতুন বউ শব্দটা মেয়েটির হৃদয়ে এসে আটকে যায়। অধর প্রসারিত হয়। একই সাথে লজ্জাও পায়। ও দৃষ্টি অবনমিত করে। হাতটা আলগোছে মানুষটার বুকে স্পর্শ করায়। বড়ো ভালোবাসা মিশিয়ে বলে,”কথা দিচ্ছি, আজকের দিনটির জন্য, আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”
চলবে…
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি