প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৪

0
86

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১৪
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

___________

ছাদে দাড়িয়ে আছে শুভ্রা।অপ্রত্যাশিত কিছু পাওয়ায় থমকে গেছে সে।নাহ্ অপ্রত্যাশিত নয়তো সেতো এটারি প্রত্যাশা করেছিল।শরীরে তার লাল রঙা শাড়ি জড়ানো। শরীরে নানান গহনা শোভা পাচ্ছে। হাঁটু সমান চুল গুলো বাতাসের তালে তাল মিলিয়ে উড়ছে সাথে শাড়ির আঁচলও যোগ দিয়েছে। অবাধ্য কিছু চুল মুখের উপর বার বার আঁচড়ে পড়ছে। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভাবান্তর নেই। সে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশ ধীরে ধীরে নিজের রং বদলাতে শুরু করেছে।হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে বৃষ্টি নামবে। আচ্ছা তার কি এখন খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিৎ? অবশ্যই খুশি হওয়া উচিৎ। সেতো এটাই চেয়েছিলো। তাহলে কেনো কান্না পাচ্ছে তার? এটা কি সুখের কান্না? মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে তার ভিতর।বাবা-মাকে বড্ড বেশি কাছে পেতে মন চাচ্ছে।

আরহাম মনোযোগ সহকারে দেখছে শুভ্রাকে। পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।এই চাহনিতে কোনো অধিকারহীনতা নেই। নেই কোনো অবৈধতা। সম্পূর্ণ হালাল তার জন্য। শুভ্রাকে এখন তার কাছে বড্ড বেশি স্নিগ্ধ লাগছে।একরাশ মুগ্ধতা ভরা চোখে দেখছে লাল শাড়ি পরিহিতা তার একমাত্র অর্ধাঙ্গিনীকে। কিছু সময় আগেই সে এই মেয়েটির সাথে হালাল সম্পর্কে জড়িয়েছে।

আচ্ছা এর আগে তো কখনও সে এভাবে কাউকে দেখে নি। তাহলে এখন কেনো এই অসভ্য মেয়েটাকে নিখুঁতভাবে দেখছে? আগে কখনতো বুকের বা পাশে এতো প্রশান্তি অনুভব করেনি। বেশ কিছুদিন ধরে সে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছিল। তাহলে আজ কেনো ব্যথার জায়গায় প্রশান্তি অনুভব করছে?

নিজের করা প্রশ্নের নিজেই জবাব পেয়ে গেছে আরহাম।তার সামনে থাকা অসভ্য মেয়েটিই ছিল তার বুকের সেই ব্যথার কারণ। এখন এই মেয়েটিই তার প্রশান্তির কারণ।

_____________

শুভ্রার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয় অদিতি। ড্রয়িং রুমের সকলে এখনো হাসছে তার অবস্থা দেখে। নীলিমা শিকদার এগিয়ে আসেন শুভ্রার দিকে। গরমে ঘামাত্মক শুভ্রার গালে হাত রাখেন তিনি। শুভ্রা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। হাসেন নীলিমা শিকদার।

“ওকে নিয়ে যাও।”

শুভ্রা কিছু বলার আগেই রূপন্তিরা ওকে নিয়ে যেতে শুরু করে নিজের রুমে। একপ্রকার জোর করেই নিয়ে যাচ্ছে।
ঘরে নিয়ে আসা পর্যন্ত কেউ ওর সাথে একটা কথাও বলে না।

বিছানার উপর বসায় শুভ্রাকে। রাইমা সাথে নিয়ে আসা ব্যাগ খুলে। ভিতর থেকে বের করে লাল রঙের একটি শাড়ি, মোটা দুটো হাতের বালা, কানের দুল আর হালকা কাজ করা একটি গলার হার। সব গুলোই স্বর্ণের।

সব জিনিস বিছানার উপর রেখে শুভ্রার হাতে শাড়ি ধরিয়ে দেয়। ঠেলে ঠুলে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় তাকে।
বাইরে থেকে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। তার পর তিনজনই বেশ আয়েশের সাথে বসে বিছানার উপর। একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠে।

শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা। তাকে কি শাড়ি পড়ার জন্য ওয়াশরুমে পাঠালো? কিন্তু কেনো?আর মন্ত্রী মশাইরা বা তার বাসায় কি করছে? জিজ্ঞেস করার জন্য বাইরে বের হতে নেয় শুভ্রা। কিন্তু দরজা খুলছে না।বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করা বুঝতে পারে।

” রাইমা, দরজা খোল। কি শুরু করেছিস তোরা?”

” আগে শাড়ি পরে নে তারপর দরজা খুলবো।”

” শাড়ি কেনো পড়বো আমি? তাছাড়া বাইরে মন্ত্রী মশাইরা কি করছেন?”

” সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আগে শাড়ি পরে আয়।”

” ভাবি , তুমি অন্তত দরজাটা খোলো”

” শুভ্রা, রাইমা যা বলছে তাই করো। শাড়ি পরে বেরিয়ে এসো।”

” ভাবি”

কিন্তু বাইরে থেকে আর কোনো আওয়াজ পেলো না শুভ্রা। বুঝতে ওদের কথা না শুনলে বাইরে বের হতে পারবে না। অগত্যা ফ্রেস হয়ে শাড়ি পড়েই নিলো।

” পরেছি, দরজা খোলো ”

শুভ্রার বলতে দেরি হলো কিন্তু দরজা খুলতে দেরি হলো না। অদিতি ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসালো। রাইমা হাত দিয়ে আলতো করে শুভ্রার দুই গাল চেপে ধরে সাজাতে শুরু করলো। এমন ভাবে ধরেছে শুভ্রা কোনো কথাই বলতে পারছে না। শুভ্রা নড়া চড়া শুরু করলে রুপন্তি জোরে একটা ধমক দেও। সাথে সাথেই শান্ত হয়ে যায় শুভ্রা।

শুভ্রার মুখে তেমন কোনো প্রসাধনি লাগায় না রাইমা। প্রয়োজন’ই পরে নি লাগানোর। রূপের দিক থেকে কোনো ভাবেই খারাপ নয় শুভ্রা বরংচ তাদের সকলের থেকেও সুন্দর দেখতে। চোখে কাজল, আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়। ব্যাস এতটুকুতেই মারাত্মক দেখতে লাগছে শুভ্রাকে। অদিতি আর রুপন্তি গহনাগুলো পরিয়ে দিতে শুরু করে।

” তোমরা এসব কি করছো বলবে আমাকে?”

” চুপচাপ বসে থাকো। একটাও কথা নয়। কিছুক্ষণ পর এমনিতেও জানতে পারবে।”

” কিন্তু,”

” চুপ করতে বললাম না তোমাকে।”

রুপন্তির রাগী কথায় চুপ হয়ে যায় শুভ্রা। মনে মনে কয়েকটা মধুর বাণী শুনিয়ে দেয় রুপন্তিকে। শুভ্রার লম্বা চুল গুলো খোপা করে ফেলে রুপন্তি।

“আসবো?”

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রার চার ভাই। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তারা। কিছু লুকানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।

“তোমরা আবার কবে থেকে আমার রুমে আসার জন্য অনুমতি নিতে শুরু করলে। আসো, আসো। দেখো না কি শুরু করে দিয়েছে আমার সাথে।”

চারজনই এসে দাঁড়ায় শুভ্রার পাশে। ফারহাদ শুভ্রার দুই গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। চোখে পানি চিকচিক করছে। কিন্তু ঠোঁটে হাসি বিরাজমান।

” মাশাআল্লাহ, আমাদের বোনিকে অনেক সুন্দর লাগছে। লাল পরী।”

” এভাবে কথা বলছো কেনো তোমরা। তোমাদের কি কিছু হয়েছে?”

উত্তেজিত হয়ে বলে শুভ্রা। চোখে মুখে আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। হাসে ওরা চারজন। তারা কিভাবে বুঝাবে তাদের ভিতরের অবস্থা। তাদের এই ছোট্ট পরীটা আজকে অন্য কারোর ঘরের বউ হতে চলেছে। তাদের বুকের একাংশ যে ছিঁড়ে যাচ্ছে তাকি বুঝতে পারছে না তাদের ছোটো বোনি ? বুঝবে কিভাবে সেতো জানেই না তার সাথে কি হচ্ছে।

” কি হলো তোরা ওকে নিয়ে আয়।”

রেজিনা খানের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে তাদের।শুভ্রার একহাত রিমন ধরে আরেকহাত রাহাত ধরে। নিয়ে যেতে শুরু করে তাকে বাইরে। পিছনে বাকিরা আসছে।
রাইমা ফাহিমের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ফাহিম কিছুই বলে না। তার মনে ঝড় বইছে। শুভ্রা শুধু সবকিছু দেখছে কিন্তু কিছুই বলছে না। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা তার ভাইদের চোখে সে পানি দেখেছে।

ড্রয়িং রুমে আরহামের পাশে বসানো হয় শুভ্রাকে। আরহাম কয়েক সেকেন্ড শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে।

কারো কথায় শুভ্রার ধ্যান ভাঙে।হতভম্বের মতো তাকায় সামনে থাকা লোকটির দিকে। আরেকবার তাকায় তার পাশে বসা আরহামের দিকে। সে এতোক্ষণ ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিলো যে বুঝতেই পারেনি কখন তাকে এখানে বসানো হয়েছে। এসবের মাঝেই আবারো একই কথা তার কানে বারি খায়।

“বলো মা কবুল”

আসে পাশে ভালো করে দেখে শুভ্রা। তার পরিবারের সকলেই আছে এখানে। এমনকি শিকদার পরিবারের ও। সকলের মধ্যেই আনন্দ দেখা যাচ্ছে।শুভ্রা প্রথমে ভাবলো হয়তো কল্পনা করছে সে সব কিছু।

” দিদিভাই, বল। উনি কি বলতে বলছে।”

“দাদুন!”

“বলে দেও”

একে একে সকলে বলতে শুরু করে শুভ্রাকে কবুল বলার জন্য। শুভ্রা সকলের কথা মনোযোগ সহকারে শোনে। এতক্ষনে শুভ্রা বুঝতে পারে তার বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু কার সাথে। বুকটা ধক করে উঠে ওর। তবে কি মন্ত্রী মশাইকে হারিয়ে ফেললো ও। বুদ্ধিমতি শুভ্রার এটা মাথাতেই আসছে না তার পাশেই তার মন্ত্রী মশাই বসে আছে। আর তো কোনো ছেলে এখানে উপস্থিত নেই।

শুভ্রার আরেকপাশে পাশে বসে থাকা ইশতিয়াক খান বোধয় বুঝলেন নাতনির অস্থিরতা। হাসলেন তিনি নাতনির এমন বোকা ভাবনা চিন্তায়। শুভ্রার হাতের উপর হাত রাখলেন তিনি। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

” দিদিভাই, তোর ওই পাশে যে তার সাথেই তোর বিয়ে।”

থমকে গেলো শুভ্রা। তার ডান পাশে তো মন্ত্রী মশাই বসে আছে। মন্ত্রী মশাইয়ের সাথেই তার বিয়ে। এতো বড় সারপ্রাইজ সে মোটেও আশা করেনি। কি অদ্ভুত এখন তার সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। কাজীর আরেকবার বলাতেই সে সকলের দিকে তাকায় , তারা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াতেই ধীরে ধীরে কবুল বলে দেয়।

” কবুল, কবুল, কবুল”

_________

শুভ্রার ভাবনার ছেদ ঘটে আরহামের ডাকে।বিয়েতো তো সে আনন্দের সাথেই করেছে কিন্তু এখন কেনো এমন মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে তার সাথে?

” এই মেয়ে, কি সমস্যা ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আকাশের দিকে। খুব তো ‘মন্ত্রী মশাই ভালোবাসি, ভালোবাসি’ বলে চিল্লাতে। এখন যখন আমি সম্পূর্ণটাই তোমার তাহলে আমাকে না দেখে আকাশের দিকে কি।”

কাঠ কাঠ গলায় বলল আরহাম। চোখ বড় বড় হয়ে যায় শুভ্রার। এটা তার মন্ত্রী মশাই! কি আশ্চর্য। মন্ত্রী মশাইয়ের মুখে শুভ্রার মতো কথা।

বিয়ের পরপরই ছাদে চলে এসেছিল শুভ্রা। কেউ তাকে বাধা দেয়নি। ছাদে উঠতে উঠেই তার চুলের খোঁপা খিলে যায়। সে আসার কিছুক্ষণ পর আরহাম এসেছে। কিন্তু শুভ্রা আকাশের দিকে তাকাতে এতটাই মগ্ন ছিলোযে আরহামের উপস্থিতি টের পায়নি।

আরহাম শুভ্রার একদম কাছে চলে আসে। ছাদের রেলিং এর সাথে শুভ্রাকে লাগিয়ে দুপাশে দুহাত দিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্রা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।দুহাতে খামচে ধরে তার মন্ত্রী মশাইয়ের পাঞ্জাবি। লজ্জায় তার ফর্সা মুখ মুহূর্তেই লাল হয়ে গেলো। চোখ জোড়া বন্ধ।এতক্ষণের সকল ভাবনা চিন্তা গায়েব।
আরহাম মুচকি হাসে শুভ্রার অবস্থা দেখে। তার কাছে বেশ ভালো লাগছে শুভ্রার এমন লজ্জামাখা মুখ। আরো লজ্জা দিতে শুভ্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে যায়। ফিসফিসিয়ে কিছু বলে সে।

কিন্তু এটা কি হলো শুভ্রা লজ্জা পাওয়ার বদলে উলটো রেগে গেলো। দুহাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আরহাম কে। গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো শুভ্রা।

আরহাম জোড়ে হেসে ফেললো শুভ্রার এমন কাজে। শুভ্রা অবাক হলো। তার জানামতে তার মন্ত্রী মশাই কখনও হাসেই না। কিন্তু এখন এভাবে হাসছে। মুগ্ধ নয়নে দেখছে শুভ্রা। পুরুষমানুষের হাসিও এতো সুন্দর হয় তার মন্ত্রী মশাইয়ের হাসি না দেখলে হয়তো জানতেই পারতো না।

হঠাৎ থেমে গেলো আরহাম। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। চোখ জোড়া ধীরে ধীরে রক্তিম হতে শুরু করলো।
আরহামের এমন পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পেলো না শুভ্রা।তার পিছনের দিকেই তাকিয়ে আছে আরহাম। সেও ফিরে তাকায় পিছনের দিকে। আতকে উঠলো শুভ্রা।

চলবে,,,