প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-১২

0
312

#প্রিয়—রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২

আগামীকাল আমার জন্মদিন! আর আজ আমি বসে বসে এক্সাম দিচ্ছি রোদ্দুর স্যারের কাছে।আসলে আমাকে প্যারা না দিলে তার হয় না। বসে বসে কলম কামড়াচ্ছি। আমার সামনে বসে বারবার ঘড়ি দেখছেন রোদ্দুর স্যার।মুখটা গম্ভীর। রাম গরুরের ছানা কিনা!আমাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

-“লিখো..”

আমি কলমটা মুখ দেখে সরিয়ে অসহায় গলায় বললাম,

-“আমি তো কিছু পারিই না স্যার!”

-“বারবার একই এক্সকিউজ কিন্তু ভালো লাগে না। ”

ওনার রাগী গলা শুনে আমি ঢোক গিললাম।উনি ঘড়ি দেখতে দেখতে বললেন,

-“আর দশ মিনিট আছে।”

-“লিখছি তো..”

-“সে তো দেখতেই পারছি।”

তো দেখ না!শয়তান ছেলে!এই ভালো তো এই খারাপ।আমার মনে হয় মাঝে মধ্যে ভুলে যায় যে তার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে।তাই ভুলে একটু ভালো বিহেভিয়ার করে ফেলে।আমার ভাবনার মাঝেই উনি খাতাটা টেনে নিয়ে বললেন,

-“অনেক লিখেছো।এখন রাখো।”

-“স্যার আরেকটু…”

-“নোপ!”

উনি আমাকে সুযোগই দিলেন না আর।আমিও কলম বন্ধ করে মুড অফ করে বসে রইলাম।উনি আড়চোখে একবার তাকিয়ে বললেন,

-“সব গুছাচ্ছো না কেন!”

-“করছি…”

বলেই আমি বই গোছাতে লাগলাম।আম্মু এসে চা- নাস্তা দিয়ে বললো,

-“রোদ্দুর কাল কিন্তু তোমার আসতে হবে।”

রোদ্দুর স্যার আমার দিকে একবার তাকিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“অতসীর বার্থডে?”

আমি চমকে উঠে তাকালাম। উনি কি করে জানলেন?আম্মুও আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

-“ওমা হ্যা তাই তো।তুমি কি করে জানলে?”(হালকা হেসে)

উনি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকালেন।আমি কিছু বুঝলামই না।পরক্ষণেই ভাবলাম যে হতে পারে উনি আমার ফেসবুকে দেখেছেন জন্মদিনের ডেট।ভেবেই আর বিষয়টাকে পাত্তা দিলাম না।আম্মু উত্তর না পেয়ে বললেন,

-“সে যাই হোক।তোমাকে কিন্তু আসতে হবে।”

-“কখন আসব?”

-“এই তো সন্ধ্যায়।খেয়ে-দেয়ে যাবে।”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“এই বুড়ির আবার বার্থডে করতে হয়!”

-“আমি মোটেও বুড়ি না।”

আমাদের কথায় আম্মু হাসতে হাসতে বললো,

-“আরে ও তো আমাদের বড় মেয়ে।যতই বড় হোক,প্রথম সন্তান।তাই ওর জন্মদিন আমরা প্রতি বছরই পালন করি।ছোটখাটো করে।”

-“ওহ আচ্ছা। ”

আমি মুখ ফুলিয়ে রইলাম।রোদ্দুর স্যার আমার দিকেই তাকিয়ে। আম্মু আবার বললেন,

-“তাহলে কালকে চলে এসো।কেমন?”

আমিও উত্তরের আশায় তাকালাম।জানি না কেন জানতে ইচ্ছে হচ্ছে.. উনি কি সত্যিই আসবেন?নিশ্চয় আসবেন।আমার ভাবনাটা পাল্টে দিয়ে উনি বললেন,

-“না আমার কালকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।আমাকে একবার ঢাকা যেতে হবে।”

মনে হলো আমার মনে কালো মেঘ জমে যাচ্ছে। এই বুঝি চোখ থেকে পানি পড়লো। কেন যে এত খারাপ লাগলো শুনে।আম্মু অবাক হয়ে বললো,

-“সে কি!তুমি আসবে না?”

আমিও তাকালাম ওনার দিকে।স্থির চোখে।উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন,

-“না আন্টি।আমার কালকে আসলেই দরকারি কাজ আছে।”

বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন।আমিও দাঁড়ালাম । তবে মাথা নিচু করে আছি।আম্মু বললো,

-“আসলে ভালো লাগতো!”

-“সরি আন্টি।নেক্সট টাইম।”

-“আচ্ছা সমস্যা নেই। মানুষের প্রবলেম থাকতেই পারে।”

আম্মু চলে গেলো।আমি ওনার দিকে তাকাচ্ছি না।তবে বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকেই তাকিয়ে।

-“কি হলো তোমার আবার?”

-“কিছু না!”

-“মনে হচ্ছে! ”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসলাম।বুঝতে দেয়া চলবে না যে আমার কেমন লাগছে।উনি হেসে বললেন,

-“এনজয়!”

-“হুমম!”

উনি দরজার দিকে যেতেই আমি বিছানায় শুয়ে কম্বল টেনে দিলাম। জানি না রুম থেকে বের হয়েছে কিনা।হয়ত হয়েছে! আমার কি!বার্থডেতে আসবে না আবার ঢং।যা ইচ্ছে করুক।
আমি চোখ বন্ধ করতেই কেমন যেন লাগতে শুরু হলো।মনটা কেমন বিষাদ লাগছে।আমার এমন একটা স্পেশাল দিনে উনি কেন আসবেন না?ওনার গার্লফ্রেন্ড না করেছে?হয়ত!কিন্তু তাতে আমার কি!
আমি নিজেকে বুঝাতে লাগলাম যে উনি শুধু আমার স্যার।আর আমি ওনার স্টুডেন্ট। আমাকে এটা মেনে নিতেই হবে।উনি না ই আসতে পারেন।এতে আমার কিছু না।কিচ্ছু না!!

রাত ১০ টায় ফোন নিয়ে বসে বসে রিলস দেখতে লাগলাম।অপেক্ষা করতে লাগলাম ১২ টা বাজার।আসলে এই জন্মদিনের দিনটাতেই বোঝা যায় যে কে কাকে ঠিক কতটা মনে রাখে।কতটা প্রায়োরিটি দেয়।
আমার হাজারো ভাবনার মাঝেই মেসেজ এলো হঠাৎ টিনার।ওপেন করতেই দেখি বলছে,

-“হ্যাপি বার্থডে দোস্ত!”

এই মহারাণীও আসবে না।আর ঢং করে উইশ করা হচ্ছে! লাগব না তোর উইশ।তাও আবার ১০ টায়।আমি রেগে বললাম,

-“এখন ক’টা বাজে?”

-“১০ টা।আরে দোস্ত এদিকে নেটওয়ার্ক নাই।পরে যদি উইশ না করতে পারি।তাই এখনই করে দিলাম।”

-“না করতে পারলে নাই।আসবি না আবার উইশ কিসের।”

-“আরে মন খারাপ করিস না প্লিজ।আমার খুব বেশি দরকার না থাকলে তো আর এমন করতাম না বল!”

-“হুম ঠিক আছে। তাই বলে তুই আমাকে এত জলদী মায়ের পেট থেকে বের করে ফেলছিস!”

-“মানে?”

-“মানে রাত ১০:৩০ মিনিটে তুই আমাকে বার্থডে উইশ করে আমাকে মায়ের পেট থেকে বার্থডের ১.৩০ ঘন্টা আগেই বের করে ফেলছিস।নিজের ডাক্তারি সত্তাকে এখানেই প্রয়োগ করবি তাহলে ফিউচারে করবি কি?”

-“দোস্ত তোর কথা না আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে! ”

আমি কিছু সময় নিজের মাথা চাপড়ালাম।কার সাথে মজা করছি আমি ভাই! এ তো মজাই বুঝে না।আমি তেতে উঠে বললাম,

-“যা তো তুই!”

-“কি জানি বাবা।আচ্ছা শোন,তুই ধীরে সুস্থে বের হ!”

-“কই থেকে?”

-“ওইযে আন্টির পেট থেকে!”

-“তুই গেলি এন্তে!!”

টিনা কয়েকটা উল্টা পাল্টা ইমুজি দিয়ে অফলাইন হয়ে গেলো।সাথে আমারে একটু বিনোদন দিলো আরকি।শয়তান মেয়ে।এর সাথে ফাজলামো করতে করতেই ১১ টা বেজে গেলো।হঠাৎ দেখলাম স্যার নক করলো,

-“কি ব্যাপার বার্থডে গার্ল!”

প্রথমে ভাবলাম উত্তর দিবো না।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম যে যদি বেয়াদব ভাবে।থাক দিয়েই দিই।

-“জ্বী স্যার?”

-“কি করছো?”

-“কিছু না স্যার।এমনি।”

-“শোনো..”

-“জ্বী স্যার?”

হঠাৎ আমার ফোনে কল এলো।ওমা!এ তো দেখি এই রাম গরুরের ছানা। আমি কলটা ধরে কানে দিতেই বললো,

-“হ্যাপি বার্থডে অতসী।”

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১ টা ১৫।এই লোকেও দেখি আমাকে এত তাড়াতাড়ি বের করছে।উনি আবার বললেন,

-“জীবনে সফল হও।বড় কিছু হও।ভালো একজন মানুষ হও এটাই আমার চাওয়া।সবসময় নিজের দায়িত্ব পালন করবে।কখনো পিছুপা হবে না।সবার সাথে থাকবে।সত্যের সাথে থাকবে।দেখবে তোমার জিত কেউ আটকাতে পারবে না।আর তোমার এই জন্মদিনে উপদেশের মত সুন্দর জিনিসটাই তোমাকে আমি উপহার হিসাবে দিলাম।”

-“থ্যাংক ইউ স্যার।”

-“ইউ আর ওয়েলকাম।”

-“আসবি না আবার ঢং করে জ্ঞান দিচ্ছিস!”(মনে মনে)

-“শোনো কালকে কি রঙের শাড়ি পড়বে?”

-“গোলাপি!কেন?”

-“নীল পড়লে ভালো লাগবে।”

-“থ্যাংক ইউ বাট আমি গোলাপিই পড়ব।”

-“আচ্ছাহ!”

-“হুম!”

-“ওকে টাটা!”

বলেই উনি কল কেটে দিলেন।কি আজব পাবলিক রে ভাই!এত জলদী জলদী উইশ কেন করছে সবাই।ভালো লাগে না ধ্যাত।১২ টায় উইশ পাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে।আনন্দ আছে।আমিও দেখতে চাই যে ঠিক ১২ টা ১ এ কে আমাকে উইশ করে।আর এই স্যারটাও না!কিসব জ্ঞান দিলো।অবশ্য স্যারেরা সবসময় জ্ঞানই দেয়।আর এমন বদমেজাজি হলে তো কথাই নেই!আস্ত গম্ভীর ষাঁড়!

সকাল থেকে আমার মুখ ভার।আমার বার্থডে টা এবার সবচেয়ে জঘন্য। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আসবে না।আবার ওই হনুমান টাও আসবে না।যতই মুখে বলি যে আমার কিছু না।তাও আমার মনটা কেমন অশান্ত।ভালো লাগছে না কিছুই।
চারিদিকে আয়োজন চলছে।বাসায় গেস্ট আসবে তো।
আমার এসব কিছুই ভালো লাগছে না।আমার মতে জন্মদিনে একটু সাজুগুজু করে ছবিটবি তুলব।তা না! কিসব দাওয়াত টাওয়াত দিয়ে রাখছে।আমার বিয়ে নাকি!
তাও এবার ছোটখাটো করেই সব হচ্ছে। আমাদের বাসার মানুষরাই। কিন্তু তবুও অনেক পদ রান্না।তাই মহিলা পার্টি আজ অনেক ব্যস্ত রান্নাঘরে।
আমি গিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে টেবিলে বসতে বসতে বললাম,

-“নাস্তা প্লিজ!”

দাদী আমার সামনে চা-রুটি দিতে দিতে বললো,

-“একটু নিয়ে তো খাইতে পারোস!”

-“এত পারুম না!”

দাদী আমার মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে চলে গেলো।
সারাদিন এভাবেই কেটে গেলো।বিকালে ভাবলাম যে একটু সাজা যাক।গেলাপি রঙের শাড়িটায় হাত দিয়েও কি ভেবে নীল রঙের একটা শাড়ি পড়লাম।
হালকা সাজুগুজু করে কয়েকটা পিক তুলে নিলাম।কিন্তু মন ভালো হচ্ছে না কিছুতেই।সায়ন্তিও এসেছে। ওর সাথেও ছবি তুললাম।তাও মন ভালো হচ্ছে না।কোথাও একটা মন খারাপি রয়েই গেছে। টুক করে একটা স্টোরি দিলাম,

-“আজকের দিনটা না এলেও পারত!বাজে জন্মদিন!”

টিনাকে কল করে কথা বললাম।রাত ৮ টায় আমি এলোমেলো ভঙিতে ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে আছি।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।
এমন সময় কে এলো!আম্মু আর কারে দাওয়াত দিলো?
আমি শাড়ি ঠিক করে দরজা খুলতেই চক্ষু চরখগাছ! এটা কে?

চলবে…