প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১৭

0
162

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৭

হায়াত আর তোহা স্কুল থেকে ফিরছে। দুপুর বাজে দুইটা। আজ আকাশে মেঘ নেই। রৌদ্রময় দিন। উত্তপ্ত দুপুর। হায়াত আর তোহা ঘামার্ত মুখ নিয়ে মোর ঘুরতেই তোহা একটা বাইকের সামনে পরলো। দোষটা তোহারই ছিলো। সে মাঝ বরাবর রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো। তারা জানে এ রাস্তায় সচারাচর গাড়ি আসে না। এর জন্যই তোহা দুষ্টমি করছিলো। হায়াত দৌড়ে কাছে গেলো। বেশি কিছু হয়নি। শুধু ধাক্কা লেগেছে। কিছু হওয়ার আগেই বাইক ওয়ালা বাইক থামিয়ে দিয়েছেন। হায়াত তোহার কাছে গিয়ে বলল,,

“দেখি দেখি কোথায় লেগেছে তোর? দেখে শুনে চলবি না? এভাবে মাঝ রাস্তায় কেউ হাঁটা চলা করে?”

তোহার হাত ছিলে গিয়েছে। রক্ত পরছে। বাইকে থাকা পুরুষটি আর কেউ নয় উমেদ নিজে। উমেদ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে। সে এক্সিডেন করলো করলো হায়াত আর তোহার সাথেই করলো। ভাগ্যিস সে সঠিক সময়ে বাইক থামিয়ে ছিলো না হয় বড় কোনো বিপদ হতে পারতো। উমেদ বাইক থেকে নেমে দু’জনের কাছে আসে।

“দুঃখিত আমি আসলে খেয়াল করিনি আপনাদের। আপনার তো বেশ ব্যাথা লেগেছে চলুন হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাত থেকে র*ক্ত পরছে তো”

তোহা নিজের জামা কাপড় থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,,“ভাইয়া দোষটা আপনার নয় আমার। তাই নিজেকে শুধু শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। আর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই”

হায়াত পাশ থেকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
“প্রয়োজন নেই মানে। দেখেছিস কতটা কেটেছে। চল সামনে ফার্মেসি আছে না ওখানে নিয়ে যাবো”

উমেদ এক পলক তাকালো কিশোরীর দিকে। মুখ খানা মলিন। গম্ভীর্য ভাবটা মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সাধারণত এই বয়সের কিশোরীরা এরকম হয় না খুব দুষ্ট চঞ্চল হয়ে থাকে। তবে হায়াত আলাদা, ভীষণ আলাদা। উমেদ তাকালো না খুব বেশিক্ষণ। তাকালে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় হায়াতকে সামনে বসিয়ে দেখতে থাকবে সে। তা সম্ভব নয়। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,

“হ্যাঁ চলুন সামনের ফার্মেসিতে আমার জন্যই হয়েছে এগুলো আমি না হয় আপনার এটুকু উপকার করলাম। আপনি উনাকে ধরে নিয়ে আসুন।”

হায়াত এক পলক উমেদের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো দু’জনের। হায়াত চোখ নামালো। তোহাকে ধরে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। খুব বেশি সময় লাগলো না। তিন মিনিটে পৌঁছে গেলো। কাছাকাছি ছিলো বিধায় দ্রুত পৌঁছেছে। তোহার বেশ ভালো ক্ষানিকটা কেটেছে। উমেদ ফার্মিসি থেকে ব্যান্ডেজ করিয়ে দু’জনকে রিকশায় উঠিয়ে দেয়। তোহা পায়েও বেশ আঘাত পেয়েছে। উমেদ বাড়ির পথে রওনা হয়। আঁখি জোড়ায় ভাসছে কিশোরীর মুখখানা। গম্ভীর্য মুখ খানায় কত স্নিগ্ধ লাগছিলো। উমেদ নিজের অনুভূতিকে সামলানোর চেষ্টা করলো। অনুভূতি গুলো হায়াতকে দেখলে সামলানো বড্ড কষ্ট হয়ে যায়। মনে হয় ছুটি গিয়ে হায়াতের ছোট শরীরখানা তার বক্ষে ঠেকাতে। আগলে নিতে। তবে তা যে সম্ভব নয়।

“অরিন জানিস কি হয়েছে? ধূসর ভাই আছে না ওই যে এমপির ছেলে”

অরিন মাথা তুলে তাকায় তাইবার দিকে। তাইবা অরিনকে তাকাতে দেখে বলে,,,“একটু আগে যেই ছেলেগুলো আমাদের রাস্তায় বিরক্ত করছিলো না ওদের না ধূসর ভাই অনেক মারছে।”

অরিন বিষ্মিত হয়। ধূসরকে সে চিনে। এমপির ছেলে বলে কথা। কে না চিনে। তবে তাদের জন্য মারছে এটা অবিশ্বাস্য। আশ্চর্য হওয়া কন্ঠে তাইবাকে বলল,,,
“তুই তো কলেজ থেকে বের হসনি তবে কিভাবে জানলি?”

তাইবা অরিনের পাশে বসতে বসতে বলল,,,
“আমি যখন পানি আনতে গিয়েছিলাম না তখন বলছিলো কয়েকটা মেয়ে যে এমপির ছেলে কয়েকটা ছেলেকে মারছে। ছেলেগুলো নাকি কলেজের অনেক মেয়েদের বিরক্ত করেছে”

অরিন শান্ত হলো। না তাদের জন্য কাউকে মারেনি। আর তাদের জন্যই বা কেনো মারবে। এমপির ছেলে কি আর তাদের চিনে। চেনার কোনো কথা ও নয়। সে হলো বাপ মরা এতিম মেয়ে। মা বোনকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। তার জন্য এরকম হওয়ার কোনো মানে নেই। তার মতো সাধারণ মেয়ের জন্য কেনো মারবে। তবে সে বেশ কিছুদিন খেয়াল করেছে ধূসর নামক পুরুষটি তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে না তাকালেও বিষয়টা বুঝে। মেয়েদের এক বিশেষ ক্ষমতা আছে। তারা কোনো ছেলেকে দেখলেই বলে দিতে পারে ছেলেটা তাকে পছন্দ করে কি না। অরিন ও বুঝেছে ধূসর নামক ছেলেটা তাকে একটু হলেও পছন্দ করে। অরিন এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চিন্তা করলো।

“বাদ দে তাইবা এসব। ওসবে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই”

দু’জন ক্লাস করে বের হলো। কলেজ গেট দিয়ে বের হতেই চোখে পরলো ধূসর নামক পুরুষটিকে। বাইকে বসে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। অরিন এক নজর তাকিয়েই চোখ সরিয়েছে। ধূসরদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ধূসর তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। অরিন তাইবা দুজনই থেমে যায়। অরিন তাকায় না পর্যন্ত। ধূসর গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

“এরপর থেকে কেউ ডিস্টার্ব করলে আমাকে বলবে অরিন”

অরিন অবাক হয়। চোখ তুলে তাকায়। তার সামনে একজন লম্বাটে সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। অরিন চোখ সরিয়ে বলে,,, “দুঃখিত আমি আপনায় চিনি না জানিনা তাই আমার বিষয় লিছু বলতে চাই না। আর আপনার এসব বিষয়ে দেখার কোনো দরকার নেই। আমি বুঝে নিবো আমার জিনিস”

অরিন এক মুহুর্ত ও সেখানে না দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো তাইবাকে নিয়ে। ধূসর কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে যায় নিজের গন্তব্যে।

ফোনের বিকট শব্দে অরিন অতীত থেকে বেরিয়ে আসে। এতো সময় অতীতের পাতা ঘেটে তার আর ধূসরের প্রথম কথোপকথনের কথা মনে করছিলো। আজও স্পষ্ট মনে আছে তার। সেদিন সে প্রেমে পরেছিলো তার রুষ্ট পুরুষের। তার রুষ্ট পুরুষের রাগ ভয়ংকর। মনে আছে তার পরের দিনের কথা। তার সামনে কি করেছিলো। সে কি রাগ। সে এসব ভাবনা বাদ দিয়ে মুঠোফোনটি পাশ থেকে হাতে তুলে নিলো ধূসর কল করেছে। অরিন মৃদু হেসে কল রিসিভ করলো।

”নিবেদিতা কি করো?”

“ভাবছিলাম বসে বসে”

“কি ভাবছিলে?”

“আপনার সাথে আমার প্রথম কথোপকথনের কথা। মনে আছে আমি কিভাবে চলে এসেছিলাম। ইশ আমি কি জানতাম ওই রাগি পুরুষটা আমার বর হবে। জানলে একটু ভালো করে কথা বলতাম”

দু’জন হাসলো বেশ কাহিনী নিয়ে। ধূসর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো। অরিন ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো। রুমটা বেশ অগোছালো। গোছাতে হবে। কোমড়ে ওড়না বেঁধে নেমে পরলো ঘর গোছাতে। ঘর গোছাতে গোছাতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। রুম থেকে বের হতেই দেখলো অরুনী শেখ ঘর মুছছেন। হায়াত বাড়িতে নেই বিধায় আজ তিনি করছেন। অরিন দ্রুত মায়ের থেকে সেগুলো কেড়ে নিলো। মাকে রুমে বিশ্রাম নিতে বলে নিজেই সব কাজ করার জন্য নেমে পরলো। আজ ছুটি নিয়েছে। আজ অরিন কোথাও পড়াবে না। কোচিং সেন্টার বন্ধ এর জন্য পড়াতেও যায়নি কোথাও। সন্ধ্যাও যাবে না। অরিন সব কাজ নিজে হাতে শেষ করলো। রান্না আগেই করেছে তার আম্মু। তাই সমস্যা হয়নি। হায়াত আসতেই অরিন তাকে সরবত দিলো।

প্রতিদিন তো এই কাজ হায়াতই করে আজ সে না হয় করলো। তবে এই কাজে হায়াত মোটেও খুশি হয়নি। একটা দিন বোন বাড়িতে তবুও ঘরের কাজ করেছে। অরিন বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো হায়াত খুশি হয়নি। তবে সে কিছু বললো না। হায়াত তাকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলো। বাকি থালা বাসন গুলো সে ধুবে। অনেক কাজ করেছে অরিন আর না। হায়াত অরিনকে তোহার কথা বলেনি কারণ বললে চিন্তা করবে। তার থেকে বিকালে বলবে তারপর দু’জন এক সাথে দেখে আসবে। এটাই ভালো।

“স্নিগ্ধা মা উঠ খেয়ে নিবি”

স্নিগ্ধা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে রইলো। আজমল হোসেন মেয়ের পাশে বসে বললেন,,,
“মা নিজেকে আর কত কষ্ট দিবি। গত কয়েকটা দিন নিজের কি অবস্থা করেছিস দেখেছিস? তুই কি শুধু তাকেই ভালোবাসিস? আমি কি তোর কিছু না। আমায় কি ভালোবাসিস না?”

স্নিগ্ধা বাবার দিকে তাকালো। তার হঠাৎ কষ্ট হলো বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করবে ভাবলো বাবার কথা ভেবে। স্নিগ্ধা বুকে মাথা রাখলো তার বাবার। আজমল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। স্নিগ্ধা মনে মনে আওড়ালো,,,

“তুই কখনো জানবি না তোকে কেউ একজন খুব ভালোবাসতো, পাগলের মতো চাইতো। তোর জন্য প্রতিটা মুহুর্ত ছটফট করেছে। তুই ভালো থাক। আমি চাই তুই সুখী হ। আমার সব সুখ তোর হোক”

#চলবে~