প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১০

0
183

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০

বৃষ্টি থেমেছে কিছুটা। এখন ঝুম বৃষ্টি না হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘড়িতে সময়ের কাটা ১১ টার ঘরে। অরিন ছাতা নিয়ে বের হলো টিউশনির উদ্দেশ্যে। বের হওয়ার আগে অবশ্য ধূসরকে ঘুমাতে বলে এসেছে। রুষ্ট পুরুষ সম্মতি তো জানিয়েছে তবে কি করে কে জানে! অরিন হেঁটে ছাত্রীদের বাড়িতে আসলো। খুব বেশি দূরে নয়। তাদের বাড়ি থেমে মাত্র দশ মিনিটের পথ। তাদের গলি থেকে দু তিন গলি সামনেই ছাত্রীদের বাড়িটা। অরিন তার ছাত্রী রাতকে পড়াচ্ছে। তখনই মুঠোফোনটিতে টুং করে আওয়াজ হলো। অরিন মেসেজ অপশনে যেতেই চোখে পড়লো রুষ্ট পুরুষের দেওয়া একখানা মেসেজ। যেখানে লেখা,

“নিবেদিতা ছাতা নিয়েছো তো? বৃষ্টিতে ভিজো না আর ঠান্ডা লেগে যাবে।”

অরিন ছোট করে একটা মেসেজ দিলো। এরপর ফোন সাইলেন্ট করে পড়ানোতে মনোযোগ দিলো। বাইরে তখন আবারও ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই অরিনের পড়ানো শেষ হয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো সে বৃষ্টি থামার। তবে বৃষ্টি থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। বাড়িতেও ফিরতে হবে। তাই অতশত না ভেবে ছাত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাড়ি থেকে ছাতা মাথায় বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো রিকশার খোঁজে। বেশ কিছুক্ষণ কাটলো তবে রিকশার দেখা মিললো না। অন্যদিকে সে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে হুট করে একটা রিকশা এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। ভেতর থেকে পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,,

“নিবেদিতা তাড়াতাড়ি উঠে আসো। বৃষ্টির তেজ বাড়ছে, সাথে দমকা হাওয়াও। দ্রুত আসো”

অরিন থমকালো, হতবাক হলো। রুষ্ট পুরুষ এসেই পরেছে। অরিন দ্রুত উঠে বসলো। ধূসর ভালো করে পর্দাটা টেনে দিলো। হুড তোলার কারণে দু’জনের বসতে কষ্ট হচ্ছে। ধূসর যথেষ্ট চেষ্টা করছে অরিনের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসতে তবে হয়ে উঠছে না। রিকশার ঝাঁকুনিতে দু’জনের কাঁধ একে অপরের সংস্পর্শে আসছে। অরিনের অস্বস্থি হচ্ছে। তবে এখন কিছু করার ও নেই। অরিন চাপা কন্ঠে বলল,,

“আপনি এই বৃষ্টির মধ্যে কেনো আসতে গেলেন বলুন তো! আপনাকে না ঘুমাতে বলেছিলাম। এতো পাগলামি কেউ করে? কেউ যদি শোনে এমপি মহোদয়ের ছেলে একজন সামান্য মেয়ের জন্য এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে রিকশা ঠিক করে চলে এসেছে তখন কি ভাববে বলুন তো?”

রুষ্ট পুরুষ রাগলো বোধহয়। গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“প্রথমত আমি পাগলামি করছি আমার প্রিয় নারীর জন্য। আর দ্বিতীয়ত তুমি আমার কাছে সামান্য কেউ নও। তুমি আমার রূপবতী, মায়াবতী, অপরূপা সব কিছু। আমার নিবেদিতা তুমি! আর কে কি ভাবলো তাতে এই ধূসর আহসানের অন্তত কিছু যায় আসে নাহ”

অরিন বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে দেখছে ধূসরকে। পুরুষ মানুষের ভালোবাসা আসলেই ভয়ংকর। যে নারী পায়। সে নারী নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবতী। সেও কি সৌভাগ্যবতী! সে কি পাবে তার রুষ্ট পুরুষকে। ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি ধূসর সাহেব?”

“আমরা এখন নদীর পাড়ে যাচ্ছি। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো। নৌকায় চড়বো। ভিজবে না আমার সাথে?”

ধূসরের সাদামাটা, নিঃসংকোচ আবদার। তবে নিবেদিতার এই স্বল্প আবদার টুকু পূরণ করতে হলেও তাকে হাজার বার ভাবতে হবে। যদি কেউ দেখে ফেলে, তখন! তখন কি হবে। অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
“যদি কেউ দেখে ফেলে তখন, তখন কি হবে ভাবতে পারছেন আপনি ধূসর সাহেব?”

ধূসর শব্দ করে হেসে ফেললো,,“তুমি এর জন্য ভয় পাচ্ছো নিবেদিতা? ভয় পেও না কিছু হবে না। আমি আছি তো। তুমি ভরসা করো তো আমায়?”

অরিন মাথা নাড়ালো। ধূসর মৃদু হাসলো। এলাকা থেকে বের হয়ে কিছুদূর আসতেই ধূসর হুড নামিয়ে দিলো। দু’জন মিনিট দু’য়েকের মাঝে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। ধূসর এবার বেশ দূরত্ব বজায় রেখেছে। অরিন উপভোগ করছে প্রিয় পুরুষের সাথে রিকশা ভ্রমন। তাইবাকে এখনো কিছু জানানো হয়নি অরিন। আচ্ছা মেয়েটা শুনলে কেমন রিয়াক্ট করবে। সে নিজেও তো গতকাল রাতে কি থেকে কি করলো বুঝে উঠতে পারেনি। তবে রুষ্ট পুরুষের জন্য তার যে গাঢ় অনুভূতি আছে এটা মিথ্যা নয়। গন্তব্যে পৌঁছে রিকশা থেকে নামলো দু’জন।

পাশাপাশি হাঁটছে দু’জন। ধূসর নদীর কিনারায় অরিনকে দাঁড় করিয়ে নৌকা আছে নাকি খুঁজতে গেলো। অরিন আশেপাশে তাকিয়ে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো। কেউ নেই, একটা কাক পক্ষির ও দেখা মিলছে না। বৃষ্টি থামার নাম গন্ধ নেই। অরিন বুঝলো ধূসর কখনো এই সময়ে নৌকা পাবে না। নদীতে ঢেউও বেশ। আরও দমকা হাওয়া তো আছেই। কিছুক্ষণ বাদেই ফিরে আসলো ধূসর। অরিনকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল,,,

“পেলাম না কাউকে। আজ নয়তো নৌকায় চড়া হবে না। ঠিক আছে আজ না হয় না উঠি। তুমি তো আমারই থাকছো। অন্য একদিন না হয় দু’জন ঘুরে বেড়াবো”

“আচ্ছা ঠিক আছে পাগল প্রেমিক। আপনার কতগুলো নাম দিবো বলুন তো?”

ধূসর হাসতে হাসতে বলল,,“তোমার যা মন চায় তাই বলে ডাকো। আমার সমস্যা নেই। তোমার জন্য আমি পাগল প্রেমিক হতেও রাজি”

দু’জন নানারকম কথা বলে হাঁটা ধরলো। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এসেছে। ধূসর নিবেদিতার দিকে তাকালো। গায়ে থাকা নীলরঙা কামিজটা ভিজে লেপ্টে আছে। খারাপ দেখাচ্ছে না খুব একটা তবুও সে চায় না তার ব্যক্তিগত নারীকে অন্য পুরুষ দেখুক। সে টি শার্টের উপরে শার্ট পরে এসেছিলো। সেইটা খুলে অরিনের গায়ে জড়িয়ে দিলো। এমন ভাবে পরিয়ে দিলো যেনো অরিনের শরীরে স্পর্শ না লাগে। অরিন মৃদু হাসলো রুষ্ট প্রেমিকের কাজে। দু’জন বেশিক্ষণ আর ভিজলো না। ধূসর অরিনকে রিকশায় উঠিয়ে নিজে পেছন পেছন আরেকটা রিকশায় আসে। অরিনকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখার পর। ধূসর নিজেও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

উমেদ নিজের রুমের বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। মাথা ভর্তি কিশোরীর চিন্তা। সে এই বুড়ো বয়সে এক কিশোরীতে মজলো। এ কি জ্বালা। শেষে মেয়ে আর পেলো না। দশম শ্রেনীর বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরলো। আচ্ছা যদি এই কথা কেউ শুনে তাহলে কি ভাববে! নিশ্চয়ই তাকে পাগল ভাববে। আসলেই সে কি পাগল হয়েছে। শেষ মেষ কিশোরীকে মনে জায়গা দিলো। উমেদের বোন উর্মি এসে ভাইয়ের পাশে বসে বলে,,

“কি রে ভাইয়া কোথায় হারালি? অন্য মনস্ক লাগছে তোকে?”

“কোথায় হারাবো কোথাও না। কি বলবি বল”

উর্মি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ভাইয়ের দিকে। ভাইয়ের হাব ভাব সুবিধাজনক লাগছে না। সে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,
“ভাই তুই কি প্রেমে পরেছিস বল তো?”

উমেদ চমকে উঠলো। বোন কিভাবে বুঝলো। সে অবশ্য তার বোনকে সব কিছুই বলে তবে এই কথাগুলো বলতে তার একটু লজ্জা লাগছে। বোন তার থেকে তিন বছরের ছোট হলেও সে সব কথা শেয়ার করে। উর্মি ভাইয়ের মুখভঙ্গি দেখে বুঝে ফেললো তার ভাই আসলেই প্রেমে পরেছে।

“মেয়েটা কে ভাই?”

উমেদ আমতা আমতা করছে কি বলবে সে। তার থেকে নয় দশ বছরের ছোট মেয়েকে ভালোবাসে সে। এটা বলতে তো তার লজ্জা লাগছে। আর উর্মি শুনলেই বা কি বলবে।

“ভাই তুই বলবি?”

উমেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,
“আমি এক কিশোরীর প্রেমে পরেছি। সবে দশম শ্রেনীতে পরছে। যার বাবা নেই আছে এক বড় বোন আর মা”

উর্মি বিষ্মিত হয়ে উঁচু গলায় বলে ফেললো,,“কিহ!”

উমেদ বোনের মুখ চেপে ধরে বলে,,“চিল্লাস না। মা বাবার কানে যাবে। মুখ ছাড়ছি আমি”

উমেদ মুখ ছেড়ে দেয় উর্মির। উর্মি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,“ভাই শেষ পর্যন্ত তুই একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরেছিস?”

“হ্যাঁ কি করবো আমি এখন। বুদ্ধি দে?”

“আসলে প্রেম কখন কিভাবে আসে বলা যায় না। তাই তোকে দোষ দিতে পারছি না। যদিও মেয়েটা খুব ছোট তবুও ভালোবাসায় তো আর অপরাধ নেই। তুই আপাতত নিজের অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। এরপর কিছুদিন পর দেখা যাবে। ধূসর ভাইকে কি জানিয়েছিস?”

“না। লজ্জা লাগছে”

“ধূর বলদ এতে লজ্জার কিছু নেই। প্রেমে পরতেই পারিস। মন কি আর বয়স দেখে প্রেমে পরে”

#চলবে~