প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-০৮

0
314

#প্রিয় রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৮

সেদিনের পর যখন আমি প্রায় পুরো উপন্যাসের বইটা ৩ বার পড়ে ফেলি তখনো আমার মনে শান্তি আসে না।
আসবেই বা কি করে!এটার জন্য আমাকে এত কথা শোনালো!এটাকে তো আমি না হলেও ১০ বার পড়ব।মুখস্থ করে ফেলব পুরো।এটা মনে করে যখন আমি বইটা আবারো নিয়ে বসলাম তখনই রোদ্দুর স্যারের আগমন।ওনাকে দেখা মাত্রই আমি বইটা লুকিয়ে ফেললাম।উনি হয়ত খেয়াল করলেন।আমি চুপচাপ টেবিলে বসে পড়লাম।
বুকটা কেমন ধরফর করছে রে ভাই!আমার ধ্যান ভাঙিয়ে উনি বললেন,

-“কি হলো,পরীক্ষা দিবা না?”

আমি চমকে উঠে বললাম,

-“কিসের পরীক্ষা? ”

-“তোমার না ম্যাথ এক্সাম দেয়ার কথা আজ।”(ভ্রু কুঁচকে)

এই রে!পুরো ভুলে গেছি।এখন কি হবে? না সামাল দিতে হবে।ভেবেই আমি বললাম,

-“ক..কখন! না তো।!

উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

-“একদম মিথ্যা বলবে না।আমি মিথ্যা পছন্দ করি না।তোমাকে আমি গতকাল বলিনি যে এই চ্যাপ্টারে আজ এক্সাম?”

আমি এবার ভয় পেয়ে বললাম,

-” হাম…”

-“তাহলে?”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।উনি ওনার ব্যাগ থেকে প্রশ্ন বের করতে করতে বললেন,

-“আমি কিছু জানি না।এবার এক্সাম দিতেই হবে।আমি কষ্ট করে প্রশ্ন বানিয়ে আনলাম।”

-“কিন্তু স্যা….”

-“কোনো কিন্তু নয়।ইউর টাইম স্টার্টস নাউ।”

-“স্যার আমি তো প্র্যাকটিস ই করিনি।”

-“সময় নষ্ট হচ্ছে! ”

আমি আর কিছু না ভেবে মুখ গোমড়া করে কিছু সময় প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর প্রশ্ন গুলো দেখে মনে মনে ভাবলাম,

-“যদি আমি প্রেকটিস করতাম সবগুলো পারতাম।পারা অংক!”

তাও আমি কয়েকটা করার চেষ্টা করতে লাগলাম।উনি আমাকে বারবার দেখছেন আড়চোখে। ওনার চোখে চোখ পড়তেই উনি বললেন,

-“সময় চলে যাচ্ছে….”

আমি আমার মত চেষ্টা করছি ঠিকই কিন্তু অর্ধেক করে আর মিলাতে পারছি না।রাগে-দুঃখে কান্না পাচ্ছে আমার।আমি আর না পেরে এমসিকিউ করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কয়েকটা শেষ করতেই উনি খাতা টেনে বললেন,

-“টাইম ওভার!”

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই সময় শেষ!১ ঘন্টা কখন চলে গেলো টেরই পেলাম না।স্যার খাতা ভাজ করে ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বললেন,

-“কি যে এক্সাম দিসো!বুঝবা কালকে।”

আমি মুখ গোমড়া করে বসে রইলাম। উনি চা খেয়ে উঠে গেলেন।
আমি বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে বললাম,

-“ভাল্লাগে না ধূর!”

পরেরদিন সারাটা সময় গেল আমার চিন্তায় চিন্তায়।চিন্তায় ভাল করে খেতে অবধি পারিনি।পারব কি করে!কম নাম্বার আসলে তো এই লোকটা আমাকে অপমান করতে ছাড়বে না।পাগল করে ফেলবে কথা শোনাতে শোনাতে।
এইগুলো ভাবতে ভাবতে যখন আমি ড্রইংরুমে এসে পানি খেতে লাগলাম তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। আম্মু কিচেন থেকে বলতে লাগল,

-“দেখ না কে এলো!”

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সময় বিকাল ৪ টা!নাহ!এখনো রাক্ষসের আসার সময় হয়নি।
আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দরজা খুলতেই ফুপিকে দেখে চমকে উঠলাম। ফুপি আমাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

-“কিরে!কেমন সারপ্রাইজ? ”

আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললাম,

-“ফুপ্পিইইইইই!”

বলেই টেনে ঘরে আনতে আনতে বললাম,

-“এতদিন পর সময় হলো তাহলে আমাদের বাসায় আসার।সায়ন্তি আসল না?”

-“আরে না রে।ওর পড়াশোনার চাপ!”

-“সে তো সারাবছরই থাকে।”

বলতে বলতে আমি চেঁচালাম,

-“আম্মুউউউ!দাদীইইই!দেখো ফুপি এসেছে! ”

আমাীর ডাক শুনে সবাই ড্রইং রুমে এসে পৌঁছাল।সবাই ফুপিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।এসবের ঠেলায় আমি রাক্ষসের কথাটা ভুলে গেলাম।ফুপির সাথে আড্ডা দিতে দিতে যখন কলিং বেল বাজল তখনই আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে দরজা খুলতেই রোদ্দুর স্যার রুমে ঢুকলেন।আমি সালাম দিলাম।ওনাকে নিয়ে রুমে যেতে যেতে শুনলাম ফুপি আম্মুকে বলছে,

-“এটা কে?”

-“এটা অতসীর টিচার।রোদ্দুর! ”

-“এমন চ্যাংড়া ছেলের থেকে প্রাইভেট পড়াচ্ছ!”

-“না আপা,রোদ্দুর খুব ভাল ছেলে।”

-“জানা আছে আমার!”

আমি রুমে ঢুকে দরজা ভিরিয়ে দিতে গেলে ফুপি বলে উঠল,

-“একি অতসী!দরজা ভিরাচ্ছিস কেন?”

আমি আঁতকে উঠলাম।আল্লাহ রে!আজকে বকা খাইলে সবাই শুনবে যদি দরজা না লাগাই।ফুপি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,

-“দরজা খোলা থাকবে।যাও পড়ো!”

আমি ঢোক গিলে রুমে এসে চেয়ারে বসলাম।স্যার জোরে একটা শ্বাস ফেললেন।তারপর ব্যাগ থেকে খাতা বের করে সামনে রাখলেন।খাতায় কত পাইছি তা আর নাই বা বলি।
রোদ্দুর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন,

-“সমস্যাটা কি?”

আমি একটু চোখ তুলে তাকালাম।উনি আমার দিকেই তাকিয়ে। উনি আবার বলতে লাগলেন,

-“বলো তোমার সমস্যাটা কি অতসী?তোমাকে আর কিভাবে বললে তুমি বুঝবে।পরীক্ষার আর কয়েকমাস মাত্র বাকি।তুমি কি শুরু করেছো?পড়াশোনা করবা না?তাহলে আমার সময় কেন নষ্ট করছ?”

আমি চুপ করে বসে আছি তখনো। উনি তা দেখে আবার বললেন,

-“আনসার মি!কি সমস্যা তোমার? ম্যাথগুলো কতবার করিয়েছি? তাও পারলে না কেন বলোহ!”

-“স্যার আপনি আমায় একটু সময় তো দিবেন। আমি তো…..”

-“সময় দিইনি?পুরো ১ ঘন্টাই ত দিলাম।”

-“না স্যার সেটা না।আমার প্রেকটিস করার সময়।”

-“পুরো একদিন সময় পেয়েও তোমার হল না?”

-“স্যার আমিতো এক্সামের কথা ভুলে গেছিলাম।এটা আপনাকে বলেছিও।তাও তো….”

-“কি ভুলে গেছো?কেন ভুলে গেছ?এক্সাম কি ভুলবার জিনিস?কেমন স্টুডেন্ট তুমি হ্যা!!মনটা থাকে কোথায়!”

উনি লেকচার দিচ্ছেন আর আমি গিলছি।কিছু সময় পর বললেন,

-“আর কিছু বলার নেই তোমাকে।তুমি আসলেই একটা বেয়াদব! ”

আমি চুপ করেই রইলাম!

-“এই মেয়ে!আদৌ আমার কথা শুনছ তুমি?নাকি আমাকে দিয়ে শুধু শুধু চিল্লাচিল্লি করাচ্ছ?”

-“তুই চিল্লাচিল্লি করছিস এটাতে আমার কি দোষ রে! ষাড় একটা!”(বিরবির করে)

-“কি বিরবির করছ?”

-“কিছু না।”

-“এভাবে হবে না বুঝছি”

বলেই উনি আশেপাশে কিছু একটা খুজতে লাগলেন।তারপর স্কেল বের করে বললেন,

-“হাত দাও! ”

আমি হাতটা পিছনে নিয়ে বললাম,

-“স..সরি স্যার!”

-“হাত দাও।”(রেগে)

-“আ..”

উনি আমার হাত টেনে নিলেন। তারপর স্কেল দিয়ে বাড়ি দিলেন।আমি ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলাম।উনি আরেক হাতে আরেকটা বাড়ি দিয়ে বললেন,

-“বই বের করো!”

আমি চুপচাপ বই বের করলাম।
পড়া শেষ করে উনি চলে গেলেন।আমি বই রেখে ফোন নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।আমি এসে বলতে লাগল,

-“কিরে রোদ্দুর নাকি তোকে মারল!তবুও ফোন চাপছিস!”

আমি বালিশ ছুঁড়ে মেরে বললাম,

-“আম্মু প্লিজ!তুমি আমার মাথা খেয় না।যাও প্লিজ!”

-“বুঝিনা বাবা! বেশ হয়েছে! আরো দুটো দিত!”

-“আম্মুউউউউউ!”

আম্মু চলে গেলো।আমি সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাত ১০ টায় আম্মু আমাকে ডাকতে লাগলো,

-“কিরে খেতে আয়…”

-“আমি খাব না।”

-“কি ঢং করতাছসস!খেয়ে নে।আয়!”

-“যাও তো আম্মু।”

-“যা ইচ্ছে কর!”

বলেই আম্মু চলে গেলো।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম,

-“আপনি এই না কত ভালো ছিলেন?এই শক্ত হয়ে গেলেন আবার!কেন? আমি তো আজ বলেছিলাম যে আমার মনে নেই।তাও এমন করলেন?আমি খুব ব্যাথা পেয়েছি। আর ভুলব না।আপনি খুব বাজে রোদ্দুর স্যার!ভীষণ বাজে!”

ভাবতে ভাবতে আমি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে আমি ঘাড় ফিরিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলাম।
বাহ!মেরে এখন খোঁজ নেয়া হচ্ছে। হ্যা ওই রাক্ষসটারই মেসেজ,

-“কি অবস্থা মহারাণী!”

আমি রিপ্লাই দিব না ভেবেও দিলাম,

-“জ্বী ভাল!আপনার?”

-“এইত!কি করছ শুনি?”

-“কিছু না।”

-“খেয়েছ?”

-“না।জিজ্ঞেস করার জন্য ধন্যবাদ! ”

-“খাওনি কেন?”

-“এমনি।আপনি? ”

-“হুম খেয়েছি।তুমি খাওনি কেন?”

-“এমনি স্যার।আচ্ছা আমি যাই।”

-“আচ্ছা শোনো…”

আমি আর কিছু না বলে নেট অফ করে দিলাম। কিছু সময় পরই ফোনটা বেজে উঠল। আমি বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্যারের নাম্বার। রিসিভ করে কানে দিতেই উনি বললেন,

-“খাওনি কেন?”

-“এমনি স্যার।বললাম তো।ধন্যবাদ জিজ্ঞেস করার জন্য। “(নিম্ন স্বরে)

-“এত ধন্যবাদ জানাচ্ছো কেন?খাওনি কেন?তখনকার জন্য? ”

আমার বুক কেঁপে উঠল।এখন আবার ঢং করে বলা হচ্ছে। উনি আবার বললেন,

-“তুমি দোষ করেছ তাই শাস্তি পেয়েছ।যাও এখন খেয়ে নাও।১২ টা বাজে।”

-“আপনি খান।”

-“যাও খাও।এমন করতে হয় না!যাও প্লিজ।”

-“আমার ইচ্ছে করছে না।থ্যাংক ইউ”(বিরক্তি নিয়ে)

-“আবার থ্যাংক!”

-“হুহ!”

-“তুমি না খেলে আমার নিজেকে অপরাধী লাগবে অতসী।প্লিজ খেয়ে নাও।এরপর থেকে ভাল করে পড়বে হুম?”

এহ ঢং করছে এখন!আমি যে তখন বললাম যে আমি প্রেকটিস করিনি তখন শুনিসনি কেন?এখন নাটক করে আদর দেখাচ্ছে। পঁচা স্যার!

চলবে….