প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-০৫

0
205

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

গভীর রাত। বাইরে এখনো মৃদু হাওয়া বইছে। শীতল পরিবেশ। অরিন জানালার পাশ ঘেঁষে বসে আছে। মনটা তার বিষন্ন। মাসের শুরুর দিকে হাতে টাকা নেই তেমন। কাল বাজার ও করতে হবে। এখনো বেতন হাতে পায়নি। হঠাৎ পাশে থাকা মুঠোফোনটি শব্দ করে বেজে উঠলো। এই গভীর রাতে কে ফোন করলো বুঝে উঠলো না সে। অরিন অন্ধকারে হাতড়ে ফোনটা নিজের কাছে আনলো। অচেনা নাম্বার দেখে ধরবে কি ধূরবে না এ নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। অরিনের ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে গেলো। অরিন ফোনটা রাখতে নিবে আবারও বেজে উঠলো সেই সময়ে।

এবার অরিন রিসিভ করলো কলটা কারণ যদি কোনো জরুরি প্রয়োজন হয় এই ভেবে। রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে “হ্যালো” বললেও অপাশ থেকে সারা শব্দ আসলো না। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনলো সে। অরিন বুঝলো কে কল করেছে। বেশ কিছুক্ষণ দু’জন চুপ থাকলো। অরিন ফোন কান থেকে নামাতেই অপর পাশ থেকে পুরুষালি গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসলো। অরিন ফোনটা আবারও কানে ধরলো। না চেনার ভান করে বলে উঠলো,,

“কে!”

ধূসর নিঃশব্দে হাসলো। সে জানে নিবেদিতা বুঝতে পেরেছে এটা সে। তবুও না চেনার ভান করছে। ধূসর হাসি চেপে রেখে বলল,,
“আমি ধূসর আহসান বলছি”

অরিন মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,,“এতো রাতে একটা মেয়ে মানুষকে কেনো কল করেছেন?”

“আমি কোনো বাইরের মেয়েকে কল করেনি। আমি যাকে কলটা করেছি, সেই মানুষটা পুরোটাই আমার।”

অরিন থতমত খেলো। এমন উত্তর সে আশা করেনি। স্তম্ভিত হয়ে বলল,,,“কি বললেন আপনি?”

“যা শুনেছো তাই বলেছি”

ধূসর কথাটি বলেই কলটা কেটে দেয়। অরিন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইলো। ধূসরের কান্ড কারখানা তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কোথা থেকে নাম্বার পেলো এটা মাথায় আসলেও সে খুব একটা মাথা ঘামালো না এতে। কারণ ধূসরের পক্ষে এটা কোনো ব্যাপারই না। এখন ধূসরের কথা মস্তিষ্কে নিলেই বের হতে পারবে না তা থেকে। আপাতত ঘুমের প্রয়োজন তার। তাই বাকি সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলো সে।

মধ্যরাত এখন। ধূসর হাসছে ছাদে বসে। এই গভীর রাতে সে ছাদের রেলিং এর উপর বসে আছে। নিবেদিতাকে জ্বালিয়ে তার বেশ মজা লাগে। তার যে কত খানি কষ্ট করতে হয়েছে নিবেদিতার নাম্বার জোগাড় করতে তা শুধু সেই জানে। তাইবাকে অনেক বার বলার পরে দিয়েছিলো নাম্বারটা। ধূসর রেলিং এর উপর থেকে নেমে ছাদের দোলনায় এসে বসলো। ঘনকালো আকাশের পানে তাকিয়ে বলল,,,

“এমন একটা মধ্যরাত আমি আবার চাই। তবে এখন সে নেই সেই সময়টাতে আমি তাকে চাই। তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বছরের পর বছর পার করতে চাই”

ধূসর কিছুক্ষণ বসে থেকে নিচে নামার জন্য পা বাড়ালো। রাত অনেক হয়েছে এখন আর ছাদে থাকা উচিত নয়। তাই নেমে পরলো ছাদ থেকে। ছাদ থেকে নামার সময় রাফার রুমটা সামনে পরে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কারো ফিসফিসে কথা বলার আওয়াজ পায় ধূসর। পা থেমে যায় তার। বিষয়টা একটু আজব লাগে তার কাছে। আর রাফাই বা এতো রাতে কার সাথে কথা বলবে এটা ভেবে পেলো না। তবুও আজ নক না করেই রুমে প্রবেশ করলো সে।

রাফা ধূসরকে দেখে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরলো। হাতে থাকা ফোনটা এতোক্ষণে বিছানায় পরে গিয়েছে। রাফার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। ভাই যদি একবার জানতে পারে সে প্রেম করছে মেরে ফেলবে হয়তো তাকে। এমনিতে যা পরিমান রাগ নিয়ে ঘোরে। রাফা আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,

“ভভভভভাই তুমি?”

ধূসর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,,
“কার সাথে কথা বলছিলি?”

রাফা জোরপূর্বক হেসে বলে,,“কারো সাথে না ভাইয়া। আমি তো ফোনে ভিডিও দেখছিলাম”

ধূসর রুমে থাকা সোফায় বসে পরে। এরপর শান্ত দৃষ্টিতে রাফার দিকে তাকিয়ে বলে,,“তুই জানিস রাফা আমি মিথ্যা পছন্দ করি না। সত্য বল”

রাফার সাহস হলো না আর মিথ্যা বলার। সে নিজেকে প্রস্তুত করলো সত্যটা বলার জন্য। ফোনটা আগে হাতে নিয়ে দেখলো অপর পাশের পুরুষি এখনো কল কাটেনি। ওপাশ থেকে ভেসে আসছে অস্থির হওয়া কন্ঠস্বর। সে সাহস করে ফোনটা কানে নিয়ে বললো,,

“আমি পরে কল করবো”

সে ফোনটা রেখে ধূসরের সোজাসুজি বসে। এরপর ধীর কন্ঠে বলে উঠে,,
“ভাইয়া রাগ করো না। আমি সত্যি বলছি। ও মিহান। ভালোবাসি আমি ওকে। আর্মিতে ভালো পোস্টে চাকরি করছে। আমাদের সম্পর্ক ৪ বছরের। ছেলেটা আমায় সত্যি ভালোবাসে অনেক, তুমি মেনে নাও ভাইয়া”

ধূসর বোনের দিকে ভালো করে তাকালো। চোখে মুখে প্রিয় মানুষকে হারানোর আতঙ্ক। চোখ জোড়া ছলছল করছে। ধূসর উঠে দাঁড়ালো। ধূসরকে দেখে ভয়ে রাফাও দাঁড়িয়ে পরলো। ধূসর কথা না বলে রাফার কাছে এসে ওর মাথায় হাত রেখে হেসে বলল,,,

“আমি খোঁজ নিচ্ছি ছেলেটা কেমন। ভালো হলে অবশ্যই আমি তোকে তার হাতে তুলে দিবো। তুই চিন্তা করিস না। আমি জানি আমার বোন কখনো ভুল কাউকে বেছে নিবে না”

রাফা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধূসরের দিকে। ভাবেনি কখনো এতো সহজে তার রাগি ভাইয়া মেনে নিবে। তবুও শুকরিয়া মেনে নিয়েছে। সে অস্থির কন্ঠে বলল,,
“ভাইয়া তুমি?”

“হ্যাঁ আমি মেনে নিবো আগে ছেলের খোঁজ খবর নিয়ে নেই। আমি চাই তুই আর রাফা যাকে পছন্দ করিস তাকেই নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে যেনো পেয়ে যাস। আর আমি সর্বদা চেষ্টা করবো তোদের ভালো রাখার। তোরা যার সাথে সুখী আমি তাদের হাতেই তোদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো”

ধূসর রুম থেকে বের হওয়ার আগে ইশারায় বুঝিয়ে গেলো মিহানকে ফেন করে বলতে কিছু হয়নি। রাফা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছে। সে কখনো কল্পনাও করেনি তার ভাই এতো সহজে মেনে নিবে। ধূসর তাদের চাচাতো ভাই হলেও সে আর রাহিয়া ধূসরকে নিজের আপন ভাই হিসাবে দেখে। সম্মান করে।
ছোট বেলা থেকেই ছেলেদের কাছ থেকে দূরে রেখেছে তাদের তবুও কি করে যে প্রেমটা হয়ে গেলো তার। এতো সব চিন্তা না করে দরজা আটকে ফোন দিলো মিহানকে। বেচারা হয়তো এতোক্ষণে তার চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছে।

ধূসর নিজের রুমে এসে ধপাস করে শুয়ে পরে। তার ছোট্ট বোনটাও কত বড় হয়ে গিয়েছে। যদিও তারা খুব বেশি দিন এর ছোট না। তিন বছর চার মাস এর ছোট রাফা তার থেকে। বোন অনার্স পড়ছে এখন প্রেমিক থাকা স্বাভাবিক। আর ছেলেটার বলা কথাগুলো সে শুনেছে। মনে হলো ভালো। কাল খবর নিবে। ভালো হলে রাফাকে তুলে দিবে তার ভালোবাসার মানুষের হাতে।ধূসর নিবেদিতাকে মনে করে বিরবির করে বলল,,,

“চারপাশে পূর্নতার ছড়াছড়ি, তবে তুমি কেনো আমার হয়ে আমায় পূর্নতা দাও না নিবেদিতা। আর কত দিন অপেক্ষা করাবে আমায়। ভালোবাসা বড্ড যন্ত্রণা দায়ক”

দুপুর বারোটা। আজ রোদের তেজ বেশি। সূর্য মামা আজ মাথার উপরে উঠেছে। রাহিয়া কলেজ থেকে মাত্র বের হলো। আজ একটু অসুস্থ লাগছে। তাকে নিতে এখনো গাড়ি আসেনি। সে বেশ আনন্দিতই হলো এতে। গাড়িতে চড়তে চড়তে বিরক্ত সে। আজ না হয় কিছু দূর হেঁটেই যাবে। তারপর রিকশা নিয়ে বাড়িতে চলে যাবে। মনের সুখে হাঁটা ধরলো রাহিয়া। তবে কিছু একটা মনে পরতেই হাঁটা থামিয়ে দিলো। তার ক্রাশকে দেখবে ঠিক করলো। তার ক্রাশ আর কেউ না তারই বাসার শিক্ষক। এবার মাস্টার্সে পরছে।

দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ সুন্দর। সে তো প্রথম দিন দেখেই ক্রাশ খেয়েছে। আজ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে তার ক্রাশকে। এখন হয়তো ভার্সিটিতে আছে তার।কারণ কাল বলেছিলো আজ নাকি তার ভার্সিটিতে আসতে হবে কি কাজে। দ্রুত একটা রিকশা ঠিক করে তার ক্রাশের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ভার্সিটির সামনে এসে রিকশা থেকে নামলো। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে প্রিয় মানুষটিকে খুঁজতে লাগলো। কিছুদূর যেতেই কালো রঙা শার্ট গায়ে জড়ানো সুদর্শন পুরুষটিকে দেখতে পেলো সে।

কথা বলছে তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে। রাহিয়া একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে দেখছে পুরুষটিকে। পুরুষটির ফর্সা গালগুলো গরমে লালবর্ন ধারন করেছে। রাহিয়ার ইচ্ছে করলো খুব গিয়ে ওড়না দিয়ে মুখের ঘামটুকু মুছে দিতে। যদিও তা সম্ভব নয়। রাহিয়ার হঠাৎ একটা গান আসলো মাথায়,,

“তোকে একার দেখার লুকিয়ে কি মজা,
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না”

#চলবে~