গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যা :১১
লেখিকা : #আহিয়া_শিকদার_আহি
____________
ড্রয়িং রুমে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা। অসহায়ের মতো চেয়ে আছে সামনে থাকা অদিতি আর রাইমার দিকে। ১৫ মিনিট ধরে ওকে এভাবে দার করিয়ে রেখেছে। অদিতি আর রাইমার মুখ গম্ভীর। তাদের পাশেই খান বাড়ির বউরা মুখ টিপে হাসছে শুভ্রার অবস্থা দেখে। রিদ তার ফুপির অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” এবার তো ছেড়ে দে। আর কখনও এমন হবে না ”
শুভ্রার কথা শুনে অদিতি আর রাইমার কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা গেলো না। শুভ্রা আর কিছু না বলে রাইমা আর অদিতির মাথায় হাত দিয়ে একটা বারি মারলো।দুজনেই হালকা চিৎকার করে উঠলো।
” আমাকে কি তোদের ছ্যাঁচড়া মনে হয়? যাহ তোদের সাথে আর যাবোই না। কতো সময় কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলি। আমার পায়ে ব্যথা ধরে গেলো কিন্তু তোদের মন গলাতে পারলাম না। আমার মতো ছোট নিস্পাপ একটা মেয়েকে এভাবে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলি তোদের মায়া লাগলো না। তোদের সাথে আর কোনো কথা নেই আমার।”
অদিতি আর রাইমা হা করে তাকিয়ে আছে শুভ্রার দিকে। কোথায় তাদের এভাবে রাগ দেখানো উচিত কিন্তু সে জায়গায় যে দোষ করেছে সেই রাগ দেখাচ্ছে। কি আজব এই মেয়ে।
” দোষ করলি তুই আর এখন রাগ ও দেখাচ্ছিস তুই। অদ্ভুত বরই অদ্ভুত মানুষ তুই। তোর জন্য পাক্কা এক ঘন্টা ধরে বসে ছিলাম।”
” তাতে কি হয়েছে? বসেই তো ছিলি। শুনলাম নাস্তাও নাকি করেছিস তোরা। বিনা দাওয়াতে এতো খাবার খাওয়ানো হলো তোদের তবুও আমার নামে অভিযোগ করছিস। ”
বলেই বাড়ির বাইরের দিকে দৌড়াতে শুরু করে শুভ্রা। অদিতি আর রাইমা কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো বসে থাকে। তাদের খাবার খোটা দিলো? তারাও দৌড়ায় শুভ্রার পিছনে। আজকে ওকে হাতে পেলে কি যে করবে।
তাদের এমন কাণ্ড দেখে সকলে হাসতে শুরু করে। আনোয়ারা খানের চোখে পানি ছলছল করছে। ফারজানা খানের নজরে পড়তেই তিনি শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরেন।
” দেখলে ফারজানা, মেয়েটার সব গুণ ওর বাবার মতো হলেও হাসিটা একদম ওর মায়ের মতো।”
____________
রেস্টুরেন্টের ভিতরে ফাহিমের সাথে বসে আছে আরহাম। তাকে দেখে চেনার উপায় নেই। নিজেকে সম্পূর্ণ কালোতে আবৃত করে রেখেছে। বাকি দিনের মতো আজকে আর শুভ্র রঙ্গা কাপড়ে নেই সে। তার বদলে শরীরে জড়িয়েছে কালো শার্ট – প্যান্ট, মুখের মাস্ক থেকে মাথার ক্যাপ ও কালো। ফাহিমের অবস্থাও আরহামের মতো। আশেপাশের মানুষ হয়তো ধারণাও করতে পারছে না তাদের সাথে মন্ত্রী আরহাম শিকদার আছে।
বেশ কিছু সময় ধরে তারা বসে আছে রেস্টুরেন্ট এ। অপেক্ষা করছে কারোর আসার। আরহাম প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে। সময়ের কাজ সে সময়ের মধ্যেই পছন্দ করে।
হঠাৎ দরজার দিকে তাকায় আরহাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নজরে পড়ে কালো থ্রিপিস পরিহিত সেই অসভ্য মেয়েটাকে। ভুল দেখছে ভেবে একবার চোখ নামিয়ে আবার দেখে। কিন্তু নাহ্ মেয়েটা ভিতরেই প্রবেশ করছে। সাথে রাইমা আর অদিতিকেও দেখে।তারা আরহামদের থেকে একটা টেবিল বাদে বসেছে। দুই টেবিলের মাঝের টেবিলটা ফাঁকা।
” এরা এখানে কি করছে?”
” কারা ভাই?”
” ওদিকে দেখ”
ফাহিম ঘুরে তাকায় তার পিছনের দিকে। শুভ্রাকে দেখে অবাক হয় সে। কিন্তু আরহামের বারণ করায় শুভ্রার সাথে কথা বলে না। দুজনই চুপচাপ বসে থাকে।
_________
“আজকের সব বিল তুই দিবি”
” পারবো না”
” তুই পারবি তোর ঘাড় পারবে। আমাদের খাওয়ার খোটা দিস কতো বড় সাহস তোর। এখন আমরা যা যা খাবো তার সব বিল তুই দিবি।”
শুভ্রা আর কিছু বলে না। সে যে আজকে এদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না ভালো করেই জানে। অদিতি আর রাইমা মিলে অনেক খাবার অর্ডার দেয়।
” এই তোরা এতো খাবার খেতে পারবি?”
অবাক হয়ে বলে শুভ্রা। অদিতি আর রাইমা দাঁত কেলিয়ে হাসে। যার অর্থ আজকে তারা শুভ্রাকে ফকির বানিয়ে বের হবে রেস্টুরেন্ট থেকে। শুভ্রা একবার তাদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আশেপাশে চোখ ঘুরাতে শুরু করে।
কালো পোশাকে আবৃত দুজন মানুষকে দেখে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে শুভ্রার। কিন্তু কিছু না বলে চোখ ঘুরিয়ে নেয় সে।
” জানিস , আজকাল রাজনীতিবিদরা সকাল সকাল মেয়েদের কল করা শুরু করেছে।”
ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাইমারা। কিছু বুঝতে পারছে না শুভ্রার কথার। শুভ্রা ইশারায় তাদের কিছু বলে। তারা বুঝতে পেরে আড়চোখে তাকায় তাদের থেকে এক টেবিল দুরত্বে অবস্থানরত মানুষ দুটোর দিকে। আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয় তারা।
আরহাম বেশ বুঝতে পারছে তার কথাই বলছে শুভ্রা। তাই শুভ্রা আর কি বলে ভালো করে সোনার জন্য কিছুটা এগিয়ে বসে। ফাহিম আরহামের দিকে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকায়। আরহাম পাত্তা দেয়না সেদিকে।
” কি বলিস এসব শুভ্রা, রাজনীতিবিদরাও এসব করে নাকি।”
” তা আর বলতে অদিতি। একবার নয় দুবার নয় তিন-তিনবার কল দেয়।”
” ওমা,কে সেই অসভ্য রাজনীতিবিদ?”
” আরে আরে অসভ্য বলিস না তাকে। যতোই হোক মন্ত্রী মানুষ। তিনি কল দিয়ে আবার আমাকে অসভ্য বলে জানিস।”
এসব বলতে বলতেই তিনজনে হাসাহাসি করছে। এদিকে আরহাম রেগে আগুন হয়ে আছে। কি সাহস এদের। তাকে নিয়ে এসব বলছে। সাথে আবার নিজের ফুফাতো বোনটাও আছে। সাধে কি আর অসভ্য মেয়ে বলে এই মেয়েটাকে। আরহাম কোনোভাবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আছে।
ফাহিম পুরো ঘটনা না বুঝলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। মুখ টিপে হাসছে সে।
শুভ্রা এবার একটু জোরেই বলে উঠে,
” দেখতে হবে না এই শুভ্রা কে। কতো ছেলে পিছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেহাতই আমি একজনকে ভালোবাসি তাই তাদের ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারছি না। কিন্তু এভাবে রাজনীতিবিদ যদি কল করা শুরু করে তাহলে আমার কি করা উচিত বলতো তোরা?”
” আমার মনে হচ্ছে যে ছেলেরা তোর পিছনে পড়ে আছে তাদের মধ্যে একজন কে গ্রহণ কর। এই রাজনীতিবিদরা ভালো হয় না। একদিন কথা বললে সাতদিন অপেক্ষায় রাখে।”
শুভ্রা তাকায় রাইমার দিকে। রাইমার কথাটা বলার কারণ সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।
ফাহিম একবার তাকায় রাইমার দিকে। মেয়েটা মাথা নিচু করে খাচ্ছে।
কথা বলতে বলতেই শুভ্রাদের খাওয়া শেষ হয়। বের হওয়ার সময় শুভ্রা আরহামের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ধীর কন্ঠে বলে,
” মন্ত্রী মশাই, আপনি হয়তো জানেন না এই শুভ্রা আপনাকে ঠিক কতোটা চেনে। আপনি যে ভাবেই থাকুন না কেনো আপনাকে চিনতে শুভ্রার কয়েক সেকেন্ড ও সময় লাগবে না।
যাই হোক, কালো পোশাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে আপনাকে। পরের বার থেকে নিজের চোখ দুটো ঢাকার চেষ্টা করবেন।”
আরহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রাদের যাওয়ার দিকে। শুভ্রার বলা কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে সে। চিনে ফেলেছে তাকে? এই জন্যই তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বলছিলো। কিন্তু চোখ ঢাকার কথা বললো কেনো?ফাহিম শুনতে পেলো না শুভ্রার কথা।
শুভ্রারা বের হওয়ার পর পরই একটা ছেলে প্রবেশ করে রেস্টুরেন্টে। আরহামদের পাশে গিয়ে বসে।ছেলেটার এতো দেরি দেখে পূর্বের সব রাগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আরহামের। যতো রাগ ছিল সব রাগ গিয়ে পড়ে বেচারা ছেলেটার উপর।
__________
ফুচকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে শুভ্রা। তার সামনেই অদিতি আর রাইমা একের পর এক ফুচকা খেয়েই যাচ্ছে। তার যে খেতে মন চাচ্ছেনা এমন নয়। কিন্তু রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর তার পেটে সামান্য জায়গাও ফাঁকা নেই। কিন্তু এরা যেভাবে খাচ্ছে মনে হচ্ছে কতদিন থেকে কিছুই খায় নি।
” তোরা কি মানুষ?”
” কেনো কোনো সন্দেহ আছে?”
” এভাবে খাচ্ছিস কীভাবে? মাত্রই না এতো খাবার খেলি। ১৫ মিনিটও হয়নি এখনও।”
” আবার খাওয়ার খোটা দিচ্ছিস।আমরা কমই খাচ্ছি। তোর ভাগ্য ভালো আমাদের মতো বান্ধবী পেয়েছিস। ”
” এটা ভালো ভাগ্য বলে।”
অদিতি রেগে তাকায় শুভ্রার দিকে। শুভ্রা বোকা বোকা হাসি দেয়। যতোই যাই মুখে বলুক না কেন সে জানে কতটা ভাগ্যবতী হলে এমন বান্ধবী পাওয়া যায়। কিন্তু ওইযে বন্ধুদের মধ্যে একটা স্বভাব কখনও কোনো কিছু স্বীকার করবে না।
তাদের কথার মাঝেই একজন সেখানে এসে দাঁড়ায়।
” মাফ করবেন আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য। আমাকে কি এই ঠিকানাটা বলতে পারবেন।”
লোকটার কোথায় তিনজনই তাকায় পিছনের দিকে। একজন সুদর্শন লোক কে দেখতে পায়।
“না কোনো সমস্যা নেই। বলুন কোন ঠিকানা।”
লোকটি একটি কাগজ তাদের দিকে এগিয়ে দেয়। শুভ্রা কাগজ হাতে নিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে।
” আরে এতো আমার বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে। আপনি ওই ঠিকানার খোজ করছেন কেনো?”
” আমি ওখানে নতুন ভাড়াটিয়া।”
” আচ্ছা , আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি ।”
__________
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে শুভ্রাকে একটা ছেলের সাথে দেখে আরহাম। কিছু সময় সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।
অতপরঃ ফাহিমকে সাথে নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে আরহাম। এসব নিয়ে ভাবলে তার চলবে না। মন্ত্রী মানুষ সে কতো দায়িত্ব তার। সেদিকে মন দিতে হবে তার।
হঠাৎ মনে পড়ে সকালে বাসায় কি বলে এসেছিল আরহাম। সে যেহেতু রাজি হয়েছে তার মানে এতক্ষণে তার জন্য মেয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয় মনে জেঁকে বসে।কিন্তু কাকে?হঠাৎ বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে। আরেকবার তাকায় শুভ্রার দিকে। কেনো তার এমন হচ্ছে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। নিজের অনুভূতি গুলোকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
________
চলবে।