#প্রিয়—রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৭
-“চাঁদনী!”
আমি খুশি হয়ে কি বলবো বুঝতে পারছি না। সে স্যারের হাতটা আমার হাতের উপর থেকে সরিয়ে আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ওহ মাই পিচ্চি বউ,আই মিসড ইউ।”
আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-“আই অলসো মিসড ইউ দ্বীপ!”
ও আমাকে ছেড়ে বললো,
-“কেমন আছিস বল!”
-“আমি তো বিন্দাস।তুই?আরে তোর তো কোনো খবরই নেই।”
ও আমার নাক টেনে বললো,
-“ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দিব।তাই তো আম্মুকে বললাম তোদের বাসায় আসতে।”
-“ও ফুপি তারমানে এই সারপ্রাইজের কথাই বলছিলো!”
দ্বীপ আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-“হ্যা রে বুদ্ধু রাম। কিরে,তুই তো সেই বোঁচাই রয়ে গেলি।নাকটা আর খাড়া হলো না।”
-“একদম বাজে বকবি না।এসেই আমাকে ক্ষেপানো হচ্ছে, না!”
-“নো,আমি বাজে বকছি না।আজ থেকে আমি এখানে থাকব কিছুদিন। তারপর বাসায় যাব।বাসায় বাবা নেই।তো বাসায় গিয়ে কি হবে বল।এখানে থাকলে অনেক মজা করতে পারব।”
আমি ওর থাকার কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে গেলাম।ওর হাত ধরে বললাম,
-“রিয়ালি! ”
-“ইয়াহ মাই পিচ্চি বউ।আজ সারারাত আমরা পার্টি করব।”
আমি কিছু বলব তার আগেই রোদ্দুর স্যার হালকা কাশলেন।আমার হুশ এলো যে রোদ্দুর স্যার এখানে।আমি দ্বীপের হাতটা ছেড়ে দিলাম।দ্বীপ স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ইনি কে?”
আমি হেসে বললাম,
-“ইনি তো রা…(জিভে দাঁত কেটে) আব…উনি আমার টিচার।রোদ্দুর স্যার।”
রোদ্দুর স্যার দ্বীপের দিকে কিভাবে যেন তাকালেন।দ্বীপ স্যারের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
-“ওহ নাইস ঠু মিট ইউ।আমি চাঁদনীর কাজিন দ্বীপ।”
উনি হাত মিলালেন।তারপর বললেন,
-“চাঁদনী… ”
দ্বীপ আমার বাহু ধরে নিজের সাথে ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“এইযে,আমার পিচ্চি বউ চাঁদনী। ওর থেকে আমি বয়সে অনেক বড় হলেও আমরা বন্ধুর মতই।বয়সে বড় বলতে ৫-৬ বছরের মত ডিফারেন্স। বাট আমরা বন্ধু। বন্ধু না বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড। ”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।ও আমার গালে হাত দিয়ে বললো,
-“ওর সাথে ছোটবেলা যখন বর-বউ খেলতাম,তখন বর-বউ খেলতে গিয়ে ওকে পিচ্চি বউ বলে ডাকতাম।তখন থেকে এটাই ডাকি।”
রোদ্দুর স্যার আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন।আমার হাসিটা মিলিয়ে গেল।হঠাৎ ফুপি এসে বললো,
-“হয়েছে তোর চাঁদনীর সাথে কথা? ”
দ্বীপ ফুপির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“ইয়েস মা।”
-“তাহলে তোর রুমে যা।রোদ্দুর অতসীকে পড়াবে।”
-“আচ্ছা এখন আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। তারপর কথা হবে।বায় চাঁদনী। ”
আমি হাত নাড়িয়ে বায় দিলাম।ফুপি এগিয়ে এসে বললো,
-“রোদ্দুর আজ একটু অল্পই পড়িয়ে নাও। আসলে দুই শয়তান একসাথে হয়েছে তো।তাই আজ দুজন দুজনের পাশ ছাড়বে না।ও ফ্রেশ হয়ে এলো বলে।”
রোদ্দুর স্যার কিছু না বলে টেবিলে বসলেন।ফুপি কিছু বললো না।স্যার এমন বিহেভিয়ার কেন করলো?ফুপির কথাটার উত্তর দিলে কি হত?এটিটিউড যত্তসব!
আমি গিয়ে টেবিলে বসলাম।ফুপি চলে গেল।
স্যার এদিকে পড়াচ্ছেন। অথচ আমার মন অন্যদিকে।দ্বীপ এত বছর পর দেশে!ইশশ!আজ আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করব।
স্যারের কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে,
-“মনটা অন্য জায়গায় না রেখে এদিকে দাও।”
-“এদিকেই আছে।”
-“সে তো দেখতেই পারছি।”
-“জ্বী!”
-“মুখে মুখে তর্ক করবে না।”
-“কই তর্ক করলাম!”
-“বেশি সাহস হয়ে গেছে? তোমার জন্য কতটা সময় বরবাদ হলো।”
আমি চুপ করে গেলাম।অনেক্ক্ষণ হওয়ার পরেও উনি আমায় পড়াচ্ছেন। ফুপি বলে গেলো এতে তো আরো আগে ছেড়ে দেয়ার কথা।কিন্তু উনি তো মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে বেশি সময় পড়াচ্ছেন। আমি কিছু বলব তার আগেই হঠাৎ আমার হাত টেনে উঠালো দ্বীপ।আমি অবাক হয়ে বললাম,
-“তুই?”
ও আমার হাত ধরেই বললো,
-“কতদিন বাদে আমি এলাম বলতো।আর তুই কিনা এখানে বসে বসে পড়ছিস।এক ঘন্টা হয়ে গেছে! ”
আমি আড়চোখে রোদ্দুর স্যারের দিকে তাকালাম।রেগে একদম লাল হয়ে গেছে। আমি ঢোক গিলে বললাম,
-“আসলে…”
-“এত কথা নাই চল তো।”
বলেই আমার হাত টেনে নিয়ে য়েতে গেলে রোদ্দুর স্যার শক্ত গলায় বললেন,
-“পড়ার মধ্যে ডিস্টার্ব আমি পছন্দ করি না।”
দ্বীপ দাঁড়িয়ে গেলো।হালকা হেসে বললো,
-“আপনি এক ঘন্টা পড়ান তো?”
রোদ্দুর স্যার ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে তাকালেন।দ্বীপ বলতে লাগল,
-“আপনি এসেছেন ২ ঘন্টা হচ্ছে হয়ত।মামী বললো।আই থিংক আপনার এবার যাওয়া উচিত।”
রোদ্দুর স্যার রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন।তাও দ্বীপের দিকে না।আমার দিকে।আমার তো গলা শুকিয়ে গেছে। আমি দ্বীপকে জোরে চিমটি কেটে বললাম,
-“চুপ হো যা মেরি ভাই!”
দ্বীপ আমার হাতে উল্টো চিমটি কেটে বললো,
-“তুই চুপ কর।আমাদের আড্ডার অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছে। ”
আল্লাহ! এই ছেলে এসব কি বলছে।রোদ্দুর স্যার কিনা সময় নষ্ট করছে তাও আমাদের। এতক্ষণে তো বোম ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার কথা।আমি দ্বীপকে চুপ করিয়ে দিলাম।তারপর বললাম,
-“স..স্যার আজ আর পড়তে হবে না।আগামীকাল পড়ব।”
রোদ্দুর স্যার আমাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
-“আমি তোমার টিচার।আমি যখন বলব তখন তোমার ছুটি।এর আগে নয়।বসে পড়।”
বলেই উনি টেবিলে বসলেন।দ্বীপ তখনো আমার হাত ধরে।ও স্যারকে বললো,
-“কিন্তু… ”
-“প্লিজ মিস্টার দ্বীপ।ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম।”
দ্বীপ কিছু বলবে তার আগেই আমি বললাম,
-“বাদ দে না দ্বীপ। তুই যা আমি আসছি।”
-“কিন্তু চাঁদনী… ”
-“যা তুই।আমি আসছি।”
-“তাড়াতাড়ি আয়।তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি। ”
-“কি?”
-“সারপ্রাইজ। ”
বলেই ও চলে গেলো।আমি টেবিলে বসে গেলাম।রোদ্দুর স্যার নিজের মত অংক করাচ্ছেন। কিন্তু মুড দেখে মনে হচ্ছে চরম রেগে আছে।মনে হয় দ্বীপের বিহেভিয়ারে।কিন্তু উনি এমন করছেন কেন!আমাকে ছেড়ে দিক এখন।আর উনি আমায় দেখতেই পারেন না।তাহলে তো আমাকে আরো আগে ছাড়ার কথা।
ফাইনালি আধাঘন্টা পর পড়ানো শেষ করে উনি বললেন,
-“এখন পড়তে বসবে।অংকগুলো করে রাখবে।”
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম। কিসের অংক করবো!ফুল ইনজয় করব সবার সাথে।কালকে আসতে না করে দিবো।ব্যস হয়ে গেলো।মনে মনে এই ফন্দি এঁটে আমি মুচকি মুচকি হাসলাম।উনি সেটা দেখে বললেন,
-“হাসছো কেন তুমি?”
-“স্যার আমি হাসছি না।”
-“আমি দেখছি তো!”
-“আচ্ছা সরি স্যার।”
-“ডিজগাস্টিং! ”
আমি মুখ ভেংচি কাটলাম।উনি দেখেও কিছু বললেন না।হঠাৎ দ্বীপ আবার ঢুকলো।এবার ওর হাতে চা।
স্যারের সামনে চা টা রেখে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“স্যার চা টা খেয়ে নিবেন। আর আমি ওকে নিয়ে গেলাম।”
স্যার উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন,
-“হোয়াট দা…স্টপ দেয়ার রাইট নাউ।”
দ্বীপের কানে গেলো নাকি জানি না।ও আমায় এনে ড্রইংরুমে বসিয়ে দিলো।
আমাকে এটা ওটা দেখাচ্ছে। এদিকে আমার তো বুক কাপতিছে।রুমে রাক্ষস টা কি করছে কে জানে।
একটু পর দেখলাম বের হলো।
আম্মুকে বললো,
-“আন্টি একটু পানি? ”
আম্মু পানি দিতে দিতে বললো,
-“সেকি!পানি দেয়নি?”
রোদ্দুর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন,
-“দিবে কিভাবে।আজ তো অতসী মহাব্যস্ত!”
আম্মু ওনাকে পানি দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে বললো,
-“পানিটা তো দিবি।নাকি!আমি ভাবলাম ও দিয়েছে। কিছু মনে করো না রোদ্দুর বাবা।”
রোদ্দুর স্যার চেয়ারে বসে পানিটা খেতে গিয়ে বললেন,
-“না না আন্টি কিছু মনে করিনি।”
দ্বীপ হঠাৎ আমার পাশ থেকে বলে উঠলো,
-“তোর গিফটটা দেখবি না?”
আমি এক্সাইটেড হয়ে বললাম,
-“হুম দেখব তো!দেখা।”
ও সবার গিফট সবার হাতে দিয়েছে। ফুপি সেগুলোই দেখাচ্ছিলো।এখন বলতে লাগল,
-“কি গিফট রে! দেখা দেখা।”
দ্বীপ গিফটটা লাগেজ থেকে বের করতে করতে বললো,
-“হুম…স্পেশাল গিফট।”
বলেই একজোড়া নুপুর বের করলো।নুপুরগুলো দেখেই আমার চোখগুলো বড়বড় হয়ে গেলো।এত সুন্দর! আর আমার তো নুপুর পড়তে অনেক ভালো লাগে।ও আমার হাতে দিয়ে বললো,
-“এইযে।”
সবাই হাতে নিয়ে নিয়ে দেখছে আর হাসছে।দ্বীপ বললো,
-“পড়ে দেখা।”
-“আমার পায়ে তো নুপুর। ”
-“হুম সেটা খুলে রাখ।এটা পড়।”
আমি আম্মুর দিকে তাকালাম।আম্মু সায় দিলো।দেখলাম রোদ্দুর স্যার চলে যাচ্ছে। আমি নুপুরগুলো খুলে ফেললাম।নতুনটা পড়ব এমন সময় দ্বীপ নুপুরগুলো নিয়ে বললো,
-“আরে আমি দিয়েছি তুই পড়বি কেন!”
-“মানে?”
-“আমি দিয়েছি আমিই পড়াব।”
বলেই নিচে বসে আমার পা নিয়ে নুপুরগুলো পড়িয়ে দিচ্ছে। আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম রোদ্দুর স্যার সেখানেই দাঁড়িয়ে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ।
উনি চোখ বন্ধ করে খুললেন।তারপর চলে গেলেন।আমি বুঝলাম না ওনার এমন রিয়াকশনের মানে।আমার প্রতি ওনার এত ক্ষোভ যে এমন করছেন!
কি এমন করেছি আমি?যে আমাকে সহ্যই হয় না।
বুঝি না ওনার সমস্যা টা কি!
চলবে…
#প্রিয়—রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৮(বোনাস)
আড্ডা দিতে দিতে রাত ২ টা বেজে গেলো।
ফুপি,দাদী,আম্মু সবাই ঘুমাতে চলে যাচ্ছে। সয়ন্তি,আমি,শ্রেয়া আর দ্বীপ বসে আছি ড্রইংরুমে।
শ্রেয়া একটু পর পর হাই তুলছে।তা দেখে ওকে উদ্দেশ্য করে আমি বললাম,
-“তুই এক কাজ কর।ঘুমাতে চলে যা।আমি আসছি।”
শ্রেয়া হাই তুলতে তুলতে বললো,
-“আচ্ছা যাচ্ছি। ”
ও ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলো।আমি,দ্বীপ আর সায়ন্তি মিলে সেইরকম আড্ডা দিচ্ছি। দ্বীপ হঠাৎ ফোন টিপতে টিপতে বললো,
-“এই অতসী,চল আমরা একটা ছবি তুলি!”
-“এত রাতে?”
-“হুম চল!”
সায়ন্তিও সায় দিলো।কয়েকটা ছবি তুলে সায়ন্তির ফোনটা বেজে উঠল। সায়ন্তি ফোন হাতে নিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
-“আমি যাই রে।আমার কাজ আছে।”
দ্বীপ ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“তোর আবার কিসের কাজ?”
-“ঘ..ঘুম পাচ্ছে! ”
বলেই ছুটে চলে গেলো।আমি দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-“কেসটা কি বলত?”
-“জানি না।আয় ছবি তুলি।”
বলে ও আমাকে টেনে নিয়ে সেলফি নিতে লাগল।
তারপর সোফায় বসে বললো,
-“ছবিগুলো সুন্দর হইছে।ডে দিই।”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
-” নাআআআ!”
-“কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)
আমি কিছুটা নাটক করে বললাম,
-“আমি চাই না এগুলো দেখে তোর মেয়ে বন্ধুরা জ্বলেপুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাক!”
-“কি ঢং রে!শোন,আমার কোনো মেয়ে বন্ধু নেই।”
আমি ওর পাশাপাশি বসে বললাম,
-“হুম হুম জানি জানি।বল না,কেউ আছে?”
-“আরেহ না।”
-“বল প্লিজ!”
-“আরে কেউ নেই।দেখ,তোকে ছবিগুলো পাঠিয়েছি।”
-“কি করতাম?”
-“ডে দিবি।”
-“এতরাতে!”
দ্বীপ শয়তানি হেসে বললো,
-“আজ তবে তোমার ছেলে বন্ধু রা এগুলো দেখে জ্বলবে।তাই ঢং করে আমায় বলছিস!”
-“মোটেও না।আমারো এসব নেই।”
-“তবে দে।”
-“দিচ্ছি!”
বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে ছবি সেভ করছি।বলে তো দিলাম কিন্তু এতরাতে পিক ছাড়লে রাক্ষস টা যদি কালকে এসে আবার প্যানপ্যান করে। অবশ্য সে আসবে কি করে!কালকে তো আমি কল করে আসতে না করে দিবো।আর তাছাড়া আসলেও বা কি।আমার পারসোনাল বিষয়।আমি দিতেই পারি।যত্তসব!
ভেবেই আমি স্টোরি আপলোড করলাম।দ্বীপ সাথে সাথে দেখে বললো,
-“বাহহ!ব্রেভ গার্ল।”
-“বরাবরই!”(ভাব নিয়ে)
-“হয়েছে। এবার ঘুমাতে যা।”
-“হুম তুইও।জার্নি করে এসেছিস।”
দ্বীপকে গুড নাইট জানিয়ে আমি রুমে চলে এলাম।
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুমের দেশে যাচ্ছি এমন সময় আমার ফোনে কল এলো।
এত রাতে কার কল!বিরক্তি নিয়ে দেখলাম টিনার কল।ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই হঠাৎ টিনা বলতে লাগলো,
-“তুই যে স্টোরি দিয়েছিস ছেলেটা কে?”
আমি ঘুম ঘুম গলায় বললাম,
-” দ্বীপ,আর কে?”
-“এটা তোর কাজিনটা না?”
-” হ্যাঁ ওই তো। কেন? ”
-“দোস্ত! তোর কাজিনটা আসলেই অনেক সুন্দর। ”
-“হ্যাঁ তা তো হবেই।আর ও অনেক দিন ধরে বিদেশে ছিল। ”
-“হুম সেটা তো আমি জানি। ”
-“তুই হঠাৎ ওর উপর এত ইন্টারেস্টেড কেন? ”
-“আরে আমার ক্রাশ তো টপকে গেছে এজন্য নতুন পটাতে হবে তাই না? ”
-“এজন্য তুই আমার রাত বিরাতে ঘুম ভাঙাচ্ছিস? ”
-“রাখ তো তোর ঘুম আমার তো ঘুমই উবে গেছে। ”
-“কেন বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিছে তোরে? ”
-“আরে আমার তো বয়ফ্রেন্ডই নাই। দ্বীপকে দেখে আমার ঘুম উড়ে গেছে। ”
-“যত্তসব ন্যাকামি!”
-“ন্যাকামো নারে। সে আছে তো কিছুদিন? ”
-“কিছুদিন না পার্মানেন্টলি ও এদেশেই থাকবে বিয়ে করে এখানে সেটেল হচ্ছে। ”
-“বাহ বাহ!”
-“এখন রাখি বাই। ”
-“আরে শোন অতসী। ”
আমি আর ওর কথা না শুনে ফোনটা কেটে দিলাম। আস্তে আস্তে তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে।
।
বিছানার উপর দাঁড়িয়ে ফ্যান মুছে চলেছি। কাপড়টা বালতিতে রাখলাম। নিচে নামতে যাব এমন সময় শাড়ির কুচিতে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিলাম। আচমকা কোত্থেকে স্যার এসে আমাকে ধরে ফেলল। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। মনে হচ্ছে এই খাটের উপর থেকে পড়লে পা টা আমার ভাঙবে নিশ্চিত। কারণ এই খাট টা অনেক উঁচু। কিন্তু না এবারের মত বেঁচে গেলাম রোদ্দুর স্যার আমাকে ধরে ফেলল। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর আমি তার দিকে। চোখ জোড়া আজ অন্য কথা বলছে। আমি মিন মিন করে বললাম,
-“নামান আমাকে।”
উনি নিম্ন স্বরে বললেন,
-“আজ আর তোমার ছুটি নেই অতসী। আজ আমি তোমায় ছাড়ছি না। ”
-“মানে? ”
উনি আর কিছু না বলে কোলে তুলে নিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে নিয়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছেন আমি বারবার বলছি,
-“নামান আমাকে। ”
উনি শুনলেন না। বাহিরে অনেক মানুষ। পুরো বাসার মানুষ বাহিরে। উনারা সবাই যদি আমাদের এই অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে কি মনে করবে। এটা ভেবে আমার লজ্জায় গাল লাল হয়ে যাচ্ছে।
আমি নামার জন্য ছটফট করছি। উনি তা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-“তুমি কি একটু শান্তভাবে বসবে?”
-“না বসবো না। আপনি নামান আমাকে। ”
-“নামাবো না আজ আমি সব সত্যি বলবোই। আজ আমি যে করেই হোক তোমাকে হারাতে দিব না। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-“আপনার কথার মানে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি নামান আমাকে। বাসার সবাই এভাবে দেখলে অনেক রাগ করবে। আর আপনি আমার স্যার আপনি আমাকে কোলে তুলতে পারেন না।”
-” আমি যদি তোমাকে না বাঁচাতাম তাহলে তুমি পড়ে যেতে অতসী। ”
-“তাই বলে আপনি বারবার আমাকে এটা নিয়ে খোচা দিবেন? ”
উনি কিছু বললেন না। দরজা খুলে বাহিরে যেতে আমি দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম। সবাই দাঁড়িয়ে আছে লজ্জায় আমি চোখ তুলে তাকাতে পারছি না। আমি তাও ছটফট করছি নামার জন্য। কিন্তু উনি আমার নামাচ্ছেন না। উনি কি যেন বলছেন সেটা আমি শুনতে পারছি না। শুধু আম্মুর গলাটা কানে বাজছে,
-“উঠ অতসী।আর কত ঘুমাবি। ”
একি আম্মুর কি মনে হচ্ছে যে আমি কোলের মধ্যে ঘুমাচ্ছি! কি একটা অবস্থা আম্মু তাও আমাকে একই কথা বলছে। এবার রোদ্দুর স্যার আমার দিকে তাকালেন। আমি তখনো চোখ মুখ বন্ধ করে আছি।
হঠাৎ আম্মু এসে আমায় ধাক্কা দিতেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো।আমি লাফ দিয়ে উঠলাম।
এটা স্বপ্ন ছিলো!
আবার এসব স্বপ্ন! আবার রোদ্দুর স্যারকে নিয়ে স্বপ্ন!
আমি ঢোক গিললাম।এটা কেমন স্বপ্ন দেখছি বারবার।এই রোদ্দুর স্যার নামক লোকটা আমার পিছু ছাড়ছেই না।চাইলেও ভুলতে পারছি না। মনের মধ্যে জেকে বসে আছে। অসহ্যকর। আমাকে চিন্তা করতে দেখে আম্মু বলল,
-“কিরে কি ভাবছিস? কলেজে যাবি না? ”
আম্মুর কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। অনেক লেট হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি করে নামতে নামতে বললাম,
-” আম্মু তুমি আমাকে ডাক দিবে না? খুব তো লেট হয়ে গেছে!”
আম্মু আমাকে বলল,
-” তোকে আমি কখন থেকে ডাকছি আর এখন ঢং করা হচ্ছে।”
বলেই ঝাড়ু নিয়ে মারতে আসলো আর আমি ততক্ষণে পগার পার।
।
আম্মু বাসায় নেই। বাজারে গিয়েছে। আর এটাই রোদ্দুর স্যারকে কল করে না করার মোক্ষম সুযোগ। এই ভেবে আমি কল লাগালাম রোদ্দুর স্যারের নাম্বারে। বেশ কিছু সময় পর কল রিসিভ হলো। আমার বুকটা কেমন ধুকধুক ধুকপুক করছে। কারণ আমার চোরামি যদি ধরে ফেলে।
আমি ঢোক গিলে বললাম,
-“আসসালামু আলাইকুম।”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। বলো কি বলবে।”
(গম্ভীর গলায়)
-“ওই তো..আমি..”
-“তাড়াতাড়ি বলো।”
আমি চোখ বন্ধ করে একটু সাহস করলাম।কারণ এই লোক সবসময় আমার চোরামি ধরে ফেলে।তারপর বললাম,
-“স্যার আজকে আসতে হবে না।”
-“কেন?”(অবাক হয়ে)
-“ওইত..আজ আরকি..”
-“কি?”
-“আজ বাসায় অনেক মেহমান তো। তাই পড়া হবে না।”
-“কে বলেছে যে বাসায় মেহমান থাকলে পড়া হয় না?”(দাঁতে দাঁত চেপে)
ব্যস!হয়ে গেলো।আমি তাও বিষয়টা সামাল দিয়ে বললাম,
-“না স্যার,বাসায় মানুষ গিজগিজ করছে।”
-“কেন!কার বিয়ে?”
-“বিয়ে না।এমনি।”
-“নাকি তোমার ওই কাজিন আসছে বলে মিথ্যা বলছো!”
এই রে!বুঝে গেলো।ধ্যাত!এই রাক্ষস দেখি পিছন ছাড়ছেই না।আমি ঢোক গিলে বললাম,
-” না না।সেটা কেন হবে!”
-“যা বোঝার বুঝে গেছি।আসছি আমি।কল রাখো।সময় নষ্ট হচ্ছে! ”
আমি সময় নষ্ট করছি!এত বড় কথা!উনি কি যেন একটা বলতে নিচ্ছিলেন।আমি মুখের উপর কলটা কেটে দিলাম।দেখ কেমন লাগে!
তারপর তড়িঘড়ি করে অংক করতে বসে গেলাম।আজ আমার খবর আছে।প্ল্যান সাকসেসফুল হলো না।
হঠাৎ দ্বীপ এসে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
-“ড্যুড!লেটস গো!”
-“কিসের লেটস গো।দেখিস না অংক করছি?”
-“কিসের অংকটংক।রাখ তো এসব।চল বাহির থেকে ঘুরে আসি।”
-“হ্যা,আর তারপর সে এসে পিটাক।”
-“সে টা কে?”
-“রোদ্দুর স্যার।”
-“ওহহহো!সেএএএ?”
-“তুই যেমন ভাবছিস এমন কিছু না। ”
-“আমি আবার কি ভাববো? আরে তুই তোর স্যারকে এত ভয় কেন পাস বলত!”
-“তুই বুঝবি না।”
-“বললেই বুঝব।”
-“যা তো দ্বীপ। কাজ করছি!”
-“দেখ চাঁদনী! আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি খুব ভালো করেই জানি যে তোর মনে কি চলছে।আমি সব বুঝতে পারি। ”
-“মানে?”
-“তুই নিজ থেকে কিছু শেয়ার না করলে আমি আর তোকে বিরক্ত করব না।তুই তো আর আমায় বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস না।তাই বলবিও না।আসি।”
বলেই ও যেতে নিলো।আমি পিছন থেকে বললাম,
-“আরে এটা কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। তুই যা ভাবছিস তার কিছুই না।”
-“হহম ভালো।”
বলেই ও চলে গেলো।এবার দ্বীপও রাগ করে বসে আছে।ওকে কি এসব বলা ঠিক হবে?
আর রোদ্দুর স্যারের জন্য আমার মনে অনুভূতি আগে ছিল।এখন তো ভোলার ট্রাই করছি।কেন শুধু শুধু আবার মনে করতে যাব!
সে কি আমায় মনে রাখে যে আমি রাখব?তার জন্য আমি মার খেয়েছি। আমি কোনোদিন ভুলব না।কোনোদিন না।
চলবে…