প্রিয় বিকালফুল পর্ব-০৪

0
59

#প্রিয়_বিকালফুল(০৪)
#তানিয়া_মাহি(নীরু)

নিতুকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজাটা আটকে দিল উৎস। উৎস রুমের লাইট অন করতেই নিতু রুমের চারপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল। উৎস একটা চেয়ার নিতুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“বসুন।”

নিতু বাধ্য মেয়ের মতো চেয়ারে গিয়ে বসল। চেয়ারের ঠিক সামনেই খাট। সেখানে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে রইল উৎস। নিতু কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে শুধু উৎসকেই দেখে যাচ্ছে। কানে বার-বার উৎসর প্রথম বিয়ের কথা বাজছে। আগ্রহ দমাতে না পেরে সে বলে উঠল,

“আপনার ডিভোর্স হয়েছে?”

মাথা তুলে সোজা হয়ে বসল উৎস। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। নীতুর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ।”
“কতদিন আগে?”
“প্রায় পাঁচ বছর আগে আমার ঘর ভেঙেছে।”
“তার জন্যই আপনার মা আপনার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। বাড়িতে হয়তো আর কেউ নেই। আপনার ভাই বা বোন কেউ আছে?”
“না।”
“আপনার উচিৎ এখান থেকে গিয়ে সব সত্যি বলে দেওয়া।”

উৎস নিতুর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,“আম্মা একবার স্ট্রোক করেছে। মিনি স্ট্রোক কয়েকবার করেছে। ডাক্তার বলেছে আর দুই বার স্ট্রোক করলেই আম্মা মা*রা যাবে। তাছাড়া হুম*কি দিল ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেবে। সোহাকে, ওই পিচ্চি মেয়েটাকে বিয়ে করতে বাধ্য করবে। যাদের ফ্যামিলিকে দুই চোখে দেখতে পারি না আমি। ফ্যামিলির সবক’টা পাগল। কোনদিকে যাই বলুন তো! ”

কিছুক্ষণ নিরব রইল নিতু। উঠে দাঁড়ালো সে। জানালার দিকে গিয়ে বলে উঠল,“কী করবেন ভাবছেন?”

উৎস উত্তরে বলল,“বুঝতে পারছি না। আর যাই করি নিজের চেয়ে অর্ধেক বছর বয়সী ওই মাথামোটা মেয়েকে বিয়ে কিছুতেই করব না।”

“আপনি তো আমার কথা বলেছেন। ওই মেয়ের পর্ব তো ওখানেই শেষ। আমাদের বিষয়ে কী ভাবছেন?”
“জানি না।”

উঠে দাঁড়ালো উৎস। নিজেও জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,“কথাটা আপনাকে এই মুহূর্তে বলা বোকামি, গাধার মতো কাজ তবুও বলছি, বিয়ে করবেন আমাকে? তিনটা মাস সময় দিন আমাকে। আমি তিন মাসের ছুটিতে এসেছি। এর মধ্যে আম্মাকে সব বুঝিয়ে বলব নয়তো প্রথম জনের মতো আপনিও চলে গেছেন বলে আম্মাকে জানাবো।”

বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল নিতুর। বিয়েটা তো অন্যভাবেও হতে পারত। এভাবেই নাটকীয়ভাবে কেন সবকিছু হতে হবে তার সাথে? তার জীবনেই কেন নতুন নতুন নাটকের দেখা মিলে? বাহিরের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে উৎসর দিকে তাকালো নিতু। বলল,

“অভিনয় করতে বলছেন? এক বিপদ থেকে বাঁচিয়ে আরেকটা বিপদে ফেলছেন? এটা তো আরও ভয়ংকর বিপদ।”

“ভয়ংকর বিপদ কেন বলছেন? আপনার তো আশ্রয় প্রয়োজন তাছাড়া খুব সহজে তো দেশ ছেড়ে যেতেও পারবেন না। আপনি এখানে থেকেই না হয় আস্তেধীরে সবকিছুর ব্যবস্থা করুন। আমি আপনাকে সাহায্য করব।”

নিতু কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,“মাকে ঠকাবেন?”

“তাকে ভালো রাখতে তো আর কোন উপায় দেখছি না। আমি আবারও কাউকে ভালোবাসতে চাই না আর বিশ্বাসও করে হতাশ হতে চাই না।”

নিতু মাথা নিচু করে উৎসর থেকে নজর লুকিয়ে বলল,“ভালোবাসা একদিন, এক দেখা বা একবার কণ্ঠ শুনেও হয়ে যায়। আমি যদি আপনাকে এই তিন মাসে কোনভাবে ভালোবেসে ফেলি তাহলে আমার কী হবে? এর দায়ভার কি আপনি নেবেন? যদি আমার এই তিনমাসে আপনার সাথে সারাজীবন কাটানোর শখ জাগে তখন?”

কোন জবাব শুনতে পেল না নিতু। মাথা তুলে চাইল উৎসর দিকে। চোখে চোখ পড়ল দুজনের। উৎস বলল,

“এরকম কিছুই হবে না, নিতু। আমি আপনার থেকে দূরে থাকব। আমাদের সম্পর্ক বাহিরে আম্মার সামনে, মানুষের সামনে স্বাভাবিক হলেও সবার অন্তরালে আমরা এখন যেমন, তেমনই থাকব। আমাদের বিয়ের চুক্তিটা শুধু তিন মাসের হবে৷ এরপর আপনি মুক্ত।”

নিতু উৎসর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মৃদু গলায় বলল,“একটা ঘরে নারী-পুরুষের জীবনযাপন করার, একসাথে থাকার মানে বোঝেন, মেজর সাহেব?”

উৎস হেসে বলল,“মাসের পর মাস শুধু দেশের কথা ভেবে বেঁচে থাকতে হয়। এ হৃদয়ে দূর্বলতা খুব সহজে আসবে না। চিন্তা করবেন না।”
“ভেবে বলছেন?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট। আমার লজ্জা লাগছে এটা ভেবে যে, আপনার একটা উপকার করে এত বড় একটা বিপদে ফেলতে হচ্ছে।”

নিতু মৃদু হেসে বলল,“আপনার আম্মার জন্য আমি রাজি। তিনি ভালো থাকুক।”

কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হলো উৎসর দু’ চোখ। মৃদু গলায় বলল,“আমাদের নিজেদের সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। আমার আম্মা খুব বুদ্ধিমতী মানুষ। ”

নিতু উৎসকে আশ্বস্ত করে বলল,“ভয় নেই৷ আমি সামলে নেব। এখন চলুন৷ আমাদের সময় শেষ।”

রুমে দুজনের আলাপ আলোচনা শেষ হতেই বাহির থেকে তাদের ডাক পড়ল। উৎসের মনে এখনো দ্বিধা। নিজের মাকে বলা মিথ্যাটা সত্য করার জন্য কি একটা মেয়েকে এভাবে বিপদে ফেলা উচিত হবে? মন সায় দিল না উৎসের। একটা অচেনা, অপরিচিত মেয়েকে সে সাহায্য করার জন্য এ বাড়িতে এনেছিল তাকে নাটক, সিনেমার মতো হুটহাট বিয়ে তো করে ফেলতে পারে না। জীবন যে বড্ড কঠিন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, মেয়েটাকে এভাবে বিপদে সে ফেলবে না। মেয়েটা তারই সাহায্যের প্রতিদান হিসেবে বিয়ের মতো সম্পর্কে রাজি হয়ে জীবনটা নষ্ট তো অন্তত করতে পারে না। বিয়ে জিনিসটা কোন ছেলেখেলা নয়। এটা সারাজীবনের সম্পর্ক। উৎসের এখন নিজের ওপরই নিজের রাগ হচ্ছে। নিতুকে সে তিন মাসের জন্য বিয়ে করতে চায় এমন একটা প্রস্তাব দিল কীভাবে? এমন একটা নিচু মন মানসিকতার পরিচয় সে এত সহজে দিল! বিপদে পড়লে কি মাথা এভাবেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়? উৎস তো এমন মানুষ নয়! সে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

নিতু আর উৎস নিচে নেমে এলো। উৎসের বুক এখনো কাঁপছে। কিছুক্ষণ পর পর নিতুর মুখের দিকে দেখছে শুধু। নিতু বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে। ওদিকে উৎস হাঁসফাঁস করছে ভেতরে ভেতরে। দুজনকে পাশাপাশি বসানো হলো। এতটা সময় কেটে যাওয়ার পর নিতু মোটে একবার পাশে বসে পুরুষটির দিকে তাকালো। মন হয়তো কোন এক অজানা কারণে শান্ত হলো৷ মানুষটাকে নিজের ভাবতে ভালো লাগছে তার। কী অসম্ভব মায়া এ মানুষের কায়ায়! মনে মনে বলে উঠল,

“আপনি আমার কাছে থেকে এবার আর কিছুতেই ছাড়া পাচ্ছেন না, মেজর সাহেব। গুনে গুনে প্রায় এগারো বছর বিরহ সহ্য করেছি। সে যখন আপনার প্রাক্তন হয়ে গিয়েছে সুতরাং আজীবনের জন্য বর্তমান শুধু আমিই হব।”

ফরিনা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই উৎস উঁঠে দাঁড়ালো। নিস্তেজ গলায় বলল,“তোমার সাথে আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে, আম্মা। আমরা কি পাঁচটা মিনিট একটু আলাদা করে কথা বলতে পারি?”

ফরিনা বেগম গম্ভীরমুখে বললেন,“এসো।”

উৎস নিতুকে ওখানেই বসিয়ে রেখে মায়ের রুমে এসে বসেছে। মা এবং ছেলে পাশাপাশি বসে আছে। উৎস কীভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। বারবার শব্দেরা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে যতটা সম্ভব ধাতস্থ করে বলল,

“আম্মা আমি মিথ্যে কথা বলেছি। তোমার জিদকে প্রাধান্য দিয়ে, তোমার অসুস্থতাকে ভয় পেয়ে আমি একটা মেয়ের জীবন কিছুতেই নষ্ট করতে পারি না। উনি বিপদে পড়েছিলেন আর আমি সাহায্য করতে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু এর মধ্যে এতসব কান্ড হয়ে গেল। আমার কথায় উনি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছেন এই বিষয়টা আমাকে অবাক করছে। উনি অপরিচিত একটা মানুষকে বিয়ে করে নিতে চাচ্ছেন। আম্মা, তার ভালো একটা ক্যারিয়ার আছে। আমি উনাকে বিপদে ফেলতে পারি না, আম্মা। আমি তোমার ওই সোহাকেও বিয়ে করতে পারব না। পিচ্চি একটা মেয়ে।”

“আমি উনাকে ভালোবাসি, আম্মা। ভালোবাসতে যুগের পর যুগ সময়ের প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসা মুহূর্তেই হয়ে যায়। আমি ভালোবেসেই উনাকে বিয়ে করতে চাই, আম্মা। ভবিষ্যতের কথা আমি নিজেই ভাবতে পারব।”

অকস্মাৎ এমন কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বসে থাকা দুজনই দরজার দিকে তাকালো। নিতু একভাবেই উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে। ফরিনা বেগম দুজনের মুখে দুই কথা শুনে হতভম্বের ন্যায় দুজনের দিকে তাকাচ্ছেন। নিতু এগিয়ে আসতেই উৎস দাঁড়িয়ে গেল।

“কী বলছেন আপনি?”

নিতু নরম গলায় বলল,“আমি ঠিকই বলছি। আমাকে নিয়ে আপনাকে এত ভাবতে হবে না।”

ফরিনা বেগম এতক্ষণে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,“আমার কথা ভেবে তোমার বিয়ে করতে হবে না। তোমার কথা শুনে ভেবেছিলাম আমি আর তোমাদের জোর করব না কিন্তু মেয়েটা তো অন্য কথা বলছে। সে তোমাকে পছন্দ করেছে। সে যদি রাজি হয় তবুও বিয়ে করবে না? দেখো বাবা, আমার বয়স হচ্ছে৷ আমার সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। তাছাড়া তোমারও বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এসব ভেবেই আমি এমন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম।”

উৎস মায়ের কথার প্রত্যুত্তরে কোন কথা বলতে পারল না। সে শুধু নিতুর দিকে তাকিয়ে আছে। নিতু উৎসের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

“আপনি একবার ঠকেছেন বলে এত ভয় পাচ্ছেন? বিশ্বাস করুন, আপনাকে কোন চেষ্টা করতে হবে না। জোর করে তো আর সংসার করা যায় না। মনের অমিল হলে সংসার টিকিয়ে রাখাও যায় না পুরোটাই হাতের বাহিরে। তাছাড়া এখন সত্যিই আমার একটা ঘর প্রয়োজন। আপনি নিজেই বলেছেন, আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন৷ বাহিরে যে মানুষগুলো আছে তারা সবাই এটা জানে। এখন আপনি বিয়ে না করলে আমি যেমন ঘরছাড়া হবো ঠিক তেমনই আপনার আর আপনার আম্মার মানসম্মান নষ্ট হবে। বাহিরের পরিবেশ সম্পর্কে ভাবতে পারছেন? সকাল থেকে ঠিক কতদিন কী কী ফেস করতে হবে আপনাদের? আমার তো প্রাণটাই চলে যেতে পারে। আমি রিকুয়েষ্ট করছি আপনি একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। আমি নিজেই রাজি শুধু আমার জন্য।”

উৎস অন্যদিকে ঘুরে বলল,“বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়, নিতু।”

ফরিনা বেগম চকিতে বলে উঠলেন,“মানসম্মান নিয়ে খেলা করা যায়? যথেষ্ঠ বয়স হয়েছে তোমার। এখন ভাবো কী করবে? বাহিরের মানুষের মুখ তুমি আঠা দিয়ে আটকাবে নাকি রিভল*বারের গু*লি সেটা তুমি জানো।”

নিতু ছলছল চোখে আরজি জানালো,“দয়া-ই করুন নাহয় একটু। আপনি তো আমাকে চিনেন। পুরোপুরি জানেন হয়তো না কিন্তু যথেষ্ট চিনেন। অপরিচিত নই আমি আপনার। বাহিরেই যদি বিয়ে হয়ে যেত তাহলে তো অস্বীকার করতে পারতেন না। আমি জানি না, আপনার প্রতি এত কম সময়েই দূর্বলতা কেন এসেছে! আশা করছি আপনি আমার চোখের দিকে দেখলেই বুঝতে পারবেন।”

নিতু কথা বলার সময় উৎস তার দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনছিল। শেষ বাক্য বলাতেই চোখ সরিয়ে নিল সে। ফরিনা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যোত হলেন। দুই পা এগিয়ে বললেন,

“দুজন কথা বলে নাও আরও কিছু সময়৷ ”

প্রায় পনেরো মিনিট পর দুজনে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বেরিয়ে এলো। তাদের কাউকে দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুক্ষণ আগে ঠিক কী হয়েছে। উৎস বাহিরে এসেই মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আম্মা, কাজি সাহেব এসেছেন?”

ফরিনা বেগম মৃদু হেসে দুজনকে কাছে ডেকে বসালেন। রাতেই তার কথামতো মেজর মুবতাসিম ফুয়াদ উৎস এবং ক্যামেলিয়া কায়নাত নিতুর বিবাহ সম্পন্ন হলো। আত্মীয় কেউ কেউ বিয়ের পরে চলে গিয়েছেন আবার দুই একজন থেকে গিয়েছেন। ফরিনা বেগম এখন বেশ স্বাভাবিক। নিজেই নিতুকে নিয়ে অনেক্ষণ আগে নিজের রুমে গিয়েছেন। নিতুকে নিয়ে যাওয়ার আগে উৎসকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ যেন উৎস পোশাক পরিবর্তন করে নিতে পারে। কাজের মেয়েটাকে দিয়ে দুজনের জন্য খাবারও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

ফরিনা বেগম নিজের ওয়ারড্রব থেকে বেশ কয়েকটা শাড়ি বের করে বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে নিতুকে বললেন,“এগুলো সব আমার শাড়ি৷ আজকের রাতের জন্য এখান থেকে একটা নাও। আমি গতকালই উৎসকে বলব, ও তোমাকে সব কিনে দেবে। দুজন গিয়ে কিনে নিয়ে এসো৷ এখন যেটা পছন্দ হয় সেটা পরো। গায়ে যেগুলো আছে সব খুলে ফেলো। এই যে বক্সে হালকা কিছু গহনা আছে। সব পরবা। নতুন বউরে গহনা ছাড়া মানায় না। আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। শাড়ি পরতে পারো তো নাকি?”

নিতু একপাশে মাথা নেড়ে বলল,“জি আম্মা, পারি।”

“তাহলে পরে নাও। রুমে দিয়ে আসবে কেউ তোমাকে। অনেক রাত হয়ে গেছে।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ফরিনা বেগম।

নিতু বেছে বেছে সবুজ রঙের শাড়িটা নিল। মা বলে, সবুজ রঙে গায়ের রঙ নাকি ফুটে ওঠে। নিতুকে সবুজ রঙে অপ্সরা লাগে৷ শাড়িটা গায়ের ওপর নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো নিতু। বিড়বিড় করে বলল,

“ভাগ্য আমাদের আবার এক করে দিল, উৎস। শুধু এক নয় আমি আজ থেকে আপনার বিবাহিত বউ। আমি বড্ড লোভী মেয়ে৷ সংসারের লোভ শিরায় শিরায় ছড়িয়ে আছে। এই সংসার, আপনার মা এমনকি আপনি সব আমার হবেন। বাহিরে যেটা চলবে, আপনার সাথে ঘরেও সেটাই চলবে৷ আমি আমাদের কিছুক্ষণ আগে হওয়া কথাবার্তা সব ভুলে গেলাম। আমার নাম, যশ,খ্যাতি চাই না। এবার আমার আপনাকে চাই, উৎস। পুরোনো ভালোবাসা সামনে এসে দাঁড়ালে আমার কেন? ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য কারও নেই। তিন মাসে সংসার, সম্পর্ক কিছুই ভাঙবে না৷ আপনি নতুন করে প্রেমে পড়বেন। ভালোবাসবেন আমায়। আপনার আম্মাকে ভালো রাখার পরিবর্তে আপনাকে আমি চাইতেই পারি মিস্টার মেজর মুবতাসিম ফুয়াদ উৎস। ”

পোশাক পরিবর্তন করে শাশুড়ির সাথে টুকটাক কথা বলে নিতু যখন উৎসর রুমের দরজায় নক করল তখন ঘড়িতে রাত একটা৷ সমস্ত শহরের মানুষ হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে। জেগে আছে শহরের সেই প্রেমিক-প্রেমিকা বা প্রেমে উন্মত্ত যুগল।

নিতু দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করল। মিনিটের মাথায় উৎস এসে দরজা খুলে দিল। অ্যাশ কালারের টিশার্ট আর কালো রঙের ট্রাউজার প্যান্ট পরা সে। উচ্চতা এত বেশি যে, নিতুর নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। উৎস সামনে দাঁড়ানো সবুজ রঙের শাড়ি পরিহিতা নারীকে দেখছে। হালকা সাজ, হালকা গহনা, গাঢ় সবুজ রঙ নীতুর গায়ের ফর্সা রঙকে আরও উজ্জ্বল করেছে। উৎস নিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আবার সেজেছেন?”

নিতু মাথা নিচু করে বলল,“আম্মা জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে। এই যে, উনার শাড়িটা পরিয়ে দিল।”
“আম্মা পাগল হয়েছে। ভেতরে আসুন।”

নিতু ভেতরে আসতে আসতে বলল,“আম্মা তো আর জানে না আপনার মনের মধ্যে কী চলছে!”
“আপনি তো জানেন।”
“আমি সাজাতে নিষেধ করলে উনি বুঝে যেতেন না?”
“বুঝেছি। এখন বলুন কোথায় ঘুমাবেন?”
“কোথায় ঘুমাবো মানে?”
“বিছানায় নাকি সোফায়?”
“আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।”
“আমিও। তাহলে এক কাজ করুন। আপনি বিছানায় ঘুমান আর আমি নিচে ফ্লোরে ঘুমাই।”

নিতু খাট পর্যবেক্ষণ করে বলল,“খাট অনেক বড়৷ আমি এই প্রান্তে আর আপনি ওই প্রান্তে ঘুমালেও মাঝে আরও তিনজনের জায়গা থাকবে। আপনি খাটে ঘুমালে আমার কোন অসুবিধা হবে না। সবই যেহেতু সিনেমাটিক হচ্ছে, বিছানায় ঘুমানোটাও হোক।”

উৎস গলা খাঁকাড়ি দিয়ে উঠে বলল, “আপনার ঘুমানো ভালো?”

নিতু ভ্রু কুঁচকে বলল, “ভালো না মানে? ঘুমের মধ্যে কাউকে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই বা কারও কোথাও লা*ত্থি দেওয়ারও অভ্যাস নেই। নিন ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনার মান সম্মানে আঘা*ত করব না। নিশ্চিন্তে ঘুমান।”

চলবে….