প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব-০৭

0
1

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৭

প্রান্তিকের সব বন্ধু বান্ধব তাকে চেপে ধরেছে। ভাবীর সাথে পরিচয় করাতেই হবে। বিয়ের দাওয়াত থেকে চেপে গেছে বলে এভাবে মাফ করা যাবে না। এরা জোরাজুরিতে অফিস অবধি চলে এসেছে। প্রান্তিকের কেবিনে সকলের ভিড়। বন্ধু বান্ধব একেকজন একেক জায়গায় বসে আছে। আলফি তো তাঁর টেবিলের উপরই পা তুলে বসে আছে। মৌনিতা সামনের সোফাতে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।

– কিরে? বউ কে কি দেখাবি না। লুকিয়েই রাখবি নাকি?
– পাগল কেন হচ্ছিস। একশবার দেখাবো। তোদের না দেখিয়ে উপায় আছে।
মান্নাত বলে উঠলো,
– আচ্ছা জিজ্ঞেস করা হয়নি? তোর বউ তোকে মানতে পেরেছে তো?
– মানবে না কেন? আমি কম কিসে?

আশিক ঠোঁট উল্টে বলল, – বাপজান! আপনি আবার কম কিসে? ও জিজ্ঞেস করছে এমন হঠাৎ করে বিয়ে হলো, বউ কি বলল?
– কি আর বলবে? আলাদা ঘরে ঘুমায়!
আলফি একলাফে নিচে নেমে গেল। থমথমে গলায় বলল, – কি সত্যি! দ্যা গ্রেট প্রেমিক প্রান্তিক চৌধুরী কে তাঁর বউ প্রত্যাখান করেছে!
– প্রত্যাখান কি রে শা‘লা? রেগে আছে যাস্ট?

মৌনিতা ভিরু যুগল কুচকে শুধায়,
– তুই কি করলি আবার?
প্রান্তিক চৌধুরী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। সেই দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে উড়ে যায় তাঁর কথাগুলো। আশিক উচ্চ স্বরে হেসে বলল, – তোর এক্সদের অভিশাপ লেগেছে রে প্রান্তিক! অভিশাপ! এতো মেয়ের মন ভাঙলি যে এখন নিজের মন জোড়া দিতে পারছিস না।
প্রান্তিক এসবে বিশেষ কোনো পাত্তা দিলো না। বরং শুধালো, কি খাবি বল?

——-

প্রিয়তা দাঁড়িয়ে তাঁর বরের অফিসের সামনে। ভিতরে ঢুকতে তাঁর ভীষণ দ্বিধাবোধ কাজ করছে। করা উচিত নয়। তবু ভয় লাগছে। মানুষটার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছে। প্রতিবারই তাঁর জন্য দুপুরের খাবার তৈরি রাখে অথচ কোনোবারই মুখ ফুটে দেবার সাহস করে না। আজ কিভাবে কিভাবে যেন অফিস অবধি চলে এলো। আসার পর মনে হচ্ছে ভুল হলো।

ড্রাইভার অবশ্য বলল, – ম্যাম আপনি সোজা ভিতরে চলে যান। তবুও সংকোচ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ দেখল রাফি বের হচ্ছে ভেতর থেকে। তাঁর দিকেই আসছে। মনের ভার ভীষণ হালকা হলো। মুখের উপর থেকে কালো মেঘগুলো সরে যাচ্ছে দ্রুত।

সে আর রাফি ভাই লিফটের ভিতর। হ্যাঁ, রাফি তাঁর অনেক বড়। ভেবে নিয়েছে আজ থেকে তাকে ভাই ডাকবে সে। এর মধ্যেই তাদের সাথে আরো একটা মেয়ে লিফটে ঢুকল। তাঁর পোশাক অনেকটাই বিব্রতকর ঠেকলো প্রিয়তার কাছে। মেয়েগুলো এমন টাইট ফিটিং পোশাক কেন পরে? প্রিয়তা লক্ষ করল, অফিসের প্রায় প্রতিটা মেয়েই এমন পোশাক পরে আছে। ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু লাগছে তাঁর কাছে।

আলফি প্রান্তিকের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
– তা ভাবী আদর যত্ন করে কেমন?
– ভালোই করে!
– তোর কণ্ঠস্বর কিন্তু অন্যকথা বলছে!
প্রান্তিক চৌধুরী হাতের আলতো সাহায্য চুলগুলো একটু ঠিক করে বলল, – সব ঠিক।বউ আমার এমনেতেই ভালো তবে একটু রাগী এই যা! আমায় দেখলে দুটো কথাই বলে কেবল!

কৌতূহলী হয়ে আশিক শুধায়,
– কি?
– ছিঃ!
আলফি বলল, – অ্যাহ!
– হ্যাঁ আর অসভ্য।
মৌনিতা মুখ ঘুরিয়ে বলল, ইডিয়েট।
– এটাও মাঝে মাঝে বলে।
আলফি অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে।

– তোকে যে বারো ভাতা”রি বলে না এইটাই বেশি!
– কি বললি?
– না মানে? সামনে বারো ভাতি একটা হোটেল আছে। চল লাঞ্চ করে আসি।
– মশকরা করছিস?

মান্নাত বলে উঠলো,
– হ্যাঁ তা তো একটু! সারাজীবন যে জাল ফেলে মাছ ধরল আজ সে নিজেই জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে।
– বউ কি চিজ বুঝিয়ে দিল। জানিস তো সবাইকে তকমা দিতে পারবি কিন্তু ঘরের বউকে পারবি না!
প্রান্তিক চৌধুরী খানিকটা ভাব নিয়ে চাপা স্বরে বলে উঠলো, – তোরা আমায় চিনিস না! আমি প্রান্তিক চৌধুরী! ওই একটা না, দশটা বউ সামলানোর টেকনিক আমার জানা। এসব ভয় আমায় দেখিয়ে লাভ নেই।
আলফি মশকরা সহিত বলল, বাছাধন তুমি একটাকেই সামলাও।

– সামলে ফেলব। সামলে ফেলা আর কঠিন কি কাজ। বউ কে জব্দ করতে আবার এতো ভাবতে হয় নাকি। আমি তো তাকে কালই জব্দ করতে পারি। মুড়ির মোয়া ও আমার কাছে বুঝলি তো!

– বাব্বাহ! এতো কনফিডেন্স!

– প্রান্তিক চৌধুরী কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলছিস। ব্রো, আমি প্রান্তিক চৌধুরী। মেয়েদের দেখলেই উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পড়তে পারি। বুঝলি তো! কি হলো, চুপসে গেলি কেন?

আলফা থমথমে গলায় বলল,
– মনে হচ্ছে ভাবী!

– ভাবী! ভাবী আসবে কোথকে?

অকপটে পিছন ঘুরল সে। নিজ বউয়ের মুখটা দেখে শুকিয়ে গেল সে। বিস্ময়ে বলল, – বউ! তুমি!

প্রিয়তা এক নজরে সবাইকে দেখল। এরপর যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বিদায় নিল। রাফি পিছনে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপে ভেবে যাচ্ছে, – ইদানিং স্যারের উপর শ‘নি ঘুরছে!

মৌনিতা এবার দাঁড়িয়ে বলল,
– তিনিই আমাদের ভাবী!
– কেসটা কি হলো?
মান্নাত, আলফি, আশিক একসাথে হেসে উঠলো।
– কেস হচ্ছে সিরিয়াস। ভাবী আমাদের রেগে গেছে। এতোদিন তো ঘরে ঠাঁই মিলছিলো না, এবার দেখ বাড়িতেই ঢুকতে দিবে না!
– কি বলছিস? আমার বাড়িতে আমাকেই ঢুকতে দিবে না।
– গাধা দাড়িয়েই থাকবি নাকি?
প্রান্তিক হন্য হয়ে বলল, না আসছি।

বেরিয়ে গেলো সে। ছুটে গিয়ে ও শেষ রক্ষা হলো না। প্রিয়তা ততোক্ষণে লিফটে চড়ে গেছে। প্রান্তিক সিড়ি বেয়ে ছুটে নামছে। তার পিছন পিছন ছুটছে রাফিও। অফিসের সকলে অবাক নয়নে দেখছে তাদের স্যারের কাণ্ড!

———

প্রিয়তা পৌঁছানোর ৭ কি ৮ মিনিট বাদেই বাড়ি পৌঁছাল প্রান্তিক। গাড়ি থেকে ঝটপট নেমেই বাড়িতে ঢুকতে যাবে অমনি দেখল সদর দরজা বন্ধ। দাঁড়িয়ে গেল সে। দুজন গার্ড দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তিক চৌধুরী তাদের সরতে বললেও কেউ এক পা সরল না। বরঞ্চ রুক্ষ স্বরে বলতে লাগল,

– বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই!

– অনুমতি নেই মানে? তোমরা আমায় আটকাচ্ছো?

– ম্যাম বলেছে আপনাকে যেন ভিতরে ঢুকতে না দিই।

– এখন ম্যামই সব! আমি কেউ না! দেখি সরো, যেতে দাও।
দুজন এক পা ও নড়ল না। প্রান্তিক চৌধুরী চোখেমুখে অস্থিরতা। সত্যিই কি তবে বাড়ি ঢুকতে পারবে না সে! উঁচু কণ্ঠে শাসালো,

– এ বাড়ির ছেলে আমি! আর তোমরা আমায় ঢুকতে দিচ্ছো না! এর ফল জানো তো। এই বাড়ির মালিককে বারণ করছো!
দোতলার বারান্দা থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,

– বাড়িটা এখনো আমার প্রান্তিক!
– দাদাজান! দাদাজান আমায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কিছু বলো!
– আমি অপারগ। ঘরের লক্ষ্মীর কথাই শেষ কথা!-
– আমি তোমার শেষ বংশধর দাদু, তোমার রক্ত! বাইরের একটা মেয়ের জন্য এভাবে বেই‘মানি করবা?

তৎক্ষণাৎ দাদাজানের চা হাতে ঘরে প্রবেশ করল প্রিয়তা। প্রান্তিক চুপসে গেল। আজ যেন তার দিনটাই খারাপ। এবার মিষ্টি স্বরে বলে উঠলো,

– বউ! শুনছো! এই যে মিসেস। একটু দয়া করুন আমার উপর। সরি বলছি তো! বউ! ওগো বউ!

সকলের সামনে এমন মিনমিন স্বরে ডেকেও বিশেষ কোনো লাভ হলো না। প্রিয়তা ফিরে অবধি চাইলো না। যেন প্রান্তিককে দেখতেই পাই নি সে। ফের চলে গেল অন্দরমহলে। দাদাজান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আয়েস করে খেতে বসলেন। নাতির নাজেহাল অবস্থা দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন। তাকে টাইট দেবার জন্য প্রিয়তার মতোই একজনকে দরকার।

উপায় না পেয়ে প্রান্তিক এবার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। বাড়ির নিচেই দু পাশে ফুলের বাগান। এরপর বিস্তর খোলা জায়গা। ছোটবেলায় এখানে সে আর দাদাজান মিলে ক্রিকেট খেলতো। এখন সেখানে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়ির উপর বসে রাফির ক্লাস নিলো কিছুক্ষণ আগে। এই রাফি আগে কেন তাকে কিছু জানালো না এই ব্যাপারে। বেচারা রাফি কিছু না বলেও জড়িয়ে গেল। খেল কিছু ঝারি। এবার রাফি শুধায়,

– কিছু খাবেন স্যার?
প্রান্তিকের রক্ত‘বর্ণ চাহনি। রাফি বুঝে গেল স্যারের ভীষণ খিদে পেয়েছে। খাবার অর্ডার দিলো সে। ভেতর থেকে খাবার আসবে তার বিন্দুমাত্র আশা নেই।

প্রান্তিক পা ঝুলিয়ে সামনে দেখছে। বেলকনিতে তাঁর বউকে দেখতেই দুই হাত নাড়ল সে। প্রিয়তা পাত্তা দিলো না। কেবল চেয়ে রইল একমনে। প্রান্তিক এবার গায়ের সুটটা খুলে রাখল গাড়ির উপর। শেষ বিকালে তাঁর গরম লাগছে ভীষণ। এখন আবহাওয়া যেন এরকম। মাথার উপর সূর্যের কি তেজ। সবাই আজ তাঁর বউয়ের মতো তেজ দেখাচ্ছে তাঁর সাথে।

ইন করা শার্ট খুলে ফেলল। স্টাইল করা চুলগুলো এলোমেলো করে শব্দ করে শ্বাস ফেলল সে। রাফি হাজির একটা পিজা নিয়ে। গাড়ির উপর পিজা রেখে দুজনে আরাম করে খাচ্ছে। প্রান্তিকের পছন্দের খাবার পিজা। সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস ও আছে। রাফির উপর রাগ তাঁর পড়ে গেল। এই ছেলেটা ভালোই তাঁকে হাত করতে জানে। খেতে খেতে বলল,

– বউয়ের রাগ ভারী ডেঞ্জারাস! তাই না রাফি।
রাফি তাঁর সাথে মাথা নাড়ল। প্রান্তিক আবারো শুধায়,
– তোমার কি মনে হয়? আজ রাতটা কি আমাদের বাইরেই কাটাতে হবে?
রাফি জবাব দিল না। বিস্ময়হীন ভাবে চেয়ে রইল। স্যারের জন্য এবার সেও কি সারারাত এখানে থাকবে। যদিও স্যারকে একা এভাবে বাইরে রেখে বাসায় সে ফিরতে পারবে না। এরপর বাড়িতে বাঁধবে তুলকা‘লাম। এসব ভেবে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেকক্ষণ। বউয়ের দরজা খোলার নাম নেই এখনো। প্রান্তিক প্রায় অতিষ্ট মশার কামড়ে। ফোন করল তাঁর বউকে। রিসিভ হতেই নরম স্বরে বলল,

– বউ! কি করো?
– শুয়ে আছি!
– তোমার স্বামী বাইরে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খায় আর তুমি ভেতরে শুয়ে আছো। এসব কি ঠিক!
– দাঁড়িয়ে কেন আছেন? শুয়ে পড়ুন। নাহলে চলে যান আপনার বাকি বউদের কাছে। দশটা বউ না আছে আপনার!
– আরে ওসব তো আমি… হ্যালো হ্যালো!

প্রিয়তা ফোন কেটে দিল। পাশে দাঁড়ানো রাফি ইয়া বড় হামি ছাড়ল। তাঁর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। উল্টো প্রান্তিককে বলল,
– স্যার, আপনি গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসুন।
– না এখানেই বেশ আছি। বউয়ের রাগ মনে হচ্ছে না আজ পড়বে। কি সাংঘা‘তিক! বউ মানুষ এতো রাগ করে।
– স্যার আপনার নতুন নতুন তো, তাই এমন মনে হচ্ছে!
– কেন? তোমার বউ ও কি এমন রাগ করে নাকি?
– সব বউ করে স্যার। আপনার জন্য রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরি বলে সে আমায় ঘরে ঢুকতে দেয় না। আপনার ডাকে মাঝরাতে ঘর ছেড়ে চলে আসি বলে সে আমার সাথে কথা বলে না। আজ যে কি করবে!
তিক্ততার সাথে কথাগুলো বলল রাফি।

প্রান্তিক মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনে বলল,
– সরি ভাই মাফ করে দে! আমার উচিত শিক্ষা হয়েছে। এরপর থেকে আমি তোকে সন্ধ্যার আগেই ছেড়ে দিবো। বউ যে কি চিজ তা হারে হারে টের পাচ্ছি!

সারাদিন বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে প্রান্তিক বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ঘড়ির কাটায় ৮ টা ছুঁই ছুঁই। রাফি এসব খবর রাখছে না। পকেটে তাঁর ফোন বাজছে। কিন্তু রিসিভ করার সাহস তাঁর নেই। প্রান্তিক পাইচারি করছে। একটু বাদে বাদে ফিরে তাকাচ্ছে বেলকনিতে। এই নিরীহ দুটি মানুষের উপর যদি মায়া হয়!

ঘরের মধ্যে প্রিয়তা শাড়ি গুলো ভাঁজ করছে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ! এগিয়ে গিয়ে দেখল রাফি ভাই দাঁড়িয়ে। ভ্রু কুঁচকে বেলকনির দিকে আগাল। বেলকনির দরজা বন্ধ। কাচের দরজার ওপার থেকে সব স্পষ্ট দেখা যায়। প্রান্তিককে না দেখে ভারী অবাক হলো সে। আচমকা চমকে উঠল সে। বেলকনির দরজা লক করা। ওপারে দাঁড়িয়ে প্রান্তিক হাত নাড়ছে। প্রিয়তা দরজা খুলে বলল,

– আপনি এখানে?
প্রান্তিক আহ্লাদী সুরে বলতে লাগলো,
– বউ! ও বউ! এবারের মতো মাফ করো দাও। এই যে কান ধরছি আর কখনো উল্টোপাল্টা কিছু বলল না। একটু ভালোবাসা না দেখাও মায়া তো দেখাতেই পারো।
প্রিয়তা উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করল,
– আপনি এখানে এলেন কি করে?
– মই দিয়ে! বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার পা ব্যাথা করছে।
– যেভাবে এসেছেন সেভাবে চলে যান!

প্রান্তিকের মুখে আষাঢ় নেমে গেল। বলে উঠলো,
– আমার উপর দয়া না করো, রাফির জন্য তো করতেই পারো। বেচারার বউ তাকে ফোন করছে বারবার। আমি সংসার করতে পারছি না বলে কি সেও করতে পারবে না!
প্রিয়তা তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
– রাফি ভাই! আপনি বাসায় চলে যাচ্ছেন না কেন?
রাফি চটপট জবাব দিল,
– স্যার না বাড়িতে ঢুকলে আমি কি করে যাই ম্যাম!

স্যারের প্রতি এতো ভক্তি দেখে প্রিয়তা বেশ বিরক্ত হলো। রাফির ফোনটা এবার জোরে বেজে উঠল। প্রান্তিক চেঁচিয়ে উঠে বলল,
– দেখলে দেখলে! ও বউ ফোন করছে। আমার কথা না ভাবো ওর বউ বাচ্চার কথা তো ভাবতে পারো!
রাফি কিছু না বললেও মাথা দুলাল দ্রুত বেগে! প্রিয়তা হার মানল এবার। রাগ পড়ে গেল তাঁর। তবুও চোখ মুখ শক্ত রেখে ভনিতা করে বলল,
– আচ্ছা রাফি ভাই, এবার বাসায় যান আপনি!

প্রান্তিক খুশিতে ছুটে এসে বউকে জড়িয়ে ধরল। আকস্মিক ঘটনায় প্রিয়তা বেশ চমকে উঠল। চাঁপা স্বরে বলল, – রাফি ভাই এদিকে আছে!
– আরে না না, কেউ নেই। ও চলে গেছে!

সত্যি সত্যি দরজার কাছে রাফির কোনো চিহ্ন মিলল না। লোকটা যেন হাওয়াই মিলিয়ে গেল। প্রান্তিক চট করে বউয়ের গালে চুমু খেয়ে বলল,
– লক্ষ্মী বউ আমার! আই লাভ ইউ!
বলার পর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে ভাগল সে। নাহলে দেখা যাবে বউ আবার রাগ করে বসবে। প্রিয়তা গালে রেখে মুচকি হাসল। ভালোবাসার কথা শুনে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল সে!

——-

অনেকদিন হলো, মায়ের সাথে দেখা হয়নি প্রিয়তার। বোনদের কথা ভীষণ মনে পড়ে। অসুস্থ বাপকে কতোদিন দেখে না। তাদের বিয়েটা কেমন অস্বাভাবিক ভাবে হয়ে গেল। দাদাজান চান না প্রিয়তা এ বাড়ি ছেড়ে একদিনের জন্যেও কোথায় যাক। এমনকি রিসেপশনের পরেও একদিনের জন্য তিনি প্রিয়তাকে বাড়ির বাড়ি যেতে দেননি। কেবল বললেন,
– তোমার ঘরে এখনো তিন লক্ষ্মী আছে সিদ্দিক! আমার একমাত্র ঘর লক্ষ্মী কে নাই বা নিলে!

সিদ্দিকুর রহমান সেদিন স্যারের মুখের উপর কথা বলতে পারেননি। প্রিয়তা নিজেও পারেনি। কিন্তু আজ সে ভীষণ অধৈর্য্য হয়ে উঠল। কথাটা প্রান্তিকের কাছে বলে দেখবে। তাঁর বর মশাই যেতে দিবে তো?

গলার টাই পরিয়ে দিচ্ছিল। প্রান্তিক নেশাভরা চোখে প্রিয়তাকে দেখছে। কখনো চেষ্টা করছে তাঁর উলঙ্গ কোমরে হাত দেবার। মনকে মানিয়ে রাখা বিরাট মুশকিল। এক পর্যায়ে হাত তো চলেই গেলো। প্রিয়তা মুখে কিছু বলল না। কিন্তু গলার টাই ধরল চেপে। মূহুর্তে প্রান্তিক তাকে ছেড়ে দিয়ে কাশতে লাগল। প্রিয়তার গাম্ভীর্যময় চাহনি! প্রান্তিক গলার টাই ঢিলে করে বলল,

– সাং‘ঘাতিক মেয়ে তুমি! একদিন আমায় না মে‘রে শান্ত হবে না বলে মনে হচ্ছো!
প্রিয়তা এগিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিক করে দিলো। মৃদু হেসে বলল,
– আমি বাড়ি যাবো!
– এটাই তো তোমার বাড়ি!
– বাবার কাছে যাবো!
– তো যাও। সন্ধ্যার আগে আগে চলে এসো!
মুখটা শুকিয়ে গেল তাঁর। হাতটা সরিয়ে ফেলতে নিলে প্রান্তিক নরম হাত চেপে ধরল। মৃদুস্বরে বলল,

– তুমি চৌধুরী বাড়িতে আসায় এ বাড়ি প্রাণ ফিরে পেয়েছে! তুমি চলে গেলে এ বাড়ি আবার মৃ‘ত হয়ে উঠবে।
প্রিয়তা অবাক স্বরে শুধায়,
– এতো মানুষ থাকতে মৃত কেন হবে?
– কারণ তুমি যে নেই।
প্রিয়তার কপালে ভাঁজ পড়ল। আর টু শব্দ টুকু করল না। যতই বরের উপর বাহাদুরি দেখাক বরের অনুমতি ছাড়া এই বাড়ি থেকে বের হবার সাহস তাঁর নেই। প্রান্তিক ল্যাপটপ হাতে নিয়ে এদিক ফিরে আচমকা তাকে টেনে কপালে চুমু খেল। বলল, – আসছি!

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রিয়তার ঠোঁটের কোণে অজান্তেই হাসি ফুটল। চোখে মুখের মুগ্ধতা লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে!

#চলবে….