প্রিয় পরিনতি পর্ব-৯+১০

0
18

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৯+১০
লেখক: তানভীর তুহিন!

আবিদ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার জন্য ডাইনিং এ গেলো। আবিদের ফ্যামিলির সবাই একসাথেই নাস্তা করে। আবিদ আর ওর বাবা নাস্তা করে চলে যায় অফিসে, আর ওর বোন ইশু চলে যায় প্রাইভেটে। নাস্তা শেষে আবিদ ওর মাকে বললো, ” আম্মু আমার ডার্ক ব্লু স্যুট টা একটু ইস্ত্রি করে রেখো তো! ”
– ” হঠাৎ স্যুট? কোথায় যাবি? ”
– ” একটু কাজ আছে পরে বলবো! ”
ইসু আবিদকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,” ভাবির সাথে কই যাবি ওইটা বল! ”
– ” পরে বলবো। অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে! ” বলেই অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

আবিদ ফুরফুরে মেজাজে বাইক চালাচ্ছে। খানিকবাদে ট্রাফিকে আটকে গেলো। বাইকের ইঞ্জিন অফ করে দিয়ে বসে বসে শিষ বাজাচ্ছে আবিদ। তখনই খেয়াল করলো ট্রাফিক পুলিশ একটা বুড়ো রিকশাওয়ালার সাথে তর্কাতর্কি করছে। আসলে রিকশাওয়ালার রিকশাটা একটু গর্তমত জায়গায় আটকে গেছে। আর রিকশাওয়ালা বুড়ো হওয়ায় ঠিক টেনে উঠাতে পারছে না। আর এজন্যই মূলত এই জ্যাম। এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশ বিরক্ত হয়ে বুড়ো রিকশাওয়ালাকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। আবিদের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। সোজা বাইক স্ট্যান্ড করে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে থাপড়ানো শুরু করলো। আর ওই রিকশাওয়ালা আবিদকে টানছিলো যাতে এভাবে না মারে। কারন আবিদ যাকে মারছিলো সে একজন পুলিশ।আবিদের সেদিকে খেয়াল নেই পুলিশটাকে মারছে আর বলছে, ” কীরে ক্ষমতা পেয়ে মাথায় উঠে গেছিস না? বাবার বয়সি একটা মানুষের গায়ে হাত তুলবি? ” আর তখনই জ্যামের মধ্যে ঢুকে মেঘ এর ভাই রাতুলের গাড়ি। দূড় থেকে আবিদের কথাগুলো শোনা যাচ্ছিলো না। রাতুল শুধু দেখতে পেলো যে আবিদ ওই পুলিশটাকে মারছে আর ওই বৃদ্ধ লোকটা আবিদকে টানছে না মারার জন্য। এক পর্যায়ে আবিদের অনিচ্ছাকৃত ধাক্কায় ওই রিকশাওয়ালাও নিচে পড়ে যায়। রাতুল এসব দেখে গাড়ির স্টেয়ারিং এ একটা ঘুষি মেরে বলে, ” কী দেশ? একটা ছেলে একটা পুলিশকে পেটাচ্ছে আর কেউ দেখছেই না।তারপর আবার যে আটকাতে যাচ্ছে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে। এসব কুলাঙ্গার আর অসামাজিক জীব ছাড়া আর কিছুই না! ” রাতুল গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই ওর ফোনে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে যে রাতুলকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ইমারজেন্সি কনফারেন্স আছে। আর ততক্ষনে মানুষ জড়ো হয়ে আবিদের হাত থেকে ওই পুলিশটাকে ছাড়িয়ে রিকশাটাও রাস্তার পাশে নিয়ে গেছে। ফলে ট্রাফিকও ক্লিয়ার হয়ে গেছে। তাই রাতুল আর গাড়ি থেকে না নেমে রাগ নিয়েই গাড়ি টেনে হাসপাতালে চলে যায়। এদিকে আবিদ দাঁড়িয়ে থেকে ওই পুলিশটাকে দিয়ে রিকশাওয়ালার কাছে মাফ চাওয়াইছে। আর পুলিশটাও কোনো প্রতিবাদ না করে মাফ চেয়ে নিয়েছে। কারন সব মানুষজন আবিদের পক্ষ হয়ে কথা বলছিলো।আর এমন সময় পুলিশটা প্রতিবাদ করলে আরো গণধোলাই খেতো এটা পুলিশটা বুঝে গেছিলো।আবিদ যাওয়ার সময় পুলিশটাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” শোন তোদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জনগনদের সেবা করার জন্য। হোক না কেনো সেই জনগন একজন ভিক্ষুক কিংবা একজন রিকশাচালক। তোদের কোনো অধিকার নেই তাদের গায়ে হাত তোলার। আজকেই শিক্ষা নিয়ে নিস। নাহয় ভবিষ্যতে এমন করতে গেলে দেখবি আমার মত কেউ এসেই আবার শিক্ষা দিয়ে দিবে!”। আবিদ অফিসে চলে যায়। এর মধ্যে আবিদ যখন রাস্তায় ছিলো। তখন মেঘ দুবার ফোন করেছিলো আবিদকে। কিন্তু রাস্তার ঝামেলার চিল্লা-পাল্লাতে আবিদ রিংটোন শুনতে পায় নী। অফিসে গিয়েই আবিদ মেঘকে ফোন দিলো, ” হ্যালো মেঘ বলো! ”
– ” দুবার ফোন দিলাম। ফোন ধরলে না কেনো? ” আবিদ জানে ও এখন এই রাস্তার ঝামেলার কথা বললেই মেঘ শুধু শুধু চিন্তা করবে। তাই কথা এড়িয়ে বললো, ” ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো! ”
– ” ও আচ্ছা। তুমি অফিসে চলে গেছো? ”
– ” হুম মাত্র ঢুকলাম! ”
– ” এতো লেট? ”
– ” রাস্তায় জ্যাম ছিলো! ”
– ” নাস্তা করছো সকালে? ”
– ” হুম, তুমি? ”
– ” হুম। শোনো না ঠিক টাইমে চলে আসবা ক্যাফেতে। আর দোয়া-দরুদ পড়ো যাতে সব ঠিক ঠাক থাকে! ”

আবিদ হেসে দিয়ে বললো, ” এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার ভাইয়া বা ফ্যামিলি না মানলে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো! ”
– ” একদম বাজে কথা বলবা না তুমি। আমি পালিয়ে বিয়ে করবো না। আমি আমাদের সুখের জন্য আমার ফ্যামিলির মান-সম্মান ডুবাতে পারবো না। আর পরিবারের অভিশাপ নিয়ে আমরা সুখিও হবো না। আমার তোমায়ও লাগবে আমার পরিবারও লাগবে। আর এই দুটোই আমার কাছে রাখার সম্পুর্ন দায়িত্ব তোমার! ”
– ” হুম দায়িত্ব পালন হবে। এখন কাজ আছে টাটা! ”
– ” আই লাভ ইউ! ”
– ” কাজ রেখে চলে আসি? ঘুরতে যাবো নে! ”
মেঘ হেসে দিয়ে বললো, ” এতো আলহাদি হতে হবে না। আর কয়েকটাদিন ই তো তারপর ইচ্ছেমত ঘুরবো। এখন ঘুরতে যাবার জন্য টাকা কামাও! ”
– ” উহু বিয়ের পরে ঘুরবো না। সারাদিন বাসায় থাকবো! ”
– ” কেনো? ”
– ” যাতে তাড়াতাড়ি তুমি মা আর আমি বাবা হতে পারি! ”
– ” বাহ। তাহলে কাজ কে করবে? বিয়ের পরে কী বাবার টাকায় চলবা? ”
– ” আমার সেভিংস আছে কিছু। বিয়ের পরের ছয়মাস শুধু বসে আদর খেয়ে মন ভরাবো। আর পেট ভরাতে ওই সেভিংস এ হয়ে যাবে! ”
– ” অসভ্য একটা। কাজ করো টাটা! ”
– ” লাভ ইউ! ”
– ” লাভ ইউ টু,থ্রি,ফোর,ফাইভ সিক্স! ”

আবিদ ফোন রেখে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

বিকাল সাড়ে তিনটা বাজে। মেঘ রাতুলকে ফোন দিলো, ” ভাইয়া তোমার কাজ শেষ হবে কখন? ”
– ” আমি পাচটা নাগাদ ক্যাফেতে থাকবো! ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে! ”
– ” আচ্ছা! ”
– ” ভাইয়া একটা কথা বলবো? ”
– ” হ্যা বল না! ”
– ” ওর যদি কোনো ছোটো-খাটো ভুল চোখে পড়ে। প্লিয নজরআন্দাজ করে দিও! ”
– ” আমি কী কোনো পরীক্ষা নিচ্ছি নাকি ওর? পাগল মহিলা আমি শুধু ওর সাথে কথা বলব।আমার কোনো ইচ্ছে নেই ভিলেন হওয়ার! ”
– ” থ্যাংকিউ ভাইয়া! ”
– ” হুম হইছে রাখছি। কাজ আছে আমার! ”
– ” আচ্ছা! ”

বিকাল চারটার দিকে আবিদ মেঘকে ফোন দিলো।
– ” হ্যালো শোনো। আমি বাসায় যাচ্ছি ওখান থেকে রেডি হয়ে সোজা ক্যাফেতে চলে যাবো! ”
– ” হুম আচ্ছা। আমি ক্যাফেতেই থাকবো। তুমি তো দেড়ি করো না। তবুও বলছি লেট করবা না একদম। ভাইয়া কিন্তু খুব টাইম মেন্টেইন করে চলে! ”
– ” ভাইয়া টাইম মেন্টেইন করে। আর বোনের টাইম সেন্সই নাই। বাহ! ”
– ” খুব সেন্স আছে। দেইখো আজ তোমাদের দুজনের আগে আমি ক্যাফেতে যাবো! ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে তোমায় ফোন দিবো! ”
– ” আচ্ছা টাটা! ”

আবিদ ফোন রেখে বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। তারপর মেঘকে জানিয়ে দিলো যে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

৪:৫০ বাজে মেঘ ক্যাফেতে বসে আছে। পাচটা নাগাদ মেঘের ভাইয়া চলে এলো। এদিকে আবিদ জ্যামে আটকে আছে। মেঘ আবিদকে ফোন দিলো, ” কোথায় তুমি? ভাইয়া এসে বসে আছে। ”
– ” রাস্তায় জ্যাম। পাচ মিনিট ওয়েট করো আসতেসি! ”
– ” আচ্ছা ঝলদি আসো।আমার নার্ভাস লাগতেছে খুব! ”
– ” ডোন্ট ফীল হিজি-বিজি, জাস্ট ফীল চিজি এন্ড ইজি। আই এম কামিং, জ্যাম ছুটে গেছে। রাখছি এসে কথা বলবো! ”
মেঘ হেসে ফোন রেখে দিয়ে রাতুলকে বললো,” রাস্তায় জ্যাম নাকি আর পাচ মিনিট লাগবে!”
– ” আচ্ছা। তোর আবিদ কফি খায় তো? ”
– ” হ্যা খায়! ”
– ” তাহলে তিনকাপ কফি অর্ডার করে দিচ্ছি! ”
– ” আচ্ছা! ”

রাতুল ওয়েটারকে ডেকে তিনকাপ কফি অর্ডার করে দিলো।।

চলবে!

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১০!
লেখক: তানভীর তুহিন!

পাচ মিনিট পরে আবিদ বাইক পার্ক করে ক্যাফেতে ঢুকলো। রাতুল আর মেঘ হাসা-হাসি করে কথা বলছিলো। হঠাৎ আবিদকে দেখে রাতুলের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আবিদের মুখটা এখনও ভুলেনী রাতুল। আবিদকে দেখেই রাতুল নিজে নিজে বলে, ” স্যুট পড়ে একটা অসামাজিক জীব ঘুরছে! “। কিন্তু পরক্ষনে যখন আবিদ এসে ওদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওকেই হাসিমুখে সালাম দেয় তখন খানিক হতভম্ব হয় রাতুল। এই বেয়াদব ছেলেটাকে মেঘ কীভাবে পছন্দ করতে পারে?
আবিদ এসে রাতুলকে সালাম দেয়, ” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! “। রাতুল আবিদের সালামের উত্তর না দিয়েই দাঁড়িয়ে যায়। মেঘকে জিজ্ঞেস করে, – ” এই কী তোমার পছন্দ করা ছেলে আবিদ? ”
– ” হ্যা ভাইয়া ও ই আবিদ! ”
– ” শোনো মেঘ এই যদি তোমার পছন্দ হয়। তাহলে এ ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হবে না। আমি জেনে শুনে কোনো বেয়াদব, ম্যানারলেস অসামাজিক জীবের কাছে আমার বোনের বিয়ে দিবো না! ”

আবিদ আর মেঘের হাসিমাখা মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো!

একথা শুনে আবিদ যেনো কান দিয়ে আর কিছু শুনতেই পারছে না। আবিদ ঠিক বুঝতেই পারছে না মেঘের ভাইয়া এসব কী বলছে? কাকে বলছে আর কেনো বলছে? কারন এর আগে আবিদ মেঘের ভাইয়াকে কখনও দেখেই নী । তাহলে মেঘের ভাই কেনো এসব বলছে?

রাতুলের কথা শোনার পরে মেঘের তো কলিজা কেপে গেছে পুরো। মেঘের কণ্ঠস্বর যেনো বের হচ্ছে না। মেঘ ভেজা কন্ঠে কাপা স্বরে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলো, ” কী হয়েছে ভাইয়া? ”
– ” কী হয়েছে সেটা বলে নাহয় এই কুলাঙ্গারকে আর লজ্বা না ই দিলাম। অবশ্য এর লজ্বা আছে বলে আমার তেমন মনে হয় না! ”

রাতুলের মুখে এসব কথা শুনে আবিদের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। পারছে না এখানেই খুন করে ফেলে রাতুলকে। কিন্তু সে মেঘকে কথা দিয়েছে যে সে রাগ দেখাবে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাতুলকে বললো, ” দেখুন ভাইয়া। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমরা বসে কথা বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেই প্লিয! ” আবিদ একদম নম্রতা ভদ্রতা মিশিয়েই কথাটা বলে। কিন্তু রাতুল চিৎকার করে বলে, ” জাস্ট শাট ইওর মাউথ অফ। আমি আমার বোনের সাথে কথা বলছি তোমার সাথে নয়। আর কী মিটিয়ে নিবো? তোমার মতো একটা অসভ্য অসামাজিক জীবের সাথে আমি আমার বোনের বিয়ে কখনই দিবো না! ” রাতুলের চিৎকারে ক্যাফের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদ চারপাশে দেখলো। আবিদের মনে চাচ্ছে রাতুলের মাথাটা ধরে জাস্ট মাটিতে পুতে দিতে। কিন্তু না তার ধৈর্য্য রাখতে হবে। আবিদ নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো, ” ভাইয়া আপনি ঠিক কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত আমায় এসব তকমা দিচ্ছেন প্লিয বলবেন? ”
– ” আবার জিজ্ঞেস করছো? সকালে একটা ট্রাফিক পুলিশকে ভরা রাস্তায় মারলে। ধাক্কা দিয়ে একটা বাবার বয়সি বুড়ো মানুষকে ফেলে দিলে। তোমার জন্য অতোগুলো মানুষ জ্যামে দুর্ভোগ পোহালো। সবাই তোমার তামাশা দেখতে তোমার চারপাশে জড়ো হলো। তারপরেও তুমি সাফাই গাইবে যে তুমি বেয়াদব,অসভ্য,ম্যানারলেস অসামাজিক জীব নও? ”
আবিদের কাছে এবার ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। তাই আবিদ নিজেকে শান্ত করে রাতুলকে বোঝানোর জন্য বললো, ” দেখুন ভাইয়া আপনি যা বলছেন তা ঠিক। কিন্তু আপনি পুরো ব্যাপারটা জানেন না। আমায় ব্যাখ্যা দেবার একটা সুযোগ দিন। আই ক্যান এক্সপ্লেইন! ”
– ” কীসের এক্সপ্লেইন? যে ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তামাশা করতে পারে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন হবে। তার সম্মানবোধ কেমন হবে তা আমার বোঝা হয়ে গেছে! ”
আবিদ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ফ্যামিলির কথায় প্রতিবাদ করেই ফেললো, ” একেতো আপনি না জেনে আমায় অপবাদ দিচ্ছেন। তার উপরে সিনক্রিয়েট করছেন। আমার ফ্যামিলি নিয়ে কথা বলছেন, আমার সেল্ফরেসপেক্ট নিয়ে কথা বলছেন। আমি নাকি ভরা রাস্তায় তামাশা করেছি তাহলে আপনি এখানে কী করছেন? আপনিও তো একটা পাবলিক প্লেসে সীনক্রিয়েট করছেন। তাহলে আপনার আর আমার মধ্যে তফাৎটা কোথায়? ”
– ” তুমি যদি আমার বোনের পরিচিত না হতে তাহলে আমার সাথে এভাবে কথা বলার জন্য তোমার দাতগুলো আমি খুলে ফেলতাম। কিন্তু তোমার মতো মানসম্মানহীন একটা অসামাজিক জীবের সাথে কথা বলে আমি নিজের মান-সম্মান হারাতে চাচ্ছি না! ”
আবিদ চুপ করে দাঁড়িয়ে রাগ নামানোর চেষ্টা করছে। আবিদের শরীর গরম হয়ে গেছে রাগে। প্রচুর ঘেমে গেছে আবিদ। চোখ লাল হয়ে গেছে আবিদের।আবিদ ভদ্রতা দেখানোর জন্য আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনের জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তার পৃথিবীটাই যেনো উলটে গেছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মেঘের!

রাতুল মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো, ” শোনো মেঘ। এরকম একটা ছেলের সাথে আমি তোমার বিয়ে দিতে পারবো না। আমি তোমায় আগেই বলেছি যে আমি তোমার বিয়েতে ভিলেন হবো না। কিন্তু তুমি যাকে পছন্দ করেছো সে নিজেই মস্তবড় ভিলেন। তুমি ভালো করেই জানো আমি এক কথার মানুষ। তাই বলছি এর সাথে তোমার বিয়ে অসম্ভব। অসম্ভব মানে অসম্ভব! ” কথাটা বলেই রাতুল বেড়িয়ে যেতে নিলো। আবিদ রাতুলের পেছনে যেতে যেতে বললো, ” ভাইয়া একটাবার শুনুন। আপনি সম্পূর্ন ভুল বুঝছেন। ভাইয়া আল্লাহর দোহাই লাগে একটাবার শুনুন! ” কিন্তু কোনো লাভ হয় না রাতুল কোনো কথা না শুনেই চলে যায়।

আবিদ ক্যাফেতে ঢুকে দেখে মেঘ নিচে বসে বসে কাদছে। আবিদ মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের সামনে বসে মেঘের দুই বাহু ধরে বলে, ” কিছু হয় নাই বাবু, আমি সব ঠিক করে দিবো! ” মেঘ চোখমুছে আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুমি কী ঠিক করে দিবে আবিদ? কী আছে আর ঠিক করার মতো? আমি তোমায় বলেছিলাম তো যে এই দুইটা দিন কোন ঝগড়ায় জড়িয়ো না, জড়িয়ো না তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে কোনো ঝগড়ায়, ঝামেলায় জড়িয়ো না। কিন্তু তুমি কী করলে আবিদ? ভরা রাস্তায় হাঙ্গামা দাড় করিয়ে দিলে! এখন সব শেষ। সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম আমি তোমায়। এখন তুমি খুশি হয়েছে আবিদ? তোমার কলিজা ঠান্ডা হয়েছে তো? “। চিৎকার করে এসব বলতে থাকে মেঘ। মেঘের এমন ভিত্তিহীন কথায় আবিদ অপমানবোধ করে খুব। মেঘ কখনও আবিদের সাথে এভাবে কথা বলে নী।আর মেঘ আবিদের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে তা আবিদের কল্পনার ও বাহির। আবিদ ভেবেছিলো মেঘ ওর কাছে সত্যিটা জানতে চাইবে কিন্তু না মেঘও ওর ভাইয়ের মতো অপবাদ দিচ্ছে। তবুও আবিদ মেঘকে ধরে উঠানোর চেষ্টা করে বললো, ” সবাই দেখছে মেঘ। চলো এসব নিয়ে পরে কথা হবে! “। মেঘ আবিদকে ধাক্কা মেরে বলে ” আর কী কথা হবে আবিদ? আমি জানতাম যে তুমি এরকম কিছু একটা করবা। ঠিক এই ভয়টাই হচ্ছিলো আমার। তুমি আসলেই একটা ম্যানারলেস, বেয়াদব অসামাজিক জীব।নাহয় আমার ভাই কাউকে এসব বলার মানুষ না! ” মেঘের মুখে এসব কথা শোনার পরে আবিদের রাগ আর তার নিয়ন্ত্রনে থাকলো না। সে এবার বলা শুরু করলো। বলা বললে ভুল হবে চিৎকার করা শুরু করলো।

” কী বললি? আমি ম্যানারলেস? আমি বেয়াদব? আমি সামাজিক জীব নই? এই তোর ভালোবাসা? এই চিনসস তুই আমারে? তোর বিশ্বাস হয়ে গেলো ওসব,’ যে আমি শুধুই একটা মানুষের গায়ে হাত তুলে ফেলবো তাও আবার একটা পুলিশের গায়ে?’ আরে একটা বুড়ো রিকশাওয়ালার গায়ে হাত তুলেছিলো পুলিশটা আমার সহ্য হয় নাই। কারন আমি তো তোদের মতো সামাজিক, আদবওয়ালা,ম্যানারওয়ালা সভ্য মানুষ না। তাই আমি গিয়ে মারা শুরু করি। আর কী বললি তোর ভাই শুধুই কাউকে এসব বলবে না? আরে তোর ভাই তো একটা বলদ। এইটা ডাক্তার কীভাবে হইছে? এতবার বললাম তোর গুষ্টিটা কিলাইয়া একটু কথা শোন। আমায় বোঝানোর সুযোগ দে কিন্তু না শুনলো বলদের বাচ্চায়। তোর আর তোর ভাইয়ের কী মনে হয়? মান-সম্মান তোদের ই আছে? আর আমি ভেসে আসছি? তোরাই বলে যাবি আর আমি সহ্য করে যাবো? এতক্ষন শুধু তোকে দেওয়া কথা রাখতেছিলাম যে আমি তোর ভাইয়ের সামনে রাগ নিয়ন্ত্রন করবো। আর আমি কোনো ঝামেলায় জড়াই নী। ওটাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বলে। আর তুই বললি না সারাজীবনে আমায় আর তোর পাওয়া হলো না? সত্যি কথাই বলছিস আমি আর আগাবো না। বহুত বলে ফেলসস তোরা, বহুত হইছে, এতোক্ষন আমার অপমান আমার ফ্যামিলির অপমান অনেক সহ্য করছি আর না। আজকের পর থেকে তোর সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক শেষ,সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ, তুই আজকের পর থেকে আমায় মুখই দেখাবি না। আর ফোন দিবি না তুই আমায়। তুই কী ফোন দিবি? আমায় তো বেহায়া বানাইয়া ফেলসস আমিই ফোন দিয়ে ফেলবো তোকে। ফোনই থাকবো না তো ফোন কোথা থেকে দিবো? বলেই আবিদ পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্বজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। মুহুর্তেই ফোনটার অস্তিত্ব খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায়। আবিদ প্রচুর ঘামছিলো তাই স্যুটটাও খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারে । তারপর ঘড়িটাও খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। তারপর চিৎকার করে বলে ম্যানেজার? ম্যানেজার কই? মুহুর্তেই ম্যানেজার দৌড়ে আসে। আসলে এতক্ষন ক্যাফের স্ট্যাফরা এসব না আটকিয়ে হতভম্ব হয়ে সব দেখছিলো। ম্যানেজার আসতেই আবিদ মানিব্যাগটা ম্যানেজার এর হাতে দিয়ে বলো, ” যা ক্ষতি হইছে তার জন্য দুঃখিত ভাই। এখানে ছয়হাজার এর মতো আছে না হলে ফোন দিয়েন মানিব্যাগের মধ্যে আমার কার্ড আছে বাকিটা পাঠিয়ে দিবো। ম্যানেজার কিছু বলতে যাবে তখন আবিদ চিৎকার দিয়ে বলে ” লীভ আই সেইড! ” তারপর মেঘের সামনে বসে বলে, ” তোর সাথে যা ছিলো সব এখানেই শেষ।খোদা হাফেজ মেঘ রহমান। তোর ওই বলদা ভাইয়ের পছন্দ অনুযায়ী কাউকে বিয়ে করে ভালো থাকিস! ” বলেই আবিদ বেড়িয়ে যেতে ধরে। মেঘ পেছন থেকে ডাকতে থাকে। কিন্তু আবিদ দ্রুতপায়ে বের হয়ে যায় ক্যাফে থেকে।

মেঘ ক্যাফেতে এসে টেবিলে মাথা দিয়ে কাদতে থাকে। একটু পরে ম্যানেজার এসে বলে, ” ম্যাম সরি টু ডিস্টার্ব ইউ। আমরা তিন কাপ কফির দাম রেখেছি। বাকি টাকাটা মানিব্যাগেই আছে। আর এই সারের কোর্টটা। ম্যানেজার কোর্ট আর মানি-ব্যাগটা দিয়ে চলে যায়! ”

মেঘ ওখানে বসেই কাদতে থাকে। কী করবে মেঘ এখন? ওর ভাই যদিও বুঝে যায়। কিন্তু আবিদ তো আর বুঝবে না! আবিদকে কেনো বললো সে এসব। কতক্ষন নিয়ন্ত্রন করে ছিলো আবিদ। আবিদ তো এতক্ষন সহ্য করার মানুষ না। কত অপমানই না সহ্য করে দাঁড়িয়ে ছিলো, আর আমিই ওকে এসব বললাম। নিজের প্রতি প্রচুর রাগ আর ঘৃনা হচ্ছে মেঘের।।

চলবে!
#thetanvirtuhin