#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫
ঘড়ির কাঁটা সাত ছুঁই ছুঁই! প্রান্তিক চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– না এবার আমায় বাড়িতে যেতে হবে! বউ আমার অপেক্ষা করছে!
আলফি বিয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে বলে উঠলো, – কি বললি? আশিক শুনলি তো? নাকি আমিই ভুল শুনলাম। আশিক কয়টা বাজে দেখতো!
– সাত টা বেজে ১ মিনিট!
মান্নাত এসে প্রান্তিকের ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠলো,
– আমার বন্ধুর দেখছি সুবুদ্ধি হলো! কিরে? রাত ৩ চার আগে যে ছেলে বাড়ি ফিরে চাইছে। বাবা! বউ কি জাদু করলো সোনা!
আশিক ফিক করে হেসে উঠল। প্রান্তিক মান্নাতের হাত সরিয়ে বলল,
– আগে বিয়ে করো তাহলে বুঝবে বিয়ের মধু কি জিনিস!
আশিক সোফার উপর হেলান দিয়ে বসে বলল,
– মধু! হ্যাঁ তোর বিয়ের কথা তোর এক্স মধু ওরফে মধুরিমা থেকে জেনেছি। ভাবা যায়, বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ের খবর তার এক্স থেকে জানছি। এর আগে মা‘তাল হয়ে ম‘রে গেলাম না কেন?
আলফি বলে উঠলো, – আর আমায় জানালো ইরিনা! কি কেস ভাবতে পারছিস। ইরিনার কথা শুনে মনে হচ্ছিল বেচারি কান্না করছে। বললাম, ক্লাবে আসো দেখা করি!
প্রান্তিক তাকে একটা লাথি মেরে বলল,
– শা লা কম যাও না। যেই সুযোগ পেলি ওমনি!
আলফি ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেল। হামাগুড়ি দিয়ে হাসতে লাগল,
– তুই মান্নাত কে জিজ্ঞেস কর! ওকে কে জানাল? বেচারার ক্রাশ! দুঃখ বুঝতে পারছি।
প্রান্তিক মান্নাতের দিকে ফিরল। গাল টেনে বললো,
– সত্যি সোনা!
– ফাজলামি করিস না। ইশিতার সাথে কাজটা তুই ঠিক করিস নি। বেচারি কি দুঃখ পেয়েছে জানিস!
আশিক আরেক দফা হেসে বলল,
– ওরা প্রান্তিকের এক্স! এরপর আবার দুঃখ কেন পায় এটাই বুঝি না। তোর এক্স এতো লয়াল প্রান্তিক!
প্রান্তিক এসবে পাত্তা দিলো না। মান্নাতকে বলল,
– ইশিতার পিছনে ঘুরিস না মান্নাত! আমার এক্স কে ভাবী ডাতকে খুব ক‘ষ্ট হবে আমার।
– শা লা! ভেবেছিলাম বিয়ের আগে তোর সাথে বউয়ের একদিনের জন্য হলেও ফ্লাটিং করবো। তাহলে আমার মনের সাধ মিটতো।
প্রান্তিকের মুখ নিমিষেই পাংশু‘বর্ণ ধারণ করল। দাঁতে দাঁত চে‘পে বলল,
– হারামজাদা জবা‘ই করব তোকে!
মান্নাত জিহ্ব কেটে বলল, ছিঃ ছিঃ! তওবা তওবা এখন তো আমার ভাবী। এসব এখন ভাবছি না!
প্রান্তিক থমথমে গলায় বলল, – আগেও ভাবা উচিত হয়নি!
ব্যাপারটা অন্যদিকে গড়াচ্ছে ভেবে আলফি মাঝে এসে বলল, – থাম থাম! ও মজা করে বলেছে।
– ভাবী নিয়ে কোনো মজা না। আমি তোদের আগেও বলছি।
মান্নাত এগিয়ে এসে ঘাড়ে হাত রেখে বলল, – সরি দোস্ত! মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
প্রান্তিক তার হাত সরিয়ে সুট হাতে নিয়ে বলল, গেলাম আমি!
আশিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– আহা থাম না। মান্নাত ভাবী কে দেখলেই পা ধরে মা‘ফ চাইবি। এর আগেও বলেছি এসব নিয়ে কোনো মজা না। প্রান্তিক তুই বল, আরিনার কি খবর?
আলফি তাল মিলিয়ে বলল, – হ্যাঁ তো! শুনলাম ইজান শিকদার নাকি হাসপাতালে তোকে অনেক অপ‘মান করেছে। আমাদের ডাকলি না কেন?
– ছাড় তো এই কথা! ওদের কথা ভালো লাগে না।
– তো ভাবীর কথাই বল! আগে দেখেছিলি তাকে? দাদাজান দেখিয়েছিল তাকে?
প্রান্তিক বলতেই যাচ্ছিল। এরমধ্যেই গাড়ির আওয়াজে সকলে ত‘টস্থ! আশিক লাফিয়ে উঠলো। ঘাবড়ে উঠে বলল, – এই রে! ও আসছে!
তড়িখড়ি করে চারজন মিলে নিচ থেকে অ্যাল‘কোহলের বোতল গুলো নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলল। হাই হিলের শব্দ ভেসে আসছে। চারজনেই চুপ। মৌনিতা ভিতরে ঢুকেই সবার আগে চোখ গেল প্রান্তিকের দিকে। জুতো একটা খুলে ছুঁ‘ড়ে ফেলল তার দিকে। প্রান্তিক কোনোমতে বাঁচল!
– এতো রেগে কেন আছিস বোন!
মৌনিতা এসেই তার চুল টে‘নে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, – বাঁদরের বা‘চ্চা, তুই বিয়ে করলি কিন্তু একবারও জানালি না। আবার জিজ্ঞেস করছিস কি হয়েছে?
– আহ্ লাগছে। থাম না! আমি নিজেও জানতাম না।
– তুমি তো কিছুই জানতে না। ফারিয়ার সাথে কিভাবে রাত কাটা‘লে সেটাও মনে পড়ে না!
পিছন থেকে তিন পুরুষ একসাথে বলে উঠলো, “ফারিয়া! তুই ফারিয়ার সাথেও ডেট করেছিস প্রান্তিক!”
আলফি মাথায় হাত রেখে বলল, – শা লা কিছু তো রাখ আমাদের জন্য!
প্রান্তিক জিহ্ব কেটে বলল, ছিঃ ছিঃ! না না! আমি ফারিয়ার সাথে কিছু করিনি। বিশ্বাস কর! ও মিথ্যে বলছে।
– ও কার মেয়ে জানিস তো। এমপির মেয়ে। ভাবতে পারছিস!
প্রান্তিক গলা চেঁচিয়ে বলল, – কিন্তু আমি তো কিছু করিই নি!
আশিক মুখ টিপে হেসে বলল,
– তুই এতো কাণ্ড করেছিস যে আমরা বুঝতেই পারি না কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে!
– আমার বউয়ের কসম। আরিনার পর থেকে আমার কারো সাথে নেই!
আলফি বলে উঠলো, – দেখ! তবুও শেষে আরিনা!
মৌনিতা চোখ গর‘ম করে বলল, – তুই যে কিভাবে ফাঁস‘বি নিজেও জানিস না। তোর বউয়ের ভাগ্যে কি আছে খোদাই জানে।
– আমি যখন আছি, ভালো কিছুই আছে।
আশিক হেসে বলল, – তুই আছিস এটাই বড় চিন্তা!
মৌনিতা চোখ ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ ফিরল আশিকের দিকে। আশিক মুখ বন্ধ করে নিল। মৌনিতা আরেক পায়ের জুতো খুলে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, – তুই এখানে কি করছিলি হ্যাঁ? ম‘দ গিলছিস! কতোবার ফোন করেছি ফোনে কথা বলছিস না কেন? কথা বল!
আশিক মুখ করে মাথা নাড়ছে। কথা বললেই সে শেষ। আর রক্ষে নেই। মৌনিতা জুতো হাতে নিয়ে তাকে শাসা‘চ্ছে। ওদিকে তিন মাথা একসাথে সেই মজা নিচ্ছে।
মৌমিতা চেঁচিয়ে বলল,
– কি রে! বোবা হয়ে গেছিস। কথা কেন বলিস না? কয়টা বাজে? তোকে না বলেছি ৭ টা বাজার আগে বাসায় ঢুকবি। কথা কানে ঢুকে না!
মান্নাত বলে উঠলো,
– আমাদের সাথেই তো ছিল!
– এটাই বড় চিন্তা তোদের সাথে আছে। তোরা সবাই এক গোয়ালের গরু! এই তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাসায় চল!
আশিক ছুটে এসে প্রান্তিকের হাত থেকে জুতোটা নিল। তার প্রেমিকা মৌমিতার হাত থেকে জুতোটা নিয়ে নিচু হয়ে তার পায়ে পড়িয়ে দিল। এরপর মাথা নেড়ে বিদায় নিল সে। মৌনিতা যাবার আগে প্রান্তিক কে এই বলে সাবধান করল,
– এবার ভালো হয়ে চল। বিয়ে করেছিস কিন্তু! আলতু ফালতু কিছু শুনলে তোর পা ভে‘ঙে ঘরে বসিয়ে রাখব!
প্রান্তিক দ্রুত তার মাথা নাড়ল। ওরা যেতেই মান্নাত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– আশিকের কপালে যে কি আছে! বিয়ের আগেই আমার বন্ধুর লাইফ খ‘তম!
আলফি মাথা দুলিয়ে বলল,
– যেসব মেয়েরা রাজনীতি করে তারাই ডেঞ্জারেস! এদের যত দূরে থাকা যায়।
প্রান্তিক চৌধুরী তাল মিলিয়ে বলল,
– বউ মানেই ডেঞ্জা’রেস!
———–
বাড়িতে পৌঁছেতে প্রায় ৯ টা বেজে গেল প্রান্তিকের। প্রথমে গিয়েই উঁকি মারল বউয়ের ঘরে। মানতে কষ্ট হচ্ছে, সে ম্যারিড অথচ তার বউ থাকে আলাদা ঘরে। ঘরের দরজা খুলে বউ তার বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকল প্রান্তিক। এই অসময়ে বউ কে ঘুমাতে দেখে একটু চিন্তা বাড়ল তাঁর। কপালে হাত রাখতেই বউয়ের ঘুম ভেঙে গেল। প্রিয়তা চমকে উঠে বসল। চাঁপা স্বরে শুধায়,
– এসে গেছেন আপনি?
– এই অসময়ে ঘুমাচ্ছো কেন?
– এমনেই।
– না না, দেখি। শরীর খারাপ করল নাকি তোমার।
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে নেমে গেল। শুধালো,
– না আমি ঠিক আছি। আসুন আপনাকে খেতে দেই!
প্রান্তিক বোধহয় কথাটা শুনতে পেলো না। আচমকা তার হাত ধরে টেনে বসাল তার কোলের উপর। হতভম্ব প্রিয়তার চোখ বের হবার উপক্রম। সে শত চেষ্টা করেও সরে যেতে পারছে না। প্রান্তিক দু’হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছে মুখটা ঠেকিয়ে বলল,
– কি হয়েছে বলো না? মুড অফ!
– আপনি ছাড়বেন আমায়! হুটহাট এভাবে জড়িয়ে ধরার কারণ কি?
– প্রথমে বিয়ে করেছি এখন বউকে সোহাগ করছি। অসুবিধে কোথায়?
– আপনার সোহাগ আমার চাই না! ছাড়ুন তো আমায়!
তাকে ছাড়তে বাধ্য হলো প্রান্তিক। এরপর আবার বলা যায় কি দিয়ে দৌড়া‘নি দেয়। কম তো করছে না। এখন শুধু ঝাঁটার বা‘রি খাওয়া বাকি। বউ তার সেই ষোলোকলা ও পূরণ করে দেবে। তবে পিছু ছাড়ার পাত্র প্রান্তিক চৌধুরী নয়। প্রিয়তার পিছন দাঁড়িয়ে বলল,
– তুমি এখনো কি রেগে আছো? আজও এখানে ঘুমাবে!
– হ্যাঁ! আমার ঘরেই থাকব।
– আমি তাহলে কাঁথা বালিশ নিয়ে চলে আসি।
প্রিয়তা চোখ ঘুরিয়ে বলল,
– আমি বলেছি আপনাকে আসতে?
– বলো নি তো কি হয়েছে? চোখের ভাষা তো আমি বুঝতে পারি!
– ঝাঁটার বা!রি খেয়েছেন কখনো?
প্রান্তিকের মুখ শুকিয়ে গেল। এই ভয়টাই পাচ্ছিল সে। এক পা দূরে গিয়ে বলল,
– ঠিক আছে, ঠিক আছে! আমি অপেক্ষা করব। বুঝতে পারছি হুট করে বিয়ে হয়েছে তাই তোমার মানাতে একটু সময় লাগবে। ইটস ওকে বউ! আমি তো এখানেই, পাশের রুমে। মুড চেঞ্জ হয়ে গেলে নক নি!
বলেই চোখ টিপ মারল সে। প্রিয়তার চোখ মুখ কেবল শক্ত হয়ে গেলো। এই লোকটা এতো বকতে পারে। প্রান্তিক বের হয়েই যাচ্ছিল। প্রিয়তা ডেকে উঠল,
– শুনুন!
প্রান্তিক চমকে উঠে বলল,
– মুড এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়ে গেল?
– চুপ করুন। কাল আমায় একটু কলেজে যেতে হবে। কাজ আছে!
প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে শুধায়, – তুমি এখনো পড়াশোনা করো?
– কেন? আপনি করেন নি?
– আমার তো শেষ সেই কবে? তুমি কিসে পড়ো?
– থার্ড ইয়ারে আছি!
– তুমি তো তাহলে পিচ্চি!
– কি! কি বললেন?
– না মানে, ভালোই! খারাপ না!
প্রিয়তার সন্দেহ হলো। এগিয়ে এসে বলল,
– আপনার বয়স কতো বলুন তো?
প্রান্তিক দরজার সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
– কতো মনে হয় বলো তো?
প্রিয়তা বিভ্রান্ত হলো। দেখে মোটেও মনে হয় ২৩ কি ২৪ এর এদিক ওদিক কিছু হবে। তবুও বর মশাইয়ের কনফিডেন্স দেখে বলল, ২৬!
– কাছাকাছি!
প্রিয়তার চোখ কপালে। বলে বসল, – তাহলে কতো? আপনি কি বুড়ো নাকি?
প্রান্তিক এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে খানিকটা ঝুকে গিয়ে তার গাল টেনে বললো, – স্বামীকে বুড়ো বলতে নেই বউ! পাপ লাগবে পাপ। বুঝলে!
হেসে বেরিয়ে গেলো প্রান্তিক চৌধুরী। প্রিয়তা এখনো নিশ্চুপ। তার মনে হলো বরের ব্যাপারে এখনো তার কতো কিছু জানা বাকি!
#চলবে