প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৮

0
117

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ১৮
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

” আবুল চাচা”

শুভ্রা ভিতরে পা রাখতে না রাখতেই আরহামের চিৎকার শুনতে পেলো।শুভ্রা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো হঠাৎ এমন চিৎকারে। পাশেই আবুল মিয়া মুচকি হাসছে।

” বউমা, বাপজান ওইযে ওই ঘরটায় আছে। আপনে যান। ডাইকতেছে আপনেরে।”

দুইতলা বিশিষ্ট বাড়িটি। বাইরে থেকে যতোটা সুন্দর দেখা যায় ভিতরটা তার থেকেও কয়েকগুণ সুন্দর। প্রতিটি আসবাবপত্র সুন্দর ভাবে সাজানো,ঝকঝকে । দেখে বোঝাই যাচ্ছে সবসময় পরিষ্কার রাখা হয়। উপরের মাঝের একটি রুমের দিকে ইশারা করে বললো আবুল মিয়া।

” আমাকে তো ডাকেনি। আপনাকে ডেকেছে চাচা।”

” আরে বউমা, আপনে যান তো। আপনেরই ডাইকতেছে।”

দুরু দুরু বুক নিয়ে ঘরটার দিকে যেতে শুরু করল শুভ্রা।হঠাৎ অজানা কারণে ভয় হচ্ছে মন্ত্রী মশাইকে। অদ্ভুত শিহরন বইছে শারা শরীরে। দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় শুভ্রা। দরজা ধাক্কানোর আগেই খুলে যায়। দৃশ্যমান হলো আরহামের সুদর্শন মুখশ্রী। দুজনের মধ্যে একহাতের ও দুরত্ব নেই।

শুভ্রা মুগ্ধ নয়নে দেখছে মন্ত্রী মশাইকে। হয়তো ফ্রেস হয়ে এসেছেন তিনি। মুখে গুটি গুটি ফোঁটায় পানি জমেছে। লম্বা চুলগুলোর মধ্যে কিছু চুল ঝুঁটি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভেজা থাকায় মুখের সাথে লেপ্টে গেছে। ডানদিকের ভ্রুর উপর থাকা কালো কুচকুচে তিলটা ফর্সা মুখে অসম্ভব সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। হয়তো ওই ঠোঁটে একটু হাসির রেখা থাকলে আরো ভয়ঙ্কর সুন্দর করে তুলতো।

” আচ্ছা , উপন্যাসে সবসময় নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়া হয়। কখনও কি পুরুষের সৌন্দর্য কেউ নিখুঁত ভাবে অবকলোন করেছে?করলে হয়তো মুগ্ধ হয়ে পুরুষের সৌন্দর্য বর্ণনা করতো। পুরুষের সৌন্দর্য যে ভয়ংকর সুন্দর তারা কি জানে।এইযে আমার মন্ত্রী মশাই, আমার একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষটা ভয়ংকর সৌন্দর্যের অধিকারী।?”

________
বেলা প্রায় গড়াতে চলেছে। হালকা অন্ধকার ও নেমেছে চারদিকে। ফার্মহাউজটি শহর থেকে অনেকটা দূরে ফাঁকা একটি জায়গায়। যার ফলস্বরূপ কোনরকম কোলাহল নেই। শান্তিপূর্ণ জায়গাটি একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে।

বিছানায় দুইহাতে মুখ ঢেকে বসে আছে শুভ্রা। পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে । এক্ষনি যদি মাটি ফাঁক হয়ে যেতো তাহলে হয়তো এক সেকেন্ডও দেরি করতো না , সাথে সাথেই মাটিতে ঢুকে পড়তো। কোনো রকমে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনোভাবেই লজ্জা প্রকাশ করতে চাইছে না। কিন্তু যতই হোক সেও একজন নারী।

সামনেই আরহাম ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে ডিভানে বসে আছে। আপাদমস্তক দেখছে তার একমাত্র বিয়ে করা বউকে। এর মধ্যেই তীব্র আওয়াজে ফোন আরহামের ফোনটা বেজে উঠল। ফাহিম কল দিয়েছে।

” ভাই, কোথায় আপনারা?”

“কেনো?”

” বোনি কখন ফিরবে? আসলে সবাইতো জানে বোনি রাইমা ম্যামের সাথে গিয়েছে আর এখন অন্ধকার নেমেছে তাই সকলের টেনশন হচ্ছে।”

“ফিরবে না আজকে”

“কিই”

“চ্যাচানোর কিছু হয়নি এতে। আমার একমাত্র বিয়ে করা বউ আমার সাথে থাকবে তাতে সমস্যা কি। ফিরবে না আজকে।”

” বাড়িতে,,”

” বলে দে তাদের একমাত্র মেয়ে তাদের একমাত্র জামাইয়ের সাথে আছে।”

শুভ্রা এসময় অবাক হয়ে দেখছিল মন্ত্রী মশাইকে। কি অবলীলায় তাকে বার বার বউ বলছে। কিন্তু এখানে থাকতে হবে শুনে তড়িৎগতিতে নিজের জায়গা ছাড়ে। আরহামের কাছে গিয়ে ফোনের কাছে মুখ নিয়ে ফাহিমকে বলে সে আসছে বাড়িয়ে। বলেই ঝটপট সোজা হয়ে দাড়ায়।

আরহাম কিছুই বললো না শুভ্রার এমন কাজে। গাড়ির চাবি হাতে তুলে নিয়ে বের হলো ঘর থেকে।

শুভ্রা ভাবলো আবারো হয়তো রেগে গেছে। ক্ষণে ক্ষণে গর্ভবতী মায়েদের মতো মুড চেঞ্জ হচ্ছে তার মন্ত্রী মশাইয়ের। ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেললো। কিসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা। শেষে কিনা গর্ভবতী মেয়েদের মুডের সাথে।
কিন্তু বুঝতে পারল না কেনো তাকে হঠাৎ এখানে নিয়ে এলো।

_________

খান বাড়ির সামনে শুভ্রাকে নামিয়ে দিয়ে এক সেকেন্ডও সময় সেখানে দাড়ালো না আরহাম। বেশ ভাব নিয়ে সাথে সাথেই প্রস্থান করলো। গাড়িতে আসার পুরো সময়টাতে একটাও কথা বলে নি শুভ্রার সাথে। শুভ্রা ভেবেই নিয়েছে মন্ত্রী মশাই রেগে আছে তার উপর। হয়তো সে তখন ফাহিমকে বাড়ি আসার কথা বলেছিল তাই।

এদিকে আরহাম শুভ্রার থেকে আড়াল হতেই ঠোঁটে ভেসে উঠলো মুগ্ধ করা হাসি। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো। ফোনের প্রিয় ফটো কালেকশন এ ঢুকতেই ভেসে উঠল একজন ষোলো সতেরো বছরের মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মুক্তর মতো দাঁত গুলো বের করে হাসছে। চোখগুলো হাসার কারণে কিছুটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে মেয়েটার। ছবিটার দিকে অপলক চেয়ে আছে আরহাম। পুরোনো কিছু তিক্ত স্মৃতি যে তাকেও তাড়া করে বেড়ায়। যে কারণে নিজেকে গম্ভীর্যতায় আবৃত করে ফেলেছে।

শুভ্রা কয়েকটা সপিং ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢোকে। ড্রয়িং রুমেই অনেকে উপস্থিত রয়েছে। রেজিনা খান ফ্রেস হয়ে আসতে বলে শুভ্রা। শুভ্রাও ভদ্র মেয়ের মতো ফ্রেস হতে চলে যায়। বিছানার উপর ব্যাগ গুলো রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আয়নার সামনে দাড়াতেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় তখনকার ঘটনা। আবারো লজ্জায় লাল হতে শুরু করলো শুভ্রার মুখ।

“শুভ্রাকে নিজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে হ্যাঁচকা টানে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলে আরহাম। আশ্চর্য হয়ে যায় আরহামের হঠাৎ এমন কাজে।

” বউ জানো এখন আমার কি করতে মন চাচ্ছে?”

শুভ্রার পুরো শরীর জুড়ে ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে গেলো। ‘ বউ ‘ হ্যাঁ সেতো মন্ত্রী মশাইয়ের বউ। তাহলে তার মুখ থেকে শুনতে এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় কেনো?

“আরে তুমি জানবে কিভাবে আমিই বলছি। এই মুহূর্তে আমার ইচ্ছা করছে……

শুভ্রার দুইগালে ভালোবাসার পরশ এঁকে শুভ্রাকে ছেড়ে দিলো আরহাম। বাকা হেসে ডিভানে বসে পড়ল।

শুভ্রা গালে হাত দিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মন্ত্রী মশাইয়ের হঠাৎ এমন পরিবর্তন তাকে থমকাতে বাধ্য করছে। ঠাস করে বিছানায় বসে পড়ল শুভ্রা। থমকানো মুখশ্রী লজ্জায় লাল হতে শুরু করলো।”

নাহ্ এসব আর ভাবতে পারছে না শুভ্রা। কি লজ্জা কি লজ্জা। ঝটপট ফ্রেস হয়ে এসে বিছানার উপর রাখা সপিং ব্যাগ গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে নিচে চলে যায়। সপিং ব্যাগ গুলো গাড়িতে রাখা ছিলো। আসার সময় মন্ত্রী মশাই গাড়িতেই ওগুলো দিয়েছিল ওকে। এখনো খুলে দেখা হয়নি ভিতরে কি আছে।

________

আরহাম বেশ খোশ মেজাজে রাতের খাবার খেতে বসেছে সকলের সাথে। ঠোঁটে হাসি দেখা না গেলেও মুখ জুড়ে হাসির উজ্জ্বলতা বিদ্যমান। সবাই অদ্ভুত ভাবে দেখছে তাকে। একমাত্র রাইমা ছাড়া। সেতো প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে আরহামের উপর।

” তোমাদের বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছে আরহাম। হাতে তো আর মাত্র চারদিন। বুঝতে পারছি না এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে।”

” বাবা, অনেক কারণ আছে।যেটা বলছি সেটাই করো।”

” মিডিয়াতে জানাতে হবে না। যতই হোক মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিয়ে।”

“এসব বিষয়ে চাপ নিতে হবে না বাবা। মিডিয়ার মানুষগুলো হচ্ছে মিষ্টিতে বসা মাছি গুলোর মতো। ওরা ঠিক গন্ধ পেলে নিজেরাই এসে বসবে।”

কেউ আর কিছু বলল না। সকলেই চুপচাপ খেয়ে নিলো। আরহাম রাইমার হাতে নিজের কার্ড ধরিয়ে দিলো। রাইমার খুশি আর দেখে কে। নাচতে নাচতে ঘরে চলে গেলো। যাক তার কোনো কিছুতো পেলো। আগামী কাল এই কার্ডের সব টাকার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে শপথ করে শুতে গেলো।

আরহাম নিজের ঘরে থাকা বড় ছবিটার সামনে এসে দাঁড়ালো।ছবিটার একজায়গায় কারোর ঠোঁটের চাপ বিদ্যমান। লিপস্টিক লাগানোর কারণে হয়তো ছাপটা পড়েছে। সেদিনের পর আর ছবিটাতে কাউকে হাত দিতে দেয়নি আরহাম। নীলিমা শিকদার যখন এসেছিলেন আরহামের ঘর পরিষ্কার করতে তখনও দেয় নি সে।

আরহামের ফোনে কোনো কিছুর নোটিফিকেশন আসায় চেক করলো। কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে তাকে। আরহাম জানতো এমন কিছুই হবে। কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষটাযে এবার নিজের ফাদা পাতে নিজেই পরে গেলো। হয়তো তাড়াহুরোয় ভুলে গিয়েছিল সে কোন নাম্বার থেকে টেক্সট করেছে। আরহাম নাম্বারটা ফাহিমের কাছে টেক্সট করে ঘুমাতে গেলো। আজকে তার মেজাজ বেশ ফুরফুরে।

“খেলাতো এবার জমবে। ইশ এতো কিছু করেও সেই বুদ্ধিহীনের প্রমাণ দিলিতো। আহারে বেচারা। চালিয়ে যা কতক্ষন পারিস তোর এসব বুদ্ধিহীন কাজ। কোথায় বিয়ে করেছি বউ হয়েছে তাকে নিয়ে একটু ভাববো, একান্ত সময় কাটাবো কিন্তু তোর জন্য সেটাও হচ্ছে না।আজকের সময়টাও মাটি করে দিলি। বউ আমার কি না কি ভাবলো। তার মন্ত্রী মশাই কেনো তাকে হঠাৎ ফার্মহাউজে নিয়ে গেলো আর আসলো।আগে তোকেই সরাতে হবে নাহলে বউ এর সাথে শান্তিতে একটু রোমান্স ও করতে পারবো না। তুইতো দেখি কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হয়ে যাচ্ছিস।”

________

রাতের খাবারের পর ঘরে এসে শুভ্রাকে সপিং ব্যাগ গুলোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছি। বেলকনিতে দাড়িয়ে রাতের চন্দ্রবিলাস করছে সে। কেউযে তাকে দেখছে বেশ ভালই বুঝতে পারছে। মানুষটিকে জ্বালাতে ফোন থেকে মন্ত্রী মশাইয়ের ছবি বের করে মুগ্ধতার সহিত দেখতে শুরু করলো।

শুভ্রাকে এতো সময় টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকা মানুষটির রাগে শরীর জলে যাচ্ছে। রেগে বোম হয়ে ফিরে গেলো নিজ নীড়ে।

শুভ্রা যখন দেখলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটি চলে গেলো তার মুখে বিস্তৃত হলো অদ্ভুত হাসি। ফোন করলো কাউকে।

” যাচ্ছে। তেমন কিছুই করবি না। হালকা করে একটু অ্যাপায়ন করবি। ”

ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেলো না। কিন্তু শুভ্রার ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি আরো প্রসারিত হতে দেখা গেলো। সন্তর্পনে ঘর থেকে বের হয়ে স্টোর রুমের দিকে চলে গেলো।

_________

চলবে,,