প্রিয় পরিনতি পর্ব-১১+১২

0
18

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১১+১২
লেখক: তানভীর তুহিন!

আবিদ বাইক চালাচ্ছে বেপড়োয়া ভাবে। চোখগুলো লাল হয়ে আছে। পানিও গড়িয়ে পড়ছে চোখ বেয়ে। ঠোটের কোনে একটা জ্বলন্ত সিগারেট। বরাবরের মতো পারদর্শিতার সাথে ধোয়া ত্যাগ করছে আবিদ। বাইকটা একটা মদের দোকানের সামনে থামালো। দোকানে ঢুকে বললো “তিন বোতল উইস্কি দিন!”
তিন বোতল উইস্কি প্যাক করে দেওয়া হলো। আবিদ প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিতেই খেয়াল হলো মানিব্যাগটা আসলে কোথায়। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে আসলো। বাইক চালিয়ে সোজা বাসার পার্কিং-এ চলে আসলো। বাইক পার্ক না করেই বাইকটা ধুম করে ফেলে দিলো। ফলে বাইকের লুকিং গ্লাসগুলো ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো। লিফট থেকে নেমে সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বাসার কলিংবেল চাপলো। রিনা বেগম এসে দরজা খুললো। ছেলেকে দেখেই বুঝতে পারছে যে ছেলে মোটেই স্বাভাবিক নয়। চুলগুলো এলোমেলো, ঘেমে নেয়ে গেছে, চোখ রক্তবর্ন, শার্টের ইন খোলা, আর গায়ে কোর্ট ও নেই। রিনা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, ” কীরে আবিদ তোর এই অবস্থা কেনো? ”
– ” আমার রুমের দরজায় আমি যাতে একটা টোকার শব্দও না পাই! ” কথাটা বলেই আবিদ তার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। রিনা বেগম কঠোর গলায় জিজ্ঞেস করলেন!
– ” আবিদ কী হয়েছে? ”
– ” আমায় একা ছেড়ে দাও! ”

কথাটা বলেই আবিদ রুমে ঢুকে সজোরে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। রিনা বেগম ভালো করেই জানে যে তার ছেলে এখন ঠিক কতটা রেগে আছে। কিন্তু আবিদ এভাবে রেগে গেলো কেনো? এখন তো ডাকাও যাবে না। ঘর ভাঙচুর করা শুরু করবে তাহলে। রিনা বেগম নিরুপায় হয়ে চিন্তা আর মনে একটা স্পষ্ট প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়েই সংসারের কাজে মন দিলেন।

আবিদ রুমে ঢুকেই সামনের দেওয়ালে নিজের একটা হাসিমুখের ছবি দেখতে পেলো। পাশে একটা ফুলের টব ছিলো। ফুলের টবটা ছুড়ে মারলো ছবিটার দিকে। মুহুর্তেই ফুলের টবটা আর বাধানো ছবির কাচ, ফ্রেম গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছে আবিদের। কখনও আবিদের এরকম কষ্ট হয় নী। মেঘ কীভাবে পারলো এভাবে বলতে? একটাবার বোঝার চেষ্টা করলো না? ও আমায় বলছিলো যে আমার দায়িত্বহীনতার কারনে ওর ভাই এরকম করেছে! আবিদ আর ভাবতে পারে না। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে টানা শুরু করে। নিচে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ধোয়া ছাড়তে থাকে।

মেঘ কোনো মতে বাসায় এসেছে। মেঘের পা দুটো থরথর করে কাপছে। নিজেকে রুমে বন্ধ করে নিয়ে চিৎকার করে কেদে ফেললো মেঘ। ” এতোদিন ধৈর্য্য ধরে। আজ কেনো অকারনেই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেলি? ” মেঘের চিৎকার শুনে ওর মা দৌড়ে এসে ওর দড়জায় ধাক্কা দিতে দিতে বলে, ” এই মেঘ কী হইসে? কাদছিস কেনো? দরজা খোল মেঘ! ” মেঘ কাদতে কাদতেই বলে, ” একটু একা থাকতে দাও মা! ”
– ” কী হইসে? কাদছিস কেনো? কী হইসে ক্যাফেতে রাতুল তোকে কিছু বলছে? ”
– ” মা প্লিয আমায় একটু একা ছাড়ো! ” কথাটা বলেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে মেঘ। মেঘের মা আর কিছুই খুজে পায় না বলার জন্য। তাই এই আশা নিয়েই চলে যায় যে কাদা শেষ করে হয়তো কিছু বলবে। মেঘ অনবরত কেদে যাচ্ছে। আর ভাবছে কীভাবে করতে পারলো সে এটা? শুধু একটাবার ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলেই হতো যে সকালে কী হইছিলো? সেটা না করে কী করলাম এটা আমি? কথাগুলো ভাবতেই মেঘের আত্মাটা চিৎকার করে উঠছে। কী করলো এটা? মেঘ কান্না করতে করতেই তামান্নাকে ফোন দেয়!

তামান্না বসে বসে নুডুলস খাচ্ছিলো। মেঘ ফোন দিতেই রিসিভ করে হতভম্ব হয়ে গেলো তামান্না। ওপাশ থেকে শুধুই ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে। কে কাদছে? অল্পকিছুতে কাদার মানুষ তো মেঘ না। তাহলে কী হলো?
– ” এই মেঘ। মেঘ কী হইছে? মেঘ! ” কথাগুলো বলতে বলতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো তামান্না!

মেঘ চিৎকার দিয়ে কাদতে কাদতে বলছে, ” আপু সব শেষ আপু। আপু আবিদ… মেঘ কান্নায় ভেঙে পড়ে আর কিছুই বলতে পারে না। কারন আবিদ আর মেঘের মধ্যে ঝগড়া প্রচুর হয়েছে। কিন্তু তা কোনো বাইরের লোক কখনো জানে নী বড়জোর জানলে তামান্না,জুলফিকার কিংবা তন্বী জানছে। এমনকি ওরা দুজন দুজনকে কখনও অপমান করে কথা বলে নী। এমনকি এই তিনবছরে আবিদ কখনও তামান্নাদের সামনেও মেঘকে তুই করে বলে নী। কিন্তু আবিদ মেঘকে তুই করে বলতো। যখন রেগে যেতো, তা চ্যাটে,ফোনে কিংবা যখন শুধু দুজন একলা থাকতো তখনই। আর সেই আবিদ আজ ভরা ক্যাফেতে মেঘের সাথে এভাবে কথা বলেছে মানে আবিদ আসলেই খুব কষ্ট পেয়েছে। মেঘ কান্নাটা কিছু নিয়ন্ত্রনে এনে কিছু না লুকিয়ে সবটা নিরপেক্ষভাবে বলে তামান্নার কাছে। তামান্না এটা শুনেই পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে মাকে বলে, ” আমি আবিদদের বাসায় যাচ্ছি। ফিরতে দেড়ী হবে! “। তারপর মেঘকে বলে,” কী করেছিস এসব? আবিদকে এতটুকুও চিনিস না নাকি? ”
– ” আপু আমার হুশ ছিলো না। আমি মেনে নিতেই পারছিলাম না যে আমার ভাইয়া এভাবে না বলে চলে যাবে! ”
– ” শোন তুই যেভাবেই হোক আবিদের সাথে এখন ফোনে কথা বল! ”
– ” আপু ও রেগে ফোনটা ক্যাফেতেই ভেঙে চলে গেছে! ”
– ” শোন আমি তোকে একটু বাদে ফোন দিচ্ছি। আমি অলরেডি গাড়িতে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। আমি ইশুর সাথে কথা বলে জানাচ্ছি তোকে! ”
– ” আচ্ছা আপু! ”

ফোনটা রাখতেই যেনো মেঘের কান্না বেড়ে যায়। কেদেই যাচ্ছে মেঘ কিছুতেই মানতে পারছে না যে ওদের সম্পর্কে এ দিনটাও দেখার বাকি ছিলো!!

তামান্না ইসুর ফোনে ফোন দিলো।
– ” হ্যালো ইশু আবিদ কই রে? ”
– ” ভাইয়া তো একটু আগে বের হইছে। এই প্রায় আধাঘন্টা হবে! ”
– ” কি বলিস? কোথায় গেছে জানিস? ”
– ” না কিন্তু ভাইয়াকে স্বাভাবিক লাগছিলো না। আমি ডাকলাম শুনলো না! ”
– ” শোন মেঘ আর আবিদের মধ্যে খুব বড় ঝগড়া হইসে। আবিদ বাসায় ঢোকার সাথে সাথেই তুই মেঘকে ফোন দিয়ে আবিদের কাছে দিবি। ঠিক আছে! ”
– ” কীহ? কিসের ঝগড়া? ”
– ” এতোকিছু বলার টাইম নাই। তোকে যেটা বললাম সেটা কর। আমি তোদের বাসায় আসতেছি বাকিটা এসে বলবো! ”
– ” আচ্ছা ঠিকাছে! ”

তামান্না মেঘকে ফোন দিয়ে বললো যে আবিদ বাসায় নেই। বাসায় এলেই ইসু ফোন দিয়ে আবিদের কাছে দিবে। তখন যাতে মেঘ আবিদের সাথে কথা বলে আবিদকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।মেঘ শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো, ” বাসায় নেই মানে? কোথায় গেছে? ”
– ” দেখ আমিও জানি না। তুই বরং অপেক্ষা কর বোন। আমি তোর পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না! ”
– ” খোদা যাতে সবটা ঠিক করে দেয় আপু! আর সহ্য হচ্ছে না! ”

আবিদ ওর একটা বন্ধু ড্রাগস রাখে তার কাছেই এসেছে। এসে বললো, ” খুব কষ্ট আর রাগ হচ্ছে। জেগে থাকলে নিজেকেই খুন করে ফেলবো। প্রচুর ঘুমানোর মতো কিছু একটা দে! “। ওর বন্ধু একটা সিরিঞ্জ লোড করে দিয়ে বললো,” নে বাসায় যেয়ে মেরে নিস এটা। শান্তির ঘুম হবে! ”
– ” আমি এসব মারতে পারি না। তুই ই মেরে দে! ”
– ” দেখ গা কাপবে কিন্তু বাসায় যেতে পারবি তো? ”
– ” কলিজা কাপছে আমার।তুই মার! ”

হাইডোজের একটা ড্রাগস নিজের রক্ত মিশিয়ে মদের দোকানে গেলো আবিদ। ড্রাগস ওর জেগে থাকার উপরে আয়ত্ত করে নিয়েছে। দৃষ্টি কিছুটা আবছা লাগছে। বাসা থেকে বের হবার সময় মদ কেনার জন্য টাকা নিয়ে এসেছে। দুই বোতল উইস্কি নিয়ে বাসায় এলো আবিদ। কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই ইসু মেঘের কাছে ফোন দিলো। ইসুর নাম্বার দেখেই মেঘ ফোন রিসিভ করে পাগলের মতো বলা শুরু করলো, ” আবিদ ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি নাই। আমি হুশেই ছিলাম না। মাফ করে দাও প্লিয আবিদ! এই আবিদ! ”
– ” ভাবি আমি ইশু। ভাইয়া আসছে মনে হয় আমি দিচ্ছি দাড়াও! ”

ইসু দড়জা খুলে দেখলো আবিদ এসেছে। একদম বদ্ধ উন্মাদ লাগছে আবিদকে। ইসু ফোনটা আবিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ” ভাইয়া নে ধর মেঘ ভাবি ফোন করছে। কান্না করতেছে খুব! ”
– ” কে মেঘ? আমি মেঘ নামের কাউকে চিনি না। আমার জীবনে মেঘ নামের কারো অস্তিত্ব নেই। এর পর থেকে এই বাসায় যে মেঘের নাম তুলবে তাকে ক্ষুন করবো আমি! ” চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বলে উঠে আবিদ। আসলে ওই হাইডোজের ড্রাগসের ফলে আবিদের হিতাহিত জ্ঞানই নেই। আবিদের এমন রুপ দেখে ভীষন ভয় পেয়ে যায় ইসু। আর ফোনের ওপাশ থেকে আবিদের মুখে এই কঠোর কথাগুলো শুনে মেঘের কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। চোখ বন্ধ করে ফেলে মেঘ চোখের পানিগুলো বেয়ে নিচে পড়ে যায়। ফোনটা পাশে রেখে কাদতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে মেঘ। এ কান্না যেনো থামবেই না। কি থেকে কী হয়ে গেলো? কেনো হলো এগুলো? আবিদ আমি পারবো না তোমায় ছাড়া বাচতে! আবিদ আমি পারবো না তোমায় ছাড়া নিজের জীবন সাজাতে! চিৎকার দিয়ে কেদে ফেলে মেঘ!

আবিদ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মদের বোতলের ছিপি খুলে বোতলে চুমুক দেয়। পানি আর সোডা মেশানো ছাড়া মদগুলো ঢক ঢক করে গিলতে থাকে আবিদ। ঝাঝে গলাটা ছিলে যাচ্ছিলো আবিদের, মদের ঝাঝে কপালে ভাজ পড়ে গেছে কিন্তু আবিদ থামলো না। উন্মাদের মতো দু বোতল মদই শেষ করায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। উদ্দেশ্য একটাই মদ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে আর কষ্ট হবে না।

এদিকে তামান্না জ্যামে আটকে যাওয়ায় আবিদদের বাসায় পৌছাতে লেট হয়ে যায়। রাস্তায় মেঘের কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারে যে আবিদ কী কী বলেছে মেঘকে নিয়ে। তামান্না মেঘকে আশ্বস্ত করে যে সে সব ঠিক করে দিবে। তামান্না আবিদদের বাসায় যখন পৌছায় তখন আবিদের শরীরে একটা হাইডোজের ড্রাগ লিকুইড, আর দু বোতল মদ দৌড়াচ্ছিলো। আসলে তামান্না আবিদের বাসায় যেতে বড্ড দেড়ি করে ফেলে।।

চলবে!
গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১২!
লেখক: তানভীর তুহিন!

তামান্না যাবার আগেই আবিদ বেহুশ হয়ে যায়। কারন ওরকম হাইডোজের ড্রাগস আর সাথে দুই বোতল মদ এর নেশা আবিদের শরীর নিতে পারে নী।কারন আবিদ এসব কখনও ধরে নী।শুধু সিগারেটেই সীমাবদ্ধ থাকতো ওর নেশা। আর আবিদ খুনাক্ষরে টের ও পায় নী ওই সিরিঞ্জে এমন হাইডোজের ড্রাগ থাকবে। ও বুঝেছিলো ঘুমের জন্য কোনো কিছু হবে হয়তো তাই বডিতে ইনজেক্ট করে নিয়েছিলো। এদিকে তামান্না আবিদের দড়জা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে সব নিস্তব্ধ। তামান্নার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। বারবার শুধু আত্মহত্যার কথা মাথায় আসছিলো কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?আবিদ যথেষ্ট শক্ত মনের মানুষ, ও তো এতো সেন্টিমেন্টাল না!

তামান্না ইসুকে দিয়ে নিচ থেকে দাড়োয়ান ডাকালো।আর দাড়োয়ানকে দিয়েই দরজা ভাঙানো হলো। রুমে ঢুকেই আবিদকে দেখতে পেলো ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। রিনা বেগম আবিদ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।তামান্না রুমে এগিয়েই দেখতে পেলো দুটো মদের বোতল পড়ে আছে। কিন্তু মদ খেয়ে তো এতো তাড়াতাড়ি বেহুশ হবে না। তাহলে কী স্লিপিং পীল খেয়েছে? চারপাশটা দেখলো কিন্তু স্লিপিং পীলের কোনো খোসা দেখতে পেলো না। ইসু আর তামান্না মিলে আবিদকে খাটে শোয়ালো। তারপর তামান্না ডাক্তার ফোন দিলো। এই ডাক্তার ওদের দুই ফ্যামিলিকেই ভালোভাবে চেনে। আর আবিদের বাবা রাশেদ তালুকদারেরও খুব ভালো বন্ধু। তামান্না সব খুলে বলাতে ডাক্তার সাহেব কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন।ডাক্তার তামান্নাকে বলে, ” শোনো আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি। আর ওর শরীর কী ঘামছে? ”
– ” হ্যা আঙ্কেল। প্রচুর ঘামছে! ”
– ” ফ্যানটা হাইস্পিডে ছেড়ে দিয়ে। ওর পাগুলো ম্যাসাজ করতে থাকো। আমি আসছি! ”

তামান্না ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ফ্যান ছেড়ে আবিদের পাগুলো ম্যাসাজ করতে থাকলো।

প্রায় ১০ মিনিট পর ডাক্তার সাহেব এলো সাথে দুজন কম্পাউন্ডার নিয়ে। রিনা বেগম সাথে দুজন কম্পাউন্ডার দেখে আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন, ” ভাই আবিদের যাতে কিছু না হয়। ওর মারাত্মক কিছু হলে হসপিটালে নিয়ে চলুন! ”
– ” ভাবি আমায় একটু দেখতে দিন! ”

ডাক্তার আবিদের নার্ভ চেক করতে গিয়ে দেখলো কিছুটা যায়গা ফুলে আছে। তারমানে আবিদ শরীরে কিছু ইনজেক্ট করিয়েছে তার সাথে দুই বোতল মদ খেয়েছে? ডাক্তার তাড়াতাড়ি একটা পাইপ এর মতো নল বের করলো। আর রিনা বেগমকে বললো ভাবি বড় একটা গামলা নিয়ে আসুন। রিনা বেগম দৌড়ে গামলা আনতে চলে গেলো। তারপর ডাক্তার আবিদকে একটা ইনজেকশন পুশ করালো যার ফলে ওই ড্রাগসের প্রভাব মাত্রাটা কমে আসবে।ডাক্তার আগে থেকেই এমন কিছুটা সন্দেহ করেছিলো তাই ল্যাব থেকে আসার সময় এসেন্সিয়াল এক্সারসরিজ নিয়ে এসেছিলো। রিনা বেগম গামলা নিয়ে আসতেই। ডাক্তার সাহেব কম্পাউন্ডারদের সাহায্যে আবিদকে আধশোয়া করে গ্লাভস পড়ে আবিদের মুখের মধ্যে থেকে গলা অবধি পাইপটা নামিয়ে পাম্প করে। ফলে আবিদ বমি করে দেয়। তারপর ডাক্তার সাহেব রিনা বেগমকে বলে, ” ভাবি দুইটা লেবু চিপে নিয়ে আসেন। কোনো পানি মিশাবেন না! ”

একটুবাদে রিনা বেগম লেবুর রস নিয়ে আসে। ডাক্তার আবিদের মুখ চেপে চেপে প্রায় অর্ধেক গ্লাস লেবুর রস ভেতরে ঢোকাতে সক্ষম হয়। রিনা বেগম বলে উঠে, ” ভাই এসব বাসায় না করে হসপিটালে নিয়ে চলুন! ”
– ” না ভাবি। আবিদকে হসপিটালে নেওয়া যাবে না। তাহলে রাশেদের মান-সম্মান নষ্ট হবে। আর আমি আমার বন্ধু রাশেদকে যতটুকু চিনি ও মানতে পারবে না যে ওর ছেলে ড্রাগস নিয়েছে। শুধু শুধু আবিদ আর ওর বাবার এতো ভালো সম্পর্কটা নষ্ট করবেন না। রাশেদকে আজকে রাতের ব্যাপারে কিছু বলার প্রয়োজন ই নেই! ”

ড্রাগসের কথা শুনে তামান্না,ইসু,রিনা বেগম যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। আবিদ আর ড্রাগস?

– ” ওর আব্বুতো কাজের জন্য শহরের বাইরে গেছে। তিনদিনবাদে আসবে। আমি কিছু বলবো না কিন্তু ওর মারাত্মক কিছু হয় নী তো?
– ” হয় নী তবে হতে পারতো। যদি ওই ড্রাগসটা আবিদের শরীরে আরো প্রভাব ফেলতো। কারন ও ড্রাগ এডিক্ট না তো তাই ওর নার্ভসগুলো অতোটা ড্রাগস নিতে পারে নী তার উপরে দুই বোতল মদ। ধীরে ধীরে ওর নার্ভসগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিতো, কিছু নার্ভস বাজে ভাবে ড্যামেজড হতো। ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করতো। কিন্তু এখন চিন্তার কোনো কারন নেই দুই-তিন ঘন্টার মধ্যে আবিদের সেন্স আসবে। আর এই ড্রাগসের ব্যাপার বাইরে যাতে না যায়। পুলিশ কেস হয়ে যাবে যেটা ওর বাবা আর ওর মান-সম্মান নষ্ট করে দিবে! ”
– ” আচ্ছা! ”
– ” কিন্তু আবিদ আজ ড্রাগস আর এলকোহল কেনো নিলো? ”

পাশ থেকে তামান্না সংক্ষিপ্ত করে সবটা বলল!

– ” শুনুন ভাবি। আবিদ যে ড্রাগসগা নিয়েছে সেটা মোস্ট এডিক্টিভ একটা ড্রাগ খেয়াল রাখবেন যাতে ও এটা আর না নিতে পারে। সমস্যাটা ওর ব্যাক্তিগত তাই আমি মাঝে ঢুকছি না। ওর শরীর মদ সহ্য করতে পারলেও এই ড্রাগস দ্বিতীয়বার সহ্য করবে না।আমি চলে যাচ্ছি। ওর হুশ এলে বাকি লেবুর রসটা খায়িয়ে দিয়েন! ”
– ” আচ্ছা ভাই। থ্যাংকস এতো রাতে কষ্ট করলেন! ”
– ” আবিদকে সেই ছোটোবেলা থেকে দেখছি মারা-মারি করে, রাগ বেশি সেটা জানতাম। কিন্তু এসব কী ভাবি? নিজের ক্ষতি করছে ও একটু নজর দিবেন প্লিয। আবিদের কিছু হয়ে গেলে রাশেদ বাচবে না ভাবি! ”
– ” আমি খেয়াল রাখবো ভাই! ”

তামান্না ডাক্তারকে লিফট অবধি দিয়ে গেলো।যাবার সময় মেঘকে ফোন দিলো। মেঘ বারান্দায় চুপ-চাপ বসে ছিলো। এখন আর কান্না আসছে না। সন্ধ্যা থেকে এতো কাদায় হয়তো চোখে আর পানিই নেই। তামান্না ফোনে সব খুলে বলার পরেই মেঘ পাগলের মতো বলা শুরু করলো, ” আমি আবিদকে দেখতে আসি? ”
– ” আবিদ এখন ঠিক আছে। কিন্তু তুই আসবি ও যদি জানে আরো রেগে যাবে। তারপর কীভাবে সামলাবো? জানিস তো ও রাগ পুষে রাখে। এদিকটা সামলিয়ে নেই। আমি কথাদিচ্ছি সব স্বাভাবিক করে দিবো শুধু কয়েকটা দিন টাইম দে আমায়!”

মেঘ ফোনটা ফ্লোরে রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই সকালবেলাও আবিদ কত ভালোভাবে কথা বলছিলো। সেই আবিদই এখন বলছে ওর জীবনে মেঘ নামের কারো অস্তিত্ব নেই। আসলেই প্রেম ক্ষেত্রে সবকিছুই হঠাৎ, অনিশ্চিত, অকারন, অনাকাঙ্ক্ষিত!!!

রাতুল খাওয়ার সময় মেঘকে ডাকতে এলো। মেঘ বলে দিলো সে খাবে না। রাতুল ও চিৎকার করে বললো ভুল স্বিদ্ধান্তের মাশুল দে বসে বসে। মেঘ কর্ণপাত করলো না।

রাত প্রায় তিনিটার দিকে আবিদ হুশে এলো। মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছে না আবিদ। মাথা ঘুরছে, চোখ ঝাপসা এমনকি শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তারের কথা অনুযায়ি রিনা বেগম আবিদকে লেবুর রস খাওয়ানো শুরু করলো। আবিদ মুখ থেকে ফেলে দিলো। দৃষ্টির ঝাপসাভাব কাটতেই আবিদ খেয়াল করলো সবাই কাদছে। আবিদ জিজ্ঞেস করলো, ” কাদছো কেনো তোমরা? ”
তামান্না কাদতে কাদতেই জিজ্ঞেস করলো, ” আবিদ তুই ড্রাগস কীভাবে নিতে পারলি? ” কথাটা শোনা মাত্রই আবিদের কান খাড়া হয়ে গেলো। নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না আবিদ। তারমানে ওই সিরিঞ্জে ড্রাগ ছিলো কোনো ঘুমের ঔষধ না। আবিদ ওর মাকে এদিকে ডাকলো, ” বিশ্বাস করো আম্মু। আমি জানতাম না ওটা ড্রাগ ছিলো। আমার প্রচুর রাগ হচ্ছিলো, সন্ধ্যার কথাগুলো মনে পড়তেই খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তাই একটু ঘুমাতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ওটা ড্রাগস ছিলো আমি বুঝি নী। বাবা কী জানে এসব? বাবা কোথায়?”

– ” তোর বাবা বিকালেই শহরের বাইরে গেছে কেউ ওনাকে কিছু বলে নী আর তুই ও কোনোদিন বলিস না। নিতে পারবে না মানুষটা। তোর ডাক্তার আঙ্কেল আসছিলো উনি সব দেখে গেছেন। কী প্রয়োজন ছিলো এসবের আবিদ? ”
– ” মা আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না! ”

রিনা বেগম কাদতে কাদতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।সাথে ইসুও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তামান্না আবিদকে নিয়ে ছাদে এসেছে।তামান্না বলা শুরু করলো,” মেঘ বুঝতে পারে নী। খুব কাদছিলো মেয়েটা। তুই ওর সাথে সব মিটিয়ে নে। ওর ভাইকে ম্যানেজ আমি করবো!”
– ” ওর ভাই আমায় কী বলেছিলো আমার এখন ঠিক মনেও নেই। কারন উনি আমার জন্য আউটসাইডার ছিলেন। আর ভুল বুঝেই সবটা বলেছিলেন এখানে ওনার কোনো দোষ নেই। কিন্তু মেঘ? মেঘ তো আমায় চিনতো নাকি? তারপরেও এসব কীভাবে বলতে পারে? চিৎকার করে বলছিলো যে আমাদের সম্পর্ক নাকি শেষ হয়ে গেছে আর সেজন্য নাকি সব দ্বায় আমার। ”
– ” দেখ ওর মাথা ঠিক ছিলো না! ”
– ” আমার মাথা সম্পূর্ন ঠিক আছে। আসলে তফাৎটা কোথায় জানিস? ও চিৎকার দিয়ে কাদতে পারছে। কিন্তু সেটা আমি পারছি না। আমি এখন ঠিক আছি। এই সাড়ে তিনবছরে এমন একটা দিনও আসে নী যেদিন আমার মনে হয়েছে যে স্বম্পর্কে একঘেয়েভাব এসেছে। আজও মনে হচ্ছে না। কিন্তু ওর এভাবে আমায় বলা উচিৎ হয় নী। এটা কথার কথা নয় যে, ” আমি ওকে ছাড়া বাচবো না! ” এটা নির্মম সত্য।তাই ওকে ছাড়তে পারবো না। কিন্তু কিছুটাদিন দূড়ে থাকুক একটু কষ্ট পাবার প্রয়োজন আছে কারন আমিও পেয়েছি। যেটা প্রকাশের অধিকারই নেই আমার। কারন আমি ছেলে। আমি যদি এখন তোর সামনে কান্না করি তাহলে সেটা তোর কাছে অবাস্তব আর অকারন মনে হবে। বাসায় চিৎকার দিয়ে কাদবো? আমায় সেন্টিমেন্টাল ভাববে। বাইরে কাদবো? মানুষ ছ্যাকাখোর ভাববে। কিন্তু কী করবো বল? কাদতে একটু ইচ্ছে করছে কিন্তু কাদার উপায়ই নেই। তাই ওই কাদুক আমি বরং কিছুটাদিন চুপ থাকি। এতোদিন সব ঝামেলা ঝগড়া আমি ক্রিয়েট করেছি আমি মিটিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এখানে আমার দোষ ছিলো না তাই মিটিয়ে নেবার দ্বায় আমার না।সব দ্বায় সময়ের কাছেই দিয়ে দিলাম সময়ই নিজের সময় মতো সব ঠিক করে দিবে। আমার একথাগুলো তোর কাছে কেমন মনে হচ্ছে আমি জানি না কিন্তু আমি এখন ওর সাথে কথা বলবো না। আর আমি তোকে এসব বলেছি যে এগুলো আশা করি তুই মেঘকে বলবি না!! কথাগুলো বলেই আবিদ ছাদ থেকে নেমে যায়। তামান্না আবিদের কথার কিছুই বুঝতে পারে না। যেই আবিদ সব জিনিস সহজ ভাবে নিতো সেই আবিদই কঠিন করে ফেলছে সবটা ইচ্ছে করে? কিন্তু কেনো?

পরের দিন তামান্না মেঘকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় দেয় যে আবিদকে কিছুটাদিন সময় দাও। এখন ওর সাথে তুমি কথা বললে আরও জটিল হয়ে যাবে সবটা তাই ওর রাগটা নামতে দাও।মেঘও মেনে নেয় সবটা। মেনে নেয় সবটা নিজের শাস্তি হিসেবে!

কেটে গেছে সাতদিন……..

রাতুল মেঘের রুমে এসেছে, ” মেঘ তুই যেভাবে জীবন যাপন করেছিস। এভাবে একটা মানুষ বাচতে পারে না! ”
– ” প্রেম করে বিয়ে হয়ে গেছে তো তোমার। তাই এই কষ্টটা তুমি বুঝতে পারবে না ভাইয়া। আমি এখন এডাল্ট, টিনেজ নই যে আবেগের বশে এসব করবো। ”
– ” তোর এসব শোনার ফালতু টাইম নেই। কারন তোর কথা শোনা মানে ওই ফালতু ছেলেটার কথা শোনা! ”

মেঘ কর্ণপাত করলো না!!

– ” শোন আমার হসপিটালের জুনিয়র ডাক্তার আদনান। ও যথেষ্ট ভদ্র আর সামাজিক। আমার মতে ও তোর জন্য উপযুক্ত। ওর সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই আমি! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin