প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-২৬

0
106

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_২৬ (এক ভাগ)
#আহিয়া_শিকদার_আহি

আরহামের সামনে অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে আছে ফারহাদ, রাহাত ,রিমন আর ফাহিম। শুভ আরহামের হাতে ব্যান্ডেজ করছে। টেবিলে ঘুষি মারার কারণে হাত অনেক খানি থেতলে গেছে।কিন্তু সেদিকে বিন্দু মাত্র ভাবান্তর নেই আরহামের। তার নজর টেবিলের উপর রাখা কাগজগুলোর দিকে।বাকিদের নজর ও সেদিকে।

আরহামের অবস্থা দেখে ফাহিম যখন কাগজগুলো দেখার জন্য নেয় তখন তার মনে হয়েছিল তার কলিজা কেউ ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। থমকে গিয়েছিল সে। কাগজগুলো ছিল মেডিক্যাল রিপোর্ট। যেখানে শুভ্রার নাম জ্বল জ্বল করছে। তার মধ্যেই ফারহাদ , রাহাত আর রিমন আসে। আরহাম তাদের দেখেছিল জানতো না ফাহিম। তারাও এসে দেখার পর থেকে অনুভূতীশূন্য হয়ে বসে আছে। এসব দেখানোর জন্যই বুঝি আরহাম তাদেরকে ডেকেছে। তার মানে আরহাম আগে থেকেই জানতো?

তাদের চার ভাইয়ের অবস্থা একই রকম। মাথায় তাদের প্রশ্নের মেলা জমেছে,

কিভাবে তারা এত কেয়ারলেস হতে পারল নিজেদের কলিজার বোনের প্রতি। আরহাম টেস্ট না করালে হয়তো জানতেই পারতো না। তাদের পরিবারে আর কোনো মেয়ে না থাকায় শুভ্রাকে ছোটো থেকে আগলে রেখেছে তারা। ভাইবোনের সম্পর্কে যতোটা ভালবাসা , শ্রদ্ধা-সম্মান, থাকা দরকার তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি তাদের মধ্যে। একে উপরের সমস্যা বলার আগেই বুঝে যায় তারা। যেকোনো বিপদে একে অপরের পাশে থাকা, কেউ সামান্য অসুস্থ হলেও চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যেত তাদের। সেই বোনের প্রতি কিনা তারা অসতর্ক হয়ে পড়েছিল।

” ভাইয়া দেখছো , এটা সেই ড্রাগ। যার জন্য বোনিকে হারাতে বসেছিলাম। কতই না কষ্ট সহ্য করেছিল আমাদের ছোট্ট বোনি। নিজের চোখে দেখেছিলাম সব কিছু। এখনো সেই সময়গুলোর কথা ভাবলে ভয়ে গা শিউরে উঠে। এতো কষ্ট করে সব কিছু সামলানোর পরেও দেখো আবারো সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি হলো। আমার এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হলাম ভাইয়া, কিভাবে হলাম? বোনি আবারো সেই অসহ্য ব্যাথায় ছটফট করেছে কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারি নি। কাকাই, চাচিমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারি নি আমরা ভাইয়া। আমাদের অসতর্কতার জন্য আবারও বোনিকে কষ্ট পেতে হলো। আমাদের জন্য বার বার বোনির জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে।অকৃতজ্ঞ আমরা।”

ফাহিমের কান্না ভেজা কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো তাদের। সত্যিই তো , আজ তাদের অসতর্কতার কারণে সেই অসহ্য যন্ত্রণার শিকার হতে হলো তাদের ছোট বোনটাকে।

_____________

গাল ফুলিয়ে বসে আছে শুভ্রা রাইমার ঘরে। বিয়ের পরের দিন মন্ত্রী মশাই কাজে চলে গেলো। ভাবতেই অভিমান জমে যাচ্ছে আরহামের উপর। তার পাশেই নীলিমা শিকদার রাগে গজগজ করছে।এমনিতেই তিনি রাজনীতি পছন্দ করেন না।তার উপর আরহামের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেছেন।

” মন্ত্রী হয়েছে জন্য কি বিয়ের পরের দিন কাজে যেতে হবে। জনগণের সাথে সাথে যে এখন বউয়ের দায়িত্ব তার উপর সেকি জানে না।আজকে আসুক একবার বাড়িতে। বউভাতের জন্য আত্মীয়রা আসা শুরু করেছে অথচ তোমার ছেলের কোনো খোজ নেই। বেয়ান ‘ রা এসে যদি জিজ্ঞেস করে তাদের মেয়ে জামাইয়ের কথা তাহলে কি বলব ভেবেছো একবারও। লায় দিয়ে দিয়ে ছেলেকে মাথায় তুলেছে।”

আসাদ শিকদার ভাবলেন তাকে কেনো এর মধ্যে টানছেন। সেকি বলেছে আরহামকে যেতে। এখন তার বলতে ইচ্ছা করছে,” ছেলে কি একা আমার?ছোটো থেকে মাথায় তুলেছে এখন আমার দোষ দিচ্ছে, কুচোটে মহিলা।”

কিন্তু সাহস করে কিছু বলতে পারলেন না।এখন কিছু বলা মানে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ঘী ঢালা। নীলিমা শিকদার যে এখন থামবার নয় সবাই জানে। তাই তারা সেখান থেকে চলে গেলো। নীলিমা শিকদার ও কিছুক্ষন গজ গজ করে চলে গেলেন।

শুভ্রা শুধু তাদের কাহিনী দেখেই গেলো। রাইমা আর বাকি মেয়ে কাজিনরা রয়ে গেলো। আর কিছুক্ষণ পর বউভাতের অনুষ্ঠান। শুভ্রাকে সাজাতে হবে। পার্লার থেকে লোক আনতে বারণ করে দিয়েছে শুভ্রা।

রাইমা এক গালে হাত দিয়ে শুভ্রাকেই দেখছে। সেই কখন থেকে গাল ফুলিয়ে আছে।

” শুভ্রা, আর গাল ফুলিয়ে থাকিস না। এবার অন্তত তৈরি হয়ে নে। দেখ মানুষজন আসা শুরু করেছে। ভাইয়ার হয়তো কোনো দরকারি কাজ পরে গেছে তাই বেরিয়েছে।নাহলে বিয়ের পরের দিন কোন ছেলে এভাবে বের হয় বলতো ?”

শুভ্রা জানে আরহাম নিশ্চই কোনো দরকারি কাজের জন্যই বেরিয়েছে। কিন্তু সে মানতে নারাজ।

” দেখ রাইমা, একদম ভাইয়ের চামচামি করবি না। অন্যদিন হলে মানা যেতো কিন্তু ওনাকে আজকেই কেনো বের হতে হলো? ”

রাইমা কথা বাড়ালো না। আরহামের উপর সেও বিরক্ত হয়েছে। গতকাল থেকে আরহামের সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না।নানান চিন্তায় আছে। আরহামের সাথে কথা বলা দরকার। জোরপূর্বক শুভ্রাকে সাজাতে শুরু করে রাইমা। সাথে সঙ্গ দেয় আরহামের মামাতো,খালাতো বোনেরা। হালকা সাজেই শেষ করে।

শুভ্রা এর মধ্যে একবারও নেহাকে দেখেনি। এতো বেলা গড়িয়ে গেলো অথচো নেহা ঘর থেকে বের হয়নি। অদ্ভুত লাগল তার কাছে। মেয়েটাকে তো কোনো না কোনো ভাবে শায়েস্তা করতে হবে। তার মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে তার সামনে উল্টোপাল্টা কথা বলা।

” রাই, নেহা আপুকে দেখছি না যে? কালকে রাতে দেখেছি তারপর সকাল থেকে একবারও দেখলাম না?”

নেহার কথা শুনে রাইমা কোনো কথা বলল না। আরহামের মামাতো বোন উর্মি বললো,

” তুমি নেহা আপুর সম্পর্কে কিছু জানো না বড় ভাবি? ভাইয়াকে তো নেহা আপু,,, ”

কথা শেষ করতে পড়লো না উর্মি। তার আগেই রাইমা থামিয়ে দিলো তাকে।

” কি বলছ উর্মি আপু?এখন এসব বলার সময়?”

আলগোছে কথা কাটিয়ে দিলো রাইমা। সে ভুলে গিয়েছে শুভ্রা সব জানে। হাসলো শুভ্রা রাইমার কথা কাটানো দেখে। তাকালো সামনে থাকা আয়নার দিকে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঘরের দরজার কাছে নেহা দাড়িয়ে আছে।

” আচ্ছা , সে যাইহোক। বড় ভাবি কেমন লাগলো আমাদের ভাইকে না মানে,,,”

উর্মির কন্ঠে দুষ্টুমি। একে একে সবাই চেপে ধরলো শুভ্রাকে। গতকাল রাত নিয়ে নানান প্রশ্ন লজ্জা দিতে শুরু করলো। শুভ্রা ভাবছে রাতে তো সে ঘুমিয়ে পড়েছিল এখন এদের কি এই কথাই বলবে? আয়নার দিকে আরেকবার তাকাতেই দেখলো নেহা রেগে ঘরের দিকেই তাকিয়ে আছে।

___________

রেজাউল চৌধুরীকে আজকে হাসপাতাল থেকে ডিস্টার্জ করে দেওয়া হয়েছে।গাড়িতে স্ত্রীর পাশে বসেছেন তিনি। সামনের ড্রাইভারের পাশেই বসেছেন ইকবাল। রেজাউল চৌধুরীর বিশ্বস্ত গার্ড হওয়ার কারণে তিনি তার গাড়িতেই চলাচল করেন। তাদের পিছনে আরো দুটো গাড়ি আসছে।
রেজাউল চৌধুরী হতভম্ব হয়ে আছে। হাসপাতালে থাকার কারণে আরহামের বিয়ের খবর তিনি পাননি। এই মাত্র ইকবালের থেকে জেনেছেন। বড় ঝটকা তো তখন খেয়েছেন যখন জানতে পেরেছেন ইশতিয়াক খানের একমাত্র নাতনির সাথে আরহামের বিয়ে হয়েছে। রিজাউল চৌধুরীর পুরো মুখ ভয়াতুর হয়েছে। আয়েশা চৌধুরীর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। তিনি জানেন তার স্বামীর বিয়ের কারণ।
ট্র্যাফিক জ্যাম আটকা পড়ে যায় তারা। আয়েশা চৌধুরী অদিক ওদিক দেখছেন। হঠাৎ তার নজর থেমে যায় ট্যাক্সিতে থাকা আরাজের দিকে। অপলক চেয়ে আছেন তিনি। চোখের পাতা ফেললেই যেনো আর দেখতে পাবেন না। আরাজের শরীরে থাকা ক্ষত গুলো এখনও স্পষ্ট। সেগুলোর দিকে দেখতেই চোখের কোণে পানি জমা হলো আয়েশা চৌধুরীর। তার ইচ্ছা করছে এখনি চলে যেতে আরাজের কাছে।

রেজাউল চৌধুরী স্ত্রীর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকান। আরাজকে দেখতেই তিনি গাড়ির কাচ তুলে দেন। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন স্ত্রীর দিকে। আয়েশা চৌধুরীর গাল চেপে ধরেন। রাগে দাঁত কটমট করছেন তিনি। আয়েশা চৌধুরী কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। যেনো এটা তার সাথে নিত্যদিন হয়ে থাকে। রেজাউল চৌধুরীর থেকে নিজেকে আলগোছে ছাড়িয়ে নেন। জ্যাম ছুটে যায়, আরেকবার আরচোখে দেখে আরাজকে। আবার কোনদিন দেখবেন কে জানে।

আরাজের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরক্ষণেই মুছে ফেলে সে। যতক্ষন পর্যন্ত আয়েশা চৌধুরীদের গাড়ি দেখা যায় ততক্ষণ দেখে আরাজ। সব থেকেও আজ সে নিঃস্ব। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

_____________

চলবে,,,,

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_২৬ ( দ্বিতীয় ভাগ)
#আহিয়া_শিকদার

বাড়িতে ফেরার পর থেকে নীলিমা শিকদারের কাছে একের পর এক ঝাড়ি খাচ্ছে আরহাম। বাকিরা চুপচাপ মজা নিচ্ছে। একমাত্র নীলিমা শিকদার ছাড়া কারো এতো সাহস নেই আরহামকে এভাবে ঝাড়ি মারবে।

” তোমার আক্কেল জ্ঞান দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। একজন মন্ত্রী হয়ে কিভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারো তুমি?”

নীলিমা শিকদার গজ গজ করেই যাচ্ছেন। আরহাম জানে তার মা নিজে থেকে না থামা অব্দি কেউ থামাতে পারবে না।
আসাদ শিকদার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসছেন। আরহাম যতবার তার দিকে তাকাচ্ছে ততবারই আসাদ শিকদারের হাসির রেখা বেড়েই চলেছে।
আসাদ শিকদারের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ধপাধপ পা ফেলে ঘরের দিকে চলে গেলো আরহাম। নীলিমা শিকদারের কাছে আরহাম এখনো সেই ছোট্ট বাচ্চা খোঁকা।

আরহামের ঘর যাওয়ার জন্য রাইমা, নেহা, আর নিতুলের ঘর পার করতে হয়। তাদের ঘর গুলো একই সিরিয়ালে। নেহার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় আরহাম। ভিতরে নিতুল আর নেহার কথা শোনা যাচ্ছে। দরজা লাগানো নেই, ভিড়িয়ে রাখা।
আরহাম নক করতেই যাবে তার আগেই নেহা বের হয় ঘর থেকে। নিজের ঘরের সামনে আরহামকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাকের পাশাপাশি ভয়ে চুপসে যায় নেহা। আরহাম তৃক্ষ্ণ চোখে নেহাকে আপাদমস্তক দেখে। ওয়েস্টার্ন ড্রেসে পড়েছে নেহা।

” কি ভাই , এখানে দাড়িয়ে কি করছো? সূর্য কোনদিকে উঠেছে আজকে?”

নেহার পিছন থেকে নিতুল বলে। আরহাম প্রতিক্রিয়াহীন।

” সূর্য ঠিক দিকেই উঠেছে নিতুল। তোর বোনতো একটু বেশিই সাধু তাই আর কি।ভাবলাম ভিতরে হয়তো কোনো ছেলে আছে। মনে করাতে এসেছিলাম এটা মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বাড়ি। কোনো ,,, যাক বাদ দে।”

চলে যায় আরহাম। নেহা অবাক হয়ে দেখলো নিতুলের দিকে। কিন্তু নিতুল কিছুই বলল না।সে চুপচাপ তার ঘরে চলে গেলো। আরহামের কথার ইঙ্গিত দুই ভাইবোন বুঝতে পেরেছে। সত্যি কথাই তো বলেছে এতে নিতুলের প্রতিক্রিয়া করার কোনো মানেই নেই।

শুভ্রাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে সকলে। আরহাম তাদের দিকে একবার দেখে ঘরে চলে যায়। অভিমান গাঢ় হয় শুভ্রার।শুভ্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আরহামের যাওয়ার পানে। তাকে কি ইগনোর করলো আরহাম?
__________

বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, পাশা পাশি বসে আছে শুভ্রা আর আরহাম। কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই, না আছে এক চিলতে হাসি। বরাবর গম্ভীর থাকা আরহামের মতই শুভ্রাও হয়ে আছে। শুভ্রার ইচ্ছা করছে এক্ষনি মন্ত্রীকে কাঁচা মরিচ দিয়ে চিবিয়ে খেতে। সকালে কি রোম্যান্টিকতা দেখালো আর এখন তাকে দেখেও দেখছে না। আবার নিজের বাড়ির লোকদের উপর রাগ হচ্ছে। তারা কেনো এখনো আসেনি? তাদের দেখে জন্য যে শুভ্রার মন ছটফট করছে তারা কি জানেনা? এই জন্যই বোধয় বলে বিয়ে দিকে মেয়ে পর হয়ে যায়।

“এভাবে মুখটাকে ব্যাঙের মতো করে রেখেছ কেন বড় ভাবি?”

” থাপ্পড় খাবি কিন্তু রাই। সর এখান থেকে।”

” বিয়ে করে আসার এখনো ২৪ ঘণ্টাই হয়নি অথচ তুমি ননদকে থাপ্পড় মারতে চাচ্ছো বড় ভাবি।”

” রাই,,,,”

” আরে এমনি বললাম। দেখ তোর বাড়ির সকলে চলে এসেছে।”

ফারজানা খান আর আনোয়ারা খান বাদে বাকিরা সবাই এসেছে। বাড়িতে দুজন অন্তঃসত্ত্বাকে রেখে কিভাবে তারা আসেন। তাই আসেনি। ছোট্ট রিদ ফারহাদের কোল থেকে নেমে দৌড়ে আসে শুভ্রার কাছে। কোনো দিকে না দেখেই লাফিয়ে উঠে শুভ্রার কোলে।

” শুভ্রা মামনি, তুমি জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি? তুমি তো সকালে আমাদের বাসায় ছিলে না তাই নানুমনিরা কেউ সকালে ঔষধ খেতে চায়নি।বলে যে খাবো না আমরা ঔষধ। আমি সবাইকে ধমক দিয়ে খাইয়েছি জানো। আর চাচি মনিদের পেটের ভিতর থাকা আমার ভাই বোনেরা অনেক ভালো আছে। আমি সবার খেয়াল রেখেছি। আমি ভালো ছেলে তাইনা , বলো বলো ?”

শুভ্রা হাসে। রিদ বয়সের তুলনায় বেশি বুঝদার। সব গুলো দাঁত বের করে খিলখিলিয়ে হাসে রিদ।ওর হাসি আর পাকনামি দেখে বাকিরাও হাসে।

” হ্যাঁ, তুমিতো ভালো ছেলে। আমার রিদ সোনার থেকে ভালো আর কেউ নেই।”

একে একে বাড়ির সবাই কথা বলে শুভ্রার সাথে। কিন্তু ফারহাদরা শুভ্রার আশেপাশেও আসছে না।প্রথম দিকে শুভ্রা খেয়াল না করলেও যখন দেখলো সবাই ওর সাথে কথা বলছে কিন্তু ওর ভাইয়েরা কাছেই আসছে না তখন ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো শুভ্রার। মন্ত্রী মশাইয়ের মতো ওর ভাইয়েরাও আবার কোন দিন থেকে গম্ভীর হলো।
ওরা আড়চোখে শুভ্রার দিকে তাকাচ্ছে আবার অন্যদিকে তাকাচ্ছে। ওদের অবস্থা দেখে শুভ্রার পেট ফেটে হাসি আসতে চাইছে। কিছুটা হেসেও ফেললো।
ফারহাদরা কিছু সময় এদিক ওদিক করে কাটালেও আর থাকতে পারলো না। শুভ্রার কাছে এসে গেলো।

” দেখলেতো আসাই লাগলো আমার কাছে। বেকার বেকার গম্ভীর হওয়ার ভান করছিলে। এখন বলো আমার সাথে কথা না বলে ওভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল কেনো?”

চার ভাই তাকায় শুভ্রার দিকে। মেয়েটাকে কতো স্বাভাবিক লাগছে। অথচো এই মেয়েই কিনা ড্রাগের নেশায় নেসাক্ত। হয়তো জনেও না কালকে রাতে কি করেছে। কিন্তু তারা তো জানে।

_____________

রাত প্রায় সাড়ে দশটা। অনুষ্ঠান শেষে ঘরে ফিরেছে শুভ্রা আর আরহাম। বেলকনিতে ইজি চেয়ারে আরহাম চোখ বন্ধ করে বসে আছে। শুভ্রা ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেস হতে। সারাদিন শুভ্রার সাথে একটা কথাও বলেনি আরহাম। যতবার শুভ্রার কথা ভাবছে ততবার বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে রিপোর্ট গুলো। ওয়ালেটে থাকা ছবিটা বের করে আরহাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে।
শুভ্রা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কোথাও আরহামকে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে আসে। আরহাম ছবিটা আলগোছে ওয়ালেটে রাখে। শুভ্রা ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। দুজনের মধ্যে নিরবতা বিদ্যমান। শুভ্রা বুঝতে পারছে না মন্ত্রী মশাই কেনো তার সাথে কথা বলছে না। সারাদিন বকবক করতে থাকা শুভ্রা আরহামের এতো টুকুতেই চুপচাপ হয়ে গেছে।

হঠাৎ আরহাম শুভ্রাকে টেনে নিজের কোলে বসায়। নিজ বাহুডরে আবদ্ধ করে নেয় শুভ্রাকে। মুখ গুজে দেয় শুভ্রার আঁধভেজা চুলে। হতভম্ব হয়ে যায় শুভ্রা। নাম না জানা এক অনুভূতি আবিষ্কার করে নিজের মাঝে। শারা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।

” বউ,”

শুভ্রা জানেনা আরহামের এই ডাকে কি আছে। কিন্তু তাকে আলাদা এক শান্তি অনুভব করায়। এইতো সকালে যখন শুনেছিল তখন ও কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। শুভ্রা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যায় সারাদিনে আরহামের তাকে ইগনোর করা।

আরহাম ছোট্ট ছোট্ট চুমু খাচ্ছে শুভ্রার চুলে। মাতাল করা ঘ্রাণ পাচ্ছে সে শুভ্রার চুল থেকে। নেশার মতো টানছে তাকে ।আরহামের ছোঁয়া গুলো ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।

“অদ্ভুত এক নেশা তুমি, মেয়ে। না পারছি দূরে রাখতে না পারছি সেবন করতে। কি আছে তোমার মাঝে? এই গম্ভীর মন্ত্রী তোমার নেশায় ডুবে গেলো। যার কথা একসময় আমার বিরক্ত লাগতো তার কথা শুনতে না পেয়ে কেনো আমি বিচলিত হয়ে পরি? তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা ওই হাসি কেনো আমাকে মুগ্ধ করে? তোমার চোখের অতল সাগরে কেনো ডুব দিতে ইচ্ছা করে? কেনো সারাদিন তোমাতে মগ্ন থাকতে মন বলে? মেয়ে তুমি নেশার থেকেও নেসাক্ত ”

কথা বলতে চেয়েও গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। দ্রুত গতিতে হার্ট বিট করছে। আরহামের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে শুভ্রা। তবে কি শুভ্রা আরহামের জন্য যা অনুভব করে আরহামও শুভ্রার জন্য তাই অনুভব করে?ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে আরহামের ছোঁয়া। লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে শুভ্রা।

________

চলবে,,