প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১৫

0
175

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

উত্তপ্ত,রৌদউজ্জ্বল দিন। সূর্য ঠিক মাথার উপর উঠেছে। অরিন নীলরঙের শাড়িখানা পরে তৈরি হয়ে নিলো। নীল শাড়ি খানায় তাকে বেশ দারুন মানিয়েছে। কি সুন্দর! অরিন হাসলো আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। বেশ লাগছে আজ তাকে। ধূসরের পছন্দ আছে বলতে হবে। মুখে হালকা সাজ দিলো। চোখে কাজল দিতে ভুললো না। সে তার প্রিয় পুরুষের জন্যই চোখে কাজল দিলো। ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ায় কাজল বেশ মানিয়েছে। অরিন হাতে নীলরঙা চুড়িও পরলো। মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে তাইবাদের বাড়ির নিচে এসে দাঁড়ালো। তাইবা পেছন থেকে অরিনের কাঁধে থাপ্পড় মেরে বলল,,

“দেরি করলি কেনো আজ বলতো। আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোর জন্য”

তাইবা অরিনের দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলো। এরপর যখন তাকিয়েছে সে অবাক হয়েছে। অরিনকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। স্নিগ্ধ পরী লাগছে। তাইবা বিষ্মিত কন্ঠে বলল,,,
“আজ তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে অরিন। আজ সেজেছিস যে?”

অরিন হাসতে হাসতে বলল,,
“সাজতে ইচ্ছে করলো ভীষণ তাই সাজলাম। আজ কিন্তু তোকেও বেশ দারুন লাগছে। আজ দেখা গেলো তোকে রাস্তা থেকেই কেউ তুলে নিয়ে গেলো”

তাইবা হাসলো বেশ। দু’জন রিকশায় চড়ে বসলো কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজ খুব বেশি দূরে না হলেও শাড়ি পরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তার জন্য আজ রিকশা নিয়েছে। কলেজে প্রবেশ করলো দু’জন। বেশ কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান দেখলো। বারোটার কিছুক্ষণ আগে কল করলো ধূসর। অরিন রিসিভ করতেই বলল,,

“অরিন তুমি একটু তাইবা কে নিয়ে বাইরে আসবে?”

অরিন নিষেধ করলো না। সে তাইবাকে নিয়ে বাইরে আসলো। চোখে পরলো সুদর্শন পুরুষটিকে। বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে তার নীল রঙা পাঞ্জাবি। অরিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রুষ্ট পুরুষের পানে। নীল রঙখানায় যেনো আরো বেশি সুদর্শন লাগছে। অরিন এগিয়ে আসতেই ধূসর দেখলো নিবেদিতাকে। থমকালো, হৃৎস্পন্দন মিস হলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয়তমা তার নিবেদিতা। তার ভালোবাসার মানুষ। ধূসরের ভীষণ ইচ্ছে করলো তার নিবেদিতাকে উষ্ণ আলিঙ্গন করতে তবে এই মুহুর্তে তা সম্ভব নয়। তবে আজ সে খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছে। সে হুট করে বলে উঠলো,,

“বিয়ে করবে আমায় নিবেদিতা?”

অরিন হতবাক, হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো রুষ্ট পুরুষের পানে। কি বললো ধূসর,বিয়ে! এখন, কিভাবে।ধূসর আবার বললো,,“না করো না নিবেদিতা দয়া করে”

অরিন ভাবলো বেশ কিছুক্ষণ। এরপর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। সমস্যা কোথায় বিয়ে করতে। ভালোবাসে দু’জন দু’জনকে তবে বিয়ে করতে কিসের সমস্যা! বিয়ে না হয় করে ফেললো। ভালোবাসার মানুষটা না হয় আজ পুরোপুরি তার হলো। ধূসর খুশি হলো, ভীষণ খুশি হলো। তার নিবেদিতা তার হবে, আজ। সে তাইবা আর অরিনকে এক রিকশায় উঠিয়ে নিজে বাইকে করে চলে আসলো কাজী অফিসে। যেখানে আগে থেকেই ছিলো ফাহাদ উমেদ নাফিজ আর নুরা দাঁড়িয়ে আছে। অরিনকে দেখে নুরা এগিয়ে আসলো কথা বললো আনন্দের সাথে। তার ভীষণ পছন্দ হলো অরিনকে।
ধূসর আজ সকালেই সবাইকে বলেছে বিষয়টা। যদিও স্নিগ্ধা এখানে নেই। সে সিলেট গিয়েছে তার বাবার সাথে ঘুরতে। সবাই ভীষণ অবাক হয়েছে। তবে বিষয়টা মেনে ও নিয়েছে। তাই চলে এসেছে। কাজী অফিসে বিয়ে করলো দু’জন। পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। আজ থেকে স্বামী স্ত্রী অরিন ও ধূসর। ধূসরের আঁখি জোড়ায় অশ্রু কণার দেখা মিললো। পুরুষ মানুষের সত্যি কারের ভালোবাসা হওয়া ও ভাগ্যের ব্যাপার।

তাইবা সহ বাকি সবাই দু’জনকে শুভেচ্ছা জানালো। নাফিজ তো প্রথম দেখাতেই তাইবার প্রেমে পরেছে। মেয়েটাকে তার দারুণ লেগেছে। সারাটা সময় তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। কথা বলেছে অল্প কিছুক্ষণ। এ ছাড়া মেয়েটা খুব একটা তাকায় ও নি তার দিকে। সবাই অরিন ধূসরকে স্পেস দিয়ে চলে গেলো। তাইবা কলেজে চলে গিয়েছে। সে নাকি অনুষ্ঠান দেখবে। ধূসর অরিনকে নিয়ে চলে আসলো নিরিবিলে এক জায়গায়। জায়গাটা তার। শহর থেকে কিছুটা দূরে নির্জন জায়গা একটা ছোট্ট একতলা দালান। তার পাশ ঘেঁষে একটি পদ্ম পুকুর। এক পাশে বিশাল কদম গাছ। অরিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। ধূসর শক্ত করে তার হাতখানা ধরে আছে।

বাড়িটা পাহারা দেয় একজন মধ্যবয়স্ক লোক। ধূসরকে দেখে এগিয়ে আসলেন। তারা বাড়িটার পাশের বাড়িতেই থাকে। ধূসর প্রতি মাসে টাকা পাঠিয়ে দেন। ধূসরকে দেখে তিনি এগিয়ে এসে বললেন,,
“কেমন আছো ধূসর বাবা? অনেক দিন পর আসলে? পাশে কে বউমা নাকি?”

ধূসর হেসে বলে,,
“হ্যাঁ চাচা আপনাদের বউমা। বিয়ে করেছি আজ। তাই তাকে নিয়ে আসলাম আমার প্রিয় জায়গায়। কিছুক্ষণ থেকে চলে যাবো”

লোকটি হেসে চাবি দিয়ে চলে গেলো। অরিনকে নিয়ে ধূসর বাড়িটাতে প্রবেশ করলো। বেশ গোছগাছ করা সব কিছু। ধূসর হঠাৎ অরিনের হাত টেনে নিয়ে তাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অরিন থমকায়। অরিন কাঁধ ভেজা অনুভব করলো। তাড়াতাড়ি ঠেলেঠুলে ধূসরকে দূরে সরালো। দেখলো ধূসরের চোখে পানি। অরিন জানে লোকটার চোখের অশ্রুকণার কারণ সে। অরিন হাত বাড়িয়ে মুছে দিলো।

“আপনি কাঁদছেন কেনো রুষ্ট পুরুষ। আমি তো আপনার দেখুন, এখন এই মুহুর্তে আমি আপনার বউ। আপনার অর্ধাঙ্গিনী। তবে কেনো আপনার চোখে পানি?”

“আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি নিবেদিতা। তোমায় পাবো কখনো ভাবিনি। তোমায় পাওয়ার আনন্দ এতোটাই প্রখর যে আমি কাঁদছি। আমায় ছেড়ে যেও না কখনো মরে যাবো। ভালোবাসি, ভীষণ”

“আপনায় ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ভালোবাসি আপনায় আমি। ছেড়ে যাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি আমি। নিবেদিতা রুষ্ট পুরুষের ছিলো আছে এবং থাকবে। আজ তো আপনার নামে লিখিত হলাম তবুও কেনো এতো ভয়?”

“তোমায় আমি কতোটা ভালোবাসি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না বউ। ভীষণ রকম ভালোবাসি তোমায় আমি”

অরিন তার প্রিয় পুরুষকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আজ কোনো বাঁধা নেই। সে কোনো দ্বিধা ছাড়াই স্পর্শ করতে পারবে। তাদের সম্পর্ক আজ থেকে হালাল হয়েছে। ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে এটাই অনেক। আর কি চাই। ধূসর তার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসলো। এবং এরপর তার নিবেদিতার ললাটে উষ্ণ স্পর্শ করলো। নিবেদিতা লজ্জায় রাঙা হলো। ধূসর দেখছে তার নিবেদিতাকে লজ্জায় রাঙা হতে দেখতে। কি ভীষণ সুন্দর লাগছে। তার বউ, তার অর্ধাঙ্গিনী তার সামনে লজ্জায় রাঙা হয়ে বসে আছে। সে মুগ্ধতা নিয়ে দেখছে।

“আমার রাঙা বউ তোমার লজ্জায় রাঙা মুখখানা দেখে আমি আজন্মকাল কাটিয়ে দিতে পারবো। আমার রূপবতী, আমার গুনবতী। ভালোবাসি নিবেদিতা”

ধূসর অরিনের বিয়ের আজ দু’দিন। সেদিন দু’জন বেশ কিছুক্ষণ এক সাথে সময় কাটিয়েছে। ধূসর অরিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো। আর অরিন চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো। সেসব কথা মনে করছিলো ধূসর। ধূসর হেঁটে বন্ধু মহলের মাঝে বসে পরলো। আজ স্নিগ্ধাও উপস্থিত। সব বন্ধুরা এক সাথে হয়েছে। সবাই তো ভীষণ খুশি ধূসরের জন্য নাফিজ ধূসরকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

“কি বন্ধু গতকাল বউয়ের সাথে কেমন সময় কাটালে?”

স্নিগ্ধা অবাক হলো। বউ! বউ কিসের। কার বউ। ধূসর আবার বিয়ে করেছে নাকি যে বউ আসবে। সে ভীষণ বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,“তুই মজা করছিস নাফিজ? ধূসরের বউ আসবে কোথা থেকে। ও কি বিয়ে করেছে নাকি”

নুরা হাসতে হাসতে বলল,,
“ধূসর বিয়ে করেছে দু’দিন আগে। ভাবি যে কি কিউট তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। মেয়েটা অসম্ভব ভালো। আমরাই ওর বিয়ের স্বাক্ষী দিলাম। তুই তো ছিলি না তাই তোকে জানাতে পারিনি”

স্নিগ্ধা হতবিহ্বল হলো, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো। কি শুনলো সে বিয়ে হয়েছে ধূসরের। তার ভালোবাসার মানুষ অন্য একজনের। কি করে সম্ভব। ধূসরের আচরণে তো কখনোই মনে হয়নি ও কাউকে ভালোবাসে। তবে কিভাবে কি। স্নিগ্ধার হৃদয় ভীষণ বাজে ভাবে ক্ষতবিক্ষত হলো। সে কোনো দিক তাকালো না দৌড়ে চলে গেলো। উমেদ সহ বাকি সবাই হতবাক হলো। নুরা বিষ্মিত হয়ে বলল,,

“হঠাৎ হলো কি ওর?”

#চলবে~