#প্রিয়—রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৩
আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে।হাতে ইয়া বড় ফুলের তোড়া আর গিফট বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর স্যার।সাথে মিষ্টির বক্সও আছে মেবি।আরো কি কি আনছে বলা যাচ্ছে না।পরণে নীল রঙের শার্ট আর জিন্স।আবারো সেই পুরনো পারফিউমের ঘ্রাণ।এমন নায়ক নায়ক লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উনি।
কই একটু মিষ্টি কথা বলবে তা না বলে উনি বলে উঠলেন,
-“সামনে থেকে সরো।কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি!”
আমি যেন নিজের মধ্যে ফিরে এলাম।দরজা থেকে সরে যেতে যেতে বললাম,
-“আপনি নাকি আসবেন না?”
উনি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কিছু বলবেন তার আগেই দাদী আর আম্মু ছুটে এলো।সাথে এলো ফুপিও।দাদী অবাক হয়ে বলতে লাগলো,
-“তুমি নাকি আজ আসবে না।তাহলে?”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।আমি এখনো আশ্চর্য হয়ে আছি।কি হচ্ছে আমি বুঝতেই পারছি না।নিজেই বললো যে আসবে না আবার নিজেই এলো।হচ্ছে টা কি?উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“সারপ্রাইজ দিলাম!”
আম্মু মুচকি হেসে বললেন,
-“ভালো করেছো।বসো!”
স্যার আমার হাতে ফুলের তোড়া আর গিফটটা দিয়ে বললেন,
-“তোমার জন্য! ”
আমি হালকা হেসে বললাম,
-“এসবের কি দরকার ছিল?”
-“বেশি কথা বলিও না।দরকার ছিল।”
আমি আর কিছু বললাম না।উনি মিষ্টির প্যাকেটটা আর আরেকটা প্যাকেট থেকে দুটো আইসক্রিম দিয়ে বললেন,
-“এগুলো তোমার।যাও ফ্রিজে রাখো।গলে যাবে।”
আমি আইসক্রিম গুলো শ্রেয়ার হাতে দিলাম।আম্মু মিষ্টির প্যাকেট থেকে মিষ্টি বের করে স্যারকে দিলো।
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। তবে কিছু বলছি না।
আমার সেদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো।সেই ফুচকা খাওয়ার ব্যাপারটা!
হয়ত পারমিশন নিয়ে আসছে এখন বার্থডেতে।কিসের নাকি সারপ্রাইজ! আমি কি কিছু বুঝি না নাকি।
আবার কলিং বেল বাজতেই আম্মু ব্যস্ত গলায় বললো,
-“অতসী তুই রোদ্দুরকে নিয়ে রুমে চলে যা।তোর বাবার কিছু বন্ধুদের দাওয়াত ছিল।এসেছে মনে হয়।”
আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,
-“তো উনি এখানে থাকলে সমস্যা কি!”
আম্মু চোখ রাঙালো।কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ্দুর স্যার বললেন,
-“আমি এখানে থেকে কি করব?তারচেয়ে চলো দেখি তোমার রুমটা কেমন সাজিয়েছ?”
-“রুম সাজাইনি।”
আম্মু রোদ্দুর স্যারের হাতে মিষ্টির প্লেট টা দিতে দিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“নিয়ে যাও।আর বেশি কথা বলতে হবে না।”
আমি মুখ ভেংচি কাটলাম।নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।উনিও আমার পেছন পেছন আসছেন।
রুমের ভিতর ঢুকতেই উনি নিজে নিজেই আমার আগে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন।তারপর আমাকে উপর-নীচ পরখ করে বললেন,
-“তুমি না গোলাপি শাড়ি পড়?”
আমি গোছানো শাড়িটাই ঠিক করতে করতে বললাম,
-“তো?”
-“তো নীল পড়লে যে?”(বড় করে হেসে)
আমি হাতে হাত ভাজ করে অন্যদিকে ফিরে বললাম,
-“আমার ইচ্ছে! ”
উনি উঠে দাঁড়ালেন।আমার দিকে আসতে আসতে বললেন,
-“হুমম..মেডামের ইচ্ছে! ”
আমি ওনার দিকে ফিরতেই উনি আমার মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,
-“তোমার পছন্দের কালো জাম মিষ্টি।”
আমি মিষ্টির জন্য কথাই বলতে পারছি না।মুখভর্তি হয়ে আছে।উনি হেসে বললেন,
-“তোমার জন্য এনেছি, তাই তুমিই আগে খাবা।”
আমি মিষ্টিটা কোনোমতে গিলে বললাম,
-“আপনি এভাবে পুরো মিষ্টিটা মুখে পুড়ে দিলেন কেন?আমার যদি গলায় আটকে যেত?যদি মরে যেতাম?”
-“আমার কি!মরো গা!”
-“কিহহ এত সহজ?আমি মরলে একা মরব কেন?আপনাকে নিয়ে মরব!”
-“এহ!আমি মরব কেন?তুমি মরো গা।”
-“আপনাকে নিয়ে মরব।”
-“বললেই হলো!”
কত্ত বড় সাহস ভাবা যায়!আমার মৃত্যু কামনা করছে।আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম,
-“আপনি ঝগড়া ছাড়া কিছু বুঝেন না তাই না!”
-“আমি ঝগড়া করলাম কোথায়!”
-“আপনিই শুরু করলেন।”(আঙুল তুলে)
-“এইযে দেখো!”
আমি আঙুলটা নামিয়ে নিলাম।চুপচাপ পানির গ্লাস থেকে পানি নিয়ে খেতে খেতে বললাম,
-“আপনাকে দেয়া হয়েছে আপনিই খান।”
উনি আরেকটা মিষ্টি নিজের মুখে দিয়ে বললেন,
-“এইত খাচ্ছি। ”
আমি আড়চোখে দেখছি।একেকসময় একেক ব্যবহার করে কি মজা পায় লোকটা?এই লোকটাকে আমি বুঝতেই পারি না।আমি ওনাকে পানি এগিয়ে দিলাম।
উনি পানি খেয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললেন,
-“টিভির রিমোট টা একটু দেও।”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। রোদ্দুর স্যার টিভির রিমোট চাইছে!যে কিনা সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে।
আমি টিভির রিমোট টা এগিয়ে দিলাম।উনি আমার বিছানা থেকে একটা বালিশ নিজের কোলে নিলেন।আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
-“আরে এটা তো আমার বালিশ!”
উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
-“তো?”
-“মানেটা কি!আমার বালিশে আপনি..”
-“খেয়ে ফেলছি না।সরো টিভির সামনে থেকে।”
বলেই আমাকে সরিয়ে দিয়ে উনি আমার বালিশ কোলে নিয়ে দিব্যি টিভি দেখতে লাগলেন।
আমি আর কি করব!বের হয়ে এলাম রুম থেকে।
ড্রয়িং রুমে এসে দেখলাম আম্মু আব্বুর বন্ধুদের কে বিদায় দিচ্ছে। হয়ত খাওয়া-দাওয়া শেষ।আমি তাদেরকে সালাম দিলাম।ওনারা আমাকে গিফট দিয়ে দোয়া করে চলে গেলেন।
আমি আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম,
-“এখন স্যারকেও খাবার দিয়ে বিদায় দিয়ে দাও।”
-“এই চুপ!এভাবে বলতে হয় না।কিসের বিদায় করো!”
আমি চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,
-“১০ টা বাজতিছে!”
-“তাতে কি?”
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ফুপি হঠাৎ আমার সামনে একটা ট্রে এনে বললো,
-“টানটানাআআআ!”
ট্রের মধ্যে কেক দেখে আমি বললাম,
-“আরে ফুপি আবার কেক কেন?”
সায়ন্তি আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আরে আজ তোর জন্মদিন আর কেক কাটবি না?”
-“আল্লাহ! এত বড় হইছি এখনও কেক কাটব?”
ফুপি আমার গাল টেনে বললো,
-“কি বড় হইছস!আমাদের কাছে আমাদের বাচ্চারা সেই ছোটই।এবার কেক কাটবি!”
আমি কপাল চাপড়ে বললাম,
-“কি যে করো!”
বলতে বলতে আমি কেকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেলো রোদ্দুর স্যার।আমি একবার তাকালাম ওনার দিকে।উনি মিষ্টি হেসে তাকিয়ে আছেন।
আমি কেক কাটতেই সবাই উইশ করতে লাগল।
আমি কেক কেটে কার মুখে দিব বুঝতে পারছি না।শেষে ভাবলাম নিজেই খেয়ে নি তখনই দাদী বললো,
-“তোর স্যারকে দে!পাশে দাঁড়িয়ে তো।”
আমি দিতে না চাইলেও সবার জোরাজোরিতে দিলাম।উনিও একটু ভেঙে আমার মুখে দিলেন।ওনার আধখাওয়া কেকটা আমার হাতে।আম্মু বললো,
-“এবার শ্রেয়াকে দে।”
আমি শ্রেয়াকে দিতে গেলে ও আমার হাত ধরে আমার মুখেি ঢুকিয়ে দিলো। আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো এটা ভেবে যে রোদ্দুর স্যারের আধখাওয়া কেকটা আমার মুখে।শেষমেশ গিলেই নিলাম।স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।এই দৃষ্টির মানে আমি জানি না।
কেক খাওয়ার পর সবাই মিলে নাচ-গানের আয়োজন বসিয়ে দিলো।কিন্তু বড়রা নেই।সবার খাওয়া-দাওয়ার পার্টও শেষ।আম্মু, দাদী,ফুপি সবাই রেস্ট নিতে চলে গেছে। আব্বু,দাদাও ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই।
আমি সোফায় বসে আছি।বারবার মুখে হাত চলে যাচ্ছে।
আল্লাহ!এটা কি হয়ে গেলো।শ্রেয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।তারমানে ও ইচ্ছে করে এটা করেছে।
পাগল নাকি ও!
সবাই মিলে নাচছে।আমার কাজিনরা সব একসাথে হয়েছি আরকি।এখানে আমার বয়সী সবাই আবার ছোট-বড়ও আছে।মোট মিলে ৭-৮ জন আমরা।আমার পাশে বসে আছে রোদ্দুর স্যার।আমি আড়চোখে তাকাচ্ছি বারবার।আর অনুভব করছি যে উনিও আমাকেই দেখছেন।হঠাৎ উনি আস্তে করে বললেন,
-“তোমায় দেয়া গিফটটা এখন খুলবে না।”
-“কেন?”
-“আমি বলেছি তাই।”
-“কিন্তু কেন?”
-“সেটা খুললেই বুঝতে পারবে।কিন্তু সবার সামনে খুলবে না।”
-“কিন্তু কেন স্যার?”
-“আবার কিন্তু কেন!!বলেছি তাই।আর তোমার যদি গিফটগুলো দেখে মনে হয় যে সেটা সবাইকে দেখানোর মত তাহলে দেখাবা।”
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই শ্রেয়া আমার হাত টেনে সোফা থেকে উঠিয়ে দিলো।তারপর সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“তাহলে এবার আমাদের সামনে নাচবে আমাদের বার্থডে গার্ল অতসী!”
বলতেই সবাই হাততালি দিতে লাগলো।আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম,
-“আমি নাচব না।”
বলে বসতে নিলেই সায়ন্তি আমাকে জোর করে আগের জায়গায় ধাক্কা দিয়ে বললো,
-” নো নো ডান্সিং কুইন।আজ নাচতেই হবে।নাচো নাচো।”
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। কি নাচব বুঝতেই পারছি না।তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাৎ ‘Rang de tu mohe Garua’
গানটা বাজতে লাগলো।আমি মুখ তুলে তাকালাম।এই গানে কি আমি একা নাচতে পারব নাকি?
আমি অবাক হয়ে তাকাতেই দেখলাম রোদ্দুর স্যার অদ্ভুত হাসি হেসে আমার সামনে।
আমি আশেপাশে দেখতে লাগলাম।
উনি আমার পিছন দিয়ে এসে আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেলেন।আমার হাত ধরলেন।আমি বিস্ময় নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে। উনি আমার হাত টেনে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।
এদিকে গান বাজছে..
Dhoop se nikal ke
Chhaanv se phisal ke
Hum mile jahaan par
Lamha tham gaya
আমি আশেপাশে তাকিয়ে আর না ভেবে রেসপন্স করে ডান্সের স্টেপ দিলাম,
Aasmaan pighal ke
Sheeshe mein dhal ke
Jam gaya to tera
Chehra ban gaya
একসময় ওনার হাত শাড়ির ওপর থেকে আমার কোমড়ে এসে পড়লো।আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম।চোখ বন্ধ করে নিলাম। সে আমায় কন্ট্রোল করে নাচাচ্ছে,
Duniya bhula ke tumse mila hoon
Nikli hai dil se ye duaa
Rang de tu mohe Gerua
Ranjhe ki dil se hai duaa
Rang de tu mohe gerua
উনি আমাকে নাচাচ্ছেন আর আমি নাচছি।কি হচ্ছে কেন হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।কিন্তু সবাই বেশ এনজয় করছে যেটা তাদের চেচামেচি তে বোঝা যাচ্ছে।
এদিকে আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।
আমি কিনা রোদ্দুর স্যারের সাথে নাচছি!
এও হওয়ার ছিল?আর কি কি দেখতে হবে আমার?
এটা কেমন অনুভূতির সাক্ষী হচ্ছি আমি?
এই অনুভূতির রেশ থাকবে তো?নাকি ক্ষাণিকের অতিথি?
চলবে…
(ভুলক্রুটি মার্জনীয়!অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ভুল হলে সুশীল ভাষায় ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ ❤️)