প্রিয় পরিনতি পর্ব-১৩+১৪

0
17

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১৩+১৪
লেখক: তানভীর তুহিন!

কথাগুলো শোনা মাত্রই মেঘের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। চিৎকার দিয়ে বলা শুরু করে, ” আমি বিয়ে করলে আবিদকেই করবো। তুমি আবিদ স্বমন্ধ্যে কতটুকুই জানো ভাইয়া? ”
– ” যতটুকু জানি সেটুকুই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি কিছু জানার কোনো ইচ্ছে আমার নেই! ”
– ” দেখো ভাইয়া আমার সাথে আবিদের স্বম্পর্ক নষ্ট হয়েছে সম্পুর্ন আমার জন্য। সে দ্বায় আমি কখনো তোমাকে দেই নী। আর দিবোও না। কারন তুমি তো ওকে চিনতেই না। কিন্তু আমি চিনেও ভুল বুঝেছি! ”
– ” কীসের ভুল বোঝাবুঝি? সব পরিষ্কার এখানে মেঘ। ও একটা অসামাজিক জীব ছাড়া আর কিছুই না! ”
– ” দেখো ভাইয়া আমার সামনে অন্তত তুমি আবিদকে এসব বলিও না! ”
– ” ও এসবেরই যোগ্য! ”
– ” তুমি সবটা জানো না! ” তারপর মেঘ সবকিছু রাতুলের কাছে খুলে বলে। এসব শোনার পরে রাতুলের প্রচণ্ড অপরাধবোধ হয়। তার বোনের এই দূর্দশার কারন সে। এতকিছুর পরেও মেঘ আমায় একদিনও দোষারোপ করে নী। রাতুল মেঘের কাছে গিয়ে বলে, ” সরি রে একদম বুঝতে পারি নী! ”
– ” আর কী হবে সরি বলে। অবশ্য তোমার কোনো দোষ নেই। তোমার ভুল বোঝাটা জায়েজ। হয়তো তোমার যায়গায় আমি হলে আমিও এমনই করতাম কিন্তু আমার ওকে এভাবে বলাটা উচিৎ হয় নী। আমার কাছ থেকে কথা গুলো শুনে সহ্য করতে পারে নী! ” কথাগুলো বলতে বলতেই কেদে ফেলে মেঘ। তারপর সমস্তটা খুলে বলে রাতুলকে। আবিদের ড্রাগস নেবার ব্যাপার, আবিদের রাগের ব্যাপার। এসব শুনে অপরাধবোধ আর লজ্বায় মরে যাচ্ছিলো রাতুল। সেদিন যদি একটু ধৈর্য্য রেখে কথাগুলো শুনতো তাহলে এতকিছু হতই না। নিজের বোনটার কী হাল করে ফেলেছে সে। তারচেয়েও বড় কথা নিজের অপরাধে দুজন কষ্ট পেয়েও আমায় দোষারোপ করেনী এক মুহুর্তের জন্যও। আর সেই আমিই নাকি আবিদকে যা না তা বলে অপমান করেছি। আর আজ আবার মেঘের জন্য বিয়ের স্বমন্ধ এনেছি, ছি!ছি!ছি! রাতুল মেঘকে বলে, ” আমি নিজে আবিদের সাথে কথা বলবো। সরিরে আমার অহেতুক ভুল বোঝাবুঝি-র জন্য। তোরা দুজন এভাবে কষ্ট পেলি। আমি ক্ষমারও অযোগ্য। সব ঠিক করে দিবো দেখিস! ” কথাটা বলতেই মেঘ রাতুলকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে, ” ভাইয়া আমি আর পারছি না। খুব কষ্ট হয় আবিদকে ছাড়া থাকতে! ”
– ” কালকেই কথা বলবো আমি আবিদের সাথে!! ”

সন্ধ্যা প্রায় ৭ টা বাজে মেঘ তামান্নাকে ফোন দিলো। ফোনে রাতুলের সাথে হওয়া কথাগুলো তামান্নাকে বললো মেঘ। তামান্না বেশ খুশি হলো। মেঘ কান্না করে দিয়েছে। খুব কাদছে আর আবিদের সাথে সবটা ঠিক করে দিতে বলছে মেঘ। তামান্নার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। তামান্না ফোনের রেকর্ডিংটা অন করে চুপচাপ মেঘের কান্নাগুলো রেকর্ড করলো। তারপর রেকর্ডিং অফ করে মেঘকে বললো, ” কী করবী বোন বল? তুই তো জানিস আবিদ তোকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু এবার ওর রাগের কাছে তোর ভালোবাসাটা হার মেনে যাচ্ছে। সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে। নিরুপায় আমি! ” ফোন রেখে দেয় মেঘ। তারপর প্রত্যেকদিনের মতো বারান্দায় গিয়ে আগেরদিন গুলোর কথা মনে করে চোখের পানি ফেলতে থাকে। এরকম একটা অকারন দূর্ঘটনার কথা স্বপ্নেও ভাবে নী মেঘ। আবিদ কীভাবে পারছে থাকতে? এসব ভাবতে ভাবতে খোলা আকাশের পানে চেয়ে হালকা মৃদু বাতাসে মিলিয়ে যায় মেঘ! ঠিক মেঘের মতো!!

আবিদ নতুন ফোন আর নতুন সিম নিয়েছে অফিসের কাজের জন্য। এই সাতটা দিন সাতশো বছরের মতো লেগেছে তার। কিন্তু সে ঠিক করে নিয়েছে সে যাবে না মেঘের কাছে যতক্ষন না মেঘ তার কাছে আসছে। এই সাতদিনে আবিদ মদ ধরেনী।এক বোতল মদ অবশ্য এনেছিল কিন্তু খায় নী। শুধু দিনে দু একটা করে সিগারেট খেতো আবিদ। সব কিছুই অগোছালো ভাবে যাচ্ছে তার। চেনা দুনিয়াটাই আজ অচেনা।সব বিরক্তিকর লাগে, হঠাৎ করেই মন খারাপের মাত্রাটা যেনো প্রবল বেগে বেড়ে যায়। কিন্তু কাদতে পারে না। ছেলে হিসেবে কাদাটা আবিদের কাছে একদম অযৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু তার খুব কান্না পায়। পারেনা কাদতে শুধু কষ্টগুলো জমা করে রাখে কোনো প্রিয় পরিনতির আশায়!!

রাতের নয়টার দিকে তামান্না আবিদকে ফোন দেয়। আবিদের নতুন নাম্বারটা তামান্না জানে। কিন্তু মেঘকে দেয় নী কারন ওইদিন ছাদে বলা আবিদের কথাগুলো বড়ই অদ্ভুদ লাগে তামান্নার কাছে। তাই তামান্না মেঘকে আবিদের কাছে না বরং আবিদকে মেঘের কাছে নেবার চেষ্টা করছে। মেরে ফেলতে চাচ্ছে আবিদের পোষা রাগ আর অভিমানটাকে!
– ” হ্যা তামান্না বল! ”
– ” কী করছিস? ”
– ” বারান্দায় বসে আছি! ”
– ” একটু হোয়াটসঅ্যাপ এ আয়! ”
– ” এসব বলার জন্যই ফোন দিছিস? ”
– ” আয় না! ”
– ” আমার মুড নাই এসবের। ফোন রাখ! ”
– ” তোকে একটা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছি ওটা শোন শুধু! ” বলেই ফোন রেখে দেয় তামান্না!

আবিদ ভয়েস মেসেজটা প্লে করে মেঘের কান্নাটা শুনতে পায়। শোনার সাথে সাথে বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। চোখে পানি চলে আসে আবিদের। একবার শুনেই ফোনটা পাশে রেখে দেয় আবিদ। দিত্বীয়বার শোনার সাহস হয় না আবিদের। কিছুই ভালো লাগছে না আবিদের। এক অদ্ভুদ অস্থিরতা কাজ করছে। কানে শুধুই মেঘের কান্নায় ভেঙে পড়া আওয়াজটা বাজছে। আর মেঘের কথাগুলো মনে পড়ছে, ” আবিদের সাথে সবকিছু ঠিক করে দাও। আমি আর পারছি না আবিদকে ছাড়া থাকতে! ” আবিদের আর সহ্য হয় না মদের বোতলটা বের করে খাওয়া শুরু করে। আবিদের খুব মন চাচ্ছে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলতে যে, ” সব ঠিক হয়ে গেছে মেঘ। আর কেদো না। আমিও পারছি না তোমায় ছাড়া বাচতে! ” একসময় মদের বোতলটা শেষ হয়ে যায়। আবিদ টলমলা পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। সে ঠিক করে ফেলেছে এখনই সে মেঘের কাছে যাবে। অনেক হয়েছে আর না। ” আমি আসছি মেঘ সব ঠিক করতে! ”

প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। মায়ের জোড়া-জুড়িতে অল্প ভাত খেয়ে এসে বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ। মন খারাপ এর সাথে যেনো বিদ্রোহ করছে মেঘ। আবিদকে যে কতটা দেখতে মন চাচ্ছে, আবিদের সেই অকৃত্রিমতা মাখানো হাসিটার জন্য যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছে মেঘ। আবিদ পায়ের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে। প্রচুর ঘুম আসছে তার। এই মাতাল অবস্থাতেই মেঘের বাসায় এসেছে আবিদ। কলিংবেল চাপছে। সব যে যার রুমে ঘুমোতে চলে যাচ্ছিলো ড্রয়িংরুম থেকে। তখনই কলিংবেল এর আওয়াজে থেমে যায় সবাই। রাতুল গিয়ে দরজাখুলে আবিদকে দেখতে পায়।
– ” আবিদ তুমি এতো রাতে এখানে? ”
– ” মেঘ কোথায়? ”
– ” দেখো তোমায় দেখেই মনে হচ্ছে তুমি ড্রিংকস করেছো। এখন বাসায় যাও, সকালে কথা হবে! ”
– ” চুপ! একদম চুপ! ”
– ” আবিদ তুমি হুসে নেই। এখানে হাঙ্গামা করো না। সোসাইটির লোক খারাপ ভাববে আমাদের নিয়ে! ”
– ” ভাবতে দিন তাতে আমার কিছু যায় আসে না! ”

রাতুলের এবার মেজাজ তিরিক্ষা হয়ে যায়!

– ” দেখো আমি ভদ্রভাবে বলছি। চলে যাও এখান থেকে তুমি এখন হুসে নেই। নাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো! ”
– ” আপনি পুলিশ না আর্মি, র‍্যাব ডাকুন। ততক্ষন আমি মেঘের সাথে কথা বলে নেই! ” বলেই রাতুলকে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকে যায় আবিদ। ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে মেঘ মেঘ বলে চিল্লাতে থাকে আবিদ। মেঘ সারারাত বারান্দায় ই কাটিয়ে দেয়। আকাশের অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তারপর বারান্দায়ই ঘুমিয়ে যায়। এটাই তার রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। আবিদের ধ্যান করছিলো মেঘ। হঠাৎ আবিদের চিৎকার শুনে ধ্যান ভগ্ন হয়ে যায় মেঘের। আবিদের কন্ঠ শুনেই মেঘ দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে। মেঘকে দেখতে পেয়েই আবিদ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রাতুল দৌড়ে গিয়ে আবিদকে ধরবে ততক্ষনে আবিদ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে রাতুলের বউ আর রাতুলের মা আবিদকে এতোরাতে এ অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল আবিদের এই ব্যাবহারটা নিতে পারে না, প্রচুর অপমানবোধ হয় তার। আত্মসম্মানে কঠোর আঘাত অনুভব করে সে!

এতোদিন পরে আবিদকে দেখে মেঘের পৃথিবীটা যেনো উলটো হয়ে গেছে পুরো। আবিদের চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, মুখটা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। মেঘের অবস্থাটাও অনেকটা এমন। আবিদ মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে। মেঘও নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আখড়ে ধরে আবিদকে। হাউ-মাউ করে কেদে ফেলে মেঘ। আবিদ মেঘের কপাল, গাল, ঠোটে চুমু খেতে থাকে আর বলে, ” এমন আর কখনও হবে না মেঘ।কখনও না, যতই ঝগড়া হোক আমি আর তোমায় দূড়ে সরিয়ে নিজে দূড়ে চলে যাবো না! ” কথাগুলো বলেই মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে আবিদ। মেঘ কথা বলার শক্তিই পাচ্ছে না। এতদিন পরে আবিদকে কাছে পেয়ে নিজের সমস্ত শক্তি যেনো উত্তেজনায় হারিয়ে ফেলেছে মেঘ।অনেকদিন পরে নিজেকে খুশি আর সুখি অনুভব করছে মেঘ আর আবিদ দুজনেই। কিন্তু এই সুখ বেশিক্ষন কপালে সইলো না। এ সুখ ছিলো স্বল্পক্ষন…
গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাতুল তার এই আত্মসম্মানের আঘাতটা মেনে নিতে পারে নী। তাই আবিদ রুমে ঢোকার পরেই পুলিশকে ফোন দিয়ে বলে, ” আমার বোনের মাতাল প্রেমিক আমাদের বাসায় এসে বিশৃঙ্খল আচরন করছে। তাকে এসে নিয়ে যান! ”

এদিকে আবিদ মেঘকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বেহুশ হয়ে যায়। আসলে ঘুমিয়ে গেছে না বেহুশ হয়ে গেছে বোঝা মুশকিল। মেঘ আবিদকে নিজের বিছানায় শুইয়ে পাশে বসে আবিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। সেই প্রাণোচ্ছল আবিদকে দেখে চেনাই যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেনো বহুদিন পাগলা গাড়তে ছিলো। মেঘ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই আবিদের চুলগুলো খামচে ধরে কেদে ফেলে। সে সেদিন এভাবে আবিদকে না বললে হয়তো এতোসব কিছুই হতো না!!

রাতুল এতক্ষন পুলিশের সাথে কথা বলছিলো। কথা বলা শেষে মেঘের রুমের দড়জায় কষাঘাত করা শুরু করে। আর দরজায় হাত দিয়ে এতো জোরেই আঘাত করতে থাকে যে দড়জা কেপে ফেটে যাবার উপক্রম। রাতুল চিৎকার করে বলতে থাকে, ” মেঘ দড়জা খোল। আমি কিন্তু এবার দড়জাটাই ভেঙে ফেলবো। ওই অসভ্যটার সাহস হয় কীভাবে এত রাতে আমার বাসায় এসে আমায় ধাক্কা দিয়ে জোর করে সোজা আমার বোনের রুমে চলে যায়! এটাই কী ওর সভ্যতা আর ভদ্রতা?

ভাইয়ের চিৎকার আর দরজায় আঘাতের ফলে তৈরী হওয়া শব্দ সহ্য করতে পারে না মেঘ। আবিদের কপালে আলতো চুমু খেয়ে দড়জা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে।আবিদকে বেড় হতে না দেখে রাতুল ভেতরে উকি মেরে দেখে আবিদ মেঘের বিছানায় বেহুশ হয়ে আছে। রাতুল রেগে তেড়ে মেঘের রুমে যেতে চায়। মেঘ রাতুলের হাত শক্ত করে টেনে ধরে বলে, ” ভাইয়া ওর হুশ নেই। এখন প্লিয ঝামেলা করিও না। ও আমার রুমেই থাক আমি বরং মায়ের রুমে চলে যাচ্ছি। সকাল হলেই ও চলে যাবে! ”
– ” হুশ নেই,তুই মায়ের ঘরে ঘুমাবি,ও সকাল হলে চলে যাবে! মানে এখানে কী কোনো সার্কাস হচ্ছে? is this a bloody joke? ”
– ” ভাইয়া চিৎকার করিও না। আশে-পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ সব ঘুমাচ্ছে! ”
– ” চিৎকার করবো না মানে? ও কে? কে ও? ওর কী অধিকার আছে যে ও এখানে এসে বেহুশ হবে? এটা ওর বাড়ি? ”
– ” ভাইয়া ওর হুশ ছিলো না। তুমি নিজেই দেখেছো ও কী অবস্থাতে এসেছে! হুশ থাকলে কখনই এতো রাতে এখানে আসতো না! ”
– ” তোর এসব জ্ঞানের কথা আমায় শোনাতে আসিস না। এই তো সকালে বলছিলি যে ও ওইদিন ঝামেলা করে নাই প্রতিবাদ করেছে।আমার কাছে এখন সবটা পরিষ্কার। আজকের এই ঘটনার পড়ে আমিও দেখি তোদের বিয়ে কীভাবে হয়! ”
– ” দেখো ভাইয়া তুমি শান্ত হও। ও বাসায় এসেছে কেউই দেখে নী,জানেও না। তুমি চিল্লা-চিল্লি করেই জানাচ্ছো সবাইকে! ”
– ” আমি জানাচ্ছি? থাপ্পড় দিয়ে একদম গাল খুলে ফেলবো তোর। সকালে যখন বাসা থেকে বের হবে তখন সমাজ কী বলবে আমাদের পরিবারকে? কী বলবে তোকে? এসব ঘটনার পরে আমরা তোকে কোনো ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারবো? ”
– ” দেখো ভাইয়া আমি তোমায় আগেও বলেছি আর এখনও বলছি। কথাটা তোমায়,মা,ভাবি সবাইকেই বলছি। আমি তোমাদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবো না। কারন তোমরা আমার কাছে সব কিছুর উর্ধে কিন্তু আমি বিয়ে করলে একমাত্র আবিদকেই করবো। নাহয় সারাজীবনে বিয়েই করবো না।আমার জীবনে যদি স্বামি হিসেবে কোনো পুরুষ আসে তাহলে সেটা একমাত্র আবিদ। আবিদ ছাড়া সে অধিকার কখনও কেউ পাবে না। কথাটা সবাই মাথায় ঢুকিয়ে নাও! ”

মেঘের এই কথা শুনে রাতুলের সহ্যের বাধ ভেঙে যায়। ” বিয়ে করবি না মানে? মস্কারি পেয়েছিস নাকি তুই? ” চিৎকার দিয়ে এসব বলেই মেঘকে মারার জন্য তেড়ে যায় রাতুল। রাতুলের বউ রাতুলকে চেপে ধরে, ” দেখো মেঘ যথেষ্ট বড় হয়েছে। এভাবে ঝগড়া করে নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করিও না প্লিয! ”
– ” স্বম্পর্কের কী বোঝে ও? ইম্যাচিউড এর মতো কথা বলে যাচ্ছে! ”
– ” স্বম্পর্কের সিদ্ধান্তে আসলেই কী কোনো ম্যাচিউরিটি কাজে আসে ভাইয়া? যেখানে ম্যাচিউরিটি দিয়ে স্বম্পর্ক বিচার করা হয় সেটা কী আসলেই সম্পর্কের কাতারে পড়ে?! ”

রাগে রাতুলের শরীর কাপছে। সে তার বউকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে মেঘকে উচিৎ শিক্ষা দেবে বলে। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। রাতুল মেঘের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো, ” ঐ দেখ হয়তো সোসাইটির লোকজন এলো।তোর জন্য আমাদের এতোদিনের মান-সম্মান আজ বাজারে উঠলো! ”

মেঘের মা দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই একজন দারোগা আর ছয়জন হাবিলদার ঘরে ঢুকে এলো। বাইরের লোকজন দেখে রাতুলের বউ রাতুলকে ছেড়ে দিলো। রাতুল গিয়ে দারোগাকে বললো, ” অফিসার এসেছেন! ওই অসভ্যটা ওই রুমে বেহুশ হয়ে আছে। নিয়ে যান ওই অসামাজিকটাকে! ”
দারোগা মাথা নাড়িয়ে বললো, ” হ্যা আমরা দেখে নিচ্ছি ব্যাপারটা! ”

হঠাৎ পুলিশ দেখে মেঘে যেনো আক্কেল-গুড়ুম। ভাইয়ার এসব কথা শোনার পরে মেঘ দারোগা-র কাছে গেলো দৌড়িয়ে, ” স্যার দেখুন। তেমন কিছুনা আবিদ ড্রিংকস করেছিলো আর আমাদের মধ্যে ঝগড়ার কারনে এতোদিন কথা না হওয়ায় ও এখানে চলে এসেছে। ওর হুশ ছিলো না স্যার প্লিয থানায় নিয়ে যাবেন না ওকে! ”
– ” দেখুন ম্যাডাম অভিযোগ যখন করা হয়েছে দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে! ”
– ” স্যার প্লিয, প্লিয স্যার ওর কোনো দোষ নেই! ” এসব বলে মেঘ চিল্লাতে থাকে। রাতুল মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্য একটা রুমে বন্ধ করে দেয় মেঘকে। মেঘ কেদে চিৎকার করে বলতে থাকে, ” ভাইয়া তুমি এটা করতে পারো না। ভাইয়া আবিদেকে থানায় নিয়ে যেতো দিও না। ওর বাবার সাথে ওর স্বম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে ভাইয়া। প্লিয ভাইয়া তুমি পুলিশকে না করো! ” কিন্তু রাতুল কোনো কথাই কানে তোলে না।পুলিশ আবিদকে নিয়ে যাওয়ার সময় দারোগা রাতুলকে বলে, ” সকালে নয়টার দিকে একবার থানায় আসবেন। ওখানে এই ছেলের অভিভাবক ও ডাকা হবে যদি মিটিয়ে নিতে চান তাহলে মিমাংসা করে দিবো। আর নাহয় আপনি কেইস করতে চাইলে কেইসও করতে পারেন! ”
– ” কীসের মীমাংসা? আমি কেইস করবো ওর নামে! ”
– ” আগে সকালে থানায় আসুন তারপর দেখা যাবে! ”

বেহুশ আবিদকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। নিয়ে জেলে রাখা হয় আবিদকে।বেহুশ আবিদ জানতেই পারে না যে সে এখন থানায়!

সকাল প্রায় ৮ টা বাজে…….

আবিদ এখনও ঘুমাচ্ছে।মদের নেশা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নী সে। বেঘোরে ঘুমিয়েই যাচ্ছে।থানার এক হাবিলদার এর বদৌলতে দারগা জানতে পারে যে এটা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদার এর ছেলে আবিদ তালুকদার। দারগা ফোন দেয় রাশেদ তালুকদারকে!

এদিকে আবিদের বাড়ির কেউই জানে না যে আবিদ রাতে এসব কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। আবিদের বাবা জানে যে আবিদ বাসায় ঘুমাচ্ছে। দারগা ফোন দিয়ে, – ” আসসালামু আলাইকুম স্যার! ” থানার দারোগা-র নাম্বারটা সেইভ করা আবিদের বাবার ফোনে।
– ” ওয়ালাইকুম আসসালামু দারোগাবাবু, বলুন! ”
– ” স্যার আসলে একটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আপনার ছেলে আবিদকে থানায় নিয়ে এসেছিলাম রাতে। আসলে আমি জানতাম না যে এটা আপনার ছেলে। এখন আপনি যদি একটু থানায় আসতেন আরকি! ”
– ” কীহ? আবিদ থানায়? কীসের অভিযোগে আপনি গ্রেফতার করেছেন ওকে? ”
– ” আসলে স্যার আবিদ গতকাল রাতে তার প্রেমিকার বাসায় মাতাল অবস্থায় গিয়ে বিশৃঙ্খলতা করে আর প্রেমিকার ভাই থানায় অভিযোগ করে। সেজন্যই রাতে থানায় আনা হয়েছে। স্যার আপনি আসুন না, আমি যে অভিযোগ করেছে তাকেও থানায় ডাকছি। থানায় কথা হবে স্যার, আপনি আসুন! ”
– ” আচ্ছা আমি আসছি! ”

রাশেদ তালুকদার আবিদের কাছ থেকে এটা কখনোই আশা করে নী। যে তার ছেলে এসব করে থানায় যাবে, আর তাকে এভাবে বেইজ্জত করবে। আবিদের বাবা এটা জানতো যে আবিদ প্রেম করে। কিন্তু কোন মেয়ের সাথে? বা মেয়ের ফ্যামিলি স্বমন্ধ্যে তা আবিদের বাবা জানে না। আবিদের বাবা কখনও জিজ্ঞেস করে নী প্রয়োজন মনে করলে আবিদই বলবে এ ব্যাপারে এই ভেবে। আবিদ ভেবেছিলো মেঘের ভাইয়ের সাথে কথা বলেই বাবাকে সবটা জানাবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়?

আবিদের বাবা বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু বাসায় কাউকেই বললো না যে আবিদ থানায়। যাবার সময় তামান্নার বাসা থেকে তামান্নাকে সাথে নিয়ে গেলো!!!

চলবে!
#thetanvirtuhin