প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-২৪

0
155

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৪

ঝড় বৃষ্টির রাত। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। আবহাওয়া খুব একটা ভালো নয়। বৃষ্টি সেই দুপুরে হয়েছিলো। এখন অব্দি আর হয়নি। ধূসর সেই যে সকালে বের হয়েছে এখনো আসেনি। দুপুরে একবার কথা হয়েছিলো অরিনের সাথে এরপর আর হয়নি। কল করেছে বেশ কয়েকবার অরিন। তবে ধূসর ধরেনি। এবার অরিনের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। মনে মনে ভীষণ বকা ও দিচ্ছে সে ধূসরকে। তখনই বাড়ির দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। অরিন দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। ধূসরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর দরজা থেকে সরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। ধূসর বউয়ের অভিমানে নিঃশব্দে হাসলো।আজ তার বউ ভীষণ ক্ষেপেছে। কল রিসিভ করেনি না! জুতো জোড়া সঠিক জায়গায় রেখে বাড়িতে প্রবেশ করলো। বাইরে হায়াতের জুতা না দেখে বুঝলো হায়াত তোমাদের বাড়িতে। ধূসরের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসলো।

তার বউকে জ্বালানোর জন্য দুষ্ট বুদ্ধি এসেছে। ধূসর প্রথমে সোজা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ট্রাউজার আর টিশার্ট পরে রুম থেকে বের হয়। রুম থেকে বের হয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে আসে। কারণ সে জানে তার নিবেদিতা এখন রান্নাঘরে জিনিসপত্রের উপর রাগ ঝাড়ছে। তাকে তো কিছু বলতে পারবে না তাই রান্নাঘরে জিনিসপত্রের উপর রাগ ঝাড়ছে। ধূসর এসে যা ভেবেছিলো তাই দেখলো। অরিন রান্না করছে। রান্না না ঠিক জিনিসপত্র গুলো জোরে জোরে রাখছে। ধূসর মৃদু হাসলো। এরপর ঝড়ের গতিতে গিয়ে অরিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন পেটে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো।
স্পর্শটা তার ভীষণ পরিচিত, পারফিউমের ঘ্রাণটাও সে চেনে। তার পুরুষের। ব্যক্তিগত পুরুষের। অরিন নিজেকে সামলে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। ধূসর অরিনকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অরিন বিরক্ত হয়ে বলল,,,

“কি করছেন কি? ছাড়ুন এটা রান্নাঘর”

“তো! কি হয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই দেখার। কে দেখবে আমাদের। একটু স্পর্শ করলেই দূর দূর করো কেনো নিবেদিতা”

অরিন চুপ। কি বলবে সে! ধূসরের স্পর্শে সে লজ্জায় কাতর হয়ে যায়। এটা বলবে! তো ধূসর তাকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলবে। এর থেকে কিছু না বলায় শ্রেয় মনে করলো অরিন। ধূসর আবারও বলল,,,
“কি হলো নিবেদিতা উত্তর কোথায়? বুঝেছি আমার লজ্জাবতী লজ্জায় কিছু বলছে না। আচ্ছা তুমি এতো লজ্জাবতী তা আমায় আগে কেনো জানালে না। আমি তাহলে আরো আগে থেকেই তোমায় লজ্জা দিতাম। তোমার লজ্জায় রাঙা মুখ খানা দেখতাম।”

অরিন লজ্জায় কি করবে ভেবে পেলো না। ঘুরে ধূসরের বুকে মুখ লুকালো। একটু আগের করা অভিমান ভুলে গেলো। এরপর বলল,,,
“প্লিজ চুপ করুন। আমি মরে যাবো এবার লজ্জায়। আর না প্লিজ অনেক বলেছেন”

ধূসর হেসে বলল,,,“আচ্ছা এখন আমি চুপ করতেই পারি তবে শর্ত আছে।”
“কি শর্ত?”
“শর্ত হচ্ছে অভিমান করা চলবে না নিবেদিতা। আম্মু আসতে দিতে চাইছিলো না। অনেক বুঝিয়েছি। ফোনে চার্জ ছিলো। এ জন্য কল রিসিভ করতে পারিনি। তোমার অভিমান কি কমেছে?”

অরিন অস্পষ্ট কন্ঠে হু বলল। ধূসর শুনলো। এরপর অরিনকে বুক থেকে তুললো। গ্যাসের চুলা বন্ধ করে অরিনকে কোলে তুলে নিলো। অরিন ভড়কে গেলো। এরপর দ্রুত ধূসরের গলা জড়িয়ে ধরলো। ধূসর অরিনকে এনে সোফাতে বসালো। এরপর নিজে বসলো। অরিন বলল,,
“এভাবে কেউ কোলে তুলে নেয়? আমি কত ভয় পেয়েছি জানেন?”
“ভয় পাওয়ার কিছু নিবেদিতা আমি ফেলবো না তোমায় সমস্যা নেই। তোমার বরের শরীরে এতো কম শক্তি না যে তোমায় ফেলে দিবো বুঝেছো”
“তবুও ভয় পেয়েছি আমি”
“আমি আছি তো নিবেদিতা। আমি থাকতে কিসের ভয় তোমার?”

অরিনের হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো। “আমি আছি তো” এতো টুকুই কি যথেষ্ট নয়। একটা মেয়ের জন্য। তার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। এই মানুষটা তার হাতটা ধরে আজীবন পাশে থাকলেই চলবে। আর কিছু দরকার নেই তার। অরিনের ভাবনার মাঝে ধূসর বললো,,,
“নিবেদিতা আম্মু কথা বলবে তোমার সাথে”
“আন্টি?”
“হ্যাঁ তোমার সাথে। এখন আমি কল করছি তুমি কথা বলো ঠিক আছে?”

অরিন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো প্রতি উত্তরে। ধূসর তার মায়ের নাম্বারে কল করলো। রিসিভ হতেই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে অরিনকে চাইলো। অরিন ফোনটা কানে নিয়ে নম্র কন্ঠে সালাম দিলো। অপর পাশ থেকে অনামিকা ইসলাম মৃদু হেসে বললেন,,,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম মা। কেমন আছো তুমি? আর হায়াত ওই বা কেমন আছে?”
“আমরা সবাই ভালো আছি আন্টি আপনারা?”
“আমরা তো ভালো আছি আম্মু। তবে তুমি আন্টি কেনো বলছো আমি কি তোমার মা নই? আমাকে কি আম্মু বলে ডাকা যায় না?”

অরিনের হৃদয়টা বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। মায়ের কথা মনে পরলো। আখিঁ জোড়া সিক্ত হলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,“আচ্ছা আম্মু আজ থেকে আপনি আমার আম্মু”
“এই তো সোনা মা। তা হায়াত সোনা কোথায়?”
“আম্মু ও একটু পাশের বাড়িতে ওর বান্ধবীর কাছে গিয়েছে। আমিই পাঠিয়েছি। সারাটা দিন বাড়িতে বসে পড়ে। এর জন্য আজ জোর করে ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছি”

“ঠিক করেছো অরিন মা। কিন্তু আমি আজ তোমার কাছে একটা অনুরোধ করবো তুমি কি রাখবে?”

“আম্মু আপনি বলুন আমি রাখার চেষ্টা করবো”

“ধূসর বললো তুমি নাকি হায়াতকে হোস্টেলে পাঠাতে চাইছো। কিন্তু আমি চাইছি আমার দুই মেয়েই আমার কাছে থাকুক। মায়ের মন এক সন্তানকে কীভাবে বাইরে রাখবো বলো?”

“কিন্তু আম্মু ওটা তো আমার শ্বশুর বাড়ি ওকে কিভাবে….”

“এটা তোমার শ্বশুর বাড়ি নয় অরিন। এটা তোমার আর হায়াত দু’জনের বাড়ি। তুমি আমার বাড়ির বউ না আমার বাড়ির মেয়ে হয়ে আসছো। তুমি আর হায়াত আমার মেয়ে। তাই ওসব বাদ। আমি শুনছি না কিন্তু। তুমি আর হায়াত কাল পরশুর ভেতরে আমাদের বাড়িতে চলে আসো বুঝেছো। আম্মু অপেক্ষা করছে”

অরিন সম্মতি জানালো। দু’জন টুকটাক কথা বলে কল কাটলো। ধূসর অরিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে। অরিন বুঝলো সব ধূসরের কাজ। তবুও কিছু বললো না কারণ তারও বোনকে অন্য জায়গায় পাঠাতে মন সায় দিচ্ছিলো না। এখন একটু স্বস্তি পেলো। তবুও তার আসাদ আহসানকে নিয়ে ভয় হচ্ছে। অরিন ধূসরকে বলল,,,

“ধূসর সাহেব আপনার বাবা?”

ধূসর হেসে বলল,,
“তাকে নিয়ে চিন্তা করো না সে তোমাকে আর হায়াতকে নিয়ে যেতে বলেছে নিজে। সেও চাইছে তোমরা দু’জন দ্রুত ও বাড়িতে যাও”

অরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এই মানুষটাকে নিয়ে ভীষণ ভয়ে ছিলো। তবে এখন স্বস্তি পেয়েছে। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে তার। বোনটা তার কাছে থাকবে। তার চোখের সামনে থাকবে এই অনেক। অরিন ফোন করে তাইবাকে বলল হায়াতকে পাঠিয়ে দিতে। হায়াত আসলে ধূসর জোড় করে লুডু খেলতে বসলো। অরিন দেখে হেসে নিজের কাজে গেলো।

বিবর্ণ আকাশ। ঝড়ো হাওয়া ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্ষণে ক্ষণে আকাশকে আলোকিত করে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তার সাথে ঝুম বৃষ্টি তো আছেই। বিদ্যুৎ নেই। অরিন হায়াতকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে রুমে আসলো। অন্ধকার রুম খানা মোমবাতির হালকা আলোয় আলোকিত হলো। পর্দার ফাঁক দিয়ে আসা বাতাসে হাতে থাকা মোমবাতি খানা নিভে গেলো। তখনই সশব্দে বিদ্যুৎ চমকালো। অরিন সেই আলোতে অস্পষ্ট ভাবে তার ব্যক্তিগত পুরুষের অবয়ব দেখলো। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে জানালার দিকে ফিরে। অরিন সেদিকে এগিয়ে গেলো। পরনে তার শাড়ি। আজ এমনিতেই লাল শাড়িখানা পরেছিলো। ধূসরকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,,

“এই যে সাহেব এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন? সরে আসুন। বৃষ্টি হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সরুন ওখান থেকে”

অরিন হাত টেনে সরানোর চেষ্টা করলো। তবে পারলো না। ধূসরের চোখের দিকে চোখ পরতে থমকালো। ধূসরের চোখ অন্যকিছু বলছে। অরিন দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললো। ধূসর তাকে টেনে নিয়ে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। এরপর নেশাতুর কন্ঠে বলল,,,

“নিবেদিতা আমি কি তোমায় অধর জোড়া ছুঁয়ে দেখতে পারি?”

অরিন নিঃশ্চুপ। কি বলবে সে! লজ্জায় গালগুলো গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। ধূসর অরিনের দিকে তাকালো। অরিন চোখ নামালো। ধূসর বুঝলো বউয়ের মনের কথা। ধূসর উষ্ণ স্পর্শ দিতে শুরু করলো তার নিবেদিতার অধর জোড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল,,,

“আমি কি তোমায় আজ ভালোবাসতে পারি বউ?”

অরিন এ আবদার ফেলবে কিভাবে। বুক লুকালো তার প্রিয় পুরুষের বক্ষে। ধূসর বুঝলো তার নিবেদিতার মনের কথা। কোলে তুলে নিলো তার প্রিয় নারীকে। আজ রাতটা না হয় দু’জন ভালোবাসার মানুষের হয়ে থাক। একে অন্যতে মিশে থাক এ রাত।

#চলবে~