প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব-৩৮ এবং শেষ পর্ব

0
250

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#অন্তিম_পর্ব

এইজন্য বলে বন্ধুর চেয়ে ভালো কোনো শ*ত্রু হয় না। বন্ধুরা তোমাকে নিজের থেকেও ভালো চিনে, ভালো জানে। তাই এরা যখন শ*ত্রু হয়ে উঠে তখন সবচেয়ে ভ*য়ানক শত্রু হয়ে যায়। প্রান্তিকের হয়েছে সেই হাল।

সে এখন রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছে। আমরিশার সাথে দেখা করার কথা। সময় হয়ে গেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। বউয়ের সাথে থেকে থেকে অনেক অভ্যাস হয়েছে তার। এর মধ্যে চা খাওয়া প্রধান। প্রিয়তা সময় অসময় নেই চা বানিয়ে আনে। প্রান্তিক ও বিনা প্রশ্নে আয়েস করে চা খায়। সেই থেকে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বউয়ের হাতের চা ছাড়া আর কারো চা ভালো লাগে না। এখন কেবল সময় কাটানোর জন্য এই অখাদ্য গিলছে।

অতঃপর আমরিশা এলো। সে একা না সাথে মান্নাত ও। প্রান্তিক অবাক না হয়ে পারল না। অতঃপর সে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

মান্নাত প্রান্তিক কে দেখিয়ে আমরিশার হাত ধরে নিল। আমরিশা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। দুলাভাই সামনে। এ কি ধরণের আচরণ! প্রান্তিক চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাদের দেখছে আর চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। আমরিশা এগিয়ে আসতেই মান্নাত তার জন্য চেয়ার টেনে ধরল। প্রান্তিক শুধাল,

“আমি কি তোকে আসতে বলেছি?”

“বাহ রে এতো দূর থেকে ও একা আসবে? আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম। হবু বর হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না?”

প্রান্তিক চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল বিরক্তি ভঙ্গিতে। দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করল কিসব। আমরিশা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। এসব কি বলছে লোকটা?
প্রান্তিক চেয়ারে আরাম করে বসে বলল, “নিয়ে এসেছিস তোর কাজ আপাতত শেষ। এখন ওদিক গিয়ে বস। আমরিশার সাথে আমার আলাদা কথা আছে!”

“আমি থাকলে কোনো সমস্যা?”

“অনেক সমস্যা?”

মান্নাত তবুও কথায় পাত্তা না দিয়ে পাশের চেয়ারেই বসতে নিল। আমরিশা চোখ রাঙি*য়ে তাকাল। ইশারা করে বলছে ওদিক গিয়ে বসুন। মান্নাত থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়াল। বসল না। প্রান্তিক মুখ টিপে হাসল। বোন তো প্রিয়তারই। এদের জীবন ভাজাভাজা করার জন্য একদম ঠিক আছে। এতোটুকুনি কল্পনা করে শান্তি পেলো সে।

অতঃপর মান্নাত গিয়ে দূরের টেবিলে বসল। ওয়েটার সদ্য এককাপ চা দিয়ে গেল। প্রান্তিক চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, চিনে ছাড়া চা!
আমরিশা মাথা দুলাল। একটু অবাক ও হলো যেন। দুলাভাই তার ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানে বৈকি। প্রান্তিক বলল,

“কিছু অর্ডার করো?”

“না আমি খেয়েই এসেছি।”

“আচ্ছা তাহলে মূল কথায় আসি। মান্নাতকে ভালোবাসো?”

আমরিশা চায়ের কাপে সবে চুমুক দিতে গেল। দুলাভাইয়ের কথায় জিভ পুড়িয়ে ফেলল। প্রান্তিক শুধাল,আরে করো কি! মান্নাত প্রায় উঠেই আসছিলো। আমরিশা তার দিকে ফিরে তাকাতেই বসে পড়ল। প্রান্তিকের মজা লাগছে।

“ধীর সুস্থে খাও। আমায় দেখি কি ভয় পাচ্ছো?”

আমরিশা মাথা দুলিয়ে না বলল। প্রান্তিক বলল, “গুড। ভয় কেন পাবা? আমি তো কেবল জিজ্ঞেস করছি। আমায় বলো, মান্নাত তোমার সাথে কিছু করেছে? ভ*য় দেখিয়েছে? কোনো ব্ল্যা*কমেইল? ও কিন্তু খুব খারাপ! কোনো সমস্যা থাকলে আমায় বলো। আমি দেখছি। ভ*য় পাবার একদম দরকার নেই!”

আমরিশা শুকনো ঢোক গিলে বলল, “আমি তাকে বিয়ে করতে চাই ভাইয়া!”

এই উত্তর প্রান্তিকের জানা ছিল। তবুও সে ভিন্ন কিছু আশা করেছিল। ঠোঁট উল্টে বলল, “ইউ ডির্জাভ বেটার। আমি তোমাকে ওর থেকেও ভালো ছেলে এনে দিব।”

আমরিশা মাথা দুলাল। যার অর্থ না। প্রান্তিক এবার নড়েচড়ে বসল। টেবিলে ঝুঁকে গিয়ে বলল, “ভালোবাসো তাকে!”
লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল আমরিশা। ঠোঁট কামড়াচ্ছে কেবল। প্রান্তিক বলে উঠলো, “মান্নাত অবশ্য খারাপ না। তোমার চয়েজ ও খারাপ না। তবে একটু ঘাড় ত্যাড়া। ও তুমি সামলে নিবে। আমার বউয়ের বোন তো ব্যাপার না!”

আমরিশা হেসে উঠল ফট করে। প্রান্তিক মৃদু হেসে বলল, “তোমার কোনো সমস্যা হলে তুমি আমায় বলতে পারো। এনিথিং! ওর আমার বন্ধুত্ব আজকের না। আমরা ছোটবেলা থেকে একসাথে। মান্নাতকে আমি চিনি। ইউ আর দ্যা বেস্ট ফর হিম!”

আমরিশা এবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “আপনি আপাকে রাজি করাতে পারবেন? প্লিজ তাকে বলবেন প্রেমের কথা। আপা এসব একদম পছন্দ না। মা বাবাও করবে না।”

প্রান্তিক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। এ বিষয়ে তার চেয়ে ভালো আর কে জানে? আড়চোখে তাকায় ওদিক। মান্নাতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এদিকেই। এতক্ষণ ধরে কি গুচুর গুচুর করে ওরা!

———-

প্রান্তিক খসখসে কণ্ঠে বলল, “আমি ওর সাথে একা কথা বলব। তুই যাবি এখান থেকে?”

আলফি আফরিনের দিকে একবার তাকাল। সে কেক খেতে বিরাট ব্যস্ত। ঠোঁটেও লাগিয়ে ফেলেছে সামান্য। টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছিয়ে বলল, “না আমিও শুনব তোরা কি বলিস।”

“বেশি হয়ে যাচ্ছে না।”

আফরিন বলে উঠলো, “সমস্যা নাই দুলাভাই। আপনি বলেন। এমনেতেও সব কথা তো আলফি ভাইয়াকে আমি বলবোই।”

প্রান্তিক তার গাল টেনে বলল, “খুব পাকনা তুমি!”

“হ্যাঁ তা একটু!”

“তোমার ভয় করছে না? কি শুনি আমি? তুমি প্রেম করছো?”

“ওমা এটা কে বলল? আমি কখন প্রেম করলাম?”

প্রান্তিক সন্দেহের বশে তাকায় আলফির দিকে। আলফি এখনো নিশ্চুপ। প্রান্তিক গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো, “তাহলে আলফি এখানে কেন?”

আফরিন খেতে খেতে আলফির দিকে তাকাল। মাথা দুলিয়ে বলল, “ওহ আলফি ভাইয়া। তাকে তো রেডি করে রাখছি প্রেম করব বলে। এখন তো আমি ছোট না। ভাইয়া বলছে ভার্সিটির উঠার পর প্রেম করব। মানে একবছর পর!”

“তোমার আপুকে বলে দিব?”

আফরিন ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “আলফি ভাইয়ার ফোনে আপনার সাথে একটা মেয়ের ছবি দেখেছি। আপাকে বলব?”

প্রান্তিকের চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল। আলফি মুখ টিপে হাসছে। আফরিন বলে উঠলো, “আমি আরেকটা কেক খাবো।”

“খাও বোন। খেতে থাকো আর নিজের মুখটা বন্ধ রাখো!”

“হু আর আপনিও মেয়েদের সাথে ছবি তোলা বন্ধ করেন।‌ নাহলে আমি আপাকে বলে দিব।”

“আরে আমার মা, ওটা আমার বিয়ের আগের ছবি। জিজ্ঞেস করো তুমি আলফি কে!”

আফরিন চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল।‌ আলফি মাথা নাড়ছে। আফরিন নিঃশব্দে কেক খেতে লাগল। প্রান্তিক এবার আলফির দিকে সূ*ক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বলে উঠলো, “দেখ! ও কিন্তু এখনো বাচ্চা তাই ওর থেকে দূরে দূরে থাক। গা ঘেঁষে বসবি না একদম। হ্যাঁ এই যে এতো টুকু দূরত্ব রাখবি সবসময়!‌” চোখের ইশারায় শাসা*চ্ছে যেন। আলফি মুখ ভেংচি কাটলো। তাকে শিখানোর দরকার নেই। সে সব জানে আর বুঝে!

——–

মান্নাত তার দেওয়া কথা রেখেছে। প্রান্তিক তার খেল দেখিয়েছে। ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই তার আর আমরিশার বিয়ে হয়েছে। এতো দ্রুত বিয়ের কারণ অবশ্য তারা কেউ স্বীকার করল না। তাতে কি? প্রান্তিকের অবশ্য ভালো লাগছে। এই বিয়ে হয়ে যাওয়াই ভালো। বিয়ের অনুষ্ঠান তেমন বড় নয়। কাবিন হয়েছে সবে। আমরিশা এখনো বাপের বাড়িতে থাকবে। অর্নাস কমপ্লিট করেই তাকে শ্বশুড় বাড়ি পাঠাবে। এই একমাত্র শর্তে আমরিশার মা বিয়েতে রাজী হন। প্রান্তিক কিভাবে যে এতো দ্রুত বিয়েটা পড়িয়ে দিল তা সকলের কাছে একটা রহস্য।

গভীর নিশি। বাড়িটা গলির মুখে হওয়ায় দূর দূরান্তে থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ পাওয়া যায়। মৃদু পবনের ছোঁয়ায় পর্দার মৃদু কম্পন। আজকের দিনে অনেক ধকল গেছে তার উপর। মুখের উপর হালকা সাজ ঘসে মুখ পরিষ্কার করে এদিক ফিরল। বিছানায় বসা প্রান্তিক তাকে ঘুরে দেখছে। প্রিয়তা উঠে দাঁড়াল। সদ্য ধোঁয়া মুখশ্রীতে আলোর ঝলকানি। জিজ্ঞেস করল,

“এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের কি ছিল? আর আপনি মান্নাতকে কেন পছন্দ করলেন?”

“তোমার কি মনে হয় ভালো করিনি।”

স্বামীর কর্মকাণ্ডে স*ন্দেহ সে করতে পারে না। নিজের বোনের বেলায় তো কখনোই না। চাপা স্বরে বলল,
“করেছেন কিন্তু?”

প্রান্তিক বিছানায় বসে ছিল। প্রিয়তার হাত ধরে টেনে তাকে কোলে বসাল। বলল, মান্নাত ভালো ছেলে। তোমার বোন সুখে থাকবে।”

“আপনি যখন ঠিক করেছেন আমি জানি সেটা।”

“আমরিশা কেবল তোমার একার না আমারও বোন প্রিয়তা। আমি তাকে দেখেই রাখব। তুমি বিশ্বাস রাখতে পারো!”

প্রিয়তা হেসে মাথা দুলাল। দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে তার। আফরিন আর পূরবী নক করা ছাড়াই দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেল। প্রিয়তা তড়ফড় করে দাঁড়িয়ে গেল। খানিকটা লজ্জা ও যেন পেয়েছে। আফরিন মুখ টিপে হেসে বলল, “মা ডাকছে তোমাদের। খাবারের সময় হয়ে গেছে!”

“আসছি তুই যা!”

আফরিন পূরবীর হাত ধরে ছুটে বেরিয়ে গেল। বিয়ের পড়ানোর কাজ শেষ হয়েছে বিকেলে। প্রান্তিক, প্রিয়তা, আমরিশা, মান্নাত, আফরিন, পূরবী, আলফি সাথে তার বোন আরবি আর মৌনতা, আশিক সবাই এ বাড়িতে। রাতের দিকে তারা ফিরে যাবে। মান্নাতের বাড়ি থেকেও দুজন মেহমান আছে। বাকিরা চলে গেছে। সবাই খেতে বসেছে একসাথে।

তাদের বিরাট ড্রয়িং রুমে পাটি বিছানো হয়েছে। এতো গুলো মানুষ এভাবে বসা ছাড়া খেতে বসবে পারবে না। খেতে গিয়েও তাদের ঝামেলার শেষ নেই। হইচই লেগে গেছে একদম। আমরিশা খাবার বেড়ে দিচ্ছে সকলকে। লাল শাড়িতে তাকে বউ বউ লাগছে। শাড়িটা পছন্দ করেছে মান্নাত। দলিলে এখন তারা স্বামী-স্ত্রী।

আমরিশার মান্নাতের খাবার প্লেট এগিয়ে দিতেই আড়ালে সে তার হাতটা চেপে ধরল। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখ রাঙালো। মান্নাত মিটিমিটি হাসছে। তবু হাত ছাড়ছে না। লজ্জায় আমরিশা মরি মরি। হায় কেউ দেখে ফেললে কি হবে?

আফরিনের চোখে পড়ল অবশ্য। সে দাঁড়িয়ে আলফির পাশে। ফিসফিস করে আলফি কে বলছে, “দেখুন মেঝো আপা আর দুলাভাই প্রেম করছে!”

আলফি ওদিক একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আজ তার চোখ সরছে না আফরিনের উপর থেকে। সে আজ শাড়ি পরেছে। শাড়িতে তাকে মারা*ত্মক সুন্দর লাগছে। গোলাপী রঙের সিল্ক শাড়ি। আলফি বেশ কয়েকবার আড়চোখে ফিরে তাকিয়েছে। আফরিন এবার সুযোগ বুঝে বড় বড় চোখ করে ফিরে তাকিয়ে বলল, “আপনার আমার বিয়ের সময় আপনি ওমন একখানা লাল শাড়ি কিনে দিবেন তো আমায় আলফি ভাই!”

আলফি মাথা নেড়ে মৃদু হাসল। আফরিন খুশিতে লাফাতে গিয়েও লাফালো না। অনেক মানুষ এখানে। আরবি তাকে ডাকছে। বলছে তার পাশে বসে খেতে। একা একা খেতে ভালো লাগছে না তার। আফরিনের যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু ভবিষ্যৎ ননদ। না গিয়ে উপায় নেই। এই ভেবে সে সরে দাঁড়াল আলফির পাশ থেকে।

মৌনতা আর আশিকের মান অভিমানের পালা এখনো চলছে। তারা দুজন দু প্রান্তে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। অতঃপর আলফি এসে বসল তার পাশে।
প্রান্তিক চৌধুরী বসেছে তার শ্বশুর মশাইয়ের সাথে। মান্নাত কে উঠিয়ে তাদের সাথে বসানো হলো। দু জামাই আর শ্বশুর একসাথে খেতে বসেছেন। পুরো বাড়ি আজ মানুষে। সিদ্দিকুর সাহেবের আনন্দ লাগছেন। পঙ্গুতের এই কয়েকবছর তিক্ততা নিয়ে কাটালেও জীবনের শেষ সময়ে যেন সুখের দেখা পেয়েছেন তিনি!

খাবার দাবারের পর্ব শেষ। সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে ড্রয়িংরুম। আশিক, আলফি ওরা বেরিয়ে যাবে আর খানিকক্ষণের মধ্যে। থাকার মধ্যে কেবল দুই জামাই আর মেহমান কয়েকজন। বিয়ের বিশেষ আয়োজন না থাকলেও বন্ধুরা সকলে মিলে এই বাড়িতেই তাদের বাসর সাজিয়েছে। প্রান্তিক ফুলে সাজানো ঘর দেখে প্রিয়তার কানে কানে বলল, “বাসর করতে ইচ্ছে করছে?”

প্রিয়তার তার বাসর রাতের কথা মনে পড়ে গেল। প্রান্তিকের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলল, “মনে পড়ে আপনার বাসরে আপনি কোথায় ছিলেন?”

“কেন? তোমার সাথে?”

প্রিয়তা চোখ তুলল কপালে। প্রান্তিক থতমত খেয়ে ভাবনায় পড়ে গেল। আসলে কোথায় ছিলো সে? না প্রিয়তার কাছে ছিল না। মনে পড়ল। অতঃপর মুখটা শুকিয়ে গেল। প্রিয়তা হেসে বলল, “মাতা*ল হয়ে বলছিলেন, নো নো ডোন্ট টাচ মি, প্রান্তিক চৌধুরী এখন ম্যারিড!”

“তো মিথ্যে কি বলেছিলাম!”

প্রিয়তা দরজায় হেলান দেয়। ঘরে আপাতত তারা ছাড়া কোনো মানবী নেই।

“তা প্রেমিকা হারানোর শোকে মা*তাল হয়েছিলেন!”

প্রান্তিক দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলল, “একদম না। আমি ফ্রাস্ট্রেশনে ছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে, ( চুলগুলো পিছনে ঢেলে হঠাৎ প্রিয়তার হাত হিচকে টেনে নিজের বুকের কাছে টেনে নিল। বলল) আমাদের বাসর যেহেতু হয়নি,‌ আমরা আরেকটা বাসর তো করতেই পারি।”

“ছিঃ অস*ভ্য দূরে সরুন!”

প্রান্তিক হেসে উঠল। হাসির আওয়াজ আসছে। ওরা সকলে এদিকেই আসছে। প্রান্তিক আর প্রিয়তা সরে দাঁড়াল। মৌনতা তাদের দেখে বলল, “তোরা এখানে কি করছিস?”

আশিক বলল, “সেকেন্ড টাইম বাসরের প্ল্যান?”

প্রান্তিক জবাব দিল, “বন্ধু হয়ে এতোটুকু উপকার তোরা করতেই পারিস!”

প্রিয়তা চাপা স্বরে বলল, “এই নি*র্লজ্জ! চুপ করুন!”

সকলে হেসে উঠলো উচ্চস্বরে।মান্নাত আর আমরিশাকে ঘরে ঢুকিয়ে পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। রইল কিছু দুষ্টু মিষ্টি কথা। প্রান্তিক তাদের ধম*কে উঠে বলল, “অনেক বাচ্চারা আছে, এবার চুপ থাক!”

পিছনে সকলে তাকাল। পূরবী, আরবী আর আফরিন তিন জন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তো মুখ বন্ধ ছাড়া আর উপায় রইল না।

সারাদিনের ধকল কাটিয়ে প্রিয়তা এবার নিজের ঘরে ঢুকল। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। টানা কয়েকদিন দৌড় ঝাঁপ করে এখন সে সত্যিই অসুস্থ। বিছানায় গা এলিয়ে দিল অলস ভঙ্গিতে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেলো না।

কয়েক ঘণ্টা পর ঘুম ভাঙল তার। জেগে উঠে দেখল গায়ে চাদর টানা। শীত শীত লাগছিলো একটু। কেন শীত লাগছে? কারণ বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এর সাথে মাথার উপরে ফ্যান ছাড়া। ঠান্ডা তো লাগবেই। প্রিয়তা উঠে ফ্যান বন্ধ করে দিল। বিছানার ওপাশ খালি। প্রান্তিক তাহলে ঘুমায় নি। কোথায় গেলো?

বেলকনির কাছে এগিয়ে গেল সে। প্রান্তিক একা দাঁড়িয়ে রাতের বৃষ্টি দেখছে। অন্ধকারে প্রিয়তার উপস্থিতি প্রথমে টের না পেলেও এবার পেয়েছে। এদিক ঘুরে বলল,

“উঠে গেছো যে? শরীর খারাপ লাগছে!”

প্রিয়তা জবাব না দিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে এসে তাকে আলিঙ্গন করল‌ অন্ধকারের মধ্যে। প্রান্তিক দু হাতে তাকে আগলে নিল শক্ত করে। চুম্বন খেলো ললাটে, অতঃপর গলায়, গালে, ঠোঁটে। অবশেষে ঘাড়ের কাছের চুম্বন এঁকে দিল গাঢ় ভাবে। প্রিয়তার শরীর শিউরে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে ঠেকল গ্রিলের সাথে। প্রান্তিক ঠোঁট কা*মড়ে হেসে উঠল। গ্রিলে হাত রেখে ঝুঁকে গেল। বলল,

“একটা কথা ভাবছি!”

“কি?”

“আমাদের বাড়িটা তো বিশাল বড়। তাই সারাদিনই কেমন শান্ত শান্ত থাকে।”

“তো?”

“সারাবাড়ির প্রতিটি কোণায় যদি বাচ্চার হিসেব করি তাহলে কয়টা বাচ্চা লাগবে?”

প্রিয়তা আঁতকে উঠে বলল, “ফাজলামি করেন।”

“না আমি শিউর। ভাবছি এবার বাচ্চার প্রসেস শুরু করে দিব। বয়স তো কম হচ্ছে না। তুমি বলো কয়টা নিবো? ২ হালি না এক ডজন!”

প্রিয়তা ধপ করে তার বুকের মধ্যে ঘু*সি মেরে বলল, “চুপ করুন! পাগল হয়ে গেছেন।”

প্রান্তিক হাসতে হাসতে তার কানের ফিসফিসিয়ে বলল, “আমায় পাগল করেছো তুমি, আমি পাগল কেবল তোমার প্রেমে। ঝড় বৃষ্টির রাতে বিছানা ছেড়ে আমায় এসে আলিঙ্গন করছো। এর ফল কি হতে পারে জানো তো? হুঁ, বউ?”
প্রিয়তা ঢোক গিলল শুকনো। প্রান্তিক তার খোলা চুল নিয়ে খেলা করছে। গভীর স্বরে বলে উঠলো,

“আমি নিজের মৃ*ত্যুর থেকেও তোমার মৃ*ত্যু কে বেশি ভয় পাই। একটা মানুষ কখন এমন করে জানো তো? যখন নিজের জীবন থেকে ও কাউকে খুব বেশি ভালোবাসে! শোনো বউ, খুব ভালোবাসি তোমায়।”

প্রিয়তা মৃদু হেসে মাথা দুলাল। প্রান্তিক তার কোমর চেপে নিজের আগলে নিয়ে এলো। শুধাল,

“তাহলে বলো?”

“কি?”

“ভালোবাসি!”

প্রিয়তা হাসল শব্দ করে। আহ্লাদে গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “হু ভালোবাসি! আপনাকে ভালোবাসি বর মশাই।”

মেঘ গর্জে উঠল আচমকা। মৃদু আলোয় দুজন দুজনকে দেখল এবার। এতোক্ষণ অন্ধকারে কেবলই অনুভব করছিলো। এখন চোখাচোখি হলো সামনাসামনি। কি দেখল তারা? একে অপরের দৃষ্টি, যে দৃষ্টিতে লিখা আছে কেবল ভালোবাসার কথা।

~ সমাপ্ত