প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-২০

0
164

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২০

একমাস কেটে গিয়েছে। অরিন আর হায়াত এখন আপাতত একটু স্বাভাবিক। ধূসর পটু হাতে সব সামলেছে। হায়াত অরিনের স্বাভাবিক হওয়ার পেছনে সম্পূর্ণ ক্রেডিট তার। সে আপাতত অরিন আর হায়াতের সাথেই থাকছে। তার বাবা মেনে নেয়নি বিয়েটা। না মানলে তার কিছু করার নেই কারণ সে নিবেদিতাকে ছাড়তে পারবে না। নিবেদিতা তার প্রাণ। তাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচে সে। সম্ভব নয়। পরিবার মানবে না কত দিন এক বছর, দুই বছর, সর্বোচ্চ গেলে দশ বছর। এরপর ঠিকই মেনে নিবে। হায়াত আগের তুলনায় আরো নিশ্চুপ আছে। এখন আপাতত হায়াত নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে। অরিন রান্না করছে। ধূসর আজ বাড়িতে। জয়েনিং দুদিন পর। হঠাৎ ফোনে কল আসায় ধূসর চমকে উঠে। এরপর নিজেকে স্বাভাবিক কল রিসিভ করে। নাম না দেখেই রিসিভ করেছে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর কন্ঠস্বর।

“বাড়ি কবে ফিরছো?”

ধূসর হতভম্ব হলো কন্ঠ শুনে। কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখলো বাবা নামটা জ্বলজ্বল করছে। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,,
“তুমি যতদিন অরিনকে মেনে নিচ্ছো না ততদিন”

“আমাদের বাড়ির ছেলেরা শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকে না। তোমার বউকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসো”

ধূসরের বাবা কথাটা বলেই খট করে কল কেটে দিলেন। ধূসর হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। তার বাবা তাদের বাড়ি ফিরতে বলছে এটা কিভাবে সম্ভব। তবে বেশ খুশি হলো সে। কিন্তু চিন্তায় ও পরে গেলো। সে যদি অরিনকে নিয়ে যায় তবে হায়াত কোথায় থাকবে। আর অরিন কি হায়াতকে তাদের বাড়িতে রাখতে চাইবে! তার যতটুকু মনে হয় কখনোই রাখবে না অরিন। এখন উপায় একটাই বলে দেখতে হবে অরিনকে বিষয়টা। অরিন তখন রান্না শেষ করে রুমে প্রবেশ করে। ধূসরকে বসে থাকতে দেখে বলে,,,

“আপনি বসে কেনো আছেন এখনো যান গোসল করে আসুন। আমিও গোসল করতে যাবো। তাড়াতাড়ি যান দুপুর পেরিয়েছে বলতে গেলে। এখনো বসে আছেন কেনো?”

ধূসর বলতে চাইলো বিষয়টা। তবে তার আগেই অরিন জামা কাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে। ধূসর ভাবলে রাতে বলবে। তাই এখন নিজের কাজে চলে গেলো।
অরিন হায়াতের রুমে এসে দেখে হায়াত তখনও ঘুম। অরিন টেনে তুলে গোসলে পাঠায় হায়াতকে। হায়াত তো নিঃশব্দে গোসলে চলে যায়। অরিন গেস্ট রুমের ওয়াশরুমে গোসল সেরে নেয়। গোসল শেষ করে খাবার সাজিয়ে রাখে টেবিলে। ধূসর আর হায়াতকে ডাকে। দু’জন এসে বসে টেবিলে। অরিন খাবার বেড়ে দেয় দু’জনকে। এরপর নিজেও বসে পরে তাদের সাথে। হায়াত অল্প খেয়ে উঠে যেতে চায়। ধূসর টেনে বসিয়ে নিজ থেকে খাইয়ে দেয় হায়াতকে। অরিনের চোখ জুড়ায় দৃশ্যটা দেখে। তাদের বড় ভাই ছিলো না। তার না হলেও হায়াত বড় ভাইয়ের আদর পাচ্ছে এটাই অনেক।

“স্যার আপনায় একটা কথা বলবো?”

অনেক সাহস জুগিয়ে রাফা জাহিনকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল। সে মনের কথা নয় অন্য কথা বলবে। জাহিন বলল,,,
“হ্যাঁ বলো?”

“স্যার আপনার ভালোবাসার মানুষটা আমার ভাইয়ের বউ অরিন আপু না?”

জাহিন থমকায়। ভাইয়ার বউ জিনিসটা কানে বাজছে। ঠিকই তো সে এখন অন্য কারো বউ, অন্য কারো অর্ধাঙ্গীনি। তারে ছোঁয়ার সাধ্য তার নাই। তার দিকে তাকানোর অধিকার তার নেই। তাকে দেখা না কত গুলো দিন হলো আজ। এ জীবনে ভালো তো সে ওই একটা নারীরেই বাসছিলো তবে ক্যান পাইলো না। খুব কি ক্ষতি হইতো ওই নারীরে পাইলে। কম তো ভালোবাসেনি সে। তার একটা আফসোস থেকেই যাবে এতো ভালোবাসার পরও সে ওই মানুষটাকে পেলো না। রাফা বেশ ভড়কে গেলো জাহিনকে চুপ থাকতে দেখে। সে ভীতু গলায় বলল,,,

“স্যার? আপনি কি রাগ করেছেন?”

জাহিন নিজেকে ধাতস্থ করলো। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,,
“সামনে পরীক্ষা তোমার। সেটাতে ফোকাস দাও।”

রাফাও প্রসঙ্গ তুললো না আর। বুঝলো জাহিন এড়িয়ে যেতে চাইছে। সে পড়াতে মন দিলো। সে বিশ্বাস করে, সে একদিন না একদিন জাহিনকে পাবেই। আশায় সে বসে থাকবেই। হোক না একটু দেরি তবুও জাহিন তার হোক।
“কি হলো রাফা তোমার মনোযোগ কোথায়? পড়ায় মনোযোগ দাও। অন্যসব চিন্তা বাদ দাও। সামনে পরীক্ষা তোমার। কথাটা মাথায় রাখো”

রাফা আমতা আমতা করলো। এরপর পড়ায় মনোযোগ দিলো। জাহিনকে নিয়ে ভাবতে বসলে ভাবনা আর শেষ হয় না। কি যে এতো ভাবে সে জাহিনকে নিয়ে। জাহিন নামটা শুনলেই বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। কেনো এমন হয় তা জানে না রাফা। হয়তো প্রিয় মানুষ সামনে থাকলে এমনই হয়। রাফার মস্তিষ্ক জুড়ে একমাত্র জাহিন নামক পুরুষটির বিচরণ। মন মস্তিষ্ক সব জাহিনের দখলে। তার সবটা জুড়ে জাহিন বসবাস করছে।
জাহিন ভাবছে অরিনের কথা। মেয়েটা আজ অন্য কারো। মেয়েটার অস্তিত্বে এখন অন্য কারো বসবাস। ভাবতেই খারাপ লাগে। তবে সে এখন সম্পূর্ণ চেষ্টা করছে অরিনকে ভুলে থাকার। বিবাহিত নারীকে নিয়ে ভাবাও যে পাপ। এখন সে নতুন করে নিজের জীবনটাকে সাজাতে চায়। সে জানে রাফা তাকে পছন্দ করে। তবে চাইলেও তো সে পারছে না অন্য কাউকে নিজের মনে জায়গা দিতে। তাই এসব থেকে দূরে থাকতে চাইছে।

স্নিগ্ধা এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। বিসিএস পরীক্ষা দিবে। এর জন্য তৈরি হচ্ছে। আসলে নিজেকে এসব কিছুতে ব্যস্ত রাখছে। সারাটা দিন এসবে ব্যস্ত থাকলেও দিন শেষে সেই মানুষটাকে তার মনে পরেই। মানুষটার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাকে। সেই প্রথম থেকে ভালোবাসতো কি না সে ধূসরকে। বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়ে বলা হয়নি। আর না বলা হবে কোনো দিন। থাক না হয় সে একা। সুখী হোক তার ভালোবাসার মানুষটা। সে না হয় বিষাদিনী হলো, ধূসর না হয় সুখী ব্যক্তি হলো। ভালোবাসার মানুষের সুখ দেখাটাও ভাগ্য।

স্নিগ্ধা রাতের আকাশ দেখছে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কি সুন্দর চাঁদ। সবাই বলে চাঁদ নাকি একা। তবে সে তো দেখে চাঁদ একা নয়। তার সাথে আছে লক্ষ লক্ষ তারা। কি সুন্দর তার আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেও একা নয়। তারও তার আব্বু আছে। যে তার জন্য সব করতে পারে।

“স্নিগ্ধা মা খেতে আয়। রাত তো অনেক হলো।”

স্নিগ্ধা চোখ মুছলো। আঁখি জোড়ায় কখন পানি জমেছে নিজেও টের পায়নি। চোখ মুছে হাসলো। এই হাসির কারণ তার বাবা। যাকে সে ভীষণ ভালোবাসে ভীষণ। তার জীবনে আপন বলতে ওই একটা মানুষই আছে। সেই মানুষটার হাসির জন্য সব করতে পারে সে। বাবার ডাকে নিজের রুম ছেড়ে খেতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো স্নিগ্ধা।

রাত বারোটা। সবে মাত্র রুমে প্রবেশ করেছে অরিন। সকল কাজ এখন সেই করে বাড়ির। হায়াতকে কিছু ধরতে দেয় না। হায়াত শুধু পড়ে। সামনে এসএসসি এখন পড়তে হবে। ধূসর বিছানায় শুয়ে আছে। অরিন গিয়ে ধূসরের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। ধূসর তখনই ধপ করে চোখ খুলে। অরিন ভড়কে যায়। সে ভেবেছিলো ধূসর ঘুম। ধূসর উঠে বসে।

“নিবেদিতা ঘুমানোর সুযোগ নিচ্ছো?”

“নাহ মোটেও না। আমি কেনো আপনার মতো রুষ্ট পুরুষের ঘুমানোর সুযোগ নিবো বলুন তো?”

“ না নিতেই পারো এতো সুদর্শন জামাইকে দেখে কি আর নিজেকে সামলানো যায় নিবেদিতা। আমি তো সব বুঝি। তুমি সুযোগ পেয়ে আমার ইজ্জত লুটছো মেয়ে?”

“মোটেও না। আপনি বেশি বেশি বলছেন”

অরিন উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে থাকে। ধূসর হেসে উঠে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার নিবেদিতাকে। অরিন চমকে উঠে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। ধূসর অরিনের খোলা চুলে মুখ ডুবালো। অরিন পরনে থাকা সেলোয়ার-কামিজের কোণা খামচে ধরলো। এ যে মাতাল হওয়া ধূসরকে দেখছেন। ধূসর তাকে এভাবে স্পর্শ করেনি আগে। আজই প্রথম। ধূসর নেশাতুর কন্ঠে বলে,,,

“নিবেদিতা তুমি চুলে কি শ্যাম্পু নাও বলো তো। এমন ঘ্রাণ যে আমায় মাতাল করে তুলছে।”

#চলবে~