প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-০৭

0
336

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৭

সেদিন রাতে জ্বর ছাড়ার পর আমার ঘুম ভাঙে মাঝরাতে!রাত তখন হয়ত তিনটা!হাজার চেষ্টা করেও যখন ঘুম আসলো না তখন ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম ৩:১২!তারমানে অনুমান সঠিক।
কি ভেবে ফেসবুকে ঢুকলাম। রিলস দেখতে দেখতে হঠাৎ মেসেজের টু শব্দ হলো।ইনবক্স চেক করে দেখলাম স্যারের মেসেজ,

-“ঘুমাওনি?”

-“ঘুম ভেঙে গেছে! ”

-“এজন্য নেটে ঘুরবা? যাও ঘুমাও।”

-“ঘুম আসছে না।হয়ত সারাদিন ঘুমানোর জন্য! ”

-“এখন শরীর কেমন আছে?”

-“হ্যা এখন ভালো।”

-“তোমাকে দেখার জন্যই আমি আসলাম।নয়ত আরো দুদিন পর আসতাম!”

একটা শীতল হাওয়া আমার মনের মধ্যে ঢেউ তুলে চলে গেলো।চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।কাপা হাতে টাইপ করলাম,

-” আমার জন্য? ”

-“হুম তোমার জন্য। আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।ভেবেছিলাম যে হয়ত হাসপাতালে নিতে হবে।”

-“আরেহ না।এসব জ্বর আমার কিছু করতে পারবে না।”

-“ওহ তাই বুঝি!”

-“ইয়াহ।আমি অনেক স্ট্রং!”

-“জ্বরের মধ্যেও আপনার তর্ক কমছে না মেডাম!”

-“না মানে এমনি।”

-“হয়েছে ঘুমাও।আমিও রেস্ট নিই।তোমার জন্য এক প্রকার দৌড়ে আসতে হয়েছে। ”

-“হুম।”

আমি ইনবক্স থেকে বের হতেই দেখলাম স্যারের প্রোফাইল চেন্জ!একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পড়া পিক।বিয়েতে গেছিলো। সেটারই হয়ত।আমি একটা রিয়েক্ট দিয়ে নেট থেকে বের হয়ে এলাম।এই লোকটার চোখগুলো বেশি সুন্দর। আর হাসিটার মধ্যে বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে!কিন্তু আমি এসব কেন ভাবছি।যা ইচ্ছে হোক!
ভেবেই আমি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই স্যারের হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠলো।আমি তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে উঠে বসলাম।হার্টবিট বেড়ে গেছে। ঢোক গিলে বিরবির করলাম,

-“রাক্ষস টা ঘুমের মধ্যেও চলে আসছে…”

পরের দিন স্যার যখন পড়াতে আসলেন আমি বই নিয়ে পেজ উল্টাচ্ছি।উনি এসেই ধুপধাপ পায়ে রুমে আসলেন।চেয়ারে বসে বইটা টান দিয়ে নিয়ে বললেন,

-“কি পড়ছো দেখি!”

আমি তখন বায়োলজি পড়ছিলাম।উনি তা দেখে বললেন,

-“হুম গুড।”

তারপর হঠাৎ আমার কপালে নিজের হাত দিয়ে বললেন,

-“দেখি তো জ্বর কেমন!”

ওনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।ওনার মোটা ঘড়িটা আমার কপাল থেকে একটু নিচে পড়লো।উনি হাত সরিয়ে বললেন,

-“এখনো জ্বর আছে।খেয়েছো কিছু? ”

বলতে বলতে হাত সরালেন।আমি দূর্বল গলায় বললাম,

-“হুম!”

-“কি খেয়েছো?”

-“ডিম।”

-“হুম এটা ভালো খাবার।”

আমি নাকিকান্না কেঁদে বললাম,

-“ডিম ভালো লাগছে না।আমি ফুচকা খাবো!”

-“এখন?এই জ্বর নিয়ে?”

-“হুহ!”(ঠোঁট উল্টে)

-“একদম না।আর এসব কি ফুচকা-টুচকা খাও তুমি হুম!”

-“মোটেও ফুচকা নিয়ে কিছু বলবেন না।”

-“হয়েছে বুঝছি।এখন এই অংকটা দেখো।”

বলেই উনি আমাকে অংক করাতে লাগলেন।আজ বেশি পড়ালেন না।খাতাগুলো নিজেই গুছিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-“আজ তোমার জ্বর।তাই কমই পড়ালাম।”

আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।উনি হেসে বলতে লাগলেন,

-“বিয়ে বাড়িতে অনেক মজা করলাম।আমার বন্ধুর তো লাভ মেরেজ।”

-“বাহ!”

-“হ্যা।দুজনকে ভালোই মানিয়েছে।সেইরকম মজা করলাম।নাচানাচি।”

আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।রোদ্দুর স্যার আর নাচানাচি?ওহ গড!এই লোকটা নাচতেও পারে?
বিষয়টা ভেবেই আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম।
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

-“এই তুমি হাসছো কেন?”

-“এ..এমনি।”

-“মিথ্যুক!”

-“আরে আমি এটা ভেবে হাসছিলাম যে ওদের লাভ মেরেজ করে বিয়ে হয়েছে। ওরা এখন কত সুখে আছে!
ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে! ”

উনি আমার গাল টেনে বললেন,

-“ওরে পাকা বুড়ি রে!”

-“আবার আমাকে বুড়ি বললেন আপনি!”

উনি হো হো করে হেসে উঠলেন।আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।বাজে লোক একটা!
এরপর কেটে গেছে এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে আমার সাহস আচমকা কিভাবে যেন বেড়ে গেলো।
লোকটাকে আর ভয় করে না।আমার জ্বরের পর থেকে যে আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলা শুরু করেছে এখনো তা থামেনি। তাই এখন ভয় কমে গেছে। তাই তো আজও পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় বসে আছি। হাতে একটা বই।মুখে চকলেট।হঠাৎ আমার হাত থেকে বইটা টান মেরে নিয়ে নিলো কেউ।আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম রোদ্দুর স্যার। উনি আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে বললেন,

-“এসব কি প্রেম-ট্রেমের বই পড়ছো!”

আমি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললাম,

-“তো কি পড়বো।”

উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

-“তোমার মত বয়সে এসব দেখলেই ভয় পেতাম।”

-“ওমা কেন!আমি তো দেখতে পারছি না।”

-“কি দেখতে পারছো না তুমি!”(ভ্রু কুঁচকে)

-“আরে আমি তো বাঘ-ভাল্লুক কই সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।”

-“এখানে বাঘ-ভাল্লুক কই থেকে এলো?”

-“এইযে আপনি বললেন ভয় পেতেন!”

-“অতসী,ন্যাকামো আর ফাজলামোর লিমিট আছে।যাও পড়তে বসো।”

আমি চুপচাপ হেটে টেবিলে গিয়ে বসলাম বই নিয়ে।আড়চোখে দেখছি উনি বইটা দেখছেন।ঢোক গিললাম আমি।উনি আমার সামনে এসে বসে রাগী গলায় বললেন,

-“এসব বই যদি তোমাকে আর কোনোদিন পড়তে দেখেছি…”

আমি মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললাম।উনি বইটা আমার সামনে দিয়ে বললেন,

-“এসব বই তোমার বয়সের?তুমি পড়বা গোয়েন্দা সমগ্র,ভূতের গল্প।পড়াশোনা করবা।তা না!”

কি আশ্চর্য! আমি কি গোয়েন্দা হব যে এসব পড়ব!ঢং!আর আমার কি বয়স হয়নি?আমি কি কচি খুকি নাকি।উনি পড়েন মাস্টার্সে। আর আমি এইচএসসি দিব।এই তো পার্থক্য। এতটাও না।
ওনার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো,

-“বাচ্চা একটা মেয়ে। এসব পড়ে মাথাটা বিগড়াচ্ছো!”

আমি মিন মিন করে বললাম,

-“একটু পড়লে কিছু হবে না।”

-“অনেককিছু হবে।কই থেকে পেয়েছো এটা।বলো!”

-“অনলাইন থেকে অর্ডার করেছি।”

-“এসবই করবা।মেলায় গিয়ে বই কিনে পড়ো,দেখে দেখে বাছাই করে কিনো।”

শুরু হলো কির্তন।আমি মুখ কুঁচকে বসে আছি।উনি ওনার জ্ঞান এখনো দিচ্ছেন।আমি বইটা ছো মেরে নিয়ে বললাম,

-“আচ্ছা বুঝছি।আর পড়ব না।”

বলেই বইটা ছুড়ে বিছানায় মারলাম।উনি অবাক হয়ে বললেন,

-“বইকে অপমান করলে!”

ব্যস শুরু হয়ে গেলো।এবার আমি কান চেপে ধরে রাখলাম।প্রায় আধঘন্টা বকবক করে উনি বললেন,

-“আর কিছু বলব না তোমায়।যা খুশি করো।”

আমি হা হয়ে তাকিয়ে বললাম,

-“তাহলে এতক্ষণ কি ছিল?ট্রেইলার?”

-“মানে?”(ভ্রু কুঁচকে)

আমি আর কিছু বললাম না।উনি পড়ানো স্টার্ট করলেন।পুরোটা সময় আমি মুড অফ করে বসে রইলাম।আম্মু এসে নাস্তা দিয়ে গেলো।
আমি সেটা এগিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

-“গিলেন।”

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

-“কিছু বললা?”

-“ন..না তো।”

উনি আর কিছু না বলে খেতে লাগলেন।আমি মাথা নিচু করে মুখ ভেংচি কাটছি।এক ঘন্টা বকবক করে বললো কিছু নাকি বলেইনি।এটা কোনো কথা!সবসময় এমন করে আমার সাথে।আড়চোখে দেখলাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে।আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
পড়ানো শেষে উনি চলে গেলেন।আমি আবারো বিছানায় শুয়ে পড়লাম।টিনাকে কল দিয়ে নাকিকান্না জুড়ে দিলাম।টিনা হতভম্ব হয়ে বললো,

-“হয়েছে টা কি!এমন করে গলা ছাড়লি কেন?”

-“ওই বজ্জাত লোকটা আমারে হুদাই বকলো।”

-“কে?”

-“ওইযে ওই রাক্ষস টা।ভাবছিলাম ভালো হয়ে গেছে। শয়তান কি জীবনে ভালো হয় রে!”

-“হ্যা সেটাই তো।কিন্তু কোন শয়তান?”

কেমনডা লাগে!ও কিছু বুঝেই নাই।আমি এবার একটা গালি দিয়ে বললাম,

-“আরে তোর ক্রাশ।”

-“ওওও রোদ্দুর ভাইয়া?”

-“হ্যা।”

-“বকলো কেন?”

আমি ওকে সব খুলে বললাম।ও সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,

-“হুমম..বুঝলাম।তুই বইটা পড়লি কেন হুদাই।ঠিকই তো বলছে!”

-“এ কি রে!তুই ই তো বললি কিনতে।একসাথে পড়ব বলে।”

-” ও হ্যা তাই তো।”(দাঁত কেলিয়ে)

-“তোরে সামনে পেলে…”

বলতে বলতে কল কেটে গেলো।আমি ফোনটা ছুড়ে মেরে বইটা নিয়ে বসে পড়লাম।আর জিদ নিয়ে বললাম,

-“এক বসায় শেষ করব এটা আমি।যতই না করুক।সে কে না করার?”

মনে মনে বলে আমি বইটা পড়া আরম্ভ করলাম।
রাত ৩টায় বইটা শেষ করে যখন আমি ঘুমাতে যাব তখনই মনে পড়লো যে আমি তো একবারো নেটে যাইনি।একবার তো যেতেই হবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করলাম।বের হব এমন সময় দেখলাম স্যারের মেসেজ,

-“তুমি এখনো ঘুমাওনি!কয়টা বাজে!”

শুরু হলো!এখন রিপ্লাই তো দিতেই হবে।নয়ত কালকে এসে বলবে যে বেয়াদবি করছি।

-“আসলে স্যার আমার ঘুম ভেঙে গেছে!”

-“তাই বলে নেটে ঘুরবা?যাও নামাজ পড়ো।”

আমি নেটই অফ করে দিলাম।নিজে কি করতাছে?
আমারে নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়ে নিজে যে জোনাকির সাথে আলোকিত হচ্ছে তার বেলায়!ঢং!

চলবে…