প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-১১

0
261

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১১

বিকাল থেকে মুখ ভার করে বসে আছি আমি।কালকে রাতে সেই ব্যবহারে আমি আসলেই অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমি যদি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে তো সে বলবে যে অতসী তুমি এটা কেন করলে বা কিছু! কিন্তু না।সে কিছু না বলে শুধু ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে। পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি সেটাও জানি না।আমার মন খারাপের এই সময়ে হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম টিনার নাম্বার। কল রিসিভ করে কানে দিয়ে বললাম,

-“হ্যা বল!”

-“কি হলো!তোর মন খারাপ কেন?”

-“আরে না।বল কি বলবি!”

-“দোস্ত তোর কিরকম ঝুমকা পছন্দ?”

-“লাইট ওয়েট।কেন?”

-“আরে কাজ আছে।বের হবি কালকে?”

-“দেখি..১১ টার টাইমে।কারণ বিকালে স্যার আসে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন বলতো মুড অফ কেন!”

-“কোথায় মুড অফ!”

-“আমি বেশ বুঝতে পারছি!”

-“আরে কিছু না।”

এমন সময় আমার ফোনে আরেকটা কল এলো।আমি তাড়াতাড়ি কল কাটতে কাটতে বললাম,

-“টিনা,কে যেন কল দিছে।বায় হ্যা!”

টিনা আচ্ছা বলে কল কেটে দিলো।আমি তাকিয়ে দেখি স্যারের কল।এই লোক এখন কেন কল করছে।আমি কল রিসিভ করে আগের মতই গোমড়া মুখে বললাম,

-“আসসালামু আলাইকুম!”

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।অতসী?”

-“জ্বী স্যার।”

-“আমি তোমাকে এখন পড়াব ঠিক আছে?”

-“এখন!!”(একটু জোরে)

-“হ্যা।কেন কোনো সমস্যা? ”

-“না স্যার।আচ্ছা আসেন।”

-“হুম আসছি।”

উনি আর কি যেন বলছিলেন বাট আমি তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে কেটে দিলাম।ভেবেছিলাম ব্যাক করবে।বাট আর করেনি।আমি আর কিছু না ভেবে গায়ে ওড়না জড়িয়ে পড়তে বসে গেলাম।কিছু সময়ের মধ্যেই উনি এসে গেলেন।ধীর পায়ে এসে বসলেন সামনে।আমি চুপ করে মাথা নিচু করে আছি।উনি আড়চোখে আমাকে দেখছেন।
কিছু না বলে অংক করাতে লাগলেন।
আমি চুপচাপ মাথা নাড়াচ্ছি। কিছু সময় পর উনি পেজ উল্টাতে গিয়ে আমার হাত লক্ষ্য করে বললেন,

-“মেহেদীর রং তো ভালোই হইছে।”

আমি সেটা শুনে মাথা নিচু করে হাতাটা একটু নামিয়ে ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলাম।উনি সেটা দেখে আমার হাতটা টেনে নিলেন।আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।উনি হাতা উঠাতে উঠাতে বললাম,

-“লুকাচ্ছো কেন?”

আমি মাথা নিচু করেই রইলাম।উনি হাতটা ভালো করে দেখে বললেন,

-“দারুণ কালার।”

তারপর হাতটা রেখে দিলেন।আমি চুপ করে বসেই আছি।উনি কোণা চোখে তাকিয়ে বললেন,

-“তুমি আদৌ পড়া বুঝছো তো?”

-“হ্যা।”

-“আমার তো মনে হচ্ছে না।”

-“আমি পারি ”

উনি আমাকে একটা অংক বোঝাতে বললেন।আমি বুঝিয়ে দিলাম।উনি হেসে ফেললেন।আমি আর কিছু বললাম না।উনি খাতা এগিয়ে বললেন,

-” করে দেখাও।”

আমি হাত এগিয়ে খাতা নিতে গেলেই উনি খাতা সরিয়ে দিলেন।আমি ওনার দিকে তাকালাম।উনি হাসছেন।আমি চোখ নামিয়ে বললাম,

-“দিন..”

-“লাগবে না।”

আমি গাল ফুলিয়ে রইলাম।

-“এমন ফুলে আছো কেন?”

-“কই নাতো।”

-“দেখছি তো আমি..”

-“হুহ!”

এমনিভাবে পড়া শেষ হয়ে গেলো।ফুপি এসে নাস্তা দিয়ে গেলো।স্যার খেয়ে উঠে আমার ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি বইগুলো দেখছি বসে বসে।হঠাৎ ওড়নায় টান পড়ায় আমি পিছনে ফিরে দেখি উনি আমার ওড়নায় হাত মুছে চলেছেন।আমি চোখ বড়বড় করে বললাম,

-“আরে আপনি গামছায় মুছুন।”

-“চুপ!”

-“আরে স্যার!”

উনি চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,

-“একশবার মুছব।সমস্যা?”

আমি আঁড়চোখে তাকালাম শুধু। এখন নাটক করা হচ্ছে। কাল রাতে কি করছিলি মনে নাই?
এমন মানুষ আমি জীবনে দেখি নাই বাবাহ!

স্যার চলে যেতেই শ্রেয়া আমাকে এসে বলতে লাগলো,

-“আমি দেখেছি!”

-“তুই আবার কি দেখলি!”

-“আমি দেখেছি যে রোদ্দুর ভাইয়া তোর ওড়না দিয়ে হাত মুছে ছিলো! ”

আল্লাহ!এই মেয়ে কিভাবে দেখলো!আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এই রেকর্ডার তো সব খবর ফাঁস করে দিবে।আমি তুতলিয়ে বললাম,

-“ক..কই।একদম না।”

-“একদম মিথ্যা বলবি না।আমি দেখেছি।”

-“ওইত এমনি।”

-“কেন রে!গামছা ছিল না?!

-“আমি দিয়েছিলাম।”

-“তাহলে কেন মুছল না?”

-“তোকে বলতে হবে?যা এখান থেকে।পড়তে বস!”

শ্রেয়া আমার দিকে দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেলো।এই লোকটার জন্য এখন আমাকে এসবের স্বীকার হতে হচ্ছে। ধূর!
আমি দুহাতে মুখ চেপে ধরলাম।
রাতে পড়াশোনা শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে বরাবরের মতোই তার মেসেজ পেলাম,

-“অতসী,খেয়েছ?”

-“জ্বী।আপনি?”

-“হুম খেলাম।”

-“হুহ!”

কি জিজ্ঞেস করব বুঝতে পারছি না।আর এমনিতেও রাগ তো আমি করছি।সেই বললো,

-“তুমি গতকালকে আমার হাত ঝটকা মারলে কেন?”

-“কখন!”

-“কালকে।মনে করো!”

-“মনে পড়ছে না।”

-“মনে করো।আমি জানি না।”

আমি ভালো করে মনে করলাম।হ্যা শেষে মেবি হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম।আমি লিখলাম,

-“হ্যা। এমনি ”

-“কেন ছাড়ালে?খুব ভাব দেখানো হচ্ছে তাই না?একটু ধরলে এমন করো কেন?”

আমি অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে টাইপ করলাম,

-“আমি তো এমনিই…”

-“বেশি ভাব হয়ে গেছে।একটু ধরলে কেমন করো।চেঁচিয়ে উঠো।ওড়নায় হাতও মুছতে দিলা না।”

-“আরে আমি তো এমনিই হাত ছাড়িয়েছিলাম।ওতোটা ভেবে করিনি।সত্যি!”

-“ইচ্ছে করেই করেছ।কত করে বললাম যে মজা হইছে পায়েস।তাও ঢং!”

-“আমার রাগ হইছিল!”

-“বানাইছো আমার জন্য। আমি বললেই তো হলো।মেহেদীও আনলাম বখশিশ হিসাবে।বললা মুছে দিবা।”

-“তো আপনিই তো ধন্যবাদ ধন্যবাদ কীর্তন শুরু করলেন।”

-“নিজে করলে কিছু না?”

-“আমি আপনার মত করি না।”

-“আমিও তোমার মত না।নির্দয়!”

-“আপনি নির্দয়!”

এভাবে কিছু সময় ঝগড়া করার পর এমনি এমনিই সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।আমিও মন খুলে ওনার সাথে আমার হাসি-খুশির কথা শেয়ার করতে লাগলাম।এই লোকটা যে কি!এই ভালো তো৷ এই গম্ভীর! বুঝি না!


সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে প্ল্যান মত টিনার সাথে চলে গেলাম মার্কেটে।টিনা আমাকে একটা সুন্দর দেখে ঝুমকা হাতপ ধরিয়ে দিয়ে বললো,

-“সামনে তোর বার্থডে।আমি আসতে পারব না।তাই এখনই দিয়ে দিলাম।”

-“এটা চালাকি টিনা।তোকে আসতেই হবে।”

-“এবার হবে না রে।গুরুত্বপূর্ণ কাজে একবার গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।”

-“তুই এলে ভালো লাগত রে।”

-“তাও চেষ্টা করব দেখি!”

আমরা কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় দেখি রোদ্দুর স্যার আর সেই জোনাকি নামের মেয়েটা দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।
টিনা আমাকে চিমটি কেটে বললো,

-“দেখ দোস্ত”

-“দেখতাছি আমি।কানা না!”

মেয়েটা ঢং করে ফুচকা খাচ্ছে। আর রোদ্দুর স্যার একটু দীরে সানগ্লাস পড়ে কানে ফোন লাগিয়ে কারোর সাথে কথা বলছেন।আমার বুকের ভিতরটা কেমন চিন চিন করে উঠলো।কেমন জ্বলে উঠলো।
মনে হলো,

-“আমাকে ফুচকা খেতে দয়া না।আর এটাকে নিয়ে ফুচকা খেতে এসেছে। আজ আমি পুরো দোকানই খেয়ে নিবো।”

ওনারা চলে যেতেই আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।একের পর এক ৬ প্লেট খেলাম।টিনা হা হয়ে বললো,

-“দোস্ত আর কত খাবি!পেট খারাপ হবে।”

-“সর সামনে থেকে।”

-“আরে হলো টা কি তোর!”

-“আগুন জ্বলছে!”

চলবে….