প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০৫

0
98

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যা : ৫
লেখিকা : #আহিয়া_শিকদার_আহি

( অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ)
________

অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিত্যক্ত একটা গোডাউন। বাইরে থেকে যে কেউ ভাববে ভূতুড়ে গোডাউনটি। দিনের বেলাতেও সচরাচর এই গোডাউনের আশেপাশে কাউকে দেখা যায় না।
কয়েকটা মোমবাতি জ্বালানো ভিতরে। হালকা আলোয় দেখা যাচ্ছে চারিপাশের কিছু দৃশ্য।মেঝেতে পড়ে আছে একটা ছেলের মরোদেহ ।ভীষণ বাজে ভাবে মারা হয়েছে ছেলেটাকে। শরীরের একটু অংশ মনে হয় ফাঁকা নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে কেউ নিপুণতার সাথে ছেলেটির শরীরে ব্লেড চালিয়েছে।

” ফাহিম, এটাকে ফেলে আসবি রেজাউল চৌধুরীর বাড়ির সামনে।”

হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় ফাহিম। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের হিংস্রতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত সে। কিন্তু আজকের আরহামের সাথে সে আগের আরহামের কোনোভাবেই মিল খুঁজে পাচ্ছে না। গলা শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় হয়ে যাচ্ছে ফাহিমের।
আরহাম বোধয় বুঝতে পারল ফাহিমের অবস্থা। পাশে রাখা এক বালতি পানি ছুঁড়ে মারলো ফাহিমের দিকে।
হকচকিয়ে যায় ফাহিম। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আরহামের দিকে। আরহামের কোনো হেলদোল নেই। সে শান্তভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো কিছুই হয়নি।

” ভাই, কি করলেন এটা?”

করুণকণ্ঠে বললো ফাহিম। আরহাম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

” আমার মনে হলো তোর পানির দরকার তাই দিয়ে দিলাম। কেনো পানি দিয়ে ঠিক করি নি?”

ভ্রু কুচকে ফেলে ফাহিম। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানায়। এরকম মুহূর্তে এমন কথা। এটা মন্ত্রী মশাইয়ের দাড়াই সম্ভব।

” যাহ ,পানি খেয়ে এটাকে ফেলে আয়”

লাশটার দিকে ইশারা করে বলে। মাথা নাড়ায় ফাহিম। ঠিক তখনি তার পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে ‘ভাইয়া’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ফাহিম। তার বোনির কিছু হলো না তো। হাত কাঁপছে ফাহিমের। যদি কোনো খারাপ খবর শুনতে পায়। ফাহিমের অবস্থা দেখে ভ্রু কুচকায় আরহাম।

আরেকবার ফোন বাজতেই কাপকাপা হতে ধরে সে। ওপাশ থেকে বোনের কন্ঠ শুনে বুকের মধ্যে থাকা কষ্টের নদীটা মুহূর্তেই সুখে পরিণত হয়। মুখে প্রকাশ পায় চওড়া হাসি।

” বোনি”

ফাহিমের মুখে বোনি শুনে কিছুক্ষণ থমকে যায় আরহাম। মেয়েটার কি কিছু হয়েছে। ভাবতেই কেমন যেনো লাগতে শুরু করলো তার।

” তুমি একদম কথা বলবে না ভাইয়া। তুমি আমার কাছে আসো নি কেনো?”

ওপাশের কন্ঠস্বর শুনে ফাহিম বুঝতে পারে তার বোনি তার উপর কি পরিমাণে অভিমান করে আছে।

” অভিমান করিস না বোনি। আমি আসছি এক্ষনি”

ঠাস করে কল কেটে দেয় শুভ্রা। হেসে ফেলে ফাহিম শুভ্রার বাচ্চামু দেখে। আরহামের দিকে তাকায় সে। যে কিনা এতক্ষণ তার দিকেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিল।

” ভাই, বোনির জ্ঞান ফিরেছে”

মুহূর্তেই কুচকানো ভ্রূজোড়া শিথিল হয়ে যায় আরহামের। ঠোঁটের কোণে দেখা যায় হালকা মৃদু হাসি। কিন্তু সেই হাসি দেখতে পেলো না ফাহিম।

_______________

” আরে আমিতো এখন ঠিক আছি বড়বাবা। তুমি বেকার চিন্তা করছো আর ছোটবাবা তুমিও তাল মিলাচ্ছো তোমার ভাইয়ের সাথে। আমি কিন্তু মানবো না এসব। বলছি না আমি এখন একদম ঠিক আছি। তোমাদের মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি।বাচ্চা-কাচ্চা , নাতি-নাতনী কে না দেখে আমার কি কিছু হতে পারে বলোতো?

আরহাম এসেছিল শুভ্রাকে দেখতে। দরজার কাছে আসতেই শুভ্রার এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে সেখানেই থ হয়ে দাড়িয়ে পরে আরহাম। এই মেয়ে যে আসলেই নির্লজ্জ তার প্রমাণ ইতোমধ্যে অনেকবার পেয়ে গেছে সে।

আরহামের ঠিক পিছনে ছিল ফাহিম। বোনের এমন কথা শুনে না চাইতেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে সে। সে হয়তো ভুলে গেছে তার থেকে ঠিক তিন হাত দুরত্বে আরহামের অবস্থান।
হেসে যেনো মাটির সাথে লোটোপুটি খাচ্ছে ফাহিম।

তখনি শুভ্রার কেবিন থেকে বের হয় খান পরিবার। আরহামকে দেখে তারা কিছুটা অবাক হয়। শুভ্রার দাদা – দাদিকেও আনা হয়েছিল শুভ্রার জ্ঞান ফেরার পর।সকলেই আরহামের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ফাহিমকে হাসতে দেখে সকলে তার দিকে তাকায়।

” এভাবে হাসছো কেনো ফাহিম?”

গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠেন আজাহিদ খান। ফাহিমের হাস্যজ্জ্বল মুখ মুহূর্তেই চুপসে যায়। তার বাবা যে তার উপর প্রচণ্ড রেগে আছে জানে সে।

” বোনির কথা শুনে”

একদম নিচু কন্ঠে উত্তর দিলো ফাহিম। আদেও কেউ শুনতে পেলো কি তার কথা? ইতোপূর্বে আরহামের সাথে পুরো খান পরিবারের পরিচয় হয়ে গেছে তাই সে আজাহিদ খানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

” শুভ্রার এখন কেমন অবস্থা আংকেল?”

নাহ্ উত্তর দিলেন না আজাহিদ খান। তিনি প্রচণ্ড ক্ষেপে আছেন আরহাম আর ফাহিমের উপর। তাদের বেখেয়ালির জন্যই তার ভাইয়ের একমাত্র মেয়ের আজ এই অবস্থা। সব থেকে বড় কথা এই মন্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের বাড়ির মেয়ের সাথে এই ঘটনা ঘটে গেছে। খান বাড়ির অনেকেই রেগে আছে আরহামের উপর। ইশতিয়াক খান সবটা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠেন,

” দিদিভাই ঠিক আছে আরহাম। তুমি চিন্তা করো না।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরহাম। তার তো কিছু করার ছিল না। সে যদি জানতো শুভ্রা ওভাবে তাকে বাঁচাবে তাহলে কখনোই সে শুভ্রাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দিতো না।

” আমি বোনির সাথে দেখা করবো বাবা।”

ছেলের এমন করুণ কন্ঠ শুনে আজাহিদ খান তাকায় ছেলের দিকে।

” আমরা চলে যাচ্ছি। তোমার মা আর ফারহাদ থাকবে এখানে। তুমি দেখা করা বাসায় চলে এসো”

বলেই তিনি হাটা ধরলেন সামনের দিকে। ফারজানা খান আর ফারহাদ বাদে খান বাড়ির বাকিরা চলে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে কারণ হাসপাতালে এতজন থাকা যাবে না।

ফাহিমের চোখে পানি ছলছল করছে। ফারজানা খান এগিয়ে আসে ছেলের দিকে।

” যাও , আরহামকে নিয়ে ভিতরে যাও। শুভ্রা অভিমান করেছে তোমার উপর।”

ফাহিম তাকায় আরহামের দিকে। আরহাম ওকে ইশারায় বুঝায় সে যাবে না শুভ্রার কেবিনের ভিতরে। তাকে দেখে নির্লজ্জ মেয়েটা আবার কি না কি কান্ড করে বসে। কাছের দরজার বাইরে থেকে দেখবে। ফাহিম ও আরহামের ইশারা অনুযায়ী একাই ভিতরে প্রবেশ করে। আরহাম বাইরে থেকে দেখে শুভ্রাকে। ভিতরের কিছু একটা দেখে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে সে। কেমন অদ্ভুত লাগছে তার। কিন্তু বুঝতে পারছে না নিজের বর্তমান অনুভূতি।অতঃপর ফারজানা খান আর ফারহাদ এর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাইরে তার জন্য গার্ড অপেক্ষা করছে। ফাহিম হয়তো কখনোই তাকে একা ছাড়তো না। শিকদার বাড়িতে জানানো হয়েছে শুভ্রার জ্ঞান ফেরার কথা। তারা আসতে চাইলে বারণ করেছে খান পরিবার। বলেছে সকালে এসে দেখা করতে , রাতে আসার দরকার নেই।
___________

ফাহিম ভিতরে প্রবেশ করে যেনো ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খায়। আল্লাহ্, সে কি ভুল দেখছে। দুই হাত দিয়ে একবার ভালো করে চোখ পরিষ্কার করে নেয়। নাহ্ সামনে থাকা দৃশ্য তো পরিবর্তন হলো না। তার মানে সে ঠিকই দেখছে।

” বোনি, নির্লজ্জতার একটা সীমা আছে। তুই তো দেখি সেটাও অতিক্রম করে ফেলেছিস।”

শুভ্রা তাকায় ফাহিমের দিকে। কোনো কিছু না বলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে। মনোযোগ দেয় হাতে থাকা ছবিটির দিকে।
তার মন্ত্রী মশাইয়ের ছবিতে সে চুমু খাচ্ছিল তাতে লজ্জা পেতে হবে কেনো?

” বোনি আমি বুঝতে পারি নি এমন কিছু হবে। আগে থেকে বুঝতে পারলে তোকে কখনোই ওখানে যেতে দিতাম না। আজ আমার জন্য তোর এই অবস্থা ”

বলতে বলতেই ফাহিমের চোখ থেকে দুইফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শুভ্রা তাকায় তার ভাইয়ের দিকে। কে বলবে এটা ওর কাজিন হয়। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার নিজের বোনের সাথে এমন হয়েছে। শুভ্রা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। তার পরিবারের সকলে তাকে খুব ভালবাসে।

” ধুর ভাইয়া, দিলে তো এতো সুন্দর রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, তুমি কিভাবে বুঝবে কোনটা রোমান্টিক মুড । তুমি তো আর কারোর প্রেমে পরো নাই।”

বলেই গাল ফুলিয়ে ফেলে শুভ্রা।ফাহিম ভ্রু কুচকে ফেলে। এই শুভ্রা নামক মেয়ে যে কখনও ঠিক হওয়ার নয় সে জানে। কিভাবে তাকে এসব বলে দিলো।

” আমি তোর বড় ভাই হই বোনি। সম্মান দে। একটু তো লজ্জা কর, নিজের বড় ভাইকে এভাবে বলছিস। আর তুই এই হাসপাতালে তোর মন্ত্রী মশাইয়ের ছবি কিভাবে পেলি?”

“নার্সের কাছে পেয়েছি। নার্স বলে কিনা মন্ত্রী মশাইকে সে ভালবাসে তাই সাথে ছবি নিয়ে ঘুরে। কতো বড় সাহস নার্সের। আমিও কিছুক্ষণ কথা শুনিয়ে ছবিটা নিয়ে নিয়েছি। বলো ভালো করিনি? মন্ত্রী মশাই শুধু এই শুভ্রার”

দরজার কাছ থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শোনা যায়। ফারহাদ হাসতে হাসতে দরজা কোনো রকম ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহিম কিছুক্ষণ শুভ্রা আর ফরহাদের দিকে তাকিয়ে নিজেও উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

_____________

চলবে,,,,