প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১২

0
143

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

জাহিন আজ খুব দ্রুত এসেছে কোচিং সেন্টারে। আজ নিজের মনে স্থির করেছে অরিনকে নিজের মনের কথা বলবে। রোজার মাস বিধায় সকালে কোচিং দেওয়া হয়েছে। অরিনও আসলো কিছুক্ষণের মাঝে। দু’জন দু’দিকে চলে গেলো ক্লাস নিতে। অরিন ক্লাস শেষ করে বের হতেই জাহিন বললো,,

“তোমার ক্লাস শেষ অরিন? আর কোনো ক্লাস আছে?”

“জি আমার ক্লাস শেষ। আজ আর নেই।”

জাহিন নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,“তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো অরিন”

“আপনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমি বাকি কাজটুকু শেষ করে আসছি”

অরিন কথাগুলো বলে এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না। সোজা হেঁটে চলে গেলো। সে আন্দাজ করতে পেরেছে জাহিন কি বলবে। মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। কেউ তাকে পছন্দ করলে বা তাকিয়ে থাকলে তারা দূর থেকেই তা টের পেয়ে যায়। অরিন জানে জাহিন তাকে পছন্দ করে হয়তো বা ভালো ও বাসে। তবে তার মনে একজনের বসবাস সে ধূসর আহসান। যাকে খুব বেশি ভালোবাসে অরিন। অরিন কাজ সেরে বের হতেই দেখলো জাহিনকে। জাহিনের সাথে হাঁটা ধরলো অরিন।

“জাহিন ভাইয়া কি বলতে চেয়েছিলেন বলুন”

“তোমাকে অনেক দিন ধরে বলবো ভাবছিলাম কথাগুলো। যদিও বলে ওঠা হয়নি। আমি জানি বিষয়টা অন্য রকম তবুও মনের কথা বলে হালকা হচ্ছি আর কি”

জাহিন থামলো কিছুক্ষণ। অরিন মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছে। জাহিন আবারও বলা শুরু করলো,,
“আমি তোমায় ভালোবাসি অরিন। আমি জানি তুমি হয়তো অন্য কাউকে ভালোবাসো। তবুও নিজের মনের কথাটা বলে হালকা হলাম। তুমি কিছু মনে করো না”

অরিন মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ সে কিছু মনে করেনি। এরপর মৃদু কন্ঠে বলল,,“ভাইয়া আমি একজনকে খুব ভালোবাসি এবং সেও আমায় খুব ভালোবাসে। তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক। যদিও আমাদের সম্পর্ক খুব বেশি দিনের নয় তবে মানুষটা আমায় ভীষণ ভালোবাসে। আপনার অনুভূতিকে আমি শ্রদ্ধা করি কারণ মনের উপর কারো জোর নেই। আপনি চেষ্টা করুন আমায় ভুলে যাওয়ার। জানি বলাটা সহজ করাটা নয়। তবুও চেষ্টা করুন”

জাহিন জানতো এমন কিছুই হবে। হৃদয় পুড়ছে। ভেতরটা খা খা করছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রিয় মানুষটি অন্য কাউকে ভালোবাসে। অন্যকারো হবে ভাবতেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। তবে কি করার! তার প্রিয় নারীই তো তাকে ভালোবাসে না! অন্য কাউকে ভালোবাসে। তার দিকে ঠিক মতো তাকিয়েছে কি না এ নিয়েও তার সন্দেহ হয়। সব সময় মাথা নিচু করে চলাফেরা করে। জাহিনকে কিছু বলতে না দেখে অরিন বলে,,

“জাহিন ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন?”

জাহিন চমকে উঠলো। নিজেকে স্বাভাবিক করলো। এরপর দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। তুমি ভালো থেকে অরিন এতেই আমি খুশি। তুমি সুখী হও। তোমার প্রিয় পুরুষ তোমার হোক এই দোয়া করি”

জাহিন এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না। নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। অরিন কিছুক্ষণ সেদিক পানে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে হাঁটা ধরলো। সামনের পার্কে তার প্রিয় পুরুষ আপেক্ষা করছে তার। অনেক দিন হলো ব্যস্ততায় দেখা হয় না। আজ অরিন নিজ থেকেই আসতে বলেছে। পার্কে প্রবেশ করতেই দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। বেঞ্চ বসে আছে। আকাশে সূর্যি মামার উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। রোদের উত্তাপ প্রচন্ড। অরিন এসে বসে পরলো ধূসরের পাশে। ধূসর তাকালো তার নিবেদিতার ক্লান্ত মুখের দিকে। মেয়েটার ঘামার্ত মুখখানা দেখতেও খুব ভালো লাগছে তার কাছে।

“খুব কি দেরি করেছি?”

ধূসর হাসলো। অরিনের কাছে এই হাসি চমৎকার লাগলো। পুরুষ মানুষ হাসলে ভয়ংকর সুন্দর লাগে। আচ্ছা সব পুরুষের হাসি কি চমৎকার, নাকি অরিনের কাছেই তার রুষ্ট পুরুষকে হাসলে এমন ভয়ংকর সুন্দর লাগে। হয়তো প্রতিটি নারীর কাছেই তার ব্যক্তিগত পুরুষের হাসি ভয়ংকর সুন্দর লাগে। ধূসর সামনের লেকের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে,,

“খুব বেশি নয় তবে করেছো কিছুটা।”

“আজ কোচিং এর জাহিন ভাইয়া আমাকে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছে। আমি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছি আমি ভালোবাসি একজনকে”

ধূসরের মুখখানা গম্ভীর দেখালো। হয়তো সে জানতো কিছু। হ্যাঁ সে দেখেছে নিবেদিতাকে অন্য পুরুষের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে। রুষ্ট পুরুষ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তবে নিবেদিতার সম্মানের কথা ভেবে পার্কে এসে চুপ করে বসে ছিলো। সে দেখতে চাইছিলো নিবেদিতা তাকে আদেও সত্য কথা বলে কি না। মনে মনে বেশ আনন্দিত হলে নিবেদিতার সত্য কথা বলা দেখে।

“ভালো। তবে তোমায় অন্য পুরুষের সাথে সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই নিবেদিতা। এই কথাটা মাথায় রেখো। আজ বহু কষ্টে নিজেকে সামলেছি তোমার সম্মানের কথা ভেবে।”

অরিন হাসলো। তার প্রিয় পুরুষ যে তাকে নিয়ে কতোটা সিরিয়াস তা সে জানে। কথা ঘুরিয়ে বলল,,,“আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি আমি। আচ্ছা বলুন দিন কাল কেমন কাটছে”

“তুমি হীনা সব বিবর্ণ রঙহীন পানসে লাগে”

“রুষ্ট পুরুষ অপেক্ষা করুন। অপেক্ষার ফল কিন্তু মিষ্টি হয়। জানেন তো”

ধূসর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। এরপর পাশ থেকে একটা ব্যাগ বের করে অরিনের সামনে ধরলো। অরিন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধূসরের পানে। ধূসর ব্যাগ থেকে হালকা গোলাপী রঙের এক খানা শাড়ি বের করলো। অরিন চমকালো। ধূসর শাড়ি খানা অরিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,

“শাড়িটা তোমার জন্য। খুব আশা নিয়ে কিনেছি। তোমায় খুব মানাবে নিবেদিতা। তুমি কি পরবে আমার জন্য শাড়িটা ইদের দিন?”

অরিন ধীর কন্ঠে বলল্,,,
“আমি নিতে পারবো না ধূসর সাহেব। আপনি আমার প্রেমিক আমি মানি তবে স্বামী নন। তাই আমি এখন আপনার দেওয়া কিছু নিতে পারবো না। আপনি না হয় রেখে দিন বিয়ের পর আমায় দিবেন। তখন না হয় পরবো”

ধূসর বেশ কষ্ট পেলো। ধূসর মৃদুস্বরে শুধালো,,
“আমি জানি। তবে শাড়িটির দাম খুব বেশি নয়। তুমি দামি শাড়ি নিবে না আমি জানি। এই শাড়িটা চোখে লেগেছিলো। তাই তোমার জন্য এনেছি ফিরিও না”

অরিন মানতে নারাজ। সে কিছুতেই নিবে না। ধূসর অনেক বার বলার পর শাড়িটা নিলো অরিন। তবে চিন্তায় পড়ে গেলো সে। মাকে কি বলবে! শাড়ি খানা কে দিলো! ধূসরের সাথে কথা বলে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। ধূসর রিকশায় উঠিয়ে দিয়েছে তাকে। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নামতেই। পাশের বাড়ির দোতলা থেকে ডাক দিলো তাইবা। অরিনকে উপরে যেতে বলল। ভাড়া আজ ধূসর জোড় করেই দিয়ে দিয়েছে। সে শাড়ি খানা চেপে ধরে পা বাড়ালো তাইবাদের বাড়ির দিকে। দোতলায় উঠতেই তাইবাকে দেখলো। তাইবা হাত চেপে ধরে এক টানে ছাদে নিয়ে আসলো অরিনকে। হাঁপিয়ে উঠেছে দু’জনই। অরিন ছাদের দোলনায় বসে পড়ে। তাইবা পাশে থাকা টুলে। অরিনের হাতে থাকা ব্যাগটার দিকে তাইবার চোখ পড়তেই সে অরিনকে জিজ্ঞেস করে,,,

“ওটা কি অরিন?”

অরিন ব্যাগটা থেকে শাড়ি খানা বের করলো। শাড়িটা তাইবা নিজের কাছে নিয়ে বলল,,,“অসম্ভব সুন্দর অরিন। কে দিয়েছে? ভাইয়া?”

অরিন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তাইবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,“আম্মাকে কি বলবো তাইবা। শাড়িটা কে দিয়েছে?”

তাইবা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,,“তুই এখন যা বাড়িতে। আমি সন্ধ্যায় গিয়ে দিয়ে আসবো। বলবো আমি দিয়েছি”

অরিন হাসলো। এই মেয়েটার কাছে তার সব সমস্যার সমাধান থাকে। যা সে হাজার চিন্তা করেও সমাধান করতে পারে না। সেই সব সমস্যা এই মেয়েটা খুব দ্রুত সমাধান করে ফেলে। অরিন বাড়িতে চলে গেলো অবলীলায়। কোনো চিন্তা ছাড়া।

উমেদ বেশ অবাক বন্ধুর পরিবর্তনে। সে বুঝে উঠতে পারছে না ছেলেটার হলো কি! আগে সারাটা দিন বাইরে টইটই করে ঘুরে বেড়াতো। এখন খুব একটা ঘোরাঘুরি করে না। কখনো চায়ের দোকানে কখনো বা তার বাড়িতে এসে আড্ডা দেয়। এই যে এখন তার পাশে ঘুমিয়ে আছে। একটার দিকে তার বাড়িতে এসেছে। এখন বিকাল। সেই তখন থেকে ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে। উমেদ বিরক্ত হলো। এর মাঝে ডেকেছে বেশ কয়েকবার। তবে এই ছেলের হুঁশ নেই। এবার কিছুটা জোরেই ডাকলো। ধূসর লাফ মেরে উঠে বসে বললো,,,

“কি হয়েছে, কি হয়েছে?”

“তোমার নিবেদিতা ভেগেছে এ ছাড়া কিছু না”

ধূসর বুঝলো উমেদ মজা করছে। চোখ ডলতে ডলতে বিছানা থেকে উমেদকে একটা থাপ্পড় মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। উমেদ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। উমেদের অস্থির হৃদয় সেই কিশোরীকে এক নজর দেখার জন্য ছটফট করছে। দেখার নেশায় ছুটে গিয়েছে অরিনদের বাড়িতে তবে দেখা মেলেনি কিশোরীর। ধূসর ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়। হাতে থাকা তোয়ালেটা উমেদের দিকে ছুঁড়ে মারে। উমেদ চেঁচিয়ে উঠে।

“এই তোর সমস্যা কি বলতো! হয়েছে কি। এমন তো ছিলি না কি হয়েছে কাহিনী বল”

ধূসর বিছানায় বসতে বসতে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,,,“আমার আর নিবেদিতার প্রেমের সম্পর্ক বেশ কিছুদিন।”

উমেদ চমকালো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো। বিশ্বাস হচ্ছে না। সে বিষ্মিত কন্ঠে শুধালো,,“কবে থেকে?”

“বেশ কিছু দিন রোজার আগে থেকে”

#চলবে~