#প্রিয়—রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৯
ছাদে উঠতেই দ্বীপকে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলাম আমি।আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আমি আস্তে আস্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম ওর পিছনে। হালকা কেশে বললাম,
-“কিরে?ছ্যাকা খাইলি?”
দ্বীপ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“কিসের ছ্যাকা।”
-“এইযে যেটার জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড টা মন খারাপ করে বসে আছে।”
দ্বীপ আমার দিকে ফিরলো।গোমড়ামুখে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
-“তেমন কিছু হলে তোকেই প্রথমে বলতাম।আমি তোর মত না।”
আমি গিয়ে ওর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেলাম।তারপর বললাম,
-“আমি কেমন?”
-“তুই ভীষণ স্বার্থপর। এজন্যই আমার সাথে কিছু শেয়ার করিস না।”
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম।তারপর বললাম,
-“হুম রে!আমি তো স্বার্থপর ই।”
-“হুম ভীষণ! ”
-“আচ্ছা।কি জানতে চাস বল!”
-“রোদ্দুর স্যারের সাথে তোর কাহিনীটা কি?”
-“কোনো কাহিনী নেই।”
ও আমার দিকে কোণা চোখে তাকিয়ে বললো,
-“আমি খুব ভালো করেই জানি।সেদিন তোর হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।আমাকে দেখে এতক্ষণ পড়ালো।আমি যখন নুপুর পড়াচ্ছিলাম তখন রাগ নিয়ে দেখছিল।আমি কানা না রে।”
এই ছেলেও তো দেখি সেইরকম চালাক।আমি কথাটাকে ধামাচাপা দিতে বললাম,
-“আরে এমনি পড়িয়েছেন। সময় নষ্ট হয়েছিলো তাই।আর তখন পানি খাচ্ছিলো। নুপুর দেখছিলো না।”
-“ওইযে বললাম।আমি কানা না।”
-“আরে সত্যি!”
দ্বীপ শক্ত গলায় বললো,
-” না বললে না বলবি।এত নাটক করছিস কেন।থাক তুই।গেলাম আমি।”
বলেই চলে যাচ্ছিলো।আমি পেছন থেকে বললাম,
-“বলছি..”
ও পিছনে না ফিরেই বললো,
-“কি বলবি বল!”
-“আ..আসলে রোদ্দুর স্যার…”
আমি সব ঘটনা এক এক করে ওকে খুলে বলতে লাগলাম।দ্বীপ সবটা শুনে দোলনায় গিয়ে ঠাস করে বসে পড়লো।আমি তখনো রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি।চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা মুছে চলেছি।দ্বীপ বলতে লাগলো,
-“সব তো ঠিকই ছিল।জন্মদিনের পর হলোটা কি?”
-“আই ডোন্ট নো।”
-“হুমম..ড্যুড!আই থিংক ডাল মে কুচ কালা কালা হেয়!”
আমি এগিয়ে গিয়ে ওর মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
-“তোর পুরো মাথাই কালা কালা।”
বলেই আমি যেতে নিলাম।হঠাৎ পিছন থেকে দ্বীপ আমার হাত ধরে ফেললো।আমি পিছনে ফিরে বললাম,
-” কি?”
-“আমার কিন্তু বিষয়টা অন্য কিছু মনে হচ্ছে। ”
-“আরে আর কি হবে? উনি মেয়েটাকে ভালোবাসেন।”
ও দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর আমার সামনাসামনি এসে বললো,
-“তুই ওনাকে ভালোবাসিস?”
আমি অন্যদিকে তাকালাম।তুতলিয়ে বললাম,
-“ন..না!”
ও আমার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।”
-“ন..”
-“হইছে।ন অবধি থাক। আ টা যোগ করিস না।”
-“আমি কাউকে ভালোবাসি না।”
-“তাহলে কষ্ট পাচ্ছিস কেন?চল বিয়ে করে ফেলি।”
-“এ্যা!”
-“ধূর পাগলী।মজা করছিলাম।শোন,তুই ওনাকে ভালোবাসিস। এটা আমি লিখে দিতে পারি।তুই ওনাকে এতটাই ভালোবাসিস যে ওনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস।”
আমি মাথা নিচু করে রইলাম।দ্বীপ আমার থুতনি ধরে বললো,
-“আল্লাহ!আমার চাঁদনী টা কত্ত বড় হয়ে গেলো।”
-“রাখ তো ঢং।”
-“আচ্ছা রাখলাম।এখন কিছু কি প্ল্যান করেছিস?”
-“কিসের প্ল্যান?”
-“কিভাবে নিজের ভালোবাসাকে পাবি।”
-“যে যার সাথে ভালো আছে ভালো থাকতে দে।”
-“আমার মনে হয় ওনারো তোর বিষয়ে সামথিং সামথিং আছে।”
-“বলছে তোরে।”
-“ওকে তবে বাজিয়ে দেখি।”
আমি রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-“যা ইচ্ছে কর।আমায় ফাঁসাবি না।ওনার কথাগুলো শুনলেই আমার রাগ উঠে।অসহ্যকর।”
-“আচ্ছা দাঁড়া।”
বলে ও কি যেন ভাবতে লাগলো।কিছু সময় পর বললো,
-“চাঁদনী দেখ ওটা কে।”
আমি সামনে তাকালাম।রোদ্দুর স্যার মেইন গেইটে।
আমি তাড়াতাড়ি নিচে যেতে নিলে দ্বীপ আমার হাত ধরে বললো,
-“রেলিং এ উঠ।”
-“কিহহ!”
-“হ্যা উঠ।”
-“পাগল নাকি।আমি নেই।মরে টরে যাব।দেখ আমি কিন্তু তেমন না যে কাউকে না পেলে আত্মহত্যা করব।”
-“এত কথা কেন বলিস।যা বলছি তাই কর।আর আমি থাকতে আমার চাঁদনীর কিছু হবে না।”
আমি ঢোক গিললাম।ওর কথা মত রেলিং এ উঠলাম।হাত-পা কাঁপছে।পিছনে ফিরতেও পারছি না।পুরো ৩ তলা বিল্ডিং।সামনে থেকে রোদ্দুর স্যারের গলা ভেসে এলো,
-“অতসী,কি করছ তুমি এটা?”
আমি সামনে তাকালাম।রোদ্দুর স্যার আমাদের বাসার সামনে মেইন গেইটে দাঁড়িয়ে এসব বলছে।আমি কিছু বলতে পারছি না।উনি আবার বললেন,
-“অতসী,নামো ওখান থেকে।রাইট নাউ।পড়ে যাবে তুমি।”
-“স্যার আসলে…”
-“নামো জলদী।কি করছো টা কি।কি হয়েছে তোমার?আমি আসছি দাঁড়াও ওখানে।”
আমি একটু নড়তে নিলেই উনি হাইপার হয়ে বললেন,
-“অতসী প্লিজ।অতসী প্লিজ তুমি নড়ো না।পড়ে যাবে।আমি আসছি ওয়েট।নড়ো না।”
উনি আসতে নিলেই হঠাৎ পিছন থেকে দ্বীপ আমাকে কোলে নিয়ে নিলো।আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
-“আআআআ!”
রোদ্দুর স্যার দাঁড়িয়ে গেলেন।দ্বীপ আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভয়ে ওর কলার চেপে বললাম,
-“শালা!তোর জন্য এখনই পড়ে মরতাম।”
-“আরে আমি থাকতে তোকে মরতে দিলে তো।এখন নাটক দেখ শুধু। ”
আমি ঢোক গিলে সামনে তাকালাম। রোদ্দুর স্যার আগের মতোই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেগে তাকিয়ে আছেন।দ্বীপ আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললো,
-“এক্ষুণি পড়ে যেতি।কি করছিলি ওখানে?”
আমি ওর দিকে হা হয়ে তাকালাম।ও নিজেই তো বললো।আমি কিছু বলব তার আগেই ও আমায় চোখ টিপ দিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে ছাদের দরজার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“চল চল রুমে চল।”
ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজালাম।আমি দ্বীপকে অনবরত মারছি।আর বলছি,
-“তুই এমন করলি কেন?”
-“আমার ইচ্ছে। দেখ না আর কি কি হয়।তোর স্যারের রিয়াকশন টা দেখলি?”
-“কোনো রিয়াকশন ছিল না।”
-“একদম নাটক করবি না।রেগে গেছিলো কেমন।”
-“মোটেও না।”
দ্বীপ কিছু বলবে তার আগেই রোদ্দুর স্যার এসো হাজির হলো।আমি ওনাকে দেখে বললাম,
-“আসসালামু আলাইকুম।”
-“হুম।ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
আম্মু দরজা খুললো।তিনজনই ঘরে ঢুকলাম।
রোদ্দুর স্যার আমার রুমে যাচ্ছেন। দ্বীপ হঠাৎ আমার হাত ধরে বললো,
-“বেস্ট অফ লাক। ”
-“যা তো শয়তান ”
আমি ঘরে ঢুকে চুপচাপ ওনার সামনে গিয়ে বসে পড়লাম।উনি কিছু না বলে বই বের করে অংক করাতে বসলেন।কিছু সময় যেতেই নিজেই গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“নাটক তো ভালোই পারো।”
-“জ্বী স্যার?”
-“হ্যা।দেখলাম তো।ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নাটক করছিলে কেন?”
-“স্যার নাটক করিনি।”
-“দেখো, ছোট মানুষ। পড়াশোনা করো।”
-“করছিই তো।”
উনি আর কিছু বললেন না।
পড়ানো শেষে বললেন,
-“আমাদের বাসায় তোমাদের দাওয়াত আগামীকাল। ”
-“কি উপলক্ষে? ”
কথা বলতে না চাইলেও জিজ্ঞেস করলাম।কারণ কি উপলক্ষে সেটা তো আমার জানতে হবে।উনি জোরে শ্বাস ছেড়ে বললেন,
-“আমার আম্মুর জন্মদিন।আম্মুর জন্মদিন আমরা সবসময় ছোট করে কেক কেটে পালন করি।আমরা ছোট পরিবার তো।আমি,বাবা,আম্মু।এবার আম্মুকে সারপ্রাইজ দিবো ভাবছি।তাই তোমাদেরও দাওয়াত দিয়ে গেলাম।”
-“ওহ আচ্ছা।আম্মুকে বলব।”
-“আমিই বলে যাব।”
আমি চুপ করে গেলাম।আমি তো ভেবেছিলাম এঙ্গেজমেন্ট। আন্টির বার্থডে।তাও ভালো।উনি চা খাচ্ছেন। আমি নিজের ভাবনায় মত্ত হয়ে পা ঝোলাচ্ছি। উনি হঠাৎ বিরক্ত হয়ে বললেন,
-“তুমি তোমার পা ঝোলানো বন্ধ করবে?”
-“জ্বী? ”
-“নুপুরের শব্দে আমার বিরক্ত লাগছে।”
আমি পা ঝোলানো বন্ধ করে স্ট্রেইট হয়ে বসলাম।উনি নিজেই বির বির করে বলতে লাগলেন,
-“কিসব নুপুর টুপুর পড়ে বসে আছে।পড়াশোনার নাম গন্ধ নেই!”
-“স্যার নুপুরের সাথে পড়াশোনার কি সম্পর্ক? ”
-“আব..সম্পর্ক আছে।”
-“কি সেটা?”
-“তুমি আমাকে প্রশ্ন করছ।তোমার সাহস তো কম না।তাছাড়া তোমার মোটা মাথায় এসব ঢুকবেও না।”
-“কি বললেন আপনি!”
-“যা বলেছি ঠিক বলেছি।এসব বাদ দিয়ে পড়ো।আসছি।”
বলেই উনি চলে গেলেন।আমি ওনার পিছন পিছন ড্রয়িং রুমে গেলাম।উনি আম্মুর সাথে কথা বলছেন।আমি গিয়ে দ্বীপের পাশে বসে পড়লাম। দ্বীপ আমার হাত ধরে বললো,
-“তোর হাতের মেহেদী টা তো অনেক সুন্দর হইছে।”
-“হ জানি।”
বলে আড়চোখে তাকালাম।উনি আমাদেরই দেখছেন।আমি ঢোক গিলে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।
দ্বীপ জোর করেই ধরলো।ফিসফিস করে বললো,
-“এত ভয় পাচ্ছিস কেন।দেখ না কি হয়।”
-“আরে ছাড় তো।”
-“কালকে আমাদের ছবিগুলো এত সুন্দর হয়েছে যে কি বলবো।”
ওর কথাটা শেষ হতেই রোদ্দুর স্যার আম্মুকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা জোরেই বললেন,
-“আন্টি আপনাকে না বলেছিলাম অতসীর থেকে ফোনটা নিয়ে নিতে।”
-“নিছিলাম তো।কিন্তু ওর তো অনেক কল আসে বান্ধবীদের।তাই আবার দিয়ে দিলাম।”
-“আন্টি ও তো পড়াশোনা করেই না।আবার কিসের ফোন।”
-“আচ্ছা আমি খেয়াল রাখব যেন বেশি ফোন না দেখে।”
আমি বাঁকা হাসলাম।বেশ হয়েছে!
ভেবেছিল আবার ফোনটা নেওয়াবে।খবিশ একটা।
রোদ্দুর স্যার আমার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“যাও পড়ো।”
-“জ্বী।”
বলেই আমি উঠতে নিলাম।দ্বীপ আমার হাত ধরে বসিয়ে বললো,
-“একটু পরে যা।আমার তোর সাথে একটা কথা আছে।”
আমি বসে পড়লাম।দ্বীপ ইচ্ছে করে এটা করছে।আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছি না।কেমন শয়তান।
এদিকে রোদ্দুর স্যার চলে যাচ্ছেন। আমি ঢোক গিলছি আর মনে মনে ভাবছি,
-“কালকে তোকে চিবিয়ে খাবে পড়া না পারলে অতসী।”
চলবে….
#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২০
বারান্দায় দোলনায় বসে বসে দোল খাচ্ছিলাম।আর অন্যমনষ্ক হয়ে ভাবছিলাম যে লোকটার কাহিনীটা কি।ওনার হাবভাব দেখে তো আসলেই মনে হচ্ছে যে উনি জেলাস।কিন্তু ওনার না গার্লফ্রেন্ড আছে?হঠাৎ পিছন থেকে দ্বীপ আমার দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললো,
-“দেখলি চাঁদনী! আমি বলেছিলাম।”
ওর এমন ধাক্কায় আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। আমি বুকে থুথু দিয়ে বললাম,
-“তুই এভাবে ধাক্কা দিলি কেন?”
ও আমার পাশে বসে পড়লো।জোরে জোরে দোল খেতে খেতে বললো,
-“আমি বলেছিলাম তোকে যে তোর স্যারও তোর প্রতি ফল।”
আমি গালে হাত দিয়ে বারকয়েক চোখের পাপড়ি ফেলে বললাম,
-“আল্লাহ তাই!আমি তো জানতামই না।”
ও আমার মাথায়৷ গাট্টা মেরে বললো,
-“তুমি জানবাই না।শোনো মাই লিটল পিচ্চি বউ,তোমার স্যারও তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ”
আমি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,
-“তোরে বলসে, না?”
-“হ্যা বলেছে।ওনার চোখ বলেছে।”
আমি ওর দিকে ঘুরে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললাম,
-“ওহ তাই নাকি!তারমানে আপনি চোখ দেখে সব বলতে পারেন?”
দ্বীপ মাথা নাড়িয়ে ভাব নিয়ে বললো,
-“একদম!”
আমি ওর দিকে ভালোভাবে ঘুরে বসলাম।আমার মুখটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-“বলত,আমার চোখে কি দেখতে পাচ্ছিস?”
দ্বীপ হালকা হাসলো।তারপর বলতে লাগলো,
-“তুই রোদ্দুর কে কতটা ভালোবাসিস সেটাই দেখতে পারছি।তার দেখে এত এত কথা এত এত বকা খাওয়ার পরেও তার জন্য নিজের মনের মধ্যে তার জন্য রাখা নরম জায়গাটা দেখতে পারছি।তাকে হাজার বকলেও তুই তার কোনো ক্ষতি দেখতে পারিস না।সে তোকে মেরে ফেললেও তুই তাকে এতটাও কষ্ট বা আঘাত দিতে পারিস না।পারবিও না।ভালোবাসলে এমনই হয় রে।”
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। ভাবতে লাগলাম দ্বীপের কথাগুলো।দ্বীপ আমার গালে হাত দিয়ে বললো,
-“আর ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আমি জানি।নিজের ভালোবাসা অন্যকে ভালোবাসলে কি পরিমাণ কষ্ট হয় সে সম্পর্কে আমি অবগত।আমি চাই না আমার চাঁদনী এই কষ্ট পাক।”
আমি দ্বীপের দিকে করুণ চোখে তাকালাম।দ্বীপ আবার বললো,
-“রোদ্দুরও তোকে ভালোবাসে।ওর চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি।আমার কাছে থাকলে তোকে নিয়ে ইনসিকিউরড ফিল করে।তাই ফোনও নিয়ে নিতে বললো।যেন আমার সাথে ছবি না তুলতে পারিস।আরো অনেককিছুই করবে।ইচ্ছে করে তোকে কষ্ট দিবে যেন তুই পড়াশোনায় ডুবে আমার থেকে দূরে থাকিস।”
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। দ্বীপ আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“তুই ওনাকে ভালোবাসিস এটা ঠিক।কিন্তু উনি তোকে তোর চেয়েও বেশি ভালোবাসে।আমার কথাটা মিলিয়ে নিস।”
আমি দ্বীপকে জড়িয়ে ধরলাম।নিজের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বললাম,
-“আমি কাউকে ভালোবাসি না।”
দ্বীপ হাসলো মনে হয়।আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-“সেটা তো সময় এলেই বোঝা যাবে প্রিন্সেস।এবার গিয়ে রেডি হ।আমরা তো বার্থডে তে যাব।”
আমি ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। চোখ মুছতে মুছতে বললাম,
-“যাবই তো।আজ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবো।”
বলেই রুমে গিয়ে একটা রেড কালারের সালোয়ার বের করলাম।সেটা দেখে দ্বীপ এসে আলমারি থেকে নীল রঙের সালোয়ার বের করে বললো,
-“এটা পড়।”
ওটাও সুন্দর। আমি হাতে নিতেই মনে পড়ে গেলো যে রাক্ষস টার পছন্দের রং ও নীল।এটা পড়া যাবেই না।আমি ওটা ওর হাতে দিয়ে বললাম,
-“এটা বরং তুই পড়।”
-“হোপ।”
-“আরে আমি এটা পড়তে পারব না!”
-“কেন?”
-“কারণ এটা রাক্ষসের প্রিয় রং।”
-“তাহলে তুই এটাই পড়বি!”
আমি নাকোচ করে বললাম,
-“একদম না।আমি লালটাই পড়ব।”
বেশ অনেক্ষন ধরে দুজনে ঝগড়া করলাম।তারপর দ্বীপ নীল রঙের সালোয়ার টা বিছানায় রেখে বললো,
-“যা ইচ্ছে কর।”
বলেই চলে গেলো।হাহ!আমি তো লালটাই পড়ব।আমি কেন খামোখা ওই লোকের পছন্দের রং পড়তে যাব।ভেবেই আমি লাল রঙের সালোয়ার টা উল্টানোর থেকে ভাজ করলাম।ওমা!এটা কি!
ভালো করে দেখি এখানে একটা ছোট ছেঁড়া দাগ।
লাস্ট টাইম যখন একটা বিয়েতে পড়ে গেছিলাম তখন হয়ত খোঁচা লেগে এমন হয়েছে। ধ্যাত!
এখন নীলটাই পড়তে হবে।আর কোনো গর্জিয়াস ড্রেস নেই।
আমি মুখ ভার করে এটাই পড়ে নিলাম।
হালকা সেজে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।আম্মু আমাকে দেখে বলতে লাগল,
-“এতক্ষণে তোর হলো তবে।চল চল বের হব।”
এমন সময় দ্বীপও রুমের বাইরে বের হতে হতে বললো,
-“হ্যা চলো।”
আমরা সবাই তো যাচ্ছি না। শুধু আমি,আম্মু, দ্বীপ আর সায়ন্তি।ফুপি,দাদী, শ্রেয়া ওরা সবাই বাসায় থাকছে।শ্রেয়ার শরীরটা একটু খারাপ।
সবাই মিলে যাওয়াটা ভালোও দেখায় না।
এসবই ভাবছিলাম।এমন সময় দ্বীপ আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-“সেই তো ভালোবাসা উতলে উঠল।আর নীলটাই পড়লি।”
আমি উল্টো ওর মাথায় গাট্টা মারলাম।কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
-“মোটেও না।আমার ওই ড্রেসটায় একটা ছেঁড়া দাগ ছিল।ওটা এমব্রয়ডারি করতে হবে।”
দ্বীপ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“এটাকেই হয়ত বলে ডেসটিনি। ”
-“মানে?”
-“হুম।এটাকেই নিয়তি বলে।কিন্তু তোর মোটা মাথায় ঢুকবে না।”
-“কি!!আমার মাথা মোটা।তুইও এটা বলতে পারলি?”
-“সত্যি টাই বললাম।চল যাওয়া যাক।”
বলেই দ্বীপ আমায় নিয়ে নিজের গাড়িতে বসলো।আম্মু আর সায়ন্তি পিছনে। আর দ্বীপ এবং আমি সামনে।আসার সময় কত্ত মেয়ে যে দেখছিলো দ্বীপকে।আসলে দ্বীপ আমাদের বাসায় আসার পরেই এখানকার কিছু মেয়ে জানালা দিয়ে,বারান্দা দিয়ে ওকে যেন গিলে খায়।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্তু দেখতে মন্দ না।লাখে একটা।যেমন চোখ,তেমন খাড়া নাক।ফর্সা রং।বেশ হ্যান্ডসামও।দেখারই কথা।কিন্তু একথা ওকে বলা যাবে না।তাহলে ভাব বেড়ে ডাবল হয়ে যাবে।আমার ভাবনার মাঝেই দ্বীপ ফিসফিস করে বললো,
-“দেখলি মেয়েরা কিভাবে আমায় দেখছে।”
এই নাও!শুরু হয়ে গেলো।আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম,
-“মোটেও না।মেয়েরা আমার সাজ দেখছিলো।আসলে সবাই আমার মত হতে চায় তো।”
-“ডাম্বো!মেয়েরা আমায় দেখছিল।আর তোকে দেখে হিংসা করছিলো।ভাবছিলো,মেয়েটা কত লাকি।কিন্তু দেখ।তুই ই বুঝিস না।বুদ্ধু রাম।”
-“বলেছে তোকে।”
-“হুম বলেছেই তো।”
ওর সাথে ঝগড়া করতে করতেই পৌঁছে গেলাম রোদ্দুর স্যারদের বাড়িতে।
আগেও একবার এসেছিলাম।এটা ওনাদের নিজেদের বাড়ি।
মোটামুটি বড়ই আছে।দেখতেও খুব সুন্দর। পিছনের দিকে মনে হয় বাগান।গেইটটাও বেশ সুন্দর। আম্মু আর সায়ন্তি আগে আগে হাঁটছে। দ্বীপ গাড়ি লক করছিলো।আমি ওর সাথে যাব বলে দাঁড়িয়ে আছি।তা দেখে দ্বীপ বললো,
-“কিরে যাচ্ছিস না কেন?”
-“হ্যা আমি যাই আর রাক্ষস টা আমায় গিলে খাক।আমি তোর সাথে যাব।”
দ্বীপ হেসে বললো,
-“কেন যে এত ভয় পাস।”
-“হুহ!তুই কি বুঝবি।”
দ্বীপ আর আমি পাশাপাশি হাঁটছি।আম্মুরা দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছে।দরজা খুলে দিতেই আমরা এসে আম্মুর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম।
রোদ্দুর স্যার এসে দরজা খুললেন।তারপর বললেন,
-“আসুন আন্টি।”
আমি আম্মুর পিছনে ছিলাম।হাইট খাটো হওয়ায় ওনাকে দেখতে পাইনি।দ্বীপ ফিসফিস করে বলছে,
-“কাকে যেন খুঁজছে রে!তোকেই তো মনে হয়।”
আমি ওর হাতে চিমটি কেটে বললাম,
-“চুপ কর!”
আম্মু ভিতরে ঢুকতেই রোদ্দুর স্যারের সামনাসামনি পড়লাম আমি।উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।পড়নে কালো রঙের শার্ট আর উপরে নীল রঙের ব্লেজার।উনি একদম আমার সামনে।দুই ইঞ্চি দূরত্ব হবে হয়ত।আমি ভেবেছিলাম উনি চলে গেছেন।তাই তাড়াহুড়ো করে ঢুকছিলাম।আর এজন্যই একদম সামনাসামনি এসে পড়েছি।উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
দ্বীপ পাশ থেকে বলছে,
-“tuje dekha to ye jana sanam…”
রোদ্দুর স্যার স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন।সরে গিয়ে বললেন,
-“প্লিজ কাম।”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে যেতে নিলাম।আমি খেয়াল করিনি যে দরজার দুয়ার থেকে পরের জায়গাটা নিচু।তাই পা দিতেই পড়ে যেতে নিলাম।(এমন অনেকবার হয় অনেকের সাথে😑।মানুষের সামনে লজ্জায় পড়তে হয়😑)
আমি পড়ে যেতে নিলেই দ্বীপ ধরতে নিলো।কিন্তু তার আগেই রোদ্দুর স্যার ধরে ফেললেন।আমার মুখ গিয়ে পড়লো ওনার কাঁধে। ওনার হাত আমার পেট স্পর্শ করেছে। আমি চোখ বন্ধ করে আছি।দ্বীপ বলতে লাগলো,
-“আর ইউ ওকে?চাঁদনী! ”
আমি তাড়াতাড়ি করে ওনার থেকে সরে গিয়ে বললাম,
-“সরি স্যার।”
উনি শুধু মাথা নাড়ালেন।দ্বীপ আমার হাত ধরে বললো,
-“চল,আমার হাত ধরে গেলে আর পড়বি না।”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলাম।তারপর ঘরের ভিতর ঢুকলাম।রোদ্দুর স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আবারো সেই একইভাবে রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।দ্বীপ ফিসফিস করে বলছে,
-“দেখ দেখ।মনে হচ্ছে তোকে খেয়ে ফেলবে।”
বলেই আমার হাতটা আরেকটু জোরে চেপে ধরলো।
আমি ঢোক গিললাম।রোদ্দুর স্যার কখন আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন আমরা খেয়াল করিনি।আম্মু জিজ্ঞেস করছে,
-“তোমার মা কোথায়?”
রোদ্দুর স্যার আমাদের হাতের বন্ধনের মধ্যে দিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আম্মু একটু শপে গেছে। উনি আসলে সারপ্রাইজ দিব। ”
ওনার আসার কারণে আমাদের হাতের বন্ধন ভেঙে দুজন আলাদা হয়ে গেলাম।আর উনি একদম মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আবার।আমি বুঝলাম না।উনি এমন করলেন কেন!
উনি এখনো মাঝেই দাঁড়িয়ে আছেন।আর আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।দ্বীপ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।উনি দ্বীপের দিকে তাকালেন ভ্রু কুঁচকে। দ্বীপ জোরেই বললো,
-“ড্যুড!তোমরা আসলেই খুব রহস্যজনক।”
চলবে…