প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব-৩০+৩১

0
61

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩০

প্রান্তিক সজোরে দরজায় লাথি মা*রছে। সে নিচ থেকে জেনেই এসেছে মান্নাত সবে উপরে উঠেছে। তাহলে শা’লার এতো কেন দেরি লাগছে দরজা খুলতে। কয়েকদফা লা*থি দেবার পর দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। মান্নাত দরজা থেকে কয়েকপা দূরে। প্রান্তিক দাঁত কিড়মিড় করে ভেতরে এলো। মাথায় চাটি মেরে বলল, “গা’ঞ্জা খাচ্ছিলি নাকি ম*দ গিলছিলি? এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?”

মান্নাত রান্নাঘরের দিকে উঁকি মে*রে বলল, “আমি ওসব খাই না!”

এতোক্ষণ তোড়ফোড় করেছে কোথায় লুকানো যায় তা নিয়ে। ঘর প্রায় পুরোটাই ফাঁকা! কিছুই নেই। এর মধ্যে রান্নাঘর ছাড়া আর কোনো ভালো জায়গা নেই। প্রান্তিক ওদিকে যাবে না। মান্নাত চেষ্টা করবে যে করেই হোক তাকে যেন এখান থেকে বের করে দেওয়া যায়। ওদিকে আড়াল থেকে আমরিশা কান পেতে শুনছে তাদের কথা।

প্রান্তিক ধপ করে সোফার উপর বসে পড়ল। কোলে কুশন নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বলল, “তোর চোখ মুখ এমন লাগে কেন? কি হইছে?

“ককককই কিছু না তো!”

“কিছু না মানে নির্ঘাত কিছু হয়েছে। দরজা খুলতে এতো সময় কেন লাগল? মে*য়ে এনেছিস? কই মেয়ে কই?

বলেই এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। মান্নাতের প্রাণটা যেন বেরিয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে বলল, “কি বলছিস, মে*য়ে কেন আনব? কোনোদিন এনেছি?

প্রান্তিক আড়চোখে তাকাল। তার শার্ট টেনে বলল, “এমন সাহেব বাবু সেজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে আমি বুঝি না ভেবেছিস।”

“আরে সত্যি বলছি! এমন কিছু না। ওই একটা ছোট কাজ ছিলো সেরে ফিরলাম সবে।”

প্রান্তিকের কথাটা বিশ্বাস হলো না বোধহয়। সে চোখ ঘুরিয়েই রইল। মান্নাত স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছে। পারছে না। বারংবার তার উত্তেজিত মন বাজ পড়ার মতো লাফিয়ে উঠছে। প্রান্তিক এই না আমরিশা কে খুঁজে পেয়ে যায়। কথা ঘোরানোর উছিলায় বলল,

“তুই এখানে কি করছিস? মনে তো হচ্ছিল অফিসে যাচ্ছিস?”

প্রান্তিক মুখটা বেজার করে ফেলল। ব্লেজার খুলে রাখল। টি টেবিলের উপর পা তুলে বলল, “ধুর আর কথাই বলিস না।”

“কি হয়েছে? সিরিয়াস কিছু? বউ আবার পেটিয়েছে তোকে?”

প্রান্তিক নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। মান্নাত হাসার চেষ্টা করে বলল, “রেগে যাচ্ছিস কেন ব্রাদার!”

“ওটা বউ? বউ না, সাক্ষাৎ রা*ক্ষস!”

“কি হয়েছে আবার?”

“কি হয়নি জিজ্ঞেস কর। আজ সকাল বেলা আমায় পো*ড়া রুটি খেতে দিয়েছে। কোনোমতে পোড়া রুটি খেয়ে বেরিয়েছি, না খেলেও রক্ষে ছিল না। ভাবলাম ঠিক আছে একবেলা তো ব্যাপার না। অফিসে যাব লাঞ্চ বক্স সাথে করে পাঠিয়ে দিল। মন ভালো হয়ে গেল, যতই রাক্ষ*স হোক না কেন? বউ তো আমারই। সুন্দরী আছে, ভালো আছে! এখন লাঞ্চ বক্স খুলে দেখি খাবারের বদলে চিরকুট।”

“কি বলিস? কি লেখা তাতে?”

“কি লেখা? লিখা ছিল, অফিসের কাজ করে পেট ভরাও। খাবার কেন খেতে হবে? মানে বুঝিস! অফিসের কাজের অজুহাতে কি একবার তার ফোন ধরেনি তাই সে আমায় কিভাবে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছে!”

মান্নাত মুখ টিপে হেসে ফেলল। প্রান্তিক রে*গে কটমট করে তাকাতেই চুপসে গেল। হেলান দিয়ে চোখ বুজে বলল,

“বিয়ে তো করিস নি, করে নে একবার তখন বুঝবি বউ কি চিজ। ভাই গার্লফ্রেন্ড এর থেকেও কম প্যারা দেয়। বউকে কিছু বলা যায় না। সবসময় হাতে ছু*ড়ি নিয়ে থাকে। কিছু বললেই ঘাড় থেকে মাথা টুকুস!”

মান্নাত রান্নাঘরের দিকে উঁ*কি মারল। আমরিশার বিলাই চোখ দুটিও উঁকি মারছে সেখান থেকে। চোখে চোখ পড়তেই বলল, “বিয়ে তো আমি করবোই!”

“হ্যাঁ, করে ফেল। আর কতোদিন মেয়ে নিয়ে ফূ*র্তি করবি?

মান্নাত ধ*মকে উঠে বলল, “তুই আবোলতাবোল এসব কি বলছিস?

“কি বললাম আবার?

মান্নাতের মন ছটফট করছে। এই প্রান্তিকের জন্য আমরিশা তাকে ভুল না বুঝলেই হয়। ইচ্ছে করছে বাদরটাকে বউয়ের কাছে দিয়ে আসতে। ও বউয়ের কাছেই শিক্ষা হবে। আমরিশা, ডার্লিং গেলো কই? আঁখি জোড়ার আর হুদিশ মিলে না।

মান্নাত মন খারাপ করে বসে পড়ল। প্রান্তিক হতভম্ব! মান্নাতের হাল সে বুঝতে পারছে না। একটু পর পর ওর মুখের রিয়েকশন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। মন হচ্ছে কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক হালকা কেশে উঠল। মান্নাত তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। এর আবার হঠাৎ কি হলো?

মান্নাত থমথমে গলায় বলল, “এখানে কেন এসেছিস? লাঞ্চ করতে?

“না করেছি। এলাম এভাবেই আড্ডা দিতে। অনেকদিন দেই না। এরপর বউয়ের জ্বা*লা। ও সবকিছুতে আমায় সন্দেহ করে।”

“তুই কি সন্দেহ করার মতো ছেলে নস?

“এসব কি বলছিস? তুই বলতে পারবি বিয়ের আগে আমি যেমন ছিলাম এখনো তাই আছি?

মান্নাত গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে ফিরে তাকাল। গালে হাত রেখে বলল, “না, বউয়ের দোহাই দিয়ে ভালো হয়ে গেছিস।”

প্রান্তিক গাল বাড়িয়ে হেসে বলল, “বেশিদিন লাগবে না দেখিস। বউকে নিজের ফান্দে জড়িয়ে নিবো। দেখিস।”

“এছাড়া অন্যকিছু বল। ও কর্ম তোর না।”

“আজব , তুই কার দলে?”

“অবশ্যই ভাবির!”

প্রান্তিক ঠোঁট কামড়ে ধরল। বলল, “শ্বশুর বাড়িতে আমার একটা ভালো সুনাম আছে জানিস। একমাত্র জামাই আমি! অনেক দায়িত্ব আমার উপর।”

“তোর শ্যালিকাদের বিয়ের দায়িত্ব?”

দরজার ওপাশ থেকে একজোড়া গলা ভেসে এলো। এরা এসেই বলল, “কার বিয়ে?”

মান্নাত ফিরে তাকাল। মৌনতা আর আশিক হাজির। এদের পিছন পিছন আলফিও এসে জড়ো হয়েছে। মান্নানের মুখটা শুকিয়ে গেল। এ কেমন পরীক্ষা খোদা। সবাই আজই কেন আসছে?

আলফি গিয়ে প্রান্তিকের সোফার পাশে বসে বলল। আশিক এসে বসল বিছানায়। মৌনতা তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। বেচারি ইদানিং বিয়ের শপিং নিয়ে মহাব্যস্ত। আজও গেছিল শপিং এ। এদিকে আলফিও মনমরা! আশিক শুধায়,

কার বিয়ের কথা বলছিস?

আমার শ্যালিকাদের।

মৌনতা বলে, – তোর শ্যালিকা জানি কয়টা?

৩ টা। প্রিয়তরা চারবোন।”

বাহ এখনো তিনটে বিয়ের বাকি। কোনটার বিয়ে দিবি?

আমরিশার। প্রিয়তার মেজো বোন। আমার শ্বশুর সেদিন ওর বিয়ের কথা বলছিলো। ভালো পাত্র খুঁজছে। বলল, আমাকেই দেখতে।

মান্নাত হাতের নখ কামড়ে বলল, “তো ভালো পাত্র কি নেই নাকি? তোর আশেপাশেই তো আছে!

প্রান্তিক মাথা চারদিকে ঘুরিয়ে বলল, “ছেলে কই?

মান্নাত মুখ শুকিয়ে ফেলল। মৌনতা উঠে বসল। হেসে বলল, “তুই কি তোর কথা বলছিস মান্নাত?

প্রান্তিক নাক ছিটকে বলল, “অ্যাহ! তুই? নো নো সি ডির্জাভ বেটার আইমিন বেস্ট। তুই তো গুডের ধারে কাছে যাসনি। তুই না। আলফি হলেও ভেবে দেখা যেত!”

আলফি উঠে বলল, “এই না আমি না।

“কেন? তুই কি গে?

আলফি চোখ মুখ কুঁচকে কিছু বলার আগেই মান্নাত বলে উঠলো, “কেন? আমায় কি কমতি? তোর বন্ধু হিসেবে কি আমি খারাপ?

“আমি সেটা কখন বললাম। তুই তো আমার জানের দোস্ত কিন্তু সংসার তো আমি করব না ভাই!

প্রান্তিকের কথা শুনে আশিক শব্দ করে হেসে ফেলল। মৌনতা হাসতে হাসতে তার কোলে ঢুলে পড়ল। মান্নাত রে*গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “বেশি বলছিস। তোর চেয়ে আমার রেকর্ড ভালো।”

মৌনতা বলে উঠলো, “হ্যাঁ, সেটাই তো। বেচারা আজ অবধি যাকে পছন্দ করেছে তাকেই অন্য শিকারি শিকার করে নিয়ে গেছে।”

“ইশ্ বেচারা! ভাই সামলে দেখিস বিয়ের দিন ভাবীকে যেতে দিস না যেন।

“এই সরতো!

“দরজা ওদিকে!”

হাত বাড়িয়ে প্রান্তিক দেখালো। মান্নাত বিরক্ত মুখে রান্নাঘরের দিকে আগালো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমরিশার পা ব্যাথা হয়ে গেছে। সে এখন মেঝেতে বসা। মান্নাত তাকে অনুসরণ করে মেঝেতে বসে পড়ল। আমরিশার চোখে মুখে হাজারটা বিরক্তির ছাপ। এই কোথায় এসে ফেঁসে গেলো তারা!

এদিকে আশিক বিছানার উপর পড়ে থাকা সূর্যমুখী মুখ গুলো দেখে বলল, “এই ফুল কার?”

তারা কেউ এই ব্যাপারে জানে না। ফুলের কথা শুনে মান্নাত ছুটে বেরুলো। মৌনতা ফুল হাতড়ে বলল,

“ছিঃ প্রান্তিক তুই বিয়ের পরেও এসব করছিস?

প্রান্তিক আকাশ থেকে যেন টপকে পড়ল। আমতা আমতা করে বলল, “এগুলো তো আমার না।

“তাহলে কার?

সন্দেহ করার মতো একজনই ছিলো। তার দিকেই সকলে সন্দেহের বশে তাকাল। মান্নাত হেসে বার বার চুল হাতড়ে নিচ্ছে। ওদিকে আমরিশা দেওয়ালে কান পেতে দোয়া দরুদ যা আছে সব পড়ছে। মান্নাত বলল,

“আমার আমার, মানে একজনকে দিবো তো..

প্রান্তিক চটে উঠে বলল, “শা লা চরি*ত্রহীন! এই চরিত্র নিয়ে আমার শ্যালিকার বিয়ে তোর সাথে দিবো? অসম্ভব! আমি ভাবছিও না!”

মান্নাত সেখানেই দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। দেওয়ালের এপাশে আমরিশাকে দেখা যায়। ওদিক প্রান্তিক ওরা। সে হেসে বলল, “আমি তো শুধু কথার কথা বলেছি, যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করব। দরকার পড়লে তুলে এনে করব। তবুও তাকেই করব।

প্রান্তিক ফোন হাতে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে,‌ ঠিক আছে। হেল্প লাগলে বলিস!

মান্নাত মুচকি হেসে আমরিশার দিকে তাকালো। আমরিশা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে। কি লজ্জা! দুলাভাই এসব কি বলছে?

আলফির মুখটা শুকনো অনেকক্ষণ থেকেই। মৌনতা টের পেয়ে শুধায়, “তুই কি প্রেমে পড়েছিস আলফি?”

আলফির আগেই প্রান্তিক জবাব দেয়, “আরে না না, ও তো গে!

আলফির তার মাথায় চাটি মে*রে বলল, “এই কু*ত্তার বাচ্চা!

প্রান্তিক হেসে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। তার কাজ একটু পর পর ফোন চেক করা। বলা যায় না কখন তার বউ আবার ফোন দিয়ে বসে। মেসেজের রিপ্লাই না দিলে আজ বাড়িতেই ঢুকতে দিবে না। শেষে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে।

সে বলে, “আলফি আর প্রেমে? অসম্ভব! পুরুষত্ব হঠাৎ করে জাগলো কিভাবে তোর? ব্যাপার কি হ্যাঁ?”

“হ্যাঁ, তোমার তো লেদা কাল থেকেই জাগছে। তাই এই দশা।

আশিক আর মান্নাত মুখ টিপে হাসল। মৌনতা বলে উঠলো, “এই থাম তোরা। আলফি তুই বল মেয়েটা কে?

আলফি তার নামটা বলতে গিয়েও বলল না। মাথা নাড়িয়ে বলল, “ না না, তোরা জাজ করবি।”

প্রান্তিক কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “আরে করবো না, ছেলের নামটা বল!”

আলফি পায়ের জুতা খুলার আগেই প্রান্তিক উঠে দৌড়। আশিক হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিপুটি খাচ্ছে। দেওয়ালের আড়ালে নব কপোত কপোতী মুখ টিপে হাসছে। এদিকে আলফি রে*গে লাল হয়ে আছে। দরজার সামনে প্রান্তিক দাঁড়িয়ে বলল, “রে*গে যাচ্ছিস কেন? আমি তোর সার্পোটে আছি।

মৌনতা এবার বলে উঠলো, “আরে থাম না। আলফির জীবনের নতুন প্রেম তাও আবার প্রথম শুনতে দে।

আশিক এবার আগ্রহ নিয়ে বলল, “এই আলফি বল আমিও শুনব।

“আরে কি বলব? প্রেম টেম কিছু না। ইদানিং একটা পিচ্চি মেয়ে আমায় প্রেমপত্র দিচ্ছে। সেটাই সমস্যা?”

“এর আবার নতুন কি? প্রেমপত্র তো আগেও পেতি?

আলফি হাত চুলকে বলল, “না নতুন না কিন্তু…

প্রান্তিক হেসে এবার এগিয়ে এলো। আলফির ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “তুই বলছিস এবার মেয়েটাকে তুইও পছন্দ করিস?

আলফি জবাব দিল না। ছোট থেকেই একটু লাজুক সে। মৌনতা এবার হাত পা গুটিয়ে বসল। ইন্টারেস্টিং! এতোবছরে আলফিকে এমনভাবে দেখেনি সে। মান্নাতেরও চোখে মুখে আগ্রহ। বলে উঠলো,

“নাম কি? কি করে?

আলফি বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কি বলবে সে? অনেকক্ষণ ইতস্তত করার পর বলল, “আরে বাদ দে না। ও অনেক ছোট। এবার ইন্টারে পড়ে আমার বোনের সাথে। ওর ক্লাসমেট!”

মান্নাত রীতিমতো চমকে উঠল। বিষম খেয়ে কেশে উঠল। আশিক নাক ছিটকে বলল, “ছি ছিঃ তুই বুইড়া দামড়া পোলা এই বাচ্চা মাইয়ার প্রেমে পড়লি?

“ছিঃ করার কি হলো?

মান্নাত গলা মিলিয়ে বলল, “ঠিকই তো। ঠিক বয়সে বিয়ে হলে আজ তোর মেয়েই ইন্টারে থাকত।

আলফি ঠান্ডা গলায় বলল,
“এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না!

মৌনতা ও বলল, “তোদের বয়সের গ্যাপটা অনেক বেশিই আলফি। আর মেয়েটাও বাচ্চা। কিশোরি কি না, ও বয়সে এমন হয়ই। বড় হলে ঠিক হয়ে যায় আবার! তোর এই প্রেম চলবে না। তুই পিছিয়ে যা!

আলফি জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। প্রান্তিক ওর পাশেই দাঁড়িয়ে। ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “ধুর তোরা কি বলছিস? প্রেম ভালোবাসায় বয়স ম্যাটার করে নাকি? ইদানিং তো কতোই দেখছি। আমার সার্পোট আছে। ওই মেয়েকেই তোর সাথে বিয়ে দেব। কথা দিলাম! তুই শুধু প্রেম টা কর। করতে পারবি তো? নাকি শিখিয়ে দিব!”

চোখ টিপ দিয়ে কথাটা বলল প্রান্তিক। সকলে হেসে উঠলো একসাথে। আলফি দাঁত কিড়মিড় করছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই প্রান্তিক কে উঠিয়ে এক আছাড় মারতে। দেওয়ালের ওপাশে আমরিশা হাসছে। মান্নাত মুগ্ধ চোখে দেখছে। মেয়েটার হাসি সুন্দর!

———-

প্রান্তিক নিজের ব্যাগ গুছিয়েছে। সাথে প্রিয়তার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। পুরোটাই প্রিয়তার অজান্তে। এবার লোক পাঠিয়ে এগুলো গাড়িতে তুললেই হয়ে যায়।

প্রিয়তা সকাল সকাল রান্নাঘরে ব্যস্ত। ওদিকে সব কাজ সেরে প্রান্তিক ডাকছে গলা ফাটিয়ে। পুরো বাড়িতে তার গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। প্রিয়তা হাতের কাজ ফেলে ছুট লাগালো। লোকটা নাহলে ডাকতেই থাকবে।

প্রিয়তা ঘরের দোড়গোড়ায় আসতেই প্রান্তিক চুপসে গেল। মেয়েটা হাপাচ্ছে। প্রান্তিক মৃদু হেসে বলে, “বউ এসেছো?”

“ডাকছিলেন কেন?”

“তোয়ালে দাও, গোসলে যাবো!”

প্রিয়তা আহম্মকের মতো চেয়ে রইল। প্রান্তিক হাসছে। এখন একটু শীত শীত পড়ছে। জানুয়ারি মাসের শেষ কি না। তবুও প্রিয়তা মাথা চটে গেলো রাগে। যেন আগু*ন জ্বলছে। রেগে মেগে অস্থির হয়ে এগিয়ে আসতেই বলল, “দেখো বউয়ের কাজ স্বামীর কথা শোনা!”

“এই সামান্য কাজের জন্য নিচ থেকে ডাকিয়ে এনেছেন। মানুষ আপনি?”

“অবশ্যই মানুষ। রক্তে মাংসে মানুষ! এতোদিনেও বুঝোনি।”

প্রিয়তা দাঁত কিড়মিড় করছে। তোয়ালে এই বেলকনিতে। লোকটা বিছানায় বসা। এখান থেকে উঠে বেলকনিতে যেতে পারে না। আহারে আসছে মহারাজ আমার। রে*গে পা বাড়াল বেরিয়ে যাবার জন্য। তখনি গভীর স্বরে প্রান্তিক বলল,

“স্বামীর কথা অমান্য করা ঘোর অন্যায়!” প্রিয়তা থেমে গেল। রাগে ধপ ধপ শব্দ করে পা ফেলে গেল বেলকনিতে। প্রান্তিক ততোক্ষণে বিছানা ছেড়ে নেমে উঠে দাঁড়াল। প্রিয়তা কাছে এসে তোয়ালে বাড়ালো। সে বলল,

“একা একা গোসল করতে খারাপ লাগে। সঙ্গ দিবা না?”

প্রিয়তা তোয়ালে তার মুখে ছু”ড়ে মেরে বলল, “একাই যান!”

প্রান্তিক থতমত খেয়ে গেল। প্রিয়তা বেরিয়ে যাচ্ছে। সে কেশে উঠল। প্রিয়তা পা থামাল। সে বলল, “আমার একটা বিজনেস ট্রিপ আছে। বাইরে যেতে হবে!

“কবে যাবেন?

“আজই, ব্রেকফাস্ট সেরে বেরুবো।

বুকটা ধক করে উঠল তার। একথা তো আগে জানায়নি। এখন হঠাৎ কোথায় যাবে। প্রিয়তা পিছন ফিরল ঠান্ডা ভাব নিয়ে। বলল,

“মজা করছেন?”

“একদম না। ব্যাগ ও গুছিয়ে ফেলেছি। গাড়িতে উঠানো হয়ে গেছে। আমি আজই যাবো।

প্রিয়তার মুখ মলিন হচ্ছে। কণ্ঠে নেমে এসেছে নমনীয়তা। বলল, “হঠাৎ?

“হ্যাঁ ইমার্জেন্সি!”

“কবে আসবেন?

“বলতে পারছি না। দশ দিন কি তার কমও হতে পারে। আবার বেশিও। দেখা যাক।”

বলেই সোজা বাথরুমে চলে গেল। প্রিয়তা দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইল চুপটি করে। তার মনটা কেমন করছে। লোকটা এতো দিন বাসায় থাকবে না। কেমন লাগছে মনের ভিতর!

রান্নাঘরে কোনো মনোযোগ নেই তার। কাজও উঠছে না হাত দিয়ে। অথচ নাস্তা সেরেই তিনি বেরুবেন। দেখলো দাদাজান ও জানেন যাবার কথা। আশ্চর্য! সেই জানে না কেবল? আচ্ছা সেও কি যাবার বাহানা ধরবে? না না, বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কেমন দেখাবে না!

প্রিয়তা আবারো ভার্সিটিতে যেতে শুরু করেছে। প্রান্তিক নাস্তা করছে। প্রিয়তার তার শিউরে দাঁড়ানো। মনে মনে বার বার স্মরণ করছে, প্রান্তিক একটিবার তাকে বলুক, আমার সাথে চলো। সে তখনি রাজি হয়ে যাবে। সে যাবে! কিন্তু কাজের জায়গায় তাকে নিয়ে কোনো লাভ আছে? অবশ্যই আছে। তার রান্নাবান্না, দেখাশোনা, পোশাক ইস্ত্রি করে দেওয়া এসব সে ছাড়া কে করবে? হঠাৎই কেন এমন হতে হলো?

প্রান্তিক জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বলল, “প্রিয়তা তৈরি হয়ে নাও?”

বুকটা ধক করে উঠল ফের। গা চমকে উঠল। কেমন রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সে কি টের পেলো মনের খবর? একরাশ আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কেন?

“যাবার সময় তোমায় ভার্সিটিতে নামিয়ে দিবো। একই রাস্তায় তো!”

মুখটা বেজার হয়ে গেল। শুকিয়ে যাওয়া ভুলের মতো নেতিয়ে পড়ল সে। হতচ্ছাড়া লোক একটা। যাবার কথা বললে কি হতো? না করতাম নাকি? ব*জ্জাত একটা। জানি তো ইচ্ছে করেই না যাবার কথা বললি। ওখানে গিয়ে নিশ্চিত মেয়েদের র*ঙ্গ করবি। শুনতে পাই একবার। হাত পা ভে*ঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখব। কাজের খেতাপুড়ি!

রেগে মে*গে অস্থির হয়ে উপরে চলে গেল বিনা শব্দে। অথচ তার চোখ বলে দিচ্ছিল হাজারো কথা। সে চলে যেতেই প্রান্তিক আর দাদাজান একে অপরকে দেখে মুচকি হাসলেন।

প্রিয়তার পরনে ছিমছাম একটা সেলোয়ার কামিজ। চুলগুলো অগোছালো ভাবে খোঁপা করা। মুখটাও গুমড়ো। তাকে দেখেই বোঝা যায় মনটা খারাপ। সেও চায় প্রান্তিক তার মন খারাপ বুজুক। কিন্তু ব্যাডা মানুষ বলে কথা। এরা জীবনেও বেডি মানুষের মনের খবর জানতে চায় না।

যাবার আগে দাদাজান মাথায় হাত রেখে বললেন, সাবধানে যাও। প্রিয়তার একটু অবাক লাগল। দাদাজান কখনো তো বলেন না এভাবে। সে তো দূরে কোথাও যাচ্ছে না। দুপুরের আগেই চলে আসবে। প্রান্তিক তাড়া দিচ্ছে। অতঃপর মাথার চিন্তা ফেলে তাকে বেরুতে হলো।

গাড়ি চলছে আপনগতিতে। রেডিওতে ভীষণ রোমান্টিক একটা গান বাজছে। অথচ প্রিয়তার মাঝে বিষণ্নতা। সে একবার রাস্তা আরেকবার প্রান্তিক কে দেখছে। লোকটা কি তার চোখের ভাষা বুঝে না!

ভার্সিটির রাস্তা পেরিয়ে যেতেই খানিকটা অবাক হলো। মনে সুপ্ত বাসনা। জিজ্ঞেস করার আগেই প্রান্তিক বলল, “আমায় বিদায় দিয়ে যেও। গাড়ি নিয়েও তো কাউকে ফিরতে হবে!”

“আমি কি গাড়ি চালাতে জানি?”

“রাফি ওখানে আছে!”

“ওহ!

বিষণ্নতা নিয়ে কথাটুকু বলল। মন খারাপ করে চেয়ে রইল বাইরের দিকে। অশ্রুসিক্ত নয়ন দুটি অশ্রু থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

গাড়ি এসে থামল এয়ার পোর্টে। প্রান্তিক নেমে পড়ল। সাথে সাথে নামল প্রিয়তাও। রাফি আর তার সঙ্গীদের দেখে খানিকটা চিন্তামুক্ত হলো। তারা ব্যাগ নামাচ্ছে!

তিনটে ব্যাগ! একটা মানুষের তিনটে ব্যাগ লাগে কোন কাজে তাও এতো বড় বড় সাইজের। সে কি কিছুদিনের জন্য যাচ্ছে নাকি আজীবন। প্রিয়তা বুঝে উঠতে পারে না। এখানেই তাকে বিদায় দিবে মনে হচ্ছে। কাছে এগিয়ে এসে ললাটে চুমু খেল। চোখের অশ্রু বিনা অনুমতিতে গড়িয়ে পড়ল। প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে মুছে ফেলল। লোকটিকে অবশ্যই কাঁদতে কাঁদতে সে বিদায় দিবে না।

আচমকা প্রান্তিক তার হাত শক্ত করে ধরে বলল, “চলো যাওয়া যাক!”

প্রিয়তা হতভম্ব! তার হতবাক নয়ন কথা বলতে পারছে না। প্রান্তিক হেসে শুধায়, “আমার মিসেস কে ছাড়া আমি একা যাবো? এটা আদৌও হতে পারে। চলেন মিসেস চৌধুরী! আমাদের হানিমুনের প্রথম ট্রিপে আপনাকে ওয়েল কাম!

প্রিয়তা লজ্জায় মরি মরি। তার আর উনার হানিমুন। কি বলছে লোকটা তাও সবার সামনে। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না। তার গায়ের শার্ট খামছে ধরল আনমনে!

#চলমান

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩১

পুরো ১১ ঘণ্টার জার্নি শেষে তারা পা রাখল বিদেশের মাটিতে। প্রিয়তা প্রায় পুরোটা সময় জেগেই ছিল। জীবনে প্রথমবার প্লেনে চড়ছে। মনে বিরাট উত্তেজনা। এতো উপর থেকে পুরো শহরকে এতো ছোট লাগে সে বড়ই আশ্চর্যান্বিত! এমন নয় কখনোই শুনেনি কিন্তু দেখে অবাক না হয়ে পারেনি। লোচনে বিস্ময় ঘটিয়েছে মেঘের উপর আরেক মেঘের বাড়ি দেখে। সুবিশাল রহস্যময় আকাশকে কাছ থেকে এতো সুন্দর এতো দারুণ লাগে চোখ না সরিয়ে থাকা যায় না। রাতে এই আকাশকে কেমন লাগে? তারা গুলো কি আরেকটু বড় দেখা যায়? আচ্ছা চাঁদ কে কি খুব কাছ থেকে দেখা যাবে? মনে কতো কৌতুহল কতো উচ্ছ্বাস!

আবার একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছিল। প্লেনে মানুষ আহামরি নয়। যারা আছে তাদেরও পোশাক আশাকের কি বাহার। সে হিসেবে প্রিয়তার পোশাক আশাক একদমই সাধারণ। সে কি আর জানত এভাবে অন্য দেশে চলে আসবে। তৈরি তো হয়েছিল ভার্সিটির জন্য। স্বপ্নের মতো যেন এখানে চলে এলো। এতো মন খারাপ হতো না। এখানেই আবার প্রান্তিকের পরিচিত একজনের সাথে দেখা। তিনিও সুট টাই পরা ভদ্রলোক। প্রান্তিক টেনে নিয়ে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল এতো বারণ করল শুনলো না। লোকটা কি ভাববে এখন?

এসব ঘটনা ভাবতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে। কিন্তু অদম্য কৌতুহল তা আটকে রাখতে পারে না। ওদিকে প্রান্তিক কিছুক্ষণ জেগে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। তার তো এসবের অভ্যাস আছেই!

তারা নেমেছে অনেকক্ষণ। চেকিং এখনো হচ্ছে। প্রিয়তা কোথায় এসেছে নিজেও জানে না। কেবল জানে তারা হানিমুনে এসেছে। জিজ্ঞেস করল কোথায় এসেছে? ফের একই জবাব, হানিমুনে! এই লোকটা জীবনে সোজা ভাবে উত্তর দিতে শিখেনি।

আশেপাশে বিদেশি মানুষজনের মাঝে এখন নিজেকেই বিদেশি বিদেশি লাগছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। এদের পোশাক আশাকের জন্য বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।

কোথাও দেখল বড় বড় লেখা লন্ডন! এটা দেখেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। ছোটবেলা থেকেই তার ভীষণ শখ লন্ডন শহর ঘুরে দেখবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে পেরে একটু যেন থমকেই গেল সে। চোখে মুখে অদ্ভুত এক ঝলক। তৃষ্ণা মিটিয়ে যেমন মানুষ আনন্দিত হয় ঠিক তেমন। অতঃপর চেকিং শেষে তারা বেরুলো। নিজের নতুন পাসপোর্ট থেকে ভীষণ রকম ধাক্কা ও খেল। পাসপোর্টের ছবিটা জঘন্য। এ কথা বলতেই প্রান্তিক তাকে কাছে টেনে নিল। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার কাছে তোমার সবই সুন্দর!”

বাইরে রাফি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাফিও এসেছে তাদের সাথে। তারা গাড়িতে চড়ে রওনা দিল। স্বপ্নের শহরকে রাতের সোনালী আলোয় জ্বলতে দেখে মুগ্ধ হলো সে। তার মুগ্ধতা ছেয়ে গেল প্রান্তিকের হৃদয় অবধি।

এতোক্ষণ জার্নি করার পর এবার যেন একটু ক্লান্তই লাগছিলো। একটু একটু করে বোতলের সবটুকু পানি শেষ করে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সে। যখন ঘুম ভাঙল তখন তারা পৌঁছে গেছে। গাড়ি থেকে নেমে আকাশছোঁয়া বিশাল হোটেলটি দেখল। সামনেই জ্বলজ্বল করছে নাম। রিভারস্টোন হোটেল! তাদের স্বাগত জানানোর জন্য কয়েকজন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আবার এখানে এসেও ফর্মালিটি। প্রান্তিক সবটা দেখছে একাই। ওদিকে প্রিয়তা ব্যস্ত হোটেলের চারদিক দেখতে। এতো বিশাল আর নামি দামি হোটেল সচরাচর তার দেখা হয়না। হোটেলের কারুকাজ চোখে পড়ার মত। ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না এখানে থাকা!

নিজেদের রুমের চাবি তারা পেয়ে গেছে। কক্ষে পৌঁছাতেই অলৌকিক ভাবে ক্লান্তি এসে আগলে ধরল তাকে। খুব ক্লান্ত লাগছে এবার। চোখ বুজে আসছে ঘুমে। ইচ্ছে করছে নরম তুলতুলে বিছানার উপর ধপ করে গিয়ে শুয়ে পড়তে। বিছানাটা ও সাজানো তেমনি ভাবে। লাল রঙের কারুকাজ করা কার্পেট পুরো ঘর জুড়ে বিছানো। ঘর বিশাল বড়, মাঝবরাবর ডাবল সাইজের একটা বিছানা। এতো আরামদায়ক বিছানাটা! পিছনে বেলকনি আছে বুঝি, সাদা পর্দা হেলেদুলে নাচছে সেখানে। এছাড়া আকর্ষণীয় সোফা, টিভি টি টেবিল , সোনালী রঙের ফুলদানি যেন রাজকীয় ভাব দিচ্ছে। এর সাথে জড়িয়ে আছে ঘরেতে আলোর মাখামাখি কিছু দেওয়াল ছবি। প্রিয়তা বিস্ময় প্রকাশ করেছে সেই কখন। মূহূর্তের মধ্যেই তাদের রাতের খাবার ঢুকে পড়ল। এতো জলদিও সে আসা করেনি। এই হোটেলে একরাত কাটানোর জন্য কি পরিমাণ টাকা গুনতে হবে সে ভাবতেও পারছে না।

ওসব তার ভাবার কাজ নয়। প্রান্তিকের ডাকে হুঁশ ফিরল।
“ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। যাও!”

বলেই বেলকনির কাছে এগুলো। প্রিয়তার একটু ও ইচ্ছে করছে না ফ্রেশ হতে। খাবারের ইচ্ছেও নেই। সে আসলে ঘুমাতে চায়। শরীর ম্যাচ ম্যাচ করছে। প্রান্তিক বেলকনির পর্দা সরিয়ে দিতেই স্বচ্ছ কাঁচের বাইরে এক টুকরো লন্ডন যেন দেখতে পেলো। কি ভারী সুন্দর নদী। তার উপর ঝুলে আছে ব্রিজটি। সোনালী আলোর রেখা উপচে পড়ছে নদীর উপর। ড্রামাটিক দৃশ্য। প্রিয়তার শরীরে রোমাঞ্চ ছেয়ে গেল। সে এগিয়ে এলো। প্রান্তিক মৃদু হেসে স্বচ্ছ কাঁচের দরজা খুলে দিল। হুঁ হুঁ করে ঠান্ডা বাতাসে ঘর ভরে উঠল।

“এটা হচ্ছে..

“থেমস নদী।

“তুমি জানো।”

প্রিয়তা প্রান্তিকের দিকে ফিরে মাথা নাড়ল। বিস্ময়ে তার আঁখি জোড়া চকচক করে উঠল।

উদাম বুকের উপর লেপ্টে আছে সে। চোখ জোড়া বুজে আছে অক্লান্ত ভাবে। অন্যজন তার মাথায় উপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সেই কখন থেকে। প্রিয়তার উঠার নাম নেই। এই নরম বিছানা ছেড়ে তার উঠতে ইচ্ছে করছে না। প্রান্তিক উঠেছে সেই ভোরে। ভেবেছিল তাকে নিয়ে সূর্যোদয় দেখতে যাবে। ম্যাডামের ঘুম ভাঙলে তো। এরপর উঠে বলবে, আপনি উঠালেন না কেন?

প্রান্তিক কাত হয়ে এপাশ শুয়ে পড়ল। প্রিয়তার ঘুম তখনো ভাঙেনি। তার মুখে আলতো করে আদুরে ছোঁয়া দিলো সে। এবার তার নিজের একটু একটু ঘুম পাচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগায় ঘুমটা যেন গাঢ় হয়ে গেল। সে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে!

ঘুম যখন ভাঙল তখন অনেক দেরি। এক প্রকার চমকে উঠল সে। প্রিয়তা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। একটু আগেই একটা মেয়ে এসে সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে। হ্যাঁ, সকাল তবে ভালোই হয়েছে। দরজা বন্ধ করে প্রিয়তা তার দিকে ফিরে তাকাল। পা অবধি লম্বা একটা কালো পোশাকে তার শরীর আবৃত। প্রিয়তা মৃদু হেসে বলল, “উঠে পড়ুন, নাস্তা সেরে নিন।”

অবশেষে নরম বিছানা ছেড়ে সে নামল। ফ্রেশ হতে গেল। এরই ফাঁকে প্রিয়তা কফির মগে চুমুক দিল। বেলকনির কাছে এসে পর্দা সরিয়ে দিল। দরজা খুলল না, কারণ বাইরে ভীষণ ঠান্ডা। ওপার থেকেই উপভোগ করতে লাগল। দরজা খোলার শব্দ। সে এসেছে। প্রিয়তা পিছন মুড়ল। প্রান্তিকের উদাম পিঠের অংশ তার চোখে বাজছে। চিক চিক করছে পিঠখানা। বাহুর রগ ফুটে উঠেছে আশ্চর্য ভাবে। পরনে কেবল একটা টাউজার কোমর অবধি নেমে গেছে। কফি হাতে এদিক ফিরল। তার সুঠাম বাহু দেখে একটু স্তব্ধা খেয়ে গেল সে। ছিপছাপ গায়ের গঠন, গভীর দুটো দৃষ্টি কফি মগে চুমুক দিয়ে এদিক ফিরে আছে। তার ঘন এলোমেলো চুল গুলো তাকে কাছে টানছে। ইচ্ছে করছে আলতো হাতে চুলগুলো ঠিক করে দিতে। সূর্যের আলোক রেখা আয়না ভেদ করে তীর্যক ভাবে এসে পড়ল তার শরীরের উপর। আরো সুদর্শন, আকর্ষণীয় হয়ে উঠল সে। বুকের উপর জুড়ে থাকা ঘন লোম গুলো চকচক করছিলো। ওই উদাম বুকের উপরই এতোক্ষণ লেপ্টে ঘুমিয়ে ছিল ভেবে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। প্রান্তিক পা বাড়াচ্ছে দেখে উল্টো হয়ে দাঁড়াল।

পেছন থেকে আগলে ধরল সে। তার পেশিবহুল হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল কোমরটা। কফি মগটা রেখে পেছন থেকে গলায় শক্ত হাতের ছোঁয়া জড়িয়ে দিল। অন্যপাশে অধরের ছোঁয়ায় তাকে মাতাল করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। প্রিয়তা খুব করে চাইছে ঠিক থাকতে পারছে না। ঘন,‌গভীর একেকটা চুমু তার হৃদয় তোলপাড় করে দিচ্ছে।

হিচকে টেনে তাকে সামনে ঘুরাল। সামনের ফিতেটা খুলে দিতেই পিছলে শরীরের আবরণ টুকু মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। শিরশির করে উঠল পুরো শরীর। ঠান্ডা লাগছে এবার। প্রিয়তা পাশে তাকাল। কফি টুকু বোধহয় শেষ করে হবে না। তার কফি মগের পাশেই নিজের টা রেখে দিল। সবুর হলো না আরেকজনের। হিচকে টেনে বিছানার উপর ফেলে দিল তাকে। প্রিয়তা ঘোর থেকে বের হতেই যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে ফিরতেই মোহনীয় আবেগ তাকে ফের চুমু খেয়ে উঠল। সে এগিয়ে আসছে তার দিকেই।

একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে সেও। পিছনে বালিশ ছাড়া আর পথ নেই। প্রান্তিক ততোক্ষণে তার সামনে এগিয়ে। নেশায় পুরোপুরি মাতাল সে। পরনে ছিল চিকন হাতার সাদা টপস টা। তার ঠোঁটে গভীর চুমু এঁকে দিয়ে সুযোগ বুঝে পিছের চেইন টা খুলে নিল। আপনাআপনি শরীর থেকে খুলে পড়ছে জামা। দুই হাতে সে আগলে ধরল। প্রান্তিক বুঝি হাসল। এখানে হাসার কি হলো?

সরু হাতা সরিয়ে চুমু গেল সেখানে। ওষ্ঠজোড়ার ঠান্ডা চুমু সাপের মতো পুরো এঁকেবেঁকে যাচ্ছে শরীরে। এরই মধ্যে প্রিয়তার মোহনীয় কণ্ঠে মাতাল হয়ে উঠল আরো দ্বিগুণ!

“এখন এসব না। ঘুমিয়ে সময় চলে গেছে চলুন ঘুরতে বের হই!”

“দোষ তোমার, হানিমুনে কেউ কি ঘুমাতে আসে!”

“তো?”

বোকার মতো প্রশ্নে জিহ্ব কা*মড়ে ধরল। প্রান্তিক তার মুখ বরাবর কাছে এসে জবাব দিল,“দেখাচ্ছি!” সহসা আঁকড়ে ধরল অধরজোড়া। দ্বিগুণ তোড়ফোড় করল সেখানে। একটি বার ছেড়ে দিতেই মেয়েটা দম নিল। সবুর করল না এক সেকেন্ড। ধৈর্য্য নামের ব্যাপারটা নেহাত ভুলে গেছে প্রান্তিক চৌধুরী!

তৈরি হয়ে বের হতে হতে বেলা গড়িয়ে গেল। প্রিয়তা হলদে রঙের একটা গোল জামা পরেছে হাঁটু অবধি। নিচ দিয়ে ঠিক থাকলেও জামাটার হাতা কাটা। তাতে ব্যাপার না। সে এটার উপর কালো একটা জ্যাকেট পড়বে তাতেই হলো। কালো জ্যাকেট খানা পড়তে গিয়ে গলার আঁ*চড় দেখে থেমে গেল। হাতের ছোঁয়ায় দেখতে লাগল। লাল হয়ে ফুটে উঠেছে তার ফর্সা দেহে। একবার হাতে পেলে প্রান্তিকের একটু রহম নেই। মুখ ফিরিয়ে উল্টো দিকে তাকালো। প্রান্তিক তৈরি হচ্ছে। শার্টটা গায়ে জড়ানোর আগেই উদাম পিঠ চোখে পড়ল তার। সদ্য নখের আঁচড় ফুটে উঠেছে সেখানে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠল। শরীর গরম হয়ে গেল পুরো। প্রান্তিক শার্ট পরে আয়নার সামনে হাজির। প্রিয়তার চোখ মুখ লালচে দেখে কপালে হাত রেখে প্রশ্ন করল, “কি হয়েছে? জ্বর এসেছে নাকি?”

প্রিয়তা মাথা নামিয়ে না করল। এ জ্বর এমন তেমন জ্বর নয়, ম*রণ জ্বর! এখন কে বুঝাতে যাবে সেই কথা!

#চলমান