প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১৩

0
170

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩

“তুই আমাকে বিষয়টা এখন জানাচ্ছিস?”

ধূসর বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরে। এরপর স্বাভাবিক ভাবেই বলে,,“হ্যাঁ তো! কি হয়েছে?”

উমেদ চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,“ধূসর তুই কি আদেও আমাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড ভাবিস বল তো”

“ভাবা না ভাবার কি আছে বল তো। তুই তো আমার বেস্টফ্রেন্ড। আমার ভাই।”

“তাহলে বিষয়টা বলিসনি কেনো আগে”

“এমনিতেই ইচ্ছা হয়নি”

উমেদ কপাল চাপড়ালো। জীবনেও শুধরাবে না ধূসর। দরজায় টোকা পরলো। অপর পাশ থেকে উর্মির কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। উমেদ উঠে গিয়ে দরজা খুললো। উর্মি ভেতরে প্রবেশ করলো। ধূসর উর্মিকে দেখে উঠে বসলো। উর্মিকে সে ছোট বোনের মতো স্নেহ করে। উর্মিও তাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখে। উর্মি সোফায় বসতে বসতে বলল,,,

“ধূসর ভাই তোমার বন্ধু যে এক কাহিনী ঘটিয়ে ফেলেছে”

উমেদ চোখ বড় বড় করে তাকালো উর্মির দিকে। দৌড়ে এসে উর্মির মুখ চেপে ধরলো। কিন্তু এখন তো আটকিয়ে ও লাভ নেই। ধূসর তো শুনেই ছাড়বে কাহিনী। তার মান সম্মান সব শেষ। এ ক’দিন কত যে ছটফট করেছে শুধু কিশোরীর মুখখানা দেখার জন্য। এখন যদি ধূসর জানতে পারে কি হবে! সে কি না বুড়ো বয়সে এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছে। মনকে এতো বুঝিয়েছে। তবে মন কি তা বুঝতে চায়। শেষ মেষ ধূসরের ছোট্ট শালিতেই আটকালো সে। হায় কপাল। ধূসর ভ্রু কুঁচকে বলল,,,

“কি রে তুই ওর মুখ চেপে ধরলি কেনো? সর ওর কাছ থেকে। উর্মি তুই বল তো কি কাহিনী করেছে এই বাদ”

ধূসর মুখ ছেড়ে দিলো উর্মির। উর্মি কিল বসিয়ে দিলো উমেদের পিঠে। বেচারা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। উর্মি সোফা থেকে উঠে বিছানার ওপর প্রান্তে বসে বললো,,
“ভাই তোমার বন্ধু নাকি কোন কিশোরীর প্রেমে পড়েছে। তার নাকি বাবা নেই একটা বড় বোন আছে আর মা আছে”

ধূসরের কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরো সম্প্রসারিত হলো। বাবা নেই, বড় বোন মা আছে। কে হতে পারে! হায়াত। তবে সে তো অনেক ছোট। ধূসর অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,,,
“হায়াত!”

উমেদ চমকে উঠলো। ধূসর অস্পষ্ট কন্ঠে বললেও সে শুনেছে। উমেদ দ্রুত উর্মিকে টেনে রুম থেকে বের করে দিলো। উর্মির মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। এখন ধূসর তাকে হাজারটা প্রশ্ন করবে। ধূসর তার মাঝেই বলে উঠলো,,,

“তুই হায়াতের প্রেমে পড়েছিস?”

উমেদ জানে মিথ্যা বলে লাভ নেই। তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। ধূসর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো। বিষ্মিত হয়েছে সে। এটা ভাবতেও পারিনি সে। নিজেকে স্বাভাবিক করলো বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে। এরপর বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“তুই তো জানিসই ও অনেক ছোট। অনেক মানে অনেক! তোর কিন্তু অনেক অপেক্ষা করতে হবে ওর জন্য। আর যদি মোহ বা ক্ষণিকের আবেগ হয় ভুলে যা। কারণ আমি থাকতে কখনোই ওকে কষ্ট পেতে দিবো না।”

উমেদ সোফায় বসলো। কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,,,“আমি জানি ধূসর ও আমার থেকে অনেক ছোট। বাচ্চা একটা মেয়ে। তবে আমি জানি না কিভাবে ওর প্রতি আমার অনুভূতিটা আসলো। এটা মোহ বা আবেগ নয় ধূসর। আমি প্রতিটা মুহুর্ত ছটফট করছি শুধু মাত্র মেয়েটার স্নিগ্ধ মায়াবী মুখখানা দেখার জন্য। মোহ হলে সেই কবে কেটে যেতো, এমন ছটফট করতাম না আমি এতোদিন ধরে। আমার হৃদয় পুড়ছে ধূসর। তুই তো ভালোবাসিস অরিনকে। বুঝিস তো ভালোবাসায় কতটা যন্ত্রণা”

ধূসর হাসলো বন্ধুর অবস্থা বুঝে। প্রেমরোগে যে বাজে ভাবে পড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উমেদ এক কথায় ভীষণ ভালো ছেলে, সুদর্শন। সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট। হায়াত সুখে থাকবে। তবে হায়াত যে ভীষণ ছোট এখনো। তার এখন পড়াশোনা করার বয়স। আর সেখানে উমেদের বিয়ে! বয়সের পার্থক্যটা একটু বেশি। তবে উমেদ যে ভীষণ ভালোবাসে হায়াতকে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

“অপেক্ষা কর উমেদ। মেয়েটা অনেক ছোট। এখন পড়াশোনা করার বয়স। আরেকটু বড় হোক এরপর না হয় দেখা যাবে। নিজের অনুভূতি গুলো আপাতত হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে রাখ।”

উমেদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আসলেই এখন তো সম্ভব নয় কিছু। কারণ অরিন কখনোই চাইবে না এতো ছোট বয়সে তার বোনকে বিয়ে দিতে। যেখানে সে এতো কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে।অনুভূতি গুলো না হয় আপাতত নিজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকুক।

“স্যার আপনার কি মন খারাপ আজ?”

জাহিনের ঘোর কাটলো রাহিয়ার কথা শুনে। হৃদয় বাজে ভাবে পুড়ছে। কেনো কেনো অরিন তার হলো না। খুব কি ক্ষতি হতো অরিন তার হলে, তাকে ভালোবাসলে। সে তো কম ভালোবাসে না মেয়েটিকে। জাহিন গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,

“মন খারাপ কেনো হবে। মন খারাপ নয় আমার তুমি পড়ো”

“স্যার আপনি চাইলে বলতে পারেন আমাকে। মনের কথা কাউকে বললে মন হালকা হয়। আপনি চাইলে আমায় বলতে পারেন”

জাহিন তাকালো রাহিয়ার পানে। রাহিয়ার আখিঁ জোড়ার সাথে তার আঁখি জোড়ার মিলন ঘটলো। তবে কেউ চোখ সরালো না। রাহিয়া কেঁপে উঠলো জাহিনের চোখ দেখে। রক্তজবার ন্যায় লাল হয়ে রয়েছে। জাহিন হুট করে কেঁদে ফেললো। রাহিয়া স্তব্ধ, হতবাক, হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো। তার সামনে থাকা পুরুষটি কাঁদছে! কিন্তু কেনো কাঁদছে। রাহিয়ার হৃদয় অস্থির হলো। পুরুষ মানুষ এতো সহজে কাঁদে না। গভীর আঘাতও তাদের কাবু করে না তবে কি হলো জাহিনের। রাহিয়া অস্থির কন্ঠে শুধালো,,

“স্যার আপনি কাঁদছেন কেনো? কি হয়েছে বলুন আমায়।”

জাহিন চোখ মুছলো। এরপর ভাঙা কন্ঠে বলল,,“দুঃখিত। আসলে আসলে আজ আমি আমার জীবনের সব চেয়ে বড় আঘাত পেয়েছি। আমার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছি। যদিও সে আমার ছিলো না। তবুও আমি তো বাসতাম ভালো তাকে। সে তো অন্য পুরুষকে ভালোবাসে। সে তো আমার নয় তবে কেনো এতো যন্ত্রণা হচ্ছে। এই দহন সহ্য করতে পারছি না আমি”

রাহিয়া স্তব্ধ হলো। কি বললো জাহিন, ভালোবাসে কাউকে! কারো জন্য হৃদয় পুড়ছে তার। তবে সেই নারীটি সে নয় অন্য কেউ। রাহিয়ার হৃদয়ে সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলো। তার হৃদয় ও যে পুড়ছে। বাজে ভাবে। কেউ কি সহ্য করতে পারে ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য নারীকে ভালোবাসার কথা। আঁখি জোড়ায় অশ্রু কণার দেখা মিললো। ছলছল করছে আঁখি জোড়া। তবে এই অনেক জাহিন এখনো অন্যকারো হয়নি। তার একটা হলেও সুযোগ আছে। এটাই অনেক। বড্ড ভালোবাসে সে জাহিনকে। একটু না অনেক বেশি। জাহিনের চোখে অন্য কোনো নারীর জন্য অশ্রু কণা এটা মানতে পারছে না রাহিয়া। বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,,

“স্যার আজ না পড়ি। আপনি বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়ে একটু একা সময় কাটান”

জাহিন লজ্জিত হলো। আবেগের বশে ছাত্রীর সামনে কেঁদে ফেলেছে। দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। রাহিয়া দরজা আটকে দিলো। জানালার কাছ ঘেঁষে বসে পরলো। বাইরে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে মাঝে। হৃদয়টা বাজে ভাবে পুড়ছে। চাপা আর্তনাদে কেঁদে উঠলো সে। হাতে থাকা রেশমি চুড়ি গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে পরে আছে আশেপাশে। সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই রাহিয়ার। তার তো জাহিনের বলা কথাগুলো এখনো কানে বাজছে। জাহিন অন্য কাউকে ভালোবাসে! এটা যে মন মানতে চাইছে না। ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ায় বৃষ্টির মতো অশ্রু কণা গড়িয়ে পরছে।

“আমায় কেনো ভালোবাসলেন না জাহিন। আমি তো ভীষণ ভালোবাসি আপনায়। ভালোবাসার যন্ত্রণা বড্ড কষ্ট দায়ক। সহ্য করতে পারছি না আমি। আপনার মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। কি করবো আমি”

হায়াত রুমে বসে বই পড়ছে। তার দুনিয়া বলতে তার আম্মু আপু আর তোহা। এই তিনজনই তার সুখে দুঃখের সাথী। তোহা তার সখী আজীবনের সখী। তোহা তার বেস্ট ফ্রেন্ড না বোন। ভীষণ ভালোবাসে সে মেয়েটাকে। হায়াত বই বন্ধ করলো। এবার মাকে গিয়ে একটু সাহায্য করবে ইফতারি তৈরি করতে। আপু হয়তো ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা সারাদিনই কষ্ট করে। তার ভীষণ কষ্ট হয় বোনের জন্য যদি পারতো সেও বোনকে কিছুটা সাহায্য করতো। এসএসসি পাশ থাকলেও টিউশনি খোঁজা যেতো তবে সে তো এখনো এসএসসি পাশ ও করেনি। মাথা থেকে সব কিছু ঝেড়ে রান্না ঘরে আসলো। দেখলো অরুনী শেখ আলুর চপ বানাচ্ছেন। হায়াত ছোলা গুলো নিয়ে সিদ্ধ করতে শুরু করলো।

ছোলাটা নিজে রান্না করলো। এরপর দু’জনে মিলে সব কিছু গুছিয়ে রাখলো। হায়াত এবার আম্মুকে রুমে পাঠিয়ে বোনকে ডাকতে গেলো। অরিনের রুমে ঢুকে দেখে তার আপু পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বইখাতা সব বিছানায় এলোমেলো হয়ে আছে। অরিন প্রথমে সেগুলো গোছালো। এরপর আপুর পাশে এসে বসলো।

“আপু এই আপু উঠ। আযান দিবে কিছুক্ষন পর। ইফতারি করতে হবে তো”

বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর অরিন উঠলো। হায়াত তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে চলে গেলো। অরিন ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে বের হতেই দেখলো প্রিয় পুরুষের কিছু মেসেজ। সেগুলো পড়ে মুচকি হাসলো। শেষ মেসেজটা এমন ছিলো,,

“নিবেদিতা স্নিগ্ধ পরী আমার সব সুখ তোমার হোক। তুমি আমার হৃদয়ের রানী, আমার নিবেদিতা। ভালোবাসি!”

#চলবে~