#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৪
-“কিরে অতসী নাচ!”
সায়ন্তির এমন কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম আমি।সামনে তাকিয়ে দেখি রোদ্দুর স্যার তো নিজের মতই বসে।আর টিভিতে garua গানটা বাজছে।তারমানে এতক্ষণ আমি কল্পনায় ডুবে ছিলাম!তাও রোদ্দুর স্যারের সাথে!আল্লাহ মাফ করুক।
আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে রোদ্দুর স্যার বললেন,
-“এই পেত্নী আবার কি নাচবে।”
আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ ফুলে বসে রইলান।কারণ সেদিন নিজেই নাচ নিয়ে খোচা মারছিল।এরপর আমি প্রতিজ্ঞা করছিলাম যে কোনোদিন তার সামনে নাচব না।
।
আমার জন্মদিন শেষ হওয়ার পর প্রায় তিনদিন দেখা মেলেনি রোদ্দুর স্যারের।কই ছিল কে জানে!
আমি একবার অবশ্য কল দিয়েছিলাম।উনি জানিয়েছিলেন যে উনি একটা কাজে শহরের বাহিরে গিয়েছেন।তাই আমিও আর কিছু বলিনি।
আজ যখন আমি নিজের রুমে বসে বসে কাপড় ভাজ করছিলাম ঠিক তখনই রোদ্দুর স্যারের উদয় হলো।
আমি তখনো তাকে দেখিনি।উনি দরজার কাছে এসে কাশি দিয়ে বললেন,
-“অতসী?”
আমি চমকে উঠলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সময় তখন ৪ টা।এত জলদী ইনি এখানে কেন সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।তবুও কাপড় গুলো রেখে টেবিলে বসতে বসতে বললাম,
-“আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি আজ এত তাড়াতাড়ি? ”
উনিও চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,
-“হুম ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
আমার প্রশ্নের উত্তর টা উনি দিলেন না।তবুও আমি কৌতূহল নিয়ে তাকিয়েই রইলাম।তখনও আমি উত্তর না পেয়ে আর কোনো কথা বলিনি।
উনি পড়ানো শেষে চলে গেলেন।এক কাপ চা ও মুখে দিলেন না।কি হলো কিছুই না বুঝতে পারা আমি তখন নিজের মত করে আবারো ঘরের ড্রেসিংটেবিল গোছাতে লাগলাম।
আসলে আমি সময় পেলেই নিজের রুম গোছাতে পছন্দ করি।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু রোদ্দুর স্যারের বিহেভিয়ার টা আজ আমার কাছে এতটাও সুবিধার মনে হয়নি।এরকম তো উনি কখনো করেন না।একসময় করতেন।কিন্তু তাই বলে আজ আবার এমন করবেন ভাবা যাচ্ছে না।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার হাত পড়লো একজোড়া ঝুমকার উপর।এটা সেদিন আমাকে রোদ্দুর স্যার দিয়েছিলো।সেই গিফটের প্যাকেটে ছিলো।আরোও ছিলো চুরি,কাজল এমন অনেককিছুই।
আমি হালকা হেসে সেগুলো আবার মুছে সযত্নে রেখে দিলাম।ফুপি রুমে নক করতেই আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
-“কিরে কি করিস!”
আমি মুছনিটা রেখে বললাম,
-“কিছু না ফুপি ওইত টুকটাক মোছামুছি।”
ফুপি আমার বিছানায় বসে বললো,
-“তোর মত বউমাই তো সবাই চায় রে মেয়ে!সারাদিন শুধু ঘর গুছাবি।”
আমি ততক্ষণে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছি।ওয়াশরুম থেকে এমন কথা শুনে বের হতে হতে বললাম,
-“মোটেও না ফুপি।তুমি এমন চাও বলে পুরো শ্বাশুড়ি জাতিকে এমন বলতে পারো না।”
-“বাহ রে!চাইলে চাইলাম।বউমা ঘর গোছাবে,সংসার সামলাবে এমন সবাই চায়।”
আমি ফুপির পাশে বসে বললাম,
-“তা তুমি তোমার ছেলের জন্য কেমন মেয়ে চাও?”
ফুপি আমার গাল টেনে বললো,
-“এইযে তোর মত।যাকে কাজের কথা বলতে হবে না।”
-“তাই বলে তোমার বিদেশ ফেরত ছেলের সাথে আমার মত!তোমার ছেলে পালাবে দেখো!”
বলেই আমি হাসতে লাগলাম।ফুপি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“ফুপির সাথে মজা নিচ্ছিস?শোন,আমার ছেলের এত অহংকার নেই।”
-“কিন্তু তোমার ছেলে ভীষণ শয়তান।আমাকে শুধু ক্ষেপায়!”
-“এটা তো তোদের ছোট থেকেই কাহিনী।এতদিন বিদেশে ছিল।এবার এলে নাহয় ভালোমত বেঁধে রাখবি।”(হেসে)
-“মানে?”(হাসিটা মিলিয়ে গেল)
-“মানে বেঁধে পিটাবি আরকি!”
ফুপির কথা শুনে আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম,
-“কি গো তুমি!মা হয়ে ছেলেকে পিটাতে বলছো!”
-“তুই আবার সিরিয়াসলি নিস না!”
-“আচ্ছা নিলাম না!”
বলে আবারো হাসলাম।ফুপির হঠাৎ কল আসতেই চলে গেলো।আমার হাসিটা আবার মিলিয়ে গেল।
আগের মত মন খারাপিটা রয়ে গেল।
জানি না কেন আজ মনটা আমার ভীষণ খারাপ।কিছুতেই মন ভালো হচ্ছে না।
একটু শাড়ি পড়ব?
যেই ভাবা সেই কাজ।নীল রঙের শাড়ি পড়লাম আবারো।জুয়েলারি বক্স খুলতেই রোদ্দুর স্যারের দেয়া নীল চুড়ি আর ঝুমকাগুলো চোখে পড়লো।
সেগুলোই পড়লাম।
হালকা সাজলাম।ভাবছি কাকে দেখাবো।কয়েকটা ছবি তুলে স্টোরি দিলাম।কাকে দেখাব ভাবতে ভাবতে টিনাকে ভিডিও কল দিয়ে বসলাম।
কল রিসিভ করে প্রতিবারের মত এবারের ঢং করে বললো,
-“আল্লাহ দোস্ত! তোকে কত সুন্দর লাগছে!”
-“থ্যাংকস দোস্ত!তোকেও একদম বান্দর লাগছে!”
টিনার হাসিটা মিলিয়ে গেলো।মুখ ভেংচি কেটে বললো,
-“সত্যি কথা বললে বুঝি কেউ এমন করে!”
-“বাজে না বকে কাজের কথা বল।”
-“কিসের?”
-“কবে ফিরছিস?”
-“আজ রাতে! ”
-“আচ্ছা ভালোভাবে আয়।”
টিনা কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো,
-“তোর ঝুমকাগুলো তো অনেক সুন্দর! কে দিলো?”
-“রোদ্দুর স্যার!”
-“আমার ক্রাশে তোরে গিফট দেয় কেন?”
বলেই নাকিকান্না কাঁদতে লাগল।আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
-“সেটা আমি কেমনে বলবো।জন্মদিনে দিয়েছে!”
-“ওহ তাই বল।”
-“হুম।হঠাৎ হঠাৎ ভালো হয়ে যায় আরকি।”
-“কেন আবার কি করলো?”
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আম্মু খেতে ডাকতে এলো।আমি আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না কথাটাকে সেখানেই ধামাচাপা দিয়ে কল কেটে শাড়ি পাল্টে জামা পড়লাম।
খাওয়া-দাওয়ার পর ফোনটা হাতে নিতেই দেখি রোদ্দুর স্যার বলছেন,
-“চুড়িগুলো তো অনেক সুন্দর কে দিলো?”
আমি ওনার কথা শুনে অবাকের শীর্ষে।নিজে দিয়ে নিজেই ভাব নেয়া হচ্ছে।
-“দিছে একজন।আপনার কি!”
-“আমার আবার কি হবে।জিজ্ঞেস করলাম!”
-“নিজে দিয়ে নিজেই এত নাটক করছেব কেন?”
-“নাটক মানে!তুমি এমব ব্যবহার কেন করছো আমার সাথে।ভুলে যেওনা আমি তোমার টিচার।”
আমার হাত থেমে গেল।এর আবার কি হলো হঠাৎ আমি কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলাম,
-“সরি স্যার!”
-“হুম ইটস ওকে।কালকে ৬ টায় আসব।আল্লাহ হাফেজ।”
-“জ্বী!”
বলে আমি বের হয়ে এলাম।এসব কি ছিল!এর কি হলো আবার।নাকি গার্লফ্রেন্ড আবার চিমটি দিলো।
কি জানি বাবা!আমার কি!
ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলাম আমি।একটা ভালো ঘুমের খুব প্রয়োজন আমার।খুব!!কিন্তু তাও কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না আমি।ঘুরেফিরে মনে একটা প্রশ্নই আসছে যে রোদ্দুর স্যারের এমন বিহেভিয়ার করার মানেটা কি।
ফেমেলি প্রবলেম? আচ্ছা অন্য বিষয়ও তো হতে পারে। তাই উনি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছেন।আমার ওনার বলা সেদিনের কথাটা কানে বাজতে লাগলো।জন্মদিনের রাতে বাসায় যাওয়ার সময় উনি বলেছিলেন,
-“তোমার নিজের জন্য ভাবতে হবে অতসী!”
-“জ্বী স্যার??”
-“হ্যা অতসী।তোমার নিজের জন্য ভাবতে হবে।আমার জন্য কারোর ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না।”
ওনার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম,
-“আপনার জন্য কার ক্ষতি হবে স্যার?”
-“না কিছু না।শোনো,ভালোভাবে পড়াশোনা করো।নিজের জিনিস কেউ নষ্ট হতে দেয় না।”
-“কি বলছেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ”
-“না কিছু না।আসছি।টাটা।”
বলেই উনি চলে গেলেন।সেদিন যাওয়ার পথে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন।আমি বিষয়টাকে নিয়ে কিছু সময় ভেবে আর পাত্তা না দিয়ে যখন পিছনে ফিরলাম তখন দরজার কাছে দাদীকে দেখতে পেলাম।আমাকে দেখেই দাদী হাসার চেষ্টা করে বলল,
-“তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যা।১২:৩০ বাজে।”
-“হুম যাচ্ছি। তুমি এখানে?”
-“ওইত তোর স্যারের সাথে একটু কথা ছিল।”
-“ওহ হয়ে গেছে? ”
-“হ্যা যাই রে!”
সেদিনের পর কথাগুলো আমি এতটা পাত্তা না,দিলেও আজ কেন জানি না কথাগুলো আবার মাথায় এলো।এই কথাগুলো কি উনি আসলেই এমনিই বলেছিলেন নাকি এগুলোর মাঝে কোনো সূত্র রয়েছে। কি বলতে চেয়েছিলেন উনি?
।
জানালার পর্দা গুলো সরাতেই সকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়লো রোদ্দুর স্যারের মুখে।ওনার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো।
আমি হালকা হাসলাম।শাড়ির আঁচল কোমড়ে বেঁধে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-“আর কত ঘুমাবেন?১০ টা তো বাজে।”
উনি নিজের চোখের উপর হাত দিয়ে আলো ঢাকার চেষ্টা করে ঘুম ঘুম গলায় বললেন,
-“অতসী যাও তো।প্লিজ ঘুমাতে দাও।”
আমি চাদরটা ভাজ করছিলাম।একটা কোণার সাথে আরেকটা কোণা লাগিয়ে বললাম,
-“আপনার না ভার্সিটি আছে?যাবেন না?”
উনি এবার পিটপিট করে তাকালেন।কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমার হাত টেনে নিজের উপর ফেলে দিলেন।আমার চুলগুলো ওনার মুখে আছড়ে পড়লো।উনি সেগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বললেন,
-“উঠতে মন চাচ্ছে না।”
আমি ওনার বুকে হাত রেখে ওঠার ট্রাই করে বললাম,
-“না চাইলেও উঠতে হবে।”
উনি আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বিছানায় মিশিয়ে বললেন,
-“কেন?না উঠলে কি করবে?”
আমি আমার মাথায় হাত দিয়ে কাঁকড়া টা খুলে ওনার নাকে লাগিয়ে বললাম,
-“এইযে এটা!”
উনি আউচ বলে কাটাটা খুলে বিছানার একপাশে ছুড়ে মারলেন।আমি হো হো করে হাসতে লাগলাম।উনি এবার আমার দু হাত চেপে ধরে বললেন,
-“এবার কি করবে?”
-“ক..কিছুই না।”
-“দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
বলেই উনি আমার দিকে নিজের মুখ বাড়াতেই হঠাৎ কই থেকে শব্দ বাজতে লাগলো।আমি আশেপাশে তাকিয়ে ওনাকে ধাক্কা দিতেই চট করে ঘুমটা ভেঙে গেল।তাকিয়ে দেকি ৫ টার এলার্ম বাজছে।
আমি মাথায় হাত দিয়ে কিছু সময় ভাবলাম।এটা স্বপ্ন ছিল!এটা কেমন স্বপ্ন ছিল ভাই!
ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি আমি।রোদ্দুর স্যার আর আমি!এটা কি ছিল!এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম আমি।
বাহিরে তাকিয়ে দেখি ভোর হচ্ছে। ভোরের স্বপ্ন তো সত্যি হয়।তবে কি!!না না এসব কি ভাবছি আমি!
ভেবেই তওবা তওবা করলাম গালে হাত দিয়ে।
ছি ছি ওনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে।আর ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়,এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না।এটা শুধু একটা স্বপ্ন অতসী।ভুলে যা!ভেবেই আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবারো ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।কি যে হয়েছে আমার!সেদিনও নাচের সেই বাজেরকম কল্পনা টা এসেছিল।আজ আবার স্বপ্ন! চারিদিকে রোদ্দুর আর রোদ্দুর!।এমন স্বপ্ন আর না আসুক।না আসুক!
চলবে…..