প্রিয় প্রত্যয় পর্ব-১৩

0
39

#প্রিয়_প্রত্যয়
#পর্ব১৩
#রাউফুন

প্রকৃতি যেন মেঘের চাদরে মোড়া। রোদের স্নিগ্ধতা হালকা করে ছুঁয়ে যাচ্ছে চারপাশ। গাছের পাতা নরম বাতাসে মৃদু দুলছে। চারিদিকের কোলাহল কমে গিয়ে নিস্তব্ধতা ভর করেছে সন্ধ্যা বেলায়। গাড়ির হর্নের, আওয়াজ, হেডলাইটের আলো, সামনে বড় গাছের ডালে বসা পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেন মনকে জুড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশও বিউটির মনকে প্রশান্ত করতে পারছে না। বারান্দার কাঠের চেয়ারে দ আকাড়ে বসে আছে সে। ওর চোখ বারবার সামনের দিগন্ত ছুঁতে চাইলেও মন আটকে আছে অন্য কোথাও।

গ্রাম থেকে নিজের বাড়ি সরাসরি ফিরে আসার পর থেকে সুপ্রিয় একবারও ওর খোঁজ নেয়নি। এ যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, যা বিউটির মনকে গিলে খাচ্ছে। ও বারবার স্মৃতির ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। নদীর ধারে সুপ্রিয়র পানিতে পড়ে যাওয়া দৃশ্যগুলো মনে পড়লেই আপন মনে হেসে উঠছে আবার সেই হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা দোলা দিচ্ছে ওর মনে।

ও ফোনটা হাতে নিয়ে সুপ্রিয়কে কল করার কথা ভেবেছে। কিন্তু কী যেন এক দ্বিধা ওকে থামিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, কল করলে সুপ্রিয় কি আদৌ কথা বলবে? নাকি ফোন ধরলেও কড়া কড়া কথা শোনাবে? অপমান করবে নাকি ওর কল পেয়ে খুশি হবে? এতসব ভাবনা ওর মাথায় ঘুরতে থাকল।

তখনই সন্দীপ্তা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় এলো। তার চোখে-মুখে এক ধরনের প্রশান্তি। বিউটির মন খারাপ করা মুখটা দেখে মনটা খারাপ হলেও হাসি মুখ বজায় রেখে পাশের ডিভানে পা তুলে বসলো।

সন্দীপ্তা তার দিকে চা এগিয়ে দিতে দিতে বললো, “তোমার মুখ এত শুকনো কেন, বিউটি? কী হয়েছে বলো তো?”

বিউটি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,“না, ভাবি… কিছু হয়নি।”

সন্দীপ্তা সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। সন্দিহান কন্ঠে বললো, “সত্যিই কিছু হয়নি? তোমার চোখ তো অন্য কথা বলছে। সী, বিউটি, লাইফ ইজ নট অলওয়েজ পারফেক্ট! বাট, কজন মানুষ নিজের স্ট্রেন্থ ধরে রাখতে পারে বলো তো? বাজে সময়ে মন শক্ত রাখতে হয় বুঝলে? পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন তার থেকে না পালিয়ে সেই পরিস্থিতির মুখাপেক্ষী হয়ে মোকাবিলা করতে জানতে হয়৷”

“এতো ভাবছো কেন? আসলেই কিছু হয়নি! আ’ম অলরাইট, ডোন্ট ওয়রি!”

“আচ্ছা, শুনলাম গ্রামে গেছিলে, সেখান থেকে সরাসরি এখানে এসেছো, তোমার কি মনে হয় আমি বোকা? সত্যি করে বলো তো, সুপ্রিয় কিছু বলেছে তোমায়?”

সুপ্রিয়র কথা মনে পড়তেই বুকটা কেমন ভারী হয়ে গেলো৷ মাথাটা ঝিমিয়ে যাচ্ছে যেনো। থেতো অনুভূতি তে ভেতরটা কেমন হাসফাস করছে। সুপ্রিয়র সঙ্গে ওর ঝগড়ার বিষয়ে কাউকে জড়াতে চাইলো না বিউটি। তাই মাথা নেড়ে বললো, “না ভাবি… ও তো কিছু বলেই না। দীর্ঘদিন তোমাদের না দেখে থাকার অভ্যাস আছে নাকি আমার? তাই সরাসরি তোমাদের দেখতে চলে এসেছি।”

সন্দীপ্তা হাসতে হাসতে বললো, “আরে, বোকা মেয়ে! বিয়ের পর এমনই, এই অভিমান, তো এই প্রেম উপচে পড়ছে। অভিমান যদি করেও থাকে তবে বিশ্বাস রেখো, ও নিজেও এখন তোমার কথায় ভাবছে। গিভ হিম সাম টাইম! দেখবে দুদিন যেতে পারবে না ছুটে চলে এসেছে। একবার তোমার ভাইয়ার সঙ্গে আমার অভিমান হয়েছিলো। বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায়৷ বেচারা কি করেছো জানো? রাতে অভিমান হলো, সকালেই উদ্ভ্রান্তের মতো কোয়ার্টার থেকে ছুটে বাড়ি চলে এলো। আমি তাকে দেখে একটুও অবাক হয়নি, কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো ও ঠিক আসবে।”

বিউটি মুচকি হাসলো। কারোর ভালোবাসার কথা শুনতেও ভালো লাগে। সে বললো,“ভাইয়াকে মিস করছি, কবে আসবে বলেছিলো?”

সন্দীপ্তা খানিক মন খারাপ করে মলিন মুখে বললো,”কবে জানা নেই, তাকে আর্জেন্ট একটা মিশনে যেতে হবে। ওর মিশনের কথা শুনলেই আমার বুক টা হাহা করে, কেমন রিক্ত শুন্যের মতো হয়ে যাই আমি! আল্লাহ মানুষ টাকে সব সময় সেইভ রাখুন এটাই চাই!”

বিউটি সন্দীপ্তাকে জড়িয়ে ধরলো দুই হাতে। গালে গাল ঘষে বললো,“চিন্তা করো না ভাবি, ইন-শা-আল্লাহ সব ঠিক থাকবে!”

“তুমিও চিন্তা করো না, দেখবে সকালেই সুপ্রিয় কেমন নেওটার মতো হাজির হবে।”
কাষ্ঠ হাসে বিউটি। সন্দীপ্তার সান্ত্বনা বিউটিকে সামান্য শান্ত করলেও তার ভেতরে এক অজানা শূন্যতা রয়ে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সে সামনের মেঘমাখা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। সত্যিই কি সুপ্রিয় তার জন্য ছুটে আসবে, যেমন ভাবে ভাইয়া ভাবির জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসেছিলো?

সুপ্রিয় একা ঘরে বসে আছে। জানালার বাইরে রাতের আলো হালকা হয়ে আসছে। চারপাশের নিস্তব্ধতা তাকে আরও বিচলিত করে তুলছে। তার ভেতরটা যেন এক অদ্ভুত সংকোচে ভরে উঠেছে। গ্রামে বিউটিকে যেভাবে ফেলে রেখে এসেছে, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। নিজের মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। একটা মেয়েকে এভাবে ফেলে আসা কি উচিত হয়েছে? নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিচ্ছে সে। মেয়েটা নিশ্চয়ই তার উপাখ্যানে কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু সেই বা কি করতো? ভেতরটা তো তার অজানা কারণে জ্বালা করছিলো, যা সে আগে কখনোই অনুভব করেনি। তার স্ত্রী কিনা অন্য একটা পুরুষের জন্য চিন্তায় মরিয়া হয়ে যাচ্ছে? এটা কি কোনো পুরুষ মানুষ মানতে পারে? যে মেনে নিতে পারবে সে তো কাপুরষ। সে তো কাপুরষ নয়!

মা এসে তাকে খাবার টেবিলে ডাকলেন। সুপ্রিয় ধীরে ধীরে টেবিলের কাছে এলো। খাবার সাজানো হলেও তার মন কোনো কিছুতেই টান পাচ্ছে না।

মহিমা বেগম ছেলের দিকে দৃষ্টি পাত করলেন। এসে থেকেই কেমন মুখচোরা হয়ে বসে আছে ছেলেটা। শান্ত স্বরে শুধালেন,

“বাবা,তুই ঠিক আছিস তো? এসে থেকে দেখছি মনমরা হয়ে আছিস।”

“না মা, তেমন কিছু না।”

মোজাম্মেল হোসেন খানিক গম্ভীর স্বরে বললেন, “বিউটিকে সঙ্গে করে নিয়ে এলে না কেন? একসঙ্গে গিয়েছিলে, একসঙ্গে ফিরলে না কেন?”

সুপ্রিয় চুপ করে রইল। কী উত্তর দেবে, তা ঠিক করতে পারল না। বাবার কণ্ঠে রাগের সুর ছিল না, তবে এমন একটা কাঠিন্য যা তার চুপ থাকার পেছনের কারণকে আরও বেশি বেদনাদায়ক করে তুলছে। বাবা-মায়ের চোখে প্রশ্নের উত্তরহীনতা তাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে। কোনো রকম উচ্চবাচ্য না করে কোনো রকমে গলধঃকরণ করে চলে এলো। মহিমা আর মোজাম্মেল হোসেন ও বুঝলেন কিছু একটা হয়েছে। ছেলে মেয়েরা এখন বড়ো হয়েছে, তাদের ভেতরকার সমস্যা সমাধান তারা দিতে পারবেন না৷ নিজেরা নিজেরাই মিটিয়ে নেবে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দুজনেই।

সুপ্রিয় জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সে জানে, বিউটিকে ফেলে আসার জন্য তার মনে কষ্ট হলেও, নিজের রাগ কীভাবে সামলাবে তা বুঝতে পারছে না। কই বিউটি তো কখনো তাকে নিয়ে এতো উদ্বীগ্ন হয়নি।

গ্রামের পাট চুকিয়ে মিনহাজ আর নুহাশ আজই ঢাকায় ফিরছে। মিনহাজ বরাবরের মতোই গম্ভীর। তার চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। শহরের ব্যস্ত জীবনের কথা ভেবে সে যেন আরও বেশি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। তার পাশে পাশে হাঁটতে থাকা মারিয়াম, তার বিপরীত, পুরো ভিন্ন। তার বাচাল স্বভাব যেন থামছেই না। অনবরত কথা বলে যাচ্ছে মেয়েটা। মিনহাজ বিরক্ত মুখ হজম করছে মেয়েটাকে।

মারিয়াম মিষ্টি হেসে বললো,

“সত্যি করে বলেন তো স্যার? গ্রামে আপনার দিন কেমন কেটেছে? এমন সুন্দর পরিবেশ কিন্তু আপনার ঐ শহরে নেই!”

মিনহাজ মুখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক নুহাশ কে খুঁজলো। এখনো কেন আসছে না নুহাশ। মারিয়াম আবারও বললো, “আপনি কি আমার কথা শুনছেন স্যার?

মিনহাজ স্বগতোক্তি করলো,“হুম।”

“আপনার কি গ্রাম খুব একটা ভালো লাগে না? নাকি কাজের চিন্তা করতে করতে সবকিছু ফিকে লাগে?”

নুহাশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে ধুলো উড়িয়ে। মিনহাজ কোনো উত্তর দেয় না তাকিয়ে থাকে নুহাশের আসার দিকে। মারিয়াম বিরক্ত না হয়ে আবার প্রশ্ন করে।

“আপনি কি জানেন, আপনার চুপচাপ থাকাটা খুব বিরক্তিকর? অন্তত কিছু বলুন! যাই বলি হু হা করেন শুধু। একটা মানুষ এতো চুপচাপ কিভাবে হয়?”

মিনহাজ হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে মারিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল, “সব সময় কথা বলার প্রয়োজন নেই, বুঝেছেন? আমি প্রয়োজনীয় কথা ব্যতীত কথা বলতে পছন্দ করি না। আপনার মতো ঘটে গোবর নেই আমার, আমাকে একা একা বিজনেস সামলাতে হয়, এসব ফাউ পেচাল আমার কোনো কাজে আসবে না!”

মারিয়াম থেমে গেল, তবে এক মুহূর্তেই আবার শুরু করল, “বুঝেছি। কিন্তু কথা বললে মন ভালো থাকে। আপনি ট্রাই করে দেখুন!”

ততক্ষণে নুহাশ এসে দাঁড়িয়েছে। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে সে। হাপরের মতো শ্বাস টেনে বললো,“দুঃখিত স্যার, আমার সেই এক দোষ, কোথাও যাওয়ার সময় ঠিক বাথরুম পেয়ে যায়।”

মারিয়াম মুখ টিপে হাসে। মিনহাজ নাক মুখ কুচকে বলে,“যেমন ভাই, তেমন তার বোন। ষ্টুপিড!”

মিনহাজ আর নুহাশ রওনা দিলো। অনিমেষ চোখে মারিয়াম তাকিয়ে থাকে মিনহাজের যাওয়ার পানে। ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত মিনহাজকে দেখা গেলো। মিনহাজ একবার তাকালে বোধহয় দেখতে পেতো এক বিষাদে, ব্যথিত ভরা নয়ন, যার চক্ষুপেয় অশ্রুতে টলটল করছে।

নুহাশ শহরে এসেই বিকেলে সুপ্রিয়র বাড়ি এলো। আসার আগে মহিমা বেগম এর সঙ্গে হাসি ঠাট্টা করে কফি হাতে ছুটে এসেছে উপরে। হাতের কফির জারটা এগিয়ে দিলো সুপ্রিয়র দিকে। সুপ্রিয় অবাক হলো না, শহরে থাকলে নুহাশ বন্ধের দিন বিকেল করে চলে আসে তার সঙ্গে আড্ডা দিতে। সে অনুযায়ী ওর আন্দাজ ছিলো আজ আসবে নুহাশ।

নুহাশ কফিতে চুমুক দিয়ে মিটিমিটি হাসছে। যেনো ওর ভীষণ আনন্দ হচ্ছে সুপ্রিয়কে এমন ছন্নছাড়া দেখে। বললো, “কিরে দোস্ত, কেমন চলছে নববিবাহিত জীবন?”

“ঠিকই চলছে। তুই বল, অফিস কেমন চলছে?”

“অফিস তো চলছে, তবে মন কেমন যেন… গ্রামে ফেলে আসা দিনগুলো খুব মনে পড়ছে।”

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে তারা গ্রামের দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে কথা বলল।

“বিউটি ভাবিকে দেখে মনে হয় না, উনি এতটা সাহসী।”

“হঠাৎ একথা বলছিস যে? মোটে তো একদিন দেখা হয়েছে ভালো ভাবে!”

“কিছু মনে করিস না, আমি ভাবির ফেসটা দেখেছি। কতটা স্ট্রং হলে মানুষ এসিড দগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে ফাইট করতে পারে ভাবছিস?।”

“হু!”

“একটা প্রশ্ন করি?”

“কর!”

“ভাবিকে এসি’ড অ্যা’টাক কে করেছিলো জানিস?”

মূহুর্তেই গম্ভীরতা ফুটে উঠলো সুপ্রিয়র চোখে মুখে। বললো,“ওর সঙ্গে যখন এসব ঘটনা ঘটে আমি তখন অস্ট্রেলিয়ায় হায়ার এডুকেশনের জন্য গেছিলাম। আমি চিন্তা করবো বলে আমাকে কেউ-ই আমাকে এসব ব্যাপারে জানাইনি৷ পরবর্তীতে এসে ওর ব্যাপারটা জানতে পেরে আমি থমকে গেছিলাম। ওর কষ্ট হবে ভেবে আমি কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। শুধু এটুকু জানি, কোনো এক ব্যাক্তি ল্যাবে গবেষণা করছিলো। বিউটি নিজেও সাইন্সের স্টুডেন্ট ছিলো। শুধু যন্ত্রপাতির টুকটাক শব্দ শোনা যাচ্ছিল। লোকটা কোনো একটি জটিল রাসায়নিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। গ্লাসের বোতলে রাখা অত্যন্ত শক্তিশালী হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিয়ে কাজ করছিল সে। তার কাজের প্রতি মনোযোগ এত গভীর ছিল যে, আশপাশের কিছুই তার নজরে আসছিল না। একটি ছোট ভুল, যা হয়তো তার ভাবনার বাইরে ছিল, সেই ভুলই মুহূর্তে বদলে দিল সবকিছু। বোতলটি হঠাৎ তার হাত ফসকে ছিটকে পড়ে যায়। তার প্রতিক্রিয়া জানার আগেই এসিডের একটি বড় অংশ মুখে ছিটকে পড়ে বিউটির মুখে। বিউটি নিচে বসে কি যেনো তুলছিলো। নিকাব থাকা সত্ত্বেও ওর মুখের এক পাশে সেই এসিড ছিটকে গিয়ে ঝলসে যায়। সেই লোকটা কে, আমরা আজও খুঁজে পাইনি। যেহেতু লোকটার মুখে মাস্ক ছিলো। সবাই বিউটিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি কার হাত থেকে এসিড টা পড়েছিলো।”

“আমার তোর জন্য গর্ব হয় সুপ্রিয়, বন্ধু হিসেবে তোকে পেয়ে আমি গর্বিত! এমন হাজারো এসি’ড দগ্ধ নারীদের অবহেলা করা হয় আমাদের সমাজে৷ সেখানে তুই ভাবিকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছিস, সম্মান করিস! আ’ম প্রাউড অফ ইউ!”

নুহাশ সুপ্রিয়র কাধ চাপড়ালো। দুজনের কথোপকথনে কফির কাপে ধোঁয়া উঠছিল। সুপ্রিয় জীবনের মানসিক টানাপড়েনে এখনো ভুগছিলো। এই মূহুর্তে ওর ইচ্ছে করছে বিউটির কাছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু একটা অজানা আত্মগরজ তাকে যেনো বাঁধা দিলো। সে কেন যাবে? রাগ সে করেছে, বিউটি তার রাগ ভাঙাবে তারপরেই সে ওর খোঁজ নেবে নতুবা নয়। নুহাশ আরও কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুপ্রিয়। অবাধ্য মনটা বার বার ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে বিউটি নামক মানবীর দিকে।

গভীর রাত, পেটা ঘড়িতে তখন রাত এক টার জানান দিচ্ছে। এমন সময় অনবরত কলিং বেল টিপছে কেউ। এতক্ষণ জেগে থাকা বিউটির সদ্য চোখ জোড়া বন্ধ হতে যাচ্ছিলো। কিন্তু সেই মূহুর্তে কলিংবেলের শব্দে বিরক্ত হয়ে বিছানা ছাড়তে হলো। পীপহোল দিয়ে দেখলো একজন অত্যন্ত উদ্বেগ নিয়ে পায়চারি করছে আর কলিংবেল টিপে যাচ্ছে। বিউটি দরজা খুলে হতভম্ব হতে ভুলে গেলো। দরজা খোলা মাত্রই ওকে কেউ জাপটে ধরলো। বিউটির মনে হচ্ছে সময় যেন খানিকের জন্য যেনো থেমে গেছে। মানুষ টা বিড়বিড় করে বললো,“পাষন্ডী, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীনা নারী!”

#চলবে