প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১৪

0
161

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

আজ ইদ। বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে। অরিন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠলো। চোখ কচলে উঠে বসলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বেজে পাঁচ মিনিট। হঠাৎ করে নিজের হাতের দিকে চোখ পরলো। মেহেদী রাঙা হাত! তবে সে তো মেহেদী দেয়নি। কে দিয়ে দিলো। হঠাৎ হায়াতের কথা মাথা আসলো। নির্ঘাত মেয়েটা এমন করেছে। গতকাল রাত জেগে সে পাড়ার ছোট ছোট মেয়েদের মেহেদী দিয়ে দিয়েছে যার কারণে নিজের দেওয়ার সময় পায়নি। তবে বোন যে তার এ খবর ও রেখেছে। হাসলো সে। এরপর বিছানা থেকে ওড়না তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো। মাকে গিয়ে সালাম করলো। অরুনী শেখ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এরপর হাতে এক বাটি সেমাই তুলে খেতে বললেন।

অরিনের আবার মিষ্টি খুব পছন্দের। সে সোফায় বসে সেমাই খাওয়া শেষ করলো। হায়াত ততক্ষণে চলে এসেছে। দু বোন মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলো। অরিন জোর করে হায়াতকে নতুন জামা পরতে পাঠালো। নিজেও একটু শাড়িখানা পরে বের হবে। ধূসর অপেক্ষা করবে তার জন্য। মায়ের গায়ে নতুন জামা সেই কিনে দিয়েছে। নিজের জন্য কিছু নেওয়া হয়নি। তবে ধূসরের দেওয়া শাড়িখানা তো আছেই।

সকাল এগারোটা। অরিন শাড়ি পড়ে হালকা সেজে বের হলো। চুলগুলো হাত খোঁপা করা। দেখতে লাগছে সুন্দর। ধূসর বাইক নিয়ে এসেছে। অরিনকে দেখে হৃৎস্পন্দন থমকালো। থমকালো সে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রমনীর পানে। অরিন কাছে আসলো। ধূসর বেশ কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার নিবেদিতার পানে। দু’জন বেশ কিছুক্ষণ ঘুরলো। ইদটা আনন্দেই কাটালো। বেশ ভালো কেটেছে ইদের দিনটা।

সময়টা দুপুর। ধূসর জোর করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে অরিনকে। দু’জন মিলে দুপুরের খাবার খেলো এক সাথে। অরিনের খুব লজ্জা লাগছিলো তবুও খেলো সামান্য পরিমান। খাওয়া শেষ করে বের হলো দু’জন রেস্টুরেন্ট থেকে। ধূসর অরিনকে বাইকে উঠতে বলে বলল,,,

“চলো তোমাকে সুন্দর এক জায়গায় নিয়ে যাই নিবেদিতা”

অরিন সম্মতি জানালো। আজ ঠিক ও করে নিলো মাকে সে ধূসরের বিষয়টা জানাবে। মা কি বলবে! মা কি তাকে রাগ করবে নাকি খুশি হবে কে জানে! ধূসর কিছুক্ষণ এর মাঝে বাইক থামায়। ইশারায় নামতে বলে তাকে। সেও নেমে দাঁড়ায়। দু’জন হেঁটে সামনে আসে। সামনে তাকাতেই ভীষণ অবাক হয় অরিন। সামনে একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ। পাশে বেঞ্চ ও আছে বসার জন্য। অরিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সেদিকে। কি দারুন দৃশ্য। অরিন বেঞ্চে গিয়ে বসে পরে। ধূসর বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে। সেও গিয়ে বসে পরে অরিনের পাশে। দু’জন বেশ কিছুক্ষণ একান্ত সময় কাটায়। ধূসর এরপর অরিনকে বাড়িতে দিয়ে আসে।

বিকাল পাঁচটা বাজে। অরিন সারাদিন বাইরে ছিলো আজ। ধূসর ছাড়ছিলো না। কি করবে সে। ছেলেটাকে মানাও করতে পারছিলো না। অরিন বাড়িতে প্রবেশ করে মাকে দেখতে পায়। অরিন মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। অরুনী শেখ অবাক হলেন মেয়ের কান্ড দেখে। মেয়ে তো তার এমন করে না। আজ হলোটা কি। অরুনী শেখ অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,,

“কি হয়েছে অরিন মন খারাপ?”

অরিন উঠে বসলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। এরপর ধীর কন্ঠে বলল,,,“আম্মা আমি একজনকে ভালোবাসি এবং সেও আমায় ভালোবাসে। আমরা প্রেমের সম্পর্কে আছি আম্মা। তোমায় না বলে থাকতে পারছিলাম না। তাই বলে দিলাম। তুমি কি রাগ করেছো আম্মা? রাগ করো না। ও আমায় ভীষণ ভালোবাসে”

অরুনী শেখ হাসলেন। এরপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,
“সে তোমায় ভালোবাসে এবং তুমি তাকে ভালোবাসো এটাই বড় কথা। আমি রাগ করিনি খুশি হয়েছি। তোমার আর হায়াতের সুখেই আমি সুখী অরিন। তোমরা সুখী হও। মায়ের দোয়া সারাজীবন তোমাদের সাথে আছে।”

অরিন হাপ ছেড়ে বাঁচলো। মায়ের সাথে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালো। হায়াতটা বাড়িতে নেই। হয়তো গিয়েছে তোহার সাথে হাঁটতে। এখন তার চিন্তা নেই মোটেও। মা খুশি মনে মেনে নিয়েছে। এক কথায় মেনে নিয়েছে এই অনেক। তাদের কাছে ধনী বড় লোক বিষয় নয়। তাদের কাছে মানুষটা আর ভালোবাসাটা আসল। অতি বড় লোক হয়েও যদি মানবতা না থাকে তেমন লোকের প্রয়োজন নেই।

পড়ন্ত বিকাল। দুই কিশোরী হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তার কিনারা ঘেঁষে। দুজনের পরনে সেলোয়ার-কামিজ। দেখতে বেশ লাগছে। মুখে হালকা সাজ, হাতে রেশমি চুড়ি। যা ঝনঝন করে বাজছে। তোহা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিভিন্ন কথা বলছে। আর হায়াত মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মাঝে মাঝে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হাসছে। কিশোরী দু’জন হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের কাছে চলে এসেছে । তাদের বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় ব্রিজটি। হেঁটে আসতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। তোহা দৌড়ে রেলিঙের কাছে যায়। ঝুঁকে নিচের দিকে তাকায়। হায়াত দ্রুত হাত টেনে সরিয়ে আনে তোহাকে। তোহা গাল ফুলায়। হায়াত রেগে বলে,,

“তুই পাগল? এই ভাবে কেউ ঝুঁকে? পড়ে গেলে?”

তোহা হায়াতের গাল টেনে দিয়ে বলে,,
“দোস্ত আমি বাচ্চা না যে পরে যাবো। টেনশন কম কর। আর বড়দের মতো আচরণ করা বন্ধ কর”

হায়াত তোহার কথার বিপরীতে জবাব দিলো। তোহার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। অদূরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন এই দৃশ্য মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলো। সে আর কেউ নয় উমেদ। বেচারা কিশোরী এক নজর দেখার তাড়নায় ছুটে এসেছে। এক নজর দেখার তৃষ্ণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল তাকে। উমেদ ও ধীর গতিতে বাইক নিয়ে পিছু পিছু নামলো। হায়াতরা ব্রিজ থেকে নেমে ফুসকার দোকানে গেলো। দু’জন ফুসকা খাবে। মূলত তোহায় জোর করে এনেছে। উমেদের ভীষণ ইচ্ছে করছে একটু কথা বলতে। তবে কিভাবে বলবে। মেয়েটা তো তাকেই চিনেই না। আগে দেখেছে কি না তাতেও সন্দেহ। তাই সে আর সামনে গেলো। যতক্ষণ হায়াত বাইরে ছিলো সেও পিছু পিছু ছিলো। হায়াত বাড়িতে ঢুকতেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল,,,

“এতো ছোট তুমি মায়াবীনি যে তোমায় চাইলেও নিজের কাছে আনতে পারছি না। একটু বড় হলে কি খুব ক্ষতি হতো।”

ইদ গিয়েছে আজ ১৫ দিন। ব্যস্ত দিন পার করছে অরিন। রাত এগারোটা। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টি পড়ছে। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়। বিদ্যুৎ নেই। বাইরে বজ্রপাত হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর অরিনের অন্ধকারছন্ন রুমটা আলোকিত হচ্ছে। পর্দাগুলো দমকা হাওয়ায় উড়ছে। ধূসর কল করছে তবুও রিসিভ করছে না সে। আজ কেনো যেনো পরিবেশটা উপভোগ করতে ইচ্ছে করলো। তবে বেশ কিছুক্ষণ পর ধূসর আবারও কল করলো। অরিন মুঠোফোনটি তুলে কল রিসিভ করলো। অপর পাশ থেকে রুষ্ট পুরুষ শুধালো,,

-“কোথায় ছিলে?”

-“কারেন্ট ছিলো না। জানেনই তো আমরা বড়লোক নই”

রুষ্ট পুরুষ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়েটা সব সময় উল্টো মানে বের করবেই করবে। কথাটা এড়িয়ে যেতে বললো,,,
-“কি করো এখন?”

-“আগামীকাল নবীন বরণ। সবাইকে শাড়ি পড়তে হবে। আমাদের উপর দায়িত্ব পড়েছে সব। শাড়ি খুঁজছি পড়বো বলে। আপনি কি করেন?”

-“আমার নিবেদিতার কথা ভাবছি। এক কাজ করো তো তুমি আমায় শাড়িগুলোর ডিটেইলস বলো আমি বলছি কোনটা মানাবে তোমায়!”

মেয়েটি ঠিক তাই করলো। আলমারি থেকে বের করলো কয়েক খানা শাড়ি। শাড়িগুলো পুরোনো ডিজাইনের হলেও বোঝার উপায় নেই শাড়িগুলো যে কিছু বছর আগের। খুব যত্ন করে রাখা ছিলো। মেয়েটি গড়গড় করে বলল শাড়ির রং, শাড়িতে করা নকশার কথা। রুষ্ট পুরুষ মন দিয়ে শুনলো প্রেয়সীর কথা। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে শুধালো,,

-“তুমি নীলরঙা জামদানী শাড়িটা পরো। ভালো লাগবে”

অরিন মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে নীল শাড়ি খানাই পরবে। ধূসর কিছু একটা ভেবে আবারও বলল,, “শুনো মেয়ে কাজল দিও আখিঁ জোড়ায় আমার নামে। চুড়ি পরো। আমি অপেক্ষায় থাকবো আমার নিবেদিতাকে নীল শাড়িতে দেখার।”

#চলবে~