#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০২
সেই ৭ টা থেকে টেবিলে বসে আছি আমি।বুকের মধ্যে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি রাক্ষস টা এলো আর আমায় খেয়ে নিলো।মানে ঝাড়ি দিবে আরকি।বারবার ঢোক গিলছি আর পানি খাচ্ছি।
ঠিক তখনই নায়কবেশে এন্ট্রি হলো রাক্ষস টার।আই মিন রোদ্দুর স্যারের।ব্ল্যাক গেঞ্জি আর জিন্স।বরাবরের মতই আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো।না না ওনাকে দেখে নয়।আবার ভয়েও নয়।কেন জানি না। এটা এমনিই হয়!উনি ঝড়ের বেগে এসে বসে পড়লেন আমার সামনে।বই নিয়ে পেজ উল্টাতে উল্টাতে বললেন,
-“হোমওয়ার্ক! ”
আমি চুপচাপ হোমওয়ার্ক বের করে দিলাম।ওনার পারফিউমের সুগন্ধে সারা ঘর ভরে গেছে। আমার ইচ্ছে হলো জিজ্ঞেস করতে যে,’আপনি কি গোসল-টোসল করেন না? রোজ এভাবে পারফিউম মেরে মানুষকে পাগল বানাতে চান নাকি।’
কিন্তু বলা আর হয়ে উঠলো না।কারণ এই সাহস আমার নেই।কিন্তু এই সুগন্ধে মনটা তাজা হয়ে গেলো।
পরমুহূর্তেই মনে পড়ে গেলো সকালের ঘটনাটা।
কিছু বলছে না কেন?ভুলেটুলে গেছে নাকি?
যাক ভালোই হলো।স্যার হোমওয়ার্ক হাফ দেখে বললেন,
-“আর দেখতে মন চাচ্ছে না।বই দাও।”
বলেই খাতা ফেলে বই খুললেন।আমি রাগী চোখে তাকিয়ে রইলাম।দেখতে মন চায় না তাহলে করালি ক্যান।ইশশ যদি হাফ করতাম!আমার ঘাড়টা এখনো ব্যাথা।উনি বই দেখতে দেখতেই বললেন,
-“আমি জানি যে তুমি সব অংকই করেছো।আসার সময় আন্টির থেকে শুনেছি যে কালকে সারারাত অংক করেছো।আর নেটেও দেখিনি।গুড!”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“এবার খাতার দিকে তাকান মহাশয়া!”
আমি ভয়ে ভয়ে খাতার দিকে তাকালাম।উনি অংক করাচ্ছেন।সকালের সেই ভয়টা কাটেনি আমার।তাইতো ভয় পাচ্ছি। কখন ধরে ফেলে এই আতংকে পুরো ১ টা ঘন্টা সময় চলে গেলো।অংক শেষ করে আমি খাতা গোছাচ্ছি। আম্মু ওনাকে নাস্তা দিয়ে গেছেন।উনি সেই প্লেটটা টেনে নিয়ে হঠাৎ বললেন,
-“অতসী? ”
আমি আঁতকে উঠে বললাম,
-“জ্বী জ্বী?”
উনি কিছু সময় আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
-“এমন করে উঠলে কেন?”
-“কিছু না তো।এমনি।”(জোরপূর্বক হেসে)
-“আচ্ছা ঠিক আছে।নাও এখন এই নুডলস টা টেস্ট করো।”
আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বললাম,
-“আমি?”
-“হ্যা!”
বলতে বলতে উনি এগিয়ে দিলেন।আমি বারকয়েক মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বললাম,
-“না না আপনি খান।আম্মু আপনাকে দিয়েছে। ”
-“কিন্তু তোমার খেতে হবে।”
-“কেন স্যার?এটা তো আপনার।”
-“তোমাকে বিশ্বাস নেই।১০ বার অংক করতে দেয়ায় যদি কিছু মিলিয়ে থাকো।”(চোখ ছোট করে)
আমি রাগটা কন্ট্রোল করে হালকা হাসলাম।কি পরিমাণ শয়তান লোক।আমি ভাবলাম শয়তানটা ভালো হয়ে গেছে। তাই আমায় খাওয়াচ্ছে।আমি ওনার
জোরাজোরিতে অল্প খেলাম।উনি প্লেটটা টেনে নিতেই আমি বললাম,
-“স্যার আপনি আমার এঁটো খাবার কেন খাবেন!ছি ছি!আমি আম্মুকে বলছি আরেক প্লেট দিতে।”
-“লাগবে না!”(গম্ভীর গলায়)
-“কিন্তু…”
উনি দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালেন।আমি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম।বেশি কথা বললে পরে যদি সকালের কাহিনী মনে পড়ে যায়!উনি আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-“পানি খাও নয়ত হেঁচকি উঠবে।”
-“না,এটা তো আপনার।আপনি খান।”
-“অতিরিক্ত কথা কেন বলো?”(ধমক দিয়ে)
আমি চুপচাপ পানি খেয়ে নিলাম।পানি গলায় ঢুকতেই উনি হঠাৎ বললেন,
-“তবে অতসী আজ সকালে…”
ব্যস!গলার পানি গলায়ই আঁটকে গেলো।হঠাৎ বিষম উঠে গেলো।আমি জোরে জোরে কাশি দিতে লাগলাম।উনি আমার মাথায় আস্তে আস্তে করে বাড়ি দিতে দিতে বললেন,
-“কি যে করো না!অধৈর্য্য কেন এত তুমি!”
আমি তখনো কাশছি।উনি আমার পিঠে হাত দিয়ে পিঠে ঘষতে লাগলেন।আমি কেমন কেঁপে উঠলাম।উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে কাশছি।উনিও উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় দু-তিন বার বাড়ি দিয়ে বললেন,
-“এখন ঠিক আছো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।উনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।তারপর শক্ত গলায় বললেন,
-“আর কোনোদিন যদি দেখেছি তোমায় এমন অধৈর্য্য হতে!”
বলেই ঝাড়ি দিয়ে চলে গেলেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।বাহ রে!নিজেই তো কথাটা তুললো।তাই তো আমি ভয় পেয়েছিলাম।এখন আবার আমার দোষ দিচ্ছে। বাজে লোক একটা!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯ টা বেজে গেছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
।
-“কিরে কাল ভাইয়া তোকে বকেছে পরে?”
টিনার এহেন প্রশ্নে আমি ঘাড় ফিরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-“নাহ!”
-“তবে যে ভয় পাচ্ছিলি!”
-“জানি না। হয়ত ভুলে গেছে। ”
-“হুম হতে পারে।উনি তো অনেক ব্যস্ত মানুষ।”
আমি কিছু সময় চিন্তা করে বললাম,
-“হুমম!”
কলেজ শেষ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। ঠিক তখনই দেখতে পেলাম আমার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর স্যার আর আরেকটা আপু।যত দূরেই থাকুক না কেনো স্যারকে তো আমি কাছ থেকে রোজই দেখি।তাই ওনাকে আমি এক দেখাতেই চিনে ফেললাম।কিন্তু ওনার পাশের মেয়েটা কে?
এই কি তবে সেই জোনাকি!
যেই হোক!আমার কি? আমি তো এক প্রকার লাফাতে লাফাতে স্যারের কাছে যেতে লাগলাম।মেয়েটাকে কাছ থেকে দেখে বলতে ইচ্ছে হলো, ‘এক্সকিউজ মি!আপনিই কি সেই জোনাকি পোকা যে কিনা রাত-দিন আলো ছড়ান আবার মেসেজেও সেটার জন্য ধন্যবাদ দেন?’
কিন্তু বলার সাহস হলো না।আমি আস্তে করে হাটার গতি কমিয়ে দিলাম।ধীর পায়ে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-“স্যার আপনি এখানে!”
আমার হঠাৎ কথা বলায় রোদ্দুর স্যার অবাক হলেন না।বরং আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে সেই মেয়েটিকে বললেন,
-“জোনাকি তুমি বাসায় যাও,আমি টিউশনিতে যাব।”
আপুটা আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।আমি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে তাকিয়ে আছি।রোদ্দুর স্যার ঠিক আমার সামনে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন।তারপর মেয়েটাকে বললেন,
-“এভাবে কি দেখছো?যেতে বললাম।”
মেয়েটা কিছু না বলে চলে গেলো।আমি স্যারকে উদ্দ্যেশ্য করে আবারো বললাম,
-“আপনি এখানে কি করছেন?”
-“বড়রা সব জায়গায় যেতে পারে।”
-“তো আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি স্যার!”
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।আমি জোরপূর্বক হাসলাম।তারপর কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
-“দেখুন আমার হাইটও….”
আমার কথার মাঝেই রোদ্দুর স্যার হঠাৎ আমার হাত টেনে নিয়ে আতংকিত গলায় বললেন,
-“তুমি রাস্তায় চলে যাচ্ছো কেন?”
ঠিক তখনই একটা ট্রাক চলে গেলো আমার পিছন দিয়ে। আমি ঢোক গিলে স্যারের পাশে দাঁড়ালাম। উনি টান না দিলে কি হত এখন!উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-“ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!”
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।উনি চারিদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“নাহ!তোমাকে নিয়ে রাস্তায় থাকা যাবে না বেশিক্ষণ।”
-“আমি কি করলাম!”
-“এই মাত্র এত বড় কাজ করে আবার বলছো তুমি কি করেছ!”
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম ঠোঁট উল্টে।উনি বলতে লাগলেন,
-“এত বড় হয়েছো,মাথায় এত শয়তানি বুদ্ধি কিন্তু কাজের জন্য একটা বুদ্ধিও নেই।বোকা মেয়ে একটা!”
বলেই আমার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলেন।তারপর একটা রিকশা ভাড়া করে দিয়ে বললেন,
-“সাবধানে যাও।আমার এদিকে একটা কাজ আছে নয়ত আমিই নিয়ে যেতাম। ”
-“নো থ্যাংকস!”
উনি আবারো আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-“তোমায় জিজ্ঞেস করেছি আমি?”
আমি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম।উনি আবার বললেন,
-“সাতটায় আসব আমি।যাও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও
মামা সাবধানে পৌঁছে দিয়েন।”
রিকশা চলতে লাগলো।আমি জোরে শ্বাস ছেড়ে চারিদিকে তাকালাম। কি ভেবে পিছনে মাথাটা এগিয়ে দিতেই দেখলাম স্যার থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি অথচ তিনি তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে। আমার রিকশার দিকে তাকিয়ে। কেনো?উনি কি রিকশা টা দূরত্বে মিলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন?
উনি এই ভালো তো এই খারাপ!বুঝি না এই মানুষটারে!
বাসায় আসার পর জানতে পারি যে আমার ছোট বোন শ্রেয়ার কালকে জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা চলছে।আমি যেতেই শ্রেয়া আমাকে টেনে নিয়ে বললো,
-“আপু আমার জন্মদিন, তুমি গিফট দিবে না?”
আমি ওর কান ধরে বললাম,
-“সিক্সে উঠে গেছিস।এখনও কিসের জন্মদিন রে? আর বড়দের থেকে গিফট চাইতে হয় না।দোয়া চাইতে হয়।তর চাইতেও হবে না।যা আমি এমনেই দু হাত ভরে দোয়া করলাম তুই এবার ডাহা ফেইল করবি!”
-“তাই বুঝি!তুমি তো বুড়ি হয়ে গেছ,এখনো বুইড়া ছেড়ির জন্মদিন করে এ বাসার সবাই।আর আমি ফেইল করব?”(কাঁদো কাঁদো গলায়)
বলতে বলতে ও ন্যাকা কান্না করে আম্মু আর দাদীর কাছে চলে গেলো।অবস্থা বেগতিক বুঝে আমি ছুটে রুমে চলে এলাম।যত যাই হোক বাসায় একটা অনুষ্ঠান!এই সুযোগে পড়া থেকে একটু মুক্তি পাব।আর সাজগোজ ফ্রী!শ্রেয়ার জন্য কেনা গিফটা ব্যাগ থেকে বের করে আলমারীতে তুলে রাখতে লাগলাম।ইশ মনে তো লাড্ডু ফুটছে!আমি তো সেইরকম নাচব জন্মদিনে।ঠিক তখনই পেছন থেকে দাদী বলে উঠলো,
-“রোদ্দুর কেউ বলিস তো আসতে।”
আমার হাত থেকে বাক্সটাই পড়ে গেলো।হয়ে গেলো আনন্দ, ফূর্তি, মজা!লে হালুয়া!
চলবে……
(ভুলত্রুটি মার্জনীয়)