#প্রিয়_বিকালফুল(২৬)
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
“ক্যান আই কিস ইয়্যু?”
নিতু এতক্ষণে উৎসের দিকে এগিয়ে এক হাতে তার দুই চোখ ঢেকে, গালে টুপ করে চুমু খেয়ে দুষ্টু হাসলো।
চোখ থেকে হাত সরিয়ে শান্তস্বরে বলে উঠল,
“বউকে জোর করে তুলে আনতে পারেন আর চুমু খেতে অনুমতি লাগছে?”
উৎস মৃদু হেসে নিতুর ঠোঁটের দিকে চেয়ে এগোতে এগোতে বলল,“বাচ্চাদের চুমু কে চেয়েছে?”
উৎসের এভাবে এগোনো দেখে উঠে দাঁড়ালো। উৎস নিজেও সাথে সাথে উঠে নিতুর হাত চেপে ধরে থামিয়ে দিল। দাঁড়িয়ে গেল নিতু। উৎস একহাতে রুমের আলো নিভিয়ে দিল। মোমের মৃদু আলো চারদিকে জ্বলজ্বল করছে৷ উৎসের নজর নিতুর মুখপানে। নিতু মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ব্যবধান নেই। উৎস ডান হাতের আঙুলে নিতুর গাল স্পর্শ করতেই পুরো শরীর একবার কেঁপে উঠল। চোখ বন্ধ করে নিল। হৎস্পন্দন দ্রুত হতে শুরু করল। উৎস অতিমাত্রায় কাছে থাকায় তার নিঃশ্বাসের উষ্ণ বাতাস নিতুর চোখ, মুখ, গালে আছড়ে পড়তে শুরু করল। গালে বুলিয়ে দেওয়া হাতটা আপনাআপনি নিতুর ঠোঁট স্পর্শ করল।
নিতুর সামনে প্রায় এক যুগের ভালোবাসা। এতদিন পর কাছে পাওয়ায় উন্মাদনা সাড়া দিল ভেতর থেকে। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই নিজের সবচেয়ে কাছে উৎসকে দেখে আর স্থির থাকতে পারল না নিতু। উৎসের সাথে নিজেও নিজেকে এগিয়ে দিল একধাপ। প্রথম চুম্বনে কেমন শিরশিরে অনুভূতি হলো নিতুর৷ আবেশে দুচোখ বুজে এলো। নিতু খামচে ধরল উৎসের শার্ট। সময় চলতে শুরু করল নিজ গতিতে। ঘড়ির কাঁটা সেকেন্ডের ঘর পূরণ করে মিনিটের ঘরে পদার্পণ করল।
দীর্ঘ সময়ের চুম্বনের ইতি টানতেই হাঁপিয়ে উঠল নিতু। চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠল,“মে*রে ফেলবেন নাকি?”
“এ ভালোবাসায় শুধু অভিমানের, দূরত্বের মৃ*ত্যু হোক।” বলেই নিতুকে কোলে তুলে নিল উৎস।
ধীরপায়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। নিতু শক্ত করে ধরে রাখল নিজের পুরুষটিকে। উৎস আস্তে করে নামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি থাকতে তোমার পরে যাওয়ার ভয় নেই, নিতু।”
নিতু আলতো গলায় বলল,“আরও আগে কেন আসেননি, উৎস? কত অপেক্ষা করিয়েছেন আমায়।”
“এখন তো চলে এসেছি।”
“দুদিন পর কাজের জন্য হলেও তো আবার চলে যাবেন।”
“পথ অনেকগুলো হলেও গন্তব্য এখন শুধু তুমিই, নিতু। আমি যেখানেই যাই এই বাড়িতে, এই ঘরে, এই মানুষটার কাছেই আমাকে ফিরতে হবে।”
নিতু উৎসের বুকে মাথা রেখে আহ্লাদী গলায় বলে উঠল,“আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না, উৎস। অনেক তো আপনাকে ছাড়া থাকলাম। এবার সব সময় কাছে থেকে দূরত্ব পুষিয়ে দিন।”
উৎস নিতুর গালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিল মুখটা। নিতু শুধু চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার স্পর্শগুলো অনুভব করতে থাকলো। উৎস যখন ভালোবাসার স্পর্শে নিতুকে দিশেহারা করে তুলছিল তখনই নিতু মৃদু আওয়াজে উৎসের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
“বউকে উপহার দিয়ে তারপর ছুঁতে হয় জানেন না?”
উৎস হাত টান করে খাটের সাইডবক্স থেকে রিভল*বারটা বের করে নিতুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“নাও, নিজের জানটাই তোমার হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিলাম। উপহার নাহয় পুরো আমিটাকেই দিলাম”
সময়ের সাথে গভীর হতে শুরু করল দুজন। রাগ, অভিমান ভুলে নিজেদের এগিয়ে দিল প্রিয় মানুষের কাছে। দূরত্ব ঘুচলো। ভালোবাসা প্রগাঢ় হতে থাকলো। রাতের সাথে গভীর হলো দুজনে। চলতে থাকলো দুজনের প্রণয়। ভুলে বসলো পুরো পৃথিবীকে। উন্মাদনা বাড়তে থাকলো সমান গতিতে। নিঃসঙ্গ রাতের অন্ধকার সঙ্গ দিল তাদের।
______
এক ভালোবাসাময় রাতের সমাপ্তি ঘটার পর দেখালো দিল নতুন আরেকটা দিন। সূচনা হলো নতুন সম্পর্কের। মৃদু বাতাসে জানালার পর্দা সরে যাওয়ায় আলো প্রবেশ করেছে ঘরে। অভ্যাস মোতাবেক সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো উৎসের। পিটপিট করে চোখ খুলতে আলো চোখে এসে পড়ল। নড়তেই হাতের ওপর ভারি কিছু বুঝতে পারলো সে। পাশে তাকাতেই নজর গেল নিতুর ওপর। দেদারসে ঘুমোচ্ছে সে। যেন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ বর্তমানে সে। চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, নিশ্চিন্তে প্রিয় মানুষের বুকে ঘুমোচ্ছে। কী নিষ্পাপ লাগছে তাকে! এক পলকে নিতুর মুখের দিকে চেয়ে রইল উৎস। অনুভব করল, নিতুকে ভালোবাসে সে, প্রচন্ড ভালোবাসে।
ঘড়িতে এলার্ম বেজে উঠতেই নড়ে উঠল। তড়িঘড়ি করে এলার্ম বন্ধ করে দিল উৎস। ধীরে ধীরে চোক খুললো নিতু। উৎস মৃদু হেসে বলল,
“গুড মর্নিং, বউ।”
নিতু নড়েচড়ে উৎসের দিকে আরেকটু চেপে এলো। বুকে মুখ লুকিয়ে আধো আধো শব্দে বলে উঠল,
“কয়টা বাজলো?”
“সাতটা।”
হুড়োহুড়ি করে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। শাড়ির আঁচল টেনে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে বলল,“এত দেরি হয়ে গেছে! ডাকবেন না একবার?”
“ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে ভালো লাগছিল তোমাকে তাই আর ডেকে তুলিনি।”
“পাগল আপনি!”
“কিছুটা।”
“ধুর! থাকেন ফ্রেশ হয়ে আসি।”
উৎস হাত বাড়িয়ে তোয়ালেটা নিজের হাতে নিল। নিতুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“নাও, আজ একদম গোসল দিয়ে বের হও। আজ এমনি এমনি মান সম্মান রক্ষা করতে গোসল দিতে হবে না। গোসল দেওয়ার মতো কাজ হয়েছে আমাদের মাঝে।”
লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল নিতু। তোয়ালেটা উৎসের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
“একদম অশ্লীল কথাবার্তা বলবেন না আমার সাথে।”
নিতু গোসল শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল উৎস আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
গাঢ় খয়েরী রঙের জরজেট শাড়িটা পরেছে নিতু। শাড়ির আঁচল ঠিকমতো না থাকায় আঁচল টেনে কোমরে গুজে নিল সে। আয়নার সামনে এসে ভেজা চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে ফেলল। আনমনে ধীরে ধীরে চুল মুছতে মুছতে রাতে উৎসের উন্মাদনার কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হলো সে। ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হলো।
আজকের দিনটা সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। জানালার পর্দা সরিয়ে একপাশে করে রাখল সে। বাহিরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল সে। পেছনে কারও পায়ের শব্দ শুনে সেদিকে ফিরতে প্রশস্ত বুকে ধাক্কা খেলো যেন। চোখ তুলে তাকালো সেদিকে। উৎস তার দিকেই চেয়ে আছে। উৎসের হাত কোমর স্পর্শ করতেই নড়ে উঠল নিতু। এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যখন তখন কাছে আসবেন না তো?”
উৎস মুচকি হেসে নিতুর দিকেই পা বাড়ালো।
“কখন আসব তাহলে? তুমি কি তবে তিন বেলা খাবার খাওয়ার মতো কাছে আসারও সময় নির্ধারণ করে দেবে?”
“হ্যাঁ। সেটাও নাহয় নির্ধারণ করে দিলাম।”
“সবকিছু নিয়মনীতি মেনে চলে না। আমি তো একেবারেই না।”
উৎসের এগিয়ে আসা দেখে নিতু কিছুটা পিছিয়ে গেল। চোখ গরম করে বলল,“এগোবেন না।”
“একটা চুমু।”
“অশ্লীল। দূরে থাকুন।”
“কয়েকদিন খুব জ্বা*লিয়েছ।”
“শোধ তুলবেন?”
“শোধ তো সমানে সমানে হয়। আমারটা তো অতিরিক্ত হবে।”
“কী?”
“নিয়মের অনিয়ম।”
“আম্মা!” বলে দরজার দিকে তাকাতেই থেমে গেল উৎস।
নিতুর নজর অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো। দরজা তখনো আটকানো। নিতু খিলখিল করে হেসে উঠল।
দরজার দিকে এগিয়ে যেতে গেলে উৎস দৌঁড়ে গিয়ে নিতুকে ধরে ফেলল। নিতু নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত। চেষ্টায় কিছুতেই সফল হচ্ছে না সে। উৎস নিতুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“একটা চুমু দেবে তারপর রুম থেকে বের হওয়ার পারমিশন পাবে। ভেবে নাও বাহিরে যাবে নাকি রুমে থাকবে।”
নিতু ভ্রু কুঁচকে শুধালো, “বাচ্চাদের চুমু হলে চলবে?”
“আপাতত ওটাতেই কাজ চালিয়ে নেব। পরের কথা পরে ভেবে দেখব।”
নিতু উৎসের গালে চুমু দিয়ে বলল,“এবার ছাড়ুন।”
“বাহিরে যাওয়ার এত তাড়া কেন? বাহিরে গিয়ে কী হবে?”
“বাহিরে গিয়ে চা করব। শাশুড়িকে এক কাপ দিয়ে আমার জন্য আর আমার বরের জন্য নিয়ে আবার রুমে ফিরব।”
উৎস আলগোছে এবার নিতুকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মৃদু গলায় বলল,
“রাতে বউ আর সকালে বউয়ের হাতের চা। আমার যে জবে ফিরে যেতে মনই চায়ছে না।”
“অসভ্য কোথাকার! ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি চা করে আনছি। একসাথে চা খাব।”
উৎস ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। নিতু সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাহিরে যেতে পা বাড়ালো। নিতুর ফোনটা পাশেই রাখা ছিল। মেসেজ আসতেই টুং করে শব্দ হলো। না চাইতেও ফোনস্ক্রিনে চোখ চলে গেল উৎসের। বন্যার মেসেজ এসেছে। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
“কী অবস্থা, মেজরের বিকালফুল?”
‘বিকালফুল’ শব্দটা দেখেই চোখে মুখে চিন্তার ছাপ দেখা দিল উৎসের মুখে। সাথে সাথে নিতুকে ডাক দিল সে। নিতু দরজাটা খুলে ফেলেছে এতক্ষণে। উৎসের ডাকে ফিরে সে। উৎস বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“মেজরের বিকালফুল মানে?”
#চলবে…..