প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০৪

0
105

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যা : ৪
লেখিকা : #আহিয়া_শিকদার_আহি

( অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ )
_________

টিভির দিকে তাকিয়ে আছে রেজাউল চৌধুরী। রাগে তার শরীর কাপছে। টিভির স্ক্রিনে চলছে সকালের ব্রেকিং নিউজ। সব জায়গায় শুধু একই খবর দেখে যাচ্ছে ‘ মন্ত্রী আরহাম শিকদার কে মারার চেষ্টা ”

” আবার, আবার বেঁচে গেলি তুই আরহাম”

রেজাউল চৌধুরীর পিছনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সাজিদ। ভয়ে কাপছে তার হাত-পা। ইতোমধ্যে কিছু অশ্রাব্য শব্দ শুনতে হয়েছে তাকে। হঠাৎ কিছুর বিকট শব্দে মাথা তুলে তাকায় সামনের দিকে। দেখতে পায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া টিভি আর রাগে ফুঁসতে থাকা রেজাউল চৌধুরীকে। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গলা চেপে ধরে রেজাউল চৌধুরী। এক নাগাড়ে কিছু অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করে সে। এদিকে সাজিদ নিশ্বাস নিতে পারছে না। হাত পা ছুটা ছুটি করছে ।

” বস, আ আর হামের দুর্ব ল তা স ম্পর্কে জা নতে পে রেছি?”

অনেক কষ্টে উচ্চারণ করে সাজিদ। রেজাউল চৌধুরীর কানে কথাটা পৌঁছাতেই ছেড়ে দেয় সাজিদের গলা। মেঝেতে পড়ে যায় সাজিদ। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে সে। আরেকটু হলেই তার শরীর থেকে জানটাই বেরিয়ে যেতো। মনে মনে কিছু অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করে সে রেজাউল চৌধুরীর জন্য।
সাজিদের কথা শুনে রেজাউল চৌধুরীর চেহারায় মুহূর্তেই খুশির ঝলক দেখা যায়।

_____________

শুভ্রার কেবিনের বাইরে পুরো খান পরিবার দাড়িয়ে আছে। তারা টিভিতে খবর দেখে জেনেছে সবটা। ফাহিমের বাবা মিস্টার আজাহিদ খান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। ফাহিম মাথা নিচু করে আছে। ইশতিয়াক খান আনোয়ারা খানকে সামলাচ্ছেন। ফারজানা খান পারছেন না ছেলেকে কয়েকটা চর মারতে। হয়তো হাসপাতাল না হলে এতক্ষণে মারতেন।

” বোনির এমন অবস্থা কি করে হলো ফাহিম?”

ফাহিম তাকায় তার বড় ভাই ফারহাদের দিকে। আবার মাথা নিচু করে ফেলে সে। ফারহাদ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের ভাইয়ের পানে। ফাহিমের থেকে উত্তর না পেয়ে তেড়ে আসতে নেয় সে। রুপন্তি শক্ত করে ধরে ফেলে ফারহাদের হাত। সে জানে এখন তার স্বামীকে ছেড়ে দিলে নিশ্চিত কোনো অঘটন ঘটাবে। খুব ভালো করে জানে সে ফারহাদের রাগ সম্পর্কে।

ফাহিম সব ঘটনা খুলে বলে। তার কথা শুনে উপস্থিত সকলে আরো রেগে যায়। তাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ের এই অবস্থা কোনোভাবেই মানতে পারছে না তারা।

শুভ্রাযে ওখানে যাবে তাতো জানানো হয়েছিল ফাহিমকে, তাহলে সে কেনো শুভ্রাকে নিরাপদ রাখতে পারল না? নিজের প্রতি নিজের ধিক্কার জানাতে ইচ্ছা করছে ফাহিমের। সে কেনো পারলো না তার বোনির খেয়াল রাখতে।

আজাহিদ খান কিছু বলতে নেবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় শিকদার পরিবার। চমকে উঠে সবাই।

আরহাম কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যায় ফাহিমের সামনে। ফাহিমকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। কিছু সেকেন্ডের মধ্যে সে বুঝতে পারে ফাহিমের মাথা নিচু করে থাকার কারণ।

” ফাহিম তুই নিশ্চই এমন কিছু করিসনি যার জন্য মাথা নিচু করে থাকতে হবে?”

আরহামের আওয়াজ শুনতেই ফাহিম মাথা তুলে তাকায় তার দিকে। চোখ ছল ছল করছে তার। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই আরহাম জোড়ে ধমক দেয় তাকে।

” ফাহিম, যা হয়েছে তাতে নিশ্চই তোর কোনো হাত নেই? তাহলে এভাবে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছিস কেনো? এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো। সোজা হয়ে দাড়া।”

উপস্থিত সকলের নজর পড়ে তাদের দিকে। এমনিতেও মন্ত্রী আরহাম শিকদার এসেছেন এখানে তার উপর আবার ধমকও দিচ্ছেন। সকলের চোখ অবাকতায় ছেয়ে যায়। নীলিমা শিকদার বসেছিলেন আনোয়ারা খানের পাশে। ফারজানা শিকদার আর রেজিনা শিকদারের সাথে তিনিও যোগ হয়ে আনোয়ারা খানকে বুঝাচ্ছিলেন। আনোয়ারা খান কান্না করেই যাচ্ছেন। ছেলের এমন ধমক শুনে বিরক্ত হন তিনি। আসাদ শিকদারও বিরক্ত হয়েছেন। সব জায়গায় খালি মন্ত্রীগিরী।

ফাহিম চট করে সোজা হয়ে যায়। প্রচণ্ড ভয় পায় সে আরহামকে। আরহাম বলেছে মানে এখন যদি সে মাথা নিচু করে থাকে তাহলে নিশ্চই থাপ্পর খেতে হবে।

হন্তদন্ত হয়ে প্রায় ছুটে আসছেন নওশাদ খান। তার পিছনেই তার দুই ছেলে রাহাত খান আর রিমন খান,যমজ ভাই এরা দুজন। বিয়েও একসাথে করেছে তারা। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে তাদের স্ত্রীরাও একই সাথে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।তারা এতক্ষণ অফিসে থাকার কারণে ঘটনা জানতে পারেন নি। কিছুক্ষণ আগে রেজিনা শিকদার তাদের জানিয়েছে।

মন্ত্রীর পরিবারকে দেখে তারা কিছুটা অবাক হয়। রেজিনা শিকদার এগিয়ে আসেন স্বামী এবং ছেলেদের দিকে।
___________

রাত ৮ টা , ধরণীতে অন্ধকারের আগমন ঘটেছে আরো অনেকক্ষণ আগে। শুভ্রার অপারেশন এর নয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার। এই নিয়ে ডাক্তার’রাও চিন্তায় আছেন।খান পরিবার এখনো শুভ্রার কেবিনের বাইরে।

শিকদার পরিবার থাকতে চেয়েছিল শুভ্রার জ্ঞান ফেরা অব্দি কিন্তু আজাহিদ খান বাসায় পাঠিয়েছেন তাদের।তারা বলে গেছে শুভ্রার জ্ঞান ফিরলে যেনো তাদের জানানো হয়। যতোই হোক তাদের ছেলের প্রাণ বাঁচিয়েছে এই মেয়ে।

রেজিনা খান আর রূপন্তিকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বাড়িতে দুজন অন্তঃসত্বা মেয়ে আছে যে তাদের ও খেয়াল রাখতে হবে। আনোয়ারা খান আর ইশতিয়াক খান থাকতে চাইলে তাদের থাকতে দেননি কেউ। এমনিতেও বয়স হয়েছে তাদের , যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বলা হয়েছে শুভ্রার জ্ঞান ফিরলে তাদের আবার হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।

আরহাম আর ফাহিম বেরিয়েছে। তাদেরকে বেরোতে দেখে কেউ কিছু বলে নি।

বাকি সকলে এখনো উপস্থিত শুভ্রার কেবিনের বাইরে। ভিতরে আছেন ফারজানা খান।

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় শুভ্রা। নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে সে। নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালে।
বোঝার চেষ্টা করছে কেনো সে হাসপাতালে।কিছু সময়ের মধ্যে মস্তিষ্ক সচল হয়ে যায় তার। প্রতিটা দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে। তার মন্ত্রী মশাইকে মারতে চেয়েছিল কেউ। সে যদি না থাকতো তাহলে কি হতো তার মন্ত্রী মশাইয়ের ভাবতেই আতকে উঠে শুভ্রা। পরক্ষনেই আবার কিছু একটা মনে পড়তেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে তার। তার মন্ত্রী মশাই তাকে কোলে তুলেছিল। জ্ঞান হারানোর আগে সে দেখছিল তার মন্ত্রী মশাই তাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসেছিল। ইশ ভাবতেই কেমন কেমন যেনো লাগছে তার।

নার্স এসেছিল শুভ্রার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। শুভ্রাকে হাসতে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় তিনি। জোড়ে চিৎকার করে উঠে।

চমকে উঠে শুভ্রা। খান পরিবার নার্সের চিৎকার শুনে দ্রুত প্রবেশ করে কেবিনে। শুভ্রার দিকে নজর পড়তেই যেনো সকলের বুক থেকে ভারী পাথর নেমে যায়। পরক্ষনেই নার্সের দিকে তাকায় তারা। নার্সের চিৎকার করার কারণ বুঝতে পারছে না।

” কি হয়ে সিস্টার?”

নার্স ভয়ে ভয়ে তাকায় শুভ্রার দিকে। যে কিনা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নার্সের দিকে।

” আপনি হাসছিলেন কেনো? আমি ভয় পেয়েছিলাম তো। আজ পর্যন্ত কাউকে আমি দেখিনি এরকম অবস্থায় হাসতে। আমি ভেবেছিলাম জিন ভর করেছে আপনার উপর”

রাগ উঠে যায় শুভ্রার। কি সুন্দর তার মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে ভাবছিল সে , তাতে তো বাগরা দিলো এখন আবার বলছে জিন ভর করেছে তার উপর। বাকি সকলে কৌতূহলী হয়ে তাকায় শুভ্রার দিকে। এবার বিরক্ত হয় শুভ্রা।

” কি হয়েছে , এভাবে তাকানোর কি আছে? আমাকে কি কোনো জাদুঘরের জিনিস মনে হচ্ছে? ”

থতমত খেয়ে যায় সকলে।এই মেয়েকে দেখে কি মনে হবে এর সাথে কি হয়েছে। দুটো গুলি খেয়ে এভাবে কথা বলছে।

” বোনি ”

একসাথে বলে উঠে ফারহাদ , রাহাত আর রিমন।শুভ্রা তাকায় তার তিন কাজিন ভাইয়ের দিকে। তার দৃষ্টি আরো কাউকে খুঁজছে। ফরহাদ বলে তাকে সকলের কথা।

” আমি ঠিক আছি। তোমরা চিন্তা করো না।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকলে। এই মেয়ে কখনও নিজের কষ্ট প্রকাশ করে না।

” আপনি হাসছিলেন কেনো ওভাবে?”

নার্সের কথা শুনে শুভ্রা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে,

” মন্ত্রী মশাইয়ের কথা ভাবছিলাম। ইশ দুটো গুলি লাগার জন্য উনি আমাকে কোলে তুলেছিলেন। যদি আরো দুটো গুলি লাগতো না জানি আরো কতো কিছু করতো?”

শুভ্রার কথা শুনে হতভম্ব সকলে । এই মেয়ে আসলেই নির্লজ্জ। কি বলছে এসব। কিন্তু আরো দুটো গুলি লাগার কথা শুনে ধমকে উঠে সকলে। বাচ্চা বাচ্চা মুখ করে তাকায় শুভ্রা সকলের দিকে। যেনো তার মতো নিস্পাপ আর কেউ নেই।
ততক্ষণে একজন ডাক্তার প্রবেশ করে শুভ্রার কেবিনে। সকলকে এক সাথে কেবিনের ভিতর দেখে বাইরে যেতে বলে।

______________

চলবে,,,,,,,