#প্রিয়_বিকালফুল(৫২)
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
“তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রুকে যদি নিজে হাতে প্রাণে মা**রার সুযোগ পাও তাহলে সুযোগ কাজে লাগাবে?”
উৎসের কথায় থেমে গেল নিতু। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শুধালো,“মানে?”
উৎস পুনরায় শুধালো,“তুমি যদি তোমার শ*ত্রুকে প্রাণে মা*রার সুযোগ পাও যাকে তুমি মা*রতে চাইছিলে তাহলে মা*রতে পারবে? বুকে সাহস আছে?”
নিতু ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল,“তুমি কি প্রাণে মা*রার কথা বলছো?”
“তো কি থা*পড়াথা*পড়ির কথা বলব? এটায় সাহসের দরকার হয় নাকি?”
নিতু উৎসের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। হঠাৎ এরকম ধাঁচের কথা উৎস কেন বলছে সেটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। বেশ রহস্যজনক লাগছে তার কথাবার্তা। সে নিজে কিছু বলবে তার আগেই উৎস ফের বলে উঠল,
“তোমাকে একদিন বলেছিলাম, তোমার জন্য নিজের প্রাণও দিতে পারব আবার কারও প্রাণ নিতেও পারব। হয়তো এই কথা বাস্তবে প্রমাণ করার সময় এসেছে।”
উৎসের কথাবার্তা একদমই ঠিক লাগছে না নিতুর। সে শুধু পলকহীনভাবে চেয়ে রইল উৎসের দিকে। উৎস ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জানতে চাইলো নিতু চুপ কেন? নিতু শুকনো ঢোক গিলে জবাব দিল,
“তুমি আমার কাছে কী লুকোচ্ছো বলো তো? এসব হিন্টস আমি বুঝি না। পরিষ্কার করে বলো।”
“রাতে একটা ভিডিয়োক্লিপ দেখালে সব বুঝতে পারবে এখন আর কিছু বলব না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। চলো, বাসায় যেতে হবে।”
নিতু উৎসের হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,“হেয়ালি না করে কী হয়েছে বলবে একটু? তোমার কি মনে হয় আমি না শোনা অবধি স্থির থাকতে পারব? সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা হবে আমার।”
উৎস অন্যহাতে গাড়ির দরজা খুলে নিতুকে ভেতরে বসার ইশারা করল। নিতু অসহায় চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ উৎসের দিকে তারপর আর কোন কথা না বলে আস্তে করে ভেতরে গিয়ে বসল। উৎস নিজেও এবার গাড়িতে গিয়ে বসলো। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ি চলতে শুরুও করল।
নিতু এবং উৎস দুজনে অনেকটা সময় ধরে বাসায় ফিরেছে। বন্যার কল আসায় নিতুকে রুমে রেখে দুজনকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে বাহিরের দিকে চলে গেল উৎস। আগামী সপ্তাহে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে বন্যার। আশরাফের পরিবার বিয়ের কেনাকাটা শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। আশা প্রায় প্রতিদিন এটা ওটার ছবি পাঠিয়ে পছন্দ করে এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল দুজনের। নিতু বলে উঠল,
“ছবি কেন পাঠাতে হবে? তুই যাচ্ছিস না শপিংয়ে? নিজের বিয়ের কেনাকাটা নিজে করবি মনমতো। যদি কোনকিছু পছন্দ না হয়? পরে মন খারাপ করে বসে থাকতে হবে। আশরাফ ভাই বলেনি সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা?”
বন্যা আমতা আমতা করে বলল,“ও বাড়ি থেকে আমাকে নিয়ে যেতেই চেয়েছিল। একদিনে তো শপিং শেষ হবে না। আশরাফের আম্মা বলেছিল অন্তত চারদিন একটু সময় বের করে তাদের সাথে বের হতে কিন্তু আমার অফিস আছে তাছাড়া বিয়ের আগেই বরপক্ষের মানুষের সাথে বিয়ের কেনাকাটা করতে বের হব সেটা আব্বা পছন্দ করেন না। তিনি আমাকে নিষেধ করে দিয়েছেন। হবু শাশুড়ির জোরাজোরিতে একদিনের জন্য রাজি হয়েছেন। বিয়ের জন্য শাড়ি যেদিন কেনা হবে সেদিন যেতে দেবে। আশরাফ বলেছে সেদিনই শাড়িসহ যা যা আমাকে ছাড়া একদমই কেনা সম্ভব হয়নি ওগুলো কিনে ফেলবে।”
বন্যা থেমে নিতুকে শুধালো,“তুই কি তাহলে বিয়ের দিনই আসবি?”
“হ্যাঁ। একদম সকাল সকাল গিয়ে রেডি হব। তোকে বিদায় করে তবেই বাড়ি ফিরব।”
“আবার জুনিয়র এর মধ্যে চলে এলে আমিই আশরাফকে নিয়ে চলে যাব। ”
নিতু হেসে বলল,“ইয়েস ম্যাম, জুনিয়র এই সময়ের মধ্যে চলে এলে আপনাদেরই আসতে হবে আমি আর যেতে পারব না।”
দুজনের কথাবার্তা চলল অনেকক্ষণ। উৎস দরজায় দাঁড়িয়ে দরজা নক করতেই সেদিকে তাকালো নিতু। উৎস ইশারায় ফোনটা রেখে দিতে বলছে। নিতুও মৃদু হেসে বন্যার সাথে কথার ইতি টানলো। উৎস নিতুর জন্য ফল এনেছে। এক হাতে ফলের ঝুড়ি আর অন্যহাতে একটা প্লেট আর ফল কাটার ছু*ড়ি। উৎস সেগুলো এনে বিছানার ওপর রেখে নিজেও বিছানার ওপর বসতেই নিতুও ফোন রেখে সোজা হয়ে বসলো। উৎস বলল,
“এখন সবগুলো ফল অন্তত একটা করে খেতে হবে। আমি কোন না শুনব না। তুমি খেলেই এগুলো বাবুর খাওয়া হবে। বাবু আমাকে তখন কানে কানে বলেছে তার এগুলো খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি আজ সারাদিন একটা ফলও খেতে দাওনি তাকে।”
নিতু হাসতে হাসতে শুধালো,“কখন বিচার দিল সে তোমাকে? আমি এগারোটার দিকেও একটা ফল খেয়েছি। বাবু মিথ্যে বলেছে নাকি বাবুর বাবা মিথ্যে বলছে কোনটা?”
উৎস নিতুর দিকে একটা আপেল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“ওটায় বাবুর কিছুই হয়নি সেটা বলেছে। তাই এখন তোমাকে আবার খেতে হবে। তুমি এগুলো এখন খাবে। খাওয়া শেষ না হতেই দেখবে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ হাজির।”
নিতু শুধালো,“কী সারপ্রাইজ?”
“না খেলে বলছি না।”
নিতু ফলের ঝুড়ি নিজের কাছে নিয়ে বলল,“আমি খেয়ে নিচ্ছি। তুমি বিকেলের কথাটাও সম্পূর্ণ করোনি আবার এখন বলছো সারপ্রাইজ আছে?”
“বিকেলেরটা বাদ দাও সারপ্রাইজ এখনই পেয়ে যাবে। কয়েক মিনিটের ব্যাপার।”
নিতু উৎসের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,“তুমি আমাকে বেশি বেশি অপেক্ষা করাচ্ছো। কেন করাচ্ছো? তাড়াতাড়ি সব বলো আমাকে। আমার ভালো লাগছে না, না শুনতে পেরে।”
উৎস নিতুর গলার দাগে আরেক হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল,“বলব বলব সব বলব।”
নিতু চকিতে গলা থেকে উৎসের হাত সরিয়ে দিল। সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো উৎসের দিকে। ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করল,“তু তুমি সেদিন দরজার বাহিরে ছিলে?”
“কবে?”
“তুমি ছিলে তাই না?”
“কোনদিন, বলবে তো?”
“তুমি যেদিন এসেছ সেদিন।”
“দরজার বাহিরে কেন থাকব আমি? কী বলছো?”
“উৎস, সত্যি কথা বলো প্লিজ। তুমি আমার গলায় হাত দিয়ে কথা বললে কেন?”
উৎস হেসে বলল,“বউয়ের গলায় হাত দিয়ে কথাও বলা যাবে না?”
“কিন্তু তুমি গলার ওই দাগে হাত বুলিয়েই কেন বললে?”
“কেন দাগটা স্পেশাল কোন দাগ?”
“জঘন্য দাগ৷ এই দাগটা ভ্যানিশ করা গেলে শান্তি পেতাম।”
উৎস বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,“কেন?”
নিতু মাথানিচু করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। উৎস নিতুর মৌনতা খেয়াল করে বলে উঠল,
“মানুষকে প্রাণে মা**রার চেয়ে তাকে যখন তখন মে**রে ফেলতে পারি এই ভয়টা দেখালেই অনেক সময় অনেক ভয়ংকর মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে তার চোখেও ভয়ংকর মানুষ হওয়া যায় তাই না?”
নিতু মুখ তুলে চাইলো৷ উৎসের কথা তার বোধগম্য হচ্ছে না। বিকেল থেকে কী সব বলেই যাচ্ছে যার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না নিতু। কথাখানা বুঝে নিতে সে বলল,
“তোমাকে বারবার হেয়ালি করতে নিষেধ করছি তবুও কেন করছো? ক্লিয়ার করে বলো প্লিজ।”
উৎস অন্যদিকে চেয়ে বলল,“আমি তবু হেয়ালি করে কিছু অন্তত বলছি তোমাকে আর তুমি যে আমাকে তোমার অতীত বলার সাহসই করে উঠতে পারোনি, নিতু।”
নিতু ভ্রু কুঁচকে শুধালো,“ আমার অতীত? কোন অতীত? কী বলিনি তোমায়?”
“যেটা আমাকে তোমার অনেক আগে বলা উচিত ছিল।”
নিতু নিশ্চুপ উৎসের দিকে চেয়ে রইল। উৎসের ফোন বেজে উঠতেই সে রিসিভ করে কাউকে জানালো সে সদর দরজার সামনে গিয়ে এখনই দাঁড়াচ্ছে। ফোনটা রেখেই উৎস তাড়াহুড়ো করে প্রস্থান করল। নিতুকে বলা উৎসের শেষ কথায় নিতুর সন্দেহ জোড়ালো হলো৷ তবে কি সেদিন মায়ের সাথে কথা বলার সময় দরজার বাহিরে উৎস ছিল? কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? উৎস তো তার অনেক পরেই বাড়িতে এসেছিল। তবে উৎসের কথা নিতুর সেই ভয়ংকর আর নোংরা সেই অতীতকে নির্দেশ করছে কেন?
বিছানায় রাখা উৎসের ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হলো। অজান্তেই সেদিকে নজর গেল নিতুর। ফোনস্ক্রিনে অচেনা নম্বরের মেসেজ। চোখ বুলিয়ে নিল নিতু,
“স্যার, সিংহপুরুষের অবস্থা তো নাজেহাল। ডোজ কি কমিয়ে দেব?”
#চলবে……