#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩২
ঠান্ডা বাতাসে হৃদয় জুড়ানোর সাথে সাথে শরীরও কেঁপে উঠে। আলতো করে তার বাহু চেপে গায়ে ঘেসে রয় একটু উষ্ণতার আশায়। সন্ধ্যে গড়িয়েছে বেশ অনেকক্ষণ আগে। রাত্রি যত গভীর হয় উপরের খোলা আকাশ ততো বিস্তৃত মনে হয়। চারদিক আঁধারে ঢেকে গেলেও পাশের মানুষটির বাহু আঁকড়ে ধরে বাঁচার তৃষ্টা পায় আজীবন। জীবন কি এখানেই সুন্দর! একজন জীবনসঙ্গীকে নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করতে কতোটুকু সময় লাগে? কেমনি করে বা একজনকে হৃদয়জুড়ে ভালোবাসা যায়। কেবল একজনকেই? দুজনে হাঁটছে থেমস নদীর পাশেই। খোলা জায়গায় তাদের মতো অনেক মানুষ! তারাও হাঁটছে কিংবা বসে গল্প। ভালোবাসার আদান প্রদানের কি শেষ আছে?
সারাটে দিন কেটেছে রোমাঞ্চকর ভাবে। পুরো দিনটি দুজনে একসঙ্গে ঘুরেছে, লাঞ্চ করেছে, খোলা জায়গায় ঘাসের উপর ছোটাছুটি করেছে এরপর দিনের শেষে সূর্য যখন পশ্চিমে ঢুবে যায় তখন এসেছে থেমস নদীর কাছে। নদীর উপর ঝুলন্ত ব্রিজের চমকদার দৃশ্য দুজনকে বিস্ময় করে তুলে। খোলা জায়গায় বাতাসের তীব্রতা যেন আরো প্রচন্ড!
আচমকা প্রান্তিক চৌধুরী তার হাত দুটো চেপে ধরে। ফিরোয় তার দিকে। গালে ঠান্ডা হাত দুটো বসিয়ে চোখ দুটো স্থির করে। যেন চোখাচোখি হয় ঠিক করে। অতঃপর গভীর কণ্ঠে বলে উঠে,
“বউ! আমি একটা কাজ করতে যাচ্ছি। আই নো ইউ উইল বি ভেরি শাই বাট আই ওয়ান্ট টু ডু দ্যাট।”
গভীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে হৃদয়ের কথা টের পেয়েছে বহু আগেই। তবুও মনকে শান্ত করার জন্য শুধায়, “কি?”
প্রান্তিক চৌধুরী মৃদু হাসে। বলে উঠে, “আই ওয়ান্ট টু কিস ইউ, আই মিন রাইট নাও!”
সে চমকে উঠে। কয়েক পলক এদিক ওদিক চেয়ে জিহ্ব ভেজায় ঠোঁটে। সে হাসি অতি কিঞ্চিত। মিলিয়ে যায় দ্রুত। বুক ধকধক করছে এখনই। ধীরে সুস্থে এগিয়ে এসে চুমু খায় ওই গোলাপী নরম কোমল ওষ্ঠরেখা। যতই সময় যায় আগলে ধরে আরো তীব্র ভাবে। আলিঙ্গনে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ততোই। হাত একটা গাল ছেড়ে কোমর চেপেছে আরো আগেই। শক্ত পেশিবহুল হাত দুটো মালিশ করছে তার সরু কোমরে। বহুক্ষণ পর মুক্তি পায় সে। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে পুরো দেহ। তবু লজ্জায় লাল হতে বাধা ঠেকল না গাল দুটিতে। প্রান্তিক চেয়ে রয় রক্তিম মুখশ্রীর পানে। সদ্য লাল করা অধর দুটোয়। আবারো এগিয়ে এসে ক্ষুদ্র চুমু আঁকে সেখানে। দুজন দম নেয় দ্রুতবেগে। লজ্জায় প্রিয়তা কথা বলতেই ভুলে গেছে যেন। শব্দহীন ভাবে চেয়ে রয়। তার কেবল মনে হচ্ছিল লোকেরা তাকে দেখছে। কিন্তু আশ্চর্য! কেউ তাদের দেখছে না। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত!
প্রান্তিক তার ঘাড় চেপে এগিয়ে আনে। ললাটে লালট ঠেকায় শক্ত করে। তীব্র কণ্ঠে বলে উঠে, “বউ! তোমায় কথা দিচ্ছি, তুমি ছাড়া আর কেউ না। বাকিটা জীবন কেবল তোমার জন্য আর তুমি শুধুই আমার। ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না। আমি ছাড়ছি না। প্রান্তিক চৌধুরী তোমায় ছাড়বে না। ম*রে যাওয়ার আগে তো কখনোই না!”
প্রিয়তা কেবল শুনে আর ঘনে ঘনে দম ছাড়ে। পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে তার। ঠান্ডা বাতাস যেন থামার নামই নিচ্ছে না। ইচ্ছে করছে প্রান্তিকের বুকের মধ্যে লুটোপুটি খেতে। এতে যদি ঠান্ডা একটু কমে!
রাতের অন্ধকারে কেবল সোনালী আলোর ঝলক। নদীর তীরে তীব্র বাতাসে ক্ষুদ্র ঢেউ খেলছে একটু পর পরই। দুজন কপোত কপোতীর দাঁড়িয়ে সেখানে ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা নিচ্ছে। দিনের শেষে এরচেয়ে ভারী সুন্দর আর কি হতে পারে?
তারা ফিরে এসেছে রাত করেই। দুজনে কক্ষে ঢোকার সাথে সাথে খাবার চলে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে দুজনে একসাথে খেতে বসেছে। কিন্তু প্রিয়তা ফোন হাতেই ব্যস্ত। সারাদিনে একটিবারও কেউ কল করেনি। কি আজব! দেশে নেই বলে কেউ একবার খোঁজ ও নিবে না নাকি? তাদের সাথে ফোনে কথা বলছে। পাশের চেয়ারে বসে প্রান্তিক তাই খাইয়ে দিচ্ছে। মা বাবার সাথে কথা বলা শেষে দাদাজানকেও কল করল। খোঁজখবর নিল সারাটে দিনের। অতঃপর ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল। প্রান্তিক চেয়ে রয় অবলীলায়। সে মোটেও এতো ক্লান্ত হয়ে পড়ে নি অথচ প্রিয়তা বেশ ক্লান্ত। বহু বছর পর যেন এতো ঘোরাঘুরি করল তারা। পরনে সাদা শার্ট টা খুলে রাখল সোফার উপর। উন্মুক্ত শরীর নিয়ে ঢুকে গেল কম্বলের মধ্যে। ঠান্ডা শরীরটাকে উষ্ণ করবার আশায় অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে নিলে বক্ষে। ঠোঁট ছুঁইয়ে গেল তার অধরপুটে। সে ততোক্ষণে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেছে। তার ঘুমন্ত মুখস্রী কি আর জানে? কিভাবে একটা হৃদয় ক্ষনে ক্ষনে ত্রাসিত করে ফেলছে। মন্থর গতিতে চলছে মস্তিষ্ক। হস্তযূগলের আদলে ছোট খাটো একটা শরীর লেপ্টে আছে অবলীলায়। উন্মুক্ত ঠান্ডা শরীরে তাণ্ডব চালানোর জন্য ঘুমের মধ্যেই ব্যাকুল হয়ে উঠল। নখের আঁ*চড় সুনিপুণ কারুকাজ হলো বক্ষে। ঠোঁট চেপে আরেকজন কেবল সহ্য করে নিল। ভালোবাসায় এতোটুকু অত্যা*চার যেন করাই যায় আরকি!
————-
পুরো দুদিন কেটে গেল। অথচ ঘোরাঘুরির এখনো অনেক কিছু বাকি। ভোর সকালে আজ বরফের টুকরোর দেখা পেয়েছিল। উচ্ছ্বাস, উৎসাহে হাতড়ে ধরেছিল সবটুকু। বাচ্চাদের মতো খেলা করেছিলো বেশ অনেকক্ষণ। কিন্তু সময় যত বাড়তে লাগল আদিত্যের সাধনায় এসে বরফ গলে জল হয়ে গেল।
প্রান্তিক গতকালই নতুন একটা রেঞ্জ রোভার নিয়েছে। বিলাসবহুল কালো গাড়ি। প্রিয়তমার হাত ধরে বসাল সামনের সিটে। ড্রাইভিং সিটে সে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরুলো দুজন। গাড়ির গতি দেখে তাজ্জব বনে গেল প্রিয়তা। শখের গাড়ি চালিয়ে খুশিতে প্রান্তিক বাকরুদ্ধ। কিন্তু তার প্রতিটা উন্মাদনা দেখতে পারছে আরেকজন।
এখন যাচ্ছে রিচমণ্ড পার্কে। দুপুরে হোটেলে লাঞ্চ সেরেই বেড়িয়েছে তারা। দীর্ঘ পথে কেবল গাছগাছালি ছাড়া আর কিছু নজরে পড়ছে না কারো। গাড়ির সংখ্যাও নেহাত কম। জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিল সে। হাওয়াতে কেশ উড়তে লাগল ইচ্ছেমতো। বেখেয়ালি হয়ে রইল সে। এলোমেলো হয়ে গেল সমস্ত অলক। কি দরকার ঠিক করার।
হুট করেই গাড়ি থামিয়ে দিল প্রান্তিক। প্রিয়তাও থমকে গেল। তারা কি এসে পড়েছে। মুখখানি ভেতরে নিয়ে ডান দিকে ফিরল। একজন ভদ্রমহিলা কে দেখা যাচ্ছে। অব্যবস্থিতমনা তিনি। গরগর করে ইংরেজি বলছে। এতো দ্রুতই বলছে যে প্রিয়তার বুঝতে একটু সমস্যা হইছে।
অতঃপর প্রিয়তা বুঝল। ভদ্রলোক বিদেশিনী! তার ছেলে সামনেই এক্সি*ডেন্ট করেছে। তিনি সাহায্য চাইছেন। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়লেন। প্রান্তিক হম্বিতম্বি করে গাড়ি ছেড়ে নামল। প্রিয়তাও অনুসরণ করল তাকে। প্রান্তিক জানাল সে হেল্প করলে। ভদ্রমহিলা তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন। ছুটে গেলেন সামনের দিকে। প্রিয়তা এসে দাঁড়াল প্রান্তিকের পাশে। সামনে তাকিয়ে খেয়াল করল সামনেই একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। মর্মান্তিক অবস্থা! গাড়ি একটা গাছের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে। বোধহয় ধাক্কা খেয়েছে। সামনের বাম্পার টা একপাশে চেপে ঢুকে গেছে, হুডের কোণা একটু উঁচু হয়ে আছে। ধোঁয়া উড়ছে সামনে থেকে।
ওই ভদ্রমহিলা সহ আরেক ভদ্রলোক ১২ কি ১৩ বছর বয়সী অচেতন একটা ছেলেকে বাহুবন্ধে তুলে নিয়ে ছুটে আসছেন। ছেলেটার কপাল চুঁইয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। প্রান্তিক নিজে গাড়ির পিছনের সিটের দরজা খুলে দিল। তারা তিনজন হুল*স্থুল করে উঠে বসল। প্রিয়তাও সিটে বসে পড়ল। পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিল তাদের। প্রান্তিক গাড়ি স্টার্ট দিল। কি সাং*ঘাতিক পরিস্থিতির স্বীকার তারা দু’জন!
হাসপাতালে আসতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। প্রান্তিক গাড়ি নিয়ে ঝড়ে*র বেগে হাসপাতালে এসে পৌঁছাল। ভদ্রমহিলা বেরিয়ে চিৎকার করে ওয়ার্ড বয় কে ডাকছে। ভদ্রলোক একাই ছেলেকে কোলে তুলে এগিয়ে গেলেন। এরই মধ্যে তারা বেড নিয়ে হাজির। বোধহয় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সন্তানের জন্য মা বাবার হৃদয় কতোটা ব্যাকুল হয়ে গেছে। প্রিয়তা পা বাড়াল ছেলেটার অবস্থা জানার জন্য। যেন বেঁচে যায়! ছোট একটা বাচ্চা! সৃষ্টিকর্তার কাছে বার বার আকুল আবেদন করছে সে।
প্রান্তিক তৎক্ষণাৎ তার হাত চেপে ধরল। বলল,
“চলো!”
“ছেলেটিকে দেখব না।”
“না!”
“কেন? চলুন না দেখে আসি। ছেলেটা কেমন আছে? বাঁচবে তো?”
“বেঁচে যাবে, তোমার চিন্তা করতে হবে না। চলো আমার সাথে!”
প্রান্তিক সোজা এসে বসল গাড়িতে। প্রিয়তা যেন একটু অবাকই হলো। প্রান্তিকের এমন আচরণ তার কাছে ভালো ঠেকছে না। এতোক্ষণ তো সে নিজেই ছেলেটিকে বাঁচানোর জন্য ঝড়ে*র বেগে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এলো। অচেনা, অজানা লোকদের সাহায্য করল। আর এখন এমন আচরণ! বোধগম্য হচ্ছে না। প্রিয়তা উঠে এসে বসল। বার বার তাকাচ্ছে পিছনের হাসপাতালের দিকে!
গাড়ি এখনো চলছে দ্রুতবেগে! প্রান্তিক নিষ্প্রাণ, নিশ্চুপ! তার দৃষ্টি কেবল সামনের দিকে। পাথরের মূর্তির মতো চুপসে গেছে যেন। প্রিয়তা কয়েকবার ডাকলেও সাড়া দিল না। হঠাৎ এমন কি হলো?
গাড়ি এসে থামল শুনশান নিরব জায়গায়। জঙ্গল নাকি! রাতের অন্ধকারে প্রিয়তা ঠিক বুঝল না। এখন এখানেই বা আসার কি দরকার ছিল?
প্রান্তিক গাড়ি ছেড়ে নেমে প্রিয়তাকে নামাল। হাত শক্ত করে ধরে প্রায় টেনে হি*ছড়ে নামাল। কি অদ্ভুত আচরণ! ব্যাথায় হাতে যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে। পিছন ফিরে রাফিকে দেখে তাজ্জব বনে গেল।
লোচনে কেমন বিস্ময় আর হতাশা। শখের এতো টাকার গাড়িটিকে চোখের সামনে পু*ড়িয়ে ফেলল প্রান্তিক চৌধুরী! প্রিয়তা হা হয়ে চেয়ে আছে। একবার গাড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার প্রান্তিকের দিকে। এসবের কি দরকার ছিল? গতকালই তো কিনল! প্রিয়তার দৃষ্টিতে হাজারো প্রশ্ন। প্রান্তিকের বাহু চেপে তার দিকে চেয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। জোয়ার ভাটা এসেছে নদীতে। চোখের অশ্রুরেখা পড়ছে গড়াগড়িয়ে। দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
“এমনটা কেন করলেন?”
অগ্নি*র তেজ বাড়লো। প্রিয়তা ভয় পেয়ে আঁকড়ে ধরল শক্ত করে। প্রান্তিক প্রিয়তার হাতটা ধরে এক পা পিছিয়ে গেল। দাউ দাউ করে জ্ব*লে উঠা আগু*নে দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো,
“কখনো শুনেছো, মায়েরা সন্তান কে ভুলে যায়?”
“কি বলছেন এসব? আপনি কি…
থেমে গেল। শব্দ করে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে লাগল। দু সেকেন্ড পৃথিবীর সমস্ত কথা ভুলে গেলো। মস্তিষ্কে বার্তা যাচ্ছে। এ কথার মানে কি? প্রান্তিক মৃদু হাসল। প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, “আমার মা আমায় ভুলে গেছে প্রিয়তা!”
কথাটা বলতে একবারও বাঁধল না। কষ্টে প্রিয়তার বু*কটা ফেটে যাচ্ছে। বাহু চেপে ধরল শক্ত করে। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল। ঠোঁট চেপে নিঃশব্দে কেঁদে উঠল সে। পারল না। তার কান্নার আওয়াজ শুনল পিছনের দু তিনজন লোক। রাফি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ প্রান্তিক এখনো নিশ্চুপ। চোয়াল শক্ত! নিষ্পলক আঁখি জোড়ায় কেবল জ্ব*লন্ত আ*গুনের প্রতিচ্ছবি। ভেতরখান পুঁ*ড়ে ছারখার হয়ে গেছে। প্রিয়তার কান্নার শব্দ তার কানের কাছে পৌঁছেছে। মেয়েটা কেন কাঁদছে প্রান্তিক বুঝতে পারছে না। এখানে তো কান্নার কিছু নেই?
#চলমান
#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৩
“তুমি আমায় আদৌও ভালোবাসো তো বউ?”
গলায় উড়না ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকায় প্রিয়তা।
“বউ ডেকে আবার জিজ্ঞেস করছেন? বউ ভালো না বাসলে কে বাসবে? ওই পাশের বাড়ির মেয়ে!”
প্রান্তিক সোফায় হেলান দিয়ে বসে। আঁখি জোড়া পলক ফেলে পরখ করে তার বউপাখিকে। পরনে সাদা রঙের টপস টা বানিয়েছে বড্ড। বিয়ের পর এখানে এসেই প্রথমবারের মতো প্রিয়তাকে এমন পোশাকে দেখা। নয়তবা দেশে কেবল সেলোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি। মেয়ে এখানে এসে জিন্স টপস পরছে। বেশি বেড়ে যাচ্ছে কি? প্রান্তিক কথা ঘুরিয়ে বলল,
“তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে বউপাখি!”
হাত দিয়ে ঠোঁটের লিপস্টিক দেওয়া শেষ করল। এদিক ফিরে বলল, “শুধু আজই?”
প্রান্তিক চট করে উঠে রঙে রাঙানো ঠোঁট দুটিকে চুমু খেয়ে বলল, “প্রতিবারই লাগে!”
মাথার চুল গুলো আলতো করে এলোমেলো করে বিছানায় গিয়ে বসল এবার। প্রিয়তা মুখ ভেংচি কেটে বলল, “ঢং! দিলেন তো লিপস্টিক টা নষ্ট করে!”
“আমার ঠোঁটেও লেগেছে নাকি?”
বলেই ঠোঁট কামড়াতে লাগল। সামনের আয়নার তার প্রতিবিম্ব নজরে পড়ছে প্রিয়তার। মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো একটু। দু হাত কোমরে রেখে পিছন ফিরল। শাসিয়ে বলল,
“আমার সাথে একদম বাড়াবাড়ি করবেন না!”
“যাক বাবা, করলাম টা কি?”
“আপনি অপেক্ষা করছেন আপনি কিছু করবেন তারপর আমি বলব!”
“না বউয়ের ভ*য় আমার আছে!”
“থাকা উচিত। বসে কেন আছেন তৈরি হন। এরপর দেরি হয়ে গেলে বলবেন আমার দোষ। আর বিদেশী মেয়েদের সাথে কম কথা বলবেন।”
“আরে বাবা ওই মেয়েটা তো আমার কাছে কেবল রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করছিল।”
“ওহ, ওয়াও আপনি এখানের সবকিছু চিনেন?”
প্রান্তিক থতমত খেয়ে বলল,“আমি তো সেটাই বললাম জানি না।”
“বলবেন কেন? চুপ থাকতে পারেন না। এতো কথা কেন বলতে হবে?”
প্রান্তিক মাথা নাড়িয়ে বলল, “সরি ভুল হয়ে গেছে!”
প্রিয়তা সামনের চুলগুলো পিছনে উড়াল। সামনে এগিয়ে এসে আঙুল তুলে শা*সালো, “শুনে রাখুন, যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন তখন আপনি অন্ধ আর বোবা হয়ে যাবেন। না কারো সাথে কথা বলবেন না কারো দিকে তাকাবেন!”
“আমিতো কেবল তোমাকেই দেখি!”
“আমাকেই দেখবেন। অন্যকারো কথা এই মাথাতে আনলে ভাতের সাথে বি*ষ মিশিয়ে খাইয়ে দিবো। টুক করে ক*বরে গিয়ে পড়বেন। তাই বাঁচার ই*চ্ছা থাকলে আমার কথা শুনে চলুন।”
হু*মকি সব মাথায় ভালোভাবে মাথায় নিয়ে নিল। মাথা দুলিয়ে বলল, “জি জি বউ! আর কিছু থাকলেও বলে ফেলুন। আপনার কথা স্বীয় ধার্য! বাঁ*চতে হলে আপনার মন মতোই চলতে হবে!”
“জি তাই!”
প্রিয়তা ফের গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। প্রান্তিক দম ছেড়ে বাঁচল। বাপরে বউ না ডা*কাত! কথায় কথায় মা*রার হুম*কি দেয়। বাকি জীবনের সংসার তোর গেলো রে প্রান্তিক। মেরিড লাইফ মানেই বউ আর বউ মানেই তেজপাতা!
———
আমরিশা সেই কখন থেকে পায়ের উপর পা তুলে নাড়িয়ে যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে সে অপেক্ষা করছে। কার অপেক্ষা? মান্নাতের! মান্নাত পুরো ১ ঘণ্টা লেট। না না, এক ঘণ্টা ১০ মিনিট! পুরো শরীরে যেন রা*গের তেজ বয়ে যাচ্ছে। হুম*ড়ি খেয়ে মান্নাত ঢুকল রেস্টুরেন্টে। তার অবস্থা বেহাল। ঘেমে একাকার।নীল রঙের শার্ট আষ্টেপৃষ্ঠে আছে শরীরে। এদিক ওদিক ফিরে যাচ্ছে চঞ্চল চোখ জোড়া। খুঁজছে আমরিশা কে।
আমরিশার নজরে আরো আগে এলেও ডাকেনি ইচ্ছে করেই। মান্নাত তাকে দেখেই একগাল হাসল। ছুটে এলো। কান ধরে মাফ চেয়ে বলল, “অনেক জ্যাম ছিল। সত্যি, বিশ্বাস করো!”
আমরিশা চোখের পলক ফেলছে দ্রুত। ঘর্মাক্ত তার দেহ। ঘাড়ের কাছে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা। চোখে মুখে বিরাট অস্থিরতা। ফর্সা মুখখান তার রক্তিম। মুখাবয়ব বেশ আকর্ষণীয়। চুল গুলো ঘামের কারণে কপালে লেপ্টে যাচ্ছে। মান্নাত বার বার হাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে ঢেলে দিচ্ছে। আমরিশা শুকনো ঢোক গিলল। জবাব দিলো না।
রাগের মাত্রা মান্নাত টের পেলো। তাড়াহুড়োয় আজ ফুল আনেনি। রাগ ভাঙাবে কি করে? আমরিশা জবাব দিচ্ছে না। ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফির মগে চুমুক দিচ্ছে কেবল। মান্নাত কথা বলার চেষ্টা করছে। আমরিশা জবাব দিলে তো। পাবলিক প্লেসে মানুষজনে ভর্তি। কিছু বলাও যায় না!
কফি শেষ করেই আমরিশা উঠে দাঁড়াল। মান্নাত হাঁটছে তার পিছু পিছু। বিনয়ী স্বরে কেবল অনুনয়। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই মান্নাত আগে ছুটে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়াল। ভেবেছিল আমরিশা উঠে বসবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আমরিশা পাশ বেয়ে চলে গেল।
মান্নাতের এবার রাগ হচ্ছে ভীষণ। মিষ্টি সুরে অনেক বলেছে। কথা না শুনলে শোনানোর ব্যবস্থা করাতে হবে। ছুটে গিয়ে হাতটা চেপে ধরল শক্ত করে। আমরিশাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ধরে বেঁধে তাকে গাড়িতে বসাল। সিট বেল্ট বেঁধে শা*সিয়ে বলল, “চুপচাপ বসো। নামার চেষ্টা করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম!”
আমরিশা রে*গে ছিলো বটে কিন্তু নামল না। মান্নাতের কথা বলা যায় না। রাস্তা ঘাটে সিন ক্রিয়েট করে ফেলতে পারে। মনকে বোঝাল সে। যাই হোক, কথা বলবে না।
মান্নাত গাড়ি চালাচ্ছে ধীর গতিতে। গত ৩ ঘণ্টা ধরে তারা ঘুরে যাচ্ছে। বের হয়েছিল বিকেলে। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। মান্নাত একা একাই অনেক কথা বলল। আমরিশা মুখ ফুটে একটা জবাব দিলো না। শেষমেষ এবার গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো সে। রাস্তাটা আমরিশা চিনে না। আশপাশ মানুষজন ও নেই। অন্ধকারে কেবল একটি আলো জ্বলছে। মনে হচ্ছে তারা একটা বাড়ির পিছনের দিকে আছে। মান্নাত হঠাৎ এখানেই গাড়ি থামাল কেন?
গাড়ি থামিয়ে মান্নাত সিট বেল্ট খুলে আমরিশার দিকে ফিরল। হাতটা আমরিশার সিটের উপর রেখে বলল, “খুব জেদি মেয়ে তুমি! এতোক্ষণ কোনো মানুষ চুপ থাকতে পারে?”
আমরিশা জবাব দিলো না। মান্নাত জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। নিজের সিটে আরাম করে বসে বলল,
“তুমি কথা না বললে তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসব না। আজ রাত কিন্তু তাহলে আমার সাথেই থাকতে হবে। কি হলো? এখনো কথা বলবে না?”
আমরিশা চোখ রাঙিয়ে মান্নাতের দিকে তাকাল। মান্নাতে্র ভেলকি দেওয়া হাসি দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল বির*ক্তিতে।
“ওহ আচ্ছা, আমার সাথে থাকার এতো শখ। ঠিক আছে চলো তাহলে। ওই কথা রইল।”
আমরিশা ঢোক গিলল। সে জানে মান্নাত ইচ্ছে করেই তাকে ভ*য় দেখাচ্ছে। এমন কিছু মান্নাত নিশ্চিত করবে না।
মান্নাত আচমকা তার হাত চেপে কাছে টানল। ফিসফিসিয়ে বললো,
“একটা কথা বলি, এই যে বাড়িটা দেখছো? এটা কিন্তু আমার বাড়ি। আজকের রাত তাহলে…
আমরিশা চোখ বড় বড় করে তাকাল। মান্নাতের কথা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এখন আর মান্নাতের চোখ দেখে মনে হচ্ছে সে মজা করছে। কণ্ঠে অসম্ভব রকম সিরিয়াসনেস। মান্নাত ঢোক গিলল। মুখটা কানের কাছে এগিয়ে গাঢ় স্বরে বলে উঠলো, “বাড়িতে আজ কেউ নেই। আমাদের ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই বুঝলে তো!”
কাছে এসে ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করল অদ্ভুত ভাবে। আমরিশার বুক দুরু দুরু করছে। সে সত্যি সত্যিই ভ*য় পেয়ে গেছে। মান্নাতের থেকে হাত ছুটিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“আপনি বলেছিলেন আমার পারমিশন ছাড়া কিছু করবেন না। এখন এসব কি বলছেন? আমি বাড়ি যাবো!”
তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে গিয়ে দেখল দরজা লক করা। ফিরে তাকিয়ে দেখল মান্নাত হাসছে। রহস্যময়ী হাসি।
“তুমি তো কথাই বলছিলে না। আমি কি করে বুঝব পারমিশন আছে কি নেই? পা*লাচ্ছো কোথায়?”
আমরিশা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো, “আমি বাড়ি যাবো!”
মান্নাত হেসে উঠল জোরে। আমরিশা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “মুখে বলি ফুটছে তাহলে। আমি তো ভাবলাম রা*গের চোটে কথা বলাই ভুলে গেছো!”
দু হাতে মান্নাতের পিঠে মে*রে বলল, “আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন আপনি?”
“ভয় কোথায় দেখাচ্ছি। এটা সত্যিই আমার বাড়ি আর সত্যিই বাড়িতে কেউ নেই। পুরো বাড়ি খালি। সবাই আমার নানাবাড়ি গেছে বেড়াতে!”
আমরিশা এবার চুপ হয়ে গেল। সিটের জানালার সাথে একদম মিশে গিয়ে বলল, “দেখুন আমাকে ভ*য় দেখাবেন না কিন্তু!”
“ভ*য় দেখাচ্ছি না জান!” বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ফের। আমরিশার দিকে ফিরে চোখ টিপ দিয়ে বলল, “রিয়েলিটি দেখাচ্ছি। এরপর রে*গে গিয়ে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে তোমাকে তুলে নিয়ে আসব। সোজা আমার বাড়িতেই এনে তুলব। তখন তোমার দুলাভাই ও কিছু করতে পারবে না বুঝলে তো! সাবধান!”
গাড়ি আবারো চলছে। আমরিশা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। নাহলে দু মিনিটের জন্য মনে হচ্ছিল মান্নাত সত্যি সত্যি কিছু একটা করে ফেলবে। যেভাবে বলছিলো ভয় না পেয়ে উপায় আছে। সবেই তার জানে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আচমকা তখনি মান্নাত তার হাত চেপে ধরে তাকে কাছে টানল। চলন্ত গাড়িতে এমন কিছুর আশা সে করেনি। ভয়ে আঁ*তকে উঠল। মান্নাত গাড়ির হ্যান্ডেলে হাত রেখেই অন্যহাতে তাকে জড়িয়ে ধরল। দু সেকেন্ডের মধ্যে ললাটে একখান চুমু খেয়ে সামনে ফিরল। লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল আমরিশার মুখখান। মান্নাত সামনের আয়নায় নজর ঘুরিয়ে বলল,
“তোমাকে এই মান্নাতের কাছেই থাকতে হবে আবার এই মান্নাত থেকেই সাবধানে থাকতে হবে। বুঝলে তো জান!”
আমরিশা চোখ তুলে তাকাল বটে। লজ্জায় ফের নামিয়ে ফেলল। কি ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। কোনমতে তার বাঁধন ছেড়ে ছাড়া পেলেই হয়। মনে মনে আওড়ালো, “কি শক্তিরে বাবা। একহাতে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে ছাড়াতেই পারছি না!”
মান্নাত তা শুনে বলল, “তাহলেই ভাবো। একহাতের সাথেই পারো না। আমি দুহাতে জড়িয়ে ধরলে তখন তোমার হাল কি হবে?”
আমরিশা থতমত খেয়ে তার মুখপানে চাইল। লোচনে বিস্ময় আর লজ্জার মিলনে মুখাবয়ব এবার লাল নীল হতে চলেছে। ওদিকে মান্নাত হেসে চলছে একনাগাড়ে। ভালোভালেই তবে আমরিশাকে ভড়কে দেওয়া গেছে। এবার যেন একটু ধমকেই রাখতে হবে মেয়েটাকে। তার রা*গ বেশি। কিছু থেকে কিছু হলেই কথা বলা বন্ধ। সবসময় কি এসব মেনে নেওয়া যায়। একটু তো টাইট দিতেই হয়!
———–
পুরো দশ দিনের ট্রিপ ছিল তাদের। কালকের ফ্লাইটেই রওনা দিবে দেশের মাটিতে। আজকের এখানেই তাদের শেষরাত। সেই কারণে রাতের বেলা দুজনে বের হয়েছে গাড়ি নিয়ে। লং ড্রাইভে যাবে। যতদূর যাওয়া যায় ঘুরবে আর চারদিক দেখবে। এরপর ভোরে ভোরে হোটেলে ফিরে আসবে। আগামীকাল তাদের ফ্লাইট দুপুরের দিকে। তাই ওতো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
রাত তখন ভালোই হয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষের সমাগম ও ধীরে ধীরে কমছে। একটা পার্কের সামনে গাড়ি থামিয়েছে প্রান্তিক। প্রিয়তা জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখছে। অর্ধেক চাঁদ রাতের আকাশ জুড়ে। আজকের চাঁদটা কেমন ভারী বিষণ্ণ। চাঁদের রঙটা কেমন লালচে! প্রান্তিক দীর্ঘক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইল। তাকে ডাকল না। একপাশ থেকে প্রিয়তার মুখখানি দেখতে ভালোই লাগছে। ওদিকের চোখটা একটু পরপর বুজে যাচ্ছে আবার খুলছে। চুলগুলো কানে গোঁজা ছিল ভালো ভাবেই। মৃদু হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেল। প্রিয়তা চুলগুলো ঠিক করে এদিকেই ফিরল।
প্রান্তিকের সাথে চোখাচোখি হতেই মৃদু হাসল। প্রান্তিক তার হাতটা বাড়িয়ে উল্টে দিকে একটা চুমু খেলো। প্রিয়তা হেসে উঠলো শব্দ করে। প্রান্তিক সামনে তাকাল। দূরে আইসক্রিমের গাড়ি দেখে বলল, “আইসক্রিম খাবে?”
প্রিয়তা মাথা দুলাল। প্রান্তিক গাড়ি ছেড়ে নেমে গেল। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল। লাইনে এসে দাঁড়াল। লাইন ওতো বড় না। এই তো তার সামনে দুটো বাচ্চা মেয়ে শুধু। এদের পরেই প্রান্তিক। লাইনে দাঁড়িয়ে বার বার ডানদিকে ফিরে তাকাচ্ছিল। প্রিয়তা গাড়ির মধ্যে থেকে হাত নাড়ছে। কাঁচের বাইরে থেকে তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
অতঃপর দু হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে সামনে আগালো সে। চলন্ত পা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। দ্রুতবেগে ছুটে আসা ট্রাকটা পেছন থেকে কালো গাড়িটাকে ধা*ক্কা মারল সজোরে। প্রিয়তা মুখ থুব*ড়ে গাড়ির সামনের আয়নায় এসে বাড়ি খেলো। ফের পিছনে নেতিয়ে পড়ল। অচেতন হয়ে পড়ল সাথে সাথে।
পেছন থেকে ট্রাকটা তখনো ধা*ক্কা দিয়ে যাচ্ছে তাকে। যতক্ষণ না গাড়ি উ*ল্টে যায়। প্রান্তিকের হুশ ফিরতেই ছুটতে লাগল। যত দ্রুত ছোটা যায়। কিন্তু ততোক্ষণে সব শেষ। প্রিয়তার হাস্যোজ্জ্বল মুখের চিহ্ন রইল না বেশিক্ষণ। গাড়ি উ*ল্টে দিয়ে ট্রাক ততোক্ষণে পগারপার। প্রান্তিক হুম*ড়ি খেয়ে এসে পড়ল গাড়ির কাছে। গাড়ি উ*ল্টে গেছে সাথে সাথে উল্টে গেছে তার পুরো পৃথিবী। প্রিয়তার দে*হ পড়ে আছে অচেতন হয়ে। র*ক্তে মাখামাখি পুরো দেহ। কান্নার চোটে ভিতরের প্রিয়তাকেও অস্পষ্ট আর ঝাপসা লাগছে। এ যেন কোনো স্বপ্ন!
দরজা খোলার বৃথা চেষ্টা। এতো ডাক, এতো হাহা*কার কোনোটাই প্রিয়তার কান অবধি পৌঁছে যাচ্ছে না। প্রান্তিক হাত দিয়ে ঘু*সি মা*রছে জানালার কাছে। লাভ হচ্ছে না। উল্টো হাত গড়িয়ে র*ক্ত পড়ছে। কিন্তু ওদিকে তার ভাবনা নেই। পুরো পৃথিবী যে প্রিয়তাকে জুড়ে। একমাত্র সেই তো আছে। সব ব্যথা ভুলে পরপর অনেকক্ষণ ঘু সি মা*রার পর জানালার কাঁচ ভাঙ*তে সে সক্ষম হলো। হাতে কাচ ঢুকে গেছে কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই।
উ*ল্টো হয়ে পড়ে থাকা প্রি*য়তার দেহ কোনমতে টেনে হি*চড়ে বের করে আনল। কোলের মধ্যে প্রিয়তাকে নিয়ে কেঁদে উঠল সে। তার কান্নার স্বরের সাথে মানুষজনের ছোটখাটো ভিড় জমে গেছে। বার বার ডেকে যাচ্ছে প্রিয়তাকে।
“প্রিয়তা, এই প্রিয়তা! প্রিয়তা কথা বলো!”
কপাল কেটে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে, নাক গ*ড়িয়ে র*ক্ত পড়ছে। প্রান্তিক ছোট বাচ্চার মতো তাকে কোলের মধ্যে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। কেউ আবার অ্যাম্বুলেন্স কেও ফোন করে ফেলেছে। এরই মধ্যে রাফি ছুটে এলো। তার পিছনে আরো কয়েকজন!
প্রান্তিক যেন তার অস্তি*ত্বকে ভুলতে বসেছে। প্রিয়তা ছাড়া আর কাউকে দেখছে না সে। রাফি তার ঘাড়ে হাত রাখতেই আঁ*তকে উঠল। কেঁদে উঠল বাচ্চার মতো। হাউমাউ করে বলছে কিছু। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। কেবল শোনা গেল, “রাফি! রাফি আমার প্রিয়তা কথা বলছে না। রাফি ও কথা বলছে না। প্রিয়তা! বউ, কথা বলো। বউ!”
#চলমান