প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-২৭+২৮

0
116

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_২৭
#আহিয়া_শিকদার

সুমধুর কন্ঠে ফজরের আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। হৃদয় শীতল করা কন্ঠ। হালকা আলো ফুটেছে চারদিকে। শুরু হয়েছে ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ।

আরহাম এক হাতের উপর ভর দিয়ে ঝুঁকে আছে শুভ্রার মুখের উপর।গভীর দৃষ্টিতে দেখছে শুভ্রাকে। হাজারো চিন্তা, কষ্টের মাঝে সুখ খুঁজে পেয়েছে সে এই মেয়েটার মাঝে। বয়সের অজুহাতে মেয়েটার থেকে কতই না দুরত্ব রেখেছিল। কিন্তু আজ বুঝতে পারছে বয়স সংখ্যা মাত্র। মেয়েটা কি জানে তার মন্ত্রী মশাই তাকে আরো আগে থেকেই ভালোবাসে?না জানে না, জানবেই বা কি করে। আরহাম তো কখনও জানায়নি।এইযে তার সাথে লেপ্টে আছে তার ভালোবাসার মানুষটি অথচো সে এখনো তাকে বলেনি ভালোবাসি। ওপর পক্ষ থেকে অসীম ভালোবাসা পেয়েছে সে।
বয়স নিয়ে সব চিন্তা ফিকে হয়ে যাচ্ছে আরহামের কাছে। শুভ্রার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।

পিট পিট করে চোখ খুললো শুভ্রা। চোখ খুলে আরহামকে হঠাৎ এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। মুচকি হাসলো আরহাম।

” শুভ সকাল ,বউ”

আরহামের আদুরে ডাক। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই স্বাভাবিক ভাবেই লজ্জা পেলো শুভ্রা। কিন্তু প্রাধান্য দিলো না লজ্জাকে। তার চরিত্রের সাথে মোটেও লজ্জা মানায় না। শুভ্রা হাত রাখলো আরহামের প্রশস্ত বুকে। হালকা ধাক্কা দিলো। কিন্তু এক চিলতেও নড়াতে পারলো না আরহামকে। আরহামের হাসি আরো প্রসারিত হলো। শুভ্রার মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

” এই পাঠকাঠীর শরীর নিয়ে তুমি শক্তি দেখাচ্ছো, বউ?”

তেঁতে উঠলো শুভ্রা। বার কয়েক ধাক্কা দিলো আরহামকে। কিন্তু কোনো সুবিধা করতে পারল না। অগত্যা হাল ছেড়ে দিলো।

” সব জায়গায় শক্তি দেখাতে নেই,বউ ”

শুভ্রা আলতো হাতে আরহামের মুখ স্পর্শ করতে শুরু করে। কিঞ্চিৎ অবাক হয় আরহাম। কোথায় এই সময় লজ্জায় লাল হয়ে থাকার কথা তার বউয়ের কিন্তু ঘটছে তার উল্টো। এবার হালকা করে ধাক্কা দিতেই বিছানায় পরে যায় আরহাম। ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে শুভ্রা।

” আপনি ঠিকই বলেছেন মন্ত্রী মশাই। সব জায়গায় শক্তির ব্যবহার করতে হয় না।”

বলেই বিছানা থেকে নেমে দৌড় দেয় শুভ্রা। উদ্দেশ্য ওয়াশরুম। আরহাম হেসে চোখ বন্ধ করে রাখে। ইদানিং তার বড্ড হাসতে ইচ্ছা করে সকলের সামনে। কিন্তু পারে না। একমাত্র এই মেয়েটার সামনে হাসতে তার কোনো সংকোচ হয়না।

_______

হাত পা বাধা অবস্থায় গোডাউনে পরে আছে ডক্টর সিরাজুল সাহেব। খান পরিবারের পারিবারিক ডাক্তার তিনি। অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন তিনি উপস্থিত সবাইকে।

” আমাকে এখানে কেনো এনেছিস তোরা? তোদের সাহস হলো কিভাবে? ছেড়ে দে আমাকে। দেখে নেবো একেকটাকে।”

শুভ পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। ফোনে নিজের প্রিয়সীর সাথে প্রেমালাপ এ ব্যস্ত।ফোনের ওপর পাশের ব্যক্তি যদি জানত তার প্রেমিক পুরুষ সিগারেট টেনে তার সাথে কথা বলছে তাহলে হয়তো এখনই বলতো “ব্রেকাপ তোর সাথে”।
সিরাজুল সাহেবের চিৎকার মনে হচ্ছে শুভর কানেই যাচ্ছে না। আশেপাশে থাকা বাকি গার্ডরা শুভর দিকেই চেয়ে আছে। রাগে তাদের শরীরের রক্ত টগবগ করছে। একবার অনুমতি পেলেই হয়তো ঝাপিয়ে পড়বে সিরাজুল সাহেবের উপর। সিগারেট এ শেষ টান টা দিয়ে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে বিদায় জানিয়ে উঠে দাড়ালো শুভ। পাশ থেকে হকিস্টিক নিয়ে এগিয়ে গেলো সিরাজুল সাহেবের কাছে। এতক্ষণ চিৎকার করায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। শুভ হাত দ্বারা সিরাজুল সাহেবের থুতনি উঁচু করে ধরলো।

” আসলে এতক্ষণ শুনতে পাইনি তোর কথা। কি যেনো বলছিলি?”

শুভ’র হেয়ালি কথা শুনে রাগের মাত্রা বেড়ে গেলো সিরাজুল সাহেবের। কিছু অকথ্য ভাষা ব্যবহার করলেন তিনি। শুভ হাসি মুখে শুনলো। দুইপা পিছিয়ে গেলো সে। সিরাজুল সাহেব যেনো আরো সাহস পেয়ে গেলেন। আরো কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। মুখ থেকে রক্ত গলগল করে পড়ছে। শুভ হকিস্টিক টা ছুঁড়ে মারলো আরেকদিকে। নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আবারও একটা সিগারেট জ্বালালো। ব্যথায় কাতরাচ্ছেন সিরাজুল সাহেব। গার্ডদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তারা যেন এটারই অপেক্ষা করছিল।

কয়েক মিনিট পর চারজন মানুষের ছায়া দেখা গেলো দরজায়। শুভ সেদিকে একবার তাকিয়ে মুখে থাকা সিগারেট ফেলে দিলো। ভদ্র ছেলের মত দাড়িয়ে পড়লো।

ফারহাদ,রাহাত,রিমন আর ফাহিম এসে বসলো চেয়ারে। সিরাজুল সাহেবকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে গেলো তাদের। ফাহিম রাগি লুকে তাকালো শুভ’র দিকে। ক্যাবলামার্কা হাসি হাসলো শুভ। নিস্পাপ মুখশ্রী বানিয়ে ফেললো। যেনো ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না সে। শুভ একজন গার্ড কে ইশারা করতেই সিরাজুল সাহেবের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা হলো।

” ভাইয়া, চলো আজকে একদফা লুডু খেলার যাক। যে জিতবে আজকের দায়িত্ব তার কাঁধে।”

ভ্রু নাচিয়ে বলল রিমন। সায় জানালো সবাই।রিমন ফোনে লুডু বের করে সবাইকে নিয়ে খেলতে বসলো। মুখ বাকালো শুভ। আজকে আর তার কোনো কিছুই করতে হবে না। হাত জোড়া কেমন হকিস্টিক টা ধরতে চাচ্ছে।

” হকিস্টিক রে এই কষ্ট কোথায় রাখি। কষ্ট পাস না ভাই আজকে তোর ব্যবহার আমি করবো না দেখে। আমারও কষ্ট হচ্ছে।”

হকিস্টিক টার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল শুভ। গার্ডরা ওর অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে। যতবারই তারা শুভকে এই অবস্থায় দেখে ততবারই তাদের পেট ফেটে হাসি চলে আসতে চায়।

বেশ কিছু সময় লুডু খেলার পর ফাহিম জিতে গেলো। লাফিয়ে উঠলো ফাহিম। ভাইদের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। তারাও বিপরীতে বাকা হাসি উপহার দিলো।

“তোর ভাগ্য আজকে ভালোরে ভাই।যা ইনজয় কর”

রাহাত ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে বলল। ফাহিম হাতে হকিস্টিক নিয়ে সিরাজুল সাহেবের সামনে গিয়ে বসলো।

” আয় ভাই, আমরা বরং আরেক রাউন্ড খেলি।”

রাহাতের ডাকে এক সেকেন্ড ও সময় অপচয় করলো না শুভ। ঝড়ের গতিতে এসে ফাহিম যেখানে বসেছিল সেখানে বসলো। চারজন মেতে উঠলো লুডু খেলায়। আশেপাশে কি হচ্ছে তাদের দেখার সময় নেই।

একজন গার্ড এক বালতি পানি ছুঁড়ে মারলো সিরাজুল সাহেবের উপরে। চোখ খুললেন তিনি। চোখের সামনে ফাহিমকে দেখে মনে হচ্ছে চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন।

“ফাহিম তুমি এখানে? দেখো না, সকালে তুমি ফোন করে জানালে না তোমার দাদু অসুস্থ তখনই আমি চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম তোমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মাঝ পথে এর তুলে নিয়ে আসে।”

চোখ দিয়ে ইশারা করে গার্ডদের দেখায় সিরাজুল সাহেব। ফারহাদ’দের দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ভয়াতুর চোখে তাকায় ফাহিমের দিকে। ফাহিমের ঠোঁটে বাকা হাসি দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো সিরাজুল সাহেবের। যা বোঝার বুঝে ফেলেছেন তিনি।

” আমাকে ক্ষমা করে দেও। আর কোনোদিন এমন করবো না। টাকার লাভ অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।ক্ষমা করে দেও আমাকে।”

” আরে আংকেল ক্ষমা কেনো চাচ্ছেন? কি করেছেন আপনি?”

থতমত খেয়ে যায় সিরাজুল সাহেব। মনে প্রশ্ন উকি দেয়, ” হয়তোবা সে যা ভাবছে তেমন কিছুই নয়” ।
হাত পায়ের বাধন খুলে দেয় ফাহিম। গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে,

” তোমাদের সাহস হলো কিভাবে ওনাকে এভাবে বেঁধে রাখার। কাপুরুষের দল।”

চোখ বড় বড় হয়ে যায় গার্ডদের। অদ্ভুত চাহনিতে দেখে ফাহিমকে। সিরাজুল সাহেব খুশি হন। তারমানে তিনি যা ভাবছেন তা নয়। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আগেই ফাহিমের কথা শুনে ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করে ওনার।

“ছি,তোমাদের এতো ট্রেনিং দিয়েছি কি এটাকে বেঁধে রাখার জন্য। তোমরা দেখি পুরুষ জাতির নাম ডোবাবে।”

বলতে বলতেই হকিস্টিক দিয়ে সিরাজুল সাহেবের হাত এবং পায়ে বেশ করেকবার আঘাত করে।মাটিতে লুটিয়ে পরেন তিনি।

” দেখো এভাবে রাখতে হয়।”

গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলল ফাহিম। গার্ডদের বড় বড় করে রাখা চোখ স্বাভাবিক হয়ে গেল। ফাহিম একের পর এক আঘাত করতেই থাকলো সিরাজুল সাহেবকে। ফারহাদ দের কোনো ভাবান্তর নেই। তারা এক মনে লুডু খেলা ইনজয় করছে।
সিরাজুল সাহেবের শার্টের কলার্ট ধরে দাড় করালো ফাহিম।দেয়ালের সাথে গলা চেপে ধরলো। রক্ত বর্ণ হয়ে গেছে ফাহিমের চোখ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিরাজুল সাহেবের। ছেড়ে দিলো ফাহিম।
চেয়ার নিয়ে বসলো। প্রশ্ন ছুড়লো সিরাজুল সাহেবের দিকে।

“কে বলেছে তোকে বোনিকে ড্রাগ দেওয়ার জন্য?”

কিছু বললেন না তিনি।সিরাজুল সাহেবের চুপ করে থাকা মোটেও পছন্দ হলো না ফাহিমের। পকেট থেকে ছোট্ট একটা ছুরি বের করলো। ছুড়িটা দেখতে ছোটো হলেও ধারালো। আবারো জিজ্ঞেস করলো ফাহিম। কিন্তু এবারও নিরুত্তর সিরাজুল সাহেব।

” আচ্ছা বেশ, বলবি নাতো। তাহলে আর কি করার।কোনো হাত দিয়ে যেনো বোনিকে ড্রাগ দিয়েছিলি? ডান হাত দিয়ে তাই না। এই হাত টাই যদি না থাকে?”

ছুরি চালিয়ে দিলো ফাহিম।কেটে ফেললো সিরাজুল সাহেবের ডান হাতের পাঁচটা আঙুল। গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল সিরাজুল সাহেব।

বিরক্ত হলো ফারহাদ। চিৎকারের জন্য তার খেলায় অসুবিধা হচ্ছে।

” ভাই, তোর জন্য ভুল দান দিলাম। মুখ বন্ধ কর ওর। এভাবে ষাঁড়ের মত কেউ চিল্লায়।”

“সরি ভাইয়া। তুমি খেলো।”

খেলায় মনোযোগ দিলো ফারহাদ। তার একটা দান ভুল হয়ে গেছে দেখে কতো দুঃখ। আহারে দানটা ঠিক থাকলে হয়তো রাহাতের একটা গুটি কাটতে পারতো।

ফাহিম আবারো জিজ্ঞেস করে একই প্রশ্ন। এবার জবাব দিলো সিরাজুল সাহেব। সবটা বলে দিলো ফাহিমকে। ক্রুর হাসলো ফাহিম।

“এবার তো আমাকে ছেড়ে দিবে বলো?”

একটা ভিডিও চালালো ফাহিম। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ড্রাগ ডিলার দের সাথে সিরাজুল সাহেবকে। মাষ্টারমাইন্ডদের মধ্যে তিনিও একজন।

” জানিস,পেন ড্রাইভ টা আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু এতো চাপের মধ্যে দেখার সুযোগ ই পাইনি। দেখলে হয়তো আমার বোনটাকে এত কষ্ট পেতে হতো না। বোনি জানতো তোর সম্পর্কে। কিন্তু আমার বোকা বোন আমাদের হাতে সব দিয়েছিল। যেনো আমরা তোকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি। কিন্তু আমার বোন কি আর জানে তার ভাইয়েরা কেমন। একজন সিআইডি অফিসারের বাড়িতে এমন কাজ করতে তোর ভয় লাগলো না?”

আকুতি মিনতি করতে শুরু করলো সিরাজুল সাহেব। তিনি ভাবতেও পারেননি এভাবে কোনোদিন ধরে পড়বে।

“বাহ্ যার নুন খেলি তার প্লেতেই থুতু ফেললি। তুইতো জানতিস বোনি আমাদের কাছে কি। আমাদের কলিজা ও। জানতিস না ওর গায়ে সামান্য ফুলের টোকা লাগলেও কি করতে পারি আমরা? জেনেও নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে আনলি। কষ্ট হচ্ছে তোর পরিবারের লোকদের জন্য।তোর ও তো বোন আছে তাইনা, আচ্ছা যখন তোর কাটা ছেড়া লাশ পাবে তখন ওনার কি অবস্থা হবে। শুনেছিলাম তুই তোর বোনকে খুব ভালোবাসিস। তাইতো বোন আর বোন জামাইকে নিজের কাছেই রেখেছিস। তোর বোনের কথা ভেবে খারাপ লাগছে রে।”

সিরাজুল সাহেবের গলা বরাবর ছুরি চালালো ফাহিম। মুহূর্তেই গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করতে শুরু করলেন তিনি। মন গললো না ফাহিমের। একেরপর এক ছুরি চালিয়েই যাচ্ছে। সিরাজুল সাহেবের প্রাণপাখি সেই কখন দেহ ত্যাগ করেছে কিন্তু ফাহিমের থামার নাম নেই।

“জিতে গেছি, জিতে গেছি” বলে চিৎকার করে উঠলো রাহাত। আনন্দে নাচতে শুরু করলো। জিতে গেছে সে। বাকিরা মুখ কালো করে বসে আছে।

” তুই বেইমানি করেছিস ভাই”

” এহ, মোটেও না। এখন জিততে পারনি বলে এমন করছো”

তর্ক শুরু হয়ে যায় ফারহাদ আর রাহাতের মধ্যে।
গার্ডদের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।হতভম্ব তারা ফারহাদদের ঝগড়া দেখে। এখানে যে কাউকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। শান্তশিষ্ট ফাহিমের এই ভয়ংকর রূপ দেখে কাপছে তারা। কেউ কি ভেবেছিল সবসময় হাসি খুশি থাকা ফাহিমের এমন ভয়ঙ্কর একটা রূপ আছে?

“কি করতে হবে জানিস তো? নাকি বলতে হবে।”

” আরে, ফাহিম।এটা বলার কি হলো? আমাকে কি তোর গর্ধব মনে হয়?”

” না, গর্ধব মনে হয়না কারন তুইতো সত্যিই গর্ধব।”

“অপমান, এতো বড় অপমান। নাহ্ এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।”

” যা ভাগ, কাজ কর গিয়ে।”

মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে কাজে লেগে পড়লো শুভ।বাকি গার্ড’রা সাহায্য করছে তাকে।

” ভাই, তোর তো শার্ট নষ্ট হয়ে গেলো। ইশ এই জন্যই বলি ছুরি ব্যবহার করিস না। দেখলিত রক্ত দিয়ে কি হলো। বন্দুক ব্যবহার করবি”

” ভাইয়া, ছুরি চালিয়ে যে কি শান্তি তুমি কিভাবে বুঝবে। তুমি তো শুট করেই কাজ শেষ করে দেও।”

“তা অবশ্য ঠিক”

চলে যায় তারা চারজন। গোডাউনে ফেলে যায় কয়েকটুকরো করা লাশ আর কয়েকজন মানুষকে।

__________________

চলবে,,,,

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_২৮
#আহিয়া_শিকদার

খাবার খাওয়া শেষ করে এসে গোছগাছ করছে শুভ্রা।আজকে বিয়ের তিনদিন পূরণ হলো।জামাইকে নিয়ে আজকে নিজের বাড়ি যাবে।আনন্দে মন নাচছে শুভ্রার।বার বার তো গানের সুর ধরছে।তিনদিন এ যেনো মনে হচ্ছে কতো বছর নিজের বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে আছে।আরহাম সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। নিজের কাপড় গোছানো শেষে আরহামের কাপড় গোছাচ্ছে শুভ্রা।এতো কিছুর মাঝে শুভ্রা ভুলে গিয়েছিল নীলার কথা।মেয়েটাকে আগে কোনদিন দেখেনি।শুনেছিল একই বয়সী তারা।একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে হলো অথচো বোন বিয়েতে উপস্থিত ছিল না কেনো? মাথায় ঘুরছিল প্রশ্নটা।আরহামের সামনে বিছানায় বসে শুভ্রা। আরহাম গভীর মনোযোগে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেও যখন আরহাম দেখলো না শুভ্রার দিকে তখন রেগে গেলো শুভ্রা। উঠে গিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিন নামিয়ে দিলো। কোমরে দুই হাত দিয়ে দাড়ালো আরহামের সামনে।নিজের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় রাগ হলো আরহামের।কিছু বলার উদ্দেশ্যে মাথা তুললো।কোমরে হাত রেখে রেগে শুভ্রাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের রাগ নিজের মধ্যেই রাখলো।একটা কথা সঠিক মনে হচ্ছে আহামের, ” সব পুরুষেরাই বউয়ের সামনে বিড়াল হয়ে যায়, সে যতো বড় বাঘ হোক না কেন”সে নিজেই হয়তো তার প্রমাণ।এইযে এখন বউয়ের রাগ দেখে নিজের রাগ নিজের মধ্যেই রাখলো।বউয়ের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতক্ষণে ঝাড়ি মারতে মারতে আধমরা করে ফেলত।

“ঘরে বউ রেখে ল্যাপটপে কাকে দেখছেন এতো মনোযোগ দিয়ে?”

ভ্রু কুচকালো আরহাম।শুভ্রার কথার মানে বুঝতে পারেনি।কিছুক্ষন লাগলো বুঝতে।সব স্ত্রীদের এইটা কমন একটা বিষয়। স্বামী যদি একটু পাত্তা না দেয় তাহলে সবার আগে এসব মেয়েলি চিন্তাভাবনা মনে আসে।হাসলো আরহাম।শুভ্রাকে গিন্নি গিন্নি লাগছে।শুভ্রাকে টেনে নিজের কোলে বসালো।দুইহাতে কোমর জড়িয়ে রাখলো যেনো উঠতে না পারে।বাইন মাছের মতো ছটফট করতে শুরু করলো শুভ্রা।

“কি হলো, বউ? বাইন মাছের মতো ছটফট করছো কেন?”

ঠোঁটে দুষ্টু হাসি রেখে বলল আরহাম। শুভ্রা যতোই ছড়ানোর চেষ্টা করছে আরহাম ততই শক্ত করে ধরে রাখছে।বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করে যখন নিজেকে ছাড়াতে পারলো না তখন শান্ত হয়ে গেলো শুভ্রা।

“শক্তি শেষ?”

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো আরহাম।শুভ্রা রাগি ভাবে তাকালো তার দিকে। উচ্চস্বরে হেসে উঠলো আরহাম।

“অসভ্য মন্ত্রী”

চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আরহামের।অসভ্য মেয়েই কিনা তাকে অসভ্য ট্যাগ লাগিয়ে দিল।তবে বাকা হাসলো সে।

“অসভ্য মন্ত্রী যখন বললে তো বউ কিছু অসভ্যতামি দেখাই?”

ভ্রু নাচিয়ে বলল আরহাম।মুখ চেপে ধরলো শুভ্রা।বার কয়েক অসভ্য মন্ত্রী বলে আখ্যায়িত করলো।

“আচ্ছা আপনার ওয়ালেটে ওটা কার ছবি?আবার আপনাদের ফ্যামিলি ফটোতেও দেখলাম মেয়েটিকে।”

আরহামের হাসি মুখ মুহূর্তেই ঘনো অন্ধকারে ছেয়ে গেল।শুভ্রার কোমরে থাকা হাতের বাঁধন ঢিলে হয়ে গেলো।

“তুমি কিভাবে দেখলে?”

“ঐতো দেয়ালে আপনাদের ফ্যামিলি ফটোতে।তাছাড়া আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছানোর সময় আপনার ওয়ালেটে দেখেছিলাম।”

দেয়ালে টাঙ্গানো ফ্যামিলি ফটোটার দিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল। আরহাম তাকালো সেদিকে। আরহামের পাশেই নীলা বসে আছে।বাবা মা দুইদিকে আর দাদা দাদী পিছনে।বছর তিনেক আগে তোলা ছবি। আরহাম কিছু বলার আগেই শুভ্রা বলে,

“ওটাকি নীলা?আমিতো শুনেছিলাম রাইমার থেকে, আপনার একটা বোন আছে মানে আমার ননোদিনী।কিন্তু নিজের একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে হলো অথচো ওর কোনো খোঁজ নেই।আশ্চর্য।আর সেদিন যখন এসেছিলাম তখনো নীলাকে দেখিনি আর বিয়ের তিনদিন হলো বাড়িতে তো দেখলাম না।”

কোল থেকে নামিয়ে দিলো শুভ্রাকে।উঠে দাড়ালো আরহাম।ল্যাপটপ হাতে বেলকনির দিকে যেতে যেতে বলল,

“ও নেই”

অবাক হলো শুভ্রা।নেই মানে কি।আর নীলাকে আগেও দেখেছে বলে মনে হচ্ছিল শুভ্রার। আরহামকে জিজ্ঞেস করার জন্য উঠতেই দেখতে পেলো বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।শুভ্রা বুঝলো হয়তো কোনো কারণে মন্ত্রী মশাই চিন্তিত।তাই আর জ্বালালো না।রাইমার ঘরের দিকে চলে গেলো।রাইমাকে জিজ্ঞেস করা যাবে।

ফাহিমের সাথে প্রেমালাপে ব্যস্ত রাইমা।না প্রেমালাপ বললে ভুল হবে ফাহিমকে বকতে ব্যস্ত রাইমা।ঘরের দরজা খোলা থাকায় শুনতে পেলো শুভ্রা।হাসলো।বরাবর এদের ঝগড়া দেখে আসছে সে। কথায় কথায় ঝগড়া লাগে।এদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।তার আগে মন্ত্রী মশাইকে রাজি করাতে হবে।নক করলো শুভ্রা।রাইমা ভিতরে আসতে বলল।ফাহিমকে হোল্ড করতে বলল।

“আমার ঘরে আসার জন্য আবার তোকে নক করতে হবে নাকি?”

হেসে রাইমার পাশে বসলো শুভ্রা।জিজ্ঞেস করলো নীলার কথা। আরহামের মত রাইমার ও মুখের একই অবস্থা হলো।আরহামের সাথে হওয়া কথাগুলো বলল।

“বড় ভাইয়ার ওয়ালেটে একটা মেয়ের ছবি দেখে তোর খারাপ লাগেনি?”

“খারাপ লাগবে কেনো?অবশ্য হঠাৎ ছবিটা দেখে উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় এসেছিল।পড়ে মনে পড়ল ভাইয়া তো আমাকে বলেছিল নীলার কথা।পড়ে ফ্যামিলি ফটোতে দেখে শিওর হয়েছি।কিন্তু ছবিটা বেশ কয়েকবছর আগের মনে হলো। মন্ত্রী মশাই বললো ও নেই।কোথায় গেছে?”

“নীলা মারা গেছে”

কেঁপে উঠল শুভ্রা।হতভম্ব হয়ে তাকালো রাইমার দিকে।বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো।এর আগে রাইমার কাছে শুনেছিল নীলা তাদের সমবয়সী। কাপা কাপা গলায় বলল,

“কি কি বলছিস এসব?”

“হ্যাঁ সত্যি। নীলা মারা গেছে।বড় ভাইয়ার কলিজার টুকরা ছিল নীলা।এজন্যই হয়ত তোর কথা শুনে বেলকনিতে চলে গিয়েছিল। বাড়িতে কেউ বড় ভাইয়ার সামনে নীলার কথা বলেনা।বড় ভাইয়ার কষ্ট হবে ভেবে।তাছাড়া পর দিনই নানিমাও মারা গিয়েছেন।”

“কিভাবে এমনটা হলো?”

“শুনেছিলাম নীলা কাকে যেনো ভালোবাসতো।ছেলেটি নাকি নীলার সাথে অভিনয় করছিল।তখন মেয়েটার বয়সই বা কতো ছিল।সবেমাত্র ১৬ তে পা দিয়েছিল।সেবার আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল বড় ভাইয়ারা সবাই। নীলাও গিয়েছিল।তুই তো দেখেছিলি ভাইয়াদের।”

হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় শুভ্রা।কিন্তু সেদিন নীলা বাদে সবাইকে দেখেছিল সে।মন্ত্রী মশাই প্রায় আসতো রাইমাদের বাড়িতে।লুকিয়ে দেখতো মন্ত্রীকে।সেখান থেকেই সূত্রপাত হয় শুভ্রার মন্ত্রী মশাইয়ের প্রতি ভালোবাসার।কখনো মন্ত্রী মশাইয়ের সামনে আসেনি।তারপর ভাইয়ের থেকে, রাইমার থেকে খোঁজ খবর নিতো।ধীরে ধীরে মন্ত্রী মশাইতে আসক্ত হয়ে যায়।

“তারপর?”

“সেদিন খাওয়া দাওয়ার সময় নীলাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।পড়ে সবাই খুঁজতে বের হই।কিন্তু

“কিন্তু কি?”

বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো শুভ্রা।এতক্ষনে মাথায় হানা দিয়েছে সেদিনের তার সাথে হয়ে যাওয়া সেই কালো অতীত।

“নীলাকে খুঁজে পেয়েছিলাম আমরা।কিন্তু জীবন্ত নীলাকে পাইনি পেয়েছিলাম ঝলসে যাওয়া নীলার দেহ।নীলার অবস্থা শুনে পরদিনই হার্ট এ্যাটাক করে নানিমনি।ওনাকে জানানো হয়নি।কিন্তু জানিনা কিভাবে জানতে পেয়েছিলেন।হার্টের সমস্যা ছিল ওনার”

“কো কোথায় পাওয়া যায় নীলাকে?”

“রামিজ আংকেলের পুরোনো বিল্ডিং এ ”

কথা শেষ করে নিজেই থমকে যায় রাইমা।শুভ্রার দিকে তাকায়।কেঁপে উঠে শুভ্রা।বাবা মাকে শেষ বার দেখা দৃশ্য ভেসে উঠে চোখের সামনে।ভেসে উঠে ভয়ংকর সেই কালো অতীত। থর থর করে কাঁপতে শুরু করে পুরো শরীর।ভয় পায় রাইমা।

রাইমার ঘর থেকে বাইরে নজর দেয় শুভ্রা।আরহামকে বাড়ির বাইরে যেতে দেখে দ্রুত ঘর থেকে বের হয় শুভ্রা।পিছনে রাইমা চিৎকার করে থামতে বলে।কোনো কথা শুনে না শুভ্রা।এই মুহূর্তে আরহামকে কিছু কথা জানানো ছাড়া কোনো কিছুই মাথায় আসছে না।

ফোনের ওপাশে এতক্ষণ সব কথা শুনতে থাকা ফাহিম বসা থেকে দাড়িয়ে পরে।ঘর থেকে ছুটে বের হয়।বিপদের আঁচ পেয়েছে সে।ড্রয়িং রুমে ভাইদের দেখে তাদের কোনো কিছু না বলেই সাথে নিয়ে বের হয়।যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালানো যায় চালাচ্ছে।ফাহিমকে একের পর এক প্রশ্ন করছে ফারহাদরা।ফাহিম ফোনে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।শেষে রাইমার চিৎকার শুনতে পায়। লাইন কেটে যায়।রাগে গাড়ির স্টিয়ারিং এ আঘাত করে ফাহিম।বাকিরা বুঝতে পারে কোনো খারাপ কিছু হয়েছে নিশ্চই।

চিৎকার করে উঠে রাইমা।নিচে নেমে কোলে তুলে নেয় শুভ্রার মাথা।গলগল করে রক্ত পড়ছে।হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।শিকদার বাড়ির সবাই ছুটে আসে।

আরহাম বাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার শুনে দ্রুত প্রবেশ করে বাড়িতে। সিঁড়ির কাছে রাইমার কোলে মাথা রেখে থাকতে দেখে শুভ্রাকে।দ্রুত এগিয়ে যায়।দেখতে পায় শুভ্রার রক্তাক্ত দেহখানি। ধপ করে বসে পড়ে। টেনে নেয় নিজের বাহুডোরে।মুহূর্তেই শুভ্র পাঞ্জাবি লাল রঙ্গা হয়ে যায়।

“ভাইয়া এক্ষনি ভাবীকে হসপিটালে নিতে হবে।তাড়াতাড়ি চলো।না হলে দেরি হয়ে যাবে ভাইয়া।”

উপর থেকে নামতে নামতে বললো নিতুল। আরহাম কোলে তুলে নিলো শুভ্রাকে।কিছু বলার চেষ্টা করছে শুভ্রা।

“তোমার কিছু হবে না বউ।তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার পাশে আছে।চোখ খুলে রাখো। এক্ষণি হাসপাতালে পৌঁছে যাব।”

গাড়িতে শুভ্রার মাথা নিজের কোলে নিয়ে বসে আরহাম।সেদিনও শুভ্রাকে এভাবেই নিয়ে গিয়েছিল আজও পুনরাবৃত্তি হলো।গাড়িতে তাদের সাথে নীলিমা শিকদার আর রাইমা উঠলো।বাকিরা অন্য গাড়িতে আসছে।

“চোখ খুলে রাখ মা।তোর কিছু হবে না।আমরা আছি।”

নীলিমা শিকদার কাদছেন।এই কয়েকদিনে মেয়েটার প্রতি তার নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা জন্মেছে।এক মেয়েকে তো হারিয়েছেন আরেক মেয়েকে কোনোভাবেই হারাতে চান না।রাইমা শুভ্রার হাত মুঠো করে ধরে রেখেছে।নিজেকে দোষ দিচ্ছে সে।ভাবছে তার জন্যই আজ শুভ্রার এমন অবস্থা। একহাতে আরহামের গালে হাত দেয় শুভ্রা।কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু স্পষ্ট বলতে পারছে না। আরহাম বার বার চোখ খুলে রাখতে বলছে শুভ্রাকে।

“ম মন্ত্রী মশাই, ভা ভালবাসি আপ আপনাকে। নী নীলাকে মে রে,,,”

হাত নামিয়ে নেয় শুভ্রা।বন্ধ করে ফেলে চোখজোরা।শান্ত হয়ে যায় ছটফট।

______________

আরহামের পাঞ্জাবির দুই দিকে চেপে ধরেছে রাহাত।রাগে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার। ফাহিম অগ্নিচোখে চেয়ে আছে রাইমার দিকে। ফারহাদ,রিমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখছে ICU। নীলিমা বেগম জা’এর কাধে মাথা রেখে আছেন।

“তোমাকে বিশ্বাস করে তোমার একবার চাওয়াতেই আমাদের ছোট বোনটাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।তার প্রতিদান তুমি এভাবে দিচ্ছ?”

আরহামকে ঝাঁকিয়ে বলছে রাহাত।নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে।কোনো কথা বলতে পারল না আরহাম।আরো ক্ষেপে উঠল রাহাত। পান্স মারলো আরহামের মুখ বরাবর। টাল সামলাতে না পেরে কয়েকপা পিছিয়ে গেলো আরহাম। নাক দিকে রক্ত বেরোতে শুরু করলো।আবারো আঘাত করার আগেই রাহাতকে ধরে ফেলে ফারহাদ। জোরপূর্বক টেনে নিয়ে গিয়ে বসায়।

“আটকাচ্ছ কেনো আমাকে ভাইয়া? ওর জন্য আজকে আমাদের বোনির এই অবস্থা।সব কিছু জানা সত্ত্বেও কিভাবে ও বোনিকে একা ছাড়তে পারলো? ওর জন্যই একবার নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছিল। তাহলে ও কেনো পারলো না বোনিকে আগলে রাখতে?”

আরহামের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলছে রাহাত।হাসপাতাল হওয়ায় তাকে শান্ত করে ফারহাদ। সে যে ভিতরে শান্ত এমনটা নয়।

আরহাম কোনো কথা বলছে না।রুমাল দিয়ে নাকের রক্ত টুকু মুছে নিলো।রুমালটা দেখতেই মনে পড়ল পার্টি অফিসের কথা।কিছুদিন আগে শুভ্রা গিয়েছিল। জোর পূর্বক ঢুকেছিল। আরহামের হাতে রুমাল দিয়ে কোনো কথা না বলেই চলে এসেছিল।এতে অবশ্য অবাক হয়েছিল আরহাম।কিন্তু তেমন পাত্তা দেয়নি। রুমাল খোলার পর এক কোনায় দেখেছিল “শুভ্রার মন্ত্রী মশাই” লেখা।মুচকি হেসে পকেটে যত্ন সহকারে রেখেছিল।

ডাক্তার কে বের হতে দেখে সবাই এগিয়ে গেলো তার দিকে।রিমন প্রশ্ন করলো,

“বোনি কেমন আছে?”

“দুঃখিত,,,,,”

ডাক্তারের শার্টের কলার্ট চেপে ধরলো রিমন।চিৎকার করে উঠলো। স্তব্ধ হয়ে গেলো সকলেই।পিছিয়ে গেলো আরহাম।দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো।তাকালো নিজের শরীরে লেগে থাকা রক্তের দিকে। চার ভাই পাথরের ন্যায় হয়ে গেলো।শিকদার পরিবার স্তব্ধ। অজ্ঞান হয়ে গেলো রাইমা। ঢলে পড়লো ব্রেন্সে।

চলবে,,,,,