#প্রিয়_প্রত্যয়
#পর্ব১৪
#রাউফুন
বাইরে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে। পেটা ঘড়ি অনবরত রাতের নিঃশব্দতা ভেঙে জানিয়ে দিচ্ছে সময়ের প্রহর। বিউটি এতক্ষণ নিজের ভাবনায় বিভোর ছিল। ঘরে যেনো এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। চোখ জোড়ায় তখনও ঘুমের আলিঙ্গন চেপে ছিলো। নিঃশ্বাস নেওয়া যেনো সে ভুলে গেছে, দম আঁটকে দাঁড়িয়ে রইলো। অনুভব করলো সুপ্রিয়র ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দ। ওর পিঠজুড়ে এলোমেলো ভাবে সুপ্রিয়র নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে কেবলই। সে আলতো হাতে সুপ্রিয়কে ধরে বললো,“এতো রাতে তুমি?”
পীপহোল দিয়ে যখন দেখেছিলো এক অস্থির ছায়ামূর্তি। লোকটা বারবার কলিংবেল চাপছে, পায়চারি করছে। তখন তার চোখে মুখে স্পষ্ট উদ্বেগ দেখা যাচ্ছিলো। দরজা খুলতেই বিউটি যেনো সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আরেক জগতে চলে গেছিলো। কেউ যখন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সেই স্পর্শ, সেই উষ্ণতা – চিনতে এক মুহূর্তও লাগলো না ওর। সুপ্রিয় নাক টেনে বললো,
“তুই পাষণ্ডী! নিষ্ঠুর নারী। তুই আমাকে এভাবে একা ফেলে থাকতে পারছিলি কীভাবে? বল কবে এতো নিষ্ঠুর হলি তুই?” সুপ্রিয়ের কণ্ঠে অভিমান, ব্যথা আর অস্থিরতার মিশ্রণ।
বিউটি হতবাক হয়ে রইলো। সে দেখলো সুপ্রিয়ের চেহারায় ক্লান্তি আর অবহেলার চিহ্ন। পরনে কেবল ট্রাউজার আর এক ওভারসাইজ ডেনিম টি-শার্ট। চুলগুলো এলোমেলো, পায়ে বৃষ্টির কাদার দাগ। তার ভেতরটা কেঁপে উঠলো অজানা শিহরণে। তল পেটে মোচড় দিয়ে তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়লো ক্রমশঃ!
“বাইরে বৃষ্টি, তুমি এই অবস্থায় এলে কেন?” বিউটির স্বরে ত্রস্ততা।
“তোর কাছে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তোর মুখ না দেখে যেন বাঁচতেই পারছিলাম না! মনে হচ্ছিলো আমি মা’রা যাচ্ছি!”
তাদের কথোপকথন ধীরে ধীরে মান-অভিমানের দিকে মোড় নিলো।
“তুমি তো কথায় বলবে না! আমাকে ফেলে চলে আসলে কেন? ফেলে আসার সময় পড়েনি থাকতে পারবে না?” বিউটি সুপ্রিয়র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
“তার আগে এটার জবাব দে, আমার খোঁজ নেওয়া কি তোর দায়িত্ব নয়? অথচ তুই এতদিন যোগাযোগও করিস নি।” সুপ্রিয়র স্বরে আক্ষেপ।
কথা বলার মধ্যেই বিউটির নজর গেলো সুপ্রিয়র মুখের ক্লান্তির দিকে। মানুষটার ক্ষুধার্ত দৃষ্টি তাকে বলে দিলো, প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে সে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে।
“তুমি কিছু খাওনি, তাই না?” বিউটি মৃদু স্বরে জানতে চাইলো।
সুপ্রিয় তাকিয়ে রইলো, যেনো তার অভিমানের বরফ একটু একটু করে গলে যাচ্ছে। ওকে টেনে ভেতরে এনে দরজা আঁটকে দিলো। সোফায় বসিয়ে দিতে দিতে বললো,
“বসো, আমি ঝটপট নুডলস রান্না করে আনছি,”
বিউটি চুলে হাত খোপা করতে করতে রান্না ঘরের দিকে এগোলো। সুপ্রিয় ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কি যেনো মিশে ছিলো সেই দৃষ্টিতে। যে-কোনো সেই দৃষ্টিতে তাকালে বুঝে ফেলবে মানুষ টার মনে কি চলছে, কি চাইছে সে এখন। স্ত্রীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য গলা শুকিয়ে কা’ঠ হয়ে আসছে তার।
বিউটি নিজের হাতেই নুডলস তৈরি করলো। রান্নাঘরের আলোতে সুপ্রিয়ের ক্লান্ত চেহারা আরও স্পষ্ট হলো। নুডলস প্লেটে তুলে বিউটি সুপ্রিয়ের সামনে বসিয়ে দিলো। সুপ্রিয় এক চামচ মুখে তুলতেই মৃদু হেসে বললো, “তোর হাতের রান্না খাইয়ে আমাকে অভ্যস্ত করে এখন এখানে এসে পড়ে আছিস। বাড়িতে আমি কিছুই খেতে পারছিলা না জানিস?”
বিউটি ঠোঁট চেপে হাসলো৷ সুপ্রিয়র দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো অপলক। কি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে মানুষ টা। তেলে চুবচুবে ওষ্ঠের দিকে দৃষ্টি চলে গেলো বিউটির। শুকনো ঢোক গিলে অন্য দিকে ফিরলো সে। অবাধ্য ইচ্ছেরা চারপাশে কেমন করে ডানা মেলছে, অথচ সে কিছুতেই সেই ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে পারছে না, নিজের মনষ্কামনাকে প্রশ্রয় দিয়ে পারছে না নিজেকে সুখী করতে। সুপ্রিয় আরাম করে খেতে বুঝলো দুই জোড়া চোখ স্থির নেত্রে ওঁকেই দেখছে। মনে মনে বেশ মজা পেলো সে। ওকে তো অনেক জ্বালিয়েছে, এবারে তার পালা। সেও দেখবে কি করে বিউটি তার থেকে দূরে থাকে।
সকালে ঘরে এক অদ্ভুত সাড়া পড়ে গেলো। সন্দীপ্তা দরজায় এসে জিজ্ঞেস করলো, “বিউটি, তুমি কি উঠে… ও মা, সুপ্রিয় ভাই!”
সুপ্রিয় বিছানায় বসে চা খাচ্ছিলো। তার লাজুক চাহনিতে বোঝা যাচ্ছিলো সে খানিকটা অস্বস্তিতে আছে। সন্দীপ্তা রাতেই ওদের দেখেছিলো তবে না জানার ভান করে এমন ভান করলো যেনো সে খুব অবাক হয়েছে সুপ্রিয়কে দেখে।
“বউকে ছাড়া না থাকতে পেরে এই বেলায় এসে হাজির! রাতের আঁধারে যে কী কাণ্ড করেছো, সে তো শুনতেই হচ্ছে, কি বিউটি কি বলেছিলাম।”
সন্দীপ্তার কণ্ঠে রসিকতার আভাস।
বিউটি এক পাশে দাঁড়িয়ে, লজ্জায় মুখ লুকোতে চাইলো। সুপ্রিয় কোনো রকমে অপ্রস্তুত হয়ে বললো, “আমি তো সকালেই এসেছি। মর্নিং ওয়াক করতে করতে মনে হলো সোজা এখানেই চলে আসি৷ তাই আর কি!”
বিউটি মাথা নেড়ে অপ্রাকৃতস্থের মতো হাসলো। দুজনেই মুখচোরা হয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘোরাতে লাগলো। বিউটির বাবা-মাও এসে দেখলেন, কিন্তু কোনো কথা না বলে একরকম স্বাভাবিক আচরণ করলেন। নিজের মেয়েকে লজ্জা দিতে চাইলেন না তাঁরা। তবে তাঁদের চোখের চাহনি বলে দিচ্ছিলো, তাঁরা সবকিছুই বুঝেছেন।
সুপ্রিয় এবং বিউটি দুজনেই লজ্জায় একে অপরের দিকে তাকাতে পারছিলো না। সন্দীপ্তা আরও কিছুক্ষণ রসিকতা করে চলে গেলো।
কাল রাতের পর তারা দুজনেই বুঝেছে, তাদের সম্পর্কের গভীরতা এসব ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমানের ঊর্ধ্বে। সুপ্রিয় বিউটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। বিউটি তার হাসিতে আরেকদফা ঘায়েল হলো। সুপ্রিয় হাসলে ওর ঠোঁটের যে ভাজ পড়ে, সেটা এতো মনোমুগ্ধকর, না চাইতেও বিউটির ইচ্ছে করে টুপ করে একটা চু’মু একেঁ দিতে। কিন্তু লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে একাজ টা সে করতে পারবে না। সুপ্রিয়কে প্রথমে আগাতে হবে তবেই সেও আগাবে।
সুপ্রিয় বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চারদিকে তাকাতেই ওর ভীষণ ফুরফুরে লাগছিলো। গতকাল রাতে বৃষ্টির পর সৃষ্টি হয়েছে এক নির্মল পরিবেশ। পাখির ডাক আর হালকা মেঘলা আকাশ। সুপ্রিয়র মনে হলো, এই পরিবেশ যেন তাকে খানিকটা মুক্তি দিচ্ছে। সেই মুক্তির মাঝেও বিউটির সঙ্গে গত রাতের কথোপকথনের দৃশ্য তার মনের পর্দায় বারবার ভেসে উঠছিল। এই বয়সে এসে কি এমন পাগলামো মানায়? অবশ্য, ভালোবাসার, প্রেমের পড়ার জন্য বয়সটা ফ্যাক্ট নয়। মানুষ যেকোনো বয়সে উঠতি বয়সের মতো পাগলামো করতে পারে, নিজের ভালোবাসাকে খুশি করার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে, সবচেয়ে বেহায়া যদি হয় সবার কাছে তবে সেটাও হওয়া যায়। এসবের কি বয়স হয় নাকি?
বিউটি রান্নাঘরে নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সন্দীপ্তা এসে তার পাশে দাঁড়ালো। নিজের বাহু দিয়ে হালকা
গুতা দিয়ে বলে, “কি, কাল রাত কেমন কাটালে আরনাজ?”
সন্দীপ্তার কথার মধ্যে মজা আর কৌতুকের ছোঁয়া।
বিউটি লজ্জা চাপার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। করুণ কন্ঠে বললো, “ভাবি, প্লিজ!”
“আরে প্লিজ কী! সুপ্রিয় ভাই যে রাতের আঁধারে— বউয়ের বিরহে ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে এখানে এসেছে, তুমি কি ভেবেছো আমি দেখিনি? আর তুমি ভেবেছো, এখন তোমাকে না জ্বালিয়ে আমি চুপচাপ থাকবো?”
বিউটি কপাল কুঁচকে সন্দীপ্তার দিকে তাকালো। “তুমি জেগেছিলে?”
“হুম, না জেগে থাকলে তো ওতো সুন্দর বিষয় মিস করে যেতাম!”
“সুপ্রিয় ভাই যে ওভাবে আসবে সত্যিই আমি ভাবিনি জানো?”
“তোমাদের কাল রাতে ওভাবে দেখে মনে হয় কি জানো? পৃথিবীতে এখনো সত্যিকারের ভালোবাসা বেঁচে আছে। অদ্ভুত শান্তিতে অন্তর শীতল হয়ে যাচ্ছিলো আমার। এই ভালোবাসাটা কখনোই হারাতে দিও না আরনাজ! ভালোবাসলে, ভালোবাসাকে যত্ন নিতে হয়। যত্নের অভাবে ভালোবাসা ম’রে যায়। ভালোবাসলে যত্নে তার গভীরতা বৃদ্ধি পায় বুঝলে?”
লজ্জা পেয়ে বিউটি মাথা নিচু করে নিজের কাজ করতে থাকলো। সন্দীপ্তা চা হাতে চলে গেলো।
সুপ্রিয় চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে চিন্তায় ডুবে গেলো। সে নিজেকে অপরাধী মনে করছিলো বিউটিকে একা গ্রামে ফেলে আসার জন্য। আনমনে ভেবে চললো।
“আমি মস্ত বড়ো ভুল করেছিলাম… বিউটির ওপর রাগ করে গ্রামে একা ফেলে আসা ঠিক হয়নি। ও কি আমাকে ক্ষমা করবে? যদি এখনো রেগে থাকে বিউটি তাহলে?” সুপ্রিয় নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিলো।
ওর ভাবনার মাঝেই বিউটি বারান্দায় এলো। তার হাতে এক কাপ চা। ওর দিকে অর্ধ খাওয়া চায়ের কাপটা এগিয়ে ধরে বললো,
“ আবার চা খাবে?”
সুপ্রিয় তাকিয়ে দেখলো বিউটি আবার সেই আগের মতো। মায়াময় হাসি, ঠোঁটে মৃদু লাজুকতা। তার মানে রাগ পড়ে গেছে। মনে মনে ভীষণ খুশি হলো সে। সেই খুশির আভা ওর চোখ মুখেও ঝলমল করছিলো।
“তোর এঁটো আমি খাবো?”
বিউটি চায়ের কাপটা তার হাতে দিয়ে বললো, “স্ত্রীর অর্ধ খাওয়া চা খেলে মহব্বত বাড়ে, ঝগড়াঝাটি কম হয়।”
“ভূয়া কথা!” ঠোঁট বেকিয়ে বললো সুপ্রিয়। বিউটি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ ছিনিয়ে নিতে নিতে বললো,“খেতে হবে না তোমাকে আমার অর্ধ খাওয়া চা!”
“ঝগড়া করছিস কেন? আশ্চর্য!”
“ঝগড়া করছি না।”
“এই যে রেগে যাচ্ছিস! চা কেড়ে নিলি। এটা কি ঝগড়া না?”
“এইযে এখন আমাদের মধ্যে ঝগড়া হলো, এই ছোটখাটো ঝগড়াটাকে যদি আমাদের সম্পর্কের চেয়ে বড় হয়ে যায় আমার আর তোমার কাছে তাহলে কিন্তু সমস্যা।”
“এমন আমি ভাববোই না কখনোই। শোন, যে সম্পর্কে যত বেশি ঝগড়া সে সম্পর্কে ততো বেশি ভালোবাসা!”
সুপ্রিয় বিউটির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল্য। তার চোখে অপরাধবোধ ভেসে উঠলো মূহুর্তেই। ম্লান কন্ঠে বললো,
“তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, জানি আমি। তোকে ওভাবে একা গ্রামে ফেলে আসা উচিত হয়নি আমার। এক্সট্রেইমলি স্যরি!”
বিউটি হেসে বললো, “আচ্ছা, এসব এখন থাক। বরং বলো, নাস্তা খাবে এখন?”
সুপ্রিয় এই সহজ কথার মধ্যে লুকানো ভালোবাসার ইঙ্গিত বুঝতে পারলো। তার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। বললো,“চল!”
হাশেম আলী যখন ঘর থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে এলেন, তখন সুপ্রিয় চুপচাপ বসে ছিল টেবিলি।
“তোমার অফিস নেই সুপ্রিয়?” বিউটির বাবার স্বরে একটা মৃদু গমগমে গম্ভীরতা, তবে তা পুরোপুরি ঠাণ্ডা স্বরের।
অপ্রস্তুত হয়ে সুপ্রিয় উঠে দাঁড়ালো।
“জ্বি, চাচা আসলে আজ আমি ছুটি নিয়ে এসেছি।”
হাশেম আলী তাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখলেন। মেয়ের দুদিন মনমরা হয়ে থাকা লক্ষ্য করে ধরতে পেরেছিলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে দুজনের মধ্যে। এতে করে সুপ্রিয়র প্রতি কিছুটা মনক্ষুন্ন ছিলো। তবে সকালে দেখেই মনটা হালকা হয়ে গেছে। বিউটি মা ভাবির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। হাশেম আলী টেবিলে বসলেন৷ সুপ্রিয়কেও বসতে বললেন। সুপ্রিয় বসলে বললেন,
“কিছু সম্পর্ক আছে যেগুলো দায়িত্বের মতো, আর কিছু ভালোবাসার মতো। তুমি কোনটার মধ্যে আছো সেটা বুঝতে পারলে জীবন সহজ হবে। আর যদি ভালোবাসা আর দায়িত্ব দুটোর পার্থক্য ধরতে না পারো তবে সেই সম্পর্কে ভ্যালু থাকে না৷”
হাশেম আলীর কথাগুলো সুপ্রিয়র মনের গভীরে আঘাত করলো। সে মাথা নিচু করে রইলো। সত্যিই তো সে এতো দিন বিউটির প্রতি শুধুই দায়িত্ব পালন করে গেছে। ওকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারেনি একটা অজানা দ্বিধা থেকে। সেই দ্বিধা টা বোধহয় একটু একটু কে’টে যাচ্ছে, সে ঢের বুঝতে পারছে। তাই সে হাশেম আলীর হাত ধরে বললো,“ আমি জানিনা চাচা, বিউটিকে আমি কতটা সুখী করতে পারবো তবে আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি ওর হাত ছাড়বো না৷ ওকে কখনোই আমি একা করে দেবো না৷ ওর কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ আমি করবো না। ওকে ভালো রাখতে যা যা করতে হয় সেই সবকিছুই করে যাবো আজীবন। এটুকু ভরসা রাখবেন।”
খাওয়া শেষে দুজনেই ঘরে আসলো। বিউটি বললো,“তুমি বাবার কথায় কিছু মনে করো না। আসলে বাবা এই দুদিন আমাকে মনমরা থাকতে দেখেছে তাই একটু ওভাবে বলে ফেলেছে! ”
“আমি বুঝতে পেরেছি, পাগলী।
“সত্যি?”
“তিন সত্যি!”
বিউটি প্রসন্ন হাসলো। বিনিময়ে সুপ্রিয়ও হাসলো। তারপর কাছে টেনে আলতো জড়িয়ে ধরলো বিউটিকে। একটা সম্পর্ক শুধু অনুভূতির বিষয় নয়, ভালোবাসা, দায়িত্ব আর সমঝোতারও ব্যাপার।
#চলবে
#প্রিয়_প্রত্যয়
#পর্ব১৫
#রাউফুন
মিনহাজ অফিসে বসে আছে। সম্পুর্ন মনোযোগ তখন ল্যাপটপের স্ক্রিনে। রুমকি সামান্য গলা খাকাড়ি দিলো মিনহাজের মনোযোগ আকর্ষণ করতে। মেয়েলি শব্দ পেয়ে মিনহাজের মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো। চোখ তুলে তাকালো না পর্যন্ত মিনহাজ স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকেই বললো,“কিছু বলবেন?”
রুমকি সামান্য ভড়কালো কন্ঠটা শুনে। কি মিশে ছিলো সেই কন্ঠে সে জানে না৷ আমতাআমতা করে বললো,“ইয়্যেস স্যার! আমার একটু ছুটির প্রয়োজন!”
“কি কারণে?”
এই মূহুর্তে বেশ লজ্জা পেলো রুমকি। কাচুমাচু ভঙ্গিতে ভাবলো লোকটা কি সত্যিই কিছুই জানে না? মৃদু এবং কোমল গলায় বললো,“বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে সেজন্য!”
“ওকে!”
“জ্বী স্যার?”
“ছুটি মঞ্জুর!”
“থ্যাংক ইয়্যু স্যার!”
বিনীত কন্ঠে বলে রুমকি মিনহাজের দিকে তাকালো। কি সুন্দর মানুষ টা। ইশ, এই লোকটা যদিও গম্ভীর তবুও ওর তাকে লাগবে। বেশ পছন্দ করে সে মানুষ টাকে।
“আর কিছু বলার আছে?”
“না স্যার!”
“তাহলে যাচ্ছেন না কেন?”
রুমকি কাচুমাচু ভঙ্গিতে মিনহাজের কেবিন থেকে বের হলো। দরজা পেরিয়ে রুমকির মনে হলো, তার হৃদস্পন্দন যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। মিনহাজের স্বল্প কথায় অথচ গভীর ব্যক্তিত্ব তাকে প্রতি মুহূর্তে মুগ্ধ করে।
“লোকটা গম্ভীর, তবুও এত চমৎকার! ইশ… মানুষ টা আমার হবে ভাবতেই ভালো লাগছে।” রুমকি মনে মনে গদগদ হয়ে গেলো।
মিনহাজ ল্যাপটপে চোখ রেখে কাজ করলেও মনের এক কোণে রুমকির আচরণ নজরে এলো। এমন গায়ে পড়া মেয়েদের ও সহ্য করতে পারে না। মেয়েটার হাবভাব দেখলে শুধু সে কেন যেকোনো পুরুষ মানুষ বুঝে ফেলবে তার মনে কি চলছে। এতো সব ভাবনাকে দূরে ঠেলে মিনহাজ কাজে মনোযোগ দিলো। নুহাশ আজ অফিসে আসেনি। ওর বোনকে কলেজে ভর্তি করাবে বলে ছুটি নিয়েছে।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মিনহাজ অফিসের কাজ শেষ করে নিজের গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলো। চলতি পথে রাস্তার একপাশে ভিড় দেখে গাড়ি থামালো। কৌতূহলবশত সে নেমে গেলো। ভিড় ঠেলে সামনের দিকে গিয়ে দেখলো, একজন বৃদ্ধ রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মিনহাজ নিজের রুমাল দিয়ে বৃদ্ধের মুখ মুছে দিলো। দ্রুত লোকটাকে তার গাড়িতে বসিয়ে নিকটস্থ ক্লিনিকে নিয়ে গেলো।
ক্লিনিকে বৃদ্ধ কিছুটা সুস্থ হলো। মিনহাজ তাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার নাম কী? এই অবস্থা হলো কিভাবে আপনার?”
“মোসলেম আলী,” বৃদ্ধ নাম বললেন।
তারপর থেমে ধিমি স্বরে ভেঙে ভেঙে বললেন,
“আমি আমার ছেলের সঙ্গে থাকতাম। কিন্তু আজ সকালে ঝগড়া হয়েছে ওর বউর সঙ্গে আমাকে নিয়ে। ওদের ভালোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি। বিয়ে করেছে, ছেলের বউ আমাকে সহ্য করতে পারে না। বুড়ো বুড়ো বলে গালি দেয়। উঠতে বসতে কথা শুনতে হয়। কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে আমার।”
মিনহাজ চুপ করে শুনলো। তার মনে হলো, দায়িত্ব এড়ানোর জন্য সম্পর্ক ভাঙা উচিত নয়। নিজের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লো। সেও একসময় সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দিতো না। কিন্তু আজ সময়ের পরিবর্তনে বুঝেছে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই জীবনের আসল মূল্য। মিনহাজ তাঁর হাত আঁকড়ে ধরে বললো, “আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমি নিলাম চাচা! এভাবে হুটহাট বের হবেন না রাস্তায়! আজ যদি কিছু হয়ে যেতো আপনার?”
বৃদ্ধ মিনহাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন৷ মিনহাজ তাকে আশ্বস্ত করে নুহাশকে করলো। বৃদ্ধর কথা জানালো। নুহাশ আগামীকাল আসবে বাড়িতে কিছু একটা প্রব্লেম হয়েছে সেজন্য আজ রওনা দিতে পারেনি। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেলো মিনহাজ। কন্ঠ টা চিনতে একদমই ভুল হলো না ওর।
“বাঁচাল মেয়েটা ঐভাবে কাঁদছে কেন? স্ট্রেঞ্জ!”
বিড়বিড় করলো মিনহাজ।
•
রাতের শহর নিস্তব্ধ। মৃদু বাতাসে জানালার পর্দা দুলছে। চাঁদের আলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে পূর্বাকাশে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। সুপ্রিয় আর বিউটি ফিরে এসেছে তাদের নিজের ছায়াঘেরা বাসায়। দিনভর ক্লান্তি শরীরের ভাঁজে ভাঁজে জমে গেলেও ওদের মনে অদ্ভুত প্রশান্তি। সংসারের কাজগুলো সেরে বিউটি বারান্দায় এসে বসেছে।
বিউটি জানালার পাশ দিয়ে বারান্দার গাছগুলো দেখছে। হঠাৎ সুপ্রিয় এসে ওর পাশে বসলো।
“ফ্রেশ হও আমি কফি আনছি!” বিউটি উঠে দাঁড়ালো।
সুপ্রিয় তার দিকে তাকিয়ে নাক টেনে বললো,“এটাই মিস করেছি সবচেয়ে বেশি!”
“ওহ, তার মানে আমার বানানো কফিই শুধু মিস করা হয়েছে, আমাকে নয়!”
চাপা অভিমান প্রকাশ পেলো তার কন্ঠে।
“আরেএএ এটা কখন বললাম? অফিস থেকে আসার পর তুই কফি করে দিতিস, কফি খেয়ে আমার মাথা ব্যথা কমে যেতো। তোর হাতে জাদু আছে বুঝলি? এতো ভালো কফি আমি কখনোই খাইনি!”
“এবারে ফুলে আমি আকাশে ফানুস হয়ে উড়বো। আর বলো না প্লিজ!”
“ভারী মুশকিল তো, তুই তো আমাকে পাত্তায় দিচ্ছিস না! ছোটো বাচ্চাদের মতো ত্যাড়ামি করছিস দেখছি!”
“আমি ত্যাড়ামি করি? আমি?”
“হ্যাঁ করিস, আর এখনো করছিস!”
সুপ্রিয়র ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি এঁটে আছে। সুপ্রিয় কথাটা শেষ করতে পারলো না বিউটি ফোসফাস করতে করতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। ”আজকে এমন কফি খাওয়াবো না বুঝবে আমি কি জিনিস!” বিড়বিড় করলো বিউটি।
সকালের আলো ঘরে আসতেই সুপ্রিয়র বাবা মোজাম্মেল আহমেদ আর মা মহিমা বেগম তাদের চা খেতে বসেছে। দুজনের কথায় হাসি মিশে যাচ্ছে।
“চা টা খুব ভালো হয়েছে কি বলো?,” মহিমা বেগম বললেন।
মোজাম্মেল আহমেদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “হুম। একটা আস্ত লক্ষী মেয়েকে বাড়ির বউ করে এনেছি৷ এমন মেয়ে লাখে একটা।”
মহিমা বেগম একটু হেসে বললেন, “তা তো দেখতেই পাচ্ছি। শাশুড়ি হিসেবে আমায় খুঁত ধরার সুযোগ ই দিচ্ছে না মেয়েটা।”
মোজাম্মেল ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললেন, “সেই সুযোগ বোধকরি কখনোই পাবে না মহিমা।”
দুজনেই হাসলেন। বিউটি দ্রুত কাজ সেরে নিচ্ছে। ওর মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ। সুপ্রিয়র সঙ্গে অভিমান চলছে। কফির বিষয় নিয়ে। দুজনেই দুদিকে ফিরে শুয়ে পড়েছিলো রাতে৷ ও বাড়ি থেকে আসার পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে শান্তি পায় না৷ সেখানে গতকাল সামান্য বিষয়ে দুজনে অভিমান করছে। সুপ্রিয় রেডি হচ্ছে। এর মধ্যেই হাঁক ছেড়ে ডাকলো,“বিউটি শুনে যা!”
মহিমা আর মোজাম্মেল ছেলের ধৃষ্টতা দেখলেন।
“এখনো বউকে তুই সম্বোধন করছে তোমার ছেলে? থাপড়ে ওর গাল ফাটিয়ে দেবো আমি!”
“আহা, রাগ করো না। পুরনো অভ্যাস ছাড়তে সময় লাগবে একটু!”
অতঃপর মহিমা বেগম বিউটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,“বিউটি সুপ্রিয় ডাকছে যা শুনে আয়! এদিকটা আমি দেখছি।”
বিউটি হাতের কাজ রেখে রুমের দিকে পা বাড়ালো। গাল ফুলিয়ে রুমে ঢুকতেই সুপ্রিয় হেঁচকা টানে বুকের উপর ফেললো ওকে। নাকে নাক ঘষে ফিচেল গলায় বললো,“কাল রাত থেকে জ্বালাচ্ছিস কেন? সামান্য কফি নিয়ে কেউ এমন করে?”
“হ্যাঁ করেই তো, তুমি তো আমাকে ঐ কফির জন্যই মিস করেছো, এছাড়া অন্য কোনো কারণ তো নেই!”
“ঠা’টিয়ে চ’ড় লাগাবো। দুই লাইন বেশি বুঝতে বলেছি তোকে?”
“ছাড়ো, কাজ আছে আমার!”
“কাজ পরে করবি! এখন আমার একটা কাজ করে দে!”
“কি কাজ?”
“শার্টের বোতাম ছিড়ে গেছে, লাগিয়ে দে!”
“পারবো না, অন্য শার্ট পড়ো! এটা রেখে যাও!”
“এখন শার্ট পড়ে ফেলেছি! আয়রন করা আর শার্ট নেই।”
বাধ্য হয়ে বিউটি সুই সুতা নিয়ে সুপ্রিয়র শার্টের বোতামে হাত দিলো। সুপ্রিয় ওর উদর আকড়ে ধরলো দু হাতে৷ সামান্য উঁচু করে ধরতেই বিউটি অস্বস্তিতে পড়লো। কোনো রকমে বললো,“এভাবে কিভাবে বোতাম লাগাবো?”
“এভাবেই লাগাবি, না হলে দরকার নেই।”
এদিকে বিউটির অবস্থা শোচনীয়। একদিকে সুপ্রিয়র অবাধ্য স্পর্শ অন্য দিকে সুপ্রিয়র সৌষ্ঠব দেহে ফর্সা শরীরের লোমশসমুহ ওকে আকর্ষণ করছে। কি সুন্দর তার বক্ষ। বিউটি শুষ্ক ওষ্ঠ জোড়া ভিজিয়ে নিলো৷ সর্বাত্মক এক অজানা শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছে। সুপ্রিয়র অবাধ্য হাত জোড়া বিচরণ করছে ওর উদরে। বেসামাল হচ্ছে বিউটি৷ গলা শুকিয়ে এলো ওর। হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসছে যেনো। সুপ্রিয় ওর ঠান্ডা নাক ওর গালের সঙ্গে ঘষলো৷ ফিসফিস করে সুরেলা কন্ঠে বললো,
“তোর নাক এতো ঘামে কেন রে?”
বিউটি কিছু বলতে পারলো না৷ বোতাম লাগানো শেষ হতেই ছুটতে চাইলো কিন্তু সুপ্রিয় ওকে নড়তে দিলো না৷ আরও একটু শক্ত করে ধরতেই সুই গিয়ে লাগলো ওর বুকে। মৃদু শব্দ করলো সুপ্রিয়। বিউটি বিচলিত হলো। বললো,“দেখলে তো, ইশ বুকে লেগে গেলো। রক্ত বের হচ্ছে। কেন এমন করছো।”
“বের হতে দে। অল্প একটু র’ক্তে কি হবে?”
“সরো তুমি। দেখতে দাও!”
বিউটি শার্ট সরিয়ে দেখলো। অল্প র’ক্তে লাল হয়ে গেছে ফর্সা বক্ষ। আচমকা একটা কাজ করে বসলো বিউটি। ওষ্ঠ ছোয়ালো ব্যথাতুর স্থানে। শুষে নিলো র’ক্ত টুকু। বেসামাল হলো সুপ্রিয় বিউটির অল্প ছোয়াতে। চেপে ধরলো ওকে দেয়ালের সঙ্গে। হিসহিসিয়ে বললো,“আজকে কি অফিসে যেতে দিবি না?”
“আমি কি বলেছি সেটা?”
“কি করছিলি এটা?”
“ওখানে র’ক্ত বের হয়েছিলো তাই….!”
বিউটির কথা শেষ হলো না, টুক করে সুপ্রিয় ওর ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলো। প্রথমবার এমন মাতাল করা স্পর্শ পেয়ে বিউটি চেপে ধরলো সুপ্রিয়র শার্ট। মিনিট দুই পর ছাড়া পেলো সে। সুপ্রিয় একই প্রশ্ন আবারও করলো,“তোর নাক এতো ঘামে কেন বললি না তো! শুনেছি যে মেয়ে স্বামীকে বেশি ভালোবাসে তার নাক বেশি ঘামে। এই কথাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? যদি সত্যিই এমন কিছু হয় তাহলে তুই আমায় কতটা ভালোবাসিস বিউটি?”
বিউটি হাঁপাচ্ছিলো। জবাব দিতে পারলো না তৎক্ষনাৎ। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সুপ্রিয়কে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে নিচে চলে। ঠোঁট কামড়ে হাসলো সুপ্রিয়।
•
গ্রামের সীমানা পেরিয়ে শহরে এসেছে মারিয়াম। নুহাশ তাকে তার কাছে এনে একটা প্রাইভেট কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। নতুন পরিবেশ, নতুন স্বপ্ন। সবকিছু মিলিয়ে মারিয়াম বেশ এক্সাইটেড।
মারিয়ামের মনের কোণে বাসা বেঁধেছে অন্য এক অনুভূতি। কলেজ শেষ করে সোজা মিনহাজের অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে এটা। প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে বলা যায়। উদ্দেশ্য একটা নজর মিনহাজকে দেখা। নুহাশের নাম করে এখানে আসে সে।
আজকেও ব্যতিক্রম হয়নি। মারিয়াম অফিসের নিচে এসে হাজির হলো। তৃষ্ণার্ত মনটা অস্থির হয়ে আছে মানুষ টাকে দেখার জন্য। ইতিউতি করতে করতে সে অফিসের ভেতরেই প্রবেশ করলো। নুহাশের কেবিনের দিকে না গিয়ে সোজা দাঁড়ালো মিনহাজের কেবিনের সামনে। অফিসের বাকি স্টাফরা ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো। রুমকি নিজের ডেস্ক থেকে লক্ষ্য করলো তাকে।
উঠে এসে জিজ্ঞেস করলো,“কাকে চাইছেন আপু?”
“মিনহাজ স্যারকে!”
বলেই হাঁটা ধরলো। মারিয়াম কাচের গ্লাস ভেদ করে দেখলো মিনহাজ ব্যস্তভাবে কাজ করছে। মারিয়াম দরজায় দাঁড়িয়ে নক করে বললো, “স্যার, ভেতরে আসতে পারি?”
মিনহাজ না তাকিয়েই বললো, “আপনি কে?”
“আমি মারিয়াম। নুহাশ ভাইয়ের বোন। চিনতে পেরেছেন স্যার?” মারিয়াম বললো।
মিনহাজ এবার তাকালো। দেখলো শ্যামলা মেয়েটা কেমন ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পড়নে কলাপাতা কালারের ঢিলেঢালা থ্রিপিস। খুবই সাদামাটাভাবে কাধে হ্যান্ডব্যাগ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“বসি স্যার?” মারিয়ামের কথা শুনে মিনহাজ হাত দিয়ে ইশারা করলো বসার জন্য। তারপর জিজ্ঞেস করলো,“কী কারণে এসেছেন?”
“আসলে, কলেজ শেষ করে সরাসরি ভাইয়ার কাছে এসেছি৷ দেখলাম ভাইয়া কাজ করছে তাই ভাবলাম আপনার সঙ্গে দেখা করে যাই একটু। না মানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না তো তাই৷ এখানে আপনাকে ছাড়া তো আর কাউকে চিনি না তাই সরাসরি আপনার কেবিনেই এলাম!” এক নিঃশ্বাসে বললো মারিয়াম। কথাগুলো ও আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো। বুকটা ধুকপুক করছে ওর। কি অদ্ভুত, এতো ভয় করছে কেন তার? মিনহাজ বিড়বিড় করলো,“মেয়েটা এখনো সেই বাঁচালই রয়ে গেল।”
“আপনি কি বিরক্ত বোধ করছেন? কিছু বলছেন না যে!”
মিনহাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,“ কি বলবো? এসেই যখন পড়েছেন কফি খেয়ে যান!”
মারিয়াম একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, “ঠিক আছে, তবে আপনাকে বিরক্ত করলাম বলে ক্ষমা চাচ্ছি।”
মিনহাজ মাথা নাড়লো,“ না না, আপনি বিরক্ত করেন নি তো।”
যদিও কথাটা ফর্মালিটির সঙ্গে বলেছে মিনহাজ।কিন্তু সত্যি কথা বলতে সত্যিই ওর বিরক্ত লাগছে মারিয়ামকে। মারিয়ামও আচ্ করতে পেরেছে সেটা। সে কিছুটা আহত হলেও মিনহাজের গাম্ভীর্য তার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিলো। তার চোখে মিনহাজ যেন এক ধাঁধার মতো। মারিয়াম কল্পনায় বুনে যায় এক অন্য রকম গল্প। তার ভেতরে জন্ম নেয়া অনুভূতিগুলো যেন দিনে দিনে আরও গভীর হয়ে উঠছে। উম্মাদনা বেড়ে চলেছে তার। অথচ সে জানে, সে যে অথৈ নদীতে ঝাপ দিয়েছে, যার কূল কিনারা নেই। সাতরে পাড় খুঁজে পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীন!
#চলবে