প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-২৩ + বোনাস পর্ব

0
110

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ২৩
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

শহরের বড় কমিউনিটি সেন্টার আলোক সজ্জায় সজ্জিত।একটুও খামতি রাখা হয়নি সাজানোয়।লাইটিং থেকে শুরু করে সবকিছু নিখুঁত ভাবে সাজানো হয়েছে। জায়গায় জায়গায় গার্ড বসানো।দুই পরিবারের আত্মীয়দের সাথে সাথে মিডিয়ার লোকদের আনাগোনা চারিদিকে। ভিতরে প্রবেশকৃত প্রতিটা মানুষকে চেক করার পর ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। একেরপর এক শিল্পপতি,মন্ত্রী, এমপি আরো নানান মানুষের আগমনে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। কড়া গার্ডে রাখা হয়েছে তাদের। আরহাম নিজে তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে।

অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি পড়েছে আরহাম। সোনালী রঙের ছোট ছোট কাজ করা পাঞ্জাবিতে। গম্ভীর মুখে আজকে লেগে আছে নজর কারা হাসি। যারা মন্ত্রীকে কখনও হাসতে দেখেনি তাদের কাছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে সেই হাসি। কিন্তু এতো সুন্দরতায় চুল গুলো আজকে বেমানান লাগছে। বরাবরের মতো চুলগুলো আজকে তার সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারছে না।

আর কিছুক্ষণপর বিয়ের কার্যক্রম শুরু করা হবে। সাংবাদিকগণ লাইভ টেলিকাস্ট করছে সবকিছু। দুই পরিবারের সকলে উপস্থিত হয়েছে কিন্তু বিয়ের কনে আর তার ভাইয়েদের কোনো খোঁজ নেই কেনো। বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে গেছে কিন্তু তাদের দেখা মিলছে না। শিকদার পরিবারের মুখে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। কানাঘুষা শুরু হয়েছে সকলের মাঝে। কেউ কেউতো বলছে বিয়ের কনে পালিয়েছে। আবার কেউ বলছে কোনো বিপদ হয়েছে। কিন্তু এতোকিছুর মাঝে যার বউ সেই ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। একটুও বিচলিত দেখা যাচ্ছে না তাকে। এমনকি খান পরিবারের সকলের অবস্থাও আরহামের মতো। তারা দিব্যি আছে।আজমল শিকদার এগিয়ে গেলেন আরহামের দিকে।

“আরহাম, নাতবউ এখনো আসছে না কেনো? এতো সময়তো লাগার কথা নয়। কোনো বিপদ হলো নাতো?”

” দাদু, তুমি জানো না তোমার নাতবউ সম্পর্কে। তাহলে এতো চিন্তা করার কি আছে। তাছাড়া ওর সাথে ওর রক্ষকরা আছে। তারা নিজেদের জীবন দিয়ে দিবে কিন্তু বোনের গায়ে ফুলের টোকাও পড়তে দিবে না। আর অতকিছু সামলাতে তো সময়ের দরকার। দেখো আর ঠিক ৫ মিনিটের মধ্যে আসবে।”

কিন্তু আজমল শিকদারকে তবুও বিচলিত দেখা গেলো। তার মনে ভয়ের বাসা বেঁধেছে। ইশতিয়াক খান আজমল শিকদারের কাধে হাত রাখলেন।

” আরে ভাই কোনো চিন্তা করতে হবে না। নাতজামাই বললো না ৫ মিনিট। ঠিক ৫ মিনিটের মধ্যেই দেখবেন ওরা চলে আসবে।”

শিকদার পরিবার কিছুটা চিন্তামুক্ত হলো। কিন্তু মানুষের কানাঘুষা এখনো চলছে। এর মধ্যেই কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে আসেন আরহামের দিকে। একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করেন। আরহাম স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।

” স্যার, ম্যাম এখনো আসছে না কেনো?বিয়ের কনে এভাবে উপস্থিত নেই এর কারণ কি হতে পারে? এটা কি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক কিছু? কোথাও আবার তিনি এই বিয়েতে রাজি ননতো? যার কারণে উপস্থিত নেই। তার মতের বিরুদ্ধে কি বিয়ে হচ্ছে?”

সাংবাদিক জিসান নামের একজনের প্রশ্নে আরহামের স্বাভাবিকতা রাগে রূপান্তরিত হলো। কিন্তু বহিঃপ্রকাশ হলো না। পা থেকে মাথা অব্দি জিসানকে দেখে নিলো আরহাম। কটাক্ষতার সাথে প্রশ্ন করা জিসান মন্ত্রীর এমন দৃষ্টিতে নিজের ভিতরে ভয় অনুভব করলো।

আরহাম সবাইকে দরজার দিকে তাকাতে বলে এক থেকে তিন পর্যন্ত কাউন্ট করলো। তৎক্ষণাৎ দরজায় সব লাইট ফেলা হলো। আরহাম তিন বলার সাথে সাথেই শুভ্রাকে দেখা গেলো সেখানে।

লাল টুকটুকে বিয়ের লেহেঙ্গাতে সৌন্দর্যতার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে শুভ্রার। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।ক্যামেরার ফোকাস এখন তার দিকে। তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে তার চার ভাই। তাদের চার ভাইয়ের পরনে একই রকমের পোশাক। ধূসর রঙ্গা পাঞ্জাবিতে হালকা সোনালী কাজ করা। তাদেরকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চার ভাইয়ের মাঝখানে শুভ্রাকে কোনো রাজকন্যার থেকে কম লাগছে না।
লেহেঙ্গা ভারী হওয়াতে শুভ্রা ভালোভাবে হাঁটতে পারছে না। রিমন আর রাহাত তার দুইপাশের দুই হাত ধরে রেখেছে। ধীরে ধীরে স্টেজের সামনে নিয়ে যেতে শুরু করল শুভ্রাকে।

আরহাম মুগ্ধ চোখে দেখছে শুভ্রাকে। হাতটা অনেক কষ্ট সামলে রেখেছে। বার বার বুকের বা পাশে চলে যেতে চাচ্ছে।কি মায়াবী লাগছে তার বউকে। মন চাচ্ছে এভাবেই দেখে যেতে। তার পছন্দ করা শাড়ি, অর্গামেন্টস এ সেজেছে শুভ্রা। বাড়তি কোনো কিছুই ব্যবহার করেনি। সাধারণ সাজে অসাধারণ লাগছে শুভ্রাকে আরহামের কাছে।শুভ্রা দেখলো তার মন্ত্রী মশাইকে। কিন্তু মুখে হাসি ছাড়া কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। এতে খুব বেশি অবাক হলো না আরহাম। সেদিনের পর থেকে শুভ্রা তার সাথে একটা কথাও বলেনি। যতবার ফোন দিয়েছিল ততবারই বন্ধ পেয়েছিল। আরহাম ভেবেছে সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে দেয়নি বলে হয়তো এতো রাগ। সেও রাগ দেখিয়ে ফোন দেয়নি। আর না দেখা করেছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে একবার শুধু নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারলে সব কিছুর সমাধান করবে।

আরহাম হাত বাড়ায় শুভ্রার দিকে।চার ভাই মিলে হাসি মুখে শুভ্রার হাত তুলে দেয় আরহামের হাতে। আরহাম শুভ্রাকে নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে।

কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে। শুভ্রার চোখ খুঁজছে কাউকে। রাইমা আর অদিতি বুঝতে পেরেছে শুভ্রা কাকে খুঁজছে। তারা ইশারায় বুঝায় তাকে আসতে দেওয়া হয়নি বিয়েতে।

সেদিন বিয়েতে তো শুভ্রা একপ্রকার ঘোরের মধ্যে ছিল। যার কারণে আরহাম কখন কবুল বলেছে শুনতেই পায়নি। কিন্তু আজকে সেই তিনটি শব্দ শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে শুভ্রা। আরহামকে যখন কাজী কবুল বলতে বলে আরহাম স্বাভাবিক ভাবেই বলে।শুভ্রা শুনে শান্তি অনুভব করলো। আজকে তার মনে হচ্ছে মন্ত্রী মশাই তার। একমাত্র তার একান্ত পুরুষ। শুভ্রাকে কবুল বলতে বললে আরহামের সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটলো। কোনো রকম না থেমে একেবারেই তিনবার কবুল বলে দিলো। হেসে ফেললো সবাই। শুভ্রা সামান্য লজ্জা পেলো। অতঃপর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার মাধ্যমে তাদের বিয়ে সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি পেলো।

____________

বিদায় বেলা খান বাড়ির প্রতিটি মানুষ অঝোরে কান্না করছে। মেয়ের বিয়ে তো আর কয়েকদিন আগে দিয়েছিল কিন্তু তখন তো আর মেয়েকে কাছ ছাড়া করতে হয়নি। শুভ্রার চোখেও পানি। একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিচ্ছে ও। রেজিনা খান আর ফারজানা খান সংসার বিষয়ক নানা রকম উপদেশ দেয় শুভ্রাকে। সেও মনোযোগ সহকারে শুনে। কারো কান্না থামতে না দেখে এবার শুভ্রা নিজেই কান্না থামিয়ে দেয়।

” ধুর ভালো লাগে না। আমি তো মন্ত্রী মশাইয়ের কাছে যাচ্ছি অন্য কোথাও তো না। এইযে আনোয়ারা খান আপনি না আমাকে দেখতেই পারেন না তাহলে এখন এতো কান্না করছেন কেনো। ভাবীরা তোমার কেনো কান্না করছো , এখন কয়েকদিন শান্তিতে থাকো। কয়েকদিন তো আর আমার জ্বালা তোমাদের সহ্য করতে হবে না। তবে বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারবে না। আমি আবার তোমাদের জ্বালাতে চলে আসবো। আমার ছোট ছোট গুপ্তচর রা যে কোনদিন আসবে।আর এইযে আমার মায়েরা তোমাদের হাতের একটু রেস্ট দরকার। প্রতিদিন আমাকে তুলে খাওয়াও। কিছুদিনের জন্য নাহয় এই দায়িত্ব আমার একমাত্র শাশুড়ি মাকে দিলাম। তাতে অবশ্যই তোমরা জেলাস হবে না। দাদু আর বড় বাবারা তোমরা নিজেদের সব ঔষধ ঠিকঠাক খাবে। আমি কিন্তু আমার গুপ্তচর রেখে যাচ্ছি তোমাদের মাঝে। সব খবর পাই টু পাই আমাকে দেবে ও। সুতরাং কোনো ঔষধে ফাঁকি নয়। রিদ,পাবো তো আমি সব খবর?”

” অবশ্যই ফুফিমা। তোমার এই গুপ্তচর তোমাকে সব খবর দেবে।”

শুভ্রার কথা শুনে সকলের কান্না এমনিতেও থেমে গিয়েছে কিন্তু রিদের কথা শুনে হেসে ফেলে সবাই। শুভ্রা এবার এগিয়ে যায় ভাইদের দিকে।

” তোমরা কি বলেছিলে ভুলে গেছো? আমায় বলেছিলে তোমরা কান্না করবে না তাহলে তোমাদের চোখে পানি কেনো? যাও একজনও কথা বলবে না আমার সাথে।”

গাল ফুলিয়ে ফেলে শুভ্রা। কান্না করার কারণে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল তার উপর আবার গাল ফুলানোর কারণে ছোটো বাচ্চাদের মতো লাগছে। চারজন একসাথে এসে জড়িয়ে ধরে শুভ্রাকে। ভিতর তাদের ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বোনকে সঠিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার আনন্দও হচ্ছে।

” দেখ আমরা কান্না করছি নাতো। গাল ফোলাতে হবে না আর।”

হাসে শুভ্রা। তার ভাইদের কিভাবে সামলাতে হয় সে খুব ভালো করেই জানে।

” বোনি, আমাদের মতো এখন ওই মানুষগুলো তোর আরেকটা পরিবার। তাদের সম্মান এবং ভালোবাসায় কোনো কমতি রাখবি না। আমরা জানি আমাদের এসব বললেও হবে না বললেও হবে। তুই তাদের প্রাপ্য সম্মান তাদের দিবি। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবি বিপদ এখনো কাটেনি। অবশ্যই তুই নিজেকে নিরাপদ রাখবি। আমরা জানি তোর মন্ত্রী মশাই তোকে আগলে রাখবে তবুও নিজেকে নিজেই নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবি। আমরা আছি সবসময় তোর পাশে।”

চারজন এক সাথেই কথাগুলো বললো শুভ্রাকে। জড়িয়ে ধরে ধীর কন্ঠে বলার কারণে কেউ শুনতে পেলো না তাদের কথপোকথন। শুভ্রা মিষ্টি হেসে তাদের থেকে বিদায় নিলো। তারাও চোখে পানি ঠোঁটে হাসি রেখে বিদায় দিলো তাদের একমাত্র আদরের বোনকে। এখন থেকে যখন ইচ্ছা তখন কাছে পাবে না তারা তাদের বোনকে। ভাবতেই ভিতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাদের।

শুভ্রা আর আরহাম আলাদা একটা গাড়িতে আর বাকিরা আলাদা আলাদা গাড়িতে। পরিবারের সবাইকে শান্ত করতে পারলেও এখন নিজেকে অশান্ত লাগছে শুভ্রার। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিঃশব্দে কান্না করছে সে। আদেও কি সে কাছের মানুষগুলোকে আগলে রাখতে পারবে? তাকেই তো চারিদিক থেকে বিপদ ঘিরে রেখেছে। ভাইয়েরা এতদিন তার ঢাল ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে কিন্তু এখন নতুন পরিবেশে কিভাবে সে নিজেকে সামলাবে? হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুভ্রার।

আরহাম পাশে বসেই শুভ্রাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটার চোখের পানি তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। শুভ্রার মাথা আলগোছে নিজের কাধে রাখে আরহাম। শুভ্রা বাধা দেয়না। এখন তার একটা ভরসাযোগ্য কাধের দরকার ছিল। যেটা তার মন্ত্রী মশাইয়ের।

চলবে,,,

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#বোনাস_পার্ট
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

গোলাপ ফুলে সজ্জিত বিছানার ঠিক মাঝে শুয়ে আছে শুভ্রা।পাশেই আরহাম তার একহাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহাম শুভ্রার দিকে। মায়াবী মুখখানা এতটুকু সময়ে শুকিয়ে গেছে শুভ্রার। ঠোঁট জোড়া হালকা কালো হয়ে আছে। খোপা করে রাখা চুলগুলো খুলে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আরহামের চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে শুভ্রার গালে। ছেলে মানুষের নাকি কাদতে নেই কিন্তু আরহাম কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আজ আবারও প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় তার মনে জেঁকে বসেছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে আরহাম।চোখের সামনে ভেসে উঠছে তিন বছর আগের সেই কালো অতীত। তার ব্যর্থতা।

“ভাইয়া,তুমি পারোনি আমাকে বাঁচাতে। তুমি ব্যর্থ ভাইয়া ,তুমি ব্যর্থ। জানো ভাইয়া খুব কষ্ট হয় আমার। আমার শরীর খুব জ্বলে ভাইয়া। একটু ঔষধ লাগিয়ে দিবে ভাইয়া। আমিতো সহ্য করতে পারি না। তুমিনা তোমার এই ছোট্ট বোনটার কষ্ট একটুও সহ্য করতে পারো না। আমি মরে যাচ্ছি ভাইয়া। ওরা পুড়িয়ে ফেলছে আমাকে।”

‘ নীলা ‘ বলে চিৎকার করে উঠে আরহাম। ঘর সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় সেই আওয়াজ বাইরে যায় না। সে ব্যর্থ, ভাই হিসেবে সে একজন ব্যর্থ মানুষ। যেই ব্যর্থতা তাকে তিনটা বছর ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কিন্তু স্বামী হিসেবে সে ব্যর্থ হতে চায়না।

আরহাম তাকায় নিজের দিকে। পাঞ্জাবির উপরের দিকের দুটো বোতাম ছিঁড়ে গিয়েছে। গলার কাছে নখের দাগ বসেছে। হালকা রক্ত জমাট বেঁধেছে জায়গাগুলোতে।
________

দীর্ঘ ৩১ বছরের অবিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে একরাশ আশা নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলো আরহাম। বাড়িতে আসার পর শুভ্রাকে বরণ করে তার ঘরেই রেখে যাওয়া হয়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাড়াতেই তার পাঞ্জাবি দুই হাতে খামচে ধরে শুভ্রা। শুভ্রার হাতের বড় বড় নখ বিধে যাচ্ছে আরহামের শরীরে। তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সাপের মতো ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ছে সে।ভূত দেখার মতো চোখ বড় বড় করে দেখেছে আরহাম শুভ্রাকে। কোথায় তাকে সালাম করবে তা না করে তার পাঞ্জাবি এভাবে ধরেছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

” এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি হ্যাঁ কোথায় ছিলেন? ওই নেহার কাছে ছিলেন আপনি? কেনো ছিলেন নেহার কাছে ,কেনো? জবাব দিন। আমাকে ভালো লাগে না আপনার? কি নেই আমার মধ্যে? আপনি কেনো যাবেন ওর কাছে,কেনো?আপনি আমায় বলুন আপনি যাননি ওর কাছে। কি হলো বলুন?”

পাগল পাগল লাগছে শুভ্রার। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। একই সাথে বুকেও ব্যাথা অনুভব করছে। আরহামের পাঞ্জাবি খামচে ধরে একই কথা বার বার বলে যাচ্ছে। “কেনো গিয়েছিলেন আপনি ওর কাছে?” টপ টপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে শুভ্রার। অসম্ভব পরিমাণে লাল হয়ে গিয়েছে চোখ জোড়া। আরহাম ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। আরহামের পাঞ্জাবি থেকে শুভ্রার হাতের বাধন আসতে আসতে খুলে যেতে শুরু করেছে। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে শুভ্রার। পরে যেতে নিলেই শুভ্রার নরম কোমল কোমর পুরুষালী হাতে চেপে ধরে আরহাম। শুভ্রা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আরহাম আলগোছে কোলে তুলে নেয় শুভ্রাকে। বিছানায় শুইয়ে দেয়। পাশেই শুভ্রার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে পড়ে সে।

________

নিজেকে শান্ত করে আরহাম ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শুভ্রার শরীর থেকে কয়েকফোটা রক্ত বের করে নেয়। একটা কাচের ছোট্ট শিশিতে ভরে ফোন করে কাউকে। অপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনে আরহাম আলগোছে ঘর থেকে বের হয়। বাড়ির বাইরে এসে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার হাতে তুলে দেয় শিশিটা। ছেলেটা চলে যায় শিশিটা নিয়ে।

আরহাম যেভাবে বাইরে বেরিয়েছিল ঠিক সেভাবেই আলগোছে বাড়িতে প্রবেশ করে। সন্তর্পনে নিজের ঘরে ফেরে। বিছানায় শুয়ে থাকা শুভ্রার একপাশে সে নিজেও শুয়ে পড়ে। অন্যদের মতো হয়তো আজকে তারও বাসরটা স্বাভাবিক হতো। ঘরে প্রবেশ করে, ফুল সজ্জিত বিছানায় লাল টুকটুকে শাড়ি পরে একহাত ঘোমটা টেনে লজ্জামাখা মুখে বসে থাকতো তার বউ। আরহামের উপস্থিতি টের পেয়ে হয়তো সালাম করতো। আরহাম বাধা দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিত।হাজারো ভাবনার মাঝে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে আরহাম নিজেও টের পায় না।

________

সকালের স্নিগ্ধ আলোয় চোখ খোলে শুভ্রা। নিজেকে আবিষ্কার করে কারো প্রশস্ত বুকে। ধড়ফড়িয়ে উঠতে নিলে দেখে সে তার মন্ত্রী মশাইয়ের বুকে। স্বপ্ন ভেবে নিজের হাতে চিমটি কাটে শুভ্রা। ব্যাথা পায়। মনে পড়ে মন্ত্রী মশাই এখন তার ব্যক্তিগত পুরুষ। বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সকালের মিষ্টি রোদ ভিতরে প্রবেশ করছে। আরহামের মুখের উপর পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে আরহামের মুখশ্রী থেকে আলো ছড়াচ্ছে। শুভ্রা আলতো হাতে স্পর্শ করে আরহামের মুখ। নড়েচড়ে উঠে আরহাম। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুভ্রাকে। ঘোর কাটে শুভ্রার। মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আছে।
রাতে তার আর মন্ত্রী মশাইয়ের বাসর ছিল মনে পড়তেই নিজের দিকে ভালোভাবে তাকায় শুভ্রা। নাহ্ কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলো না। রাতে তো সে বিছানায় বসে অপেক্ষা করছিল আরহামের। তারপর কি হয়েছিল কোনোভাবেই মনে করতে পারছে না। মনে করতে গেলেই মাথায় ব্যাথা অনুভব করছে। শুভ্রা ভাবে হয়তো কালকে সারাদিনের অতো ধকলের কারণে এমন হচ্ছে।সাবধানতার সাথে আরহামের হাতের ভিতর ঠিক বের হয় শুভ্রা। আরহামের এতো সুন্দর ঘুম কোনোভাবেই ভাঙাতে চাইছে না সে। কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হলে হয়তো কিছুটা হালকা লাগবে। শুভ্রার যাওয়ার পরে পরেই চোখ খোলে আরহাম। সে এতক্ষণ জাগনা ছিল। মৃদু হেসে আবারো চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।

চলবে,,,,