প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-০৯

0
154

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯

একটি নব্য দিন। নব্য এক প্রভাত। অরিনের নতুন জীবনের সূচনা। আড়মোড়ে ভেঙে উঠে বসলো অরিন। আজ শনিবার। তাই কলেজে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। তবে আজ তিনটা টিউশনি সহ কোচিং-এ ক্লাস আছে। যদিও বিকালে বেশি তবে সকালে দুটো টিউশনি আছে। ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। নয়টা। বাজে। আজ একটু দেড়ি হয়ে গেলো উঠতে। হুট করে মস্তিষ্কে হানা দিলো গতরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি। তার জন্য করা পুরুষটির পাগলামি। হাতড়ে বালিশের নিচ থেকে মুঠোফোনটি বের করলো। মেসেজ অপশনে গিয়ে ধূসরের গত রাতে করা মেসেজটা বার কয়েক বিরবির করলো।

সে মৃদু হেসে উঠে গেলো। মায়ের রান্না কতদূর তা দেখতে। অরুনী শেখ তাকে কখনোই রান্না ঘরের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। যা করার সব হায়াত আর অরুনী শেখ মিলেই করেন। অরিন আলগোছে হাত খোঁপা করে ছুটে এলো রান্না ঘরে। অরুনী শেখ মেয়েকে দেখে বললেন,,,

“উঠেছিস মা! যা এখন মুখ ধুয়ে আয় তোর জন্য আজ খিচুড়ি রান্না করেছি। আবহাওয়া টা আজ খুব একটা ভালো না। তোর তো আবার বৃষ্টির সময় খিচুড়ি খেতে খুব ভালো লাগে। তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে এসে বসে পর”

অরিন বেসিন এর কাছে যেতে যেতে বলল,,
“আম্মা সব সময় তুমি রান্না বান্না করো, আমাকে তো একটু সাহায্য করতে দিতে পারো। হায়াত কোথায়?”

অরুনী শেখ খাবার বেড়ে টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন,,“তুই অনেক কষ্ট করিস আম্মা আমাদের জন্য, তোকে আবার রান্না ঘরে কিভাবে ঢুকতে দেই বল তো?”

অরিন কথা বাড়ালো না। কত বার কত কিছু বলেছে তবে তার আম্মার এক কথা তাদের জন্য সে এতো কষ্ট করছে সে আর হায়াত মিলে এতোটুকু কষ্ট কি করতে পারবে না। এরপর আর কি, অরিন এবারের মতো প্রতিবারই চুপ হয়ে যায়। হাত মুখ ধুয়ে এসে অরিন হায়াতের রুমে আসলো। মেয়েটা এখনো পড়ছে। অরিন ডেকে নিয়ে আসে খাবার খাওয়ার জন্য। হায়াতও ভালো মেয়ের মতো বোনের কথা শুনে খেতে চলে আসে। ততক্ষণে বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। তখন ঘড়িতে বাজে হয়তো সাড়ে নয়টার মতো।

হায়াত অরিন এবং অরুনী শেখ খাবার খাওয়া শেষ করলেন। অরিন ঠিক করলো দুবোন মিলে বৃষ্টিতে ভিজবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মাকে বলে দুই বোন চলে আসলো ছাদে। ঝুম বৃষ্টিতে মন খুলে ভিজলো দু’জন। অরিনের গতরাতের ঘটনা মনে পরছিলো। সে মৃদু হেসে স্মৃতি গুলো হৃদয়ে খুব যত্ন সহকারে রেখে দেয়। হায়াত বোনের সঙ্গে বেশ মজা করেই বৃষ্টিতে ভিজলো। টানা আধা ঘন্টা ভেজার পর দু’জন নেমে গেলো। তখন ও শহর তলিতে ঝুম বৃষ্টি! অরিন ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। মুঠো ফোনটি ততক্ষণে বাজতে শুরু করেছে। তোয়ালেটা জানালায় নেড়ে বিছানা থেকে মুঠোফোনটি তুলে নিলো। স্ক্রিনে রুষ্ট পুরুষ নামটা জ্বলজ্বল করছে। অরিন মুচকি হেসে রিসিভ করলো। অপাশ থেকে শোনা গেলো রুষ্ট পুরুষের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর।

“নিবেদিতা শুভ সকাল। কি করছো?”

অরিন মুগ্ধ হলো রুষ্ট পুরুষের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনে। সে মৃদু কন্ঠে বলল,,,“বৃষ্টিতে গোসল করলাম দু বোন মিলে এখন রুমে বসে আছি। আপনি এখনো উঠেননি?”

“উঠেছি তো! তবে ঘুম কাটেনি পুরোপুরি। এতো সকাল সকাল কেনো বৃষ্টিতে ভিজতে গেলে বলো তো। ঠান্ডা লেগে গেলে?”

অরিন হাসলো ধূসরের অস্থিরতা দেখে। সে নিঃশব্দে হাসতে হাসতে বলল,,
“ কিছু হবে না আমার। আপনি এক কাজ করুন উঠে খেয়ে নিন। আজকের আবহাওয়া টা সুন্দর। বারান্দা আছে না আপনার? খাওয়া শেষে ওখানে বসে এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখুন। দেখবেন হৃদয়টা শান্ত হবে, প্রকৃতির মাঝে হারাতে ইচ্ছে করবে!”

“আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি যা বলবেন। আমি উঠি এখন। আপনিও একটু বিশ্রাম নিন যান”

অরিন সম্মতি জানিয়ে কল কাটলো। অরিনের খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে তার এই সুখ কি বেশি দিন থাকবে! কে জানে। অরিনের ভয় হচ্ছে সুযোগ তো দিলো একবার নিজেকে, ধূসরকে, নিজের ভালোবাসাকে। আদেও এর শেষ কি হবে কে জানে। তবে আর যাই হোক না কেনো সে কখনো ধূসরকে ধোঁকা দিবে না। মৃত্যুর আগ অব্দি ধোঁকা সে দিবে না ধূসরকে। অরিন আনমনে বলে উঠলো,,

“আমার বিবর্ণ রঙহীন জীবনে রঙিন করার জন্য ধন্যবাদ রুষ্ট পুরুষ। আমার থাইকেন শেষ পর্যন্ত”

“আম্মু খাবার দাও তো”

ধূসর টেবিলে বসতে বসতে অনামিকা ইসলামকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল। ততক্ষণে ঘড়ির কাটায় দশটা পেরিয়েছে। অনামিকা ইসলাম এবং রাফা রাহিয়ার আম্মু দু’জন মিলে টিভি দেখছিলেন। বাড়িতে সবাই নয়টায় খেতে বসে। একমাত্র ধূসর ছাড়া। অনামিকা ইসলাম তড়িঘড়ি করে উঠে আসলেন। ছেলেকে নিজ হাতে বেড়ে দিলেন। ধূসর দুটো পরোটা খেয়ে উঠে যায়। ছেলেকে উপরে উঠতে দেখে বেশ বিষ্মিত হলো অনামিকা ইসলাম। কারণ এই ছেলে কখনোই এই সময়ে বাড়িতে থাকে না। খেয়েই বেরিয়ে পরে। আজ কি হলো বুঝলো না। তবে আবার কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে বলল,,,

“আম্মু এক কাপ চা দেও তো”

অনামিকা ইসলাম আজ চমকের পর চমক খাচ্ছেন। ছেলের এতো পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পেলেন না তিনি। ধূসর মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠে,
“কি হলো আম্মা দাও চা খাবো”

অনামিকা ইসলাম চমকে উঠলেন। দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেন। এরপর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“কিন্তু তুই তো চা খাস না, কফি দেই?”

“না আম্মা আজ চা খাবো। তুমি একটু চা বানিয়ে দাও কষ্ট করে”

অনামিকা ইসলাম কথা বাড়ালেন না। তিনি চা বানাতে চলে গেলেন। ধূসর চাচির পাশে বসে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করলো। অনামিকা ইসলাম চা বানিয়ে এনে দিতেই সে নিজের রুমে চলে আসলো। তার রুমটাতে সাদা রঙের জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো। আলমারি থেকে শুরু করে সব কিছুই সাদা। পর্দাগুলো ও সাদা রঙের। ধূসর থাই খুলে নিজের বিশাল বেলকনিটাতে গিয়ে বসলো। বাইরে তখন ঝড়ো হাওয়া ও বইছে। ঠান্ডা, শীতল পরিবেশ। ধূসর কিছুক্ষণ উপভোগ করলো পরিবেশটা। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ গুলো তার কাছে দারুন লাগছে। অশান্ত হৃদয়টা শান্ত হয়েছে।

ধূসর চা শেষ করে নিজের মুঠো ফোনটি নিয়ে আসে। নিবেদিতা নামক মেয়েটিকে আবারও কল করে। দু তিনবার বাজার পরপরই অপাশ থেকে কেউ রিসিভ করে কলটা।ধূসর শুনতে পায় প্রিয় নারীর মনোমুগ্ধকর কন্ঠস্বর। সে এই মিষ্টি কন্ঠস্বরের প্রেমে পরে। পরেছে, এবং পরতে চায় বরংবার। ধূসরকে উত্তর দিতে না দেখে অপর পাশ থেকে অরিন বলে,,

“রুষ্ট পুরুষ কোথায় হারালেন?”

ধূসরের হুশ ফিরলো। সে মিহি কন্ঠে বলল,,
“তুমি বলেছিলে চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতে আমি দেখেছি, আমার অশান্ত হৃদয় একটু শান্ত হয়েছে। তবে তুমি থাকলে আমার অশান্ত হৃদয় একেবারের জন্য শান্ত হয়ে যেতো”

ধূসর থেমে আবারও বলল,,“কবে পাবো তোমায় নিবেদিতা! দূরত্ব যে বড্ড পোড়ায় আমাকে।”

“অপেক্ষা সুন্দর রুষ্ট পুরুষ। আমাকে পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আপনায়। জানেনই তো আমার মা বোনের দায়িত্ব আমার কাঁধে”

ধূসর বুঝলো এখন এগুলো টানলে নিবেদিতার মন খারাপ হবে তাই কথা এড়িয়ে বলল,,
“জানো নিবেদিতা আজ হৃদয়টা বেশ শান্ত। বৃষ্টি আমার খুব একটা পছন্দ নয়। তবে আজ কেমন ভালো লাগছে! আচ্ছা প্রেমে পরলে কি এমন হয় বলো তো?”

অরিন শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে বলল,,“হতে পারে ধূসর সাহেব”

“তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, আমি আসি! একটু দেখে আসি তোমাকে। হৃদয় যে তুমি হীনা অশান্ত সমুদ্রের ন্যায়।”

“মোটেও না। এখন আপনি চাইলে একটু ভিজতে পারেন বৃষ্টিতে। ”

“উহু নাহ আমি এখন ভিজবো না”

“আচ্ছা ঠিক আছে ভিজতে হবে না। আপনি কি বই পড়তে পছন্দ করেন রুষ্ট পুরুষ?”

“নাহ কেনো তুমি ভালোবাসো?”

“হ্যাঁ খুব। সাদাত হোসাইন, হুমায়ূন আহমেদ আরো অনেক লেখকের বই পড়ি আমি। এখন খুব একটা পড়া হয় না। তবে সময় পেলেই রাত জেগে পড়া হয়।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার জন্য তোমার নিজের লাইব্রেরির ব্যবস্থা করে দেবো। তোমার বাসর রাতের উপহার হিসাবে লাইব্রেরি দেই নাকি!”

কথাটা বলেই ধূসর হাসতে লাগলো। অরিন বেচারি লজ্জায় পরে গেলো। এই লোকটা লজ্জায় ফেলেই ছাড়বে তাকে। ধূসর হাসি থামিয়ে বলল,,,

“দমকা হাওয়ার বৃষ্টিতে ভেজা এই কংক্রিটের শহর,
তুমি ও না হয় দমকা হাওয়ার বৃষ্টির মতো ভিজিয়ে
দিলে আমার এই উত্তপ্ত হৃদয়!”

#চলবে~