প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৭

0
104

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১৭
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

“ওহ্ আচ্ছা, সতীন আনবেন আমার তাইনা। আনুন কে বারণ করেছে আপনাকে?আমিতো আবার মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বউ , তার মতো না হলে কি আর চলে।আমিও আপনার জন্য সতীনের ব্যবস্থা করবো। তখন দেখবো কেমন লাগে আপনার।”

আরহামের মুখের উপর কল কেটে দিলো শুভ্রা। মাথা ব্যাথা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। কারোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো শুভ্রা। আপাততো তার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।

এদিকে আহাম্মকের মতো ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে আরহাম। তার মুখের উপর কল কেটে দিলো। এতো বড় সাহস এই মেয়ের।

” অসভ্য মেয়ে, ভালোবাসি বলতে বলতে কানের পোকা নড়িয়ে দিলো আমার আর এখন পাত্তাই দিচ্ছে না। কি ভাবে নিজেকে? একবার শুধু নিজের কাছে নিয়ে আসি তার পর হাড়ে হাড়ে বুঝাবো মন্ত্রী আরহাম শিকদার কি জিনিস। বড্ড বার বেড়েছে তোমার। এই এক মিনিট, ও কি বললো? আমার সতীন এর ব্যবস্থা করবে মানে?”

শুভ্রার কথার মানে ভালোভাবে বুঝতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আরহামের। মেয়েটা এবার বেশি বেশি করছে তার সাথে।

অনবরত পায়চারি করছে ফাহিম। চিন্তায় কপালে ভাজের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ভাবেই সে আরহামের সামনে যেতে চাইছে না।

আরহাম রেগে বের হয়। আজকে সে ওই অসভ্য মেয়ের কিছু একটা করেই ছাড়বে। মন্ত্রী আরহাম শিকদার যেচে কল দিয়েছে তবুও ভাব দেখায় তার সাথে।

আরহামকে বের হতে দেখে ফাহিম পালানোর রাস্তা খুঁজছে।সামনের দিকে দৌঁড়াতে যাবে তার আগেই আরহামের ডাক পড়ে। ফাহিম হালকা হাসার চেষ্টা করে আরহামের কাছে যায়। এতক্ষণ যতটুকু সাহস ছিল আরহামের রাগী মুখ দেখে সেটাও বেলুনের হওয়ার মতো ফুস হয়ে গেলো। এদিক-ওদিক দৃষ্টি ঘুরাচ্ছে ফাহিম।

” কি সমস্যা? নিশ্চই আবার ঝগড়া হয়েছে?”

হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় ফাহিম।

” আর কি?”

” ভাই, ও আবার ওর কাজ শুরু করে দিয়েছে। এবার কোনো ছোটো খাটো প্ল্যান করছে বলে মনে হয়না। সম্ভবত এবার ওর টার্গেটে আছে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। এখনো পাকাপক্কো খবর পাইনি।”

“আচ্ছা তুই যা, আজকের মতো দিয়ে দিলাম তোকে ছুটি।এসব আমি সামলে নিবো।”

উজ্জ্বল হয়ে উঠল ফাহিমের মুখ।ভাবতেও পারেনি আরহাম এভাবে রাজি হয়ে যাবে। আরহামকে বিদায় জানিয়ে একপ্রকার দৌড়ে বের হয় ফাহিম। দেরি করে গেলে আবার কি না কি শুরু হয়ে যাবে।

___________

রেস্টুরেন্টে বসে আছে রাইমা। বার বার ঘড়ির দিকে দেখছে। ঘড়িতে ১২ টা ৩৮ বাজে। আর মাত্র দুই মিনিট ১২ টা ৪০ বাজার।
দ্রুত পায়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে ফাহিম। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যার তার দিকে। সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। হাঁপাচ্ছে ফাহিম। সময়ের মধ্যে আসতে পারায় খুশি হলো। আজকে অন্তত এই নিয়ে কথা শুনতে হবে না তাকে।সামনে তাকাতেই রাইমার রেগে আগুন হয়ে থাকা মুখটা দেখে সব খুশি উধাও হয়ে গেলো। ভয়ে চুপসে গেল মুখ।

রাইমার মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে। কাঠফাটা গরমের মধ্যে ওকে আসতে হয়েছে।

“রাই দয়া করে আজকে কিছু বলো না। দেখো আমি সময় মতই এসেছি।এইযে দেখো কান ধরে উঠবস করছি কালকের ব্যবহারের জন্য।”

সত্যিই সত্যিই কানে ধরে উঠবস শুরু করলো ফাহিম। ঝটপট ফাহিমকে থামায় রাইমা। আশেপাশের সকলে দেখছে তাদের। এতো বড় একটা ছেলে এভাবে কান ধরে উঠবস করছে দেখে তারা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পাত্তা দিলো না ফাহিম আর রাইমা।

“এটাই শেষ সুযোগ তোমাকে দিলাম ফাহিম। এরপর আর কোনো সুযোগ পাবে না তুমি। বার বার ভুল করবে আর আমি ক্ষমা করবো? মোটেও না। এরপরে আর কোনো ক্ষমা পাবে না তুমি।”

রাগের সহিত কথাগুলো বলার চেষ্টা করলো রাইমা।ফাহিম বুঝতে পেরেছে রাইমা আর রেগে নেই ওর উপর।রেগে থাকার ভান করছে।

” আমার ঘাড়ে একটাই মাথা। এটা কাটার কোনো সখ আমার নেই। তাই আর কোনো ভুল করার ও সুযোগ নেই।আরেকটা কথা আর কোনোদিন যদি আমার সামনে অন্য কোনো ছেলের কথা বলো তাহলে কালকে যেভাবে থাপ্পর মেরেছিলাম ওভাবেই আবারো মারবো।”

রাইমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।ফাহিমকে জ্বালানোর জন্য গতকাল ও একটা ছবি দেখিয়ে প্রশংসা করছিল। যার ফলস্বরূপ থাপ্পড় খেতে হয়েছে।

ভাবনা থেকে বের হয়ে মুচকি হাস রাইমা। ফাহিমও হাসে। অতঃপর দুজন মেতে উঠে হাজারো গল্পঃ, অভিযোগ, অভিমান নিয়ে তাদের দুজনের তৈরি করা ভালোবাসার রাজ্যে।

________

বিকেল বেলা,,
বেশ ইতস্ততা নিয়ে বসে আছে রাইমা খান বাড়ির ড্রয়িং রুমে। কালকেই এই বাড়িটা তার ভাইয়ের শশুর বাড়ি হয়েছে। আবার আজকে শুভ্রাকে নেওয়ার জন্য এসে বসে আছে। না না শিকদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয় , তার একমাত্র মামাতো ভাই মন্ত্রী আরহাম শিকদারের হুকুম পড়েছে তার উপর। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের একমাত্র বউকে তার কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যার কারণে তার ফাহিমের সাথে এতো ভালো সময়টার বারোটা বাজিয়ে দিলো তার ভাই।ফাহিম নিতে আসতে চেয়েছিল শুভ্রাকে।জরুরি কাজ পরে যাওয়ায় রাইমাকে আসতে হলো। কিন্তু এখন খান বাড়িতে তো আর বলতে পারছে না, “আপনাদের মেয়ের জামাই আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে” তাই মিথ্যে বলেছে শুভ্রাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবে।বাড়ির কেউ আর এই বিষয়ে কিছু বলেনি। রাইমাকে তারা আগে থেকেই চেনে তাছাড়া এখন সে তাদের মেয়ের সম্পর্কে ননদ হয় , এখানে আপত্তি করার কিছুই নেই।

কিছুক্ষণের মধ্যে শুভ্রা তৈরি হয়ে একটা আসে রাইমার কাছে। অদিতির কথা জিজ্ঞেস করায় রাইমা বলেছে ওর বাড়ির সামনে থেকে ওকে নিয়ে নিবে।মাথা ব্যাথা থাকায় প্রথমে যেতে বারণ করতে চেয়েছিল শুভ্রা কিন্তু রাইমা বাসায় চলে আসার কারণে আর না করতে পারে নি।

গাড়িতে চোখ বন্ধ করে বসে আছে শুভ্রা। যার ফলে দেখতে পেলো না অদিতির বাড়ি পেরিয়ে এসেছে। রাইমা একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়ল।অন্তত অদিতিকে কেনো নিলোনা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো না তাকে।শুভ্রাকে না জানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে।

বেশ কিছু সময় পর গাড়ি থেমে যায়। চোখ খোলে শুভ্রা। দেখতে পায় একটা প্রায় ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামিয়েছে। অচেনা জায়গা মনে হলো শুভ্রার। রাইমার দিকে তাকাতেই দেখলো রাইমা আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” নেমে পর শুভ্রা ”

” এটা কোন জায়গা?আর অদিতি কোথায়?”

” নাম আগে তারপর বলছি।”

নেমে পড়লো শুভ্রা। সাথে সাথেই রাইমা ড্রাইভারকে গাড়ি বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে বলল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুভ্রার সামনে থেকে রাইমা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। কিছু বুঝতে উঠতে পারল না শুভ্রা। তাকে কেনো এখানে একলা রেখে চলে গেলো?

এসব আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝেই অতি চেনা পরিচিতি গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ শুনতে পেলো শুভ্রা। অবাক হয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখতে পেলো তার মন্ত্রী মশাইকে। গাড়িতে হেলান দিয়ে দুহাত বুকের সাথে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে শোভা পাচ্ছে গম্ভীরতা। সব কিছু বুঝতে পারল শুভ্রা।

আরহাম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রার দিকে। শুভ্রার ফোলা ফোলা মুখশ্রী অদ্ভুত মায়াময় লাগছে তার কাছে।বাচ্চা বাচ্চা দেখা যাচ্ছে। সাধারণের মধ্যেই একটা নীল রঙের থ্রিপিস পরে আছে, চুল গুলো বিনুনি করে সামনে রাখা,তাতেও যেনো উজ্জ্বল ফর্সা মেয়েটাকে আরো মারাত্মক সুন্দর লাগছে তার কাছে।

“এইযে মন্ত্রী মশাই কোথায় হারিয়ে গেলেন”

শুভ্রা যে তার সামনে এসে কখন দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি আরহাম। শুভ্রার কোথায় দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হলো আরহাম। সেতো এসেছে শুভ্রাকে শাস্তি দিতে। কিন্তু এভাবে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কেনো শুভ্রার প্রতি। নিজেকে গম্ভীর করে নিলো আরহাম।

“গাড়িতে ওঠো”

শান্ত কণ্ঠ কিন্তু শুভ্রার কাছে ভয়ংকর শোনালো। কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। আরহাম একা এসেছে সাথে কোনো ড্রাইভার নেই। তাই ভদ্র মেয়ের মতো ড্রাইভিং সিটে পাশে বসলো শুভ্রা। পিছনে বসল যদি সিনেমার মতো ধমক দিয়ে বলে, ” আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়, অসভ্য মেয়ে”

শুভ্রাকে উঠতে দেখে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসলো আরহাম। কোনরকম কথা না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। শুভ্রা চুপচাপ বসে আছে। মন্ত্রী যে তার উপর ক্ষেপে আছে বেশ ভালো করেই জানে। তাই আর কথা বলল না। বেশ কিছু সময় ধরে অনুভব করছে তার মাথা ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। শান্তি পাচ্ছে এখন।

আরহাম আড়চোখে শুভ্রার দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটা জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি অনুভব করছে। এতে যেনো আরো রাগ বাড়ছে আরহামের। সে এখানে বসে আছে তাহলে তাকে না দেখে বাইরের দিকে কেনো দেখবে? একটা ফার্ম হাউজের সামনে এসে গাড়ি জোড়ে ব্রেক কষে আরহাম। শুভ্রা চমকে যায়। নিজেকে সামলে নেয় আরেকটু হলে সামনের দিকে বারি খেতো। শুভ্রাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরহাম নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। গটগট পায়ে ভেতরে চলে যায়। শুভ্রা হতভম্ব হয়ে ঠাঁই বসে আছে।

একজন মধ্য বয়স্ক লোক এসে শুভ্রাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে শুরু করে। লোকটার নাম আবুল। এই ফার্ম হাউজের কেয়ারটেকার। বেশ মিশুক।

” বউমা,আহো ভিতরে আহো।”

চলবে,,,,