প্রিয় পরিনতি পর্ব-৭+৮

0
28

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৭+৮
লেখক: তানভীর তুহিন!

তালি বাজানো জনতাগুলো ছিলো তামান্না,তন্বী আর জুলফিকার।ওদের জড়িয়ে ধরা থেকে শুরু করে, আবিদের বসে মেঘকে প্রোপোজ করা, ওদের চুমু খাওয়া সব মূহুর্তের ছবি তুলেছিলো তামান্না।সবগুলো ছবিই আছে আবিদের কাছে। সেদিন থেকেই আবিদের শুরু হয় তার “মেঘবানু”-র সাথে পথচলা। মাত্র চারদিনের মাথায় আবিদ প্রোপোজ করেছিলো মেঘকে, মাত্র চারদিনের মাথায় মেঘ ও প্রেমে পড়ে গেছিলো আবিদের সবকিছুতে, দিয়ে দিয়েছিলো সব অধিকার সেই চারদিনের মাথায় প্রোপোজ করা সম্পর্কটার বয়সই আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর।আর এই সাড়ে তিন বছরের প্রত্যেকটা মুহুর্তে তারা অনুভব করেছে যে তাদের দুজনের সিদ্ধান্তটা কোনো আবেগ ছিলো না বরং ছিলো অনুভুতিমাখানো খাটি ভালোবাসা।

পুরোনো এসব ভাবতে ভাবতেই আবিদ ঘুমিয়ে যায়। সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। এলার্মের চড়া আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আবিদের। আজ অফিস বন্ধ আবিদের। তাই আজ সারাটাদিন মেঘের সাথেই কাটাবে। এমনিতেই এই দুই দিন ঝগড়া করে কথা বলে নী দুজন দুজনার সাথে। আবিদ ঝগড়া তো খুব করে কিন্তু মেঘের যেনো দিনদিন সহ্য করার ক্ষমতাটা আরো বেড়ে যায়। কারন মেঘ জানে যে আবিদ যতই ঝগড়াই করুক না কেনো “মেঘবানু” ছাড়া আবিদ অচল। আর তার মেঘবানু তো নিজেকে কল্পনাই করতে পারে না আবিদকে ছাড়া। কথায় আছে না সম্পর্কে যত বেশি ঝগড়া থাকে সম্পর্ক তত বেশি মধুর হয় ওদের সম্পর্কটাও ঠিক তেমন।

সকাল ৮:১০ বাজে। আবিদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কলেজের সামনে। অপেক্ষা করছে মেঘের জন্য। আজ ২২ শে ফেব্রুয়ারি। গতকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি থাকায় অফিস বন্ধ ছিলো আবিদ মেঘকে নিয়ে বের হবে বলে বুদ্ধি করে আজকেও ছুটি নিয়ে নিয়েছে। আবিদ তিনবছর যাবৎ চাকরি করছে। মানে ওদের সম্পর্ক শুরু হবার ছয়মাস পর থেকেই আবিদ চাকরিজীবী। আবিদও সারাদিন ব্যাস্ত থাকে তার চাকরি নিয়ে আর মেঘ ব্যাস্ত থাকে তার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু প্রত্যেকদিন বিকাল ৫-৭ টা তারা দুজন দুজনকে সময় দেয়।তারপর রাতে চ্যাটে,কলে, ভিডিও কলে কথা বলা তো থাকেই। সব মিলিয়ে ওদের সম্পর্কের এই সাড়ে তিন বছরই ওদের কাছে স্বর্নালি। বিন্দুমাত্র একঘেয়ে বা বিরক্তিভাব আসে নী ওদের মধ্যে। ঝগড়া তো অনেক হয় কিন্তু যেখানে ভালোবেসে দুজন দুজনের কাছে থাকতে চায়। সেখানে কখনই ঝগড়া পাড়ে না দূড়ে সরিয়ে দিতে।ঝগড়াও আবিদ শুরু করে সরি বলে আবার সবটা মিটিয়েও নেয় আবিদ। আর মেঘ শুধুই চুপ-চাপ থেকে অভিমান করে। আর যখন আবিদ অভিমান ভাঙাতে যায় তখন মেঘ ইচ্ছেমতো শাসন করে নেয়।

সোয়েটার পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে হেটে হেটে আসছে মেঘ। দূড় থেকেই দেখতে পেলো আবিদ দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে। ঘড়িতে সময় দেখলো প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। কাজ হইসে,এখন কাছে গেলেই আগুন বের হবে।টাইম সেন্স নেই তোমার? আমি দাঁড়িয়ে আছি আধাঘণ্টা যাবৎ,তোমার খেয়াল থাকে কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘ হেটে এগিয়ে আসছিলো আবিদের দিকে। মেঘ পাশে ফিরতেই দেখলো মেঘ আসছে। বাইরের হালকা শীতে মেঘের ঠোট কাপছে হালকা করে। আবিদ রাতে সেই শুরুর দিনগুলো নিয়ে ভাবছিলো। তাই মেঘের এই ঠোট কাপা দেখেই সেই জানুয়ারি মাসের সকাল আটটা মনে পড়ে গেলো আবিদের। মেঘ কাছে এসেই নরম আদরমাখা কন্ঠে বললো, ” সরি গো। ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে হতে দেড়ি হয়ে গেলো! ”
– ” একদিনও ঠিক টাইমে আসছো তুমি? আমার অভ্যাস হয়ে গেছে তোমার দেড়ি করে আসা স্বভাবে! ”

মেঘ নিজেও জানে যে সে সবসময়ই দেড়ি করে ফেলে। মেঘ মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

– ” বাসায় কী বলে বের হইছো? ”
– ” সাড়ে আটটায় ক্লাস তো। ক্লাসের কথা বলেই বের হইছি। আর বলছি যে ক্লাসের পরে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো। ফিরতে সন্ধ্যা হবে। ”
– ” তার মানে আজ সারাদিনই আমার? ”

মেঘ মাথা নিচু করেই ঘাড় নেড়ে হ্যা বললো।

– ” তোমার ব্যাগে ইম্পরট্যান্ট কিছু আছে? ”
– ” উহু! ”
– ” তাহলে ব্যাগটা দাও, দোকানে রেখে আসি। এটা শুধুই টানার প্রয়োজন নেই! ”

মেঘ পিঠ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে আবিদকে দিলো। আবিদ নিয়ে ব্যাগটা দোকানদারকে দিতেই দোকানদার হাসিমুখে ব্যাগটা রেখে দিলো। আসলে আবিদ যখন এই কলেজে পড়তো তখন সবার সাথেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। সেই সুবাদে দোকানদার এর সাথেও আবিদের সম্পর্কটা বেশ ভালো।আবিদ এসে মেঘকে জিজ্ঞেস করলো, ” কিছু খেয়ে এসোছো? ”
– ” এই শীতে এতো সকালে কেউ কিছু খেতে পারে নাকি? নাস্তা করার জন্য টাকা নিয়ে আসছি! ”
– ” যারা রাস্তার পাশে ঘুমায়, যাদের পেটে ক্ষুদা থাকা স্বত্তেও খাবার পায় না তারা পারে। তোমার আমার মতো মানুষরা পারে না আরকি! ”
– ” আমার দার্শনিক জামাইটা! ”

আবিদ হেলমেট নিয়ে মেঘকে পড়িয়ে দেয়, তারপর নিজেও পড়ে নেয়। আবিদ বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করতেই মেঘও উঠে পড়ে। আগে মেঘ লেডিস স্টাইলেই বাইকে বসতো। কিন্তু তাতে বসে ঠিক আরাম পেতো না। তাই আবিদের শাসনে এখন জেন্টস স্টাইলেই বসে। আবিদ বাইক কিনেছে প্রায় দেড় বছর। আর বাইকটা আবিদের নিজের উপার্জনে কেনা।আবিদ পিছনে ঘুরে মেঘকে বললো, ” সিটবেল্ট বাধছো না কেনো? “। সিটবেল্ট মানে হলো বাইকে উঠে আবিদকে জড়িয়ে ধরে আবিদের পিঠে মাথা রাখতে হবে তাহলেই আবিদ বাইক চালাবে। মেঘ আবিদকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” নাও তোমার গরীবের সিটবেল্ট বেধে ফেলেছি। এবার চলো! ”

আবিদ আর মেঘ একটা হোটেলে ঢুকে নাস্তা সেড়ে ফেলেছে। এখন প্রায় দশটা বাজে। মেঘ আর আবিদ একটা পার্কে বসা। দুজনই টুকটাক কথা বলছে। মেঘ আবিদের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা দিয়ে বসে পা নাড়াচ্ছে। আবিদ জিজ্ঞেস করলো, ” বাসার সবাই কেমন আছে? ”
– ” ভালোই। আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে? আর ইশু পাকনিটার কী অবস্থা? ”
– ” হুম ভালোই! ”

– ” আচ্ছা মেঘ একটা রহস্য জানতে চাইবো। বলো জিজ্ঞেস করলে আলহাদি হবা না একদম! ”
– ” আমি মোটেই আলহাদ করি না। তুমি বলো! ”
– ” আমি রাগের মাথায় তোমায় কত কড়া কড়া কথা বলি। তুমি ওসব হজম করো কীভাবে? আমিই যখন পরে ওসব মনে করি আমার নিজের কাছেই তো কত্তো খারাপ লাগে যে তোমায় এসব বলেছি! ”
– ” সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি তোমায় আর তুমি আমায় অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসি। আর সম্পর্কের শুরুতেই তো বলেছিলে আমার তোমার রাগ সহ্য করতে হবে। তাই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। আর সত্যি বলতে তুমি যখন আমায় বকা-বকি করো তখন আমি ভেতরে ভেতরে খুব হাসি। কারন যখন তুমি বকা দাও তখনই আমার তোমার ওই সরি বলা মুখটা মনে পড়ে। কীভাবে একদম নিষ্পাপ চেহারা করে এসে মিষ্টি করে বলো সরি মেঘবানু! ”
– ” মানে তুমি আমার বকা-বকির তোয়াক্কাই করো না? ”
– ” কেনো করবো? আমি তো জানি আবিদ একটা পাগল। মন থেকে কখনই আমাকে বকবে না। যা বলবে তা তার রাগ বাবাজির প্রেশারে পরে! ”
– ” তুমি এতোকিছু জানলা কীভাবে? ”
– ” তুমি এমন কী থাকে যেটা আমায় বলো না? ”
– ” সব কিছু বলে দেই নাকি? ”
– ” হু সবই বলো। এখন চুপচাপ বসে থাকো। এমনিতেই গত দুইদিন একটুও হাতধরে কাধে মাথা রাখতে পারি নাই। আমার হাতধরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্চো তুমি! ”

আবিদ বেশ ভালো করেই জানে এই কথাগুলো বলে মেঘকে আলহাদি করে ফেলেছে সে। আর মেঘের এই আলহাদিপনাগুলো দেখতেও আবিদের বেশ ভালো লাগে।

দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করে,বিকালে হলে ছবি দেখে সন্ধ্যার দিকে কলেজের সামনের দোকান থেকে মেঘের ব্যাগ নিয়ে। আবিদ মেঘকে বাসায় দিয়ে এলো। রাতে ৬-১০ টা অবধি মেঘ পড়তে বসে এর মাঝে টুকটাক কথা হয় তাদের। রাতে খেয়ে দেয়ে প্রায় দুঘণ্টা ফোনে কথা বলে দুজনেই ঘুমিয়ে যায়। কারন মেঘের সাড়ে আটটা থেকে ক্লাস আর আবিদের নয়টা থেকে অফিস। তারপর সারাদিন দুজনে কলেজ আর অফিসের হ্যাপা সামলিয়ে প্রতিদিনকার মতো সাড়ে পাচটার দিকে দেখা করে।
মেঘের বাসায় কিছুই বলে না কারন সবাই জানে মেঘের বিকালে ৪-৬ টা কোচিং আছে। আসলে মেঘের কোচিংটা ৪-৫ টা। মেঘ ইচ্ছে করেই ১ ঘন্টা বাড়িয়ে বলেছে যাতে আবিদের অফিস ছুটির পরে আবিদের সাথে সময় কাটাতে পারে।

এভাবেই খুব ভালোভাবে যাচ্ছিলো ওদের দিনকাল।দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো ছয়মাস। মেঘের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। মেঘের বয়স এখন ২১ বছর আর আবিদের বয়স ২৬ বছর। ফাইনাল পরীক্ষার পর-পরই মেঘের বাসায় বিয়ের কথা শুরু হলো। মেঘও আভাস পেয়ে গেলো যে এখন সময় হয়ে এসেছে আবিদের সম্পর্কে বাসায় বলার জন্য।

চলবে!
গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৮!
লেখক: তানভীর তুহিন!

অল্পকিছুদিন পরেই মেঘের মা,ভাইয়া,ভাবি জানতে চাইলো যে তার কোনো পছন্দের ছেলে বা সে কোনো ছেলেকে ভালোবাসে নাকি। তার তো বয়স হচ্ছে বিয়ে দিতে হবে এবার। মেঘের ভাইয়া রাতুল জিজ্ঞেস করলো!
– ” তুই নির্দিধ্বায় বল মেঘ। লজ্বা বা ভয় পাবার তো কথা না কারন তোকে আমরা যথেষ্ট স্বাধিনতা দেই। তাই নির্দ্বিধায় বল পছন্দ করিস কাউকে? ”

মেঘের কেমন যেনো একটু লজ্বা লাগছিলো কিন্তু সে ভয় পাচ্ছিলো না কারন সে জানে তার ফ্যামিলি তাকে অবশ্যই সাপোর্ট করবে যদি ছেলে ভালো হয়। আর আমার আবিদ তো বেষ্ট আমার কাছে। অবশেষে ইতস্ততা কাটিয়ে মেঘ বলে দিলো!

– ” ভাইয়া আমার প্রায় সাড়ে তিনবছরের একটা রিলেশনশিপ আছে! ”

মেঘের মা,ভাইয়া,ভাবি সবাই তো যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এতোদিনের রিলেশনশিপ আছে মেঘের কিন্তু এতোদিন তারা বিন্দুমাত্র টের পায়নি। মেঘের ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই মেঘকে জিজ্ঞেস করলো, ” তা ছেলের নাম কী? ছেলে কী করে? কাজ-ধাজ কিছু করে নাকি পড়াশোনা? ”

– ” ওর নাম আবিদ।আবিদ তালুকদার। আর ও তিন বছর যাবৎ চাকরি করে। আর চাকরিটাও বেশ ভালো,বেতন প্রায় ৩৫ হাজার! ”

– ” তাহলে তো বেশ ভালোই। কাল বিকাল পাচটায় ছেলেটাকে আমার হসপিটালের পাশের ক্যাফেতে নিয়ে আয় ওখানেই কথা বলবো ওর সাথে! ”

মেঘতো খুশিতে পারছেনা একলাফে গিয়ে আবিদের কোলে পড়ে তারপর আবিদের গলা জড়িয়ে কানে কানে বলে, ” বিয়েটা আমাদের হচ্ছে আবিদ শুনছো! ”
কিন্তু রাতুলের এই ক্যাফেতে দেখা করাটা মেঘের মায়ের পছন্দ হলো না। সে বললো, ” ছেলেকে ক্যাফেতে কেনো ডাকবি? ছেলে তার গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় আসুক? পারিবারিক ভাবে কথা বলি? ”

– ” না আম্মু, আগে আমি ছেলেটাকে দেখে নেই। আমি ফাইনাল হলেই ছেলেকে তার ফ্যামিলি নিয়ে বাসায় আসতে বলবো। আগে আমি দেখি আমাদের মেঘের পছন্দ ঠিক কতটা খাটি! ”
– ” আচ্ছা যা ভালো বুঝিস কর! ”

পাশ থেকে মেঘের ভাবি মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” কীরে সব তো আমার কাছে বলিস। আর এতোদিন ধরে আমার নায়িকাটা তার নায়ককেই লুকিয়ে রাখলো আমার থেকে? ”

মেঘ আর মেঘের ভাবির সম্পর্কটা অনেক ভালো। কেউ দেখলে বুঝবেই না যে ভাবি আর ননদের সম্পর্ক। ওরা এমন ভাবে ব্যাবহার করে যে সবাই ওদের ছোটবোন আর বড়বোন মনে করে। এবার রাতুলের ৫ বছরের ছেলেটাও এসে মেঘের কামিজ টেনে টেনে বললো, ” ইয়ে মেগ ফুপুইর বিয়ে কাবো! ”
মেঘের যেমন লজ্বা লাগছিলো ঠিক তেমনি খুশিও লাগছিলো। আবিদকে খবরটা জানানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে মেঘ। তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে কতক্ষন লাফিয়ে নিলো। তারপর আবিদকে ফোন লাগালো। তখন প্রায় চারটা বাজে, ” হ্যালো আবিদ শোনো! ” কথাটা বলতে গিয়েই থেমে গেলো মেঘ। এই খবরটা দেখা করে দিলে আবিদ আরো বেশি খুশি হবে। আর আবিদের সেই খুশি হওয়া মুখটা দেখা থেকে বঞ্চিত হতে চায়না মেঘ। কথা ঘুরিয়ে বললো, ” খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছে।বিকালে অফিস ছুটির পরে আমরা যে রেষ্টুরেন্ট এ দেখা করি ওখানে আসো! ”
– ” হুম তা নাহলে এলাম। কিন্তু তুমি তো সপ্তাহখানেক পর পর দেখা করো। এই পরশু দেখা করে আজ আবার দেখা করতে চাইছো? ”
– ” এখন কী কলেজ আছে যে প্রতিদিন দেখা করবো? বাসা থেকে কী বলে বের হবো এজন্যই তো সপ্তাহখানেক পর পর দেখা করি! ”
– ” তা আজ কী বলে বের হবা? ”
– ” আজ কিছুই বলা লাগবে না! ”
– ” বলা লাগবে না মানে? বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে মেঘ? ”
– ” না! ”
– ” বাসায় কোনো সমস্যা হলে বলো! ”
– ” আরে না বাল। এই তুমি এতো পেচাচ্ছো কেনো? দেখা করতে বলছি দেখা করবা শেষ। একয়দিন তোমার সাথে দেখা না করে করে আমিও খিটখিটে হয়ে গেছি। আমার মেজাজও টেম্পার আবিদের মতো হয়ে গেছে! ”

আবিদ একটু রসিকতা মিশিয়ে বললো, ” তোমার এসব মেজাজগুলো সহ্য করে যে এখনও তোমায় ভালোবেসে যাচ্ছি তারজন্য তোমার আমায় ধন্যবাদ জানানো উচিত মেঘবানু! ” বলেই হেসে ফেললো আবিদ।
– ” তুমি আমার মেজাজ সহ্য করো? আজ দেখা হোক চান্দু তোমায় দেখাচ্ছি মেজাজ কাকে বলে! ”
– ” আচ্ছা দেখা যাবে। এখন কাজ আছে রাখছি। রেষ্টুরেন্ট এ দেখা হবে আমি অফিস থেকে বের হয়ে ফোন দিবো! ”
– ” আচ্ছা! ”

ফোন রেখে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আবিদ। মেঘ ফোনটা নিজের বুকের উপরে রেখে চোখ বন্ধ করে ভাবছে সেই শুরুর দিনগুলো। অবশেষে বিয়ে করবে সে তার আবিদকে। মেঘ জানে সে যতটা না খুশি হবে তারচেয়ে লক্ষ-কোটিগুন বেশি খুশি হবে তার আবিদ পাগলটা!!

পাচটা বাজে। মেঘ রেষ্টুরেন্টের কেবিনে বসে আছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ মেঘ আর আবিদ এই রেষ্টুরেন্ট এ দেখা করে আর এই কেবিনটাতেই বসে। এটা আসলে স্পেশিয়ালি কাপলদের জন্য ডিজাইন করা। কেবিনগুলোর বাইরে থেকে কিছুই দেখা যায় না যাতে কাপলরা যথেষ্ট প্রাইভেসি পায় আরকি। রেষ্টুরেন্ট এর প্রায় সব স্টাফরাই মেঘকে আর আবিদকে চিনে। মেঘকে আজ আগে এসে বসে থাকতে দেখে একটা স্টাফ বলেই ফেললো, ” ম্যাম। স্যার কী রাগ করেছে? ”
– ” না তো। কেনো জিজ্ঞেস করলেন? ”
– ” না মানে সবসময় স্যার আগে এসে ওয়েট করে তারপর আপনি আসেন।তাই আরকি! ”
কথাটা শুনেই মেঘ হেসে বললো, ” তেমন কিছু না! ”

৫:২৫ এর দিকে আবিদ এলো। এসেই কেবিনে মেঘকে দেখতে পেয়ে বললো , ” অফিসে কাজ ছিলো গো। আর আজ তো ইতিহাস রচিত হলো মেঘ এসে আমার জন্য ওয়েট করছে! ”

মেঘ আবিদের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।আবিদ বসে হাতটা পেছন থেকে নিয়ে মেঘের কোমড়ে রাখলো। এটা আবিদের অভ্যাস আর মেঘও এই অভ্যাসে অভ্যস্ত।মেঘও তার মাথাটা আবিদের কাধে রাখলো। আবিদ জিজ্ঞেস করলো, ” কী খাবে বলো? ” কথাটা বলেই আবিদ গ্লাস নিয়ে পানি খাওয়া শুরু করলো। মেঘ আবিদকে অবাক করে দিয়ে বললো, ” তোমায় খাবো! “। কথাটা শোনার সাথে সাথেই আবিদ বিশম খেলো। মেঘ হেসে ফেললো। আবিদ ভ্রু কুচকে মেঘের কপালে হাত দিয়ে বললো, ” তোমার শরীর ঠিক আছে তো? ”

মেঘ কোনো কথা না বলে আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আবিদ ও পিঠে হাত রাখলো। কিন্তু মেঘের এই আচরন অস্বাভাবিক লাগছে আবিদের কাছে। মেঘ আবিদকে জিজ্ঞেস করলো, ” সারাদিন সিগারেট খেয়েছো? ” আবিদ মেঘের সাথে ঝগড়া না হলে সিগারেট খায় না। এটা শুধু আবিদই জানে। আবিদ মাথা নেড়ে বললো যে খায়নি। মেঘ আবিদের কপালে, দুইগালে, তারপর ঠোটে চুমু খেলো। আবিদ আহাম্মকের উপরে আহাম্মক্ক হয়ে যাচ্ছে। মেঘ তার মুখটা আবিদের কানের কাছে নিয়ে তারপর আবিদকে বললো, ” আজকে বাসায় তোমার কথা বলছি। ভাইয়া কাল বিকাল পাচটায় তোমাকে নিয়ে ক্যাফেতে দেখা করতে বলছে। সব ঠিকঠাক হলে বিয়ে দিয়ে দিবে। বিয়েটা আমাদের হচ্ছে আবিদ পাগলা শুনছো? ” আবিদ মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মেঘের কপালে চুমু খেয়ে বললো, ” থ্যাংকস ফর দিস সারপ্রাইজ। এটা আমার জীবনের বেষ্ট সারপ্রাইজ ছিলো! ”
– ” আমি জানিতো। এজন্যইতো ফোনে না বলে দেখা করে বলেছি। তোমার মুখের এই হাসিটা মিস করতে চাই নী! ”
আবিদ মেঘের ঠোটে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, ” আই লাভ ইউ মেঘবানু! ”
– ” আই লাভ ইউ ঠু, থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স!! ”
মেঘ কিছুটা হাসলো মেঘের কথা শুনে। মেঘ আবিদের বুকে মাথা রেখে আদরমাখা কন্ঠে বলতে শুরু করলো, ” আবিদ এই দু-তিনদিন প্লিয একটু রাগটা মেরে ফেলিও। শর্ট টেম্পার যাতে না চলে আসে তোমার। দেখো ভাইয়া অনেক ভালো কিন্তু এক কথার মানুষ। বাসায় ভাইয়ার উপরে কেউ কথা বলবে না। উনি হ্যা বললে হ্যা আর না বলে দিলে সেটা হ্যা ও হবে না। তাই উনি তোমায় আগে ক্যাফেতে দেখা করতে বলছে। তারপর যদি তার পছন্দ হয় তাহলে তোমার গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় যেতে বলবে। আমি জানি তুমি ভাইয়াকে মানিয়ে নিতে পারবা। তোমার কথার যাদুতে আমিই ভুলে গেছিলাম। ভাইয়া আর কোন চিজ! শুধু রাগটা উঠিয়ো না। আর এই দু-তিনদিন এ কোনো ঝামেলায় জড়িয়ো না প্লিজ প্লিজ আবিদ। আমি চাইনা তোমার এই রাগ বা কোনো ঝামেলার কারনে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলি! ”

– ” আচ্ছা আমি এই দুদিন কন্ট্রোল করবো নিজেকে। আর কোনো ঝামেলায় জড়াবোও না। খুশি? এবার আমায় চুমু খেতে দাও!বলেই আবিদ মেঘের ঠোটে ঠোট চেপে দিলো! ”

আজ ওরা দুজনই খুশি। রাতে ফোনে বেশকিছুক্ষন কথা বললো ওরা যেখানে মেঘের একমাত্র কথা ছিলো আবিদ প্লিয কাল যাতে ভাইয়া রাজি হয়ে যায়।উনি না বললে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে। আবিদও বললো যে সে রাজি করিয়েই ছাড়বে। তার মেঘকেই লাগবে। ”

সকালে পৌনে আটটায় আবিদ ঘুম থেকে উঠলো!

চলবে!