প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব-২৮+২৯

0
1

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৮

মান্নাতের বলা ক্যাফেতে অপেক্ষা করছে আমরিশা। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে এখানে আসা একদম উচিত হয়নি। কেনই বা মান্নাতের কথা শুনে এখানে আসতে গেলো। মান্নাত কেমন সে জানে না? ফুল প্লে বয় টাইপের নাকি গ্রিন ফ্ল্যাগ। এই ব্যাপারখানা তাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিচ্ছে। প্রেম টেম সে করছে না তবু অনুভূতির আদান প্রদান তো ঘটছে। দুর্বল মনের অধিকারিণী সে নয়। কিন্তু মন যে তাকে দেখলে ছটফট করে। অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগে চোখ কান খোলা রাখতে হয় যেন।

মান্নাতের সাথে আছে আজ বেশ কয়েকদন। কয়েকবার দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। ফোন আলাপ তো অসংখ্যবার। ভুল সে প্রথমেই করেছে। ফোন আলাপ করা উচিত হয়নি। তোল্লাই দিয়ে ফেলেছে অনেক। মান্নাত ভেবেই নিয়েছে তারা প্রেম করছে তাই তো এমন অধিকার বোধ দেখাচ্ছে। অবশ্য মান্নাতকে তার খারাপ লাগে না। এজন্যই তো দুর্বল হয়ে পড়ে প্রতিবার। লোকটা ঠিক জানে কিভাবে ইমপ্রেস করতে হয়!

ভয় এখানেই! একবার ফাঁ*দে পা দিয়ে ফেললে বের হওয়া মুশকিল। প্রেমে পড়ার আগে সকল ছেলেই ভালো, সবাই গ্রীন ফ্ল্যাগ মোটে। গার্লফ্রেন্ড ছাড়া কিছু বুঝে না। অন্যমেয়ে কি জিনিস বুঝেই না। খায় না মাথায় দেয়! এমন হাবভাব! একবার প্রেমটা হয়ে গেলেই তখন আর পাত্তা পায় না। এসব সে জানে। বান্ধবীদের অনেক দেখেছে প্রেমিকের শোকে রাত ভোর কান্নাকাটি করে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল করে ফেলতে। যাক বাবা, তার সেই ডার্ক সার্কেল নেই। কিন্তু এই মান্নাতের ফাঁদে পড়ে হতে কতোক্ষণ?

না আর ভাবতে পারছে না। মাথায় জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। কোল্ড কফি শেষ করে টাকা দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। মান্নাতের চেয়ে দূরে থাকাই ঢের ভালো। লাভ ম্যারেজ তার জন্য নয়। মানুষ চিনতে একদম কাঁচা। বাবা মা মিলে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ দিলেই সে খুশি। একদম প্রেম ফেম তার দ্বারা হবে না!

একা রাস্তায় ছুটে ছুটে হাঁটছে। সামনের বাস ধরে এখান থেকে বেরুতে হবে মান্নাতের আসার আগে। দেখে ফেললেই সর্বনাশ। সামনের বাস ও ছুটে চলে যায় অবস্থা! বাস ধরতে আমরিশা ছুটে চলল। আচমকা হাওয়ার বেগে গাড়ি থামল তার সামনে এসে। তাল সামলাতে না পেরে প*ড়ে গেল মাঝরাস্তায়। বাস ছুটে পালিয়ে গেল ততোক্ষণে!

হম্বিতম্বি করে গাড়ি থেকে বেরুলো এক সুদর্শন! আমরিশা তখনো মাঝরাস্তায় ধুলো বালিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সুদর্শন পুরুষ সরির বুলি গাইতে গাইতে হাত বাড়াল। আমরিশা ফিরে চাইল তার দিকে।

সূর্যের তীর্যক কিরণ এসে পড়ছে লোকটার উপর। মুখ দেখার জো নেই। আমরিশা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ফেলল। একটা কালো সানগ্লাস ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছে না সে। হাত ধরতে দ্বিধে থাকা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়াল সে। হাতে চোট পেয়েছে ভীষণ।

ছেলেটার মুখে এখনো সরির বুলি ফুটছে। আমরিশার রা*গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এতো অনুশোচনা হলে ড্রাইভ করার সময় চোখ কোথায় রেখেছিলে রে। লোকটা এবার সানগ্লাস খুলে বিনয়ী হয়ে বলতে লাগল,

“বিশ্বাস করুন আমার খুব তাড়া ছিলো। বন্ধু হসপি’টালাইজড এই কারণেই আরকি, আই অ্যাম রিয়েলি সরি!
আমরিশার মন বুঝি এবার নরম হলো। আহারে বেচারার বন্ধু হসপিটালাইজড তাই এতো তাড়াহুড়ো করছিলো। সে বুঝতে পেরেছে। নরম সুরে বলল,

“ইটস ওকে!”

“নো নো, ইটস নট ওকে। আপনি হাতে চোট পেয়েছেন। আমার সাথে ফার্মেসিতে চলুন।”

“ওসব কিছু না। আপনি যেতে পারেন।

“আপনাকে এভাবে রেখে চলে যাওয়া ভীষণ অ*ন্যায় হয়ে যাবে যে।

আমরিশা চোখ মুখ কুঁচকে নিল। ছেলেটাকে এখন সুবিধার মনে হচ্ছে না। ছেলেটি দেখতে সুদর্শন। লম্বা চেহারা, মৃদু হাসিতে সূর্যের কিরণ মিলিয়ে মুখটা ঝলমল করছে। থিতুনিতে আবার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িও আছে। তাদের ভাষায় বলে ছাগলের দাঁড়ি।

“আপনি প্লিজ আমার সাথে চলুন!”

লোকটা এবার জোরাজুরি করছে ভীষণ। অপরিচিত লোকের সাথে এতোসময় ধরে কথা বলাই যেন অ*ন্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরিশার কাছে। এটা তার স্বভাববিরোধি কাজ। সে বিরক্ত স্বরে বলল, “আপনার বন্ধু না হসপিটালাইজড। তার কথা ভুলে গেলেন।”

“না না, সেখানে তো আরো মানুষ আছে। আপনার সাথে তো কেউ নেই। মানে কাউকে দেখছি না!”

চোখ কপালে তুলল আমরিশা। ছাগলে বলে কি? কেউ নেই বলে কি সে এবার তার গাড়িতে চড়বে। পেছন থেকে শক্ত কণ্ঠে কেউ বলল, “ও একা এটা তোকে কে বলল?”

আমরিশা থমকে দাঁড়াল কয়েক মূহুর্ত! মান্নাত! শুকনো ঢোক গিলল সে। গলা শুকিয়ে আসছে। ধুর! এই লোকটার কারণে দেরি হয়ে গেল নাহলে এতোক্ষণে সে পা*লিয়ে যেতে পারত। মান্নাতের জুতার শব্দ গাঢ় হচ্ছে। এদিকেই আসছে সে। মান্নাতের উপস্থিতিতে বাতাসের প্রবল ধাক্কা গায়ে লাগল তার। সে পাশেই দাঁড়িয়ে!

ছেলেটার গলার স্বর নেমে এলো। শুষ্ক গলায় বলল, “তুই?”

মান্নাতের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, “তুই এখানে কি করছিস?”

মিরাজ একগাল হেসে বলল, “তেমন কিছু না। একটা এক্সি’ডেন্ট হতে যাচ্ছিল এই আর কি? ম্যাম লাস্ট বার রিকোয়েস্ট করছি আপনি কি আমার সাথে যাবেন?”

“ও আমার সাথে যাবে মিরাজ। তুই ভাগ এখান থেকে!

“কি অদ্ভুত দোস্ত! আমি যার সাথেই কথা বলি সেই দেখি তোর জিনিস হয়ে যায়!”

আমরিশা চোখ মুখ কুঁচকে দুজনের কথা শুনছে। এরা কি দুজন দুজনকে চিনে? মান্নাত চোয়াল শক্ত করল। কথা না বাড়িয়ে আমরিশার হাত চেপে ধরে হাটা ধরল। মিরাজ কিয়ৎকাল চেয়ে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। অতঃপর সানগ্লাস পরে গাড়িতে বসল।

আমরিশার হাতে লাগছে। চো*ট পাওয়া হাতই আবার চেপে ধরেছে মান্নাত। হাঁটছে বিদ্যুতের গতিতে। পা মিলাতেও কষ্ট হচ্ছে যেন। তার মৃদু স্বরে মান্নাতের কান অবধি পৌঁছাতে পারছে না। এক পর্যায়ে ধপ করে রাস্তায় থেমে দাঁড়ালো শক্ত পায়ে।

বাঁধা পড়ে পিছন ফিরে তাকাল মান্নাত। আমরিশার রাগে ঠোঁ*ট চেপে আছে। মান্নাতের হাতের বাঁধন নরম হলো। এগিয়ে এসে বলল, “কি হয়েছে?”

“ধরে বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?

“এই তো সামনের ক্যাফেতে। চলো সেখানে।

“না, বাসায় যাবো!

বাসায় যাবে মানে? তুমি না আমার সাথে দেখা করতে এসেছো। এ কি কাঁদছো কেন?

কাঁদছি মনের সুখে?

হাতে কি হয়েছে তোমার?

এতোক্ষণে দেখার সময় হলো?

দেখি চলো চলো। ওই তো ফার্মেসি। লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না চলো আমার সাথে!

হন্তদন্ত হয়ে মান্নাত একাই ছুটল ফার্মেসিতে। যাবার আগে হাতের ফুলের তোড়া দিয়ে গেল আমরিশার হাতে। তার রাগ ততোক্ষণে গলতে শুরু করেছে। হালকা গোলাপি রঙের গোলাপ ফুলগুলো গোলাপী রঙের একটা কাগজে মুড়ানো। মেডিসিন নিয়ে ছুটে বের হলো সে। আবারো তাকে সাবধানে ধরে বেঁধে নিয়ে গেল ক্যাফেতে। একটা টেবিল দেখে বসে পড়ল। চট করে মেডিসিন নিয়ে তার হাতে লাগিয়ে দিতে লাগল। আমরিশা নিশ্চুপ নয়নে দেখছে। মান্নাত খুব মনোযোগ দিয়ে তার হাত ধরে আছে। শক্ত হাতের উপর তার নরম হাতখানি। অতি সন্তর্পণে হাতের উপর ফু দিয়ে চলছে। আর কেবল বলছে, “রাস্তায় হাঁটার সময় একটু দেখে শুনে হাঁটবে না। কি করো এসব?”

আমরিশা জবাব দিতে পারছে না। সে হারিয়ে গেছে। এই লোকটার যত্নের কাছে সে হারিয়ে যাচ্ছে। লোকটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদা শার্টে এতো মানিয়েছে যে মনে হচ্ছে নজর লেগে যাবে। চুল গুলো এতো পারফেক্ট ভাবে আঁটসাঁট করে না বেঁধে রেখেছে যে খুলে এদিক ওদিক সরছে না। কয়েকটা চুল কেবল কপালের কাছে এসে জড়ো হচ্ছে তাও। আমরিশার মনে মনে একটা কথাও আওড়াচ্ছে, “কি সুদর্শন লোকটা!”

———-

নীলকুঞ্জ ভিলা। ভিলার দুই পাশে লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটো জারুল গাছ। গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে সজ্জিত গাছদুটো। হাতড়ে ছোঁয়া যায় না ভীষণ উঁচু! তবুও সে অনেকক্ষণ লাফালাফি করল ফুল দুটো ছোঁয়ার আশায়। পেলো না। এখন আঙুর ফল টক। মন খারাপ করে ভেতরে চলে গেল।

কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। থামার নাম নেই। আলফি ছুটে নিচে নামছে। কে এসেছে সে জানে? এই মেয়েটা খুব বজ্জাত। একবার কলিং বেল চাপলে চেপে ধরেই রাখে। ছাড়ে না। ইচ্ছে করে দুটো দিতে। বাদর মেয়ে একটা!

আলফি দরজা খুলে দাঁড়াল। বিরস তার চাহনি। সামনের পিচ্চি মেয়েটা মাথায় সিঁথি এঁকে দুটো বেনুনি করে দু পাশে রেখেছে। পরনে বেগুনি রঙের একটা ফ্রক। গলায় ওড়না ঝুলছে। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। মাথা অবধি কোমড় এদিক থেকে ওদিক নাড়িয়ে বলল, “ভাইয়া আরবি আছে?”

বড়*সড় একটা ধমক খেলো জবাবে। সোজা হয়ে তটস্থ হয়ে গেল আফরিন। আলফি ফের গম্ভীর স্বরে বলে উঠল, “মিড়কি ব্যারাম হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন সাপের মতো?”

আফরিন ঠোঁট চেপে ধরল। চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বেনুনি দুটো ধরে বলল, “আরবি আছে?”

“ঢং যতসব। এই সময় বাসায় থাকবে না তো কই থাকবে?”

“আপনি এমন করেন কেন ভাইয়া? সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম সুন্দর মতো বলতে পারেন না?”

“তোরা এই যুগের মেয়ে হলি একেকটা ঢঙ্গী*বাজ। তোদের ঢঙের জ্বালায় বাঁ*চি না।”

“বাচ*তে কে বলেছে? ম*রে যান। দেখি সরুন যেতে দিন!”

আলফি ভ্রু কুঁচকে জায়গা দিয়ে দাঁড়াল। ভাব দেখিয়ে ধপ ধপ করে ভেতরে ঢুকে গেল আরবি। আলফি মুখে কুলে পেতে নিল। আজ এই বিচ্ছুর সাথে বেশি কথা বলে ফেলেছে। আর বলা যাবে না। তাহলে মাথায় উঠে বসবে।

আরবি ইন্টার পড়ুয়া কিশোরী মেয়ে। ভীষণ উড়নচণ্ডী। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা কিছুদিনের মধ্যে শুরু তাই এখানে এসে আরবির সাথে গ্রুপ স্টাডি করে। আরবি তার ক্লাসমেট!

কিন্তু কেবল চুপচাপ পড়াশোনা করার মতো মেয়ে না সে। একটু সুযোগ পেলেই হলো। বাড়িতে প্রথম যেদিন এসেছে সেদিন থেকেই আলফির পিছন লেগেছে। আরবিকে তো সোজাসুজি বলেছে, “বুঝলি আরবি, ভেবে নিয়েছি আমার ননদ তোকেই বানাবো। পড়াশোনা আমায় দিয়ে হবে না। তোর ভাই হেব্বি সুন্দর। তার গলায় ঝুলে তোর ভাবি হয়ে যাবো। বুদ্ধিটা কেমন বল তো?”

জবাবে আরবি কেবল হেসেছে। সে ভীষণ শান্তশিষ্ট আর নিশ্চুপ হয়ে। দরকার না পড়লে একটা কথাও বলে না। ওদিকে আফরিনের কাজ সবসময় আবোলতাবোল বলা। আরবি ও ভাবল আফরিন মজা করছে। কিন্তু আদলে সেটা না।

আলফি নিজের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার একদম মনে আছে বের হবার সময় দরজা বন্ধ করেই গেছে কিন্তু এখন খোলা। এর অর্থ সে নিশ্চিত ভেতরে ঢুকেছিল। আসলেও তাই। টেবিলের উপর মোড়ানো বেগুনি রঙের একটা খাম রয়েছে। শুদ্ধ ভাষায় প্রেমপত্র! এই প্রেমপত্র লিখেছে আফরিন স্বয়ং নিজেই। মেয়েটার সাহস আকাশচুম্বী। প্রথম প্রেমপত্র দিয়েছিল তাদের পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনই। শুধু তাই নয়, একদম আলফির কাছে এসে সামনাসামনি তার হাতে খাম ধরিয়ে বলল, “পড়বেন কিন্তু! সময় না হলেও সময় করে পড়বেন ভাইয়া!”

শেষের ভাইয়া ডাক দিয়েছিলো টেনে টেনে। যেন ইচ্ছে করে তাকে জ্বা*লানো। আলফির পুরোপুরি তখন তা*জ্জব বনে গেল। এরপরের ঘটনা এর থেকেও সাং*ঘাতিক। চিঠির সম্বোধন দিয়েছে “হবু স্বামী” ডেকে! এই দেখেই আলফির বিষম উঠে গেল। বেচারা এক বোতল পানি শেষ করে ফেলল কিন্তু পুরো চিঠি শেষ করার সাহস পেলো না। এই মেয়ে তো জ্ব*লন্ত অগ্নি*শিখা!

বাঁদরের বংশোদ্ভূত! সৌভাগ্যবশত মানুষের ঘরে জন্ম কিন্তু জিন আছে ঠিক বাঁদরের। এর বাড়ির মানুষ এরে সামলায় কিভাবে এই চিন্তা আলফির। ইন্টার পড়ুয়া বেশির ভাগ মেয়েই অনেক ফাজিল।

এরা নতুন নতুন কলেজে উঠে নিজেকে বড় ভেবে বসে। ভাবে এই তাদের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। খুব লায়েক হয়ে গেছে। এখন গুনে গুনে তাদের চেয়ে ১০ কি ১২ বছরের বড় ছেলেকে পটিয়ে প্রেম করে ফেলবে। আফরিন হচ্ছে সেই দলের লিডার!

প্রেমপত্র পড়ে আছে পড়ে থাকুক। আলফি ভুলেও সেটা ধরবে না। নিশ্চিত এটা ধরলে তার জ্বর আসবে। এমন সব কথা লেখা থাকে না, লজ্জায় তার মুখ কান সব লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করে মেয়েটাকে ধরে আছাড় মার*তে। তার আর আফরিনের বয়সের তফাৎ কম করে হলেও ১১ বছর তো হবেই।

কিন্তু আফরিনও থামবার পাত্র নয়। গুনে গুনে আজ ২৪ দিন হলো সে প্রেমপত্র দিচ্ছে। ২৪ দিনে ২৪ টা প্রেমপত্র। অথচ ওই লোকটা একটার ও জবাব দেয়নি। পড়েছো তো? অবশ্যই পড়েছে। না পড়ে যাবে কোথায়? আফরিনের লেখা মারা*ত্মক সুন্দর। আর কিছু না হোক ওই সুন্দর লেখার কথা ভেবে লোকটা চিঠিগুলো পড়বে বলে আফরিনের ধারণা।

পড়াশোনায় আজ আফরিনের বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই। আরবি মনোযোগ দিয়ে অ্যাকাউন্টিং করছে। আর আফরিন খাতার উপর কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। তার মন পড়ে আছে আলফি ভাইয়ার উপর। তাকে আজ কি হ্যান্ডসাম টাই না লাগছিলো। ইশ কালো রঙের জিন্স, কালো রঙের টি শার্ট। আরেকটু হলেই আফরিন হা*র্ট অ্যাটাক করত। লোকটা এতো সুন্দর কি দরকার আবার সেজেগুজে থাকার। আফরিনের মনে হয় আলফি ইচ্ছে করেই সেজেগুজে থাকে তাকে হার্টফেল করিয়ে দেবার জন্য। তা নয়তো আর কি?

না আজ আর পড়াশোনা হবে না। সে নিশ্চুপে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আলফির ঘরে গিয়ে উঁকি ঝুঁকি মা*রছে। টেবিলের উপর খাম না দেখতে পেয়ে খুশিতে এক লাফ দিলো। আবার মুখে হাত চেপে ধরল। কেউ না আবার দেখে ফেলে। পা টিপে টিপে ঢুকল ঘরের ভিতর।

কেউ নেই তো ঘরের মধ্যে। টেবিলের কাছে ডাস্টবিনে আবার একটু ঝুঁকে দেখল। লোকটা খাম ফেলে দেয়নি তো আবার। না নেই! একগাল হাসল সে। চোখ পড়ল টেবিলের উপর রাখা জারুল ফুলগুলোর উপর। ইশ! ফুল ও বেগুনি, সেও বেগুনি! ভাইয়া বেগুনি হলেই একটা সংসার সাজিয়ে ফেলত। খুশিতে গদগদ করে বেরিয়ে গেল সে। ফুল গুলো তার হাতের মুঠোয়!

#চলমান

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯

প্রান্তিক প্ল্যান করছে হানিমুনের। বিয়ের এতো গুলো দিন পেরিয়ে গেল অথচ এখন অবধি বেচারা হানিমুন করতে পারল না। দুঃখটা যেন বুকে এসে বাঁধে। কিভাবে কোথায় হানিমুন করতে যাবে সব ঠিক করল। এসবের চক্করে দু একবার ভুলবশত প্রিয়তার ডাক ইগনোর করে ফেলেছে। ঝ*ড় সেখান থেকেই শুরু। প্রিয়তা এখন কিছুক্ষণ পরপরই তাকে খোঁচা মারছে। যেমন তেমন খোঁচা না, বুক ঝালাপালা করে দেওয়া খোঁ চা!

রান্নাঘরে প্রিয়তা যখন সকালের নাস্তা তৈরি করছিলো তখনি প্রান্তিক উটকে এসে জুড়ে বসল। প্রিয়তা তাকে এক ধম*কে দূরে সরিয়ে দিল। বউ নিয়ে প্রান্তিক মশাই আছে বড় বিপদে। মেয়েদের আগে এতো ঝামেলার মনে হয়নি। হ্যান্ডেল করা খুব সহজ। এখন এসে বুঝতে পেরেছে সব মেয়ে আর বউ এক চিজ না। দুইটাই ভিন্ন।

নরম আহ্লাদী সুরে বলল, “বউ কি হয়েছে?”

ছুরি*র মতো ধারালো কথাবার্তা, “একদম কাছে আসবেন না বলে দিলাম। কাছে এলেই ঘচাং করে গ*লা কেটে দিবো!”

হাতে ধারালো ছু*রি দেখে দু কদম পিছিয়েই গেল প্রান্তিক। এই কম বয়সে বউয়ের হাতে খু*ন হবার বিন্দুমাত্র শখ তার নেই। প্রিয়তা একাই বিড়বিড় করছে। কি বলছে সব প্রান্তিক শুনতে পারছে,

“কি ভাবেন কি নিজেকে? আমাকে মগের মুল্লুক মনে হয়! প্রিয়তা নাম আমার। বেশি তড়িঘড়ি করে একদম গলা ফাঁ*ক করে দিবো। জিহ্বা কে*টে নিবো। অন্য মেয়েদের সাথে রসের আলাপ করা। চোখ উঠি*য়ে মাছকে খেতে দিবো। দেখুক মেয়ে! আমিও দেখি মেয়ে দেখে কিভাবে?

প্রান্তিক জান হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে পেলো। সাং*ঘাতিক কথাবার্তা। অথচ বিয়ের পর কোনো মেয়ের সাথে রসের আলাপ তো দূর ভালো করে চেয়েও দেখেনি বউয়ের ভ*য়ে। প্রিয়তা কি আর এসব বুঝবে। বুঝবে না! বউরা কিছু বুঝতে চায় না। এরা নিজেরাই বড় বুঝদার!

খাবার টেবিলে সকালের নাস্তা সাজানো। দাদাজানের মুখের সামনে খবরের কাগজ নিয়ে বসে আছেন। প্রান্তিক অপেক্ষা করছে বউয়ের। নিশ্চিত দাদাজানের সামনে উল্টোপাল্টা কিছু বলবে না। না বলবে না, দাদাজানের সামনে প্রিয়তা লক্ষ্মী মেয়ে। খাবার এসে গেছে। পাউরুটি টোস্ট করা আর ডিম পোজ। সাথে ধোঁয়া উঠা এক কাপ চা। খাবার গুলো দাদাজানের। প্রান্তিকের জন্য তাই এসেছে কিন্তু পাউরুটি গুলো যেন একটু বেশিই শক্ত শক্ত লাগছে। প্রান্তিক এদিক ওদিক উল্টে দেখল। আরে এতো পো*ড়া পাউরুটি!

নিচু স্বরে এই কথা বলতেই প্রিয়তা শাস*নের সুরে বলল, “যা পেয়েছেন তাই খান!”

বলেই চোখ রা*ঙালো। প্রান্তিক মহোদয় মাথা নেড়ে চায়ের সাথে ভিজিয়ে তাই খাওয়া শুরু করল। কি নজর রে বাবা। এই যেন গিলে ফেলে! প্রান্তিক কে বউয়ের ভ*য়ে পোড়া রুটি খেতে দেখে দাদাজান আড়ালে হাসলেন। তবুও হাসির শব্দ প্রান্তিকের কান অবধি এসে পৌঁছাল। সে চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল। তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে সবাই।

দাদাজান বলে উঠলেন, “একদম ঠিক আছে, এটাই তো হওয়া উচিত তোর সাথে!”

প্রান্তিক চিবিয়ে চিবিয়ে শব্দ করে খাচ্ছে যেন জবাব দিচ্ছে। হুঁ আসছে, এমনই হওয়া উচিত। প্রিয়তা আবারো এলো ফলের জুস নিয়ে। এমন শব্দ করে খেতে দেখে ক*ড়া গলায় বলে উঠলো, “শব্দ করে কেন খাচ্ছেন?”

“যা রুটি দিয়েছো এভাবে না খেলে পেটে হজম হবে না!”

“পছন্দ না হলে চলে যান। খেতে কে বলেছে?”

প্রান্তিক আর কথাই বাড়াল না। কি দরকার ভাই! এখন তাও যা পোড়া রুটি কপালে জুটছে পরে তাও জুটবে না। কোন দিন খাতা বালিশ সব বের করে দিয়ে বলবে, বাসা থেকেই চলে যান। দাদাজান যা চিজ, তার পক্ষ জীবনেও নিবে না। এরপর একদিন বলবে দুনিয়া ছেড়ে বি*দায় দিন!

বিদায় নেবার কথা মনে আসতেই বিষম খেয়ে উঠল সে। প্রিয়তা চোখ রাঙি*য়ে বলে উঠলো, “কোন মেয়ের কথা ভাবছেন এতো মনোযোগ দিয়ে? নাকি তারা আপনাকে মনে করেছে!”

বিষম থেমে গেল সাথে সাথে। জীবনে এতো ধা*ক্কা একসাথে কখনো খায়নি সে। হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। রে*গে যে উঠে যাবে সেই সুযোগ নেই, দুটো কথা বলবে সেই সাহসও নেই। অতঃপর মাথা নিচু করে পোড়া পাউরুটি গিলতে লাগল। খেতে এখন আর খারাপ লাগছে না আসলে!

———-

আমরিশা কি মান্নাতের প্রেমে পড়েছে? পড়েই গেছে। এক পা অলরেডি কাঁদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রেমের কাঁদা বলে কথা, এতো সহজে ছাড়ে নাকি। মান্নাতের প্রতি সে বিষয়ে ভাবে দুর্বল সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে মান্নাত। মেয়েদের মন মানানো বেশ শক্ত কাজ নয়। এদের একটু কেয়ার করলেই ভালোবাসায় লুতুপুতু খায়। মান্নাত তা খুব ভালো করেই জানে।

রোজ গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ভার্সিটির সামনে। গেটআপ ও নেয় তেমন। জেল দিয়ে চুলগুলোকে আঁটসাঁট করে রাখে। পরনে থাকে ইস্ত্রি করা শার্ট।
আজ পরেছে আকাশী রঙের শার্ট। শার্ট ইন করা জিন্সে। হাতার ফোল্ট গুলো উঠিয়ে রেখেছে কনুই অবধি। হাতে তো ফুলের তোড়া মিস করা যাবে না। সূর্যের তীর্যক কিরণে তার সাথে গাড়িটাও চকচক করে। হিরো হিরো ভাব তবে নায়িকার অভাব নেই।

মেয়েরা সবথেকে বেশি প্রভাবিত তাদের বান্ধবীদের কথায়। এ এক অদ্ভুত সত্য! আমরিশার মনে যে মান্নাতের জন্য অনুভূতি আছে তা টের পেয়েছে বান্ধবীদের কল্যাণে। এরা একেকজন মান্নাত কে দেখেই ফিদা। এতো বড়লোক ছেলে কেই বা হাতছাড়া করতে চায়। এরই মধ্যে যখন জেনেছে আমরিশা ছেলেটাকে পাত্তা দিচ্ছে তখন তো উঠে পড়ে লেগেছে। আমরিশার কি মাথায় ঘিলু আছে? থাকলে কি আর এমন ছেলেকে হাতছাড়া করে? ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম তার সাথে আমার বড়লোক। আহা সোনায় সোহাগা যে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস কেউ ফেলে দেয় বুঝি!

বান্ধবীদের এমন কানাকানি শুনে আমরিশার মাথা পুরোপুরি গেছে। আগে তো এভাবেই অর্ধেক গেছিলো এখন ষোলকলা পূর্ণ হলো। এখন তার মনে হচ্ছে মান্নাত উপযুক্ত। এসব ভেবে প্রেমে আছড়ে পড়েছে। মন্দ নয়! পড়েছে স্বেচ্ছায় কিন্তু স্বেচ্ছায় যে বের হওয়া সম্ভব নয়। একবার মনের আদান প্রদান হয়ে গেলে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।

প্রেম এক জ্বল*ন্ত অগ্নি*কুণ্ড! হয়তো ভালোবেসে সুখের নীড় করবে নয়তো সেই জ্ব*লন্ত অগ্নি*কুণ্ডে জ্ব*লে পু*ড়ে যাবে। কিন্তু মরবেও না আর বের হতেও পারবে না। উঁহু সম্ভব নয়!

একেকদিন একেক বাহারী ফুল নিয়ে হাজির হয় সে। আজ হাতে হলদে সূর্যমুখীর ছড়াছড়ি। মিলিয়ে আবার আমরিশাও পরেছে হলদে। এতোক্ষণে বুঝল, আসার আগে কেন বার বার ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলো কি রঙের জামা পরেছো? ইশ, একটাই তো মন। আর কতোবার মনটা নিয়ে নিবে লোকটা।

বান্ধবী গুলো তাকে দেখতে পেয়েই জ্বা*লাচ্ছে। ইশ কি প্রেম! দেখলি দেখলি, আমরা ঠিক বলেছি। ছেলেটা তোর জন্য পারফেক্ট! এতো ভালো ছেলে আজকাল হয় নাকি? একবার সুযোগ দিয়েই দেখ না। তাদের কথাবার্তায় আড়*ষ্ট হয়ে যায় সে। চোখে মুখে রক্তিম আভার ছাপ। সত্যি বলতে, মেয়েদের জীবন প্রথম ধ্বং*স হয় এসব বান্ধবীদের হাতেই!

হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি সকলে একমত হবেন না। না হোন গিয়ে, আমার কি? আমি দেখেছি তাই বলেছি কিন্তু সবার আবার নিঃশে*ষ হয়ে যায় না। কেউ কেউ প্রাণ ফিরে পায়, ফিরে পায় প্রাণভোমরা।

কাছে আসতে দেখেই ভদ্রলোকের মতো গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। ফুলগুলো হাতে দিয়ে যত্নে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। অতঃপর দরজা আটকে নিজের সিটে এসে বসেছে। এতো টুকু কর্মকাণ্ডেই বান্ধবী গুলো মরি মরি। ঢং যতসব!

গাড়ি চলছে আনমনে। আমরিশা জানে না কোথায়ও যাচ্ছে তবে যাচ্ছে কোথাও। রোজই তো যায়, ঘুরে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে দারুণ সময় কাটায়। এভাবেই চলছে সপ্তাহ খানেক। তবে আজ কোথায় যাচ্ছে?

ফুলগুলো চমৎকার। দু একটা ছবি না তুললেই নয়। ছবিতে ক্যামেরা ভর্তি। পোষালো না তেমন। মান্নাতের দামী ফোনটা এগিয়ে দিল। এতে ছবি ভালো আসে। আচ্ছা মান্নাত কি সত্যিই প্রেমে পড়েছে!

আলবাদ পড়েছে। নাহলে প্রান্তিকের শালীকে নিয়ে ঘোরাঘুরি। বালাই শাট! জ*বাই করে ছেড়ে দিবে প্রান্তিক। যদি জানতে পারে তার শ্যালিকা সাহেব কে নিয়ে ঘোরাঘুরি তাহলেই হয়েছে। যদিও মেয়েটার থেকে এখনো সরাসরি কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমরিশা খোলাখুলি ভাবে কিছু বলছে না। বললে রক্ষা পেত। প্রান্তিক হাতেনাতে ধরে ফেললে বলে দিত, দুজন দুজনকে ভালোবাসে। সে সত্যিই ভালোবাসে! সত্যিই আগলে রাখতে চায় আর সেও থাকতে চায়। তখন অসুবিধে ছিল না। আজ যে করেই হোক মনের খবর জানতে হবে।

গাড়ি থামল একটা ভবনের সামনে। আমরিশা নাক কুচকালো। গ্যারেজের কাছে তারা কেন এসেছে? অতঃপর জানল, নিচতলা গ্যারেজ উপরে ঘর আছে। এখন সেখানেই যাবে। ঘরের কথা শুনেই ব্যাঙের মতো লাফিয়ে উঠল। সে কেন যাবে অন্যের ঘরে!

মান্নাত বুঝিয়ে উঠতে পারল না। ওমন ঘর না, এটা তাদের বন্ধুদের আড্ডা দেবার জায়গা। আমরিশা কে দেখাতে এনেছে। দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই এখানেই কাটে তার। নিচের গাড়ির গ্যারেজ ও তাদের নিজস্ব। তাই ভ*য় পাবার কিছু নেই।

আমরিশা ভ*য় পাচ্ছে,সাথে লজ্জাও। দুজন সেয়ানা ছেলেমেয়ে একা একটা রুমে থাকবে। এটা কি ঠিক? ঠিক ভুলের বিচার করার আগেই তারা দুতলায় চলে এলো। বিশাল বড় ঘর। মনে মনে হচ্ছে কোনো স্টুডিও। গানের গিটার পড়ে আছে, সাইডে কতোগুলো আবার বিয়ারের বোতল। ওদিকে আবার গোল বিছানা আবার পাটি পাতা। পুরোই মাছের বাজার। মান্নাত এসব দেখে মাথা চুলকালো। যাবার আগে বার বার বলে দিয়েছে পরিষ্কার করে রাখছে। ওরা কিছু করেনি?

রা*গে শিরা ফুলে উঠল। ইচ্ছে করছে একেকটা কে ধরে না! থাক, এবার রা*গ সংবরণ করল। আমরিশা ফুল হাতে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে মুচকি হেসে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে স্নিগ্ধ লাগছে ফুলের মতোই। মান্নাত দাঁত একপাটি বের করে হেসে বলল,

“ওদের বলেছিলাম পরিষ্কার করে রাখতে। দেখো ওরা কিছু করেনি।”

“ওরা কেন করবে? আপনার আপনি পরিষ্কার করুন।”.

“শুধু কি আমার। আমাদের সকলের। সবার কাছে চাবি থাকে।”..

“সবাই বলতে?”

“এই আমি, প্রান্তিক, আলফি, আশিক, মৌনতা সবার কাছে!”

ঘরের মাঝামাঝি এসে সটাং করে দাঁড়ালো আমরিশা। থেমে থেমে বলল, “ভাইয়া! যদি এসে পড়ে।”

“না না, ও এখন ছুটি ছাড়া আসে না। বাসায় বউ আছে তো। তোমার বোনকে রেখে আমাদের সময় দিবে নাকি?”

আমরিশা লজ্জা পেলো বোধহয়। বলল, “কিন্তু যদি বাকিরা..

“আসলে আসুক। সমস্যা কি? তোমার ভাইয়া না এলেই হলো!”

হাতটা ধরে ঘরের মধ্যে আনলো তাকে। এবার ছেড়ে দিল। গোল সাইজের বিছানার উপর আমরিশা বসে পড়ল। পাশেই রাখল ফুলগুলো। মান্নাত কফির পানি গরম বসাল। বলল, “খাবে!”
আমরিশা মাথা নাড়ল।

সময় যাচ্ছে, দুজনের কেউই কথা বলার জন্য কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। কেমন অদ্ভুত লাগছে। পাশাপাশি এতোক্ষণ কতোক্ষণ বসে থাকা যায়। কফিটাও শেষ এখন। এবার তবে! আমরিশা একটু নড়েচড়ে উঠল। ইতস্তত করে বলল, “এখন যাওয়া দরকার!”

বলেই উঠতে লাগল। মান্নাত তার হাত চেপে ধরল। আবারো বসে পড়ল সে। তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। মান্নাত তার দিকে ফিরে বসল। হার্ট অ্যাটাক না করে ফেলে এবার। দু হাতে হাতখানি জড়িয়ে ধরে বলল,

“বলো ভালোবাসো আমায়?”

আমরিশা চমকে উঠল। হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে নাকি কিছুই না। মাথায় কিছু খেলছে না। মান্নাত পুরো ৫ মিনিট অপেক্ষা করল। জবাব এলো না। নিশ্চুপতা অনেকেই হ্যাঁ বলে ধরে নেয়। তাই সে তার থিতুনিতে হাত রেখে বলল, “আমি কি হ্যাঁ ধরব?”

লজ্জায় আমরিশা মুখ তুলে তাকাতে পারছে না। হাত সরিয়ে আনতে পারছে না। মান্নাত শক্ত করে ধরে আছে। মুখ সরিয়ে নিতেই মান্নাত এদিকে ফিরাল। গালে হাতটা আলতো করে রেখে সে কাছে আসছে। অনেক কাছে! এই চুমু টুমু খাবে নাকি আবার? আমরিশার আ*ত্মাশুদ্ধ কেঁপে উঠল। শেষ মূহুর্তে এসে মুখ সরিয়ে নিলো সে। মান্নাত এটা ভাবতে পারিনি।

যখন বুঝতে পারল লজ্জায় আর অপ*মানে আঁতকে উঠল। দ্রুত তার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, “সরি সরি! আমার কন্ট্রোল করা উচিত ছিল। আমরিশা প্লিজ ভুল বুঝো না। কথা দিচ্ছি আর কখনো হবে না। প্লিজ আমরিশা, লক্ষ্মীটি কথা শোনো!”

আমরিশা লজ্জায় মুখ তুলে তাকালো না। কেবল মাথা নিচু করে মাথা নাড়ল। মান্নাত আহত হলো। করুণ স্বরে বলল, “প্লিজ ফিরে তাকাও। এমন করো না। সত্যিই ভুল হয়ে গেছে। আমরিশা!

আমরিশা তাকাল। দু সেকেন্ডের চোখাচোখিতে আরো লজ্জা পেয়ে গেল। সে চোখ সরিয়ে নিল মূহুর্তে। হেসে উঠল আনমনে। স্বস্তি ফিরে এলো মান্নাতের। মেঝের উপর আসন পেতে বসে বলল, যাক বাবা! কথা দিচ্ছি তোমার পারমিশন না এক ধাপ ও আগাবো না। এই তো তোমার কসম!”

আমরিশা না হেসে পারল না। মান্নাত ও হাসছে। তবে বেশিক্ষণ টিকলো না। দরজায় এরই মধ্যে ঠকঠক শব্দ করছে। এখন কে এলো? কেইবা আসবে। মান্নাত উঠে দাড়াতেই প্রান্তিকের গলা ভেসে এলো। চেঁচিয়ে বলছে, ভেতরে কে আছিস? এই দরজা খুল!

মান্নাত ভর্য়া*ত দৃষ্টিতে ফিরে তাকাল। আমরিশা অবস্থা আরো বেহাল। রক্ত’শূন্য মুখ নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছটফট করছে কইমাছের মতো। হায় হায় ভাইয়া এসেছে! এখন কি হবে? দু’জনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। ওদিকে প্রান্তিক দরজা নক করেই যাচ্ছে। এই না ভে*ঙে ফেলে! এখন কি হবে?

#চলমান