প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-২৯

0
104

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_২৯
#আহিয়া_শিকদার

স্বাভাবিক ভাবেই নিজের শার্টের কলার থেকে রিমনের হাত ছাড়িয়ে নেয় ডাক্তার আব্দুর খন্দকার।তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক।প্রায় সময়ই বিভিন্ন রুগীর পরিবারের এমন ক্রোধের মুখে পড়তে হয় তাদের।এর আগেও তিনি এই দুই পরিবারের অস্থিরতা দেখেছেন।শুভ্রার প্রতি তার ভাইদের ভালোবাসা দেখেছেন।সেবার যখন শুভ্রার গুলি লাগলো তিনিই তো চিকিৎসা করেছিলেন।

“আমার সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিন মিস্টার খান”

রিমনের উদ্দেশ্যে বললেন তিনি।কিন্তু রিমন শুনলো কিনা কে জানে। ততক্ষনে সবাই ভেঙে পড়েছে।নিতুল এগিয়ে এলো।আজ নেহার চোখের পানিও বাধ মানছে না।

“আর কি বলার আছে আপনার?”

নিতুলের রাগি কন্ঠে বলা কথা শুনলেন ডাক্তার সাহেব।কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করলেন না।

____________________

প্রথম ক্লাস শেষ করে বের হলো আরাজ। চতুর্থ পিরিয়ডে আরেকটা ক্লাস আছে।ছেলে মেয়েদের পড়িয়ে বেশ শান্তি পায় মনে।ভালোলাগা কাজ করে।কিন্তু ক্লাসে রিমি নামক মেয়েটার উপর ভীষণ বিরক্ত আরাজ।মেয়েটা সেই প্রথম দিন থেকে তার পিছনে পরে আছে। আরাজের মতে মেয়েটা এক নাম্বারের নাছোড়বান্দা।একটু ধমক দিলেই কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলে তবুও পিছু ছাড়ে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছে আরাজ।ভিতরে প্রবেশের আগেই দেখা হয় প্রিন্সিপাল সাহেবের সাথে।খানিক টা অবাক হয় আরাজ।তবুও সৌজন্যমূলক হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে সালাম দেয়।গম্ভীর মুখে উত্তর দেয় একরামুল সাহেব।

“কেমন কাটছে শিক্ষক জীবন?”

মৃদু হাসে আরাজ।একরামুল সাহেবের দিকে ভালোভাবে তাকায়।লোকটার মুখে কখনো হাসি দেখেনি।তিনি যে একজন প্রিন্সিপাল সেই ভাব সব সময় মুখেই বিদ্যমান থাকে।আলাদা গাম্ভীর্য নিয়ে চলেন।বোঝাই যায় নিজের ব্যাক্তিত্ব নিয়ে খুব সচেতন।

“ভালই কাটছে অন্তত আগের জীবন থেকে।”

কথাটা শেষ করেই হাসতে হাসতে শিক্ষক রুমে প্রবেশ করে আরাজ।তার এভাবে চলে যাওয়ায় অপমানিত বোধ করেন একরামুল সাহেব। আশে পাশে তাকিয়ে তিনি নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে চলে যান।আপাততো এসব নিয়ে ভাবার সময় নয়।একরামুল সাহেবের মাথায় ভার্সিটিতে ড্রাগ কে প্রবেশ করাচ্ছে তা নিয়ে নানান চিন্তা।কোনোভাবেই তিনি চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না।

আরাজকে হাসতে হাসতে ঢুকতে দেখে বাকি শিক্ষকরা তার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করে।মুচকি হেসে সে বলে,

“সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য হাসি খুশি থাকা অতীব জরুরি।যদি তুমি হাসতে জানো তাহলেই তোমার জীবন সুন্দর।হোক সেটা কৃত্রিম হাসি বা সত্যিকারের হাসি”

নিজের চেয়ারে বসে আরাজ।ফোন রিং হলে রিসিভ করে। অপরপাশে কথা শুনে থেমে যায় আরাজের হাসি।মৃদু চিৎকার করে দাড়িয়ে পড়লো।

“শুভ্রপরি”

_______

তুই কি সত্যিই স্যার কে ভালোবাসিস রিমি?”

“তো তোর কি মনে হয়?”

ভ্রু কুঁচকে বললো রিমি।অবাক হলো নাহার।তার বোকা বান্ধবী বেশ চালাক হয়ে গেছে।

“স্যারের আর তোর বয়সের পার্থক্য দেখেছিস?তাছাড়া স্যারদের বাবার চোখে দেখা উচিত।”

“আরাজ স্যার আর আমার বয়সের পার্থ মাত্র ৮।এটা স্বাভাবিক।আর স্যারদের বাবার চোখে দেখবো কেনো আমার চোখের তো কোনো সমস্যা নেই।”

আর কি বলবে নাহার।বার বার স্যারের থেকে রিমির মন ঘুরাতে চাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।কথা শিখে গেছে এখন রিমি।ভোলাভালা রিমি আর নেই।

“যদি স্যারের প্রেমিকা থাকে তাহলে কি করবি?”

কথাটায় কাজ হলো মনে হয়।রিমির মুখ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

“না না একদম না। স্যারের কোনো প্রেমিকা নেই।থাকলে এতদিন আমার জ্বালা সহ্য করতো না।”

মুখে বললে কি হবে মনে ঠিকই চিন্তা রয়ে গেলো রিমির।যদি সত্যি কোনো প্রেমিকা থাকে? এজন্যই বুঝি বার বার প্রত্যাক্ষান করছে তাকে?
____________________
সকালে বাইরে থেকে এসে ঘরে ঢুকেছে রেজাউল চৌধুরী আর একবার ও বের হয়নি।আয়েশা চৌধুরী বেশ চিন্তিত হয়েছেন।কয়েকবার ডেকেছেন কিন্তু রেজাউল চৌধুরী কোনো সারা দেননি। পরে বার কয়েক আবারো ডাকলে জোড়ে ধমক দিয়েছেন তাকে।আসতে করে ঘরের দরজা খুলে দেন তিনি।আয়েশা চৌধুরী মুখে হাত দিয়ে দেখতে গেলে রান্নাঘর থেকে পানি আনতে পাঠান তাকে।বাড়ির সামনে ডক্টর সিরাজুলের কাটা টুকরো টুকরো লাশ বার বার চোখের সামনে ভাসছে।নিজের পতন দেখতে পাচ্ছেন চোখের সামনে।তিনি জানেন সিরাজুল সাহেবের ওই অবস্থা কে করেছে।এর আগেও এসব দেখতে হয়েছে তাকে।কিন্তু তখন নিজের মৃত্যুর ভয় হয়নি।আজকে মনে হচ্ছে তার ধ্বংস অতি নিকটে। কাঁপা কাঁপা হাতে বার বার কল দিচ্ছে রেজাউল চৌধুরী।কিন্তু যাকে দিচ্ছে সে কোনো সাড়া দিচ্ছে না।ভয়ের পরিমাণ আরো বেশি হয়ে যাচ্ছে।আরো কয়েকবার কল দেওয়ার পর এবার রিসিভ হলো। ভয়াতুর কন্ঠে রেজাউল চৌধুরী বললেন ,

“তুমি দেখেছো?বাসার সামনে কি রেখে গেছে?

ওপর পাশে কি বলল শোনা গেলো না।তবে রেজাউল চৌধুরীর মুখের রং পাল্টে গেলো।এতক্ষন ভয়াতুর হয়ে থাকা মুখটায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠল।

“আমার কথা তোমার কাছে হেয়ালি মনে হচ্ছে রায়াজ ”

হাত থেকে পানির গ্লাস পরে গেলো আয়েশা চৌধুরীর।বিকট শব্দে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো কাচের গ্লাসটি।রেজাউল চৌধুরী তাড়াতাড়ি কল কেটে পেছনে ফেরেন।আয়েশা চৌধুরীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যান।

“কা কার না নাম বললে তু তুমি?”

আমতা আমতা করেন রেজাউল চৌধুরী।কথা ঘোরানোর সম্পূর্ণ চেষ্টা করেন।কিন্তু আয়েশা চৌধুরী কোনোভাবেই ছাড়ছেন না।শেষে বাধ্য হয়ে বললেন,

“রায়াজ আর রিধির মৃত্যুবার্ষিকীর কথা বলছি?”

কান্নায় ভেংগে পড়লেন আয়েশা চৌধুরী।রেজাউল চৌধুরীর অসহ্য লাগছে।তার কাছে স্ত্রীর কান্না ঘ্যানঘ্যান ছাড়া অন্য কিছুই মনে হচ্ছে না। সজোরে থাপ্পড় মারলেন আয়েশা চৌধুরীর গালে।এতে মোটেও অবাক বা কষ্ট পেলেন না আয়েশা চৌধুরী।সংসার জীবন বারংবার তিনি এই মানুষটার থেকে এসব পেয়েছেন। প্রথম প্রথম অভিমান করলেও এখন সয়ে গেছে।বুঝে গিয়েছে মানুষটা তাকে কখনোই ভালোবাসেনি।বেরিয়ে গেলেন রেজাউল চৌধুরী। মেঝেতে বসে ফেলতে লাগলেন অজস্র চোখের পানি।সন্তান হারানো কষ্টে আবারো পুড়ছে হৃদয়।

__________________
চলবে,,,