প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০৯

0
101

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্ব সংখ্যা: ৯
লেখিকা : #আহিয়া_শিকদার_আহি

(অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ)
________

শিকদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে শুভ্রা। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। তার পাশেই রাইমা আর অদিতি মুচকি মুচকি হাসছে।
আজকে ভার্সিটি থেকে আসার সময় শুভ্রাকে জোর করে নিয়ে এসেছে রাইমা। শুভ্রা জানতো না তাকে খান বাড়িতে নিয়ে আসবে। জানলে হয়তো রাইমার সাথে আসতই না।
শুভ্রা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রাইমা আর অদিতি ইচ্ছে করেই নিয়ে এসেছে তাকে।
আজমল শিকদার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন শুভ্রাকে। এতে বেশ অসস্তি হচ্ছে শুভ্রার। তাকে এভাবে কেনো দেখছে?

” মাশাআল্লাহ”

হঠাৎ করে আজমল শিকদারের এমন কথায় চমকে উঠে শুভ্রা। সে তাকায় আজমল শিকদারের দিকে। যখন থেকে শুভ্রা এসেছে তখন থেকেই আজমল শিকদার তাকে দেখে যাচ্ছে। শুভ্রা কথা বলতে চাইলে কোনো কথা বলেন নি আজমল শিকদার। তাই শুভ্রাও চুপচাপ বসে ছিল। তার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে এভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকা। তার ভিতর থেকে যেনো কেউ বার বার বলছে, ” শুভ্রা, এভাবে কেনো বসে আছিস? কিছু কর। এভাবে আর থাকা সম্ভব নয়। কথা না বলে থাকা যাচ্ছে না আর।”
কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখেছে শুভ্রা। হঠাৎ আজমল শিকদারের এমন কথার মানে বোধগম্য হচ্ছে না শুভ্রার।

” কেমন দেখলে ,নানু?”

চোখ টিপ মেরে বলে রাইমা। আজমল শিকদার চোখে চোখে রাইমাকে কিছু ইশারা করে। রাইমা বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসছে।

” এইযে মেয়ে, এরকম চুপচাপ বসে আছো কেনো।”

অবাক হলো শুভ্রা। সে ভাবছে কি অদ্ভুত এই মানুষটা। সেতো কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তিনিই তো বলেন নি। তাহলে এখন আবার উল্টোসুরে চলছেন কেনো?

” না মানে আপনিই তো কোনো কথা বলছিলেন না”

” আবার মুখে মুখে তর্ক করছো। ভারী অসভ্য মেয়েতো তুমি।”

ভ্রু কুঁচকে যায় শুভ্রার। আজমল শিকদার মুখটিপে হাসছেন।
নিজেকে আর সামলাতে না পেরে এবার উচ্চস্বরেই হেসে উঠলেন। রাইমা আর অদিতি যেনো এটারি অপেক্ষায় ছিল। তারাও যোগ দিলো আজমল শিকদারের সাথে।

নীলিমা শিকদার গিয়েছিলেন রান্নাঘরে খাবার আনতে। ড্রয়িং রুম থেকে রান্না ঘর সবটাই দেখা যায়। তাই তিনি এতক্ষণের সব কিছুই দেখেছেন। তিনিও তাল মিলালেন রাইমাদের সাথে।
আসাদ শিকদার আর আরহাম নেই বাসায়। তারা গেছে নিজ কাজে।

শুভ্রা কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও উচ্চস্বরে হেসে দেয়। শুভ্রাকে হাসতে দেখে এবার বাকিরা অবাক হয়। এই মেয়ে হাসছে কেনো?

” দাদুন, কি ভেবেছিলেন আমি বোকা। এভাবে কেনো চুপচাপ আছি। আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আমার সাথে মজা করছেন। তাইতো আমিও এতক্ষণ চুপচাপ ছিলাম।”

” মেয়ে, তুমিতো দেখি বড্ড বুদ্ধিমতি ”

” দাদুন এভাবে ডাকবেন না। আপনার একমাত্র গুণধর নাতি এভাবে ডাকে আমায়। আমার যে একটা নাম আছে হয়তো জানেই না।”

অবাক হয় আজমল শিকদার আর নীলিমা শিকদার।মেয়েটার কথা শুনে বুঝাই যাচ্ছে না সে এই প্রথম বার খান বাড়িতে এসেছে। কি সুন্দর এতোটুকু সময়ের মধ্যে মিশে গেছে তাদের সাথে।

” আমি যে এখানে আছি সকলে হয়তো ভুলে গেছে।”

অদিতির মুখ ফোলানো দেখে হেসে ফেলে সকলে। নীলিমা শিকদার রাইমাকে বলে তাদের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাতে। রাইমা অদিতি আর শুভ্রাকে নিয়ে যায়।

” বাবা, কেমন দেখলেন?”

” মাশাআল্লাহ, বৌমা তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে।”

” বাবা , আপনি কি মেয়েটাকে চিনতে পেরেছেন?”

” কেমন চেনার কথা বলছো বৌমা?”

” এটা সেই মেয়ে যে আপনার নাতিকে নির্বাচনের ফলাফলের দিন সকলের সামনে প্রেম নিবেদন করেছিল।”

অবাক হন আজমল শিকদার। প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকান নীলিমা শিকদারের দিকে।

” তুমি বুঝলে কি করে বৌমা, সেদিনের মেয়েটার মুখে তো মাস্ক ছিল”

” রাইমা বলেছে”

নীলিমা শিকদার আর আজমল শিকদার একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হেসে উঠে।

__________

আরহামের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা।অদিতিকে নিয়ে রাইমা গেছে নিজের ঘরে ওয়াশরুমে। ঘরটা পাসওয়ার্ড দ্বারা আবদ্ধ করা। ইতোমধ্যে পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলে ফেলেছে সে।শুভ্রা একবার ভাবছে ভিতরে ঢুকবে আরেকবার ভাবছে ঢুকবেনা। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে ঢুকেই পরে আরহামের ঘরে। ভিতরে ঢুকে অবাক হয় শুভ্রা। রুমের চারিদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

ঘরের দেয়ালে আরহামের বড় করে একটা ছবি টাঙানো। শুভ্রা কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে টুপ করে একটা চুমু খায়। নিজে নিজেই লজ্জা পাওয়ার ভান করে সে।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে আরহামের পারফিউম একবার নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ নেয়। নিজ শরীরে কিছুটা ছড়িয়ে দেয়।

পরিপাটি করে সাজানো রুমটা। শুভ্রা একবার নিজের রুমের সাথে তুলনা করে আরহামের রুম।সাথে সাথেই একটা কথাই মাথায় আসে, ” কোথায় শুভ্রার গোয়াল ঘর আর কোথায় আরহামের এতো সুন্দর ঘর”।

” ইশ, শুভ্রা দেখ তোর মন্ত্রী মশাইয়ের ঘর কতো সুন্দর করে গোছানো। আর তোর রুম যে কেউ দেখলে তো বলবে হয়তো ভুল করে গোয়াল ঘরে ঢুকে পড়েছে। নেহাতই বড় ভাবি রুম গুছিয়ে দেয় আমার নাহলে যে আরো কি হতো। ”

ঘরের চারিদিকে ঘুরছিল আর এমন কথা ভাবছিল শুভ্রা। ঘুরতে ঘুরতেই আরহামের বারান্দায় চলে যায়। বিশাল বারান্দা। হরেক রকম ফুলের গাছে পরিপূর্ণ। অবাক হয়ে শুভ্রা। তার মন্ত্রী মশাইয়ের ফুলের সখ আছে কই সেতো জানতো না। বারান্দার একপাশে কয়েকটা কালো গোলাপের গাছ দেখে চমকে উঠে শুভ্রা। কালো গোলাপ তার অনেক পছন্দের। তার নিজের বারান্দাতেও হরেক রকমের ফুলের গাছ আছে। কালো গোলাপ লাগিয়েছিল সে। কিন্তু মারা গেছে। তার পর আর লাগানো হয় নি। এখানে এতো গুলো কালো গোলাপের গাছ দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না শুভ্রা। টুপ করে একটা ছোটো চারা তুলে নিলো।
তখনি নিজের ফোন সশব্দে বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে রাইমা নামটা দেখে অবাক হলো সে। ডাকলেই তো হয়।এভাবে ফোন দেওয়ার কি আছে। হাতে গাছটা নিয়ে দরজার কাছে চলে যায়। পাসওয়ার্ড দিতেই খুলে যায় দরজা।

শুভ্রাকে ভাইয়ের ঘর থেকে বের হতে দেখে রীতিমতো ভূত দেখার মতো চমকে উঠে রাইমা।

” এই অদিতি আমাকে একবার চিমটি কাটতো।”

অদিতি চিমটিকাটে রাইমার হাতে। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে রাইমা। আগুনঝরা দৃষ্টিতে তাকায় একবার অদিতির দিকে।
রাইমার অবস্থা দেখে দাঁত কেলিয়ে হেসে দেয় অদিতি।

” এই তুই এমন করে তাকিয়ে আছিস কেনো? কোথায় একটু জামাইয়ের ঘরে ঢুকেছিলাম তোর সহ্য হলো না। দেখবি তোর বাসরে তোকে কিভাবে জ্বালাই। আর ফোন দিচ্ছিলি কেনো ডাকলেই তো হতো। ”

বিরক্তি নিয়ে বলে শুভ্রা।রাইমা হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

” তুই ভাইয়ার ঘরে ঢুকলি কিভাবে শুভ্রা?”

” এইটা জানার জন্য এইভাবে ফোন করছিলি?”

” সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে পারিস না?”

কিছুটা রাগের সাথে বলল রাইমা। শুভ্রা এবার কিছুটা নরম হয়।

” পায়ে হেঁটে হেঁটে ঢুকেছি তোর ভাইয়ের রুমে।”

” সেটাতো আমিও জানি। তুই ঘরের পাসওয়ার্ড জানলি কিভাবে?”

” জেনেছি কোনোভাবে। এখন বল আমাকে না ডেকে ফোন করছিলি কেনো?”

” তোকে কতবার ডেকেছি কোনো আইডিয়া আছে তোর। কতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়ার রুমে সাউন্ড প্রুফ তাই শুনতে পাসনি। ”

বুঝতে পারলো শুভ্রা। এই জন্যই রাইমা তাকে কল দিয়েছিল।
শুভ্রার হাতে কালো গোলাপের চারা দেখে চিৎকার করে উঠে রাইমা। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অদিতি আর শুভ্রা।

” এই তোর কাছে ভাইয়ার গোলাপের গাছ কি করছে। যেখানে পেয়েছিস ওখানেই রেখে আয় শুভ্রা। ভাইয়া যদি একবার জানতে পারে তাহলে নিশ্চিত তোকে উল্টো ঝুলিয়ে দিবে। ভাইয়ার পছন্দের ফুলের গাছ। ”

রেগে যায় শুভ্রা। ধমক দেয় রাইমাকে। এভাবে বলার কি আছে। যেনো ওর ভাইয়ের কলিজা নিয়ে যাচ্ছে শুভ্রা। একটা গাছ’ই তো নিয়েছে।

শুভ্রার ধমক শুনে আর কিছু বললোনা রাইমা। সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো শুভ্রা আর অদিতি। গাছটাকে সযত্নে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে সে। কিন্তু এটা বুঝতে পারল না তাকে কেনো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিকদার বাড়ি।

___________

মাঝ রাতে নিজের ঘরে প্রবেশ করলো আরহাম। আজকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় দেরি হয়েছে আসতে। ঘরে প্রবেশ করতেই অন্যরকম লাগছে তার। বার বার মনে হচ্ছে ঘরে কেউ প্রবেশ করেছিল।
পরক্ষনেই আবার ভাবে , তার ঘর তো পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকে। সে ছাড়া কেউ জানে না এই ঘরের পাসওয়ার্ড।

নিজের ভুল ধারণা ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে আরহাম। লম্বা সময় নিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয় সে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই কিছুটা অগোছালো পায় সে। পারফিউম টা কিছুটা নিজ জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পায়। সন্দেহ হয় ওর। কিন্তু ক্লান্তি থাকায় এসবে পাত্তা দেয় না। চুপচাপ শুয়ে পড়ে । কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।

_________

শুভ্রা নিজের বারান্দায় কালো গোলাপের গাছটার পাশে বসে আছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে গাছটার দিকে। মন্ত্রী মশাইয়ের ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছে সে গাছটায়। বেশ কিছু সময় বারান্দায় কাটিয়ে ভিতরে চলে যায় সে।

খান বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে একজন যুবক। এতক্ষণ সে পর্যবেক্ষণ করছিল শুভ্রাকে।
যখন দেখলো শুভ্রা ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো তখন সেও নিজের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।

বারান্দার পর্দার আড়াল থেকে রহস্যময় হাসে শুভ্রা। যুবকটিকে চলে যেতে দেখে আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে বাকা হাসি।

____________

চলবে,,,