#প্রিয়াঙ্গন❤️ [পর্ব-৪৩]
~আফিয়া আফরিন
ইয়াসমিন একেবারে কিছুই বললেন না। অন্ততপক্ষে রাগারাগি করলেও উনার অভিব্যক্তি বোঝা যেত। কিন্তু নীরবতা অনেক বেশি ভয়ংকর।
রাতে কামিনী সাহস করে উনার ঘরে গেল। গলার স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করল,
— “মা, আপনি এখনও খান নাই?”
তিনি চোখ তুলে তাকালেন না। শুধু বললেন,
— “ওই মেয়ে ওই ঘরে থাকবে নাকি?”
কামিনী ইতস্তত করে বলল
— “হ্যাঁ মা, ওখানেই তো।”
ইয়াসমিন এবার মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন। চোখেমুখে জমাট বাঁধা ক্ষোভ।
— “তো এত কিছু করতে পারলে, ঘরটা সাজিয়ে দিতে পারলে না তোমরা? নতুন বউ ওইভাবে রাতটা কাটাবে?”
— “মা, আপনি মেনে নিয়েছেন নাকি?” কামিনী অবাক।
— “আমার মানা না মানায় তোমাদের কিছু আসে যায়? নিজেরা তো বড় হয়ে গেছো। আর বাপ তো আছেই, আমার কি দরকার? আমি কে? এই সংসারে এত বছর ধরে বোঝা হয়ে বেঁচে আছি।” শেষ কথাগুলো বলার সময় গলাটা ভারী হয়ে গেল। কিন্তু রাগে-অভিমানে সেই কাঁপনকে লুকিয়ে রাখলেন।
চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আয়ান বেরিয়ে এল। তার পেছনে চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল পড়শী। আয়ান বলল,
— “এসব তুমি কি বলছ মা?”
ইয়াসমিন নিস্পৃহ ভঙ্গিতে তাকালেন,
— “মিথ্যা বলছি?”
পড়শী এগিয়ে এসে সহজ গলায় বলল,
— “মা, আপনি একটু শান্ত হন।”
ইয়াসমিন বিদ্ধ করা দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে,
— “তুমি চুপ করো। মা কে? আমি? কেন আমি তোমার মা হবো? নিজের ছেলেরাই তো মাকে মানে না, আর তুমি তো পরের মেয়ে। এই বাড়িতে থাকো, কিন্তু আমার সাথে কোনো আদিখ্যেতা করতে আসবে না। কথাও বলো না। বেশি ভালো হয় আমার সামনে না এলেই। কে জানত এই মেয়ে একদিন সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবে।” শ্বাশুড়ির শেষ কথাগুলো পড়শীর বুক চিরে গেল। ঠোঁট কামড়ে রাখলেও চোখের কোণ ভিজে উঠল।
আয়ান তাকিয়ে রইল, মায়ের চোখে ক্ষোভ, স্ত্রীর চোখে কান্না; মাঝখানে দাঁড়িয়ে দম বন্ধ হয়ে এলো। আয়ান একটু এগিয়ে গেল, মায়ের সামনে দাঁড়াল।
— “মা, এমন কথা তুমি কীভাবে বলছো? তুমি বোঝা? তুমি আমাদের সংসারের ভিত্তি। তোমার জন্যই তো আমরা এখনও টিকে আছি।”
— “তাহলে তোমরা আমার কথা মানলে না কেনো? আমার না বলা কি কিছুই না?”
আয়ান মায়ের চোখের দিকে স্থির হয়ে তাকাল,
— “তুমি সমাজের কথা বলেছ। সমাজ আমাদের সঙ্গে থাকবে কি না আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি, আমার জীবন সম্পূর্ণ হবে পড়শীর সাথেই। তুমি সবসময় বলেছো তোমার সন্তানের সুখটাই আসল। আমি যদি সুখ পাই, তাহলে কি সেটা তুমি মেনে নেবে না?”
কথাগুলো শুনে ইয়াসমিনের চোখ একমুহূর্তের জন্য দ্বিধার ছায়া ভেসে গেল। কিন্তু তিনি কিছু বললেন না, গুম হয়ে রইলেন। তারপর হনহন করে হেঁটে চলে গেলেন। আয়ান এগিয়ে পড়শীর কাঁধে হাত রেখে বলল,
— “চলো, মা শান্ত হলে আবার কথা বলব।”
— “আমি একটু মায়ের কাছ থেকে আসি।”
— “যাবে?”
পড়শী মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
— “হুম, কথা বলব। তুমি বলেছিলে, মাকে সামলে নিতে। ওই দায়িত্ব তো পালন করতে হবে।”
পড়শীর সাথে শাশুড়ির কী কথা হলো, তা কেউ জানল না। কিন্তু পরদিন থেকেই ইয়াসমিনের আচরণে পরিবর্তন দেখা গেল। না তিনি আগের মতো তীক্ষ্ণ কথা বলছেন, না আবার একেবারে সহজভাবে মেনে নিয়েছেন। কথাবার্তা হচ্ছে কেবল মাপজোখ করে, সীমারেখার ভেতরে। পড়শীও সেই সীমারেখা অতিক্রম করল না। যতটা দরকার, ততটাই কথা বলল। কোনো বাড়তি আদিখ্যেতা নয়, আবার অবহেলাও নয়।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লাভ হলো আয়ানের। মায়ের সঙ্গে বউয়ের টানাপোড়েন সে একেবারেই সহ্য করতে পারছিল না। দুজনের এই নীরবতা তার বুকের ভেতরটা পুড়িয়ে দিচ্ছিল। অন্তত এখন সেটা খুব সামান্য হলেও স্তিমিত হয়েছে।
তার জীবনে মা আর পড়শী দু’জনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তার অস্তিত্বের প্রতিটি শেকড়ে মায়ের ছাপ লেগে আছে। আর পড়শী… ও হলো শ্বাস-প্রশ্বাস, বেঁচে থাকার মানে। দুজনের ভালোবাসা আলাদা হলেও, দুটোই সমান অপরিহার্য। মায়ের চোখের একফোঁটা পানি, জীবনের সুখ কেড়ে নেয়। আর পড়শীর চোখের একফোঁটা পানি হৃদয় বিদীর্ণ করে দেয়। এই দুই স্রোতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে প্রতিদিন সামঞ্জস্য খুঁজে বেড়ায়। কখনো মনে হয়, মা কেনো পড়শীকে নিজের মতো করে মেনে নিতে পারেন না? পড়শী তো শুধু এ সংসারটাকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে চায়। আবার কখনো মনে হয়, পড়শী কেনো মায়ের রূঢ়তাকে বেশি মনে নেয়? মা’ও তো মানুষ, তার রাগ আছে, অভিমান আছে; সেই অভিমানেই তিনি তীব্র হয়ে ওঠেন।
যাইহোক, তবুও অন্তরের গভীরে আয়ান জানে পড়শীকে নিয়ে সে কোনো আপস করবে না। যেমনটা জানে, মাকেও সে কোনোদিন ছেড়ে যাবে না।
পরের মাসেই অন্বেষার লেবার পেইন উঠল। সকালবেলা সবাই ছুটে গেল হাসপাতালে। দুপুর নাগাদ ডাক্তার এসে জানালেন, সুস্থভাবেই ছেলে হয়েছে। খবরটা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটল। শাহিদ ভাই চিন্তায় চিন্তায় একেবারে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছিল। খবরটা শুনে চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক বয়ে গেল। নার্স যখন ছোট্ট বাবুকে কোলে নিয়ে বের হলো, সবাই একসাথে তাকাল। নরম, ফর্সা, ছোট্ট হাত পা নাড়াচ্ছে। নাবিলা মেঘমন্দ্র সামিরকে বলল,
— “আমার এইবার একটা বাবু চাই। ওদের সবার বাবু হয়ে গেছে, আমারই নাই।”
সামির উত্তরে কিছু বলল না, গম্ভীর ভঙ্গিতে তাকাল শুধু।
অন্বেষা আগেই বাচ্চার নাম ঠিক করে রেখেছিল। যেহেতু জানতো না কি হবে, তাই ছেলে-মেয়ে উভয়ের নামই ঠিক করে রেখেছিল। ছেলের নাম দিল আরিহান। ওইদিকে রায়হান আর কামিনীর ছেলের নাম রাখা হয়েছিল রায়ান। দু’টো বাচ্চা আসার পর পুরো সংসার অন্যরকম হয়ে উঠল। ঘরজুড়ে তাদের কান্না, হাসি, খিলখিল শব্দ; সবাইকে মাতিয়ে রাখে। মনে হয়, প্রাণ দু’টোই সংসারের প্রাণকেন্দ্র।
অন্বেষার শাশুড়ির শরীর খারাপ, বয়সও অনেক হয়ে গেছে। তাই বাচ্চা জন্মের আগে থেকেই অন্বেষা পুরোটা সময় বাপের বাড়িতেই কাটাল। যদিও এটাই স্বাভাবিক, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এমন হয়। কামিনীর ক্ষেত্রে অবশ্য অন্যরকম ছিল। ইয়াসমিন ওকে ছাড়তেই চাইছিলেন না। বংশের প্রথম বাচ্চা। চেয়েছিলেন, এই বাড়িতেই থাকুক। তাই কামিনীকে থাকতে হয়েছিল শ্বশুরবাড়িতেই। তবে বাবু হওয়ার পর বাপের বাড়ি গিয়ে বেরিয়ে এসেছে বেশ কয়েকদিন।
.
রাজশাহীর পোস্টিং বাদ দিয়ে ঢাকাতে চাকরিটা পেয়ে যাওয়া সামির’সহ সবার জন্য বড় আনন্দের ব্যাপার হয়ে উঠল। মা-বাবার কাছাকাছি, নাবিলার থেকেও দূরে যাওয়ার চিন্তা নেই, অচেনা শহরে একাকীত্ব নেই।
সামিরের অফিসের দিন শুরু হলো বেশ গুছিয়ে। সকালবেলা বেরিয়ে যায়, ব্যস্ততায় ডুবে যায় নতুন পরিবেশের সাথে। অন্যদিকে নাবিলার সময় ঠিকই কাটছে। সামিরকে ছাড়া একাকীত্ব একেবারেই অনুভব করছে না। কারণ ওদের আগের রুটিনটাও এমনভাবেই সাজানো ছিল। তাই সামিরের নতুন পথে প্রবেশ নাবিলার আলাদা লাগছে না। এখন প্রতিদিন নিয়ম করে ক্লাসে যায়। ক্লাস শেষে সরাসরি বাড়ি ফেরে না, বেশিরভাগ সময়ই চলে যায় বাবুদের কাছে। ছোট্ট বাচ্চাদের ঘিরে ওর মন ভরে ওঠে। কোলে নিয়ে বসে থাকে, খেলা করে, গল্প করে; এমনকি কখনো কখনো ঘুম পাড়িয়েও দেয়।
অন্বেষা শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেছে, মাঝেমধ্যে ক্লাস শেষে নাবিলা ওখানেও যায়। সামির সাধারণত সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরে আর নাবিলা বিকেলের দিকে। দু’জনের ফেরার সময়, দিন কাটানো পৃথক হলেও সবশেষে একে অপরের মাঝে কোনোপ্রকার অভিযোগ থাকে না।
নাবিলার এই অবস্থা মানে বাচ্চাকাচ্চাদের প্রতি টান দেখে সেদিন রেশমা বললেন,
— “তোমরা চাইলে একটা বাচ্চার কথা ভাবতে পারো তো এখন।”
আচমকা এমন কথা বলায় নাবিলা কিঞ্চিত লজ্জা পেল। তৎক্ষণাৎ চোখ নামিয়ে নিল। উনি ফের বললেন,
— “যদি তোমাদের ইচ্ছে থাকে তবেই। তুমি যেভাবে ওই দুটোর কাছে গিয়ে বসে থাকো… নিজের থাকলে ভালো হয় না?”
নাবিলা লাজুকভাবে মাথা নাড়ল এবং বলল,
— “সত্যি বলতে, ওদের কাছে থাকতে ভালো লাগে।”
মামণি কোমল স্বরে হেসে বলল,
— “দেখছো তো, নিজের মনের কথা বুঝছো। আমি বলেছি বলে এত লজ্জা পেতে হবে না। মায়ের কাছে লজ্জার কী আছে? এইবার নিজেদের কথা ভাবো। আমিও তো বাড়িতে একা থাকি। আমার কথাও তো ভাবা উচিত, তাই না?”
নাবিলা সত্যি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে ঘরে এলো। ওর মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ খেলে যায়। একটা বাবুর শখ খুব আছে। বিশেষ করে আরিহান আর রায়ান আসার পর থেকেই। আরিহান আর রায়ানকে কোলে নেওয়া, ওদের ছোটো ছোটো হাত-পা স্পর্শ করা, নিষ্পাপ মুখখানা দেখার ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো নাবিলার জীবনের সবচেয়ে মধুর স্বপ্নের মতো মনে হয়।
পরের শুক্রবার সন্ধ্যা। দু’জন ঘুরেফিরে বাড়ি এসে ঘরে এলো। নাবিলার মনে হঠাৎ একটা ভাব ভেসে এলো, আজ হয়তো সামিরকে কিছু বলার জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময়। নাবিলা ধীরে সামিরের কাছে এসে বসল। কাঁধে হাত রেখে বলল,
— “মামণি তো সারাদিন বাসায় একলা থাকে।”
সামির ভ্রু কুঁচকে মাথা নাড়ল,
— “হুম, জানি তো।”
— “একলা থাকতে খারাপ লাগে। আমিও থাকি না, তুমিও থাকো না। মামণির একা একা লাগে।”
সামিরের ভ্রু আরেকটু ভাঁজ হলো। চোখেমুখে খুনসুটি ফুটে উঠল,
— “তাহলে কি আমাকে আরেকটা বিয়ে করতে বলেছো? না মানে, আরেকটা বউ হলে মায়ের কাছে থাকতে পারত।”
নাবিলা তৎক্ষণাৎ সামিরের পিঠে দুরুম করে একটা কিল বসিয়ে দিল। সামির হেসে ফেলল। নাবিলা তার পিঠে মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— “আমি ফাজলামি করছি না।”
সামির এইবার বেশ গম্ভীর গলায় বলল,
— “আচ্ছা বলো? বাবাকে আরেকটা বিয়ে করাব?”
নাবিলা উঠেই গেল। ততক্ষণে সামির তার হাত টেনে কোলে টেনে বসাল। তারপর ধীর গলায় বলল,
— “নাও, এবার সিরিয়াস হলাম। এখন বলো।”
নাবিলা এইবার সরাসরি বলল,
— “আই ওয়ান্ট বেবি, রাইট নাও।”
সামির মোটেও অবাক হলো না। সে জানত, নাবিলা এই কথাটাই বলবে। সম্প্রতি পরিবারের নতুন দুই সদস্যকে দেখে ওর এই ইচ্ছে আরও জাগ্রত হয়েছে। তবে সামির চায়, ওর পড়াশোনাটা শেষ হোক। তাই ধীরে ভঙ্গিতে কোমর জড়িয়ে ধরে, ওর কাঁধে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল,
— “কেনো?”
— “কেনো মানে? বাবু কেনো দরকার হয় মানুষের?”
— “তুমি এখনও অনেক ছোটো। আগে বড় হও। নিজেকে সামলাবে নাকি বাবু?”
নাবিলা মৃদু লাজুক গলায় বলল,
— “কিন্তু আমি মনে করি আমরা দু’জনই প্রস্তুত। মানে এতদিন একসাথে থাকছি, একে অপরকে বুঝি। এবার তো কোনো ভয় নেই। আর আমি মোটেও ছোট নই।”
সামির একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নাবিলার চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে বলল,
— “হুম… আমি জানি তো। কিন্তু জীবনে অনেক দায়িত্বও আছে। পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরো।”
নাবিলা একটু মনখারাপ করে বলল,
— “তুমি একটু কল্পনা করো না, আমরা আমাদের ছোট্ট বাবু নিয়ে থাকব। ওকে নিয়ে আমাদের আরও মিষ্টি মুহূর্ত তৈরি হবে।”
সামির নির্বিকারভাবে কাঁধ হেলায়, চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুক্ষণ নীরব থাকে। নাবিলা জোর করে হাসি টেনে ধমক দেয়,
— “হুম? শুনছো তো? একটু ভাবো না?”
সামির নাবিলার দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে,
— “আমি ভাবছি… কিন্তু এখনই নয়। আগে তোমার পড়াশোনা শেষ হোক, তারপর আমরা সেই মুহূর্তগুলোর খোঁজ করব।”
— “সেটা আর কতদিন? আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না।”
সামির নাবিলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কোমল কণ্ঠে বলল,
— “আরেকটু বড় হও। এখনই কি এত কষ্ট সহ্য করতে পারবে?”
নাবিলা সামিরের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। চোখে আগুন, রাগ আর আক্ষেপ মিশ্রিত ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
— “বড় হব? আমি কি এখনও ছোটো? কষ্ট সহ্য করতে পারব না? এর থেকে ছোট বয়সে তুমি আমাকে আরও বেশি কষ্ট দিয়েছ, ভুলে গেছো?”
সামির কিছু বলতে চেষ্টা করল, নাবিলার কাছে এগিয়ে, শান্ত কণ্ঠে বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু নাবিলার রাগের উচ্ছ্বাসের সামনে সেই সুযোগ মিলল না উল্টো সামিরকে চুপ করে যেতে হলো। অবশেষে সামির মৃদু কণ্ঠে বলল,
— “শোনো নাবিলা, আমাকে দু’দিনের জন্য চট্টগ্রামে যেতে হবে।”
নাবিলার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। হিসহিসিয়ে বলল,
— “তুমি যাও। চট্টগ্রাম না গণ্ডগ্রামে যাও, আমার কি তাতে?”
সামির হেসে এগিয়ে এসে নাবিলার কপালে চুমু দিল। নাবিলা দমল না। সামির চোখে উচ্ছ্বাস ও খামখেয়ালিপনা নিয়ে বলল,
— “এত রাগ করে না। দু’দিন পরে তো ফিরে আসবই। জানো কি? আমি তোমার রাগের বিন্দুটা পর্যন্ত উপভোগ করি। এই দু’দিন তুমি রাগ করবে আর আমি উপভোগ করব, কী শান্তি! মিষ্টি দেখাচ্ছে কিন্তু। টুক করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। খেয়ে ফেলব?”
নাবিলা বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে সামিরের গায়ে ছুঁড়ে মারল।
সামির সকালেই রওনা হলো। পৌঁছে গিয়ে নাবিলাকে ফোন দিল, কিন্তু নাবিলা ফোন রিসিভ করল না। ফিরতি মেসেজও দিল না। মামণির সাথে কাজে হাত লাগাল, সাহায্য করল, মাঝেমাঝে নিজের পড়াশোনায় মন দিল। ওই বাড়িতে আর আজ গেল না, যাবেও না কখনো। দরকার নেই… পড়শী এসেছিল অবশ্য বিকালের দিকে। একটু নিজের বাসায় যাবে, তাই নাবিলাকে নিয়ে বের হলো। পড়শীর দিনকাল এখন তুলনামূলকভাবে ভালো কাটছে। শ্বাশুড়ি বাইরে থেকে কিছুটা অমিশ্রভাবে আপত্তি জানালেও, ভেতরে ভেতরে মেনে নেওয়ার সংকেত স্পষ্ট। সবাই বুঝতে পারছে এমন লক্ষী মেয়েকে প্রতিহত করার কোনো জোর নেই।
পড়শীর সৌম্য আচরণ, বিনয়ী ভঙ্গি আর আয়ানের প্রতি তার অটুট ভালোবাসা; সবমিলিয়ে পড়শীকে মেনে না নিলে নিজেকেই মানুষ হিসেবে গণ্যই করা হবে না।
সেদিন রাতে সামিরের সাথে নাবিলার খুব সামান্যই কথা হলো যদিও মেসেজে। পরদিন সকাল থেকেই সামির ফোন করছিল। তখন নাবিলা মামণির সাথে বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তাই ফোন ইচ্ছাকৃতই সাইলেন্ট করে রেখে দিল। রেশমা খেয়াল করে বললেন,
— “সামির ফোন দিচ্ছে তো, ধরো।”
— “মাত্র কথা বললাম, শুধু ফোন দেয়।”
রেশমা হেসে উঠলেন। এরপর দু’জনে একসাথে বেরিয়ে গেল। ওরা পৌঁছাল মোহাম্মদপুরে, সামিরের ছোট খালামনির বাসায়। ওখানেও সামিরের অনেক কাজিন আছে। সবার সাথেই মোটামুটি বেশ ভালো সম্পর্ক। সন্ধ্যার পর সারাদিনের ধকল শেষ করে নাবিলা বাড়ি ফিরল। তখনও সামির ফোন দিচ্ছিল। এবার ফোন রিসিভ করল। সামির গমগমে কণ্ঠে বলল,
— “এতক্ষণ ফোন ধরোনি কেন?”
নাবিলা শান্ত কণ্ঠে বলল,
— “মামণির সাথে ছিলাম।”
— “তো?” সামির একটু কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করল।
— “তো আবার কি? ছোটো খালামনির বাসায় গেছিলাম। সবার মাঝখান থেকে উঠে এসে কথা বলা বেয়াদবি না।”
সামির কিছুক্ষণ নিজের চুলে হাত বোলাল। তিরিক্ষি মেজাজটা সামলে বলল,
— “ইশশশ ওকে। কুল সামির, কুল!”
নাবিলা অজান্তেই হেসে দিল। নাবিলার হাসি আর সামিরের গম্ভীর কথাবার্তার ধরনের গতদিনের রাগ আর পাত্তা পেল না। রাগের সূক্ষ্ম আঁচড়গুলো এক নিমিষেই বিলীন হয়ে গেল।
একটা মানুষের ভেতর রাগ, অভিমান, অভিযোগ, অহংকার; সব অতি সাধারণ বিষয়। একজন মানুষ হতে গেলে ভালোর পাশাপাশি এই মন্দ গুণগুলো থাকবেই… থাকতেই হবে। কিন্তু সবসময় সেসব তুলে ধরার প্রয়োজন নেই; কিছু যন্ত্রণাটা ভিতরে থাকলে তা কখনো মায়া হয়ে দাঁড়ায়, কখনো বিষ হয়ে ঢলে পড়ে। সম্পর্ক নরম রাখতে হলে রাগ দেখাতে হলেও মেপে দেখাতে হয়; অভিমান থাকলে তার মাত্রা নির্বাচন করতে হয়; অভিযোগ থাকলে সেটা সঠিক সময়ে, সৎভাবে তুলে ধরতে হয়। আর যদি কখনো এই প্রক্রিয়াগুলো দেখানোর খুব প্রয়োজন হয় কিংবা কেউ ভুল করে নিজের রূঢ় সত্ত্বা প্রিয়জনের কাছে প্রকাশ করে ফেলে তবে লুকোচুরি নয়; ঠান্ডা মাথায়, সময় নষ্ট না করে দ্রুত মিটিয়ে নিতে হয়। কারণ বলার মতো কথা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ভুল বোঝাবুঝি মুছে ফেলার সাহসও ততটাই মহৎ; তবেই ভালোবাসা টিকে থাকে, তবেই আঘাত আর ঘৃণায় বদলে আবারও মায়া-মমতা বাড়ে। এই জিনিসটা সামির আর নাবিলা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই এখন আর আগুনে ঘি না ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আর দু’পক্ষের সমান চেষ্টায় জীবনের সব অভিযোগ মিটে যায়। দু’জন মিলে চাইলে কোনো দূরত্বই দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কোনো কষ্টই অমোচনীয় থাকে না।
.
সময় হাওয়ার মতো বয়ে যাচ্ছিল। দিনেরপর দিন মিলিয়ে গেল মাসে, মাস মিলিয়ে গেল বছর ঘুরে আসার অপেক্ষায়। এর ভেতরেই শ্রেষ্ঠার বিয়ে হয়ে গেল। হৈচৈ, হাসি, খুনসুটি আর আনন্দে কেটেছে সে ক’টাদিন। বিয়ের ধুমধাম উপলক্ষ্যে সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি ঘুরে এলো। এইসবের ভেতরেই ছোট্ট ছোট্ট প্রাণগুলোও বড় হয়ে উঠছে। রায়ান আর আরিহাদ; ওদের এক একটা অঙ্গভঙ্গিতে বাড়ির সবার চোখ জুড়িয়ে যায়। এখন তো রায়ানের দাঁত উঠছে… ছোট্ট দাঁত দিয়ে মুখে হাত দিলে দুষ্টামি করে কামড়ে দেয়। বড়রা কাজকর্ম ভুলে ওদের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। ওদের দেখে নাবিলার মনে আবারও সেই পুরোনো ইচ্ছে উঁকি দেয়, নিজেদেরও যদি একটা ছোট্ট প্রাণ থাকত!
তবে কয়েকদিন ধরেই নাবিলার শরীরে কিছু পরিবর্তন হচ্ছিল। কখনও অকারণে ক্লান্তি এসে যেত। প্রথমে পাত্তা দেয়নি, ভেবেছিল হয়তো ক্লান্তির জন্যই হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ একটা সন্দেহ হলো তারপর সেটা জোরালো হচ্ছিল। অবশেষে টেস্ট করাল।
.
.
.
চলবে….
#প্রিয়াঙ্গন❤️ [পর্ব-৪৪]
~আফিয়া আফরিন
ঘরে একা বসে পরীক্ষা করতে গিয়ে বুকের ভেতরটা কেমন ধকধক করছিল। ফলাফলের অপেক্ষায় চোখ স্থির হয়ে গেল টেস্ট স্ট্রিপে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর স্পষ্ট হলো, শুধু একটি দাগ। রিপোর্ট নেগেটিভ।
নাবিলা কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে রইল। তারপর আস্তে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে আশা জেগেছিল, এবার হয়তো… কিন্তু হলো না। চোখে একচিলতে আর্দ্রতা এসে পড়ল। তবুও জোর করে হাসার চেষ্টা করল। নিজেকে বোঝাল, “রিল্যাক্স, হয়তো সময় এখনও আসেনি।” কাউকে জানতে দিবে না তাই কিটটা ডাস্টবিনে ফেলে দিল। সামিরকেও জানাবে না। যদি সামির হালকাভাবে নেয়? যদি ভাবে ও অকারণে উত্তেজিত হচ্ছে? নাবিলা সব ভুলে নিজের সাধারণ জীবনে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করল এবং তাতে সক্ষম হলো।
বিকেলের দিকে অন্বেষা আরিহানকে কোলে নিয়ে ঘুরতে এলো। মা হওয়ার পর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে, তাই আগের মতো ঝটপট ফুসরত পাওয়া যায় না। নাবিলা বাবুকে কোলে নিয়ে হাসিমুখে বলল,
— “এহে, এটা কে এসেছে আমাদের বাড়িতে?”
— “ওকে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। আমি একটু শাহিদের সাথে বের হব।”
— “আচ্ছা, যাও।” নাবিলা উত্তর দিল, হাসি চাপতে পারল না। অন্বেষা আরও কিছুক্ষণ বসে ওদের খোঁজখবর নিল। বেরিয়ে যাওয়ার আগে ফিসফিস করে বলল,
— “এই তোমরা এখনও বাচ্চা নিচ্ছো না কেন?”
নাবিলা খানিকটা বিরক্ত হয়ে জবাব দিল,
— “তোমার ভাইয়ের অদ্ভুত যুক্তি; আগে পড়াশোনা শেষ করব, তারপর।”
— “গ্রাজুয়েশন তো শেষ, যদিও আর এক বছর আছে। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?”
— “বুঝি না কিছু…”
— “মন খারাপ করো না।” অন্বেষা বলল।
হালকা গলায় নাবিলা বলল,
— “উঁহু। আর একটা বছরই তো, আমি না হয় অপেক্ষাই করি।” অন্বেষা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল।
সন্ধ্যার পর সামির ফিরল। দরজায় ঢুকতেই আরিহানকে নাবিলার কোলে দেখে নিজে কোলে তুলে নিল। কোলে নিয়েই নানাভাবে দুষ্টুমি শুরু করল। গালে নাক ঘষল।। দুই হাত উঁচু করে উড়ন্ত বিমানের মতো উড়িয়ে দিল। আরিহান খিলখিল করে হেসে উঠল, মুখের মধ্যে ছোট্ট দাঁতগুলো চিকচিক করছে। সামির ইচ্ছে করেই আঙুলটা সামনে ধরতেই আরিহান তা শক্ত করে কামড় দিল। সামির মুখ বিকৃত করে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
— “কামড়াবে নাকি মামাকে?”
ও কি বুঝল কে জানে? মুখের মধ্যে দুহাত পুড়ে হাসতে শুরু করল। সামির নাবিলার কাছে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে এক হাত রেখে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। নাবিলা সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। সামির এমনভাবে চেপে ধরল যে সরে যেতে পারল না।
— “এমন করছ কেনো?”
— “আমাকে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে হবে না।”
— “করছি না তো। আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি।”
— “তোমার বউ কে? ছাড়ো আমাকে।” নাবিলার কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান।
— “হুম, আমার বউ তো তুমি। তবে ছাড়ব কেনো?”
সামির আরও শক্ত করে চেপে ধরল। নাবিলা সামিরের চোখে তাকিয়ে রেগে গেলেও মনটা গোলমাল করছিল। সামির তৎক্ষণাৎ কাঁধে চুমু দিয়ে বলল,
— “আমি তোমার পিছু কখনোই ছাড়ছি না।”
তারপর নাবিলাকে পেছন থেকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরল। নাবিলার বিস্মিত চোখের মধ্যে সামিরের চোখে মিশে থাকা মায়া ধরা পড়ল। সামির ওকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে চুমু খেল, গাল ঘষল, মৃদু হাসল। নাবিলা অবাক হয়ে বলল,
— “তোমার কোলে একজন আছে। খেয়াল করেছ?”
— “তাতে কি? দেখুক না। তুমি আরেকটু কাছে আসো।”
নাবিলা লাজুকভাবে মাথা নেড়ে বলল,
— “উঁহু।”
— “আসলে কি হয়? তোমাকেও কোলে নিই, আসো।”
নাবিলা সামিরের বুকে হেলান দিয়ে দাঁড়াল,
— “না, যখন একা থাকব তখন।”
— “আচ্ছা।”
ঠিক তখনই অন্বেষা এসে দরজায় দাঁড়াল। ওদের জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পেছন ফিরে বলল,
— “ইশশ দরজা জানালা খুলে তোরা কি করছিস?”
সামির ঘুরে তাকাল। ভুরু কুঁচকে বলল,
— “তোর ছেলেকে রোমান্টিসিজম শিখাচ্ছি। তুই শিখবি?”
অন্বেষা হাত নাড়তে নাড়তে ভেতরে এসে হেসে ফেলল,
— “ওমা! আমার ছেলে তোর থেকে শিখবে কেন? তার আগে তুই নিজে শিখিস।”
সামির কলার নাচিয়ে বলল,
— “আমি যথেষ্ট জানি। বেশি শিখতে গেলে সমস্যা।”
— “ছিঃ, কী খারাপ। আমার ছেলেটাকে দিয়ে দে ভাই। তোর সাথে থাকলে নির্ঘাত খারাপ হয়ে যাবে।”
— “আসলে আমার মর্ম তোরা বুঝিস না, এটা হচ্ছে সমস্যা।”
অন্বেষা মুখ ভেংচে আরিহানকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াল। কিন্তু সে কিছুতেই মামার কোল ছাড়বে না। ছোট্ট হাত দিয়ে সামিরের শার্ট টেনে ধরল। সামির আর নাবিলা দুজনেই হেসে ফেলল। সত্যি সত্যি মামার বাতাস লেগেছে, আর ছাড়তেই চাচ্ছে না। উল্টো চোখ মটমট করে বোঝাতে চাইছে, “না আমি এখানেই ভালো আছি। মামাকে ছাড়ব না।” অন্বেষা সামিরের পিঠে দুরুম করে একটা কিল বসিয়ে দিল। মুখ গম্ভীর করে বলল,
— “আমার ছেলে ফেরত দে।”
— “নে।”
অন্বেষা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
— “আমার কাছে আসছে না তো। কী যাদু করলি এইটুকু সময়ের মধ্যে? তোর মত বদমাইশ হচ্ছে।”
সামির তৎক্ষণাৎ গম্ভীর ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
— “এখনও পুরোপুরি হয়নি। আরেকটু বড় হোক, বদমাইশগিরি কাকে বলে ও কত প্রকার; এ টু জেড সব আমি নিজ দায়িত্বে শিখিয়ে দিব।”
অন্বেষা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল,
— “তুই আর ওর ধারেকাছে আসবি না।”
সামির হো হো করে হেসে আরিহানের ছোট্ট আঙুলগুলো নিজের আঙুলে আটকে বলল,
— “আমার আসতে হবে না। ভাগ্নে নিজেই সুরসুর করে আমার কাছে চলে আসবে। তখন দেখব, এই ঘসেটি বেগম কীভাবে আটকায়।”
অন্বেষা নাবিলার দিকে তাকাল, আত্মপক্ষ সমর্থনের আশায়। কিন্তু নাবিলা শুধু খিলখিলিয়ে হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতে বলল,
— “তোমরা ভাই-বোন কী যুদ্ধ শুরু করলা? মানুষ যুদ্ধের জন্য ঢাল-তলোয়ার ব্যবহার করে, আর তোমরা আরিহানকে? হাহাহা!”
অন্বেষা রাগে গজগজ করে বলল,
— “এক কাজ কর তোরা। আমার ছেলেকে একেবারেই রেখে দে। তোদের মেয়ে হলে, ওকে জামাই বানাস।”
সামিরের বোধহয় এই প্রস্তাব পছন্দ হলো। তৎক্ষণাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
— “আরে বাহ্! তুই তো আগেই ছেলের বউ ঠিক করে ফেললি। দারুণ, আমার ভাগ্নে হবে আমারই মেয়ে জামাই।”
— “ব্যস, এটাই বাকি ছিল। আগে শুনেছি, মামা-ভাগ্নে যেখানে আপদ-বিপদ সেখানে। এখন শুনব, শশুর-জামাই যেখানে আপদ-বিপদ সেখানে। তোমরা পারোও বটে।” কপাল চাপড়ে বলল নাবিলা। তবে ওর কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠল, এমনকি আরিহানও। ও আবারও ছোট্ট হাত দিয়ে মামার শার্ট টেনে ধরল, গালে খামচে দিল। সামির বলল,
— “উমমম, শ্বশুরের সাথে এখনি এত বেয়াদবি করতে হয় না বাবা। বড়ো হলে কিন্তু মেয়ে দিব না। আর আমার মেয়ে ছাড়া কিন্তু তোমার গতিও নাই। বুঝেছ? এখন থেকেই মামা-মামিকে সামলে চলো।”
— “পাগল কোথাকার!” অন্বেষা বলল।
— “আপনিও আমাকে একটু সম্মান দেওয়ার চেষ্টা কইরেন বেয়াইন। নইলে আপনার ছেলেকে আমি মেয়ে জামাই করব না।”
— “তোর মত অভদ্রটাকে আমি বেয়াই করবও না; তবে তোর মেয়েকে ছেলের বউ করার চান্স এইট্টি পার্সেন্ট।”
সামির আর কিছু বলল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্বেষাকে এগিয়ে দিল। কী আশ্চর্য! তার মেয়ে এখনও দুনিয়ার মুখ দেখল না, আর এরা মেয়েকে ভাগাভাগি শুরু করে দিয়েছে? নাহ, এ কিছুতেই হতে পারে না। পৃথিবীতে না আসা মেয়ের জন্যই তো কষ্ট হচ্ছে, মেয়ে এলে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে হলে তো কলিজা ছিন্নিবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সামির মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিল, তার মেয়ে হলে কোনোদিন বিয়েই দিবে না। নিজের আদরের মেয়েকে কিছুতেই কোনো ঘসেটি বেগমের ছেলের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।
.
মাস তিনেক পর নাবিলা মাস্টার্সে ভর্তি হলো। পড়াশোনার ব্যস্ততা আবার নতুনভাবে শুরু হয়েছে। সামির এসব ব্যপারে প্রচন্ড সিরিয়াস। নিয়ম করে পড়াশোনা করতে হয়, ক্লাসে যেতে হয়; এই বয়সে এসে হম্বিতম্বি আর নাবিলার ভালো লাগে না। তারচেয়ে সারাদিন ঘরের মধ্যে পটের বিবি সেজে বসে থাকা আরামের।
আজ সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। মামণি বাসায় নেই, কয়েকদিনের জন্য ছোটবোনের বাসায় বেড়াতে গেছে। সামিরও বাসায় নেই, আলস্য সময় কাটছে। বৃষ্টির প্রকোপ বিকালের দিকে কমে গেল। সেই সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল মামার নাম। নাবিলা রিসিভ করতেই মামার পরিচিত কণ্ঠ শোনা গেল,
— “শোন নাবিলা, একটা খুশির খবর আছে।”
নাবিলা একটু আগ্রহভরে বলল,
— “কি খবর মামা?”
— “আহিরের বিয়ের দিন-তারিখ হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে গেছে। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে।”
আনন্দে নাবিলার চোখ চকচক করে উঠল,
— “আহিরের বিয়ে! ইশশশ, দারুণ খবর মামা। মেয়েটা কে? আহিরের পছন্দ নাকি তোমাদের পছন্দ?”
মামা হেসে বললেন,
— “সব জানতে হলে দ্রুত জামাইকে নিয়ে চলে আয়। ফোনে এত কথা হয় নাকি? সব অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তো তোদেরই নিতে হবে। চলে আয়, মা।”
নাবিলা মামার সাথে কথা বলা শেষ করে সামিরকে ফোন দিয়ে বলল। সামিরও কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে নাবিলাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
বর্ষার দিনে আকাশ ধূসর মেঘে ঢাকা। টুকটুক বৃষ্টির ছোঁয়া পথজুড়ে ছড়িয়ে আছে। নাবিলা জানালা দিয়ে ছিটে আসা ঝিরঝির বৃষ্টিতে হাত ভেজাচ্ছে। রাস্তার ধারে কাশফুলে ভেজা জমিন, দূরে হালকা কুয়াশার লেপা, বাতাসে মাটির ঘ্রাণ, গাছের পাতা থেকে ঝরে পড়া জল কণার শব্দ, সবমিলিয়ে একটা শান্তির আবেশ।
ওখানে পৌঁছাতেই মামা-মামি এগিয়ে এসে মেয়ে আর জামাইকে বরণ করে নিল। এখন তারাই এই বাড়ির মুরুব্বি। নানু গত হয়েছেন গতবছর। তার শূণ্যতা থাকলেও পরিপূর্ণতাও কিছু কম ছিল না বাড়ি জুড়ে।
আহির ছুটে এসে সামিরকে জড়িয়ে ধরল। সামিরের সাথে সম্পর্ক ওর প্রথম থেকেই ভাইয়ের মত। হঠাৎ উড়ে আসা সম্পর্কটা কী সুন্দর করে জুড়ে বসেছে। ও মোহমায়া দৃষ্টিতে নাবিলা আর সামিরের দিকে তাকাল। সেই নাবিলা; যে সামিরকে বিয়ে করব না, করব না বলে পালাতে গিয়ে জানালার পাইপ বেয়ে নামার সময় হাত কেটে ফেলেছিল, আজ সেই নাবিলা সামিরের এক হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আর সেই সামির; যার কাছে বিয়েটাই অসম্ভব ছিল। যাকে বিয়ে করবে না, তাকে নিয়ে পালাতে গিয়ে কেস খেল। অথচ আজ ওই মেয়েটাকে নিয়ে তার চাহনি শান্ত ও নিশ্চিন্ত। ওদের মধ্যে অদ্ভুত সাদৃশ্য, একরকম জোড়া বেঁধে যাওয়া হাসি… বিশেষ করে নাবিলার হাসিটা সামিরের সঙ্গে মিলেমিশে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে, চোখে-মুখে অনন্য উচ্ছ্বাস। আহিরের ভীষণ ভালো লাগল। অবাক হয়ে ভাবল, তার এত আনন্দ কীভাবে আসল? দুজনের স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত খুশির মুহূর্তে নিজেকেই হারিয়ে ফেলল। আসলে এটাই তো জীবনের সত্যিকারের আনন্দ, খুঁজে পাওয়া সেই মুহূর্ত, যেখানে সবকিছু ঠিকঠাক এবং সবকিছু সুন্দর!
কিশোরগঞ্জের পরিবেশ সামিরের আগেও পছন্দ ছিল না, এবং এখনও পছন্দ হয়নি। আগে কারণ ছিল নাবিলা; আজও মূল কারণ সেই নাবিলা। প্রথম পাড়া-প্রতিবেশীর মুখে ফালতু কথাবার্তা শুনেছিল, নাবিলা একরাত বাড়ির বাইরে ছিল তাই ওর আর বিয়ে হবে না… ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই স্মৃতিই এখনো সামিরের মনে জীবন্ত। তখন রাগ অনুভব করলেও পরে সেসব কথার জন্য কৃতজ্ঞ হয়েছিল, কারণ ঠিক ওইসব কথার প্রভাবেই সে নাবিলাকে বিয়ে করেছিল, আর পরিপূর্ণভাবে পেয়েছিল। কিন্তু আজও চারপাশে বাজে মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে একটা কথা সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগছে, “এত বছর বিয়ে হয়েছে, অথচ এখনও বাচ্চা হয় নাই?” যেন মানুষের বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, বছর বছর বাচ্চা জন্ম দেওয়া। সমাজের চোখে বোধহয় সেটাই জীবনের একমাত্র সফলতা, আর অন্য সমস্ত অর্জন, সুখ-সুখের মুহূর্ত তুচ্ছ।
সামির কখনোই এসব বাজে মন্তব্য সহ্য করতে পারে না। আজও করবে না। নাবিলা তার অর্ধাঙ্গিনী, নিজের সত্তার অংশ। ওকে কিছু বলা মানে সরাসরি তা সামিরের উপর বর্তায়। আর কেউ নিজেকে কীভাবে যেচে অপমান হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে? সামিরের কাছে নাবিলার মানমর্যাদা সর্বদা অখণ্ড, অপ্রতিহত; কেউ তাতে সামান্য আঁচড়ও লাগাতে পারবে না। ওরা যখন কথোপকথনে ব্যস্ত ছিল, তখন সামির মাঝখান বাঁধ সাধল। তার কণ্ঠের স্বর ধীর, কিন্তু এক নিঃশ্বাসে বের হল কয়েকটি তীক্ষ্ণ বাক্য,
— “আপনাদের একটা কথা ভুল। আমাদের বাচ্চা হয়নি, না। আমরা নিইনি। এখন কেন নিইনি, তার কৈফিয়ত কাউকে দিতে আমরা বাধ্য নই। আরেকটু স্পষ্ট করে বলি, আমাদের জীবন আমাদের। আমরা যেটা চাইছি, যেটা ঠিক মনে করছি সেটার হিসাব দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে অযথা জগাখিচুড়ী বানানোর কোনো অধিকার আপনাদের নেই। একটা সন্তান জীবনের সবকিছু না। তবুও, স্বামী-স্ত্রীর জীবনের পরিপূর্ণতা দানকারী বলা হয় একজন সন্তানকে। আল্লাহ যখন চাইবেন, তখনই হবে। আপনাদের কথামত না। ধন্যবাদ।”
সামির নাবিলাকে নিয়ে ওই জায়গা থেকে চলে এলো। প্রতিবেশীদের মধ্যে জামাইকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলো। “এমনে কথাবার্তা কয় ক্যান? বড় মাইনষেরে সম্মান দিতে পারে না, কী জামানা আইলো। ক্যামনে তর্ক কইরা গেল, ছিঃ ছিঃ।”
নাবিলা ঘরে এসে সামিরকে বলল,
— “তুমি রাগ করো না। মানুষের কথায় এত কান দিও না। আমি কখনো কিছু বলেছি বলো? একবার শুধু বলেছিলাম। তুমি বলেছিলে, আমার পড়াশোনা শেষ হোক। তারপর আর এই কথা তুলেছি বলো? কেনো রাগ করছো? আমার উপর রাগ করেছ? অ্যাই!”
সামির নাবিলার দিকে চোখ রেখে বলল,
— “তুমি ওদের কিছু বলো না কেন?”
— “আমি কি তোমার মত ঝগড়া করতে পারি?”
— “আমি ঝগড়া করি?”
নাবিলা হেসে বলল,
— “না না, তুমি তো আমার সোনা বন্ধু রসিয়া। তুমি কেন ঝগড়া করবে? রাগ করে না জান। আসো, আদর করে দিই।” বলেই নাবিলা সামিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
.
আহিরের বিয়েটা ঘটা করে সম্পন্ন হলো। বাড়িতে চরম উৎসবের আমেজ। রিধিমা, আহিরের বউ; একেবারে মিষ্টি প্রকৃতির একটা মেয়ে। মুখখানা ফর্সা, হাসিটা সরল, প্রাণবন্ত। কথা বলার ভঙ্গিও ভীষণ আন্তরিক। একটুখানি সময়ের মধ্যে বাড়ির সকলের সাথে কী সুন্দর করে মিশে গেল। সবার মুখেই নতুন বউয়ের প্রশংসা।
রিধিমাকে বাসরঘরে পোঁছে দিয়ে সবাইকে বিদায় দিয়ে নাবিলা আর শ্রেষ্ঠা কিছুক্ষণ রয়ে গেল। হাসি-ঠাট্টা করছিল। নাবিলা হেসে রিধিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “আমরা আসি। তাহলে এইবার তুমি আসন্ন মুহূর্তেল জন্য প্রস্তুত হও।” বলেই মুখ টিপে হাসল।
শ্রেষ্ঠাও ঠাট্টা করে বলল,
— “এমনে বলো না আপু। আমাদের নতুন ভাবি তো ভয় পাবে।”
ওদের অবাক করে দিয়ে রিধিমা ঘোমটার আড়াল থেকে বলে উঠল,
— “আপনাদের ভাইকে আগে পাঠান, তারপর সকালে উঠে বলব কে কাকে ভয় পেল।”
ওরা দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। আহিরের কপালে ওর বিপরীত একজন পড়েছে। বেশ হয়েছে!
আহির ঘরে ঢুকতেই রিধিমা সরাসরি চট করে জিজ্ঞেস করল,
— “আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিল?”
আহির একমুহূর্ত থতমত খেয়ে দাঁড়াল। নতুন বউ এত নির্ভয়ভাবে এমন প্রশ্ন করছে, ভাবতে পারছিল না।
— “না…”
— “কাউকে ভালোবেসেছেন? মানে, আপনি ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে যাওয়া মাল না তো?”
আহির হতভম্ব! মেয়ে এমন শব্দ ব্যবহার করবে, ভাবতেই পারিনি। সে হা করে তাকিয়ে রইল। রিধিমা আবার হেসে জিজ্ঞেস করল,
— “হা করে আছেন কেনো? বলুন, বলুন। সত্যি বলবেন।”
আহির মৃদু কণ্ঠে বলল,
— “ইয়ে মানে… আমি আসলে একজনকে ভালোবাসতাম, অনেক আগে।”
রিধিমা একধাপ এগিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “তারপর? ভালোবাসার পর কী হলো? সম্পর্ক নষ্ট হলো কীভাবে? আপনি তো মানুষ সুবিধার না।”
আহির রীতিমত মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছে। সেটা প্রকাশ না করে বলল,
— “কিছুনা আর। কখনো বলি নাই। খুব কাছের ছিল। ভালোবাসার কথা বললে সেই সম্পর্ক যদি নষ্ট হয়ে যায়, এই ভয়ে। এখন ওর বিয়ে হয়ে গেছে। ও ভালো আছে। ওকে ভালো থাকতে দেখে আমারও ভালো লাগছে।”
— “এখনও ভালোবাসেন নাকি?”
— “আরেকজনের বউকে আমি কেনো ভালোবাসব? আশ্চর্য।”
রিধিমা দুষ্টু হেসে বলল,
— “নিজের বউকে ভালোবাসেন?”
আহির আবারও থতমত খেল। কোনোমতে বলল,
— “আমি একটু চেঞ্জ করে আসছি।”
সে চলে গেলে রিধিমা হো হো করে হেসে উঠল। প্রথম দিনেই অনুভব করেছিল, আহিরকে ওর মারাত্মক ভালো লেগেছে। এখন তো শুধু সে জীবনসঙ্গী নয়, বরং এমন একজন যাকে সারাজীবন ভালোবাসে আগলে রাখতে হবে। রিধিমার মন আনন্দে ভরে উঠল। মনে হলো, এই ছেলেটা জীবনকে পূর্ণ করে দেবে।
ঘরের মধ্য ল্যাম্পের আলো মৃদু ছড়িয়ে পড়ছে। জানালার কাঁচে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে, বাতাসের হাওয়ায় মৃদু শব্দ তৈরি করছে। বৃষ্টির ছন্দ ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রেমময় আবহ তৈরি করছে। নাবিলা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলের ফুলগুলো খুলছিল। সামির চুপচাপ পেছন থেকে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। আহির-রিধিমার বাসরের রেশ তার মধ্যেও লেগেছে।
শাড়ির উন্মুক্ত অংশে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে নাবিলা কেঁপে উঠল। সামির ধীরে নাবিলার কাঁধে মুখ ঘষল। গরম শ্বাস নাবিলার ঘাড়ে লাগতেই ফিসফিস করে বলল,
— “কী করছো?”
— “তোমাকে কাছে পেতে চাচ্ছি।”
— “বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, দেখছ?”
সামির চুপচাপ তাকিয়ে থাকল, একমুহূর্ত নীরবতা। তারপর মৃদু হেসে বলল,
— “হুম। চলো, ভিজি।”
নাবিলা অবাক হয়ে তাকাল,
— “সত্যি যাবে?”
সামির নাবিলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,
— “কোথাও যাব না। শুধু প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজব।”
— “এত প্রেম ভালো না, সাহেব।”
— “তুমি সামলাতে পারবে কী না বলো, ভালো-মন্দ আমি দেখে নিব।”
নাবিলা জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। সামিরও এলো। এই বাড়িতে, এই ঘরে ওদের অনেক পুরনো স্মৃতি রয়েছে। সেসব মনে পড়তেই সামির হেসে বলল,
— “আমাদের বাসররাতের দিন তুমি কি করেছিলে মনে আছে?”
নাবিলা তৎক্ষণাৎ সামিরের মুখে হাত চেপে বলল,
— “সব মনে আছে কিন্তু দোহাই লাগে, এসব বলে আর লজ্জা দিওনা।”
— “চলো তবে আজকে আমরাও বাসর সেরে ফেলি।”
— “আজকে কি তোমার বিয়ে ছিল যে বাসর সারবে? হুঁশ কই থাকে?”
— “আমার সব তো আপনি ছিনিয়ে নিয়েছেন ম্যাডাম।” এই বলেই সামির নাবিলাকে কোলে তুলে নিল।
ঘরের মৃদু আলো ওদের ছায়াকে মিলিয়ে দিয়েছে, আর বৃষ্টির ছন্দ ওদের হৃদয়ে মিলিত হয়ে প্রেমময় পৃথিবী তৈরি করেছে। এই রাতটা কখনো শেষ হবে না, বর্ষার ছন্দ আর ওদের নিঃশ্বাস এক হয়ে, মুহূর্তগুলোকে চিরস্থায়ী করে দিচ্ছে। ওরা একে অপরের চোখে হারিয়ে গেছে, আর একমুহূর্তও একে অপরের স্পর্শবিহীন নেই।
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]