#প্রিয়_নীড়হারা
পর্ব: ০২
নতুন বউকে নিয়ে যাওয়া হলো অর্ণিতের দাদার বাড়ি কুমিল্লাতে। বউভাতের অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ করে বউ নিয়ে একেবারে ঢাকায় রওনা দেওয়া হবে৷
দৃতী বউ বেশে বসে আছে একটি খাটে। ঘোমটার আড়ালে তার আতংকিত মুখটি দেখা যাচ্ছে না। নাহ, বিয়ে-শ্বশুরবাড়ি নিয়ে সে মোটেও আতংকিত নয়। তার আতংকের কারণ এই খাটটি। সামান্য নড়াচড়া করতেই খাটটি ক্যাচক্যাচ শব্দ করছে৷ নতুন বউয়ের ঘরে অগণিত মানুষের আনাগোনা। পুরো পাড়ার বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধা এসেছেন বউ দেখতে।
একই ভাবে বসে থাকতে থাকতে দৃতীর কোমর লেগে গেছে। পেছনের দিকে ভাঁজ করে রাখা পা দুটো একটুখানি সোজা করার চেষ্টা করা মাত্র খাটটি ক্যাচক্যাচ শব্দ করে উঠল। মুহূর্তেই স্থির হয়ে গেল দৃতী। সামনে তাকিয়ে দেখল, একটি বালক তার দিকে তাকিয়ে ফোকলা দাঁতে হাসছে। তা দেখে ঘোমটার আড়ালে দৃতীও সামান্য হাসল।
সাত-আটজন মহিলা দৃতীর খাটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। দৃতী বুঝতে পারছে না, এতো জায়গা থাকলে মহিলাগুলো তার ঘরেই কেনো আড্ডার আসর পেতেছে! বউ দেখতে আসলে, চুপচাপ বউ দেখে বিদায় হও। তা না করে বউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যের গল্প শুরু করে দিয়েছে।
এনাদের মধ্যে কেউ একজন তামাক, জর্দা, খয়ের দিয়ে পান খেয়েছে। ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারপাশ। কিন্তু সেই ঘ্রাণে ক্ষুধার্ত দৃতীর পেটের ভেতর মোচড় দিচ্ছে। সে বারবার উঁকি দিয়ে পরিচিত কাউকে খুঁজছে। কিন্তু ভরা বিয়েবাড়িতে পরিচিত মানুষকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
দৃতীর সাথে দানিয়া ও দোয়েল এসেছে। কিন্তু ফাজিল দুটো যে কোথায় ডুব দিয়েছে কে জানে!
_______________
রাত দশটা পেরিয়েছে। শীতের দিন রাত দশটাকে গভীর রাত বিবেচনা করা হয়৷ যদিও এতো মানুষের ভীড়ে কারো শীত অনুভব হচ্ছে না।
বৃদ্ধ মাসুম বিল্লাহ আঙ্গিনার মধ্যখানে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছেন। খানিক দূরের কুয়াশার দিকে তাকিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীরস্বরে ডাক দিলেন,
‘সিরাজ?’
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো সিরাজ সাহেব। বাবা মারা যাওয়ার পর সিরাজের আপন বলতে একমাত্র চাচা রয়েছেন। যদিও আজকাল বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন মাসুম বিল্লাহ। তবুও যৌবনের তেজ কিছুটা এখনও অমলিন। বাড়ির সকলে উনাকে বিশেষ সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে।
অর্ণিতের বিয়ের আলোচনায় তিনি যখন বললেন,
‘আমার নাতির বিয়ে কোনো দোকানপাটে হবে না। বিয়ে আমার বাড়ি থেকেই হবে।’
মুখের উপর না করতে পারেনি সিরাজ সাহেব। চাচার কথা মেনে একমাত্র ছেলের বিয়ের আয়োজন করেছে কুমিল্লার এই গ্রামের বাড়িতে।
চাচার কাছে দাঁড়িয়ে সিরাজ সাহেব বিনয়ী স্বরে জানতে চাইল,
‘আপনার কিছু লাগবে, চাচা?’
‘তোমার ছেলে কোথায়?’
‘এখানেই কোথাও একটা আছে। রান্নার আয়োজনের তদারকি করছে বোধহয়।’
‘ওকে নতুন বউয়ের কাছে পাঠাও। রাত অনেক হলো। খাওয়াদাওয়া কিছু হয়েছে কিনা খোঁজ নেও। আমি শুতে যাচ্ছি।’
‘জ্বি, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
বাবার আদেশে বাইরের সকল কাজের তদারকি রেখে বর-বউয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটিতে এসে অর্ণিত বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। এখানে এতো লোকজন গিজগিজ করছে কে জানত! যেকজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তাদের কাউকে অর্ণিত চেনে না। কাঠের দরজায় আঙ্গুল দিয়ে ঠকঠক শব্দ করা মাত্র সকলের মনোযোগ নিবদ্ধ হলো অর্ণিতের দিকে৷ শহরে বড় হয়ে উঠা এই ছেলেটিকে বিয়ের সুবাদে আজকেই সবাই চিনে রেখেছে।
দরজায় বরকে দেখে ভাবি মহলে একটুখানি হাসি তামাশা শুরু হলো। কেউ মুখ টিপে হাসছে, কেউবা আরেকজনকে চিমটি কেটে অর্ণিতকে দেখিয়ে দিচ্ছে। ভীড়ের ভেতর থেকে কেউ একজন বলল,
‘এই বর এসেছে। এবার সকলে বের হ। ওদের আর কতোক্ষণ জাগিয়ে রাখবি! চল, চল সবে।’
হা হা হি হি করে হাসতে হাসতে লাইন ধরে সকলে বেরিয়ে গেল। অর্ণিত ধৈর্য নিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ঘর ফাঁকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে দরজা বন্ধ করে দিল।
তা দেখে একপ্রকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচল দৃতী। অন্যদিকে অর্ণিতকে দেখে চাপা অস্বস্তিও হচ্ছে।
অর্ণিত এগিয়ে এসে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসতেই খাটে আবারও সেই বিচ্ছিরি ক্যাচক্যাচ শব্দ হলো। হকচকিয়ে গেল অর্ণিত। তা দেখে ঘোমটার আড়ালে হাসল দৃতী। ওর হাসি দেখতে না পেলেও অর্ণিত আন্দাজ করে নিল। নিজেও স্মিত ঠোঁট হেসে দৃতীকে প্রশ্ন করল,
‘তুমি চাইলে ঘোমটা তুলে আরাম করে বসতে পারো।’
দৃতী যেনো এই কথা শোনার অপেক্ষায় ছিল। তাৎক্ষণিক ঘোমটা নামিয়ে নিয়ে পা সোজা করে আসন পেতে বসল।
‘তোমার কি খুব শীত করছে?’
‘নাহ। আমি ঠিক আছি।’
‘বাইরে খাওয়ার জন্য ডাকছে। তুমি কি এই পোশাক পরে খাবার খেতে যাবে?’
দৃতী সামান্য ইতস্তত করে বলল,
‘লেহেঙ্গাটা অনেক ভারী।’
‘এটা বদলে অন্য কিছু পরে নেও। তোমার লাগেজ দিয়ে গেছে?’
‘হ্যাঁ। এখানে কোথাও রাখা আছে৷ দেখতে হবে।’
‘তোমার উঠতে হবে না। বসো, আমি দেখছি।’
ঘরের এককোনায় দুটো লাগেজ দেখা যাচ্ছে। একটি অর্ণিতের, অন্যটি অপরিচিত।
‘এটা তোমার?’
‘হ্যাঁ, ওটাই।’
‘ঠিক আছে। তুমি চেঞ্জ করে নেও। এখানে এ্যাটাচড বাথরুম নেই। ঘরেই চেঞ্জ করে নেও, আমি বাইরে যাচ্ছি।’
‘হাত মুখ ধুয়ে নিলে ভালো লাগত।’
‘আচ্ছা, দাঁড়াও। মাকে ডেকে দিচ্ছি। ওয়াশরুম একটু দূরে আছে।’
দৃতী মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। লাগেজ থেকে একটি শাড়ি বের করে অপেক্ষা করতে লাগল নতুন শাশুড়ির। কিছুক্ষণের মধ্যে তানিয়া এসে মিষ্টি হেসে বলল,
‘গ্রামের বাড়ি বুঝোই তো অবস্থা। টানা বারান্দার শেষ মাথায় টিউবওয়েল। ঢাকা গেলে আর সমস্যা হবে না। আমাদের বাড়িতে এ্যাটাচড বাথ আছে৷ আপাতত দুটোদিন ম্যানেজ করে নেও।’
টিউবওয়েল পাড় টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। উপরের অংশ ফাঁকা। খোলা আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে তারা। একপাশে হেলে আছে এক ফালি চাঁদ। খানিকটা দূর হতে ভেসে আসছে আত্মীয় মহলের কোলাহল। এমন শোরগোলের মাঝে পোশাক পাল্টাতে বিব্রতবোধ করছে দৃতী।
তানিয়া হয়ত বুঝতে পারল। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘দানিয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমাকে হেল্প করবে।’
দানিয়া, দোয়েল খবর পেয়ে ছুটে এলো। শাড়িতে হাজারখানা সেফটিপিন লাগানো হয়েছে। সেগুলো খুলতে গিয়ে তিন বোনের নাভিশ্বাস দশা। দোয়েল মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে আলো দেখাচ্ছে। দানিয়া খুব সাবধানে সেফটিপিন খুলছে। মূর্তিমান দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া দৃতীর কোনো কিছু করার নেই।
পিঠের দিকে কোমরের অংশে লাগানো সেফটিপিন খুলতে খুলতে দানিয়া বলল,
‘দুলাভাইয়ের উচিত আমাদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক দেওয়া।’
দৃতী জানতে চাইল,
‘কেনো?’
‘দুলাভাইয়ের কাজ আমরা দুজন করে দিচ্ছি, তাই।’
দৃতী ঘাড় ঘুরিয়ে দানিয়ার দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘মারব এক থাপ্পড়।’
দোয়েল কিছু বুঝতে না পেরে মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘আমি কিছু বুঝিনি। আমাকেও বুঝিয়ে বলো৷ দুলাভাইয়ের কোন কাজ আমরা করছি?’
‘শাড়ির সেফটিপিন খোলা। বিয়ের রাতের সবচেয়ে কঠিন কাজ।’
‘দানিয়া, খুব পাকনামি হয়ে যাচ্ছে না? বড্ড বাড় বেড়েছিস। এতোক্ষণ কোথায় ছিলি তোরা? আমি খুঁজে খুঁজে হয়রান। অপরিচিত জায়গা এদিক সেদিক ঘুরবি না।’
‘ড্রয়িংরুমে ছিলাম। তোমার শাশুড়ি একগাদা নাস্তা দিয়ে বসিয়ে রেখেছিল। ওখানে ভাইয়ার কাজিনদের সাথে গল্প করছিলাম।’
দানিয়া টিউবওয়েল চেপে দিচ্ছে, দোয়েল এখনও আলো দেখাচ্ছে। ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুতে গিয়ে গা শিউরে উঠছে দৃতীর। নতুন শাড়ি গায়ে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে ফিরে এলো ঘরে।
অর্ণিত ঘরেই ছিল। দানিয়া ও দোয়েলকে দেখে বলল,
‘তোমরা ডিনার করেছো?’
‘নাহ। একটু আগেই নাস্তা করেছি। আমাদের ক্ষুধা নেই।’
‘প্রচুর ঠান্ডা পড়েছে। বেশি রাত জেগো না৷ খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে। চলো, আমাদের সাথে খাবে।’
সবাই মিলে ঘর ছাড়ার উদ্দেশ্যে বের হতেই যাচ্ছিল, তানিয়া এলো ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে।
‘বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। ওদিকে অনেক ভীড়। পাড়া প্রতিবেশীরা খেতে বসেছে। তোমরা এখানে বসেই খেয়ে নেও। যা লাগে আমি এনে দিচ্ছি।’
বিছানার উপর পুরাতন ওড়না বিছিয়ে দিয়ে ওরা খেতে বসল। প্লেট হাতে নেওয়ার আগে দৃতী বলল,
‘মা, আপনি খেয়েছেন?’
দৃতী অন্য কাউকে মা ডাকছে শুনতে কিছুটা অদ্ভুত ঠেকল দানিয়া ও দোয়েলের কানে৷ এতোদিন ওরা মা বলতে একজনকেই চিনেছে৷ আজকে হঠাৎ করে দৃতী অন্য কাউকে মায়ের স্থান দিল। এতোদিন যাকে মা ডেকেছে এখন আর তাকে হরহামেশাই মা ডাকতে পারবে না। সপ্তাহে এক দু’বার হয়ত মা ডাকার সুযোগ পাবে। তাও আবার সরাসরি নয়, মোবাইল ফোনে। অথচ কাল পর্যন্ত অপরিচিত একজন মানুষকে এখন থেকে দিনরাত মা সম্মোধন করবে দৃতী।
দানিয়ার চোখ জোড়া আর্দ্র হয়ে এলো। পাছে কেউ দেখে না ফেলে, সেই ভয়ে মুখ নিচু করে প্লেট হাতে তুলে নিল।
দৃতীর কণ্ঠে মা ডাক শুনে আরেক জোড়া চোখ আর্দ্র হয়েছে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তানিয়া বলল,
‘বাইরে ননদ, জায়েরা আছে৷ উনাদের সাথে খেতে বসব। তোমরা খেয়ে নেও। কালকে সকালে আবার তোমার বাবার বাড়ির লোকজন তোমাদের নিতে আসবে৷ টানা জার্নি করার জন্য বিশ্রাম দরকার। খাওয়াদাওয়া শেষে যে যার রুমে শুয়ে পড়ো৷’
দানিয়া ও দোয়েলকে পাশের একটি ঘরে শুতে দেওয়া হলো। বাড়ির অন্য মেয়েরা মেঝেতে তোশক পেতে ঘুমালেও দানিয়া ও দোয়েলের জন্য পুরো বিছানা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিছানায় বিস্তর স্থান এখনও ফাঁকা। চাইলে কয়েকজন শুতে পারবে। কিন্তু মেহমান যাতে আরাম করে শুতে পারে, সে কারণে ওরা কেউ বিছানায় না শুয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো। শুরুতে দানিয়ার খানিকটা অস্বস্তি হলেও, দোয়েল যখন ঘুমের মধ্যে ওকে জড়িয়ে ধরল তখন নতুন বিছানাটিকে নিজের ঘরের বিছানার মতোই মনে হলো।
পোশাক পাল্টে ফেললেও দৃতীর মাথার খোঁপা এখনও অক্ষত রয়েছে৷ ঘরের চারদিকে তাকিয়ে কোনো ড্রেসিং টেবিল দেখতে না পেয়ে দৃতী চিন্তায় পড়ে গেল। একগাদা ববি পিন মাথায় নিয়ে সে কীভাবে ঘুমাবে?
দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে দৃতীকে চিন্তিত দেখে অর্ণিত জানতে চাইল,
‘কোনো সমস্যা হচ্ছে?’
দৃতী ভেবে পেল না কি জবাব দিবে। পুরুষ মানুষ মেয়েলি ঝামেলা নিশ্চয়ই বুঝবে না। তাছাড়া ওরা দুজন ততোটাও পরিচিত নয়। তাই অর্ণিত ব্যাপারটি কীভাবে নিবে, তা নিয়েও সংশয় রয়ে যায়। আর কোনো উপায়ও দৃতীর কাছে নেই। অগত্যা সমস্যার কথা জানাতে হলো।
‘খোঁপা খুলতে হতো৷ কিন্তু ঘরে কোনো আয়না দেখছি না।’
‘খোঁপা খুলতে আয়না লাগবে কেনো?’
‘পার্লার থেকে চুল বেঁধে দিয়েছিল। অনেকগুলো ববিপিন সেট করা আছে।’
‘এসো, আমি খুলে দিচ্ছি।’
‘জ্বি, আপনি?’
‘কেনো? তোমার কি মনে হচ্ছে আমি খুলতে পারব না?’
‘সেরকমটা নয়।’
‘তবে বসো এখানে।’
বিছানার একপাশে পা ঝুলিয়ে বসল দৃতী। পেছনে দাঁড়িয়ে খুব সাবধানে ওর চুল থেকে ববিপিন খোলার কাজটি করছে অর্ণিত। প্রায় আধাঘন্টা সময় ব্যয় করে দৃতীর চুল থেকে সবগুলো পিন বের করে অর্ণিত দাঁড়াল দৃতীর সামনে৷ মুঠোভরতি ববিপিন দৃতীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘এই নেও তোমার ববিপিন। মোট চল্লিশটি পিন উদ্ধার হয়েছে তোমার খোঁপা থেকে।’
দৃতী হাত বাড়িয়ে পিনগুলো নিয়ে লাজুক হাসল।
গ্রামের বাড়িতে বাসরঘর খুব একটা ঘটা করে সাজানো হয়নি৷ কাজিনরা কিছু ফুল, জরি নিয়ে এসেছিল কিন্তু অর্ণিত মানা করে দিয়েছে। ঘর সাজানো বলতে বিছানা ও বালিশে নতুন চাদর জড়ানো হয়েছে। তাই ফুল সরিয়ে বিছানা পরিষ্কারের ঝামেলা পোহাতে হলো না।
বিছানার একপাশে শুয়ে অর্ণিত বলল,
‘বাতি নিভিয়ে দিব, নাকি জ্বালানো থাকবে?’
‘নিভিয়ে দিন।’
‘একটা কম্বলে হবে? ঠান্ডা লাগলে আরেকটা এনে দেই। আলমারিতেই আছে।’
‘এটা দিয়েই হবে।’
‘ঘুমাবো নাকি অন্য কিছু করার প্ল্যান আছে?’
হঠাৎ এমন কথা শুনে লজ্জায় মরি মরি দশা দৃতীর। অর্ণিতের মুখের দুষ্টু হাসি হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে কম্বল নিয়ে নাক মুখ ঢেকে নিজের লজ্জা আড়াল করে বলল,
‘ঘুমাবো।’
‘অন্য কিছু করতে চাইলেও এই বিছানায় সেটা সম্ভব না। একটু নড়াচড়া করতেই যেভাবে ক্যাচক্যাচ শব্দ করতেছে! আমরা কিছু-মিছু করার আগেই পাড়া জুড়ে শোরগোল পড়ে যাবে।’
লজ্জাবতী দৃতী অন্যদিকে পাশ ফিরে শুয়ে বালিশে মুখ চেপে হাসি আটকে বলল,
‘আপনাকে দেখে ভদ্র মনে হলেও আপনি ভীষণ পাজি আছেন।’
অর্ণিত শব্দ করে হেসে ফেলল।
‘কারো দিকে পিঠ করে শুতে নেই। এদিকে মুখ ফিরে শোয়।’
‘লাইট অফ করে দিন।’
অর্ণিত হাত বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দিল। অন্ধকারে দৃতী নিশ্চিন্ত মনে অর্ণিতের দিকে মুখ করে শুলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু অনতিদূরের মানুষটিকে সহজে অনুভব করা যাচ্ছে। দৃতীর সেই অনুভূতি বাড়িয়ে দিতে অর্ণিত তার হাতটি রাখল দৃতীর হাতের উপর। তিরতির করে কেঁপে উঠল দৃতীর সারা দেহ। কিন্তু সে নিশ্চুপ রইল। নিচু স্বরে অর্ণিত ডাকল,
‘দৃতী?’
‘জ্বি?’
‘আমাকে তুমি বলে ডেকো। আপনি শুনলে অনেক দূরের কেউ মনে হয়।’
‘ঠিক আছে।’
কিছুপল নীরবতায় কাটল। বাইরের কোলাহল ছাপিয়ে দুজনের কানে বাজছে একে অপরের গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ। অর্ণিতের হাতটি ধীরে ধীরে দৃতীর হাত হতে স্থানচ্যুত হয়ে জায়গা দখল করে নিল দৃতীর কোমরে। হালকা শক্তি প্রয়োগ করে অর্ণিত ওকে টেনে নিল নিজের কাছে। নিজেকে সামলে নিতে আপনা থেকেই দৃতীর হাত চলে গেল অর্ণিতের বলিষ্ঠ বুকে। অর্ণিত গাঢ় স্বরে ডাকল,
‘দৃতী?’
‘হুম?’
‘গুড নাইট।’
পুরুষালি ঘ্রাণে বুদ হয়ে চোখ বুজে নিয়ে দৃতী জবাব দিল,
‘গুড নাইট।’
চলবে….
#অক্ষরময়ী