প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-২৩

0
155

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৩

বাইরে প্রবল বাতাস আর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এমন হুট করে যে এমন বৃষ্টি হবে তা ভাবতে পারিনি কেউই। শহর তলীর মানুষ এদিক ওদিক ছুটে নিজেদের ভেজার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যস্ত। দোতলা বাড়িটি নিস্তব্ধ। অনামিকা ইসলাম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছেন। ধূসর ও মায়ের সাথে মিশে আছে। অনামিকা ইসলাম ছেলেকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছেন। কতগুলো দিন দেখা হয় না ছেলেকে। এক মাত্র ছেলে তার। আর সেই ছেলেই কি না কতগুলো দিন বাইরে। কি খাচ্ছে কি করছে কিছু জানে না। অনামিকা ইসলাম ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,

“এতোটাই পর হয়ে গিয়েছি আমি না। যে আজ এতোদিন পরে আমার কথা মনে পরলো?”

“আম্মু মোটেও এমন না। তোমার কথা প্রতিদিনই মনে পরতো তবে নিবেদিতার অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিলো। এখন একটু ভালো আছে। হায়াত টাও ছোট ওকেও সামলেছি আমি”

অনামিকা ইসলাম ভুলেই গিয়েছিলেন মেয়ে দুইটার কথা। সে ধূসরকে বলল,,,
“অরিন হায়াত কেমন আছে? তুই ওদের নিয়ে কেনো আসলি না? আমি কি ওদের পর? আমি ওদের আরেক মা। তুই কেনো ওদের আনলি না ধূসর?”

“আম্মু রিলাক্স আগে চলো বসো। এরপর সব বলছি”

ধূসর অনামিকা ইসলামকে সোফায় বসিয়ে নিজে বসে। এরপর বলে,,, “আম্মু অরিনকে তো আনবো তবে হায়াত ওকে কি করবো?”
“এতে ভাবার কি আছে ওর মেন্টাল সাপোর্ট প্রয়োজন আমাদের মাঝে থাকলে ও ভালো থাকবে তুই অরিন আর হায়াত দু’জনকেই নিয়ে আসবি”
“আম্মু অরিন রাজি না নিজের শ্বশুর বাড়িতে নিজের বোনকে রাখতে সে রাজি না। হায়াতকে হোস্টেলে পাঠাতে চাইছে কিন্তু কিভাবে সম্ভব। ছোট মেয়েটার উপর দিয়ে কত কি গেলো। আর এখনই যদি আবার ওকে একা করে দেই”

“একা করার প্রশ্নই আসে না। আমি ফোন করে কথা বলবো অরিনের সাথে। হায়াত ও এখানে থাকবে। এখান থেকেই পড়াশোনা করবে। আমার মেয়ে নেই এখন একটা মেয়ে হলে খুব ভালো হয়। দুটো মেয়ে আছে আরো দু’জন আসলো না হয়। হায়াতকে আমি নিজ হাতে মানুষ করবো”

ধূসর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে সোফায়। এরপর বলে,,“ধন্যবাদ আম্মু। এবার তোমার বউমাকে বোঝাও। সে তো রাজি না। কত বার বললাম”
“ওসব নিয়ে তুই টেনশন করিস না। সামনের শুক্রবার রাফার বিয়ে তাই দুদিনের মাঝে যেনো বাড়ির বউ বাড়িতে আসে। আমি অপেক্ষা করবো। তুই নিয়ে আয় ওদের”
“আম্মু বাবা কি এখন ঠিক আছে? মেনে নিয়েছে?”

“প্রথমে ভীষণ রাগ করেছিলো না জানিয়ে বিয়ে করার জন্য। পরে মেনে নিয়েছে। অরিনের সম্পর্কে সে নাকি খোঁজ নিয়েছে। আশেপাশের সবাই ভালো বলেছে। এ জন্য এখন মেনেছে। তোকে ফোন দিয়েছে”

“আচ্ছা বুঝলাম। তো রাহিয়া বুড়ি কোথায়?”
“ও তো কলেজে গিয়েছে”
“রাফা কোথায়?”
“ও দেখ ওর হবু বরের সাথে কথা বলে যাচ্ছে”

“আম্মু ক্ষিধে পেয়েছে তুমি নুডলস রান্না করো। আমি রাফাকে একটু জ্বালিয়ে আসি”

ধূসর হেসে উপরের দিকে পা বাড়ায়। বাবা মায়ের রুমের সামনে আসতেই দেখলো দরজা খোলা। সে ওদিকে না তাকিয়ে রাফার রুমের দিকে যেতে নিলে পেছন থেকে আসাদ আহসান বলে উঠলেন,,
“ধূসর আমার রুমে এসো”

ধূসর থামলো। পিছু ফিরে বাবাকে রুমে প্রবেশ করতে দেখলো। সে নিজেও পিছু পিছু রুমে প্রবেশ করলো। আসাদ আহসান সোফাতে বসে বললেন,,, “বসো”

ধূসর ও বসলো। আসাদ আহসান মৃদু কন্ঠে বললেন,,,“বউকে বাড়ি কবে আনছো? নিজে এসেছো তো বাড়ির বউ কোথায়/বাড়ির বউকে বাড়ি নিয়ে আসো যত দ্রুত সম্ভব। আর হ্যাঁ তার বোনকেও নিয়ে এসো। ওই বেচারি আবার একা কোথায় থাকবে”

ধূসর অবাক হলো তার বাবা এ বিষয়ে ও খবর নিয়েছে। তবে ভীষণ খুশি হলো। এবার আর নিবেদিতা হায়াতকে হোস্টেলে পাঠাতে পারবে না। নিশ্চয়ই নিয়ে আসবে তাদের সাথে। সে হায়াতকে ভীষণ স্নেহ করে। নিজের বোন মনে করে। তাই তো এতো চিন্তা। এখন চিন্তা নেই কোনো তার বাবা মাও রাজি হায়াতের এখানে আসায়। শুধু মাত্র নিবেদিতা বাকি। তাকেও তার মা রাজি করিয়ে নিবে সমস্যা নেই। ধূসর জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে বলল,,,

“আমি এক দু’দিন এর মাঝে ওদের নিয়ে আসবো”

“শোন ধূসর তোমার বউকে আমি রাফার বিয়ের দিন সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। এরপর একটা রিসিপশনের ব্যবস্থা করবো। করেছো গোপনে বিয়ে এখন সবার সাথে তো পরিচয় করাতে হবে”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো। আমি রাফার সাথে দেখা করে আসি।”

ধূসর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ধূসর রাফার রুমে এসে নক করলো। রাফা পড়ছিলো। সামনে বিয়ের জন্য একটা গ্যাপ যাবে। সেগুলোই পূরণ করছে আরকি। দরজায় কারো উপস্থিতি বুঝে দরজা খুললো। ধূসরকে দেখে অবাক হলো। ধূসর রাফার মাথায় ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,,

“কেমন আছিস রে নতুন বউ”

রাফা ভাইকে এতোদিন পর দেখে ভীষণ খুশি। দুই ভাই বোন গল্প করতে বসে পরে। ধূসর এটা ওটা বলে খেপাচ্ছে রাফাকে। দু ভাই বোম অনেক দিন পর এক সাথে। এর জন্য গল্প করছে।

ঝড় বৃষ্টিতে আটকে পরেছে রাহিয়া। কলেজ ড্রেস অর্ধেক ভেজা। রাহিয়া স্কার্ফ টেনে শরীর ঢাকার প্রচেষ্টা করছে। হুট করে এ অসময়ে বৃষ্টির মাঝে আটকা পরবে বুঝেনি। ছাতা থাকায় ও কিছু অংশ ভিজে গিয়েছে। হাতের বেশ ক্ষাণিকটা ভিজে গিয়েছে। আশেপাশো কেউ নেই। ঝড় বৃষ্টিতে কেই বা থাকে। রাহিয়া ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তার বাবাকে কল করলো। কল করে গাড়ি পাঠাতে বলল। একটু ঝাড়িও খেলো সাথে। রাহিয়া দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে গাড়ির। তখনই দেখা মিললো জাহিনের। রিকশায় উঠছে। রাহিয়া চড়া গলায় ডেকে উঠলো। জাহিন ভড়কালো। এরপর আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো। কে তার নাম ধরে ডেকেছে। রাহিয়াকে দেখে ছোট নিঃশ্বাস ফেললো। রাহিয়া ছাতা খুলে এগিয়ে আসলো। এরপর ধীর কন্ঠে বলল,,

“স্যার আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি? আসলে রিকশা পাচ্ছি না। আর অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষা করছি”

জাহিন না তাকিয়েই সম্মতি দিলো। রাহিয়া কিছুটা কষ্ট পেলো জাহিনের আচরণে। নাই বা ভালোবাসুক তবে একটু ঠিক মতো কথা তো বলতে পারে। কিন্তু না সাহেবের তো ভাব। সে ছাড়া দুনিয়ার বাকি সবার সাথে হেসে কথা বলবে। রাহিয়া উঠে বসতেই রিকশা চলতে শুরু করলো। রাহিয়ার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। তার শখ ছিলো প্রিয় মানুষের সাথে রিকশায় বৃষ্টি বিলাস করার। হোক না লোকটা তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু সে! সে তো বাসে। এখন না হয় এমন বৃষ্টি বিলাসই করলো। এরপর না অধিকার নিয়ে হাত জড়িয়ে কোনো এক নদীর পাড়ে হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটবে। উহু থাক এসব অধিকার পাওয়ার পর সব শখ পূরণ হবে। জাহিন কিছুক্ষণ পর বলল,,,

“গাড়ি কোথায় তোমাদের?”

“বাবা আনতে বলেছিলো তবে আমি আনিনি স্যার”

এরপর আর কোনো কথা হলো না দু’জনের। জাহিন যথেষ্ট চেষ্টা করছে দূরত্ব বজায় রাখতে। জাহিনের বাম হাত কিছুটা ভিজেও গিয়েছে। জাহিনদের বাড়ি আগে হওয়ায় সে রিকশা ভাড়া দিয়ে আগে নেমে পরলো। রাহিয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো। কি জানি কি হয়! মনের কথাও বলতে পারছে না। ভয় হয় যদি আর পড়াতে না আসে এই ভয়ে। সে ভেবেছে এইচএসির পরে সে বলে দিবে নিজের মনের কথা। যা হবে দেখা যাবে তখন। তবুও আর লুকাবে না। আর কিছুদিন। এরপর নিজের মনের কথা জানিয়ে ছাড়বে সে কতোটা ভালোবাসে সে জাহিনকে। একটা সুযোগ চাইবে। যেই সুযোগের অপেক্ষায় এতোদিন আছে সে।
জাহিন না মানলে দরকার হয় পাগলামি করবে তবুও তার জাহিনকেই চাই। জাহিন হলেই হবে। ইশ জাহিন যদি তার ভাবিকে ভালো না বেসে তাকে বাসতো। তবে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো। কে জানে! আল্লাহ তায়ালা যা ভালো বোঝেন তাই করেন। তিনি সব বুঝে শুনেই করে থাকেন। রাহিয়া মনে মনে আওড়ালো,,,

“এমন একদিন হোক যদিন অধিকার নিয়ে আপনায় জড়িয়ে ধরবো, ভালোবাসি বলবো। আর আপনি! মৃদু হেসে আমায় আগলে নিবেন নিজ বক্ষপিঞ্জরায়”

#চলবে~