#প্রিয়_প্রত্যয়
#পর্ব১১
#রাউফুন
সুপ্রিয়র কথা মতো বিউটি লুঙ্গি ছাড়াতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি। কঞ্চির সঙ্গে এমন ভাবে লুঙ্গিটা আঁটকেছে যে একটু অসাবধানতা আর বেকায়দায় পড়ে বিউটিও ধপাশ করে পানিতে পড়ে গেলো। এদিকে বিউটি সাঁতার জানেনা। পানিতে পড়েই হাবুডুবু খেতে লাগলো। সুপ্রিয় কপাল চাপড়ে বিউটির হাবুডুবু খাওয়ার দৃশ্যর দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। কড়মড় করে বললো,“গলা সমান পানিতে তুই ডুববি না। সোজা হয়ে দাঁড়া।”
বিউটির সে কথা কানে গেলো না৷ দু হাত দিয়ে পানিতে দাপাদাপি করতে লাগলো। একবার মাথা ডুবছিলো তো একবার পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছিলো। সেই উঠানামার ফাঁকে ফাঁকে বিউটি হেল্প চেয়ে বললো,“বাঁচাও সুপ্রিয় ভাই। ম’রে যাচ্ছি আমি!”
সুপ্রিয় চ মতো শব্দ করে এগিয়ে গিয়ে বিউটিকে চেপে ধরলো বুকের সঙ্গে। ভরসা পেয়ে বিউটি সুপ্রিয়র গলা চেপে ধরলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,“দেখছো ডুবে যাচ্ছি, আমাকে না ধরে রাগ ঝাড়ছো!”
“গলা পানিতে কে ডুবে গর্ধব! সোজা হয়ে দাঁড়া!”
ওদের দুজনের হাবুডুবু খেতে দেখে নুহাশ যেনো আরও মজা পেলো। নুহাশকে বেকুবের মতো হাসতে দেখে সুপ্রিয় ভস্ম করে দেবে সেভাবে তাকালো। বিউটি তখনো ভয়ে সুপ্রিয়র গলা ছাড়েনি। ওর সঙ্গে চিপকে রইলো। ভয়ে ওর কোনো দিকে নজর নেই। সুপ্রিয় সঙ্গে বিউটির দিকে তাকালো। তিরতির করে কাঁপছে বিউটি। ওর মুখের দিকে সুপ্রিহ বোধহয় প্রথমবারের মতো তাকালো ভালো ভাবে। ওর গোলাপি ঠোঁটটা যেনো ওর বাম পাশের পোঁড়া দাগের কাছে ফিকে লাগছে। সুপ্রিয় কাঁপতে কাঁপতে বললো,“আমার ঠান্ডা লাগছে।”
সুপ্রিয় কিছু বলতে পারলো না৷ বিউটি তখন অনুভব করলো সুপ্রিয়র হাত ওর কোমড় চেপে ধরে আছে। সারা শরীরে শিরশির করে উঠলো ওর। মূহুর্তের মধ্যে হাসফাস করতে লাগলো ভেতরটা অজানা অনূভুতিতে। তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছিলো সেই অনুভূতি। সুপ্রিয়র ভেজা ওষ্ঠদ্বয় অল্প ফাঁক হয়ে আছে। একটু ঠান্ডায় কম্বনরত বিউটির হঠাৎই মনে হলো ওর গরম লাগছে। পা থেকে মাথা অব্দি অদ্ভুত এক শিহরণ শরীর মন চনমনে হয়ে যাচ্ছে। পেটের ভেতর অদৃশ্য প্রজাপতিরা উড়াউড়ি শুরু করেছে যেনো। তলপেটে কামড়ে ধরার মতো সেই অঅনুভূতি সহ্য হলো না ওর। সুপ্রিয়র গলা ছেড়ে দিয়ে ওর পেছনে গিয়ে নিজেকে আড়াল করলো। সম্বিত ফিরলো সুপ্রিয়র। নুহাশ বললো,“বাহ কিয়া সীন হে! ক্যারি অন, ক্যারি অন!”
বিউটি কেবলই অসহায় ও অপ্রাকৃস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সুপ্রিয়র সৌষ্ঠব দেহের আড়ালে। নুহাশ হাসতে হাসতে বললো,“ বউয়ের সামনে কী অবস্থা করে ছাড়লাম তোর দেখ। এখন ভাব তুই উঠবি কিভাবে? যদি লুঙ্গিটা না দিই? সারা বেলা কি এভাবেই পানিতেই দাঁড়িয়ে থাকবি?”
বিউটি কি বলবে বুঝতে পারলো না৷ এভাবে দুটো মানুষ ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকবে ব্যাপারটা কেমন না? তারপর এরকম সিচুয়েশন।
সুপ্রিয় পানিতে ভেসে ভেসে গলা উঁচিয়ে বললো, “তোকে একবার হাতের কাছে পেয়ে নেয়।”
বিউটি পাশ থেকে বললো,“আমাকে আগে উঠাও। আমার ভয় করছে, মনে হচ্ছে, পায়ের মধ্যে কেচো সব ঢুকে যাচ্ছে!”
“এক পাও নড়বি না তুই। তুইও দাঁড়িয়ে থাকবি, এটা তোর গর্ধব পোনার শাস্তি৷ প্রয়োজনে তুইও পানিতেই দাঁড়িয়ে থাকবি, যতক্ষণ আমি থাকবো।”
বিউটি অসহায় মুখ করে সুপ্রিয়র দিকে তাকালো৷
সুপ্রিয় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,“নুহাশ ভালোই ভালোই লুঙ্গিটা চালান কর, না হলে কপালে তোর অনেক দূর্ভোগ আছে। কেউ বাঁচাতে পারবে না তোকে!”
নুহাশ আরেকদফা হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে বললো,“ভাবি, আপনার হাজব্যান্ডের এই অবস্থা দেখে ভয় পাবেন না। ও বরাবরই লজ্জার ডিপার্টমেন্টে জিরো!”
বিউটি একদিকে সুপ্রিয়র অস্বস্তি, আরেকদিকে নুহাশের ঠাট্টা দেখে ইতস্ততভাবে বললো, “তুমি তো বললে লুঙ্গি খুলবে না, তুমি টাইট করে বেঁধেছো। তাহলে এখন লুঙ্গিটা ওখানে কি করছে? আমি তো আর পানিতে থাকতে পারবো না। আমি বরং উঠে যাচ্ছি পরে এসো তুমি!”
সুপ্রিয় রাগে ফেটে পড়তে পড়তে বললো, “নুহাশ! একটা কাজ করবি? তুই আমার লুঙ্গিটা বাঁশ থেকে ছাড়িয়ে দে!”
নুহাশ বললো,“সে কাজ আমার দ্বারা হবে না। ভাবিকে আবার পাঠা! উনি তো নববধূ, দায়িত্ব নিয়ে এসে সাহায্য করুক নতুন জামাইকে!”
বিউটি এবার রাগি গলায় সুপ্রিয়কে উদ্দেশ্য করে বললো, “ তোমার লুঙ্গি উদ্ধার করতে গিয়ে আজ আমার এই অবস্থা। আর যদি কখনো লুঙ্গি নামক প্লাজো পড়েছো দেখে নেবো।”
“আর একটা কথা বললে পানিতেই ডুবিয়ে মা’রবো তোকে।”
বিউটি পেছন থেকে ওর কাঁধে হাত চেপে রাখলো। সুপ্রিয়কে বিশ্বাস নেই। সুপ্রিয় আবারও দাঁত খিটমিট করে বললো,“তুই লুঙ্গি দিবি নাকি আমি এভাবে উঠে আসবো?”
বিউটি চেঁচিয়ে বললো,“নাহহহ!”
সুপ্রিয় বিউটির চিৎকারে ওকে ধাক্কা দিলো রেগে।
সুপ্রিয় ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে বিউটি নিজেকে বাঁচাতে না বুঝেই সুপ্রিয়র পায়ের জায়গায় পানির নিচে কিছু একটা চেপে ধরলো। চোখ মুখ বিকৃত করে বিউটির দিকে তাকালো সুপ্রিয়। ওর শক্ত চোখ মুখ,অথচ করুন চোখে ব্যথা সহ্য করলো। দু হাতে টেনে তুললো বিউটিকে। বিউটির তখনও বোধগম্য হয়নি সে আসলে কি চেপে ধরেছিলো। যখন বুঝলো ভয়ে তটস্থ হয়ে আবারও সুপ্রিয়র পেছনে গিয়ে টি-শার্ট চেপে ধরে দাঁড়ালো। মনে মনে নিজেকে হাজার খানেক গালি দিলো সে। সুপ্রিয় এবারে গর্জন তর্জন করে বললো,“তুই কি লুঙ্গি দিবি নাকি না?”
নুহাশ বুঝলো এই পর্যায়ে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাচ্ছে। সে হাত উঁচিয়ে বললো, “আচ্ছা আচ্ছা, দিচ্ছি। তুই চিল কর, সুপ্রিয়, এক্ষুনি দিচ্ছি!”
সে সাঁকো তে উঠে সুপ্রিয়র লুঙ্গিটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তখনই সুপ্রিয় ফোঁস ফোঁস করে বললো, “এই, সাবধানে ধর, বেশি টানাটানি করবি না, ছিড়ে গেলে সর্বনাশ হবে।”
নুহাশ খেঁকিয়ে বললো,“আমি কি তোর মতো বেইমান? বন্ধুকে বিয়েতে দাওয়াত না দিয়ে একাই বিয়ে করে ফেলবো? সা’লা স্বার্থপর।”
শেষমেশ লুঙ্গি ছাড়ানোর পর সুপ্রিয়কে লুঙ্গিটা দিলো। সুপ্রিয় লুঙ্গি পড়ে বিউটিকে টেনে তুলে ধীরে ধীরে পানির উপরে উঠে এলো। ভেজা শরীর আর গায়ে লেগে থাকা কাদামাটি নিয়ে সে বিউটিকে আড়ালো করলো। বিউটি সুপ্রিয়র পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো। ভীষণ লজ্জা আর আড়ষ্টতায় জমে গেলো যেনো।
সুপ্রিয় রেগেমেগে এলোপাতাড়ি নুহাশকে ঘু’ষি দিলো। তারপর নুহাশের কলার চেপে ধরে বললো, ”আমার বউয়ের সামনে তুই এই হাল করলি তো! দেখিস, তোর বউয়ের সামনে তোর কি অবস্থা করি। এর চাইতেও শোচনীয় অবস্থা করবো!”
বিউটি সুপ্রিয়কে সর্বশক্তি দিয়ে টেনে তুলে নিজেকে ওর পেছনে আড়াল করে বলল,” নড়ো না সুপ্রিয় ভাই৷ আমি এভাবে তোমার বন্ধুর সামনে থাকতে পারবো না! সম্পুর্ন ভেজা আমি।”
সুপ্রিয় বুঝলো বিউটির কথা। ওকে আড়ালে রেখেই বললো,“আমার বউয়ের জন্য বেঁচে গেলি।”
নুহাশ নিজের শরীর ঝাড়তে ঝাড়তে হেসে কুটোপুটি হয়ে বললো, “এই ট্রিপটা কি কিন্তু দারুণ ছিলো। সাঁকো পার হওয়ার সময় তোর লুঙ্গি গেলো আকাশে, হাহাহা!”
বিউটি এবার মনে মনে বললো, “সত্যিই, এই আজকের দিন কখনোই ভুলবো না!”
সকালের সূর্যটা তার প্রথম আলো ছড়িয়ে দিয়েছে, নদীর পাড়ে বয়ে চলা ঠান্ডা হাওয়ায় কাশফুলগুলো যেন দোল খাচ্ছে। এমন মুহূর্তেই মারিয়াম মিনহাজকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আপনি কি সব সময় মুখ গোমড়া করেই থাকেন স্যার?”
“কেন?”
“মুখ গোমড়া করে রাখলে গ্রামের সৌন্দর্যই তো উপভোগ করতে পারবেন না।”
মিনহাজ চোখ তুলে তাকালো না, শুধু গম্ভীরভাবে বলল, “আমি এখানে সৌন্দর্য দেখতে আসিনি কাজের জন্য এসেছি।”
মারিয়াম বিরক্ত হয়ে ঠাস ঠাস করে বলল, “আপনার মতো গম্ভীর লোক কেন ছুটি কাটাতে আসে, সেটাই বোধগম্য হয় না।”
মিনহাজ এবার একটু তাকালো। বলল,“ মিস মারিয়াম, আপনার বোধহয় জানা নেই, নুহাশ আমাকে জোর করে এনেছে।”
মারিয়াম ঠোঁট উলটে বলল,“ভাইয়া আপনাকে জোর করলো আর আপনি চলে এলেন? আশ্চর্য!”
“আমি আসাতে আপনি বিরক্ত, আর আপনার এতো এতো কথাতে আমি বিরক্ত। একটু চুপ করে থাকুন।”
“আপনি আসাতে মোটেই আমি বিরক্ত না, বরং আমি তো!”
“আপনি তো? কি?”
“কিছু না! চলুন। আমি আর কথা বলছি না!”
কথোপকথনের মধ্যেই তারা নদীর পাড়ে এসে পৌঁছালো। দূর থেকে নুহাশের হাসি শোনা যাচ্ছে। মারিয়াম জিজ্ঞেস করল, “এটা তো ভাইয়ার হাসি। আপনার কি মনে হয়, সে কী নিয়ে এত হাসছে?”
মিনহাজ কেবল কাঁধ ঝাঁকালো। তাদের সামনে তখন নুহাশ, সুপ্রিয়, আর বিউটি দাঁড়িয়ে ছিল। তবে মিনহাজের চোখ গিয়ে আটকালো বিউটির মুখে, মূহুর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো মিনহাজ। ওর পা থেমে গেছে ততক্ষণে। ওর মনে হচ্ছে আর এক পাও সামনে বাডানোর শক্তি নেই। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আজ প্রায় মাস দুই পর বিউটিকে দেখলো। মেয়েটা ওভাবে সুপ্রিয়র আড়ালে কেন?
ওরা সাঁকো পাড় করে এপাড়ে এসে দাঁড়াতেই দেখলো মিনহাজ দাঁড়িয়ে। নুহাশ সৌজন্য মূলক হেসে এগিয়ে এসে বলল,“আরে বস, আপনি এখানে?”
“তোর বসের নাকি বিরক্ত লাগছে, তাই তাঁকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছি! তুই ছিলি না বলে আমাকেই আসতে হয়েছে! এবার টাকা ছাড়!”
“কিসের টাকা? সর। একটা দেবো!”
“আমি যত কদম হেঁটে তোর বস কে নিয়ে এসেছি ভাইয়া ঠিক ততগুলো টাকা ছাড়বি!”
“থাপড়ে বাদরামো ছাড়াবো। সর সামনে থেকে!”
মিনহাজের কোনো দিকে নজর নেই৷ ও অপলক বিউটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিউটিও ততক্ষণে মিনহাজকে দেখেছে। সে আরও সংকু হয়ে গেলো মিনহাজকে দেখে। এখানে মিনহাজ কি করছে?
মিনহাজ বিউটিকে পরখ করলো। মেয়েটার নাকে সোনার নাকফুল টা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সূর্যের আলোয়। এমন একটা মুখ, যার ছায়া এতদিন তার হৃদয়ের কোণে পাথরের মতো আটকে ছিল। তার হাত-পা অবশ হয়ে এলো। তার মনে হলো, সে ভুল জায়গায় এসেছে।
“বস আপনার আসতে কষ্ট হয়নি তো?” নুহাশ জোরে ডাক দিল।
“নাহ!” কাঠকাঠ কন্ঠে জবাব দিলো মিনহাজ।
মিনহাজের আনমনে দেওয়া জবাবে নুহাশ মিষ্টি করে হাসলো।
মিনহাজ ধাতস্থ হতে না হতেই খেয়াল করলো বিউটির পায়ের অংশ ভেজা। সুক্ষ্ম ভাবে পরখ করতেই কিছু একটা আঁচ করে নিজের পরনের কোট খুলে সামনে এগিয়ে দিলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,“এটা গায়ে জড়িয়ে নিন আরনাজ।”
ঠিক কতদিন পর কতদিন পর নিজের আসল নামটা বিউটি শুনলো। মিনহাজ আর ওর ভাবি ব্যতীত কেউ ওকে এই নামে ডাকে না। এমন কি সুপ্রিয়ও না। বিউটি ফ্যালফ্যাল করে তাকালো মিনহাজের পানে। তবে সুপ্রিয়র বিষয়টি ভালো লাগলো না। দু হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিলো, চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো ওর। বিউটি নিজের কথা ভেবে কোর্ট টা হাতে নিলো। গায়ে জড়াতে জড়াতে ভাবলো,“লোকটা আমাকে ভালো ভাবে না দেখেই বুঝে ফেললো আমার শরীর ভেজা?”
পরক্ষণেই সুপ্রিয় নিজেকে সামলে বললো,“আপনি এই গ্রামে?”
মিনহাজের গলা ভারী হয়ে গেল। কেবল বলল, “এইতো একটু বেড়াতে আসা।”
সুপ্রিয় তার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসি দিয়ে বলল,“ওহ আচ্ছা!”
নুহাশ বললো,“আপনারা একে অপরকে চেনেন বস?”
মিনহাজ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো। বিউটির গাঁট হয়ে সুপ্রিয়র পেছন থেকে বেরিয়ে এলো। সুপ্রিয়ের মুখের চেহারা মুহূর্তে গম্ভীর হয়ে গেল। তার চোখে যেন অদৃশ্য বিদ্যুৎ খেলা করছে। বিউটি জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলো। ছোটো করে বললো,“কোট টার জন্য ধন্যবাদ। বাসায় গিয়ে এটা পাঠিয়ে দেবো।”
মিনহাজ হালকা হাসলো। সুপ্রিয়র সেই হাসি যেনো সহ্য হলো না। তার মুখাবয়বে একরকম ঈর্ষার ছাপ স্পষ্ট। বিউটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই মিনহাজ বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,“আপনি এখানে কার বাসায় এসেছেন?”
বিউটি নরম গলায় বলল,“সুপ্রিয় ভাই এর নানা বাড়িতে।”
মিনহাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে শুধোলো,“হঠাৎই, উনার নানা বাড়িতে কেন?”
“এএএই এমনি!”
সুপ্রিয় বললো,“এমনি তো না, বিউটি আমার সঙ্গে গ্রামে সাত দিনের হানিমুনে এসেছে!”
“হোয়াট? কি বললেন? আপনার সঙ্গে মানে?”
মারিয়াম বিউটির দিকে তাকিয়ে আছে। কেন যেনো বিউটিকে ওর সহ্য হচ্ছে না।
সুপ্রিয় বিউটির হাত ধরে বিউটিকে নিজের পেছনে আড়াল করতে করতে বলল,”আমার বউ, আমার সঙ্গে আসবে না তো কি আপনার সঙ্গে আসবে?”
বিস্ময়ে মিনহাজ যেনো জমে গেলো। বউ? বউ মানে? মিনহাজ অস্ফুটে বলে উঠলো,“বউ মানে?”
সুপ্রিয় কপট রাগে বলল,“বউ মানে বউ! আমার আর বিউটির বিয়ে হয়েছে। যেদিন আপনি ওকে রিজেক্ট করে চলে এসেছিলেন। ওকে অসহায় করে বিয়ের মন্ডপে ছেড়ে আসার কথা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি মিস্টার মিনহাজ আহমেদ?”
মিনহাজের মনে হলো ওর বুকের উপর কেউ মণ মণ পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন ব্যথা করছে৷ দগদগে ক্ষত নিয়ে নিষ্প্রাণ, বিষন্ন চোখে বিউটির দিকে তাকিয়ে বুকে হাত চেপে গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।
#চলবে